Friday, December 7, 2012

তোমরা যারা শিবির করো: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


বেশ কিছুদিন আগের কথা। আমি আমার অফিসে যাচ্ছি, তখন বারান্দায় আমার দুজন ছাত্রের সঙ্গে দেখা হলো, তারা আমাকে কিছু বলল না কিন্তু তাদের দেখে আমার মনে হলো, তারা আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমরা কি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাও?’ তারা মাথা নাড়ল, একজন কুণ্ঠিতভাবে আমার হাতে দুটি বই তুলে দিয়ে বলল, ‘স্যার, আপনাকে এই বই দুটি দিতে এসেছি।’ আমি বই দুটি নিলাম। বিজ্ঞানের ওপর চমৎকার দুটি বই, হাতে নিয়ে বললাম, ‘থ্যাংকু। সুন্দর পাবলিকেশন্স।’ তারপর বই দুটি খুললাম, ভেতরে লেখা ইসলামী ছাত্রশিবির।
মুহূর্তে আমার সারা শরীর শক্ত হয়ে গেল। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আজ্ঞাবহ হয়ে এই দেশে যে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সে জন্য আমি তাদের কখনো ক্ষমা করিনি। আমি জেনেশুনে কখনো কোনো জামায়াতে ইসলামীর নেতার সঙ্গে হাত মেলাইনি। আমার যে আপনজনেরা মুক্তিযুদ্ধে মারা গিয়েছে, তাদের সম্মান দেখানোর জন্য এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমেরিকান এম্বাসির এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে যখন আবিষ্কার করেছি, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরও ডাকা হয়েছে, আমি সেখান থেকে উঠে চলে এসেছিলাম। আমি আমার এই বিশ্বাসের কথা কখনো গোপন রাখিনি। কাজেই এই দুজন ছাত্র সেটা জানে না, তা হতে পারে না।
আমি ছাত্রদের বই দুটি ফেরত দিয়ে অত্যন্ত কঠিন গলায় বললাম, ‘জামায়াতে ইসলামীকে আমি কোন চোখে দেখি, তোমরা জানো না? তোমরা সেই দলের মানুষ হয়ে তোমাদের সংগঠনের বই আমাকে উপহার দিতে এসেছ? তোমরা আমাকে চেনো না?’
ছাত্র দুটির চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় বদর বাহিনীর প্রধান হয়ে নিজামী আর মুজাহিদ কী করেছে, তাদের মনে করিয়ে দিলাম। গোলাম আযম যুদ্ধের সময় কী করেছে এবং বাংলাদেশের জন্মের পরও কীভাবে তারা বিরোধিতা করেছে, সেই কথা বললাম। আমার মতো শিক্ষকেরা জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনের সদস্যদের তৈরি বদর বাহিনীর হাতে কীভাবে মারা গিয়েছে, সেই ঘটনাগুলো বলে তাদের কাছে জানতে চাইলাম, কম বয়সী তরুণ হওয়ার পরও তারা কেমন করে যুদ্ধাপরাধীদের একটা সংগঠনের সদস্য হতে পারল?
একজন ছাত্র দুর্বল গলায় বলল, ‘স্যার, আমরা তো জামায়াতে ইসলামী করি না। আমরা ছাত্রশিবির করি।’
অনেক দিন আগের কথা, জামায়াতে ইসলামী আর ছাত্রশিবিরের মধ্যে পার্থক্যটুকু নিয়ে আমি তাদের কী বলেছিলাম, আমার এখন মনে নেই। শুধু মনে আছে, ছাত্র দুটি মাথা নিচু করে আমার কাছ থেকে ফিরে গিয়েছিল।
নানা কারণে এই ঘটনার কথা আমি ভুলতে পারি না। আমি ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য লেখালেখি করি। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা একটি নতুন বাংলাদেশের সন্তান এবং তারা বড় হয়ে আমাদের দেশটাকে পাল্টে দেবে। আমি যখন সেই কথাটা তাদের বলি, আমার ধারণা, তারা আমার কথা বিশ্বাস করে। তাই তাদের অনেকেই আমার কাছে উৎসাহের কথা, অনুপ্রেরণা কিংবা স্বপ্নের কথা শুনতে আসে। শিবিরের এই দুটি ছেলে নিশ্চয়ই ভেবেছিল, তাদের এই চমৎকার বই দুটি আমাকে মুগ্ধ করবে, আমি উৎসাহসূচক কিছু বলব। অন্য দশজন তরুণের মতো তারাও এক ধরনের দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল, কিন্তু আমি তাদের আশা পূরণ করতে পারিনি। আমার ভয়ংকর রকমের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে তারা নিশ্চয়ই হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিল—কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না।
আমি তাদের কথাগুলোও ভুলতে পারি না। তারা আমাকে বলেছিল যে তারা জামায়াতে ইসলামী করে না, তারা শিবির করে। তাহলে তারা কি সত্যিই বিশ্বাস করে যে তারা জামায়াতে ইসলামী থেকে ভিন্ন? ১৯৭১ সালে এই দেশে জামায়াতে ইসলামী যে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড করেছে, যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে, যে ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড করেছে, সেগুলো তাদের কোনোভাবে স্পর্শ করে না?
এই দুজন ছাত্র ছাড়া আর কখনোই কোনো জামায়াত বা শিবিরকর্মী আমার কাছে কথা বলতে আসেনি, তাই আমি কোনো দিন হয়তো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাব না।

২.
কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, এই দীর্ঘ জীবনে আমি সবচেয়ে বিচিত্র, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয় কী দেখেছি। আমি এতটুকু দ্বিধা না করে বলব, সেটি হচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। তার কারণ, যে বয়সটি হচ্ছে মাতৃভূমিকে ভালোবাসার বয়স, সেই বয়সে তারা ভালোবাসে দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকদের, যারা এই মাতৃভূমির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। যে বয়সে একজন তরুণের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা অনুপ্রাণিত হয় সেই মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকারীদের দিয়ে। যে বয়সে তাদের স্বপ্ন দেখার কথা দেশের বড় বড় লেখক, শিল্পী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সাংবাদিককে নিয়ে, সেই বয়সে তারা আনুগত্য মেনে নিয়েছে সেই সব মানুষের, যারা আলবদর বাহিনী তৈরি করে একাত্তরে এই দেশের লেখক, শিল্পী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী আর সাংবাদিকদের হত্যা করেছে! যে বয়সে তাদের একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রভাতফেরি করার কথা, ষোলোই ডিসেম্বরে স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার কথা, পয়লা বৈশাখে রাজপথে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা যে শুধু এই অবিশ্বাস্য আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে রাখে তা নয়, তারা এগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। যে বয়সে তাদের মুক্তচিন্তা শেখার কথা, গান গাওয়ার কথা, নাটক করার কথা, আদর্শ নিয়ে ভাবালুতায় ডুবে যাওয়ার কথা, সেই সময় তারা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে নিজেদের আটকে রাখতে শেখে, সাম্প্রদায়িক হতে শেখে, ধর্মান্ধ হতে শেখে। যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা সেই অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে—সে জন্য তারা কত দূর যেতে পারে, সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি, সেই ভয়ংকর কাহিনি আমি কখনো কাউকে বলতেও পারব না!
যখন এই বাংলাদেশের সব মানুষ দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন ইসলামী ছাত্রশিবির নামে এই সংগঠনের হতভাগ্য তরুণদের পথে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য। খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাই, এখনো দেশের আনাচকানাচ থেকে তাদের ধরে জেলে ঢোকানো হচ্ছে। আমার খুব জানার ইচ্ছে করে যে নেতারা তাদের বুঝিয়েছে, রাস্তায় নেমে চোরাগোপ্তা হামলা করে পুলিশের গাড়ি পোড়াতে হবে, নিজের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করতে হবে। সেই সব নেতা কি তাদের সন্তানদেরও পথে নামিয়েছে? আমি মোটামুটি নিশ্চিত, সেটি ঘটেনি। আমি আগেও দেখেছি, এই নেতারা যখন তাদের কর্মী বাহিনীকে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়, তখন তাদের সন্তানেরা ইংরেজি মিডিয়াম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে।
আমি অনেক চিন্তা করেছি, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারিনি, কেমন করে বাংলাদেশের মতো রক্তস্নাত একটি দেশে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা নৃশংস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, সেখানে একজন মানুষ মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের ভালো না বেসে তাদের হত্যাকারীদের ভালোবাসতে পারে! আমার মনে আছে, আমি বহুকাল পরে যখন প্রথম এই দেশে ফিরে এসেছিলাম, তখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটা মিছিল দেখে একধরনের অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তখন লক্ষ করেছিলাম, একজন ছাত্র তার হাতের ফাইল দিয়ে নিজের মুখটি ঢেকে রেখেছে, যেন আমি তার মুখটা দেখতে না পারি। আমার সামনে এই পরিচয় দিতে তার লজ্জা কিন্তু এই মিছিল থেকে তার বের হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই—এর চেয়ে দুঃখের ব্যাপার আর কী হতে পারে?
একজন ছাত্র কেমন করে শিবির করে, তার একটি উত্তর অবশ্য আমি একবার খুঁজে পেয়েছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র একবার আমাকে একটি এসএমএস করে জানিয়েছিল যে সে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, খুব ভালো ছাত্র এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার খুব ইচ্ছে। তার বিভাগীয় প্রধান জামায়াতে ইসলামীর লোক এবং তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সে যদি শিবির না করে, তাহলে তাকে শিক্ষক হতে দেওয়া হবে না। সে জন্য সে শিবিরে যোগ দিয়েছে এবং এটি নিয়ে তার কোনো অহংকার নেই। সেই এসএমএসটিতে আমি একজন মেরুদণ্ডহীন অসহায় হতভাগা মানুষকে আবিষ্কার করেছিলাম। তার জন্য কোনো মমতা নয়, আমি করুণা অনুভব করেছিলাম। আমি ইচ্ছে করলেই সেই ছাত্রটিকে খুঁজে বের করতে পারতাম, তার নীতিহীন বিভাগীয় প্রধানের পরিচয় জানতে পারতাম কিন্তু আমি তার কিছুই করিনি—আমার রুচি হয়নি।
আমার মাঝেমধ্যে জানার ইচ্ছে করে, এ ধরনের কারণে কতজন তরুণ শিবিরে যোগ দিয়েছে—কোনো স্বপ্ন নয়, কোনো আদর্শ নয়, শুধু স্বার্থ, শুধু চাওয়া-পাওয়া। মাঝেমধ্যেই পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই, জামায়াতে ইসলামীর নাকি অনেক অর্থবিত্ত, তাদের অনেক ধরনের ব্যবসা। এই দলে যোগ দিলে নাকি তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা হল দখল করে রাখে, তাদের দল করলে সেই হলে সিট পাওয়া যায়। তারা কলেজ দখল করে রাখে, তাদের দল করলে সেই কলেজে ভর্তি হওয়া যায়। পত্রপত্রিকায় দেখি, পরিচিতদের কাছে শুনি, তাদের দল নাকি অত্যন্ত সংগঠিত। আদর্শ ছাড়া কিংবা ভুল আদর্শের সংগঠন কি খুব বেশি দিন টিকে থাকতে পারে? দীর্ঘদিন মিলিটারির শাসনে থাকার কারণে মানুষ যখন বিভ্রান্ত ছিল, তখন এই দেশে জামায়াতে ইসলামীরা ইলেকশনে ৩০টার মতো সিট পেয়েছিল। (কী লজ্জা!) যখন দেশের মানুষ গণতন্ত্রের ছোঁয়া পেতে শুরু করেছে, একটু বুঝতে শুরু করেছে তখন তাদের সিটের সংখ্যা এক-দুইয়ে নেমে এসেছিল। উপায় না দেখে তখন তারা বিএনপির ঘাড়ে চড়ে বসেছে, আবার তারা গোটা ত্রিশেক সিট পেয়েছে, মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছে। দেশের মানুষ যখন আবার সজাগ হয়েছে, তখন সিটের সংখ্যা আবার এক-দুইয়ে নেমে এসেছে। এখন তারা কার ঘাড়ে উঠবে। এই দেশে যদি নির্বাচন করেই শুধু ক্ষমতায় যাওয়া যায়, তাহলে তাদের জন্য কোন পথটুকু খোলা আছে। আমার খুব আশা ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দেশের মানুষের এত আগ্রহ, এত উত্তেজনা দেখে বিএনপি হয়তো যুদ্ধাপরাধীদের এই দলটিকে পরিত্যাগ করবে—তারা করেনি। আমি খুব আশাহত হয়েছি কিন্তু তাদের ছাত্রসংগঠন আমাকে আশাহত করেনি। তারা শিবিরের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হয়নি।
আমি রাজনীতি ভালো বুঝি না, আমার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ কারও গুরুত্ব দিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমি একটা বিষয় খুব ভালো করে জানি, এই দেশে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে আর কেউ কোনো দিন রাজনীতি করতে পারবে না। পঁচাত্তর থেকে নব্বইয়ের সেই কালো সময় আমরা পার হয়ে এসেছি, আর কেউ কখনো এই দেশের মানুষকে সেই অন্ধকার জগতে ঠেলে পাঠাতে পারবে না। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে কেউ সুবিধে করতে পারবে না, বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের বিচার করে এই গ্লানিময় অধ্যায়কে চিরদিনের মতো সমাপ্ত করে দিতে হবে।

