Sunday, November 15, 2015

আরও সুসংহত ও সুস্থির অর্থনীতির প্রত্যাশায়-ড. আতিউর রহমান


জানুয়ারী ১, ২০১৫
বছরের শেষ দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালের অর্থনীতির একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। সংক্ষিপ্ত বলে তাতে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা সম্ভব হয়নি। তাই এই কলামে আরও সুবিস্তারিতভাবে গেল বছরের অর্থনৈতিক চালচিত্র এবং আগামী বছরের সম্ভাবনার কথা বলতে চাই।

২০১৩ সালের যাত্রা শুরু হয়েছিল হরতাল-অবরোধের মধ্য দিয়ে। সে বছরের প্রায় পুরো সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ জন্যে ২০১৪এর বড় অংশ জুড়ে মন্থর বিনিয়োগ ছিল আলোচিত বিষয়। এসব কারণে বছরের শুরুতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রশ্নে কিছুটা অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করা যায়। অর্থনীতির সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বাস্তবসম্মত নানা ধরনের বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ। তবে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সুস্থিতির প্রভাবে বছর শেষে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনীতির সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বাস্তবসম্মত বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ

অর্থনীতির সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বাস্তবসম্মত বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ

আর্থিক খাতের অধিকাংশ সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেলেও সব মিলিয়ে ২০১৪ সাল ছিল মিশ্র ফলাফলের বছর। সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গত পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালেও বাংলাদেশ ব্যাংক বিচক্ষণ মুদ্রানীতি গ্রহণ করে।

পাশাপাশি অব্যাহত থাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং কার্যক্রম। ফলে প্রবৃদ্ধির ভিত্তিভূমি হয় প্রসারিত– যা টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে অপরিহার্য। জনগোষ্ঠীর সবাইকে জাতীয় উৎপাদনে সম্পৃক্ত করা এবং দরিদ্রের আর্থিক ক্ষমতায়নই হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ের মূল উদ্দেশ্য। অর্থনীতি এর সুফল ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। গেল বছরের শেষ দিকে বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধির ধারা জোরালোভাবে ফিরে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে এসেছে নব উদ্যম। ভোক্তা ও ব্যবসায়িক আস্থায় এসেছে নতুন গতি। তার ঊর্ধ্বমুখী ঢেউ লেগেছে আমদানি ও রপ্তানিতে। বেড়েছে রেমিট্যান্স। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে সৃষ্টি হয়েছে নতুন রেকর্ড।

আরও লক্ষ্যণীয় ছিল ঋণের সুদের হার ও মূল্যস্ফীতির নিম্নগতি। যদিও এই নিম্নগতি ছিল ধীর, তবু ক্রমাগত মূল্যহ্রাস ভোগ ও বিনিয়োগ উদ্বুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহে যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে ছিল বলেই প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সন্তোষজনক সংখ্যা বেরিয়ে এসেছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। জীবনের আয়ুষ্কাল, দারিদ্র্যের হার, মাথাপিছু আয়, প্রকৃত মজুরির মতো অনেক সূচকেই চোখে পড়েছে ইতিবাচক পরিবর্তন।

সামষ্টিক অর্থনীতি

অর্থবছর ২০০৯-এ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫.১৪ শতাংশ, সেখানে অর্থবছর ২০১৪-এ ৬.১২ শতাংশসহ গত পাঁচ অর্থবছরে গড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.১৪ শতাংশ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় থাকলে ২০১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশ ওপরে থাকবে বলে আশা করা যায়।
জনগোষ্ঠীর সবাইকে জাতীয় উৎপাদনে সম্পৃক্ত করা ও দরিদ্রের আর্থিক ক্ষমতায়নই অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ের মূল উদ্দেশ্য

জনগোষ্ঠীর সবাইকে জাতীয় উৎপাদনে সম্পৃক্ত করা ও দরিদ্রের আর্থিক ক্ষমতায়নই অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ের মূল উদ্দেশ্য

মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে কমছে। জুন ২০১৩ শেষে গড় বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৭ শতাংশ, সেখানে জুন ২০১৪ শেষে তা কমে দাঁড়ায় ৭.৪ শতাংশ। আর নভেম্বর ২০১৪ শেষে আরও কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭.১ শতাংশ।

