Friday, July 27, 2012

জনপ্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টিতে লিপ্ত বিএনপি ও জামায়াতপন্থি সাবেক আমলারা

রাকিব উদ্দিন
জনপ্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি কতিপয় সাবেক আমলা। অস্থিরতা সৃষ্টিতে তারা মহাজোট সরকারের সুবিধাবঞ্চিত আমলাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে পদোন্নতি বঞ্চিত ও বর্তমানে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থাকা আমলাদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে নানাভাবে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন তারা। এ ধরনের অপকর্মে ইন্ধন জোগাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী কিছু বুদ্ধিজীবী।
তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি সম্পর্কে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। ইতোমধ্যে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণও শুরু হয়েছে। সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত পদোন্নতি বঞ্চিত এবং ওএসডি কর্মকর্তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দু'টি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘি্নত ও জনপ্রশাসনে নাশকতা সৃষ্টি করতে পারেন এমন অভিযোগে গত ১৯ জুলাই চারদলীয় জোট সরকারের এক মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৩৭ জন সাবেক অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিবের সচিবালয়ে প্রবেশের আজীবন নিরাপত্তা পাস বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই আরও কিছু সাবেক আমলার সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই তাদের তালিকা যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
এর আগে গত ১৪ জুলাই সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে রাজধানীতে প্রকাশ্যে সেমিনারের আয়োজন করেন 'রিটায়ার্ড সিভিল অফিসার্স ফাউন্ডেশন' নামে বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী সাবেক আমলারা। ওই সভায় বর্তমানে ওএসডি ও এবার পদোন্নতি বঞ্চিত কিছু আমলাও উপস্থিত ছিলেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এখন ওই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা গতকাল 'সংবাদ'কে বলেছেন, 'কর্মহীন থাকার ফলেই কিছু কর্মকর্তা নানা ফাঁদে পড়ছেন। তাই ওএসডি কর্মকর্তাদের পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে পদোন্নতি বঞ্চিতদের জন্য আপাতত কোন সুখবর নেই'।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের সুবিধাভোগী আমলারা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ব্যবহারের অজুহাতে নিয়মিত সচিবালয়ে ঢুকেন। তারা সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হলরুমে বসে সুবিধাবঞ্চিত ও ওএসডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেন এবং সরকারবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত হন। তাই এখন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হলরুমে নিয়মিত কারা আসেন, এসে কী করেন তার তীক্ষ্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে সংশ্লিষ্টরা।
সচিবালয়ে প্রবেশে সাবেক যেসব আমলার নিরাপত্তা পাস বাতিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসএম আবদুল হালিম, সাবেক সচিব এনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক যোগাযোগ সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব এসএম জহুরুল ইসলাম, সাবেক তথ্য সচিব ব্যারিস্টার মুহাম্মদ হায়দার আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক স্বাস্থ্য সচিব খন্দকার ফজলুর রহমান, আবু মো. মনিরুজ্জামান খান, সাবেক শ্রম সচিব আবদুল মতিন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন আহমেদ, এম মতিউর রহমান, সাবেক যুব সচিব ক্যাপ্টেন (অব.) সুজা উদ্দিন আহমেদ, শেখ এনায়েত উল্লাহ খান, এম ইব্রাহিম হোসেন, সাবেক আইন সচিব আলাউদ্দিন সর্দার, এটিএম আতাউর রহমান, কাজী আবুল কাসেম, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব আবদুর রশিদ সরকার, সাবেক তথ্য সচিব জাফর আহমেদ চৌধুরী, ইলিয়াস আহমেদ, সাবেক তথ্য সচিব আতম ফজলুল করিম অন্যতম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ৬০০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ওএসডি আছেন। তাদের মধ্যে দুজন সচিব, ৩৩ অতিরিক্ত সচিব, ১৪৪ যুগ্ম সচিব আছেন। প্রসঙ্গত, বর্তমানে সচিবালয়সহ জনপ্রশাসনে চার হাজার ৬৪৮ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন

No comments:

Post a Comment