৩.
আমার এই লেখাটি তোমরা যারা শিবির করো, তাদের জন্য। আমি জানি, এটি সম্পূর্ণ অর্থহীন একটি কাজ—আমার এই লেখাটি তোমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না এবং তোমরা যারা পড়ছ তারা আমার এই লেখায় বিভিন্ন অংশের বিরুদ্ধে এর মধ্যে নানা ধরনের যুক্তি দাঁড় করিয়েছ। শুধু তা-ই নয়, তোমাদের প্রিয় জায়গা—ইন্টারনেটে সম্ভবত এই লেখার বিরুদ্ধে বিশাল একটা প্রচারণা শুরু হবে। কিন্তু তবু আমার মনে হয়েছে, আমার এই কাজটুকু করা উচিত, তোমাদের কখনো যে সত্য কথাগুলো বলা হয়নি, আমার সেটা বলা উচিত।
তোমাদের কাছে আমার প্রথম যে প্রশ্ন সেটি হচ্ছে, তোমরা কি জানো আবুল আলা মওদুদী নামে যে মানুষটির চিন্তাধারার ওপর নির্ভর করে জামায়াতে ইসলামী নামে রাজনৈতিক দলটি গড়ে উঠেছে, সেই মানুষটিকে মানুষ হত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল (যদিও সেটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি)। তোমরা কি জানো জামায়াতে ইসলামী ইসলাম প্রচারের দল নয়, এটি রাজনৈতিক দল এবং এটি সব সময় ভুল রাজনীতি করে এসেছে? এই উপমহাদেশে যখন ব্রিটিশদের বিদেয় করে পাকিস্তান সৃষ্টি করার আন্দোলন হয়েছে, তখন তারা সেই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। আবার যখন এই দেশে পাকিস্তান নামের দানবকে পরাস্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তখন তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে? এখন যখন মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ করে থাকা দেশদ্রোহীদের বিচার করা হচ্ছে, তখন আবার জামায়াতে ইসলামী সেই সত্যকে অস্বীকার করে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছে—সেটি ঘটেছে তোমাদের চোখের সামনে এবং তোমরা খুব ভালো করে জানো, সেখানে তোমাদের হূদয়হীনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমার ধারণা, তোমরা যারা শিবির করো, তারা সম্ভবত কখনোই খোলা মন নিয়ে এই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলো না। তোমরা সব সময়ই নিজেদের সঙ্গে নিজেরা কথা বলো, একে অন্যকে উৎসাহ দাও, একে অন্যের ওপর নির্ভর করো কিন্তু তোমাদের দলের বাইরের মানুষেরা তোমাদের সম্পর্কে কী ভাবে, কখনোই তার খোঁজ নাওনি। যদি খোঁজ নিতে, তাহলে হয়তো তোমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ছবি দেখতে পেতে। তোমরা সবিস্ময়ে আবিষ্কার করতে, তোমাদের যেভাবে যা কিছু শেখানো হয়েছে, তার সবকিছু সত্যি নয়। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, এই দেশের অজস্র সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে তোমাদের দলের দু-একটি পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া অন্য কোথাও তোমাদের সম্পর্কে একটিও ভালো কথা ছাপা হয় না। কিছুদিন থেকে গাড়ি ভাঙচুর বা পুলিশকে আক্রমণ করার যে নতুন কর্মকাণ্ড শুরু করেছ, সেটি করে তোমরা যে নিজেরাই বিপদগ্রস্ত হতে শুরু করেছ, সেটা কি লক্ষ করেছ? আজ রাতেই আমি খবরে জানতে পারলাম, সাধারণ মানুষ তোমাদের ধাওয়া করছে, তোমাদের আক্রমণ করছে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এটি ধীরে ধীরে আরও বাড়তে থাকবে। তোমরা নিজেদের জন্য যে জীবন বেছে নিয়েছ, তার মধ্যে কি বিন্দুমাত্র মর্যাদা আছে? আত্মতুষ্টি আছে?
আজ থেকে কয়েক যুগ আগেও এই পৃথিবী যে রকম ছিল, এখন সেই পৃথিবী নেই। এই পৃথিবী অনেক পাল্টে গেছে। নতুন পৃথিবী তালেবান বা লস্কর-ই-তাইয়েবার পৃথিবী নয়। জামায়াতে ইসলামী বা শিবসেনার পৃথিবীও নয়। নতুন পৃথিবী হচ্ছে মুক্তচিন্তার পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক একটা পৃথিবী। এই নতুন পৃথিবীর মানুষেরা অসাধারণ, তারা একে অন্যের ধর্মকে সম্মান করতে শিখেছে, একে অন্যের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে উপভোগ করতে শিখেছে, একে অন্যের চিন্তাকে মূল্য দিতে শিখেছে। এই নতুন পৃথিবীতে মানুষে মানুষে কোনো বিভাজন নেই। দেশ-জাতির সীমারেখা পর্যন্ত ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।
তাই এই নতুন পৃথিবীতে যখন কেউ ধর্ম দিয়ে মানুষকে বিভাজন করে রাজনীতি করতে চায়, পৃথিবীর মানুষ তখন তাকে পরিত্যাগ করে। জামায়াতে ইসলামীর মতো বা শিবসেনার মতো রাজনৈতিক দল তাই হচ্ছে বাতিল হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দল—নতুন পৃথিবীতে এই দলগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
আমি জানি, যদিও আমি এই লেখাটি লিখেছি যারা শিবির করে তাদের উদ্দেশে কিন্তু তারা আসলে আমার একটি কথাও বিশ্বাস করবে না। যদি বিশ্বাস করেও ফেলে, তার পরও তাদের কিছু করার থাকবে না। এ ধরনের রাজনৈতিক দল যখন তৈরি করা হয়, তখন অনেক লোভ দেখিয়ে দলে টানা হয়। কিন্তু দলে যোগ দিয়ে যদি মোহভঙ্গও হয়, তবু তারা আর দল থেকে বের হতে পারে না। অভিশপ্ত প্রেতাত্মার মতো এক অন্যকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকতে হয়।
যারা এখনো শিবিরে যোগ দেয়নি, তারা হয়তো এই লেখাটি পড়ে একটুখানি ভাববে। যখন তাকে এই দলে যোগ দেওয়ার কথা বলবে, হয়তো তারা একটিবার চিন্তা করবে, আমাদের এই ভালোবাসার দেশটিকে যারা টুঁটি চেপে হত্যা করতে চেয়েছিল, আমি কেন সেই দলে যোগ দেব? দেশকে যখন ভালোবাসার কথা, তখন কেন আমি দেশের সঙ্গে বেইমানি করব?
মাতৃভূমিকে ভালোবাসার তীব্র আনন্দ যারা উপভোগ করেনি, যারা ভবিষ্যতেও কোনো দিন অনুভব করতে পারবে না, আমি সেসব হতভাগ্য মানুষের জন্য গভীর করুণা অনুভব করি।

Monday, November 19, 2012

জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা ইদানিং সারাদেশে শক্তির মহড়া দিচ্ছে:ফ্যাসিবাদী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা উচিত:মুনতাসীর মামুন


নভেম্ভর ১৮, ২০১২
জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা ইদানিং সারাদেশে শক্তির মহড়া দিচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের পর্যন্ত বেধড়ক পিটিয়ে ওরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। জামায়াতের এ সব কাজকর্মে আমি খুবই আনন্দিত। কারণ দলটি সবসময়ই ফ্যাসিবাদী। পাকিস্তান আমলে কাদিয়ানিদের সঙ্গে দাঙ্গা লাগিয়ে ওদের হত্যা করার জন্য জামায়াত দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। ওদের দলনেতা মওদুদীর তখন ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। সৌদী আরবের হস্তক্ষেপে ওরা বেঁচে গিয়েছিল। মওদুদী নিজেও ওভাবেই প্রাণে বেঁচেছেন। এরপর এল একাত্তর। এবারও একইভাবে ফ্যাসিবাদী ভূমিকা নিল দলটি। এ যাত্রাও ওরা বাঁচল সৌদী আরবেরই হস্তক্ষেপে।

বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন এল, তার ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলেন। সবাই জানেন তিনি কীভাবে জামায়াতে ইসলামীকে পুনর্বাসিত করেছিলেন। অনেকেই বলেন, তিনি ‘মুক্তিযোদ্ধা,’ স্বাধীনতার ঘোষক।’ কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট যে তিনি যদি একাত্তরে সত্যিকার স্বতঃস্ফুর্ততার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যেতেন বা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি যদি তাঁর সত্যিকারের ভালবাসা থাকত তবে এ দেশে জামায়াতকে পুনর্বাসিত করার কাজটা করতে পারতেন না। সবাই জানেন, ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে গোলাম আজম বাংলাদেশে আসেন। এর পরের বছর থেকে এ দেশে জামায়াতের রাজনীতি আবার শুরু হয়।

পরে তো জানা গেছে যে, জিয়া আসলে ‘পাকিস্তানপন্থী’ ছিলেন। যে ঘোষণাটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মীরা লিখে দিয়েছিলেন সেটি তিনি পশ্চাদপসারণ করার মুহূর্তে পাঠ করেছিলেন। এভাবে তিনি হয়ে গিয়েছেন ‘মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক!’

এরই ফলে পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা জিয়াউর রহমান মৌলবাদী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। একই কাজ করেছেন তার উত্তরসূরী আরেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদ। এই দুই শাসনামলে বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তি পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। আমাদের সামরিক শাসক ও সেনাবাহিনী মৌলবাদকে এ দেশের মাটিতে শেকড় গাড়তে সাহায্য করেছে সবসময়ই।

এই জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সবাই কখনও না-কখনও কাজ করেছে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ দু’ভাবেই। বিএনপি, জাতীয় পার্টি তো বটেই- এমনকী আওয়ামী লীগও ওদের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখিয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে দিয়েছে তারা। এভাবে জামায়াতের উপকার হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত জামায়াতকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আজকে তারা বলছে বিধি সংশোধন না করলে জামায়াতের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। আগের নির্বাচন কমিশনের যারা আজ বড়-বড় কথা বলেন, তারা এ কাজ করতে পারেননি বা চাননি। নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে প্রয়াত কবীর চৌধুরীসহ আমরা ক’জন এবং সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরামের নেতারা তখনকার নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলাম যে বিধি অনুযায়ী এ দেশে জামায়াতের নির্বাচন করার কোনও সুযোগ নেই। ওরা মিটিমিটি হেসেছেন আমাদের কথা শুনে। তারপর অবৈধভাবে জামায়াতকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন।

আমি আজ অবাক হয়ে দেখি, এমনকী মিডিয়া পর্যন্ত জামায়াতের পক্ষে কোনো না-কোনোভাবে কাজ করছে। খুব কষ্টও পাই যখন দেখি যে, জামায়াতের নেতাদের ‘ভি-চিহ্নিত’ হাতের ছবি মিডিয়াতে প্রকাশিত হচ্ছে। পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে, টেলিভিশনে দেখাচ্ছে। বিচারাধীন এই নেতাদের সবাই বয়োবৃদ্ধ। পলিশের কাঁধে ভর দিয়ে তারা আদালতে আসেন। মিডিয়াতে তাদের এ ধরনের ছবিগুলো প্রকাশিত হলে অনেকের মনে ভিন্ন অনুভূতি তৈরি হতে পারে। মনে হতে পারে যে এ বৃদ্ধদের এভাবে টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে কেন! তাদের ভি-চিহ্নিত হাতের ছবি প্রকাশ করা কি খুব জরুরি? তাতেও কি মিডিয়া ওই ঘৃণিত শক্তিকে ‘বিজয়ী’ হিসেবে তুলে ধরছে না?

আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেখুন। সেখানে মাদ্রাসা থেকে পাশ-করা শিক্ষার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। দাখিল-কামিল পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী ১০০ তে ১০০ বা ৯০ পেয়ে পাশ করছে। ওদিকে সাধারণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এসএসসি-এইচএসসিতে পাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ নম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে যেহেতু ভর্তিপরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের পাশাপাশি এসএসসি-এইচএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়, তাই ওরা পিছিয়ে পড়ছে। এখন মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদগুলোতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা বেশি হারে ভর্তি হচ্ছে। আগামীতে এদের সংখ্যা আরও বাড়বে।

আমরা বলছি, হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে পাবলিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে হবে- নয়তো পাবলিক পরীক্ষার নম্বর বাদ দিয়ে শুধু ভর্তিপরীক্ষার ভিত্তিতে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। কীভাবে কলেজ থেকে আর মাদ্রাসা থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন সমান হতে পারে?

রাজনৈতিক কারণে বিএনপি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আওয়ামী লীগও এটা চালু রেখেছে। এটা খুব আত্মঘাতী একটা ব্যাপার হয়ে গেছে। এই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলের সদস্য। ফলে এরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘বড় একটা মাদ্রাসা’ বানিয়ে ফেলছে। এর জন্য দায়ী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো।

দুঃখের বিষয়, এখন আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কোনো কিছু গভীরে গিয়ে তলিয়ে দেখতে চায় না। কর্মকর্তারা এখানে-ওখানে আলোচনায় যাওয়া আর সই-স্বাক্ষর দেওয়ার মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

এ সব নিয়ে বারবার বলা হচ্ছে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলছি, এ সব ব্যবস্থা পাল্টান। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নৈরাজ্য আরও বাড়লে এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোর পাশাপাশি তারাও দায়ী হবেন। সৈয়দ আলী আহসান ১৯৭২ সালে বলেছিলেন, ‘এ দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ তখন তিনি সাহস করে এ কথা বলতে পেরেছিলেন। যদি তাঁর কথা শোনা হত তবে আজ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এ দশা হত না।

আমি বলব, এ বিষয়ে আদালতও আমাদের প্রতি সুবিচার করছেন না। আমরা তো আদালত কীভাবে চলবে তা বলে দিই না। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী করবে না-করবে তা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আদালত আমাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারেন না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা রিকোয়ারমেন্ট আছে। সেটা বিবেচনা করা উচিত। আমরা কী বলতে চাচ্ছি সেটা ওদের শোনা উচিত। তারা কেন বলেন না যে, এক দেশে পাঁচ রকম শিক্ষা ব্যবস্থা থাকতে পারে না!

মানবাধিকারের কথা যদি বলতে হয়, জামায়াতে ইসলামীর মানবাধিকার কি আমাদের মানতে হবে? আর যদি তর্কের খাতিরে ওভাবে ধরেই নিই, তবে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কেউ-ই ভর্তি হওয়ার দাবি করতে পারে। বাছাই কেন করব আমরা?

আমাদের রাজনীতিতে-সমাজে এভাবে জামায়াত-পোষণের ফল হচ্ছে এটাই যে, এখন জামায়াত সদস্যরা পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের পেটাচ্ছে। রাস্তায আহত হয়ে পড়ে থাকা পুলিশকে মারধর করছে- এ সব আমাদের দেখতে হচ্ছে। আমি এ লেখার শুরুতে বলেছিলাম, জামায়াতের এ সব কাজকর্ম দেখে আমি আনন্দিত। কথাটির ব্যাখ্যা দিচ্ছি। ওদের কাজকর্ম দেখে আশা করি এখন সবাই বুঝতে পারবেন জামায়াত আসলে কী ছিল, আছে বা থাকবে। আর এটাই আমার খুশির কারণ।

এখনকার তরুণ জামায়াত-কর্মীদের দেখে চেনার উপায় নেই যে ওরা জামায়াত। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভয়ানক বলে মনে হয়। এ যুগের বাচ্চা-জামায়াতীরা রাসুলের সুন্নত মেনে টুপি-দাঁড়ি রাখে না। ইসলামী পোশাক বা পাঞ্জাবি পরে না। তাদের অভিহিত ‘নাসারাদের’ মতো জিন্সের প্যান্ট বা শার্ট পরে। দাঁড়ি-গোঁফ কামায়। কাঁধে ব্যাগ ঝোলায়। প্রযুক্তিতেও দক্ষ ওরা। সর্বোপরি, একাত্তরের কথা জেনেও ওরা এই দলের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে। তাই ওরা হবে একাত্তরের জামায়াতের চেয়েও অনেক-অনেক বেশি ভয়ানক।

দেথতে পাচ্ছি, এতদিনে নড়েচড়ে বসেছেন সবাই। জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়। আমি শুধু একটা কথাই বুঝি। যে যে ভাষা বোঝে তার সঙ্গে সে ভাষায় কথা বলতে হয়। জামায়াত যদি নাশকতাকে পলিসি হিসেবে নেয় তবে তার সঙ্গে সেভাবেই ট্রিট করতে হবে। জামায়াতীরা ভদ্র ভাষা বোঝে না।

বঙ্গবন্ধু সাহস করেছিলেন। নিষিদ্ধ করেছিলেন জামায়াতের রাজনীতি। দালাল আইনে বিচার করেছিলেন কিছু স্বাধীনতা-বিরোধীর। গোলাম আজমসহ কিছু চিহ্নিত জামায়াতী নেতা ও যুদ্ধাপরাধীর নাগরিকত্বও বাতিল করা হয়েছিল। এমন সাহস করার মতো নেতা বর্তমান আওয়ামী লীগে নেই কেন এ প্রশ্ন আমাকে অনেকেই করেছেন। আমি এর উত্তরে একটা কথাই বলব, এই আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ নয়। এখানে নানা ধরনের লোক আছেন। এই নেতারা নানা সময়ে নানাভাবে সমঝোতা করেছেন, করে যাচ্ছেন। এই নেতাদের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। আর যে সমাজে সবাই দু’নম্বরী কাজে ব্যস্ত সেখানে নেতাদের কাছে বেশি কিছু আশা করা ঠিক নয়। তাদের পক্ষে বঙ্গবন্ধু বা জাতীয় চার নেতা হওয়া সম্ভব নয়।

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তো একা সবকিছু করা সম্ভব নয়। আমরা চেয়েছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের একটা রাজনৈতিক বিচার হোক। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু করার সাহস দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ জন্য আমরা মনে করি, তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।

জামায়াতের সাম্প্রতিক কার্যকলাপের পেছনে বেশ ক’টি কারণ থাকতে পারে। তারা এর মাধ্যমে কয়েকটি ‘বাণী’ দিতে চাচ্ছে। প্রথমত, যুদ্ধাপরাধের বিচার জামায়াত বা বিএনপি কেউ হতে দিতে চাইবে না। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের কয়েকজনের বিচার প্রায় শেষের পথে। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই কয়েকজনের ব্যাপারে রায় হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে জামায়াতের একাংশ ক্ষুব্ধ হযে উঠতে পারে।

দ্বিতীয়ত, নির্বাচন আসছে। সঙ্গত কারণেই জামায়াত শক্তির মহড়া দিচ্ছে। তারা দেখাতে চাচ্ছে যে, তারা একটি শক্তি। তারা এর মাধ্যমে বোঝাতে চাচ্ছে তারা যেভাবে চাইবে সেভাবে সবকিছু হতে হবে। বলতে চাচ্ছে- চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিগুলো তাদের সমর্থন করছে। তারা তখনই নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবে যখন তারা ভাববে যে তারা বিজয়ী হবে।

তৃতীয়ত, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন করে তারা বুঝিয়ে দিল যে, তাদের কথামতো চলতে হবে। চতুর্থত, পুলিশকে যেভাবে তারা পেটাতে পারছে তাতে সুশীল সমাজ বা বুদ্ধিজীবীদের জন্যও এটা একটা সতর্কবার্তা।

অনেকে বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের জুটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমি বলব, বিএনপি সবসময় জামাতের পাশে ছিল। এখনও আছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের তো খুব বেশি পার্থক্য নেই। বিএপির লোকেরা সাফারি পরেন। আর পুরনো জামায়াতীরা ইসলামী পোশাক পরেন। এই তো?

বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া সম্প্রতি ভারত সফর করে এসেছেন। এ দলটি সবসময় বলে এসেছে যে, ভারতের সঙ্গে তারা ‘নতজানু’ পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলে না। এখন এ দল যদি ভারতের কাছে নতজানু হয়ে যায়, তাদের ভাষায়- ‘ভারতপন্থী’ বা ‘ভারতের এজেন্ট’ হয়ে ওঠে- তাতেও জামায়াতের কোনো সমস্যা নেই। মজার বিষয় হল, জামায়াতের পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামে প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে এ সব বিষয়ে। তার লিখছে, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে ‘মধুর সম্পর্ক’ এটা ধরে রাখতে হবে। এটা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না!

আমাদের সুশীল সমাজের লোকেরা এখন এতটাই সুশীল হয়ে গেছেন যে শুধু উপদেশ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমি মনে করি, একজন তখনই উপদেশ দিতে পারবেন যখন তিনি নিজে কাজটি করে ফেলবেন। অনেকেই বলছেন যে, আওযামী লীগ এটা পারল না ওটা পারল না। কিন্তু কী পারেনি সেটা তো বলছেন না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ছিল। তারা কী করেছে জাতি সেটা দেখেছে। অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন সে সব দিনের কথা। জামায়াত আবার তাদের এখনকার কার্যকলাপ দিয়ে বুঝিয়ে দিল, তারা কী করতে পারে। আমাদের তাই সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে হবে।

আমি মনে করি, এ পরিস্থিতিতে আমাদের সবার ভেবে দেখার সময় হয়েছে যে এ দেশে জামায়াতকে রাজনীতি করতে দেওয়া ঠিক হবে কিনা। এমনকী যারা জামায়াতকে সমর্থন দেবে, তাদেরও এ দেশে রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত নয়। আমরা এদের প্রতিরোধ করব, রুখে দেব, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি হওয়া উচিত।

মুনতাসীর মামুনের জন্ম ১৯৫১ সালের ২৪ মে ঢাকার ইসলামপুরে নানার বাড়িতে। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার গুলবাহার গ্রামে।
মুনতাসীর মামুনের শৈশব-কৈশর কেটেছে চট্টগ্রামের চাঁটগায়। চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাষ্ট প্রাইমারি ও হাইস্কুলে এবং চট্টগ্রাম কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯৬৮ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ১৯৭২ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন এবং একই বিভাগ থেকে ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। স্বাধীনতার পর ইতিহাস বিভাগ থেকে তিনিই প্রথম পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই দৈনিক বাংলা/বিচিত্রায় সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন মুনতাসীর মামুন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন। এর পাশাপাশি ঢাকা শহরের অতীত ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। এছাড়া তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউটে’ সন্মানিক প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে ১৯৯৯-২০০২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। কৈশর থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত হয়ে ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় সেরা শিশু লেখক হিসেবে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর অনুবাদ, চিত্র সমালোচনা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচনা করেন অনেক বই। তাঁর লেখালেখি ও গবেষনার বিষয় উনিশ, বিশ ও একুশ শতকের পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ ও ঢাকা শহর।

মুনতাসীর মামুনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২২০। গল্প, কিশোর সাহিত্য, প্রবন্ধ, গবেষনা, চিত্র সমালোচনা, অনুবাদ সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রেই মুনতাসীর মামুনের বিচরণ থাকলেও ইতিহাসই তার প্রধান কর্মক্ষেত্র।
উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত বইগুালো হচ্ছে:
প্রশাসনের অন্দরমহল | প্রকাশকালঃ ১৯৮৭
ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী | প্রকাশকালঃ ১৯৯৩
বাংলাদেশের রাজনীতিঃ এক দশক | প্রকাশকালঃ ১৯৯৯
১৯ শতকের ঢাকার মুদ্রণ ও প্রকাশনা | সময় প্রকাশন | প্রকাশকালঃ এপ্রিল ২০০৪
১৯ শতকে পূর্ববঙ্গের মুদ্রণ ও প্রকাশনা | সময় প্রকাশন | প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০০৫
আইন, আদালত ও জনতা | অনুপম প্রকাশনী | প্রকাশকালঃ জুলাই ২০০৫
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ও পূর্ব বাংলার প্রতিক্রিয়া | মাওলা ব্রাদার্স | প্রকাশকালঃ জানুয়ারি ২০০৬
১৯৭১ চুকনগরে গণহত্যা | সূবর্ণ প্রকাশনী | প্রকাশকালঃ অক্টোবর ২০০৮
আমার ছেলেবেলা | প্রকাশকালঃ অক্টোবর ২০০৮
দুঃসময়ের দিনগুলি | প্রকাশকালঃ ২০১০
ঢাকার স্মৃতি ৯ এবং ১০ | প্রকাশকালঃ ২০১০
ঢাকার স্মৃতি ৮ | প্রকাশকালঃ ২০১০

Thursday, November 15, 2012

ওয়াহিদুল আলম ও সাকা চৌধুরীর যৌথ নির্যাতনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মাহবুবুল আলম মারা যান-ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল বুধবার সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ১৬তম সাক্ষী ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গুডস হিলে ওয়াহিদুল আলম ও সাকা চৌধুরীর যৌথ নির্যাতনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মাহবুবুল আলম মারা যান।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল ফয়েজ আহমেদের জবানবন্দি নেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সুলতান মাহমুদ। পরে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী আহসানুল হক তাঁকে জেরা করেন। সাকা চৌধুরী এ সময় আসামির কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
ফয়েজ আহমেদ (৬৪) জবানবন্দিতে বলেন, তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার কালিপুর গ্রামে। ১৯৬৮ সালে তিনি বিকম পাস করেন। একাত্তরে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) গেরিলা ইউনিটের পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহী অঙ্গসংগঠনের সদস্যদের সংগঠিত করে ভারতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠানো ছিল তাঁর কাজ। তিনি বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম তৎকালীন ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাকা চৌধুরীর কনভেনশন মুসলিম লীগে যোগ দেন। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে নিরীহ ব্যক্তিদের নির্যাতন করেন, এমনকি কাউকে কাউকে হত্যাও করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এই সাক্ষী বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রামের একটি দোকান থেকে ছাত্র ইউনিয়নের রাঙ্গুনিয়া কলেজ শাখার ভিপি (সহসভাপতি) হাটহাজারীর মাহবুবুল আলমকে অপহরণ করে গুডস হিলে (চট্টগ্রাম শহরে সাকা চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাহবুবকে পেরেক বিছানো টেবিলের ওপর শুইয়ে নির্যাতন করা হয়। ওয়াহিদুল আলম ওই নির্যাতনের নেতৃত্ব দেন, সাকা চৌধুরী সে সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের যৌথ নির্যাতনের ফলে মাহবুব মারা যান।
ফয়েজ বলেন, এ ঘটনা তিনি তৎকালীন কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতা হারুন কন্ট্রাক্টরের কাছে শুনেছেন। হারুন সে সময় প্রতিদিন গুডস হিলে হাজিরা দিতেন। ঘটনাটি আরও অনেকের কাছে তিনি শুনেছেন। ওয়াহিদুল আলম পরে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে ফয়েজ আসামির কাঠগড়ায় উপস্থিত সাকা চৌধুরীকে শনাক্ত করেন। পরে জেরায় আহসানুল হক জানতে চান, মাহবুবকে যে দোকান থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের দোকান ছিল? জবাবে সাক্ষী বলেন, চায়ের দোকান।
প্রায় দুই ঘণ্টা ফয়েজকে জেরা করেন আহসানুল। জেরা শেষে এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৯ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
যুক্তি উপস্থাপন চলছে: একই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রেখেছে। আসামির কাঠগড়ায় সাঈদীর উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী গতকাল অষ্টম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবারও যুক্তি উপস্থাপন করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন কৌঁসুলি নিয়োগ: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে আরও ১২ জন কৌঁসুলি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নবনিযুক্ত এই কৌঁসুলিরা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে মোট কৌঁসুলির সংখ্যা হলো ২৭ জন।

Monday, November 12, 2012

জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বিষয়ক কিছু বিভ্রান্তি -নুরুল ইসলাম নাহিদ



নভেম্ভর ১১, ২০১২
গত ৪ নভেম্বর সারাদেশে স্কুল ও মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণির পাঠ সমাপ্ত করে জাতীয় ভিত্তিতে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি)/ জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে কতিপয় জাতীয় দৈনিকে এবং কয়েকটি টেলিভিশনে ‘বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত’ এবং ‘এরা অনেকে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে গেছে’ বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। কেউ কেউ এই বিষয়কে প্রতিদিনই বড় করে দেখাচ্ছেন। বিষয়টির সত্যতা যাচাই না করে অনেক সংবাদপত্রে সম্পাদকীয় ও উপ সম্পাদকীয়ও লিখেছেন। টক শোতেও কেউ কেউ বিষয়টি বার বার তুলে ধরছেন।

এই বিষয়টির যে উৎস অর্থাৎ সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন তা যে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি তা কারো যাচাই করার সুযোগ নেই, যাদের আছে তারাও কোনো যাচাই না করে অনেক লেখালেখি বা বক্তব্য দিচ্ছেন। সংবাদপত্রে যারা প্রতিবেদন লিখেছেন (অনেকে নিজের নামে লিখেছেন) তাদের আসল বিষয়টি অজানা নয়। আমরা গত ৩১ অক্টোবর উক্ত পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস কনফারেন্স করে সকল তথ্য লিখিতভাবে সাংবাদিকদের হাতে দিয়েছি। আবার ৪ নভেম্বর পরীক্ষার হল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুদের কাছেও বলেছি। যারা রিপোর্ট তৈরি করে প্রকাশ করেছেন তারা ভালভাবেই সকল তথ্য জানেন এবং তাদের হাতে লিখিত তথ্য রয়েছে। সঠিক তথ্য প্রতিবেদনে না দেয়ার ফলে সকল পাঠক, এমনকি অনেক সম্পাদক ও লেখকও বিভ্রান্ত হয়েছেন।

আমার বিরুদ্ধে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে কেউ কেউ সম্পূর্ণ অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচারণা চালান। আমি তার প্রতিবাদ করি না। বরং সত্যিই এমন দোষত্রুটি আমাদের আছে কিনা তা ভাল করে যাচাই করে দেখি। আমার দায়িত্ব নেয়ার প্রথম থেকেই সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিরাট সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়ে আসছি। সাংবাদিক ভাইবোন, সম্পাদক, কলাম লেখক, টিভি আলোচকরা আমাদের অনেক অনেক প্রশংসা, সমর্থন, উৎসাহ দিয়ে আসছেন। আমি সব সময়ই বলে আসছি এগুলো আমাদের জন্য প্রেরণাদায়ক। তাঁদের পরামর্শ আমাদের কাজে সহায়ক হয়েছে। যাঁরা আমাদের সমালোচনা করেন এবং ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেন, একইভাবে তাও আমাদের জন্য আমাদের কাজে বিরাট অবদান রাখছে। আমরা তাঁদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করব ভবিষ্যতেও তাঁরা আমাদের এভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন এবং ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন, আমরা তা শুধরে নেব।

যে বিষয়টি এখানে বলতে চাচ্ছি তা হলো- জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যাকে ‘ঝরে পড়ে গেছে’ বলে কিছু সংখ্যক সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে সকলের মধ্যে যে ভুল তথ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে এবং এজন্য যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করার চেষ্টা করা। একথাটাও পরিষ্কার করে বলে রাখছি, অধিকাংশ সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সঠিক তথ্য দিয়েছে।

কতিপয় পত্রিকায় শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘প্রথম দিনে অনুপস্থিত ৬৮ হাজার পরীক্ষার্থী’। কেউ কেউ রিপোর্টের ভিতরে ‘এরা ঝরে পড়ে গেলো’ ‘শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেল’ এভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝাতে চেয়েছেন এই শিক্ষার্থীরা আর লেখাপড়া করতে পারবে না। একটি দৈনিকে শিরোনামই করা হয়েছে ‘প্রথম দিনেই ঝরে গেল ৬৮ হাজার শিক্ষার্থী’। এমন কি একটি দৈনিকে প্রথম দিনের অনুপস্থিত সংখ্যা ও দ্বিতীয় দিনের অনুপস্থিত সংখ্যা যোগ করে শিরোনাম দিয়েছেন ‘জেএসসি-জেডিসিতে দুই দিনে অনুপস্থিত এক লাখ ১৪ হাজার শিক্ষার্থী’। সকল জাতীয় পরীক্ষার দিন সন্ধ্যার মধ্যে আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে ঐ দিনের পরীক্ষার তথ্যগুলো সকলের কাছে (মিডিয়া ও সংশ্লি¬ষ্ট যারা) সরবরাহ করে থাকি। এতে উপস্থিতির সংখ্যা, অনুপস্থিত, বহিষ্কার ইত্যাদি সংখ্যা ও তথ্য দেই। এটা গোপন কিছু নয়, বরং দিনের শেষে সব সম্ভাব্য তথ্যই আমরা প্রকাশ করি।

আপাত দৃষ্টিতে অনুপস্থিতির সংখ্যা দেখলে বেশ বড়ই মনে হয়। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে দেড় লক্ষাধিক বিশেষ পরীক্ষার্থীর প্রতিদিন পরীক্ষা নেই। প্রতিটি পরীক্ষায় তারা অংশগ্রহণও করবে না। এক-দুই-তিন বিষয়ের মধ্যে যার যেদিন পরীক্ষা আছে সেদিনই পরীক্ষা দেবে। এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে যদি কেউ ‘এরা ঝরে পড়ে গেল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এবং প্রকৃত তথ্য যাচাই না করে সেই প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে কেউ কেউ যদি সম্পাদকীয় বা উপ সম্পাদকীয় লিখেন তা হলে পাঠকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক।

আমাদের দেশ, সমাজ ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বাস্তবতা বিবেচনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। চারবছর পূর্বে এ সকল তথ্য বা এধরনের উদ্যোগ ও চেষ্টা তো করাই হয়নি। আমাদের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার জন্য আমাকে শাস্তি দিন, কিন্তু আমাদের সন্তানদের (শিক্ষার্থীদের) নিরুৎসাহিত ও হতাশ করবেন না। সকলের কাছে এ আমার বিনীত অনুরোধ।

আসল সত্যটি এখানে সকলের অবগতির জন্য সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। গত ৩১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ ৫ পৃষ্ঠা কাগজপত্র সাংবাদিক ভাই-বোনদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে মুখে বলা হয়েছে। আমি নিশ্চিত সকল তথ্যই স্পষ্টভাবে ঐ কাগজপত্রে উল্লেখ করা আছে।

এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ লাখ ৮ হাজার ৩৬৫ জন। এর মধ্যে জেএসসি ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৫, জেডিসি ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯০ জন। সব মিলে ছাত্র ৪৭% এবং ছাত্রী-৫৩%। অর্থাৎ জেএসসি-জেডিসি মিলে ছাত্র সংখ্যা ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬২ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ১১ হাজার ৫০৩ জন। ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৪১ জন বেশি। এই পরীক্ষা চালুর পর ২০১০ সাল থেকে এবার ২০১২ সালে তিনবছরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৬৩ জন। শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে না, বৃদ্ধি পাচ্ছে তা এই তথ্যই প্রমাণ করে।

জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো ঝরেপড়া কমিয়ে আনা এবং এক সময় বন্ধ করা। ঝরেপড়া এখন প্রতি বছরই কমছে, শিক্ষার্থীও বাড়ছে। তাছাড়া এই পরীক্ষা শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সারাদেশে সমমান অর্জন, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠাসহ নতুন প্রজন্মকে শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করছে।