অর্থবছর ২০০৯-এ মোট আমদানি ব্যয় হয়েছিল প্রায় তেইশ বিলিয়ন ডলার। সেখানে গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে আমদানি বৃদ্ধির হার দশ ভাগের ওপর থাকবে বলে ধারণা করা যায়। বছরের শেষভাগে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন উপকরণাদি আমদানির ঊর্ধ্বমুখী ধারা সামনের মাসগুলোতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি জোরদার করার শক্ত পাটাতন তৈরি করছে। হালে এলসি খোলা ও এলসি মেটানো দুই-ই বাড়ছে। চলতি হিসাবে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিলেও তা একটি উদীয়মান অর্থনীতির জন্যে স্বাভাবিক।

অর্থবছর ২০০৯-এ মোট রপ্তানি আয় ছিল প্রায় ষোল বিলিয়ন ডলার। সেখানে গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ত্রিশ বিলিয়ন ডলার। তবে রপ্তানি বৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরে খানিকটা মৃদু হবে বলে অনুমান করা যায়। মন্দা-পরবর্তী ইউরোপ ও আমেরিকার দুর্বল চাহিদা এর মূল কারণ।
২০১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশ ওপরে থাকবে বলে আশা করা যায়

২০১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশ ওপরে থাকবে বলে আশা করা যায়

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিও বেশ লক্ষ্যণীয়। অর্থবছর ২০০৯-এ রেমিট্যান্স এসেছিল দশ বিলিয়ন ডলার। সেখানে গত অর্থবছরে এসেছে চৌদ্দ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ অর্থবছর এ সময়ে রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ। ২০১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধিও দশ শতাংশের ওপর থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ার প্রভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেড়ে চলেছে। দেশের তেতাল্লিশ বছরের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এই মজুদ বাইশ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে– যা দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

টাকার মূল্যমান এ বছরও স্থিতিশীল অবস্থানে ছিল। ২০১৪এর ডিসেম্বরের শেষে বিনিময় হার ছিল ডলার প্রতি প্রায় আটাত্তর টাকা।

জনগণের প্রকৃত আয় বাড়ায় গত অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯০ ডলার। গত ছয় বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। একজন শ্রমজীবী এখন একদিনের মজুরি দিয়ে ১০-১১ কেজি চাল কিনতে পারে। ছয় বছর আগেও বড়জোর তিন কেজি কিনতে পারত। তিন কেজি চাল হলেই তাদের দিন চলে যায়। ফলে বর্তমানে বাকি অর্থ দিয়ে তারা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে। সামগ্রিকভাবে বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান।

ব্যাংকিং খাত

গত পাঁচ বছরে ব্যাংকগুলোর মুনাফার একটি বড় অংশ মূলধনে স্থানান্তর হবার কারণে ব্যাংকিং খাতের মূলধন-ভিত্তি শক্তিশালী হয়েছে। ব্যাংকগুলো সেপ্টেম্বর ২০১৪ প্রান্তিকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের প্রায় এগার শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮ শেষে ব্যাংকগুলোর সংরক্ষিত মূলধন ছিল একুশ হাজার কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর ২০১৪ শেষে দাঁড়ায় পঁয়ষট্টি হাজার কোটি টাকা।
টাকার মূল্যমান এ বছরও স্থিতিশীল অবস্থানে ছিল

টাকার মূল্যমান এ বছরও স্থিতিশীল অবস্থানে ছিল

২০০৮ সালে ব্যাংকিং খাতে শ্রেণিকৃত ঋণের হার ছিল মোট ঋণের ১০.৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বর ২০১৪ প্রান্তিকে শ্রেণীকৃত ঋণের হার দাঁড়ায় ১১.৬ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১২.৭৯ শতাংশ। ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিংয়ের নীতিমালা বিশ্বমানে উন্নীত করা, গুণমানের ঋণ প্রদান ও ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার প্রভাবে শ্রেণিকৃত ঋণের হার কিছুটা বেড়েছে। ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়ে আরও মনোযোগী হতে ক্রমাগত নির্দেশ দেওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়োপযোগী নীতি প্রণয়নের কারণে ২০১৪এর শেষ প্রান্তিকে শ্রেণিকৃত ঋণের হার কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকেও বেশ খানিকটা চাপ নিতে হচ্ছে। এ দিকটায় বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো রকম ছাড় দেবে না। অবশ্যই ব্যাংকগুলোকে সর্বক্ষণ গুণমানের ঋণ দেবার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। নিয়ম-নীতি সংস্কার করে হয়তো ভালো গ্রাহকদের কিছুটা সুবিধা দেওয়া হতে পারে। কিন্তু মন্দ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে দ্বিধা করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থানীয় ও বৈদেশিক অর্থায়ন সুলভ রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে। এদিকে ব্যাংক ঋণের সুদহারও ধীরে ধীরে কমে আসছে। অক্টোবর ২০১৪ শেষে ঋণের গড় সুদহার ছিল সাড়ে বার শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ কম। আমানতের সুদহারের চেয়ে ঋণের সুদহার অধিকমাত্রায় কমায় আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড কমে অক্টোবর ২০১৪ শেষে দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্ট।

