Monday, July 23, 2012

এটা কবরস্থান হওয়ার স্থান নয় -হুমায়ূন





গাজীপুর, জুলাই ২০:    বড় ছেলে নুহাশের নামে  গাজীপুরের   পিরুজালী গ্রামে  কয়েকশ’ প্রজাতির বৃক্ষের এক বাগান গড়ে গেছেন জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ, যেখানে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাটাতে চাইলেও সমাহিত হতে চাননি তিনি। 

একুশে পদকজয়ী এই ঔপন্যাসিক ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য গতবছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে যান। বৃহস্পতিবার রাতে ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

বৃহদান্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে কিছুদিনের জন্য দেশে আসেন লেখক। গত ১২ মে সকালে নুহাশ পল্লীতে তিনি বলেন, “এই নুহাশ পল্লী আমার অনেক প্রিয় স্থান। এই মাটির প্রতিটি ইঞ্চির সাথে আমার স্বপ্ন জড়িত। এটা যাতে বিক্রি না হয়।”

“এটাকে বিক্রি করা মানে আমার স্বপ্নটাকে বিক্রি করা। নুহাশ পল্লী যাতে আমার ছেলে-মেয়েদের টানা-টানি, ভাগাভাগির শিকার না হয়”, বলেন হুমায়ূন।

১৯৯৭ সাল থেকে ৪০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা এই বাগান বাড়ি তার এতোটাই প্রিয় যে, মৃত্যুর পর তাকে সেখানে সমাহিত করা হলে এর ভবিষ্যৎ কী হবে- তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
  প্রয়োজনে রাজধানীর আজিমপুর বা অন্য কোথাও তাকে সমাহিত করা যেতে পারে   ইংগিত দিয়েছিলেন  হুমায়ূন    

“আমাদের আজিমপুর গোরোস্থান আছে না, ওখানে (কবর দিলে) এক বছর পর চলে যাব আমি তলে। আমি একটা প্রোপোজাল দিয়েছিলাম, আমরা যদি খাড়াভাবে কবর দিতাম তাহলে জায়গাটা অনেক কম লাগতো।”হুমায়ূন বলেন, “আমি চাচ্ছিলাম, আমার মৃত্যুর পর কবরটা এখনে হোক। পরে দেখলাম, এটা কবরস্থান হয়ে যাবে। এটা কবরস্থান হওয়ার স্থান নয়। এটা তখন গুলিস্থানে পরিণত হবে। এখানে দুনিয়ার লোক আসবে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ফুল দেওয়ার জন্য, ১৩ নভেম্বর ফুল দেওয়ার জন্য আসবে। এটা হয়ে যাবে একটা কবরস্থান। এটা কবরস্থান বানানো যাবে না।”লেখকের মৃত্যুর পর শুক্রবার সকালে তার ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব গণমাধ্যমকে জানান, গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূনকে দাফন করা হতে পারে।

তবে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত তাদের আরেক ভাই লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এ ব্যাপারে হুমায়ূন আহমেদের অন্তিম ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর যদি কোনো অন্তিম ইচ্ছা না পাওয়া যায়, তাহলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হুমায়ূন ইংগিত দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে রাজধানীর আজিমপুর বা অন্য কোথাও তাকে সমাহিত করা যেতে পারে।

“আমাদের আজিমপুর গোরোস্থান আছে না, ওখানে (কবর দিলে) এক বছর পর চলে যাব আমি তলে। আমি একটা প্রোপোজাল দিয়েছিলাম, আমরা যদি খাড়াভাবে কবর দিতাম তাহলে জায়গাটা অনেক কম লাগতো।”

নিজের হাতে গড়া নুহাশ পল্লীর বাগানটি সেদিন ঘুরে ঘুরে দেখান তিনি। বিরল প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদসহ নানা রকমের দেশি-বিদেশি গাছের সঙ্গে তার ‘আত্মীয়তার’ কথা বলেন।

“এখানে তিন শ’র মতো ভেষজ প্রজাতির গাছ রয়েছে। আমার মৃত্যুর পর যদি কেউ এখানকার ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করতে চায়, তাকে মোস্ট ওয়েলকাম জানাই। মানুষের কল্যাণে এখানকার ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করতে গবেষণাগারও হতে পারে।”

হুমায়ূনের ছোট বোন সুফিয়া হায়দার বলেন, “আমার ভাই মানুষের কষ্ট, হাসপাতালে থাকা আর না খেয়ে থাকার কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। অথচ এসব অপছন্দনীয় বিষয়গুলোই তার ভাগ্যে জুটেছে। তিনি মানুষকে অসম্ভব রকম ভালবাসেন। মানুষও তাকে ভালবাসেন।”

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, ৪০ বিঘার এই বাগান ফলজ, বনজ ও ভেষজ গাছ ছাড়াও হাঁস, রাজহাঁস, গরু, কবুতরসহ বিভিন্ন প্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বসানো হয়েছে কিছু ভাস্কর্যও। এ কারণে প্রায়ই হুমায়ূনভক্তরা এখানে বেড়াতে আসেন।

“নুহাশ পল্লী স্যারের খুবই পছন্দের একটি জায়গা”, যোগ করেন বুলবুল।

No comments:

Post a Comment