পরীক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে এবং শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকে সেজন্য আমরা যথাসাধ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। এরমধ্যে অন্যতম হলো যারা পরীক্ষায় ফেল করে বা অন্য কারণে শিক্ষা জীবন অব্যাহত রাখতে পারেনা, তাদেরকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য আমরা আগ্রহী করে তুলি, তাদের সমস্যা যথাসাধ্য দূর করে আবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নিয়ে আসি। এদের বলা হয় ‘অনিয়মিত পরীক্ষার্থী’। এবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হলো- ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৪ জন। এরা আগে ফেল করেছে অথবা ঝরে পড়েছিল তাদের এবারে পরীক্ষায় নিয়ে আসা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিষয় হলো- গতবছর যারা পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকে এক, দুই বা তিন বিষয়ে ফেল করেছেন। ফেল করার কারণে তারা যাতে কোনভাবে ঝরে না পড়ে এবং শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখে- সেজন্য আমরা তাদের নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ দিয়েছি। এবছরের পরীক্ষায় তারা নিজ নিজ ফেল করা (এক, দুই, তিন) বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই চলবে। এরকম পরীক্ষার্থীর নাম দেয়া হয়েছে ‘বিশেষ পরীক্ষার্থী’। এরকম বিশেষ পরীক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন- ১ লাখ ৫৭ হাজার ০১২ জন। সকলেই বুঝতে পারছেন এদের পরীক্ষা প্রতিদিন থাকবেনা। কারো একদিন, কারো দুই, কারো তিন দিন। তাই এই ১ লাখ ৫৭ হাজার ০১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু তাদের ফেল করা স্ব স্ব বিষয়েই শুধু পরীক্ষা দেবে, অন্য দিনগুলোতে পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকবে।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন- প্রথম দিন যে সংখ্যা অনুপস্থিত ছিল অর্থাৎ ৬৮ হাজার ১৫৫ জন, পরের দিন সে সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৩৪০ জনে। অর্থাৎ প্রথম দিনে যারা অনুপস্থিত ছিল, দ্বিতীয় দিন তাদের মধ্য থেকে ২১ হাজার ৮১৫ জন উপস্থিত হয়েছিল। এভাবে তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন প্রথম দিনের চেয়ে ২০ হাজারের বেশি উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং প্রথম দিনের পরীক্ষায় যারা অনুপস্থিত ছিল তারা একেবারেই লেখাপড়া ছেড়ে চলে গেল অথবা ঝরে পড়ে গেল এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যুক্তিযুক্ত নয়।

তাই ‘বিশেষ পরীক্ষার্থীর’ মধ্য থেকে অর্থাৎ ১ লাখ ৫৭ হাজার ০১২ জন পরীক্ষার্থী সর্বোচ্চ তিনদিন ছাড়া অন্যান্য দিন অনুপস্থিত থাকবেই। কেউ একদিনই পরীক্ষা দেবে বাকি সকল পরীক্ষার দিন তারা অনুপস্থিত থাকবে। তাই অনুপস্থিতির সংখ্যা দেখে ঢালাও অনুপস্থিত বলা যুক্তিযুক্ত হবে না। এমন কি যারা ‘ঝরে পড়ে গেছে’ বলে চিত্র তুলে ধরেছেন তারাও সুবিচার করবেন না।

তাছাড়া যারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৪ জন, তারাও বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে আবার পরীক্ষা দিতে এসেছেন তাদেরও কারো কারো বাস্তব কারণে অনুপস্থিত থাকার আশংকা থাকতে পারে। এমনকি নিয়মিত ছাত্রদের মধ্যেও অনুপস্থিত থাকতে পারে। যে কোনো পরীক্ষায়ই কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় আমরা সকল শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসছি, ধরে রাখা বা ঝরেপড়া ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনবছর পূর্বে যেখানে ৫ম শ্রেণির আগেই ৪৮%, মাধ্যমিকে ৪২% ঝরে পড়তো (ভর্তিও হতো অনেক কম) আজ সেখানে তা অর্ধেকের বেশি কমে এসেছে। ঝরেপড়া নতুন বিষয় নয় বা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়। অতীতে ভর্তি, ঝরেপড়া, পরীক্ষা, ফলাফল এসবের কোনো খবরই রাখা হতো না। এখন এসকল ক্ষেত্রে আমরা বিরাট পরিবর্তন এনেছি। তার পরেও অনেক বড় বড় কাজ বাকি আছে। আপনারা আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন। সঠিক তথ্য দিয়ে সমালোচনা করে গঠনমূলক প্রস্তাব দেবেন আমরা সব সময়ই তা সাদরে গ্রহণ করছি এবং করব। আমরা সকলের সাহায্য প্রার্থী। বিডি নিউজ

Friday, November 9, 2012

বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের দায় মাথায় নিয়ে সিআইএ প্রধানের পদত্যাগ


ঢাকা:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়ার তিনদিন পরেই বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের দায় মাথায় নিয়ে সিআইএ প্রধানের পদত্যাগ করলেন।



বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (সিআইএ) প্রধান ডেভিড পেট্রাউস পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করে নিজের পদত্যাগ পত্র জমা দেন তিনি। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন বলে জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

নিজের আচরণের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার কথা প্রকাশ করে দেওয়া বিবৃতিতে ডেভিড পেট্রাউস জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। বিবৃতিতে নিজের আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ সময় সাবেক এ চার তারকা জেনারেল নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘বিয়ের ৩৭ বছর পর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে চরম বোকামির পরিচয় দিয়েছি আমি’’।

একজন স্বামী এবং সিআইএর মত সংস্থার প্রধান হিসেবে তার এমন আচরণ একদমই অপ্রত্যাশিত ছিলো বলে বিবৃতিতে স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট সহানুভূতির সঙ্গে আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।’’

এদিকে পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা সিআইএ ও মার্কিন সামরিক বাহিনীতে ডেভিড পেট্রাউসের পালন করা দায়িত্বের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক দশক ধরে অসামান্য সেবা দিয়ে গেছেন ডেভিড পেট্রাউস। নিজের দায়িত্বপালনকালে পেট্রাউস আমাদের দেশকে নিরাপদ ও শক্তিশালী করেছেন।’’

পেট্রাউসের পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় ওয়াশিংটনসহ দেশটির সংশ্লিষ্ট সব মহলে। পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয় তার জীবনী লেখক পাউলা ব্রডওয়েলের সঙ্গে পেট্রাউসের গোপন সম্পর্কের বিষয়টি।

ডেভিড পেট্রাউসের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি এখন এফবিআইয়ের তদন্তাধীনে রয়েছে বলেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ব্রডওয়েল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে পিএইচডিও করছেন বলে জানা গেছে।

২০১১ সালে আফগানিস্তানে দায়িত্বপালনের সময়েই ব্রডওয়েলের সঙ্গে অবৈধ প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন পেট্রাউস। অবশ্য ওই বছরই সিআইএ প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান পেত্রাউস। এর আগে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

৯/১১ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সফল শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয় পেট্রাউসকে। ইরাক ‘অভিযান’-এ নেতৃত্বদানে বিশেষ ভূমিকা পালন ও আফগানিস্তানে কার্যকর সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসিত হন তিনি।

বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারঃ কবীর চৌধুরী , মার্চ ১৯৯৪





বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ, সুখ্যাত লেখক, ব্যতিক্রমী অনুবাদক ও জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী গেল ১৩ ডিসেম্বর'১১, ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, বিস্ময়কর এক সৃষ্টিশীল মানুষ।

মাসে (আজ থেকে প্রায় আঠারো বছর আগে) জাপান সফরের সময়, মাসিক মানচিত্র'র জন্য তাঁর এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন -টোকিওর লেখক-সাংবাদিক সজল বড়ুয়া। আমরা কৌতূহলি পাঠকদের জানানোর উদ্দেশ্যে, আবারও সেই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করছি। -সম্পাদক, কমিউনিটি।



'ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে টোকিও এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক, সুখ্যাত প্রাবন্ধিক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর কবীর চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রায় ৮০টি গ্রন্থের লেখক প্রফেসর কবীর চৌধুরীকে ১লা মার্চ '৯৪ এশিয়া বুনকা কাইকানের ৭০৭ নম্বর কক্ষে স্বাধীনতাত্তোর ও সমকালীন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। একই সময়ে আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন জাপানের জনপ্রিয় একটি সাপ্তাহিকীর সম্পাদিকা মায়ুমি মুনাকাতাও। টেপ-রেকর্ডারে ধারণকৃত প্রফেসর কবীর চৌধুরীর সাক্ষাৎকারের সারাংশ নিম্নরূপঃ

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার আলোকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান করুণ অবস্থা যেমনঃ সন্ত্রাস, সেশন জট, পড়াশুনার প্রতিকূল পরিবেশ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি?

কবীর চৌধুরীঃ সন্ত্রাস, মারপিট গোলাগুলি প্রায়ই হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এ ব্যাপারে নিরপেক্ষভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত -সরকার, অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এই অপ্রত্যাশিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতির পেছনে অধ্যাপক মহলেরও যে ত্রুটি নেই -এমন কথা বলা যায় না। আগের দিনে অনেক অধ্যাপক ছিলেন, যাঁদেরকে অকৃত্তিমভাবে শ্রদ্ধা করা যেত। সে রকম শিক্ষকের সংখ্যাও আজকাল কমে এসেছে। তবে একটি কথা আমি বলবো -দোষ অনেকের থাকলেও, এর দায়-দায়িত্ব সরকারের। সরকার আন্তরিকভাবে যে কোন দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করলেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ নিশ্চয়ই অতি অল্প সময়েই ফিরে আসবে।

* বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা নীতি কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

ক.চৌ.: খুব একটা সামঞ্জস্য আছে বলে, আমার মনে হয়না। দীর্ঘকাল ধরেই আমরা অনেকে শুধুমাত্র মুখে বলে যাচ্ছি 'জীবিকার সাথে সংযুক্ত করতে না পারলে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবেনা।' কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর কোন উদ্যোগ বা প্রয়োগ নেই। ড. কুদরত-ই-খুদার শিক্ষা নীতি বিভিন্ন কারণে অবহেলিত হয়েছে বাংলাদেশে। চালু হয়েছে নতুন নতুন আজগুবি সব শিক্ষা পদ্ধত। সম্প্রতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, 'A' লেভেল, 'O' লেভেল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। আমার নিজের বিবেচনায়, এগুলোর খুব একটা শুভ দিক নেই।

* একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে, দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবীদের 'মুক্তবুদ্ধি চর্চা'র ক্ষেত্রে কী প্রতিবন্ধকতা আছে বলে আপনার মনে হয়?

ক.চৌ.: খুব একটা অসুবিধে আর নেই। কারণ, আজকাল বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতে পারছেন। লিখতেও পারছেন নানান বিষয়ে। তবে মৌলবাদীদের যদি সরকার আরো কঠোর ভাবে প্রতিহত করেন তাহলে তাঁদের জন্য ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে ওঠে। আর যেটুকু প্রতিবন্ধকতা আছে, আমি বলবো, অনেকের ক্ষেত্রে তা স্ব-আরোপিত। নাম সর্বস্ব সুবিধাবাদী অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা ব্যক্তি-স্বার্থের কারণে মাঝেমাঝে দল পরিবর্তন করেন। নিজেদেরকে অনেক সময় তারা বিতর্কিত করে তোলেন - অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেন। তারপরও কিছু বুদ্ধিজীবী তো আছেন, যাঁরা আমাদের সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চার পথকে প্রশস্ত করেছেন। তাঁদের অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। প্রতিকূল পরিবেশে নির্ভয়ে লিখে যাচ্ছেন -ধর্মান্ধতা, নারী নির্যাতন ও ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে। দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেয়ার অনুকূলে তাদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

* প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতার ২৩ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক মূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়নি। এ প্রসঙ্গে আপনার নিজস্ব মন্তব্য জানতে চাই।

ক.চৌ.:মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক মূল্যায়ন দীর্ঘকাল বাংলাদেশে হয়নি এটা ঠিক। '৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর থেকে, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুপরিকল্পিতভাবে মলিন করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছে। এমনকি তারা বিভেদও সৃষ্টি করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটা বড় আদর্শ ছিলো 'ধর্মনিরপেক্ষতা'। কিন্তু, 'ধর্মনিরপেক্ষতাকে লালন করলে ইসলাম বিপন্ন হবে' এই ভাওতাবাজি দিয়ে '৭৫ পরবর্তী সময়ে 'ইসলাম ধর্ম'কে ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপ দেয়া হলো। ধ্বংস করা হলো মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আদর্শ 'গণতান্ত্রিক চেতনা'কে। আমরা মুখে শ্লোগানের মত বলছি বটে, 'গণতন্ত্রের কথা'। কিন্তু প্রশাসনকে দলীয়করণ করে, গণতান্ত্রিক চেতনার তো বিকাশ হয় না। অথচ বর্তমানে প্রশাসনকে নিষ্ঠুরভাবে দলীয় করণ করা হচ্ছে -এটা বি.এন.পি.র অনেক প্রভাবশালী নেতারাও অগোচরে বলছেন। এসবই তো মুক্তিযুদ্ধের অবমূল্যায়ন। তবে আশার কথা এই যে, গত পাঁচ সাত বছরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রচুর লেখা হয়েছে। 'প্রজন্ম ৭১' নামে একটি সংগঠনও সৃষ্টি হয়েছে কয়েক বছর আগে। এসবকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফসল বলা যায়। তাই সব মিলিয়ে বলবো -ব্যাপকভাবে না হলেও একেবারেই যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়নি, তা ঠিক নয়।

* স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপরিচালনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের কোন ভুল কি আপনার চোখে পড়েছে?

ক.চৌ.: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সবদিক দিয়ে সঠিক ছিলেন, তা নয়। সাধারণতঃ স্বাধীনতার পর তাঁর সাধারণ ক্ষমার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে তাঁকে দোষারোপ করে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত্পক্ষে ঐ সময় সকলকে তিনি নির্বিচারে ক্ষমা করেননি। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে (যেমন লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ, হত্যার পেছনে চক্রান্ত) তারা এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেনা। অন্যদিকে এটাও সত্য যে, বাংলাদেশের জন্মলগ্নে শেখ মুজিব যদি সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেন, তখন হয়তো তাঁকে একটা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখিও দাঁড়াতে হতো। আমার মনে হয়, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে এই দিকটাও তিনি ভেবে দেখেছিলেন। তারপরও তিনি যদি সে সময় সারা দেশের চিহ্নিত কিছু ঘৃণ্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ গতিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেন, তাহলে হয়তো আজ এই ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ আর থাকতো না। এটা তার একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে আমি বলবো। বঙ্গবন্ধুর আরেকটা ভুল দিক হলো, তিনি 'বাকশাল' গঠন করেছিলেন বটে, কিন্তু বাকশালের নীতি-আদর্শকে সফল করে তোলার লক্ষ্যে কোন ক্যাডার তৈরী করলেননা। প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তাঁর উচিত ছিল প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিষ্ঠিত করা। এসবই শেখ মুজিবের ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে যেহেতু ভুলের কথা উঠেছে, পাশাপাশি তার অসংখ্য গুণের কথাও আংশিকভাবে না বল্লে নয়। বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এক চমৎকার ও পূর্ণাঙ্গ সংবিধান পেয়েছিল। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের পর অতি দ্রুত ভারতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আদেশ দিয়েছিলেন অবিলম্বে অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ কর্মতৎপরতায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তিনি মোটামুটিভাবে দাঁড়ানোর মত একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর সেই আত্মত্যাগ ও অবিস্মরণীয় অবদান চিরকাল কী উজ্জ্বল হয়ে থাকবেনা?

* '৭৫ এর ১৫ আগষ্টের জননিন্দিত ও ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ডের ইতিহাস সম্পর্কে দয়া করে কিছু বলবেন কি?

ক.চৌ.: মুজিব হত্যার ১৯ বছর পর আমি মনে করি এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পটভূমিকা আজ আর কারো অজানা নেই। স্বাধীনতার পর জামায়াতীরা বলতে গেলে, প্রায় ইঁদুরের মত গর্তে ঢুকে গিয়েছিলো। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মৌলবাদী শক্তিকে প্রশাসন ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিকল্পিতভাবে পুনর্বাসন করা হয়। শাহ্ আজিজের মত স্বাধীনতা-বিরোধী একজন জঘন্য পাপিষ্ঠকে বানানো হয় 'প্রধানমন্ত্রী'। সত্যিকারভাবে এর সূত্রপাত ঘটে ৭৫ এর পরে সরকার ও প্রশাসনের বলিষ্ঠ সহযোগিতায়। উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে আমরা নরঘাতক গোলাম আযমের বিচার দাবী করছি। অথচ তার জন্য দেশদ্রোহী হিসেবে মামলা দায়ের করা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। এমন কি এখনো একজন বিতর্কিত ব্যক্তি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসে আছেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও জামায়াতীদের দৌরাত্ম্য এবং বর্তমান কালের এই ধরনের অপকর্মের পরিকল্পনা তো শুরু হয়েছিলো শেখ মুজিব হত্যার পর থেকেই।

*স্বদেশে ও বিদেশে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা সর্বসমক্ষে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াসে, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এ পর্যন্ত কি কি উদ্যোগ নিয়েছে?