অক্টোবর ২০১৪ শেষে বেসরকারি খাতে প্রকৃত ঋণপ্রবাহ বেড়েছে বার শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এগার শতাংশ। ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বৈদেশিক উৎস থেকে আসা বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.২ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ২০১৪তে বৈদেশিক ঋণ অনুমোদন করা হয় প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি।

অক্টোবর ২০১৪ শেষে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য (ট্রেজারি বিল, বন্ডে বিনিয়োগসহ) ছিল প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অলস তারল্য ছিল মাত্র তিন হাজার তিনশ কোটি টাকা। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ও শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে তারল্য চাপ কিছুটা বেড়েছে। ফলে পুরো বছর কলমানি সুদের হার কম থাকলেও বছরের শেষ দিকে কলমানি সুদের হার কিছুটা বেড়েছে।

২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ কলমানি সুদের গড় হার ছিল ৮.৩ শতাংশ। অক্টোবর ২০১৪এর শেষে আমানত ১৩ শতাংশ বেড়ে ৬ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যা জিডিপি’র প্রায় ষাট ভাগ। এটি ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থার পরিচায়ক।
একজন শ্রমজীবী এখন একদিনের মজুরি দিয়ে ১০-১১ কেজি চাল কিনতে পারে

একজন শ্রমজীবী এখন একদিনের মজুরি দিয়ে ১০-১১ কেজি চাল কিনতে পারে

সরকার এখন ব্যাংক থেকে আগের চেয়ে কম হারে ঋণ নিচ্ছে যা রাজস্ব ক্ষমতায়নের প্রতিফলক। অক্টোবর ২০১৪ শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারি খাতে প্রকৃত ঋণ বেড়েছে মাত্র আড়াই শতাংশ, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল সতের শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২,৮০৯ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চুয়াল্লিশ শতাংশ বেশি।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি

বাংলাদেশ ব্যাংক গত পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৪তেও সামাজিক দায়বোধ প্রণোদিত অর্থায়ন বিশেষ করে কৃষি, এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন বাড়ানোর কৌশল অব্যাহত রাখে। পাশাপাশি গ্রহণ করে নিম্নআয়ের মানুষদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম। এর ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ছে. যা প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।

২০১৪এর সেপ্টেম্বর শেষে দেশে মোট ব্যাংক শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ৮,৮৪৯টি, যার সাতান্ন ভাগই পল্লী শাখা। গত পাঁচ বছরে ব্যাংক শাখা বেড়েছে প্রায় সতের শতাংশ। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুফল ভোগকারী হতদরিদ্র মানুষ, অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, গার্মেন্টস শ্রমিক সব মিলে এসব ব্যাংক হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১.৪৩ কোটি, যার প্রায় সত্তর ভাগ হিসাবই কৃষকদের।

এ বছর ভাগ্যবিড়ম্বিত কর্মজীবী পথশিশুদের নামেও ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষক ও অসহায় মানুষদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব সচল রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু করে। ৩১টি ব্যাংক এ তহবিলের সুবিধা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত ‘স্কুল ব্যাংকিং’ এর আওতায় স্কুল ছাত্রছাত্রী ব্যাংক হিসাব সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় আট লাখ এবং এসব হিসাবে জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬১২ কোটি টাকা।

অর্থবছর ২০০৯-এ কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছিল নয় হাজার তিনশ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ষোল হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ কৃষিঋণ বছরে গড়ে প্রায় ১২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আগে বর্গাচাষিরা ব্যাংক ঋণ পেত না। এ উপেক্ষিত বর্গাচাষিদের সহজ শর্তে কৃষিঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯ সালে ৫০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় গত পাঁচ বছরে ৯ লাখ ৩৮ হাজার বর্গাচাষিকে দেড় হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়েছে।
ভাগ্যবিড়ম্বিত কর্মজীবী পথশিশুদের নামেও ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে

ভাগ্যবিড়ম্বিত কর্মজীবী পথশিশুদের নামেও ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে

নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই খাতে অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ২০১০ সাল থেকে শুরু করে ব্যাংকগুলো সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত বাইশ লাখ উদ্যোক্তাকে তিন লাখ চৌত্রিশ হাজার কোটি টাকা এসএমই ঋণ দিয়েছে– যার মধ্যে নারী উদ্যোক্তা পাঁচ শতাংশ। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে এ বছর ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এসএমই খাতের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখে বানানো হয়েছে ‘নারী উদ্যোক্তা তহবিল’।

