Friday, July 11, 2014

ফিলিস্তিনের শান্তি এবং আইএসআইএস জঙ্গীবাদের হুমকিকে বাংলাদেশ - সুমি খান


ইহুদি বিজ্ঞানী ড. হেইস বাইজম্যানের বোমা বানানোর মূল উপকরণ ফসফরাস আবিষ্কারের পুরস্কার ফিলিস্তিন হস্তান্তর

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা শুরু। ১৯৫০ এর পর থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা, ২০০৩ থেকে ইরাক যুদ্ধ এবং কয়েকদিন আগে আইএসআইএস জঙ্গি সংগঠনের গণহত্যার সূচনা, সিরিয়াতে গৃহযুদ্ধ এবং সে দেশের নাগরিকদের উপর অসহনীয় অত্যাচার- বিশ্বমানবতার বিবেক জাগছে না কেন  আরববিশ্ব এবং প্যালেস্টাইনের নিরীহ মানুষগুলোর জন্যে?
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর বর্বর ইহুদিবাদী ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। দখলদার এ গোষ্ঠীর হামলায়  ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার ৩৩ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন এবং এ দিনকে গত কয়েকদিনের যুদ্ধে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
তেহরান বেতারের সংবাদ অনুযায়ী ১০ জুলাই শহীদ হওয়াদের মধ্যে অন্তত ছয়টি শিশু, চারজন নারী ও একজন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ রয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন অন্তত ৯৭ জন। এর মধ্যে বহুসংখ্যক নারী, শিশু ও বয়স্ক লোকজন রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমান থেকে গাজার কয়েকশ লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় গাজার ইরেজ ক্রসিং পয়েন্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টায় ইসরাইল ৭৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। এদিকে, সম্ভাব্য স্থল অভিযান শুরুর জন্য গাজা সীমান্তে ইসরাইল ২০,০০০ সেনা মোতায়েন করেছে। হামাস নেতা হামদান সম্ভাব্য স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইসরাইল যা আশা করছে তা হবে না। 

অন্যদিকে, গাজার আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য মিশর সরকার সাময়িকভাবে রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট খুলে দিয়েছে। গত বছর সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকে এই সীমান্ত বন্ধ ছিল।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এবং ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের ছোঁড়া রকেটে ইসরাইলের আশদোদ শহরে আরো এক ইসরাইলি মারা গেছে। এছাড়া তেল আবিব, আশকেলোন, সিদরোত, জেরুজালেম এবং হাইফাসহ বিভিন্ন শহরে হামাসের রকেট আঘাত হেনেছে। কিছু কিছু রকেট ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম প্রতিহত করতে পারলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে না। তবে হামাসের রকেট হামলায় ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করছে না ইসরাইল।

তিন ইসরায়েলি কিশোর হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে নির্বিচারে মানুষ মারা শুরু করেছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার চিকিৎসা ব্যবস্থা যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু। গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলা জোরদার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

হু এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা উপত্যকায় চিকিৎসা সামগ্রীর মারাত্মক অভাবের পাশাপাশি হাসপাতালগুলো চালানোর কাজে ব্যবহৃত জেনারেটরগুলোর প্রয়োজনীয় জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় সহিংসতা (ইসরাইলি পাশবিক হামলা) বেড়ে যাওয়ার কারণে হাসপাতালগুলোতে আহত মানুষের ভিড় প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। কিন্তু এত রোগীর চাপ সহ্য করার ক্ষমতা অধিকৃত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। হাসপাতালগুলোতে যে সীমিত পর্যায়ের চিকিৎসা সামগ্রী ছিল তা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং অবরোধ থাকার কারণে এ ধরনের সামগ্রীর সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

গাজা উপত্যকায় গত চারদিনের ইসরাইলি আগ্রাসনে অন্তত ৯৭ জন নিহত ও ৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। হুর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় গাজার একটি শরণার্থী শিবিরের একটি হাসপাতাল, তিনটি ক্লিনিক এবং একটি পানি বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। ওই এলাকায় আরো হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সেখানকার হাসপাতালগুলোতে মাত্র ১০ দিনের জ্বালানি সরবরাহের মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বাকি পড়ে আছে বেশ কয়েক মাসের। প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু অপারেশন করা সম্ভব হয় নি।
ভূমধ্যসাগরের পূর্বে ১০,৪২৯ বর্গমাইলব্যাপী ফিলিস্তিন দেশটি ছিল উসমানীয় খেলাফতের অধীন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যারা ছিল বৃটেন বিরোধী জোটে৷ তখন যুদ্ধ জয়ে ফিলিস্তিনদের সহযোগিতা পাওয়ার আশায় ১৯১৭ সালে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর যুদ্ধে জয়ী হলে এই ভূমিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে বলে আশ্বাস দেন  । যা ইতিহাসে ‘বেলফোর ঘোষণা’ হিসেবে পরিচিত। যেহেতু আরবরা ছিল ইহুদিদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি, সেহেতু ঘোষণাটি তাদের অনুকূল বলে তারা ধরে নেয়৷ কিন্তু এর মাঝে যে শুভংকরের ফাঁকি, তা তারা বুঝতে পারেনি।

বৃটিশ শাসনের শুরু থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটেনের প্রয়োজনে দুর্লভ বোমা তৈরির উপকরণ কৃত্রিম ফসফরাস তৈরি করতে সক্ষম হন ইহুদি বিজ্ঞানী ড. হেইস বাইজম্যান। ফলে আনন্দিত বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন, কী ধরনের পুরস্কার তিনি চান? উত্তর ছিল,  “ অর্থ নয় ,আমার স্বজাতির জন্য এক টুকরো ভূমি । আর তা হবে ফিলিস্তিন !” ফলে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয় বৃটেন ! প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর বৃটেন স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে ৩০ বছর দেশটিকে নিজেদের অধীন রাখে। মূলত: এই সময়টিই ফিলিস্তিনকে আরব শূন্য করার জন্য ভালোভাবে কাজে লাগায় ইহুদি বলয় দ্বারা প্রভাবিত ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি।