ক.চৌ.: বঙ্গবন্ধুর ওপর আমরা ইংরেজি ও বাংলায় বেশ কিছু বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে অডিও ও ভিডিও ক্যাসেটও বের করা হয়েছে। চেষ্টা করছি, একটি যাদুঘরও নির্মাণ করার জন্য। তবে as a symbol of liberty অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটা প্রতীকী চরিত্র হিসেবে আমরা শেখ মুজিবের ওপর কাজ করে যাচ্ছি। তারই পাশাপাশি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির অগ্রগতির লক্ষ্যেও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ম্যালা পরিকল্পনা রয়েছে।

* বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালের প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদী রাজনীতির উর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে, দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন?

ক.চৌ.: আপাতঃ দৃষ্টিতে মৌলবাদী রাজনীতির উর্ধ্বগতি মনে হলেও, আমার মনে হয়, বাংলাদেশ মৌলবাদীদের ভবিষ্যত প্রায় অন্ধকার। মৌলবাদীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, রগকাটা, নরহত্যা, বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে চালিয়ে গেলেও, প্রকৃতক্ষে দিন দিন প্রবল প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে -তাদের বিরুদ্ধে। তারা মুখে যতটুকু লাফালাফি করে, কার্যক্ষেত্রে তাদের দৌড় তত নয়। বরং বলা যায়, বিপরীত দিকে মৌলবাদ- বিরোধী চেতনাই ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মৌলবাদীদের ফ্যাসিস্ট চিন্তাধারা ও নিষ্ঠুর কর্মকান্ড বিশেষ করে, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, মধ্যরাতে ছাত্রাবাসে হামলা ও নারকীয় হত্যাকান্ড, অশিক্ষিত অসহায় মানুষের ওপর তথাকথিত ইসলামী আইন কানুন আরোপ ইত্যকার অমানবিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সরকার ও আইন কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হওয়া উচিত। আর ইচ্ছাকৃতভাবে যদি সরকার এ ব্যাপারে কোন কঠোর পদক্ষেপ না নেয় বা গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়, তবে নিঃসন্দেহে বর্তমান ক্ষমতাসীন বি.এন.পি. ও বাংলাদেশের বিপর্যয় অচিরেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি।

* বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে বলে আপনার মনে হয়?

ক.চৌ.:অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বল্লে অত্যুক্তি করা হবেনা। বৈদেশিক বিনিযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, বলা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম খুব একটা না বাড়লেও, প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে দ্রব্যমূল্য আংশিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও, অধিকাংশ লোকই তার সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছেনা। কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে গত কয়েক বছর আশাতীত ফসল উৎপাদিত হয়েছে, বলা যায়। অথচ তারপরও সেই কৃষকরাই পাচ্ছেনা তাদের উপযুক্ত মূল্য। আর বাস্তব ক্ষেত্রে কৃষকদের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে -দারিদ্র সীমার অনেক নীচে। আজকাল বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সত্যিকারভাবে বলতে গেলে, বেসরকারী সংস্থা অর্থাৎ N.G.O. রাই সরকারের ভূমিকা নিয়ে, নানান প্রতিকূল অবস্থায় সাফল্যজনকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি বলবো, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারেরও উচিত -এন.জি.ও.দের কর্মপদ্ধতি অনুসারে বিভিন্ন ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহন করা।

* বর্তমান সরকার ও তার মন্ত্রীরা বলে বেড়াচ্ছেন 'দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ছে, বৈদেশিক বানিজ্যের বিভিন্ন সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে' -একজন অভিজ্ঞ প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই।

ক.চৌ.: আমি আগেও বলেছি বর্তমান সরকারের অতঃপতনের একটা বড় কারণ হচ্ছে -'ক্রমাগত নির্লজ্জ মিথ্যাচার'। এটা ফ্যাসিবাদীরও একটা লক্ষণ। সরকার ও তার মন্ত্রীবর্গ দেশ-বিদেশে বড় গলায় বলে বেড়াচ্ছেন -বাংলাদেশে সন্ত্রাস কমে গেছে ও বৈদেশিক বানিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। আর তারই সাথে বাড়ছে বৈদেশিক বিনিয়োগও। আমার জানা মতে, প্রকৃত অবস্থা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমান সরকার বলতে গেলে, বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ এর প্রেসক্রিপশন অনুসারেই কাজ করছে। আসলে ঐসব সংস্থাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশকে তারা সে পরিমানই ঋনদেবে যাতে সোমালিয়ার মতো একটি দুর্ভিক্ষ দেশে সৃষ্টি না হয়, আর কোন রকমে মানুষ 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' অবস্থায় যেনো বেঁচে থাকতে পারে। বিনিময়ে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে তারা ব্যবহার করবে বাংলাদেশকে। সৃষ্টি করবে নিজেদের পণ্যের অবাধ বাজার। এভাবে চলতে থাকলে, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন শুধুমাত্র 'আশার ফানুস' হিসেবেই মানুষের চোখে ভাসবে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এই অস্থিতিশীল ও করুণ অবস্থার কোনরূপ পরিবর্তন কোনদিনই আসবেনা বাংলাদেশে।

শেষের কথাঃ

[দীর্ঘ আলাপচারিতার পর আমি বিদায় নেয়ার ঠিক অল্প আগে প্রফেসর কবীর চৌধুরী বিনীত কন্ঠে বললেন- "বাংলাদেশের সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে তুমি আজ আমার কাছে এই দূর প্রবাসেও অনেক কিছুই জানতে চেয়েছো। আমার স্বল্পজ্ঞানের আলোকে আমি চেষ্টা করেছি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সচেতন বাঙালীদের কাছে তুলে ধরতে।" প্রতিত্তরে আমি তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও ফুলেল অভিনন্দন জানালাম।

ফেরার পথে কবীর স্যারের একটা কথাই বার বার মনে আসছিল শুধু -'আমার সল্পজ্ঞানের আলোকে.....।' আমি নিজেই এ কথা ভেবে মৃদু হাসলাম মনে মনে। "সাগরের গভীরতা বিশাল। অথচ সাগর কী জানে তার সেই গভীরতার কথা"! মিনিট পাঁচেক কথা না বলায় আমার হাসি দেখে মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে নিরবতা ভাঙলো সঙ্গী মায়ুমি। 'কি ব্যাপার? হাসছো যে! বাংলাদেশের কি কোন সুসংবাদ শুনেছ?' সুসংবাদ! বাংলাদেশের!! বুকটা আমার ব্যথায় ভরে উঠলো এই বিদেশীনীর সামনে। মায়ুমিকে পাশাপাশি রেখে চুপচাপ এগিয়ে যাচ্ছিলাম সুগামো ষ্টেশনের দিকে। বাংলাদেশের সুসংবাদ!!! কী বলবো এ ব্যাপারে একজন জাপানি সাংবাদিককে?]' কমিউনিটি নিউজ, জাপান

একান্ত আলাপচারিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতা বিভাস ভট্টাচার্য: পৈতৃক ভিটে বাংলাদেশের কোঠালিপাড়ার উনশিয়া গ্রামে, সেখানে না যেতে পারার যন্ত্রনা এখনো তাকে কুরে কুরে খায়।


http://community.skynetjp.com/index.htm




দীপক রায়, কলকাতা, ভারত ।।

১৬ই আগষ্ট সুকান্তের ৮৭ তম জন্মদিন পালন হয়েছে সাড়ম্বরেই। কিন্তু প্রচারের বৃত্তের বাইরে থাকা সুকান্তের পরিবারের খোঁজে গিয়েছিলাম। সেই বিখ্যাত কলকাতার বেলেঘাটার হরমোহন ঘোষ লেনে বিকেলটা কাটালাম সুকান্তের অনুজ বিভাস ভট্টাচার্যের সাথে। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এলো নানা অজানা কথা। ৮৪ বছর বয়সী বিভাস ভট্টাচার্য, তার স্ত্রী আরতি ভট্টাচার্য জানালেন সেইসব কথা। যার পৈতৃক ভিটে রয়েছে বাংলাদেশের কোঠালিপাড়ার উনশিয়া গ্রামে, সেখানে না যেতে পারার যন্ত্রনা এখনো তাকে কুরে কুরে খায়। কিন্তু বার্ধক্যের কারনেই আর যেতে পারবেন না ভেবে যন্ত্রনা পান তিনি। যন্ত্রনা পান তার স্ত্রী আরতি ভট্টাচার্যও।

টানা দুই ঘন্টা ধরে বিভাস ভট্টাচার্য একান্ত আলাপচারিতায় জানালেন, সুকান্ত ভট্টাচার্য অভাবে, অনাহারে মারা গিয়েছেন, এটা সত্য নয়। শরীরের প্রতি যত্ন না নিয়ে অবিরাম কমিউনিস্ট পার্টি ও কিশোর বাহিনীর সমাজসেবার কাজ করতে গিয়েই তার দেহে বাসা বেধেছিল দুরারোগ্য ক্ষয়রোগ, যার থেকে আর মুক্তি পাননি তিনি। একুশ বছর পুর্ন হবার আগেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। এমনকি দেশের স্বাধীনতাও দেখে যেতে পারেননি তিনি।

সুকান্ত ভট্টাচার্য যখন মারা যান, তখন বিভাস ভট্টাচার্যের বয়স ছিল ১৮ বছর। ফলে সুকান্তের সব স্মৃতিই তার মনে আছে। তিনি জানালেন, সুকান্ত ভট্টাচার্যই তাকে রাজনীতিতে এবং কিশোর বাহিনী সংগঠনে এনেছিলেন। তবে তিনি সুকান্তের মত সর্বক্ষনের পার্টি কর্মী ছিলেন না। তিনি পারিবারিক প্রকাশনা ব্যবসার সাথে যুক্ত থেকেই রাজনীতি করে গিয়েছিলেন। তাদের পরিবার ছিল পুরোদস্তুর রাজনীতির পরিবার। পুরানো দিনের সেইসব স্মৃতি অনর্গল বলে গেলেন তিনি।

ভাবলে অবাক হতে হয়, এখনো ছোট্ট একতলা বাড়িতেই সাধারন মানুষের মত বাস করে এই পরিবার। সুকান্তের পরিবার বলে অবশ্যই গর্ব আছে, কিন্তু কখনো সেটাকে নিয়ে প্রচারের আলোয় আসেননি তারা। তার নাতি ছোট্ট রূপায়ন ভট্টাচার্য ঘরে টাঙ্গানো সুকান্তের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে জানালো সে সুকান্তকে "ভালো দাদু'' বলে ডাকে। সুকান্ত যে কারো দাদু হতে পারে এটা আগে কখনো ভাবিনি। আলাপচারিতার মাঝেই চা-বিস্কুটে জমে উঠল গল্প। তার মতে সুকান্ত রাজনীতিতে এসেছিলেন সেই সময়ে বিশ্বযুদ্ধের কারনেই। সেই ঘটনা তাকে রাজনীতি ও কিশোর বাহিনীর সমাজসেবার কাজে বিলিয়ে দিয়েছিল।

বর্তমান সরকারের পাঠ্যসূচি থেকে সুকান্তের কবিতা বাদ দেওয়ার প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। তার মতে, এতে কিছু যায় আসে না। তিনি জনতার কবি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। মানুষের ভালোবাসা কেউ আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশে তাদের পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহন করে সংস্কার করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফরিদপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল বিশ্বাসকে ধন্যবাদ জানান।

তবে তার একটি ক্ষেদ এখনো রয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে তাদের পৈতৃক বাড়ি যদি বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহন করতে পারে, তাহলে কেন ভারত সরকার সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৩৪ নং হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িটি অধিগ্রহন করে সংস্কার করবে না। সেটি এখনো ভাঙ্গা হয়নি। অধিগ্রহন করা এখনো সম্ভব।

পড়ন্ত বিকেলে, বৃষ্টির মাঝে তার আলাপচারিতা ভিত্তিক সাক্ষাৎকারটি নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে সুকান্তের নাতি, সুকান্তের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রূপায়নকে দেখে মনে হল সুকান্ত তো এমন বয়সেই আগুন ঝরানো সব কবিতা লিখতেন। বৃষ্টি থামতেই বেরিয়ে এলাম। বাইরে রাস্তার ধারে সুকান্তের আবক্ষ মুর্তি হাসি মুখে বৃষ্টিস্নাত। তার গলায় ঝুলছে জন্মদিনে দেওয়া ফুলের মালাগুলি। কমিউনিটি নিউজ, জাপান


Thursday, November 8, 2012

৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী গ্রেপ্তার





ঢাকা, নভেম্বর ০৮ - ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরীকে একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মো. শাজাহান নামের এক ব্যক্তি ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কয়েকদিন আগে আদালতে সালাহ উদ্দিন শোয়েবের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ খান থানা পুলিশ।সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ২০০৩ সালে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে বিমানবন্দর থেকে বিদেশি পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ।

সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার এর সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোকে জড়িয়ে ব্লিটজে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন ব্যাপক আলোড়ন তোলে। পুরো উপমহাদেশে, বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে সেই খবর ফলাও প্রচার পায়। হিনার স্বামী ফিরোজ গুলজার ওই প্রতিবেদনকে স্রেফ কুৎসা বলে উড়িয়ে দেন। উন্নয়নশীল আট দেশের জোট ডি-এইটের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে শুক্রবার ঢাকা আসছেন হিনা। এর এক দিন আগে প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হলেন ব্লিটজ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শোয়েব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) জানান, বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন শোয়েবকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে হজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তার


চট্টগ্রাম, নভেম্বর ০৮ - চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ইসলামী ছাত্র শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেনকে কলকাতায় গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশের সদর দফতরে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি সাজ্জাদ আলী খানের গ্রেফতারের বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) বনজ কুমার মজুমদার ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী উপ কমিশনার তারেক আহমেদ জানান,বুধবার পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে সাজ্জাদ সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হলে বৃহস্পতিবার তা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে জানান তারেক আহমেদ।

২০০০ সালের জুলাই মাসে বহদ্দারহাটে একটি চলন্ত মাইক্রোবাসে গুলি করে ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীসহ আটজনকে সাজ্জাদের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালের এপ্রিলে সাজ্জাদকে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার করা হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যায়। ওই হত্যা মামলার রায়ে ২০০৮ সালে সাজ্জাদসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া আরো তিন শিবির কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অস্ত্র আইনের আরেকটি মামলায় ১০ বছরের জেল হয় সাজ্জাদের। তার বিরুদ্ধে আরো অন্তত আটটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ভয়ংকর এ সন্ত্রাসী দুবাইয়ে বসেই নগরীর পাঁচলাইশ, চালিতাতলী, অক্সিজেন, মুরাদপুর, চকবাজার, বায়েজিদ, হাটহাজারীসহ বিশাল এলাকায় তার আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। তার নামেই এসব এলাকায় এখনো ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড চলছে। এ কাজে সাজ্জাদ এলাকার উঠতি যুবকদের ব্যবহার করছিলেন বলে নগর পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। তবে সাজ্জাদ মধ্যপ্রাচ্য থেকে কবে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন সে বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিলো না।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারিক আহম্মদ খান বলেন, “সাজ্জাদের নামে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। বিশেষত জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এ চাঁদাবাজিটা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে খবর পেলেও কেউ সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেননি।”
এ বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন এলাকায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকে গুলি চালান একদল ক্যাডার। এ সময় তারা চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় অনেকদিন পর আবারও শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নাম আলোচনায় উঠে আসে। নগর পুলিশ কর্মকর্তারাও সাজ্জাদের বিষয়ে তৎপর হন। পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রায় এক দশক দুবাই ছিলেন সাজ্জাদ। সেখানে বাঙালি এক তরুণীকে তিনি বিয়ে করেন। পরে বাঙালি স্ত্রীকে সন্তানসহ দেশে পাঠিয়ে ভারতের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে ভারতে যান তিনি।