এসএমই খাতে গত পাঁচ বছরে দেশে আড়াই লাখের বেশি নতুন উদ্যোক্তাকে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এ সময়ে এ খাতে আমরা পেয়েছি পনের লাখের মতো নতুন কর্মসংস্থান।

কম খরচে ও দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের কাছে টাকা পাঠানোর জন্যে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ঘটেছে এক বিপ্লব। মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব দ্বিগুণ বেড়ে ২০১৪ এর নভেম্বরে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ। উনিশটি ব্যাংক ৫ লাখ ১৯ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে এ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শহরের কর্মজীবী মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে গ্রামে তাদের পরিবার-পরিজনদের কাছে টাকা পাঠায়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গড়ে প্রতিদিন তিনশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বছর ‘অ্যালায়েন্স ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন পলিসি পুরস্কার’-এ ভূষিত হয়েছে।

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থবছর ২০১০-এ প্রথম ‘গ্রিন ব্যাংকিং’ ধারণা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নযোগ্য খাতে ২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল চালু করে। এ তহবিল থেকে নভেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত ১৬৪ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন করা হয়েছে। গত অর্থবছরে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপনে এডিবি’র অর্থায়নে ৪০০ কোটি টাকার আরেকটি তহবিল গঠন করা হয়।

দেশের আনাচে কানাচে ব্যাংকের অনুরূপ প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে ২০১৪তে ‘এজেন্ট ব্যাংকিং’ নীতিমালা প্রণয়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ৫টি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কৃষিঋণ বছরে গড়ে প্রায় ১২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে

কৃষিঋণ বছরে গড়ে প্রায় ১২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে

বাংলাদেশ ব্যাংক সিএসআর কর্মকাণ্ডে (সামাজিক দায়বদ্ধতা) সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুদ্ধ করেছে। সিএসআর খাতে ২০০৯ সালে ব্যাংকগুলোর ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি টাকা, গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে আটগুণ বেড়ে তা ৪৪৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালায় সিএসআর ব্যয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষা ও ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হবে। সিএসআর ব্যয়ের নামে কোনো ব্যাংক জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান হয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক গত অর্থবছরে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করে।

প্রযুক্তি প্রসারণ ও বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন সহজীকরণ

সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেকে একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলছে। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও করেছে ডিজিটাইজড। বর্তমানে প্রায় নব্বই শতাংশ ব্যাংক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। অনলাইন সিআইবি সেবা, অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ ও ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক চালুর পর ব্যাংকিং লেনদেনে গতি বাড়াতে ‘রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস)’ সিস্টেম বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।

ই-ব্যাংকিং ও ই-কমার্স প্রসারেও সহযোগিতা করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ভেতরে দুই হাজারেরও বেশি ই-কমার্স ঠিকানা কাজ করছে। অনলাইন কেনাকাটার দ্রুত প্রসারে অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে। বিদেশে ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয়, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ, আমদানি-রপ্তানিসহ ব্যবসায়িক প্রয়োজন ইত্যাদির জন্য পূর্বানুমোদন গ্রহণের আবশ্যকতা প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন বিদেশি নাগরিক ও অনিবাসী বাংলাদেশিরা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোতে সহজেই বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব খুলতে ও পরিচালনা করতে পারেন।

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার দেড় বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশী পেশাজীবী বা বৈজ্ঞানিক সংস্থার সদস্য ফি, বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিভিন্ন ফি, হোটেল বুকিং এবং অনলাইনে সফট্ওয়্যার, অ্যাপস, ই-বুকসহ অন্যান্য পণ্য ও সেবার মূল্য পরিশোধ সহজ করা হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডধারী না হয়েও ‘ভারচুয়াল কার্ড’ ব্যবহার করে সাধারণ জনগণও বিদেশে এরূপ ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে পারছেন।
এসএমই খাতের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখে বানানো হয়েছে ‘নারী উদ্যোক্তা তহবিল’

এসএমই খাতের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখে বানানো হয়েছে ‘নারী উদ্যোক্তা তহবিল’

নজরদারি জোরদারকরণ

ব্যাংকিং খাতের আর্থিক জালিয়াতি বন্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নজরদারি আরো জোরদার করেছে– যাতে অনুরূপ ব্যাংকিং অনিয়মের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রাসঙ্গিক ড্যাশবোর্ড চালু করে নজরদারির গুণমানে ব্যাপক উন্নতি আনা হয়েছে।

