Thursday, November 15, 2012

ওয়াহিদুল আলম ও সাকা চৌধুরীর যৌথ নির্যাতনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মাহবুবুল আলম মারা যান-ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল বুধবার সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ১৬তম সাক্ষী ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গুডস হিলে ওয়াহিদুল আলম ও সাকা চৌধুরীর যৌথ নির্যাতনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মাহবুবুল আলম মারা যান।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল ফয়েজ আহমেদের জবানবন্দি নেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সুলতান মাহমুদ। পরে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী আহসানুল হক তাঁকে জেরা করেন। সাকা চৌধুরী এ সময় আসামির কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
ফয়েজ আহমেদ (৬৪) জবানবন্দিতে বলেন, তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার কালিপুর গ্রামে। ১৯৬৮ সালে তিনি বিকম পাস করেন। একাত্তরে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) গেরিলা ইউনিটের পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহী অঙ্গসংগঠনের সদস্যদের সংগঠিত করে ভারতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠানো ছিল তাঁর কাজ। তিনি বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম তৎকালীন ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাকা চৌধুরীর কনভেনশন মুসলিম লীগে যোগ দেন। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে নিরীহ ব্যক্তিদের নির্যাতন করেন, এমনকি কাউকে কাউকে হত্যাও করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এই সাক্ষী বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রামের একটি দোকান থেকে ছাত্র ইউনিয়নের রাঙ্গুনিয়া কলেজ শাখার ভিপি (সহসভাপতি) হাটহাজারীর মাহবুবুল আলমকে অপহরণ করে গুডস হিলে (চট্টগ্রাম শহরে সাকা চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাহবুবকে পেরেক বিছানো টেবিলের ওপর শুইয়ে নির্যাতন করা হয়। ওয়াহিদুল আলম ওই নির্যাতনের নেতৃত্ব দেন, সাকা চৌধুরী সে সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের যৌথ নির্যাতনের ফলে মাহবুব মারা যান।
ফয়েজ বলেন, এ ঘটনা তিনি তৎকালীন কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতা হারুন কন্ট্রাক্টরের কাছে শুনেছেন। হারুন সে সময় প্রতিদিন গুডস হিলে হাজিরা দিতেন। ঘটনাটি আরও অনেকের কাছে তিনি শুনেছেন। ওয়াহিদুল আলম পরে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে ফয়েজ আসামির কাঠগড়ায় উপস্থিত সাকা চৌধুরীকে শনাক্ত করেন। পরে জেরায় আহসানুল হক জানতে চান, মাহবুবকে যে দোকান থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের দোকান ছিল? জবাবে সাক্ষী বলেন, চায়ের দোকান।
প্রায় দুই ঘণ্টা ফয়েজকে জেরা করেন আহসানুল। জেরা শেষে এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৯ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
যুক্তি উপস্থাপন চলছে: একই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন অব্যাহত রেখেছে। আসামির কাঠগড়ায় সাঈদীর উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী গতকাল অষ্টম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবারও যুক্তি উপস্থাপন করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন কৌঁসুলি নিয়োগ: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে আরও ১২ জন কৌঁসুলি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নবনিযুক্ত এই কৌঁসুলিরা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে মোট কৌঁসুলির সংখ্যা হলো ২৭ জন।

Monday, November 12, 2012

জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বিষয়ক কিছু বিভ্রান্তি -নুরুল ইসলাম নাহিদ



নভেম্ভর ১১, ২০১২
গত ৪ নভেম্বর সারাদেশে স্কুল ও মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণির পাঠ সমাপ্ত করে জাতীয় ভিত্তিতে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি)/ জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে কতিপয় জাতীয় দৈনিকে এবং কয়েকটি টেলিভিশনে ‘বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত’ এবং ‘এরা অনেকে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে গেছে’ বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। কেউ কেউ এই বিষয়কে প্রতিদিনই বড় করে দেখাচ্ছেন। বিষয়টির সত্যতা যাচাই না করে অনেক সংবাদপত্রে সম্পাদকীয় ও উপ সম্পাদকীয়ও লিখেছেন। টক শোতেও কেউ কেউ বিষয়টি বার বার তুলে ধরছেন।