আরবরা দাবি করেছিলো  ১৯৪৭ সালে জাতি সংঘ দ্বারা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন বিভাগ যেভাবে প্রস্তাবিত হয়েছিল, যেখানে ফিলিস্তিন ভূখন্ড (গাজা ভূখন্ড ও ওয়েস্ট ব্যাংক) ছাড়াও ইসরায়েল শাসনাধীন অঞ্চলও ছিল এবং জেরুজালেমকে ঘোষিত রাষ্টের রাজধানী আখ্যা দেওয়া হয়েছিলো।
১৯৭৪ আরব লীগ শীর্ষ বৈঠকে স্থির হয়েছিল, পিএলও ফিলিস্তিনের জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি এবং ও তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছিল । ২২ নভেম্বর ১৯৭৪ থেকে একটিজাতি  হিসেবে পিএলও কে " রাষ্ট্রহীন-সত্তা " রূপে পর্‍্যবেক্ষক অবস্থায় রাখা হয়েছিল। যারা কেবলমাত্র জাতি সংঘে তাদের বক্তব্য রাখতে পারতেন, কিন্তু ভোট দেবার কোনো ক্ষমতা ছিল না।
বৃটিশরা একদিকে ইহুদিদের জন্য খুলে দেয় ফিলিস্তিনের দরজা, অন্যদিকে বৃটিশ বাহিনীর সহযোগিতায় ইহুদিরা ফিলিস্তিনদের বিতাড়িত করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য গড়ে তোলে অনেক প্রশিক্ষিত গোপন সন্ত্রাসী সংগঠন৷ তার মধ্যে তিনটি প্রধান সংগঠন ছিল হাগানাহ, ইরগুন ও স্ট্যার্ন গ্যাং -যারা হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টির মাধ্যমে নিরীহ ফিলিস্তিনদের বাধ্য করে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে ।

সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর গণহত্যার কথা যখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত হচ্ছিলো, তখন পরিস্থিতকে নিজেদের অনুকূলে আনার জন্য গুপ্ত সংগঠন ‘হাগানাহ’ আত্মহননের কৌশল করে  । ১৯৪০ সালে ‘এসএস প্যাট্রিয়া’ নামক একটি জাহাজকে হাইফা বন্দরে উড়িয়ে দিয়ে ২৭৬ জন ইহুদিকে হত্যা করে হাগানাহ বাহিনী । ১৯৪২ সালে আরেকটি জাহাজকে উড়িয়ে ৭৬৯ জন ইহুদিকে হত্যা করে তারা । উভয় জাহাজে করে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসছিল আর বৃটিশরা সামরিক কৌশলগত কারণে জাহাজ দুটিকে ফিলিস্তিনের বন্দরে ভিড়তে দিচ্ছিল না ।
ইহুদী সন্ত্রাসী দল হাগানাহ এভাবে  বিশ্ব জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনার অপকৌশল করলো নিজেদের সম্প্রদায় ইহুদিদের হত্যা ক’রে । পাশাপাশি দ্রুততার সাথে ইহুদিদের বসতি স্থাপন ও আরবদের উচ্ছেদকরণ চলতে থাকে৷ এর ফলে ২০ লাখ বসতির মধ্যে বহিরাগত ইহুদির সংখ্যা দাড়ালো ৫ লাখ ৪০ হাজার ।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ জাতিসংঘের মাধ্যমে পাস হয়ে যায় একটি অবৈধ ও অযৌক্তিক প্রস্তাব-
 ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হীন লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন চাপে জাতিসংঘে ভোট গ্রহণ হয় । এতে ৩৩টি রাষ্ট্র ইজরাইলের পক্ষে, ১৩টি বিরুদ্ধে এবং ১০টি ভোট দানে বিরত থাকে৷ প্রস্তাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হয়েও ইহুদিরা পেল ভূমির ৫৭% আর ফিলিস্তিনরা পেল ৪৩% তবে প্রস্তাবিত ইহুদি রাষ্ট্রটির উত্তর-পশ্চিম সীমানা ছিল অনির্ধারিত।  ফলে ভবিষ্যতে ইহুদিরা সীমানা বাড়ানোর আশংকা রয়ে গেলো। ফলে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা চূড়ান্ত হলেও উপেক্ষিত থেকে যায় ফিলিস্তিন।

প্রহসনের নাটকে জিতে গিয়ে ইহুদিরা ;  হত্যা ধর্ষণের উন্মত্ততায় হয়ে ওঠে আরো হিংস্র