জমি দখলকে কেন্দ্র করে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নির্দেশে তার সহযোগীরা ব্যাপক অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। জমির মালিকদের কাছ থেকে বিক্রির সময় টাকা আদায়ের পাশাপাশি ক্রেতার কাছ থেকেও টাকা আদায় করছেন সাজ্জাদ বাহিনীর ক্যাডাররা।গত বছরের আগস্টে সাজ্জাদের দুই সহযোগী সরওয়ার ও ম্যাক্সনকে একটি একে-৪৭ রাইফেলসহ বায়েজিদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ বোস্তামি থানার তৎকালীন ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম।

নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে হাটহাজারী উপজেলার সঙ্গে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।ওই এলাকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)‘অনন্যা’ নামে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছে।

মূলত সংযোগ সড়ক এবং আবাসিক এলাকা পাল্টে দিয়েছে ওই এলাকার দৃশ্যপট। বর্তমানে ওই এলাকায় জমির দাম বাড়ছে। এতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ওই এলাকায় জমি কেনাবেচা নিয়ে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ শুরু করেন। ফলে ওই এলাকায় জায়গা জমি কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে একটি চক্রও গড়ে ওঠে।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাজ্জাদ সর্বশেষ ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর বন্দুকযুদ্ধের পর তার সহযোগী ও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার দেলোয়ার হোসেন ওরফে আজরাইল দেলোয়ারসহ নগরীর চালিতাতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে পুলিশ একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করে।

তিন বছর জেল খেটে দেলোয়ারের আগেই সাজ্জাদ ২০০৪ সালে জামিনে মুক্তি পান।৫৪ ধারায় আবার গ্রেফতার এড়াতে কুমিল্লার জামায়াতের তৎকালীন সাংসদ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের গাড়িতে করে জেলগেট থেকে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ।২০০৪ সালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মুখে তৎকালীন জোট সরকার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠনের পর  দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী খান দুবাইয়ে পালিয়ে যায়।
২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে খুন হন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার লিয়াকত আলী। লিয়াকত হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয় সাজ্জাদ ও আরেক দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জসিম উদ্দিন ওরফে ফাইভ স্টার জসিম। মূলত এ ঘটনার পরই অপরাধ জগতে সাজ্জাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পর নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে সাজ্জাদের নেতৃত্বে মাইক্রোবাসে ব্রাশফায়ার করে ছাত্রলীগের ৬ নেতা সহ ৮জনকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। আলোচিত এইট মার্ডারের ঘটনায় অভিযুক্ত শিবিরের আরেক ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে গিট্টু নাছির এবং ফাইভ স্টার জসিম পরবর্তীতে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। ২০০৫ সালে আজরাইল দেলোয়ার জামিনে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ আজরাইল দেলোয়ার নিহত হয়।
এরপর নিজের দল জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শক্তিশালী অংশীদার হলেও পরিস্থিতি প্রতিকূল মনে করে  সাজ্জাদ আর দেশে ফেরেননি।০৮/১১/২০১২

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলবে বাংলাদেশ-দীপু মনি


ঢাকা, নভেম্বর ০৮ - একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

উন্নয়নশীল আট দেশের জোট ডি-এইটের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে শুক্রবার ঢাকা আসছেন হিনা। সকাল ১১টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীপু মনির সঙ্গেও বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বৈঠক করবেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে দীপু মনি বলেন, “বৈঠকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের দাবি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আবারো তুলে ধরব আমরা।”

একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাসহ আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়া এবং অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের হিস্যা পাওয়ারও দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একটি বিশেষ বিমানে করে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকা পৌঁছাবেন হিনা রাব্বানি। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বেলা ১২টায় গণভবনে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডি-এইট সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেবেন তিনি।

আগামী ২২ নভেম্বর ইসলামাবাদে ডি-এইটভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের এই সম্মেলন শুরুর কথা রয়েছে।

সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বেলা ৩টায় ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে পাকিস্তানি মন্ত্রীর। এর আগে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো মন্ত্রী বাংলাদেশে আসছেন। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর হিনার ঢাকায় আসার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের মেয়াদে গত চার বছরে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের শিক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রী ইসলামাবাদ সফর করেছেন। এছাড়া ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়।

Sunday, October 28, 2012

‘‘তারা এসেই অন্যের কেনা গরু তাদের বলে দাবি করেন। দুঃখ লাগে তাদের জন্য, যারা এই মহান ত্যাগের দিনেও মানুষকে ঠকান, আল্লাহকে ঠকিয়ে নিজেই ঠকেন"- বাঙালি মুসলমানের প্রতারণা



নিউইয়র্ক থেকে:কোরবানির ঈদের দিনেও কয়েকজন বাঙালি মুসলমানের প্রতারণায় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে। অনেকের খুশির ঈদ ম্লান হয়েছে। অনেকেই গরু কিনেও কোরবানির দিনে কোরবানি করার জন্য গরু খুঁজে পাননি। ফলে তারা আর কোরবানি দিতে পারেননি।

কোরবানির দিনে দেখা গেছে, একই কোরবানির গরুর মালিক একাধিক। এমনও দেখা গেছে, জবাই করবেন বলে এক পক্ষ গরু দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে, আরেক পক্ষ এসে বলছেন, ‘‘এটা আমাদের গরু, আপনারা বাঁধছেন কেন?’’ ঠিক সেই সময়েই তৃতীয় পক্ষ এসে বাঁধা গরুটি জবাই করে নিয়ে চলে গেলো গায়ের জোরে।

এ নিয়ে বাদানুবাদও বেঁধে যায় কোরবানিদাতাদের মধ্যে। অনেকেই গরু কোরবানি দিতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন খালি হাতে। আবার অনেকেই সারাদিন অপেক্ষা করে ফার্মের মালিক যা দিয়েছেন তাই নিয়ে কোরবানি দিয়েছেন। ফলে মধ্যরাত পর্যন্তও সেখানে গরু জবাই করতে দেখা গেছে।

এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটে ল্যারি সামস নামক এক ব্যক্তির ফার্মে। জানা গেছে, ঈদের দিনে মুসলিম নামধারী কিছু লোক নির্ধারিত সময়ের আগেই ফার্মে গিয়ে সবচেয়ে বড় বড় কোরবানির গরু তাদের কেনা বলে দাবি করেন! ফার্মের মালিক ল্যারি সামস দুর্বৃত্তদের কথামতো গরুগুলো জবাই করে দেন। কিন্তু তারা

কোরবানির মাংস নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন মালিককে পাওনা টাকা না দিয়েই। পরে গরুগুলোর প্রকৃত ক্রেতারা সেখানে এলেও গরু খুঁজে না পাওয়ায় ঈদের দিন কোরবানি দেওয়া থেকে বঞ্চিত হন।

কোরবানির ঈদের দিন বিকেলে ফার্মের মালিক ল্যারি, তার স্ত্রী ও মেয়েকে কাঁদতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ফার্মের কর্মচারী, অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে চোখ মুছতে দেখা যায়। ল্যারির মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘দেখুন, আমার বাবা খুব মর্মাহত ব্যাপারটি নিয়ে। আমরাও দুঃখিত খুব। আমরা পরিবারের সবাই আজকে এখানে ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছিলাম কোরবানি ঈদ উপলক্ষে। এখানে আমরা সবাইকে খাবার, স্ন্যাক্স, পানি ফ্রি খাইয়েছি। বাচ্চাদের জন্য খেলার পার্ক দিয়েছিলাম আমাদের নিজ খরচে। আর দেখুন বিনিময়ে আমরা কি পেলাম? আমরা আর এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’’

ঈদের পরের দিনও সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শত শত ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেখানে কোরবানি দিচ্ছেন। আবার অনেকেই আগের দিনের দুঃখজনক ঘটনার শিকার হয়ে শূন্য হাতে ফিরে যাওয়া মানুষ, যারা নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। সাংবাদিকদের দেখে তারা ছুটে আসেন এবং তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেন। তারা অনুরোধ জানান, সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করার জন্য; ভবিষ্যতে এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। এদিনও ফার্মের মালিক ল্যারি সামসকে বিষণ্ণ দেখায়।

‘‘কেউ এসে বললেন, গরুটি আমার আর আপনি তা কেটে দিয়ে দিলেন কেন? কেন আগে টাকা নিলেন না?’’ এমন প্রশ্ন করলে ল্যারি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। তার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘‘আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষ। পারলে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি, না পারলে চুপ থাকি। কোনো মানুষ ঈদের দিনে যা আল্লাহকে কোরবানি দেবেন সেটা নিয়েও প্রতারণা করবেন তাই কি হয়? এ-ও কি সম্ভব? আমার মনে কখনো এই চিন্তাই আসেনি যে কোনো মুসলমান তার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এমন তামাশা করতে পারে! আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারি না। তারা হয়তো আবার ফিরে এসে আমার টাকাটা দিয়ে যাবেন, আমার বিশ্বাস এমনই!’’

ল্যারি জানান, ‘‘তারা এসেই অন্যের কেনা গরু তাদের বলে দাবি করেন। আমিও তাদের কেনা গরুগুলো দেখাই। কিন্তু তারা ফার্মের সব থেকে বড় গরুগুলো তাদের বলে দাবি করেন। এতে যারা প্রকৃত ক্রেতা তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন। এতে আমার এখানে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়। আসল ক্রেতাদের আমার আবার নতুন করে গরু এনে দিতে হয় এবং সেগুলো নতুন করে কাটতে কাটতে অনেকের রাত ১২টা বেজে যায়!’’

‘‘আপনি পুলিশ ডাকলেন না কেন?’’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দেখুন, ঈদ আনন্দের, খুশির। এই দিনে পুলিশ ডেকে আমি কারোর আনন্দ মাটি করতে চাইনি। আমার তো সব রেকর্ড আছে। কারা এগুলো করেছেন তার তালিকা আছে। কিন্তু আমি কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি না আপাতত। তারা হয়তো জানেন না ‘কোরবানি’ মানে কি? কিন্তু আমি তো জানি। তারা টাকা না দিলে আমি মনে করবো এটা আমার জন্য স্যাক্রিফাইস! কেউ চাইলে আমি সব তথ্য দিতে পারি। আমার ১৫ হাজার ডলার লোকসান হয়েছে আজ, এতে আমার কোনো কষ্ট নেই। দুঃখ লাগে তাদের জন্য, যারা এই মহান ত্যাগের দিনেও মানুষকে ঠকান, আল্লাহকে ঠকিয়ে নিজেই ঠকেন।’’

তবে ল্যারি জানান, ‘‘দ্বিতীয় দিনে কোরবানি দিতে আসা মুসলমানেরা অনেক ধর্মপ্রাণ। তারা জানেন, ত্যাগের মহিমা কি! এখন পর্যন্ত কোন অনিয়ম আজ দেখা যায়নি।’’

এ কথা বলে প্রাণ খুলে হাসতেও দেখা গেলো তাকে। তিনি সাংবাদিকদের নিউজটা করার অনুরোধ জানান।

সেখানে ভার্জিনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক পারভেজ ও মেট্রো ওয়াশিংটন বিএনপির সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘‘আমরা খুবই ভাগ্যবান যে প্রবাসে থেকেও আমরা কোরবানি দিতে পারছি।’’ তবে দু`জনেই ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তি দাবি করেন। সেখানে কমিউনিটির নেতা, সাংবাদিক কবি বাবুল নকরেকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক


নয়া দিল্লি, অক্টোবর ২৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সফরের প্রথম দিনে ভারতের লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

বিজেপি নেত্রী সুষমা এই উদ্বেগের প্রতি সহমর্মী হয়ে সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের সফরে রোববার দুপুরে নয়া দিল্লি পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিকালে দিল্লির ৮ নম্বর সবদরজং সড়কে বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাসভবনে যান তিনি।

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি চেয়ারপারসন তাজ প্যালেসে যান। তাদের বৈঠকের বিষয়বস্তু সেখানে সাংবাদিকদের জানান বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতা সীমান্তে হত্যা নিয়ে তার উদ্বেগের কথা বলেছেন। জবাবে সুষমা স্বরাজ বলেছেন, সীমান্ত হত্যা কমে এসেছে। তবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি (লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা) এই সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসা উচিৎ বলে মনে করেন।”

সীমান্তে হত্যা বন্ধ না হলে তা দুদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে খালেদাকে জানিয়েছেন ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা।

বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন জানান।

“সৌহার্দ্য ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে সুষমা স্বরাজ বাসার আঙিনায় এসে অভ্যর্থনা ও বিদায় জানান।”

দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার ওপর দুই নেতা আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে সুষমা বলেন, ভারতের বিরোধী দল বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

জবাবে খালেদা জিয়া বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ বজায় রেখে ভারতের সঙ্গে স্বচ্ছতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান তিনি।

সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে ভারতে খালেদা জিয়ার এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ভারত বলছে, এটা বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে নয়া দিল্লির যোগাযোগের অংশ।

অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার বিষয়ে শমসের মবিন বলেন, “এই বিষয়ে খালেদা জিয়া লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতাকে বলেছেন, তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান আশা করে বিএনপি।”

এজন্য দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি যৌথ কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের প্রতি সুষমা স্বরাজ একমত পোষণ করেন বলে শমসের মবিন জানান।

বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আরো বেশি বাংলাদেশি পণ্যের ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চান বিরোধীদলীয় নেতা।

খালেদা জিয়া ভারতের বিরোধীদলীয় নেতাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সুবিধাজনক সময়ে সফর করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করতে সন্ধ্যায় হোটেলে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই।

ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান।

বিরোধীদলীয় নেতা সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সফরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। আজমীরে সুফি সাধক হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) মাজার জিয়ারতও বিরোধীদলীয় নেতার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে।

দুপুরে নয়া দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দরে পৌঁছলে খালেদাকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপ হাইকমিশনার মাহবুব হাসান সালেহসহ দূতাবাস কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন।

ভারত সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক হাইকমিশনার সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য খালেদা রাব্বানী, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ।

খালেদার এই সফরের সংবাদ জানাতে তার সঙ্গে রয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক সুমন মাহমুদ।

সফর শেষে আগামী ৩ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে প্রেসসচিব জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০০৬ সালে ভারত সফরে যান। সেবার তিনি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে প্রতিবেশী দেশটিতে এটাই তার প্রথম সফর। বিডিনিউজ

Friday, October 26, 2012

সঠিকভাবে গরু বা ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে- ত্রুটি থাকলে সেই চামড়ার মূল্য থাকে না


এই ঈদে পশু কোরবানির পর মূলত চামড়াটি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তবে সময়মতো বিক্রি করা না গেলে সঠিকভাবে গরু বা ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে।কেননা, ত্রুটি থাকলে সেই চামড়ার মূল্য থাকে না।বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আনসারী বলেন, চামড়ার দাম অনেকটাই চামড়ার মানের ওপর নির্ভর করে। চামড়া ছাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় সংরক্ষণে অবহেলা করলে মান নষ্ট হতে পারে।
পশু কোরবানির পর জরুরি কাজ পশুর চামড়া সংরক্ষণ। চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির (প্রস্তাবিত) প্রভাষক আবদুল্লাহ-আল-মাহমুদ।
 প্রথমেই চামড়াটি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এমনভাবে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে চামড়ায় কোনো ধরনের ময়লা, রক্ত, চর্বি বা মাংস লেগে না থাকে। এভাবে পরিষ্কার করার পর চামড়া সংরক্ষণের উপযোগী হয়।
 কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর সাত-আট ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে আবহাওয়া বেশি শুষ্ক ও গরম হলে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে।
 চামড়া সাধারণত লবণ-পদ্ধতি, রোদে শুকানো পদ্ধতি ও হিমাগার-পদ্ধতি—তিনভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
 লবণ-পদ্ধতিতে চামড়ার মাংসল পিঠে লবণ মাখিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ জন্য মাংসল পিঠে চামড়ার ওজনের ৪০ শতাংশ লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে। লবণ লাগিয়ে প্রায় এক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। লবণ লাগানোর পর দেখতে হবে, পুরো চামড়ায় পরিপূর্ণভাবে লবণ লেগেছে কি না। কারণ, লবণ ঠিকমতো না লাগলে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
 রোদে শুকিয়েও চামড়া সংরক্ষণ করা যায়। পুরো চামড়াটি কাঠের বা বাঁশের কোনো ফ্রেমের ওপর রেখে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হয়। তবে রোদে শুকিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করলে চামড়ার গুণাগুণ কিছুটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
 চামড়া যেকোনো শুকনো ও আলোযুক্ত ঘরে সংরক্ষণ করতে হবে। ঘরের পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে হলে চামড়ার মান নষ্ট হয়ে যায়।
 কোনো বদ্ধ ঘরে চামড়া রাখলে সেখানে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দূর করতে বৈদ্যুতিক ফ্যানের বাতাস দিতে হবে।
 সাধারণত একসঙ্গে অনেক চামড়া সংরক্ষণ করতে হিমাগার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। হিমাগারে মূলত ব্যবসায়ীরা চামড়া সংরক্ষণ করে থাকেন। তবে আমাদের দেশে সবচেয়ে কার্যকর ও সহজ উপায় হলো লবণ-পদ্ধতি।

কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সুন্দর রাখতে কিছু পরামর্শ


পশু কেনা আর যত্ন-আত্তিতে ব্যস্ত সময় পার করেছন অনেকে। কারণ, কদিন বাদেই ঈদ। কিন্তু পশু কোরবানিতে পরিকল্পনার অভাব আর কোরবানির বর্জ্যে অব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে। তাতে ফিকে হবে আপনার ঈদের আনন্দ। আর কোরবানির বর্জ্য দূষিত হয়ে তা থেকে ছড়াতে পারে রোগবালাই। তবে একটু সময় নিয়ে আর কিছু নিয়ম মেনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলেই এসব সমস্যা এড়ানো যাবে। এ নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা সিটি উত্তর করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বিপন কুমার সাহা। তিনি বলেন, সামান্য অসচেতনতায় একজনের কারণে অনেকের কষ্ট হতে পারে। অথচ একটু খেয়াল রাখলে সমস্যা এড়ানো সম্ভব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর পরিবেশ সুন্দর রাখতে তাঁর কিছু পরামর্শ দেখুন।
 কোনো এলাকার লোকজন বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে একস্থানে কোরবানি করা ভালো। যেমন, মিরপুরের কোনো এলাকার কয়েকটি পরিবার মিলে একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে কোরবানি দিতে পারেন। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়। আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাটি হলে বর্জ্যের গাড়ি পৌঁছাতে সহজ হবে।
 কোরবানির পর পশুর রক্ত ও তরল বর্জ্য খোলা স্থানে রাখা যাবে না। এগুলো গর্তের ভেতরে পুঁতে মাটিচাপা দিতে হবে। কারণ, রক্ত আর নাড়িভুঁড়ি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর যদি রক্ত মাটি থেকে সরানো সম্ভব না হয়, তা হলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
 এবার সিটি করপোরেশনের হাটগুলোয় প্রত্যেক ক্রেতাকে কোরবানির শক্ত বর্জ্য রাখার জন্য একটি বিশেষ পলিথিন দেওয়া হবে। মূলত ঈদের দিন বিকেল থেকেই কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট ও অব্যবহূত বর্জ্য সংগ্রহ কাজ শুরু হবে।
কোরবানির বর্জ্য পলিথিনে করে রেখে দিতে হবে, যাতে ময়লা পরিবহন দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। যাঁরা পলিথিন পাবেন না, তাঁরা এ রকম পলিথিন কিনে ময়লা রাখতে পারেন।
 যেসব এলাকায় গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয় বা দেরি হবে, সেসব স্থানে বর্জ্য এ পলিথিনের ব্যাগে ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। পশুর হাড়সহ শক্ত বর্জ্যগুলোও পলিথিনে দিয়ে দেওয়া ভালো।
 নাড়িভুঁড়ি বা এ জাতীয় বর্জ্য কোনোভাবেই পয়োনিষ্কাশন নালায় ফেলা যাবে না।
 যাঁরা চামড়া কিনবেন, তাঁরা কোনো বদ্ধ পরিবেশে চামড়া পরিষ্কার না করে এমন খোলামেলা স্থানে করতে পারেন, যেখানে ময়লা জমে দুর্গন্ধ হবে না। আর চামড়ার বর্জ্যগুলোও অপসারণের জন্য জমিয়ে রাখতে হবে।
কোরবানির পশুর বর্জ্য নিজের উদ্যোগে পরিষ্কার করাই ভালো।

অতিরিক্ত ভাড়া ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ যোগাযোগমন্ত্রীর


গাবতলী, ঢাকা : যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া ফেরৎ দেওয়ার জন্য বাস মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘‘যদি ভাড়া ফেরৎ না দেওয়া হয় তাহলে ‍তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীতে এদের সাথে নিয়ে কোনো কাজ করা হবেনা ।

রাজধানীর গাবতলীর পশুরহাট পরিদর্শনে এসে যোগাযোগমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘‘যানজট পরিস্থিতি নিয়ে আমি সন্তষ্ট নই। বিশ বছরের জঞ্জাল সরাতে একটু সময় লাগবে।’’

যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘‘চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, দখলবাজ এসব লোকদের গলায় গলায় ভাব। এরা বিভ্ন্নি দল করে রাজনৈতিক ময়দানে একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে আসলে এদের গলায় গলায় ভাব। কোরবানি আমাদের ত্যাগের শিক্ষা দেয়। এই ত্যাগের মধ্যে পশুর মনোবৃত্তি থাকবে কেন।’’

যোগাযোগমন্ত্রী ঝটিকা সফরে গাবতলী আসলে বেশ কয়েকজন যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন। এ সময় বাড়তি ভাড়া নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার আন্তরিকভাবে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। রাতারাতি কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে সমস্যাগুলো কেটে যাবে।’’

টার্মিনাল ও যানজট পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সন্তষ্ট কিনা এ পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি সন্তষ্ট নই। তবে আগের চেয়ে কিছুটা ‍অগ্রগতি হয়েছে।

যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তায় যানজট খুব একটা নেই বললেই চলে। আমি খবর নিয়েছি। একই সাথে রাস্তায় কোনো পশুর হাট নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ড্রাইভার এবং যাত্রীদের সতর্কভাবে চলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ড্রাইভার এবং যাত্রী উভয়েই বেপরোয়া। সবাই পড়িমরি করে বাড়ি ছুটছে । যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে।’’

এসব থেকে সাবধান হওয়ার জন্য সকলকে আহবান জানান তিনি। বাংলানিউজ

সবাইকে নিয়ে পরিমিত খান- ডা. শুভাগত চৌধুরী



অক্টোবর ২৫, ২০১২
আর দু’দিন বাদেই (২৭ অক্টোবর) মুসলমানদের পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। উৎসবের সময় খাওয়াটা একটু বেশি হবেই। কোরবানির উৎসবের সময় মাংস বেশি খাওয়া হয়। বিশেষ করে চর্বিওয়ালা গোশত। একে বারণ করা যাবে না। কারণ এটা উৎসবের অংশ। তবে আমার মতে, আজকাল মানুষ আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়েছেন। তাই পরিমিত ও সীমিত খাওয়ার দিকেই ঝুঁকছেন।

স্বাভাবিকভাবে যদি খান, সমস্যা নেই। মানে, গোশতটা একটু কম খান। পরিমাণে কম। তাহলে ক্যালোরি-ইনটেক একটু কম হল। দু’টুকরোর জায়গায় এক টুকরো। ব্যস, তাহলেই চলবে। যদি রয়ে-সয়ে খান, শেয়ার করেন, তাহলে ভয় নেই। বাইরে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে কী করেন? প্লেটে যা ছিল তার পুরোটা খান না, বাসায় নিয়ে যান, পরে খান বা বাসার অন্যরা সেটা খায়- সে রকমভাবে যদি পুরোটা দিলেই খেয়ে ফেলব–এই মানসিকতা না থাকে তাহলে সমস্যা হবে না।

খাওয়াটা উপভোগ করুন কিন্তু কম খান। অল্প-অল্প করে বারবার খান। স্বাভাবিকভাবে যা খান ততটুকুই। একেবারে বুভুক্ষুর মতো না। প্লেটে দিলেই খেতে হবে তা নয়।

ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন। খাসির চর্বিটা যেমন খুব ক্ষতিকর। এটা ঈদের সময় খেলে পরের এক মাস আর খেলেন না। এটাও একটা কৌশল হতে পারে।

আরেকটা কৌশল হল পরিমাণে কম খাওয়া। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হল ‘পোরশন সাইজ।’ এটা কমানো দরকার।

যে জিনিসটা একা খেতেন সেটা বাসার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে খান। তাহলে আপনার খাওয়ার পরিমাণটা একটু কমল।

কেউ কেউ তিন-চারদিন একটানা মাংস খেতে থাকেন। এটাই ক্ষতিকর। আমি বলব, প্রথমদিনের পর আর মাংস না খেতে। এরপর সবজি বা মাছ খাওয়া যেতে পারে। তাতে শরীরের উপকার। প্রোটিন খেতে চাইলে চিকেনের ব্রোস্ট খান। তাতে ক্যালোরি-ইনটেক কম হবে। চর্বি কম খাওয়া হবে।

ধর্মীয় বিধানেও তো বলা হয়েছে, মাংস বণ্টন করে দিতে। তাই যত বেশি পারা যায়, গরীবদের মধ্যে মাংস বিলিয়ে দিলে ধর্মের নিয়ম মানা হল। ওদিকে শরীরও বেশি-বেশি রেডমিট খাওয়ার ঝুঁকি থেকে বেঁচে গেল।

উৎসবের দিন খান। অল্প করে। ধর্মরক্ষা হল, উৎসব উদযাপনও হল। প্রতিদিন টানা মাংস খাওয়া, মাংস ফ্রিজভর্তি রেখে দিয়ে প্রতিদিন বা মাসের পর মাস খাবেন- এর তো কোনও ধর্মীয় যুক্তি নেই। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই।

রান্নার প্রস্তুতিতেও একটা সাবধানতা দরকার। বেশি করে মসলা দিয়ে কষিয়ে তেল-চর্বি সহযোগে রান্না উপাদেয় হবে, স্বাস্থ্যকর নয়। তার বদলে গ্রিল করে মাংস খাওয়া যেতে পারে। তাতে চর্বিটা মাংস থেকে সরে যাবে। গ্রিলে চর্বি মাংস থেকে ছেঁকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সেটাও পরিমিত। কারণ চর্বি-ছাড়া রেডমিটও তো ক্ষতিকর।

রোগীদের বেলায়ও একই পথ। পরিমিত খাওয়া। শুধু একটুখানি টেস্ট করা। যাদের ডায়াবেটিস আছে, কিডনি ফেইলিওরের রোগী বা প্রেশার যাদের উচ্চ তাদের জন্য রেডমিট বা চর্বিওয়ালা মাংস খুব ক্ষতিকর। কিডনি ফেইলিওরের রোগীদের তো নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন খেতে হয়। এর বেশি খাওয়া বারণ। ওরা কেবল স্বাদ নেয়ার জন্য খেতে পারেন।

আরও ভালো হয়, ডায়াবেটিস বা কিডনি স্পেশালিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া। তাহলে যারা মাংস খেতে উৎসাহ দেবেন, তারা অন্তত ডাক্তারের পরামর্শ শুনে আর কিছু বলবেন না।

আজকাল আমরা বলছি, শুধু নিজেরা স্বাস্থ্যসচেতন হলে চলবে না, পরিবারের অন্য সদস্যদেরও বানাবেন। যার হার্ট ডিজিজ হয়েছে বা ডায়াবেটিস আছে তিনি যেমন ঝুঁকিপূর্ণ- যার এখন এমন কোনও রোগ নেই তার যে কোনওদিন এটা হবে না তা তো বলা যায় না। তাই সাবধান থাকতে হবে পরিবারের সবাইকেই। বেশি-বেশি চর্বি বা ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেয়ে অন্যরা কেন বিপদ ডেকে আনবেন?

সবাই মিলে সহযোগিতার মাধ্যমে এটা করা সম্ভব।

মানতে হবে, আজকাল সব বয়সের সব মানুষের হার্টের অসুখ হচ্ছে। এবারকার হার্ট দিবসের প্রতিপাদ্য তাই ছিল নারী ও শিশুদের হার্টের অসুখ সম্পর্কে সচেতন করা। আগে মনে করা হত, হার্টের অসুখ মূলত পুরুষদের অসুখ। এবং অবশ্যই পরিপূর্ণ বয়সী পুরুষদের। আজকাল উন্নত এমনকী উন্নয়শীল বিশ্বের দেশগুলোতেও যে-হারে নারী ও শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাতে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।

যেহেতু উন্নয়নশীল বিশ্বের নারীরা এখন বেশি হারে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাই তাদের খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতার প্রয়োজন আছে।

নারীদের বেলায় একটা বিষয় হল তারা পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য নিয়ে উৎকণ্ঠিত বা সচেতন হলেও, নিজেদের স্থাস্থ্য নিয়ে তেমন ভাবেন না। ফলে রোগটা গোপনে রয়ে যায়। নারীদের বেলায় লক্ষ্মণগুলোও একটু অন্যরকম। অনেকের দেখা যায় বদহজম হয়। ব্যথা হয় চোয়ালে বা থুতনিতে। মাথা ঝিমঝিম করা বা দুর্বল লাগাটাও অনেকের থাকে।

দেখা যায় ডাক্তাররা বদহজম হলে তার অষুধ দিয়ে দিচ্ছেন। অথচ রোগীর হয়তো ততদিনে ম্যাসিভ বা ইনফেকশন কিছু একটা হয়ে গেছে। সমস্যাটা হচ্ছে ডাক্তাররাও মনে করেন মেয়েদের হার্টের অসুখ হয় না। বিশেষ করে ঋতুমতী নারীদের হার্টের অসুখ কম হয়। ফলে তাদের বেলায় ডাক্তাররা এই ভুলটা করে ফেলেন।

আর এখন তো আমাদের জীবনযাপনের কৌশল, রীতিনীতি বদলে যাচ্ছে। আমরা ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি খাচ্ছি। বাইরের খাবারের দিকে মনোযোগ বাড়ছে। কাজ করছি অফিসে বসে। ডেস্কে। ব্যায়াম, শরীরচর্চা বা শরীরের কোনও নড়াচড়া নেই। হাঁটাহাটি হয় না। এ সব কারণে বড়দের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক।

ছোটরাও একই কারণে নিরাপদ নয়। ওরা এখন কেবল স্কুল আর কোচিংয়ে দৌড়ায়। বাসার খাবারের চেয়ে বাইরের খাবারের দিকে ঝোঁক বেশি। ফাস্টফুডের ভক্ত হয়ে উঠছে। খেলার জায়গা পায় না ওরা। সারাদিন হয় পড়াশুনা নয়তো সোফায় আধাশোয়া হয়ে টিভি দেখা, কম্পিউটারের সামনে বসে গেম খেলা বা ডিভিডিতে গান শোনা, ছবি দেখা– এই প্রজন্মের শিশুরা বড় হচ্ছে খুব ঝুঁকির মধ্যে।

‘অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো প্লে মেকস জ্যাক আ ডাল বয়’– কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললে এটাই যে, শহরের লাইফস্টাইল শিশুদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে।

আজকাল টাইপ-টু ডায়াবেটিসটা তরুণদের খুব বেশি হচ্ছে। আগে এটাকে ভাবা হত বয়স্কদের রোগ। এটি ‘লাইফস্টাইল ডায়াবেটিস।’ ওই একই কারণ। লাইফস্টাইল বদলে যাওয়া। শুয়ে-বসে থাকা, অলস জীবনযাপন।

টাইপ টু ডায়াবেটিস কিন্তু আবার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফাস্টফুড কম খাওয়া, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস বাড়ানো, চিনি ও উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার কম খাওয়া, শাকসবজি-ফলমূল খাওয়া বাড়ানো, সক্রিয় জীবনযাপন– এ সবই হল সমাধান।

নগরায়ন বাড়ছে। বাড়ছে আয়ু। তাই অসুখ-বিসুখেরও প্রতাপ বেশি। এ সবই তো নন-ক্রনিক ডিজিজ। মানে, কোনওটিই ছোঁয়াচে নয়। সবই লাইফস্টাইল ডিজিজ।

তাই সাবধানতাও বেশি দরকার। কখনও-ই লাগাম ছাড়া যাবে না। এই ঈদেও না। উৎসব করুন। উৎসবেরর আনন্দটা পুরোদমে নিন। ধর্মের রীতি মেনে চলুন। নিজে খান পরিমিত। সবাইকে বলুন পরিমিত খেতে। আর শেয়ার করুন। খাবার এবং আনন্দ দুটোই।