এই বিষয়টির যে উৎস অর্থাৎ সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন তা যে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি তা কারো যাচাই করার সুযোগ নেই, যাদের আছে তারাও কোনো যাচাই না করে অনেক লেখালেখি বা বক্তব্য দিচ্ছেন। সংবাদপত্রে যারা প্রতিবেদন লিখেছেন (অনেকে নিজের নামে লিখেছেন) তাদের আসল বিষয়টি অজানা নয়। আমরা গত ৩১ অক্টোবর উক্ত পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস কনফারেন্স করে সকল তথ্য লিখিতভাবে সাংবাদিকদের হাতে দিয়েছি। আবার ৪ নভেম্বর পরীক্ষার হল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুদের কাছেও বলেছি। যারা রিপোর্ট তৈরি করে প্রকাশ করেছেন তারা ভালভাবেই সকল তথ্য জানেন এবং তাদের হাতে লিখিত তথ্য রয়েছে। সঠিক তথ্য প্রতিবেদনে না দেয়ার ফলে সকল পাঠক, এমনকি অনেক সম্পাদক ও লেখকও বিভ্রান্ত হয়েছেন।

আমার বিরুদ্ধে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে কেউ কেউ সম্পূর্ণ অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচারণা চালান। আমি তার প্রতিবাদ করি না। বরং সত্যিই এমন দোষত্রুটি আমাদের আছে কিনা তা ভাল করে যাচাই করে দেখি। আমার দায়িত্ব নেয়ার প্রথম থেকেই সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিরাট সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়ে আসছি। সাংবাদিক ভাইবোন, সম্পাদক, কলাম লেখক, টিভি আলোচকরা আমাদের অনেক অনেক প্রশংসা, সমর্থন, উৎসাহ দিয়ে আসছেন। আমি সব সময়ই বলে আসছি এগুলো আমাদের জন্য প্রেরণাদায়ক। তাঁদের পরামর্শ আমাদের কাজে সহায়ক হয়েছে। যাঁরা আমাদের সমালোচনা করেন এবং ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেন, একইভাবে তাও আমাদের জন্য আমাদের কাজে বিরাট অবদান রাখছে। আমরা তাঁদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করব ভবিষ্যতেও তাঁরা আমাদের এভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন এবং ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন, আমরা তা শুধরে নেব।

যে বিষয়টি এখানে বলতে চাচ্ছি তা হলো- জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যাকে ‘ঝরে পড়ে গেছে’ বলে কিছু সংখ্যক সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে সকলের মধ্যে যে ভুল তথ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে এবং এজন্য যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করার চেষ্টা করা। একথাটাও পরিষ্কার করে বলে রাখছি, অধিকাংশ সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সঠিক তথ্য দিয়েছে।

কতিপয় পত্রিকায় শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘প্রথম দিনে অনুপস্থিত ৬৮ হাজার পরীক্ষার্থী’। কেউ কেউ রিপোর্টের ভিতরে ‘এরা ঝরে পড়ে গেলো’ ‘শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেল’ এভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝাতে চেয়েছেন এই শিক্ষার্থীরা আর লেখাপড়া করতে পারবে না। একটি দৈনিকে শিরোনামই করা হয়েছে ‘প্রথম দিনেই ঝরে গেল ৬৮ হাজার শিক্ষার্থী’। এমন কি একটি দৈনিকে প্রথম দিনের অনুপস্থিত সংখ্যা ও দ্বিতীয় দিনের অনুপস্থিত সংখ্যা যোগ করে শিরোনাম দিয়েছেন ‘জেএসসি-জেডিসিতে দুই দিনে অনুপস্থিত এক লাখ ১৪ হাজার শিক্ষার্থী’। সকল জাতীয় পরীক্ষার দিন সন্ধ্যার মধ্যে আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে ঐ দিনের পরীক্ষার তথ্যগুলো সকলের কাছে (মিডিয়া ও সংশ্লি¬ষ্ট যারা) সরবরাহ করে থাকি। এতে উপস্থিতির সংখ্যা, অনুপস্থিত, বহিষ্কার ইত্যাদি সংখ্যা ও তথ্য দেই। এটা গোপন কিছু নয়, বরং দিনের শেষে সব সম্ভাব্য তথ্যই আমরা প্রকাশ করি।