সর্বোপরি, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উন্নয়নমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকা- দেশে আর্থিক খাতের সুস্থিতি বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী মন্দা ও জাতীয় নানা বাধার মাঝেও বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ বছরসহ গত ছয় বছর ধরে বেশ সাফল্যের ধারাতেই রয়েছে। সম্প্রতি আইএমএফ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘স্থিতিশীল’ ও আর্থিক খাতের পরিস্থিতিকে ‘সুদৃঢ়’ বলে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।

২০১৪এর শেষ পর্বে অভ্যন্তরীণ চাহিদার যে নতুন প্রণোদনা সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে ২০১৫ অর্থবছরে ৬.৫ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হবে না। তবে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি থাকবে। এর কারণ ত্রিবিধ: সরকারি নতুন বেতন কাঠামো, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতায় তেলের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা ও চাহিদাতাড়িত ঊর্ধ্বচাপ। এগুলো মাথায় রেখেই বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী মুদ্রানীতি সাজাবে– যাতে ২০১৫ এর অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার ৬.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি অর্জন করা সম্ভব হয়।

গেল বছরে অবকাঠামো ও রাজস্ব আহরণের গতি আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল। এ দুটো দিকে ২০১৫তে জোর নজর দিতে হবে। তেলের দাম কমে যাবার ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্যে বরাদ্দ রাজস্বে ঘাটতি কিছুটা কমবে। তাই বলে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। বরং রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াতে হবে আরও সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যে। গভীর সমুদ্র বন্দর, চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, মেট্রোরেলসহ বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণে চাই বাড়তি রাজস্ব। এনবিআর-কে ডিজিটাইজ করে, বাড়তি জনসম্পদ দিয়ে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রাজস্ব আহরণের মাত্রা ও গতি বাড়াতে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।

নজর দিতে হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন ও বড় বড় শহরের ট্রাফিক মোকাবেলার দিকে। কারণ প্রতিটি বড় শহর একটি উদীয়মান অর্থনীতির জন্যে একটি একটি ‘প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র’ হিসেবে কাজ করে।
বিশ্বব্যাপী মন্দা ও জাতীয় নানা বাধার মাঝেও বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ছয় বছর ধরে সাফল্যের ধারাতেই রয়েছে

বিশ্বব্যাপী মন্দা ও জাতীয় নানা বাধার মাঝেও বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ছয় বছর ধরে সাফল্যের ধারাতেই রয়েছে

উপরন্তু, আর্থিক খাতে সুশাসন ও ঋণ-শৃঙ্খলা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিনিয়োগ আস্থা চাঙ্গা করবে। এরই মধ্যে সংশোধিত ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের বলে প্রধান নির্বাহী অপসারণ এবং পাশাপাশি দক্ষদের সুরক্ষা প্রদান এবং পর্ষদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এসবই করা হয়েছে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বাড়ানোর লক্ষ্যে।

নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে ২০১৫এর জন্যে আর্থিক খাতের অন্যতম লক্ষ্য। আর তা করা হচ্ছে বলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও বাড়ছে। এর সঙ্গে বহির্বাণিজ্যের প্রসার যেভাবে ঘটছে তাতে মনে হয় নতুন এই বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে। তাছাড়া, দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে সবার জন্য সমৃদ্ধি অর্জনের পথে সরকারের দূরদর্শী দিক-নির্দেশনা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে অগ্রযাত্রার সহায়ক ভূমিকা পালনে বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয় রয়েছে এবং সদা সক্রিয় থাকবে।

বাংলাদেশের মানুষের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শত বাধা বিপত্তিতেও ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর বুদ্ধিমত্তা। একেই বলে সহনশক্তি বা রেজিলিয়েন্স। জাতি হিসেবে এটিই আমাদের বড় শক্তি। এর প্রমাণ আমরা অতীতে বহুবার পেয়েছি। বিশৃঙ্খল ২০১৩এর পরেও বিশ্বব্যাপী উৎকণ্ঠা ও নেতিবাচক মন্তব্য অসার প্রমাণ করে বাংলাদেশ ২০১৪ অর্থবছরে ৬.১ ভাগের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে আমাদের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির এই ধারা সারাবিশ্বে দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য হবে।

আমার বিশ্বাস, ২০১৫ সালে আমাদের অর্থনীতি আরও সুসংহত হবে। আরও সুস্থির হবে। শুভ নববর্ষ।