সুস্থ থাকুন এই ঈদে। সব ঈদেই। বিডিনিউজ
ডা. শুভাগত চৌধুরী:চিকিৎসক, অধ্যাপক ও লেখক।

Thursday, October 25, 2012

সুনীল মারা গেছেন শুনে আমি মর্মাহত, আমরা দু'জনেই নাস্তিক এবং দৃঢ়ভাবে বাকস্বাধীনতার পক্ষে-তসলিমা নাসরিন


সুনীলের সঙ্গে আমার অনেক মিল ছিল: তসলিমা


Thu, Oct 25th, 2012 6:57 pm BdST

ঢাকা, অক্টোবর ২৫ - এতো তাড়াতাড়ি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় চলে যাবেন তা কখনোই ভাবতে পারেননি তার এক সময়ের বন্ধু বাংলাদেশের লেখক তসলিমা নাসরিন।

সুনীলের মৃত্যুতে ইন্ডিয়া আউটলুক ডটকমকে দেয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেছেন কিছুদিন আগেই তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা তসলিমা।

ভারতীয় সাময়িকীটির দোলা মিত্রকে টেলিফোনে তসলিমা নাসরিন বলেন

মর্মাহত। এতো তাড়াতাড়ি তিনি মারা যাবেন ভাবিনি। তিনি যা করেছেন সেজন্য আমি তার সমালোচনা করেছি, কিন্তু কখনোই প্রস্তুত ছিলাম না যে এতো দ্রুত তার মৃত্যু হবে। আমি তার লেখা পড়ে বেড়ে উঠেছি এবং লেখক হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা করতাম।”

‘নির্বাসিত’ জীবনে বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত তসলিমা গত মাসের শুরুতে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লেখেন, সুনীল তাকে এবং অন্যান্য তরুণী লেখক ও কবিকে ‘যৌন হয়রানি’ করেছেন। তসলিমার এ অভিযোগ ভারত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।

নয়াদিল্লিতে তাকে দেখতে আসা কলকাতার এক বন্ধুর মারফত সুনীলের মৃত্যু সংবাদ পান তসলিমা। ওই বন্ধুকে কলকাতা থেকে কেউ ফোন করে এ খবর জানানোর পরপরই টেলিভিশন খুলে বসেন তারা।

তসলিমা জানান, “তার এখনকার ছবি দেখে আমি আঁতকে উঠেছিলাম। আমি বুঝতেই পারিনি উনি এতোটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু না, আমাকে তার যৌন হয়রানি করার কথা প্রকাশ করা নিয়ে আমি এতোটুকুও অপরাধ বোধ করিনি।”

“আমাদের দেশে সমস্যা হল কেউ যখন কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে তখন তাকে এমন এক আসনে বসানো হয় যে, তিনি যেন কোনো ভুল করতে পারেন না। তাকে সন্ত বানিয়ে ফেলা হবে এবং তার বিরুদ্ধে কিছু বলাটা তখন পাপ হয়ে যাবে। আর কেউ যদি সাহস করে সদ্যপ্রয়াত কারো সম্পর্কে সমালোচনা করে বসেন তাহলে মৃত ব্যক্তির অপরাধ যতো বড়ই হোক না কেন সমালোচনার অপরাধের আর কোনো ক্ষমা থাকবে না। যেমন আমি নিশ্চিত আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না।”

খোলামেলা প্রতিক্রিয়া জানালে মানুষ কী ভাববে তা নিয়ে তিনি কখনোই ভীত ছিলেন না জানিয়ে তসলিমা বলেন, “সুনীলের সঙ্গে আমার অনেক মিল ছিল। আমরা দু’জনেই নাস্তিক। বাংলা সহিত্যের প্রতি আমাদের দু’জনেরই ভালোবাসা অনেক। আমার বই নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার সমর্থনের আগ পর্যন্ত আমি ভাবতাম আমরা দ’জনেই দৃঢ়ভাবে বাকস্বাধীনতার পক্ষে। তার চরিত্রের এই দুটি কালিমা তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি এখনো এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।”

তসলিমা যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পরপরই এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমি এসবকে একেবারে পাত্তা দিচ্ছি না। ও বহুবার এসব কথা বলেছে। কলকাতায় এসে একেকবার একেকজনের নামে এসব কথা বলেছে। আমি আমার কাজে ব্যস্ত আছি।”

মসলার দাম বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ


ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রকম মসলার দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের। রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মসলার দাম কেন অস্বাভাবিক বেড়েছে তা জানার চেষ্টা করছি। এর পেছনে যে কারণ রয়েছে তা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত ১৪ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে এক সভায় ঈদের আগে পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন রকম মসলার দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতির পরও বাজারে বিভিন্ন রকম মসলার দাম বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।

মন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায় ভোক্তা সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধি যদি অযৌক্তিক হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

অক্টোবর মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১০০ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স : অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে


ঢাকা, অক্টোবর - চলতি অক্টোবর মাসের ১৯ দিনেই (১৯ অক্টোবর পর্যন্ত) ১০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে, যা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমান সোমবার রাতে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি বেশি টাকা পাঠানোয় রেমিটেন্স প্রবাহে এই রেকর্ড হয়েছে।”

একক মাস হিসেবে চলতি অক্টোবর মাসে রেমিটেন্স প্রবাহে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে বলেও আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা। সাইদুর রহমান জানান, অক্টোবর মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১০০ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।

এদিকে প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করেই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১২শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ১৮ অক্টোবর রিজার্ভ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এর আগে জানুয়ারিতে ১২২ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে আসে, যা একক মাস হিসাবে রেমিটেন্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড।

চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ২৫৫ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে। গত ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসেছিল ২৯৬ কোটি ডলার।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ ছাড় বেড়েছে ৩ গুণ- বিডিনিউজ





Thu, Oct 25th, 2012 11:07 am BdST


ঢাকা, অক্টোবর ২৫ - এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা চললেও বিদেশি সাহায্যে এর প্রভাব পড়েনি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ১৮ কোটি (১৮০ মিলিয়ন) ডলারের ঋণের অর্থ ছাড় করেছে বিশ্ব ব্যাংক। অর্থ ছাড়ের এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।

২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬ কোটি ৭৮ লাখ (৬৭৮ মিলিয়ন) ডলারের ঋণ ছাড় করেছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান মনে করেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে জটিলতার কারণে সরকার-বিশ্ব ব্যাংক দুপক্ষই বিগত কিছুদিন ধরে সতর্ক রয়েছে। এ কারণেই ঋণ সহায়তায় কোনো প্রভাব পড়েনি।তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ঝুলে থাকার কারণে এ সংস্থার সহায়তা কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই আশঙ্কা থেকেই সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংকও নতুন কোনো সমালোচনায় জড়াতে চায়নি।”

বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “পদ্মা সেতুর জটিলতা অন্য প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই সময়ে বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ বরং আরো বেড়েছে।”

মন্ত্রণালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ৫০ কোটি ডলারের অর্থ ছাড় করেছিল বিশ্ব ব্যাংক। যা ছিল আগের বছরের (২০১০-১১) তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

শুধু বিশ্ব ব্যাংক নয়; বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে এডিবি, জাইকাসহ অন্যান্য দাতাদেশ ও সংস্থার ঋণ-সহায়তাও এবার বেড়েছে।

ইআরডি চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস পর্যন্ত বিদেশি ঋণ সহায়তার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থা মোট ২১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার।

২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ২০৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এর মধ্যে আগের নেয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ চলে যায় ৭৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করার জন্য সরকারের হাতে থাকে ১২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।

আর ২০১০-১১ অর্থবছরে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ১৬৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার। সুদ-আসল পরিশোধে ৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার চলে যাওয়ার পর সরকারের হাতে ছিল ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

জাহিদ হোসেন বলেন, গত অর্থবছরের প্রথম ভাগে বাংলাদেশে বিদেশি সাহায্যের অর্থ ছাড় কম হলেও শেষ দিকে এসে তা পুষিয়ে যায়। এবার দেখা যাচ্ছে অর্থবছরের শুরুতেই অর্থ ছাড়ের পরিমাণ বেশ ভাল।

“এটা বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে”, বলেন তিনি।

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। অবশ্য গত বছর সেপ্টেম্বরেই এই ঋণচুক্তি স্থগিত করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ সরকারের নানা তৎপরতার পর নতুন কিছু শর্তে এ বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পদ্মা প্রকল্পে ফিরে আসার ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এ প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত কীভাবে চলবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- তা নিয়ে বর্তমানে সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিশ্ব ব্যাংকের একটি পর্যবেক্ষক দল ইতোমধ্যে ঢকায় এসে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করতে বিশ্ব ব্যাংকের দ্বিতীয় প্রতিনিধিদলটি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসবে বলে জানিয়েছেন ইআরডি সচিব ইকবাল মাহমুদ।

Tuesday, October 23, 2012

আলপনা ভালো আছে: আলপনাদের ভালো রাখতে হবে- সুমি খান



আলপনা ভালো আছে। বাংলানিউজে প্রকাশিত কলাম এবং প্রতিবেদন তাকে সুরক্ষা দিয়েছে। আলপনা নেত্রকোনায় তার বাড়িতে পরিবারের সাথে আগের মতোই নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন। স্থানীয় সাংসদ নিজে আলপনাকে বাসায় পৌছে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের স্থানীয় ক্যাডাররা ক্ষমা চেয়েছে আলপনার কাছে। আলপনা আমাকে কয়েকটি চিঠি দিয়েছন, মোবাইলে কথা হয়েছে কয়েকবার।আমার প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা তার বিনয়ের প্রকাশ। বলেছেন এখন ভালো আছেন তিনি। দু:খ করে বলেছেন হুমকিদাতা এই ছেলেরা কেউ এলাকার নয়।প্রশ্ন উঠে তাহলে এই ক্যাডারেরা কী করে সুযোগ পায় ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গাতে? তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে প্রশাসন কে। প্রতিটি এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রলীগ ক্যাডারদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী। নাহয় মহাজোট সরকারকে অনেক বড়ো খেসারত দিতে হবে।
১৩ সেপ্টেম্বর আলপনা একটি চিঠি পাঠায় আমাকে। চিঠিটি হুবহু তুলে দেয়া হলো।
" সুমি আপু,
আপনাকে আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।
সত্তের জয় হয় ই হয়। আপনারা আমার পাশে না থাকলে হয়তো সম্ভব ছিল না।
আমি এখন বাসায় এম পি নিজ দায়িত্তে অফিস থেকে নিয়ে এসেছেন।
ছাত্র লীগ দের দিয়ে মাফ চায়্যেছেন
আপনি দীঘ হন ।।
আমি আপ নাকে জিবনেও ভুলতে পারব না।
স শ্রদ্ধ সালাম রইল -আলপনা বেগম"

আমার ভালো লাগছে ভাবতে আলপনা অন্তত এতোটুকু সাপোর্ট প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে পেয়েছেন। আমাকে এবং আমার মতো অনেক সংবাদকর্মীদের বার বার যে সাংসদ , জামাত বিএনপি ক্যাডারেরা জামাত-বিএনপি চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে হুমকি দিয়েছেন তারা কখনো ভাবতেও পারেননি তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। একাত্তরের ঘাতক-দালাল জামাত –বিএনপির সাংসদ অথবা তাদের এপিএস অথবা ক্যাডারেরা আমাকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন বার বার । সেটাকে অপরাধ মেনে ইহজনমে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, হুমকির বাস্তবায়ন কবে করবেন সেই অপেক্ষাতেই তারা আছেন।
আমি অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য বসবাস করি। ল্যাপটপে কারিগরী ত্রুটি তার মধ্যে অন্যতম। আলপনার ভালো থাকার কথা উদ্বিগ্ন পাঠকদের জানানো উচিত ছিল অনেক আগে। পারি নি। এজন্যে প্রিয় পাঠকদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী । অনেকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন আলপনা কেমন আছেন এখন। তাদের মধ্যে চ্যানেল আই য়ের জাপান প্রতিনিধি কাজী ইনসানুল হক অন্যতম। মানবতাবাদী এই পাঠক দের সকলের কাছে আমার এবং আলপনার পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
গণতন্ত্র তখনই সফলতার দিকে এগোয়, এ ধরণের হঠকারী রাজনীতিকেরা যখন তাদের অপরাধ মানতে বাধ্য হয়। আলপনার সাথে আমার বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। বাংলানিউজ কতৃপক্ষ এবং এর সাংবাদিকেরা প্রত্যেকে আন্তরিকভাবে আলপনার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এদেশের মিডিয়া ওয়ার্ল্ডে এ দৃষ্টান্ত নিসন্দেহে অভাবনীয় ব্যাপার। অন্যদিকে সময় টেলিভিশনের প্রতিনিধি আলপনার বিপন্ন সময়ে সময় টেলিভিশনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব এড়ানো হয়েছে নানান অজুহাতে, যা আমাদের করুণ বাস্তবতা। এ বিষয় গুলো আমাদের ভাবতে হবে। আমার শ্রদ্ধেয় সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী, গোলাম মোর্তোজা, মোহসিউল আদনান ২০০১-২০০৪ সময়ে সাপ্তাহিক ২০০০ এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে আমার প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়ে নিয়মিত খোজ নিয়েছেন। আমাকে গ্রেফতার করার পর ততকালীন প্রশাসনের সাথে উচ্চপর্যায়ের সাথে তুমুল লড়াই করেছেন। মোর্তোজা ভাই কলাম লিখেছেন। আমি বরাবর সেই দু:সময়ের সহযাত্রী এবং দায়িত্বশীল সহমর্মীদের আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি বারবার।
তাই আমার মতো ক্ষুদ্র এক সংবাদকর্মী এই অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে যাবো। একই সাথে আমি মনে করি মুখে বড়ো বড়ো কথা বলা যারা বলেন বা লিখেন, তারা আলপনার মতো বিপন্ন সংবাদকর্মীদের পাশে থেকে কিছু দায়িত্ব অন্তত পালন করার চেষ্টা করা জরুরী।
Sumikhan29bdj@gmail.com

Saturday, October 20, 2012

১২ শ’ কোটি ডলারের রেকর্ড রিজার্ভ


ঢাকা, অক্টোবর ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১২ শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান এ তথ্য জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৪০ বছরের ইতিহাসে এটা রেকর্ড রিজার্ভ।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এই প্রথমবারের মতো এক হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরতদের পাঠানো রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অন্যদিকে, ‘রবি’ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তি এবং আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এক্সপোর্ট বিল দ্রুত সময়ে নিস্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াতে খাদ্যদ্রব্য আমদানি কমার পাশাপাশি আমদানিযোগ্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমে আসা এবং বিলাস দ্রব্যের আমদানি নিরূৎসাহিত হওয়ায় সার্বিক আমদানি ব্যয় কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়।

আর এই সব কারণে রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। সন্তোষজনক রিজার্ভের পরিমাণ অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ১২ দিনেই ৫৯৩ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ১২ দিনে এ পরিমাণ রেমিটেন্স এর আগে কখনো আসেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন।”

সাইদুর রহমান জানান, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সোমবার তা আরও বেড়ে ১১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। বৃহস্পতিবার তা ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম পাঁচ দিনে (৫ অক্টোবর পর্যন্ত) ২০৩ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। আর ৬ থেকে ১২ অক্টোবর (৬ থেকে ১২ অক্টোবর) এই সাত দিনে এসেছে ৩৯০ মিলিয়ন ডলার।

একক মাস হিসেবে অক্টোবর মাসে রেমিটেন্সের পরিমাণ অতীতের যে কোনো মাসকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সাইদুর রহমান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের আগে রিজার্ভ ১১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আকুর ৭০০ মিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ১১ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসে।

এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ বেড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) ইসিএফ (বর্ধিত ঋণ সুবিধা) তহবিলের দ্বিতীয় কিস্তির ১৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করতে পারে। তখন রিজার্ভ আরো বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা তিন দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

চলতি অক্টোবর মাসের পাঁচ দিনেই (৫ অক্টোবর পর্যন্ত হিসাব পাওয়া গেছে) ২১০ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।

গত ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার পঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এর মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে এসেছিল ১ দশমিক ০১৫ লাখ ডলার। এছাড়া অগাস্টে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স আসে।

চলতি বছর জানুয়ারিতে ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে আসে, যা একক মাস হিসাবে রেমিটেন্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড।