Saturday, March 8, 2014

নারীমুক্তি ও আমাদের বাস্তবতা - নূরজাহান খান


রবিবার, ৯ মার্চ ২০১৪, ২৫ ফাল্গুন ১৪২০
নারীমুক্তি ও আমাদের বাস্তবতা
নূরজাহান খান
‘নারী ছাড়া কোন গণআন্দোলন হতে পারে না।’ মহান বিপ্লবী ক্লারা জেৎকিনের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেছিলেন মহামতি লেনিন। পিছিয়ে থাকা নারীদের এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি বলেছিলেন, নারীদের বোঝাতে হবে সন্তানধারণ ও সন্তানকে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা এবং জীবনচর্চায় তাদের পুরুষের সমকক্ষ হতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪-এর থিম করা হয়েছে পরিবর্তনের অনুপ্রেরণাকে। আমরা নারীর প্রতি দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে আসছি ১৯৭০ সাল থেকে। গত চার দশকে এর সফলতা অনেক। তবে ব্যর্থতাও কম নয়। সেই ব্যর্থতা কাটাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরী। আমার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় বর্তমান সমাজবাস্তবতার কিছু সফলতা-ব্যর্থতার চিত্র এ লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
রাজপথ থেকে প্রশাসন সর্বত্র নারীর দৃপ্ত পদচারণা। নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই এদেশে প্রকৃত মানবমুক্তি আসবে। আমরা বলি, পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হতে হবে। নারীর শিক্ষার মান বেড়েছে। নারীর সমতা বিধান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার নারীবান্ধব
পরিবেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। নারীর নৈতিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা নারীমুক্তির অগ্রযাত্রার সহায়ক বলে মনে করছে বর্তমান সরকার। এ কাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। ১৯৭৬-৮৫ সালে জাতিসংঘের ঘোষণা ছিল নারীর সমতা, উন্নয়ন ও শান্তি। জাতিসংঘ নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য ঘোষণা দেয় কাজ, শিক্ষা, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে। কোন কোন দেশের সংবিধানে আছে নারীরা গৃহকাজের বাইরে অন্য কাজে যেতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যে এখনও ভোটাধিকারের দাবিতে লড়াই করতে হচ্ছে নারীকে। আমাদের খালাম্মা বেগম সুফিয়া কামাল বলতেন, মঞ্চে কিছু মানুষ নির্ধারিত বক্তব্য বলে যায়, ‘দর্শকরা শুনে যান। এর খুব একটা প্রভাব সমাজে পড়ে না। নারীর প্রতি আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দায়িত্বশীলতার কথা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বলতে হবে। সমাজ পরিবর্তনের মাঠে নামতে হবে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষকে। এর কোন বিকল্প নেই। এ আমাদের নিজেদেরই কাজ।’
সচেতনতার অভাবে ফতোয়া, পর্দা, হিজাব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সমাজ গবেষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্বাভাবিকভাবেই এর বিরুদ্ধে তার হতাশা এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যে কোন সচেতন ব্যক্তিমাত্রই এতে শঙ্কিত হবেন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীকে আবার পর্দার ভেতরে বন্দী করার সংঘবদ্ধ যে অপচেষ্টা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান আমাদের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের।
মুক্ত হাওয়ায় নারীর নিঃশ্বাস নিতেও বাধা? হিজাব তারই প্রকাশ। তবে সমাজের উচ্চশ্রেণীর কিছু নারী স্বেচ্ছায় এ শৃঙ্খলে বন্দী হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার হিজাবে ফ্যাশনের বেশ বাহার দেখান।
তাদের প্রতি আমার আবেদন, নজরুলের সেই জনপ্রিয় আহ্বান ভুলে যাবেন না, ‘মাথার ঘোমটা খুলে ফেলো নারী, ছিঁড়ে ফেলো ও শিকল- যে ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ।’ সৃষ্টিশীল মনকে শৃঙ্খলিত করার মতো স্বেচ্ছাচারিতার কোন অধিকার নিজেরও নেই। এ সমাজে জন্ম, শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রতিটি মানুষের অবদান আছে। সেই মানুষগুলোর প্রতি, এ সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