হত্যা সন্ত্রাসের পাশাপাশি ফিলিস্তিনদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশে রাতে তাদের ফোন লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, বাড়িঘরে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, জোর করে জমি দখল এবং নারী নির্যাতন করে মৃত্যু বিভীষিকা ছড়িয়ে দিতে লাগলো । ফলে লাখ লাখ আরব বাধ্য হলো দেশ ত্যাগ করতে । এরপরই ১৯৪৮ সালের ১২ মে রাত ১২টা ১ মিনিটে ‘ইজরায়েল’ কে রাষ্ট্র ঘোষণা করলো ইহুদিরা । ১০ মিনিটের ভেতর যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিল, অতঃপর সোভিয়েত ইউনিয়ন-বৃটেন ।
 সেই পরিস্থিতিতে চরম  অস্তিত্বের সংকটে পড়ে ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন (আরবি: فلسطين, ফিলাস্‌ত্বীন্‌) সরকারিভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র (আরবি: دولة فلسطين, দাউলাৎ ফিলাস্‌ত্বীন্‌) ১৫ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে আলজিয়ার্স শহরে নির্বাসনে ঘোষিত একটি রাষ্ট্র, যেখানে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) ও প্যালেস্টাইন জাতীয় পরিষদ (পিএনসি) একপাক্ষিক ভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল । ১৯৮৮ ঘোষণার সময়ে কোনো অঞ্চলেই পিএলওর নিয়ন্ত্রণ ছিল না, যদিও তারা যে অঞ্চলগুলি দাবি করেছিল আন্তর্জাতিকভাবে সেইগুলি ইজরায়েলের দখলে ছিল।
অনেক দিন ধরে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল এর মধ্যে চলে আসা এ সংঘাতকে বৃহত্তর অর্থে আরব-ইসরায়েল সংঘাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। দুইটি আলাদা জাতি করার জন্য অনেক পরিকল্পনাই করা হয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে ইসরায়েলের পাশে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রও গঠিত হতো।

 একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, দুই দেশের অধিকাংশ মানুষই এই সংঘাত নিরসনে অন্য যেকোন পরিকল্পনার তুলনায় দুই-জাতি পরিকল্পনাকে বেশি সমর্থন করে।
নিজেদের পুরো দেশ দখলে চলে যাবার কারণে অধিকাংশ প্যালেস্টাইনী মনে করে, তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র হওয়া উচিত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাকে কেন্দ্র করে। অধিকাংশ ইসরায়েলীও এই ধারণা সমর্থন করে। হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন শিক্ষাবিদ সবকিছু বাদ দিয়ে একটিমাত্র রাষ্ট্র গঠনকে সমর্থন করে। তাদের মতে সমগ্র ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও গাজা মিলে একটি দ্বি-জাতীয় রাষ্ট্র গঠিত হওয়া উচিত যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু এ নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি।
এই সংঘাতে দেশী-বিদেশী অনেকগুলো শক্তি ও বিষয় জড়িয়ে পড়েছে। সংঘাতে  এক পক্ষে সরাসরি ইসরাইল সরকার -যার প্রধান নেতা এহুদ ওলমার্ট। আর অন্য পক্ষে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এবং এর বর্তমান প্রধান নেতা মাহমুদ আব্বাস। এই দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা তৈরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্র কোয়ার্টেট অফ দ্য মিড্‌ল ইস্ট (শুধু কোয়ার্টেট) নামে পরিচিত একটি দল। এই দলে কূটনৈতিকভাবে অংশ নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। এই সংঘাতের আরেক নায়ক আরব লীগ যারা একটি বিকল্প শান্তি পরিকল্পনা পেশ করেছে। আরব লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিশর এতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে।
২০০৬ সালের পর থেকে প্যালেস্টাইনীয় অংশ দুটি প্রধান দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে: ফাতাহ এবং হামাস। এর মধ্যে ফাতাহ-ই বর্তমানে সবচেয়ে বড়। এর ফলে দেশের কেন্দ্রীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক শাসিত মূল ভূমি ব্যবহারিক অর্থে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে: পশ্চিম তীরে ফাতাহ এবং গাজা উপত্যকায় হামাস প্রভাব বিস্তার করেছে। এতে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ ইসরায়েলসহ অনেকগুলো দেশই হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে।

 যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অ্যানাপোলিসে, ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে সমঝোতা অনুষ্ঠান হয় । এই আলোচনার মাধ্যমে ২০০৮ এর শেষ নাগাদ একটি চিরস্থায়ী শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারী দলগুলো বলেছে, ৬ টি প্রধান বিষয় আছে যেগুলোর সমাধান না হলে শান্তি আসবে না। এগুলো হচ্ছে: জেরুজালেম, শরণার্থী, আবাসন, নিরাপত্তা, সীমান্ত এবং পানি। এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এই সংঘাত নিয়ে বিভিন্ন রকম মতামতের সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, সংঘাতটা শুধু ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে নয়, উভয়ের অভ্যন্তরেও অনেক অর্ন্তর্দ্বন্দ্ব্ব বিদ্যমান। এই সংঘাতের সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতা। অনেক দিন ধরে এই অঞ্চলে এক নাগাড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এই যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। শুধু সামরিক লোকই মারা যাচ্ছে না, সাথে প্রচুর বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
১৯৪৭ এর পর থেকেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র জোরজবরদস্তির শিকার হয়ে বর্তমানে অবরুদ্ধ হয়ে আছে।  ইসরাইলের দিমোনা শহরের পরমাণু স্থাপনায় দ্বিতীয় দফা রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। বৃহস্পতিবার এ হামলা চালানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হামাস। হামাস বলেছে, দিমোনার পরমাণু চুল্লি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য গাজা উপত্যকা থেকে তিন দফা রকেট হামলা চালানো হয়েছে।
এম-৭৫ রকেট দিয়ে এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল- কাসসাম ব্রিগেড।ইসরাইলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছেক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম একটি রকেটকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অন্য দুটি রকেট খোলা জায়গায় আঘাত হেনেছে। বুধবারও এ কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামাসের সাত দফা রকেট হামলা হয়েছিল। তার মধ্যে তিনটি ধ্বংস করে দিয়েছে আয়রন ডোম এবং অন্য চারটি তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারে নি।
ইসরাইলের রয়েছে দু টি পরমাণু স্থাপনা। এর একটি রয়েছে দিমোনায় এবং অন্যটি আল-কুদস বা জেরুজালেম শহরে। ইসরাইলের বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদরা দিমোনা পরমাণু স্থাপনা বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পুরনো এ স্থাপনা ক্রমেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করছে।