আপাত দৃষ্টিতে অনুপস্থিতির সংখ্যা দেখলে বেশ বড়ই মনে হয়। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে দেড় লক্ষাধিক বিশেষ পরীক্ষার্থীর প্রতিদিন পরীক্ষা নেই। প্রতিটি পরীক্ষায় তারা অংশগ্রহণও করবে না। এক-দুই-তিন বিষয়ের মধ্যে যার যেদিন পরীক্ষা আছে সেদিনই পরীক্ষা দেবে। এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে যদি কেউ ‘এরা ঝরে পড়ে গেল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এবং প্রকৃত তথ্য যাচাই না করে সেই প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে কেউ কেউ যদি সম্পাদকীয় বা উপ সম্পাদকীয় লিখেন তা হলে পাঠকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক।

আমাদের দেশ, সমাজ ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বাস্তবতা বিবেচনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। চারবছর পূর্বে এ সকল তথ্য বা এধরনের উদ্যোগ ও চেষ্টা তো করাই হয়নি। আমাদের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার জন্য আমাকে শাস্তি দিন, কিন্তু আমাদের সন্তানদের (শিক্ষার্থীদের) নিরুৎসাহিত ও হতাশ করবেন না। সকলের কাছে এ আমার বিনীত অনুরোধ।

আসল সত্যটি এখানে সকলের অবগতির জন্য সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। গত ৩১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ ৫ পৃষ্ঠা কাগজপত্র সাংবাদিক ভাই-বোনদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে মুখে বলা হয়েছে। আমি নিশ্চিত সকল তথ্যই স্পষ্টভাবে ঐ কাগজপত্রে উল্লেখ করা আছে।

এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ লাখ ৮ হাজার ৩৬৫ জন। এর মধ্যে জেএসসি ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৫, জেডিসি ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯০ জন। সব মিলে ছাত্র ৪৭% এবং ছাত্রী-৫৩%। অর্থাৎ জেএসসি-জেডিসি মিলে ছাত্র সংখ্যা ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬২ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ১১ হাজার ৫০৩ জন। ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৪১ জন বেশি। এই পরীক্ষা চালুর পর ২০১০ সাল থেকে এবার ২০১২ সালে তিনবছরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৬৩ জন। শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে না, বৃদ্ধি পাচ্ছে তা এই তথ্যই প্রমাণ করে।

জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো ঝরেপড়া কমিয়ে আনা এবং এক সময় বন্ধ করা। ঝরেপড়া এখন প্রতি বছরই কমছে, শিক্ষার্থীও বাড়ছে। তাছাড়া এই পরীক্ষা শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সারাদেশে সমমান অর্জন, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠাসহ নতুন প্রজন্মকে শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করছে।

পরীক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে এবং শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকে সেজন্য আমরা যথাসাধ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। এরমধ্যে অন্যতম হলো যারা পরীক্ষায় ফেল করে বা অন্য কারণে শিক্ষা জীবন অব্যাহত রাখতে পারেনা, তাদেরকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য আমরা আগ্রহী করে তুলি, তাদের সমস্যা যথাসাধ্য দূর করে আবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নিয়ে আসি। এদের বলা হয় ‘অনিয়মিত পরীক্ষার্থী’। এবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হলো- ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৪ জন। এরা আগে ফেল করেছে অথবা ঝরে পড়েছিল তাদের এবারে পরীক্ষায় নিয়ে আসা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিষয় হলো- গতবছর যারা পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকে এক, দুই বা তিন বিষয়ে ফেল করেছেন। ফেল করার কারণে তারা যাতে কোনভাবে ঝরে না পড়ে এবং শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখে- সেজন্য আমরা তাদের নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ দিয়েছি। এবছরের পরীক্ষায় তারা নিজ নিজ ফেল করা (এক, দুই, তিন) বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই চলবে। এরকম পরীক্ষার্থীর নাম দেয়া হয়েছে ‘বিশেষ পরীক্ষার্থী’। এরকম বিশেষ পরীক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন- ১ লাখ ৫৭ হাজার ০১২ জন। সকলেই বুঝতে পারছেন এদের পরীক্ষা প্রতিদিন থাকবেনা। কারো একদিন, কারো দুই, কারো তিন দিন। তাই এই ১ লাখ ৫৭ হাজার ০১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু তাদের ফেল করা স্ব স্ব বিষয়েই শুধু পরীক্ষা দেবে, অন্য দিনগুলোতে পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকবে।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন- প্রথম দিন যে সংখ্যা অনুপস্থিত ছিল অর্থাৎ ৬৮ হাজার ১৫৫ জন, পরের দিন সে সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৩৪০ জনে। অর্থাৎ প্রথম দিনে যারা অনুপস্থিত ছিল, দ্বিতীয় দিন তাদের মধ্য থেকে ২১ হাজার ৮১৫ জন উপস্থিত হয়েছিল। এভাবে তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন প্রথম দিনের চেয়ে ২০ হাজারের বেশি উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং প্রথম দিনের পরীক্ষায় যারা অনুপস্থিত ছিল তারা একেবারেই লেখাপড়া ছেড়ে চলে গেল অথবা ঝরে পড়ে গেল এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যুক্তিযুক্ত নয়।

তাই ‘বিশেষ পরীক্ষার্থীর’ মধ্য থেকে অর্থাৎ ১ লাখ ৫৭ হাজার ০১২ জন পরীক্ষার্থী সর্বোচ্চ তিনদিন ছাড়া অন্যান্য দিন অনুপস্থিত থাকবেই। কেউ একদিনই পরীক্ষা দেবে বাকি সকল পরীক্ষার দিন তারা অনুপস্থিত থাকবে। তাই অনুপস্থিতির সংখ্যা দেখে ঢালাও অনুপস্থিত বলা যুক্তিযুক্ত হবে না। এমন কি যারা ‘ঝরে পড়ে গেছে’ বলে চিত্র তুলে ধরেছেন তারাও সুবিচার করবেন না।

তাছাড়া যারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৪ জন, তারাও বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে আবার পরীক্ষা দিতে এসেছেন তাদেরও কারো কারো বাস্তব কারণে অনুপস্থিত থাকার আশংকা থাকতে পারে। এমনকি নিয়মিত ছাত্রদের মধ্যেও অনুপস্থিত থাকতে পারে। যে কোনো পরীক্ষায়ই কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় আমরা সকল শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসছি, ধরে রাখা বা ঝরেপড়া ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনবছর পূর্বে যেখানে ৫ম শ্রেণির আগেই ৪৮%, মাধ্যমিকে ৪২% ঝরে পড়তো (ভর্তিও হতো অনেক কম) আজ সেখানে তা অর্ধেকের বেশি কমে এসেছে। ঝরেপড়া নতুন বিষয় নয় বা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়। অতীতে ভর্তি, ঝরেপড়া, পরীক্ষা, ফলাফল এসবের কোনো খবরই রাখা হতো না। এখন এসকল ক্ষেত্রে আমরা বিরাট পরিবর্তন এনেছি। তার পরেও অনেক বড় বড় কাজ বাকি আছে। আপনারা আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন। সঠিক তথ্য দিয়ে সমালোচনা করে গঠনমূলক প্রস্তাব দেবেন আমরা সব সময়ই তা সাদরে গ্রহণ করছি এবং করব। আমরা সকলের সাহায্য প্রার্থী। বিডি নিউজ