Thursday, October 25, 2012

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ ছাড় বেড়েছে ৩ গুণ- বিডিনিউজ





Thu, Oct 25th, 2012 11:07 am BdST


ঢাকা, অক্টোবর ২৫ - এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা চললেও বিদেশি সাহায্যে এর প্রভাব পড়েনি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ১৮ কোটি (১৮০ মিলিয়ন) ডলারের ঋণের অর্থ ছাড় করেছে বিশ্ব ব্যাংক। অর্থ ছাড়ের এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।

২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬ কোটি ৭৮ লাখ (৬৭৮ মিলিয়ন) ডলারের ঋণ ছাড় করেছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান মনে করেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে জটিলতার কারণে সরকার-বিশ্ব ব্যাংক দুপক্ষই বিগত কিছুদিন ধরে সতর্ক রয়েছে। এ কারণেই ঋণ সহায়তায় কোনো প্রভাব পড়েনি।তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ঝুলে থাকার কারণে এ সংস্থার সহায়তা কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই আশঙ্কা থেকেই সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংকও নতুন কোনো সমালোচনায় জড়াতে চায়নি।”

বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “পদ্মা সেতুর জটিলতা অন্য প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই সময়ে বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ বরং আরো বেড়েছে।”

মন্ত্রণালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ৫০ কোটি ডলারের অর্থ ছাড় করেছিল বিশ্ব ব্যাংক। যা ছিল আগের বছরের (২০১০-১১) তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

শুধু বিশ্ব ব্যাংক নয়; বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে এডিবি, জাইকাসহ অন্যান্য দাতাদেশ ও সংস্থার ঋণ-সহায়তাও এবার বেড়েছে।

ইআরডি চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস পর্যন্ত বিদেশি ঋণ সহায়তার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থা মোট ২১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার।

২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ২০৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এর মধ্যে আগের নেয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ চলে যায় ৭৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করার জন্য সরকারের হাতে থাকে ১২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।

আর ২০১০-১১ অর্থবছরে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ১৬৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার। সুদ-আসল পরিশোধে ৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার চলে যাওয়ার পর সরকারের হাতে ছিল ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

জাহিদ হোসেন বলেন, গত অর্থবছরের প্রথম ভাগে বাংলাদেশে বিদেশি সাহায্যের অর্থ ছাড় কম হলেও শেষ দিকে এসে তা পুষিয়ে যায়। এবার দেখা যাচ্ছে অর্থবছরের শুরুতেই অর্থ ছাড়ের পরিমাণ বেশ ভাল।

“এটা বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে”, বলেন তিনি।

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। অবশ্য গত বছর সেপ্টেম্বরেই এই ঋণচুক্তি স্থগিত করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ সরকারের নানা তৎপরতার পর নতুন কিছু শর্তে এ বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পদ্মা প্রকল্পে ফিরে আসার ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এ প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত কীভাবে চলবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- তা নিয়ে বর্তমানে সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিশ্ব ব্যাংকের একটি পর্যবেক্ষক দল ইতোমধ্যে ঢকায় এসে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করতে বিশ্ব ব্যাংকের দ্বিতীয় প্রতিনিধিদলটি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসবে বলে জানিয়েছেন ইআরডি সচিব ইকবাল মাহমুদ।

No comments:

Post a Comment