এই পরিস্থিতি কবে স্থিতিশীল হবে,প্যালেষ্টাইনের নিরীহ শিশু, নারীরা কবে স্বাধীন মাতৃভূমি ফিরে পাবে? এর জবাব হয়তো কারো কাছেই নেই। তবে  ইঙ্গ-মার্কিন রাজনীতির বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত সোচ্চার হলে অনেকটা সহজ এবং সুগম হতে পারে এই নিরীহ মানুষগুলোর শান্তির পথ- একথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
আবার ফিরে আসতে হয়  জঙ্গীগোষ্ঠী আলকায়দার নতুন সংস্করণ আইএসআইএল প্রসঙ্গে। আইএসআইএল এর প্রধান ও স্বঘোষিত খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি এবার তার কথিত 'জিহাদ' লেবাননেও ছড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।  বাগদাদি তার দাবিমতে কারাগারগুলো থেকে জঙ্গী  'ইসলামপন্থীদের' মুক্ত করার জন্যই লেবাননের বিরুদ্ধে কথিত জিহাদ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে। 'জিহাদের এ পর্যায়ে' লেবাননের 'রুমিয়া' কারাগারসহ অন্য কারাগারগুলো থেকে ওই 'ইসলামপন্থীদের' মুক্ত করার নামে নতুন করে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা নিয়েছে আইএসআইএল প্রধান।

আয়েশা নামের একটি সংবাদ সংস্থা বাগদাদির এই নতুন পরিকল্পনা সংক্রান্ত বক্তব্যের ভিডিও প্রচার করেছে। বাগদাদি এই অভিযানের নাম দিয়েছে  ‘দেয়ালগুলোর বিনাশ’। আইএসআইএল-এর প্রধান জানায়, এই অভিযানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল সব অঞ্চল থেকে 'মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করা' এবং তাদের 'জল্লাদদের' তথা হত্যাকারীদের তাড়া করা ও হত্যা করা; আর এই  কথিত 'জল্লাদদের' তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিচারক ও কৌশলীরা। এই ভিডিওতে লেবাননের রুমিয়া কারাগারের দৃশ্য দেখানো হয় এবং সেখানকার বন্দীদেরকে 'রুমিয়া কারাগারের অপহৃতরা' বলে অভিহিত করা হয়েছে। বাগদাদির বক্তব্যে আরো এসেছে: আমেরিকার মিত্র লেবাননের 'তাগুতি সরকার' 'ফাতহুল ইসলাম'-এর সিংহদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিন সদস্যকে ফাঁসি দিয়েছে ও তাদের একদলকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার কথা ভাবছে; আর এইসব কাজই করা হয়েছে ইরান ও আমেরিকার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য! ...জিহাদি সিংহরা এখন কারাগারগুলোর দরজার পেছনে অবস্থান করছে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তারা যখন লেবাননে প্রবেশ করবে তখন কারাগারেও ঢুকে পড়বে। জেনে রাখুন যারা আবু গ্বারিব কারাগার ধ্বংস করতে পেরেছে তারা রুমিয়া কারাগারের ক্ষেত্রেও তা করতে পারবে।এই ভিডিওতে রুমিয়া কারাগার ভবন ও সেখানকার কথিত মুসলিম বন্দীদের কয়েকজনকে দেখানো হয়। একই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, এই কারাগারের অন্যতম বন্দী আবু ওমর সালিম কথা বলছেন। ভিডিওটিতে যেসব বন্দীদের দেখানো হয় তাদের পাশে ছিল আইএসআইএল-এর একটি পতাকা ও একটি প্ল্যাকার্ড যাতে লেখা ছিল 'রুমিয়া কারাগারের অপহৃতরা'

এই ভয়ংকর জঙ্গীদের ভাষা আর বাংলাদেশের জঙ্গীদের ভাষা এক। ‘তাগুতী সরকার’ , ‘জল্লাদ’ নামে গণতান্ত্রিক সরকার এবং প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের চিহ্ণিত করে হত্যার টার্গেট করার ভয়াবহতা থেকে মুক্ত নই আমরা । একথা বলার অনেক কারণ। তার মধ্যে অন্যতম আইএসআইএস এর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নেতা আবদুল রাকিব আমিন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ‘জিহাদি’ রাকিবের ভিডিও পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, সিরিয়ায় যুদ্ধ করাই কেবল তাদের উদ্দেশ্য নয়। তারা জর্ডান, লেবানন ও ইরাকেও যাবে। আর এ জন্য সারা বিশ্ব থেকে জিহাদি আমদানি করছে। তারা বাংলাদেশ থেকেও জেহাদি সংগ্রহ করার দাবি করেছে।


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ব্রাসেলসে ন্যাটো বিদেশ মন্ত্রীদের সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, আইএসআইএস-এর সশস্ত্র বিদ্রোহ এই অঞ্চলে একটি বৃহত্তর সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। এই সংগঠনের ডাকা জেহাদে অংশ নিতেই রাকিব আহ্বান জানিয়েছেন। আর  লন্ডনের আইটিভি বলেছে, বাংলাদেশ থেকেও জেহাদিরা ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলে পৌঁছে গেছে।

মাত্র ১০ বছর বয়সে বাংলাদেশ ছেড়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে লন্ডনে গিয়েছিল আবদুল রাকিব আমিন। আরও দুজনের সঙ্গে রাকিবকে আল কায়েদার পক্ষে সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান সংবলিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে সম্প্রতি। এই ভিডিও নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিবিসি সহ ব্রিটিশ মিডিয়ায় হৈচৈ চলছে।
আল কায়েদা থেকে বেরিয়ে গঠন করা হয়েছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্যা লেভান্ট (আইএসআইএস)। এই সংগঠনটি সিরিয়া ও ইরাক সীমান্তে একটি খাঁটি মুসলিম রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের স্বপ্ন দেখেছিল।

সিরিয়ায় বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র হাতে রাকিবের ছবি ‘ডেইলি মিরর’ প্রথম প্রকাশ করে, যা আইটিভি ২৬ জুন সম্প্রচার করেছে।
 গার্ডিয়ান রিপোর্ট করেছে,  ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মালিকি নিশ্চিত করেছেন যে, সিরীয় যুদ্ধ বিমান ইরাকে আইএএসআইএস-এর অবস্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানি সামরিক বাহিনীর পরস্পর বিরোধী উপস্থিতির পটভূমিতে গতকাল ওই বিমান হামলা শুরু হয়।
রাকিবরা বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ড গিয়ে বাসা নিয়েছিল অ্যাবারদিনের ফ্রগহল এলাকায়। প্রথম দুবছর সে পড়েছিল সানিব্যাংক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর তাকে পাঠানো হয় সেইন্ট মাচার একাডেমিতে।  একাডেমিতে দ্বিতীয় বছর কাটানোর পরে তার পিতা তাকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছিল। তার বন্ধুদের মতে তার বাবা-মা লক্ষ্য করেছিলেন যে, রাকিব বড় বেশি পাশ্চাত্য ঘেঁষা হয়ে পড়েছে। দুবছর বাংলাদেশে কাটিয়ে রাকিব অ্যাবারদিনে ফিরে আসে। আর তখন তার বন্ধুরা লক্ষ্য করে রাকিবের মধ্যে একটি পরিবর্তন এসেছে। রাকিব দাড়ি রাখতে শুরু করেছে। আর বেশি ধার্মিক হয়ে পড়েছে। এরপর সে তার পরিবারের সঙ্গে লেসেস্টারে চলে যায়।

বাংলাদেশী কিশোর রাকিব বেড়ে উঠেছিল অ্যাবেরদিন শহরে। সে যে স্কুলে পড়েছে সেখানকার একজন সাবেক ছাত্র গতকাল লন্ডনের প্রেস অ্যান্ড জার্নাল নামের একটি পত্রিকায় রাকিবের সঙ্গে অতীতের স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন, ২৫ বছরের এই যুবককে তার চালাক ছেলে বলেই মনে হয়েছে। যে ভিডিওতে আল কায়েদা থেকে বেরিয়ে আসা গ্রুপ জিহাদি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, তাতে রাকিবের অংশ নেয়ার বিষয়টি সে বুঝতে পারেনি, এটা মনে করার কোন কারণ নেই। আইএসআইএস এখন ইরাকের বেশির ভাগ জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে জিহাদি নিয়োগের আহ্বান সংবলিত ভিডিও সিরিয়ায় ধারণ করা হয়েছে।

রাকিবের বন্ধু আরও বলেছে, রাকিব সব সময় মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করতো। তার এটা ভালই বোঝার কথা যে, এই ভিডিও প্রকাশ পাবে। এবং ব্রিটেনে সেটা দেখানো হবে এবং তা বন্ধুবান্ধবরা তাকে এতে দেখবে। এবং এটা অনুমান করে তার ভাল লাগারই কথা। সর্বশেষ তাকে সে ১৮ মাস আগে দেখছিল। অ্যাবেরদিন স্পোর্টসভিলেজে সে তার সঙ্গে ফুটবল খেলেছিল। রাকিব গাইতে পারতো স্কটিশ গান।
তার আরও মন্তব্য: আমি আর কখনওই তার বন্ধু থাকতে পারি না। তবে তাকে যদি কখনও রাস্তায় দেখা পেয়ে যাই তাহলে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো, কেন তুমি এমন করলে? আমি সত্যি বুঝতে পারি না, মাত্র ১৮ মাসের ব্যবধানে রাকিবের জীবনে এমন কি ঘটলো, যাতে সে এমন করে বদলে যেতে পারলো? আমি তার কাছে জানতে চাইবো, তাকে ওরা নিয়োগ করেছে। নাকি সেই নিজ থেকে ওদের দলে গিয়ে নাম লিখিয়েছে। কখনও কখনও আমরা যখন বেড়াতে বের হতাম ,তখন পথে লোকে তাকে বর্ণবাদী টিটকারি দিতো,তখন কোন কোন ঘটনায় তাকে রুখে দাঁড়াতে দেখেছি।গত কয়েকদিনে রাকিবের কিছু আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে।

এতোদিন জঙ্গী পুষে এখন সতর্ক হয়েছে বৃটেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের মসজিদগুলোতে যাতে র‌্যাডিকেল বাণী প্রচার না করা হয় সে জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। সৌদি আরব বেড়াতে গিয়েছিলেন একটি মসজিদের ইমাম। তাকে আর লন্ডনে ফিরতে দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকেরা যতোটা প্রশস্তিতে আছেন, বাস্তবতা ততোটা প্রশস্তিসূচক না ও হতে পারে।  আমি এখনো বিশ্বাস করি সরকারের কাউন্টার টেররিজম টীমের সতর্ক এবং জরুরী পদক্ষেপ দমন করতে পারে এদেশে জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীর সকল অপতৎপরতা। ####
Sumikhan29bdj@gmail.com


Monday, July 7, 2014

আটকেপড়া পাকিস্তানী এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহুমাত্রিক সঙ্কট -শাহরিয়ার কবির

উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত নির্বিশেষে বিশ্বের যে কোনও দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকরা কম বেশি বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার। এই নিপীড়ন বহু ক্ষেত্রে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, গৃহে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও অপহরণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে পর্যবসিত হয়। সংখ্যালঘু ধর্মীয় হতে পারে, জাতি-ভাষা-লিঙ্গ-কায়িক-বর্ণগত হতে পারে, এমনকি মতাদর্শগতও হতে পারে।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও ধর্ম-জাতি-ভাষা-লিঙ্গ-কায়িক ও মতাদর্শগত সংখ্যালঘু রয়েছে। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে নাগরিকদের ভেতর সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বিভাজন অনভিপ্রেত হলেও রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়ের আচরণ সর্বত্র এই বিভাজন সৃষ্টি করেছে যা অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে সংখ্যালঘুর সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের দাবি অগ্রাহ্য করা।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রায়ই বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই, বাংলাদেশে আমরা সবাই বাংলাদেশী। খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য যদি সত্য হতো আমরা যারপরনাই প্রীত হতাম। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ২০০১ সালের অক্টোবরে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াত-বিএনপি জোটের প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া যখন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু- বিশেষভাবে হিন্দু সম্প্রদায় নজিরবিহীন সহিংসতার শিকার হয়েছিল, যা বিস্তৃত হয়েছে বিরোধী দল ও মতের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অপহরণসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধে। বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ২০১৪-এর ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও ঘটেছে। এবার হিন্দু, খ্রীস্টান ও আদিবাসীদের একমাত্র ‘অপরাধ’ ছিল তারা জামায়াত-বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ডাক উপেক্ষা করে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। তারপরও সম্প্রতি (২৯ জুন, ২০১৪) ভারতের ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বেগম জিয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই’ এবং ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য জামায়াত-বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ দায়ী।’
গত ১৪ জুন (২০১৪) ঢাকার পল্লবীর বিহারি ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে ১০ জন অবাঙালী নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহত ১০ জনের ভেতর ৯ জনই একই পরিবারের সদস্য। বিহারি ক্যাম্পের এই নৃশংস হামলা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে জামায়াত-বিএনপির জোট সরকারের আমলের জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার ভয়ঙ্কর ঘটনা। ২০০৩-এর ১৯ নবেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শিশু-বৃদ্ধ-নির্বিশেষে তেজেন্দ্র শীলের পরিবারের ১১ জনকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতকারীরা। খালেদা জিয়ার শাসনামলে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার বহু ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালে জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল না তখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল এবং তাদের ডাকা হরতাল-অবরোধ সফল করবার জন্য নিরীহ বাসযাত্রী, পরিবহন শ্রমিক, পথচারী এমনকি পুলিশকেও পুড়িয়ে মারা হয়েছে।

পল্লবীর বিহারি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ ও হত্যার নৃশংস ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। বিএনপি যথারীতি কোনও রকম তদন্ত ছাড়াই এ হত্যার দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যে কোন ঘটনা জাতির বিবেককে আহত করে। কোন ভয়ঙ্কর অপরাধীকেও এভাবে হত্যা করা সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারে না। গত ২ জুলাই (২০১৪) অগ্রজপ্রতীম কলাম লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ দৈনিক ‘প্রথম আলো’য় ‘বিহারিসহ সব সংখ্যালঘুর কাছে ক্ষমা চাই’ শিরোনামে মর্মস্পর্শী কলাম লিখেছেন। মহিউদ্দিন ভাই ছাড়াও বিভিন্ন দৈনিকে অগ্রজ ও অনুজপ্রতিম সাংবাদিক ও কলাম লেখকরা বিহারি ক্যাম্পের নৃশংস হামলা ও হত্যার নিন্দা করে লিখেছেন। আমাদের এসব লেখায় দুষ্কৃতকারীদের শুভবুদ্ধির উদয় না হতে পারে, প্রশাসনের টনকও হয়ত নড়তে না পারে, তবে আক্রান্ত সর্বহারা মানুষরা জানবেন তাদের পাশে দাঁড়াবার মতো মানুষ এখনও আছে।
বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ধারাবাহিকভাবে চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সরকারী চাকরি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈষম্য কিছুটা কমলেও অন্য ক্ষেত্রে অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। বার বার বলা সত্ত্বেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ আইন, সংখ্যালঘু কমিশন বা পৃথক মন্ত্রণালয়ের দাবি উপেক্ষিত থেকেছে। সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ...’ ও ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রেখে দেয়া হয়েছে এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের জটিলতাও দূর হয়নি। একইভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, যে শান্তিচুক্তির জন্য ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছিলেন।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমস্যার সঙ্গে বিহারি ও রোহিঙ্গাদের সমস্যার অনেক পার্থক্য আছে। এ দেশে বিহারি বলা হয়- যারা ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে কিংবা উন্নততর জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশে আগত উদ্বাস্তুদের অধিকাংশ বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা উর্দুভাষী হওয়ার কারণে সাধারণভাবে এদের ‘বিহারি’ বলা হয়। একইভাবে দেশভাগের কারণে পাকিস্তানের উভয় অংশ থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দু ও শিখ মাতৃভূমি ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে অবস্থানকারী অধিকাংশ অবাঙালী পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে ছিলেন এবং অনেকে সরাসরি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে অংশগ্রহণ করেছেন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী অবাঙালীরা তাদের বাঙালী জ্ঞাতিভাই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামের নেতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুদ্ধে পরাজয় অনিবার্য জেনে ’৭১-এর ডিসেম্বরের আগেই পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। যারা থেকে গিয়েছেন তাদের সিংহভাগের আনুগত্য ছিল পাকিস্তানের প্রতি, যারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি। তারা আশা করেছিলেন বাংলাদেশ সরকার যেভাবে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালীদের ফেরত এনেছে, একইভাবে পাকিস্তানও বাংলাদেশে আটকেপড়া অবাঙালী পাকিস্তানীদের ফেরত নেবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ তাদের নাগরিকদের মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করলেও পাকিস্তান তা করেনি।
আটকেপড়া পাকিস্তানীরা গত ৪২ বছর ধরে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার জন্য সংগঠন-আন্দোলন করছেন, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দেন-দরবার করছেন, কিন্তু পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হয়নি। বরং পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইসিআই তাদের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী বলয় বিস্তারে রোহিঙ্গাদের মতো বিহারিদেরও ব্যবহার করছে। মিরপুরের বিহারি ক্যাম্পের সাম্প্রতিক হত্যা ও সন্ত্রাসের ঘটনার জের ধরে গত ২ জুলাই (২০১৪) পুলিশ মোহাম্মদপুর থেকে জনৈক শান্নুকে গ্রেফতার করেছে। এ বিষয়ে ৫ জুলাই ‘বিহারি শান্নু গ্রেফতার’ শিরোনামে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবদেন বলা হয়েছে-
‘১৯৭৮ সালে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের পাকিস্তান পাঠানোর লক্ষ্যে এসপিজিআরসি নামের সংগঠনের সৃষ্টি হয়। সারাদেশের ১৩টি জেলায় ৭০টি বিহারি ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে ২৭টি এবং মিরপুরে ৬টি ক্যাম্প রয়েছে। ১৯৯২ সালের মক্কাভিত্তিক সংগঠন রাবিতা ইসলাম নামের একটি এনজিওর জরিপ মোতাবেক দেশের ৭০টি ক্যাম্পে ওই সময় জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৩ জন। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। ভোটার সংখ্যা কমপক্ষে ২ লাখ। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন রয়েছে ক্যাম্পগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসপিজিআরসির প্রতিষ্ঠাতা নাসিম খান মারা গেলে এর প্রধান হন গ্রেফতারকৃত শান্নুর পিতা জব্বার খান। তিনি কাগজে-কলমে জেনেভা ক্যাম্পের অধিবাসী হলেও বসবাস করেন আসাদ এ্যাভিনিউয়ের ৩৬/সি নম্বর ওই বাড়িতে। ৪ ছেলে ২ মেয়ে। সবার ছোট ছেলে শান্নু।
জেনেভা ক্যাম্পের অবৈধ পানি, বিদ্যুত, মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত সন্ত্রাসী ছট্টু। জব্বার খান জনকণ্ঠের কাছে দাবি করেন, তিনি ২০০৫ সালে এসপিজিআরসির মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের নির্বাচিত সভাপতি।
সূত্র বলছে, জব্বার খান এসপিজিআরসির সভাপতি হওয়ার পর অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে তার ছেলে গ্রেফতারকৃত শান্নু। গড়ে তোলে শান্তি কমিটি। শান্নু সব অবৈধ ব্যবসার আধিপত্য নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এরপর শুরু হয় শান্নু ও ছট্টু গ্রুপের মধ্যে নিয়মিত মারামারি। কারণ জেনেভা ক্যাম্পগুলোতে ব্যবহৃত বিদ্যুত ও পানির কোন বিল সরকারকে দিতে হয় না। এমন সুযোগে জেনেভা ক্যাম্পগুলো থেকে আশপাশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ বিদ্যুত ও পানির সংযোগ দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণকারীরা।
দুই গ্রুপের আধিপত্যের জেরে ২০১৩ সালের ২৯ মার্চ জেনেভা ক্যাম্পে ব্যাপক মারামারি হয়। ওই মামলায় শান্নুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া এক অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জেনেভা ক্যাম্পগুলো থেকে যে পরিমাণ অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে তাতে প্রতিমাসে সরকারের ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, শান্নু আত্মগোপনে থাকলেও তার আধিপত্য ছিল। বিশেষ করে গাঁজা, হেরোইন, আফিম, চরস, হালের ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক ব্যবসার একাংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল শান্নুর শান্তি কমিটির কাছে। মাদক ও জালমুদ্রার ব্যবসা ছাড়াও ঢাকার বিহারি ক্যাম্পগুলো দেশী-বিদেশী জঙ্গীদের নিরাপদ বাসস্থান। প্রসঙ্গত, বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব গুলশান কুমার হত্যা মামলার জেল পলাতক আসামি দাউদ মার্চেন্ট ও আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীম ও আরেক মাফিয়া ডন ছোট শাকিলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাহিদ শেখ দীর্ঘদিন মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে পলাতক ছিল। তারা আটকেপড়া পাকিস্তানীদের মাধ্যমে এ দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় বাংলাদেশী পাসপোর্ট তৈরি করে দিব্যি বসবাস করছিলেন বলে ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এমন তথ্য প্রকাশ পায়। নিয়ন্ত্রণকারীদের সহযোগিতায় মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি বোমা তৈরির কারখানা।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়িতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে শাহীন ও গ্রেফতারকৃত শান্নুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাদিম আহত হন। এ ঘটনায় আহত নাদিম ও তাঁর ভাই বশির এবং শাহীনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তথ্য মতে, জেনেভা ক্যাম্পে বোমা তৈরির কারখানা ও কারখানায় মজুদ থাকা শতাধিক তাজা বোমা উদ্ধার হয়। (জনকণ্ঠ, ৫ জুলাই, ২০১৪)
আইএসআই-এর মদদে জামায়াতে ইসলামী কীভাবে গত ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক গঠন করেছে এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় গণমাধ্যমে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। জামায়াত-বিএনপির জোট সরকারের আমলে আমরা বাংলাদেশে জামায়াতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে গঠিত শতাধিক জঙ্গী মৌলবাদী সংগঠনের তালিকা প্রকাশ করেছিলাম, যেখানে ১৭টি ছিল রোহিঙ্গাদের। আইএসআই ও জামায়াতের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে বার্মার আরাকান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অংশ ও কক্সবাজারকে নিয়ে পৃথক রোহিঙ্গা মুসলিম রাষ্ট্র গঠন। যে কারণে জামায়াত ও জঙ্গীদের গোপন তৎপরতা ও সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শতকরা ৯০ ভাগ পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।
শতকরা ৯৫ ভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় রেডক্রসের ক্যাম্পে অবস্থানকারী পাকিস্তানী শরণার্থী বা আটকেপড়া পাকিস্তানীরা অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তবে এসব পাকিস্তানী নাগরিকদের সন্তানরা, যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, অধিকাংশই বাংলাদেশে লেখাপড়া করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে এবং বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গাদের মতো এদের অনেকে মাতৃভাষা ভুলে মূল স্রোতে মিশে গিয়েছে।
প্রায় পনের বছর আগে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে কিছু তরুণ তাদের নাগরিকত্বের সমস্যা নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে বা করতে যাচ্ছিল। তারা বলেছিল বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়ে তারা হাইকোর্টে রিট করেছে, আমরা যেন তাদের দাবি সমর্থন করি। আমি তাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত বলেছি এবং সমর্থন করে লিখেছিও। শুধু তাই নয়, যখন জেনেছি স্কুল ও পাঠ্যপুস্তকের অভাবে উর্দুভাষার চর্চা উঠে যাচ্ছে, তাদের অনেকে উর্দু পড়ালেখা এমনকি বলাও ভুলে গেছে, আমি বলেছি তারা যদি চায় এ বিষয়েও আমি ভারত ও পাকিস্তানে আমার উর্দুভাষী বন্ধুদের সহযোগিতার জন্য বলতে পারি। আমরা মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য লড়াই করেছি, রক্ত দিয়েছি, ২১শে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বের সকল ভাষার অস্তিত্ব, বিকাশ ও মর্যাদা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে ’৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত অনেক উর্দুভাষী, অবাঙালী, পাহাড়ি, আদিবাসীও অবদান রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বহু দেশ, বহু ভাষাভাষী, বহু জাতি ও বহু ধর্মের মানুষ আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন। এসব অস্বীকার করা হলে নিজেদের দীনতা ও নীচতাই প্রকাশ পাবে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্ম, জাতিসত্তা, ভাষা ও মতের মানুষ যতদিন পর্যন্ত সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাস করতে না পারবে ততদিন আমরা বিশ্বসভায় সভ্য দেশ ও জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে পারব না। জাতি-ধর্ম-ভাষা-লিঙ্গ-বিত্ত নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের যেমন দায়িত্ব, একই সঙ্গে নাগরিক সমাজেরও, বিশেষভাবে যারা সংখ্যাগুরুর অংশ। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার করাল গ্রাস থেকে নিরীহ রোহিঙ্গা ও আটকেপড়া পাকিস্তানীদের রক্ষা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ভেতর আইএসআই, সৌদি আরব ও জামায়াতের মদদপুষ্ট এনজিওদের তৎপরতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ সমস্যাটি জাতীয় নিরাপত্তার অন্তর্গত। জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর নাম ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছিল।
রোহিঙ্গা ও বিহারিদের দারিদ্র্য ও শিক্ষার অভাবসহ যাবতীয় অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জামায়াত বা অন্য কেউ যাতে রাষ্ট্র ও জাতিবিরোধী কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে বিষয়ে সরকার ও নাগরিক সমাজকে যেমন সচেতন থাকতে হবে, একইভাবে সন্ত্রাসী খুঁজতে গিয়ে নিরীহ বিহারি ও রোহিঙ্গারা যাতে কোন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। এসব শরণার্থীর ভেতর যারা পাকিস্তানে বা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চান তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় নিষ্পত্তি না হলে আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে ভুক্তভোগী সকল দেশকে।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থীর সংখ্যা চার কোটি তিরিশ লাখ। এদের ভেতর সর্বাধিক হচ্ছে প্যালেস্টাইনের শরণার্থী, যাদের সংখ্যা প্রায় অর্ধ কোটি। সরকারী হিসেবে বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানী ও রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দেড় লাখের মতো হলেও বেসরকারী হিসেবে এদের সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপরে। স্বদেশবঞ্চিত এই অসহায় মানুষদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াকে বলা হয় অভিবাসীদের দেশ, কারণ এ দুটি দেশ গঠন করেছে অভিবাসীরা। শরণার্থী সমস্যা নিরসনের ক্ষেত্রে এ দুটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার শরণার্থী সমস্যা আক্রান্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে বর্তমান বিশ্বের এই জ্বলন্ত সমস্যা বহুলাংশে সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে, কারণ উন্নয়নশীল জনবহুল এই দেশটি গত ৪২ বছর ধরে শরণার্থী লালন করছে। ক্রমবর্ধমান এই সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ব্যর্থ হয় তাতে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাই শুধু উপেক্ষিত হবে নাÑ বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস প্রতিহত করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।