পর্দাপ্রথা প্রত্যাখ্যান সমাজ সচেতনতার প্রকাশ। এর সঙ্গে ধর্মের কোন দ্বন্দ্ব নেই। আধুনিককালে ধর্মের এমন অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে আবার অবরোধবাসিনী করার হীন প্রচেষ্টা করা হচ্ছে; যা ঠেকানো জরুরী বলে আমার মনে হয়। নারীকে কূপম-ূকতার দিকে ঠেলে দেয়ার এ হীন প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করে এগিয়ে নিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। সব সঙ্কীর্ণতার উর্ধে উঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, মানবিক মন নিয়ে গড়ে তুলতে হবে এ সমাজ।
স্বাবলম্বী হবার প্রয়াসে অথবা সংসারে সচ্ছলতা আনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে যে নারীরা তাদের কথা এবার বলতে হয়। ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে পা দিয়েছে গ্রামাঞ্চলের নারীরা। ঋণের ভার বইতে না পেরে আত্মহত্যা করার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। তবু প্রত্যন্ত জনপদে ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের হার কম নয়। পোশাক কারখানায় কর্মজীবী মেয়েরা শহরে ছোট রুম ভাড়া করে কষ্ট করে থাকে। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোম্পানি নিজেদের পরিবহন ব্যবস্থায় গ্রাম থেকেও কর্মীদের নিয়ে আসছে। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ব্যস্ততা। স্বামী সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা করে নিজের খাবার সঙ্গে নিয়ে কর্মক্ষেত্রে রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে উদ্যমী নারী। এমনও দেখা যায়, বিয়ের ১৮-১৯ বছর পরও স্বামীর একার রোজগারে সংসার চলে না। ৩৭-৩৮ বছরের নারীও গার্মেন্টসে চাকরি নিচ্ছে। তবে ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়, যখন দেখতে পাই দুর্জনেরা কিছু গার্মেন্টস কর্মীর ফাঁদে ফেলে পঙ্কিলতার অন্ধকাওে ডুবিয়ে দিচ্ছে তাদের জীবন। গ্রামের কর্মজীবী নারীর পরিবার এবং সন্তানের নিরাপত্তায় মায়ের অবর্তমানে প্রতিবেশীরা যেন সহনশীলতার সঙ্গে সহযোগিতা করে।
সুখের ব্যাপার, কোন কোন গার্মেন্টসে ডে-কেয়ার সেন্টার আছে, যেখানে গার্মেন্টসকর্মীরা তাদের শিশু-সন্তানকে রেখে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারে। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন আজ সত্য। লেডি কেরানি থেকে বিচারপতি সব পদে নারী দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে। বিচারিক কাজে নারীর সিদ্ধান্ত খুব কমই ভুল হয়। ব্যতিক্রম থাকতে পারে, তবে তা খুবই নগণ্য। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বার বার উঠে এসেছে বাস্তবে নারী তার কর্মক্ষেত্রে তুলনামূলক বিচারে পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি সৎ এবং পরিশ্রমী।
কন্যা শিশুর বিপন্নতা সমাজের আরেক ভয়াবহ বাস্তবতা। পরিণত বয়স্ক পুরুষ দ্বারাও অনেক সময়ে নির্যাতিত হয়ে তার জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়। বিকৃত রুচির মানুষগুলো আইনের কঠোর সাজার তোয়াক্কা কেন করেন না- সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারেন অপরাধবিশেষজ্ঞ বা সমাজ গবেষকরা। তবে নিরীহ শিশু বা তরুণীদের জিম্মি করে পর্ণোগ্রাফি তৈরি এবং প্রচারের মতো জঘন্য অপরাধ কন্যা শিশুদের নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। এ এক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছি আমরা।
আশার কথা, তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধীদের শাস্তির বিধান জারি করে আইন পাস হয়েছে সংসদে। অপরাধীদের অন্তত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া জরুরী, যার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে একটি কিশোরী বা তরুণীর ছবির সঙ্গে অন্য কোন ছবি জুড়ে অশ্লীল, অশালীন বক্তব্যদানকারী ধরা পড়ার পর তাদের বাঁচানোর জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমাজের প্রভাবশালীরা তৎপর হন।
রেলস্টেশন বা বাজারে পথশিশুরা পলিথিন মুখে দিয়ে মাদকে বুঁদ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে- তাদের বাঁচানোর উদ্যোগ না নিলে অন্ধকারের গহ্বরে তারা তলিয়ে যাবে।
যারা সমাজকে মাদকের অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে দিতে চায়, সেসব গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। একই ভাবে বলতে হয়, মানবপাচার এখন সারা বিশ্বের বড় সমস্যা। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অনেক সংগঠন এ নিয়ে কাজ করছে। অথচ মূল পাচারকারী শাস্তির বাইরেই থেকে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে কারো সদিচ্ছা আছে বলে মনে হয় না।
দু’বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে এ্যাসিড পান করে। এক বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুর কাছে হার মানে সেই তরুণী। মামলার আসামি ইভ টিজার তরুণের আইনজীবীর আর্জি মতো ছাত্রটির শিক্ষাজীবন বাঁচাতে মহামান্য আদালত তার জামিন দেয়।
এখানে পেশাগত দায়িত্ব প্রধান, মানবতাবোধ বিন্দুমাত্রও তাড়িত করেনি আসামিপক্ষের আইনজীবীকে। পরিতাপের বিষয়, এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, সারাদেশে মানববন্ধন, আন্দোলন, সভা সমিতি হয়। তাও একসময়ে গতানুগতিক নিয়মে ভাটা পড়ে।
সেই নিরীহ শিশু, কিশোরী-তরুণীর পাশে কেউ থাকে না। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুস সাত্তার ২০০৪ সালে চার বছরের একটি কন্যা শিশুকে (বালকরাও মাদ্রাসা শিক্ষকদের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়) নির্যাতন করার পর তার পক্ষে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। আদালতে বললেন, মামলার অভিযোগে উল্লেখিত ঘটনার সময়ে সাত্তার (ধর্ষক) নাকি সাতকানিয়া সমাজসেবা অফিসে ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তৎকালীন মন্ত্রী, এমপিও এ ধর্ষকের চরিত্র ‘ফুলের মতো পবিত্র’ এমন সনদপত্র দেন। অনেক আইনজীবী আদালতে দাঁড়ান ধর্ষণকারী সাত্তারের পক্ষে, আর নির্যাতিত শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে আমি দেখলাম কেউ নেই। আরও অনেক মামলার মতো এ মামলাটি নিয়েও ৪টি বছর লড়াই করলাম। পাশে পেয়েছিলাম প্রথিতযশা আইনজীবী এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তকে (বর্তমানে
মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর)।
২০১০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের তৎকালীন পিপি আখতার হোসেনের নেতৃত্বে মামলা পরিচালনাকালে আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলো। ৭ বছরের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হলো ধর্ষক আবদুস সাত্তার।
তবে খ্যাতনামা এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিজের ব্যবসা, চাকরির সফলতার জন্য নিজের স্ত্রী বা কন্যাকে ক্ষমতাবান কোন পুরুষের হাতে সমর্পণ করেন এমন অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগের বিপরীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোন বক্তব্য থাকে না। তাদের কোন অপরাধবোধও থাকে না। যা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর!
সমাজপতিদের কাছে নারী-পুরুষের শারীরিক কাঠামোগত বৈষম্যই গুরুত্বপূর্ণ। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজপতিদের চরম অনিচ্ছা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। নারী-পুরুষের সমানাধিকার, নারীর স্বনির্ভরতা, শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। জাতিসংঘ নারীর বৈষম্য দূর করার যে প্রস্তাব রেখেছে, নিজেদেও স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে। এতে পরিবার এবং সমাজ লাভবান হবে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার দূরদৃষ্টি নিয়ে বেগম রোকেয়া ‘সুলতানার স্বপ্ন’ দেখিয়েছেন। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার উত্তরসূরি বেগম সুফিয়া কামাল আমাদের হাত ধরে রাজপথে নামিয়েছেন। আজ সর্বক্ষেত্রে নারীর সদর্প পদচারণা, সমাজে নারীর যে অগ্রগতি তা তারই সুফল। আর বিভেদ নয়, অসাম্য নয়। নারী-পুরুষ পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। একসঙ্গে এগিয়ে যাব আমরা। বর্তমানে সরকার নারীমুক্তির যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসতে হবে সমাজকেই।
সমাজের সকল অন্ধকার দূর করে একদিন আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে নারী। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নারীকে কূপম-ূকতার দিকে ঠেলে দেয়ার সব রকমের হীন প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করতে হবে। এগিয়ে নিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। সব সঙ্কীর্ণতার উর্ধে উঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, মানবিক মন নিয়ে গড়ে তুলতে হবে এ সমাজ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪ সফল হোক।

লেখক : মানবাধিকার সংগঠক ও
প্রধান নির্বাহী, লিরো

কারা হোতা?

কারা হোতা?
গলদ কোথা?
হতভাগা!
ছিলি কোথা?
সাথে কারা ?
হতচ্ছারা!

৩০০ কোটি টাকার কর ফাঁকিঃ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনের ঊর্ধ্বে?

ড. ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে ?

Fri, March 7, 2014, 9:04 pm BDT
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের প্রথম নোবেলজয়ী ব্যক্তির নাম। নোবেলের পাশাপাশি পেয়েছেন দেশি বিদেশি হাজারো পুরস্কার ও সম্মাননা। বিশ্বের নামি দামি অনেক লোকের সাথে তার উঠাবসা। দেশ-বিদেশ ঘুরে ঘুরে তিনি নানা সভা সেমিনারে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দেন। তার নোবেল পদক বা অন্যান্য কর্মকাণ্ড দেশের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনছে?

যে ইউনূস সাহেব প্রায়ই দেশের বিভিন্ন ব্যাপারে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেন সেই ইউনূস সাহেব নিজে দেশের আইনের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল সেই ব্যাপারেই আজ একটু আলোকপাত করতে চাই।

একজন ব্যক্তি যত বিখ্যাতই হন না কেন, তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একটি দেশের নাগরিক। সেই দেশের আইন কানুন আর দশজন সাধারণ নাগরিকের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তার বেলাতেও ঠিক একই রকমভাবেই প্রযোজ্য। রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তাদের বরং আরও বেশি সজাগ হওয়া উচিৎ। কেননা তাদের দেখেই অন্যরা উৎসাহিত হবে। কিন্তু বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালনে গাফিলতি করে বা এড়িয়ে যায় তারচেয়ে লজ্জাজনক আর কিছুই হতে পারে না। আমাদের ইউনূস সাহেব ঠিক এই কাজটিই করেছেন।

একটু পেছনে ফিরে যাই। সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৭৬ সালে ড. ইউনূস চট্টগ্রামের জোবেরা গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই তখন এই কাজের মূল পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণই ছিল এই প্রকল্পের দৃশ্যমান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য কতটা পূরণ হয়েছে বা দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প কতটা ভূমিকা পালন করতে পেরেছে তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু এই প্রকল্প ইউনূস সাহেবকে ঠিকই লাভবান করতে পেরেছে। তাকে বিশ্ববিখ্যাত করেছে, এমনকি নোবেল পদক পর্যন্ত এনে দিয়েছে।

১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পই ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক এ রুপান্তরিত হয়। মানুষের কল্যাণই যদি মূল উদ্দেশ্য হত তাহলে এই ব্যাংকের মাধ্যমেই তা করা যেত। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হত না।  ইউনূস সাহেব কিন্তু এই পথে হাটেননি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গড়ে তুলেছেন আরও প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রতিষ্ঠান যার প্রতিটিই লাভজনক। তারমানে যে সামাজিক আন্দোলন বা মানুষের কল্যাণের বাতাবরণে উনি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প শুরু করেছিলেন তা হয়ে উঠল একটি বেনিয়া ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। ব্যাপারটা অনৈতিক হলেও আইনসিদ্ধ।

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের অধিকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ড. ইউনূস সাহেব কিন্তু এসব কিছুর ধার ধারেন নি। তা তিনি করবেনই বা কেন? তিনি বিখ্যাত মানুষ। তাই তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়কর দেয়ার ব্যাপারে সব সময়ই উদাসীন। কিভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়া যায় বা এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘসূত্রিতার জালে জড়ানো যায় তার সবকিছুই করেছেন উনি। এই ব্যাপারে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া যেতে পারে।

ড. ইউনূসের মালিকানাধীন বেশ কিছু লাভজনক প্রতিষ্ঠানের নাম নিচে দেয়া হল-
১) গ্রামীণ ট্রাস্ট
২) গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট
৩) গ্রামীণ ব্যাংক বারোয়ার্স ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট লিমিটেড
৪) গ্রামীণ ব্যাংক
৫) গ্রামীণ কল্যাণ
৬) গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশ
৭) গ্রামীণ মৎস্য ও পশু সম্পদ ফাউন্ডেশন
৮) গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
৯) গ্রামীণ কম্যুনিকেশন্স
১০) গ্রামীণ শক্তি
১১) গ্রামীণ সামগ্রী
১২) গ্রামীণ হেলথ কেয়ার 
১৩) প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট 
১৪) ইউনূস সেন্টার 
১৫) ইউনূস ক্যালোডোনিয়া কলেজ অব নার্সিং


ইউনূসের মালিকানাধীন উপরোক্ত প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতেই কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মোট হিসেবে যা প্রায় সোয়া তিনশ কোটি টাকারও উপরে। এর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের (টিআইএন নম্বরঃ ০৮৭-৩০০-২৮১৪) কাছেই আয়কর বিভাগের পাওনা রয়েছে প্রায় দুইশ কোটি টাকা। এই অর্থ আদায়ের জন্য আয়কর বিভাগের দায়েরকৃত মামলাটিও বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে ছয়মাসের স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত আছে। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের (টিআইএন নম্বরঃ ০৭০-২০০-১৮৮৪) কাছে আয়কর বিভাগের পাওনা আছে প্রায় সত্তর কোটি টাকা, গ্রামীণ ব্যাংক বারোয়ার্স ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট লিমিটেডের (টিআইএন নম্বরঃ ০৮১-৩০০-২১৮৫) কাছে প্রায় বিশ কোটি টাকা গ্রামীণ ট্রাস্ট (টিআইএন নম্বরঃ ১৪২-২০০-৪৯০৩) ও গ্রামীণ কল্যাণ (টিআইএন নম্বরঃ ০৭০-২০০-৯৬৫০) প্রতিটির কাছে আয়কর বিভাগের পাওয়া আছে প্রায় দশ কোটি টাকা।


অত্যন্ত ধূর্ত ইউনূস সাহেব আয়কর বিভাগের প্রতিটি দাবির বিপরীতেই মামলা করে রেখেছেন এবং মামলাগুলোকে দীর্ঘসূত্রিতার জালে জড়ানোর সম্ভাব্য সব ব্যবস্থাই করেছেন। বেশিরভাগ মামলাই এখন আপিলাধীন বা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত অবস্থায় আছে।

আয়কর বিভাগের প্রতিটি দাবিই যে যৌক্তিক তার বড় প্রমাণ হচ্ছে আইনী লড়াই শেষে ইউনূস সাহেবের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার মত আদায়ও করা হয়েছে। এখানে একটি মজার ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। শুধুমাত্র যেসব প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে ‘ইউনূস’ যুক্ত আছে শুধুমাত্র সেইসব প্রতিষ্ঠানের আয়করই আদায় করা গিয়েছে। ‘গ্রামীণ’ যুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত দাবিকৃত কোনো আয়কর আদায় হয়নি। অতএব এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ নিয়ে নানা ছলাকলা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের প্রতি তার কর্তব্য পালন থেকে বিরত থাকছেন এবং দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে আয়কর এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।মূলত রাষ্ট্রের অর্থায়নের অন্যতম মূল ভিত্তিই হল এই আয়কর। এ কারণে নিয়মিত আয়কর দাতাদের যেমন পুরস্কৃত করা হয় ঠিক তেমনি কর খেলাপির জন্য প্রতিটি দেশেই রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। শুধু আইনী শাস্তিই নয়,করখেলাপীদের সব দেশের মানুষই ঘৃণার চোখে দেখে। কারণ করখেলাপিরা কর না দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্বের বরখেলাপ করেন।

বাংলাদেশেও করখেলাপীদের জন্য রয়েছে যথাযথ শাস্তির বিধান।করখেলাপী ব্যক্তিরা এদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষিত হন।করখেলাপি হওয়ার কারণে আমরা অনেক রাজনীতিবিদকে দুদকে তলব করতে শুনি, অনেক সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে দেখি। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ আমরা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সরকার কেন এই ব্যাপারে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না?   ইউনুস স্যার কে গাটাতে গেলেই বুঝি অনেক জটিলতা!

তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার। মুখে দারিদ্র দূরীকরণ বা মানুষের কল্যাণের কথা বললেও গ্রামীণ ব্যাংক প্রজেক্ট ছিল ড. ইউনূসের জন্য একটা লাভজনক ব্যবসার সূচনা। এর থেকেই তিনি আরও অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। মানুষের উপকার করতে  চাইলে এতো প্রতিষ্ঠানের দরকার হয় না। 


বিল গেটস তার একমাত্র ‘মেলিন্ডা ও গেটস ফাউন্ডেশন’ এর মাধ্যমেই পৃথিবীর নানা দেশে দারিদ্রতা দূরীকরণে কাজ করছেন। সেখানে ইউনূস সাহেব পঞ্চাশের বেশি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন শুধুমাত্র নিজের ব্যবসায়িক সুবিধা লাভের হীন উদ্দেশ্য নিয়ে।

অনেকে বলেন ইউনূস সাহেব বিখ্যাত মানুষ, নোবেলজয়ী। তার ব্যাপারে এসব অভিযোগ আনা ঠিক না। আরে ভাই, নোবেল প্রাইজ দিয়ে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের পেটে ভাত যাবে না। কিন্তু ড. ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি দেয়া প্রায় তিনশ কোটি টাকা আদায় করা যাবে কি কখনো? এই কর পরিশোধ তার নৈতিক দায়িত্ব।  তা দিয়ে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো।

আমরা হলমার্ক, ডেসটিনিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপ লক্ষ্য করেছি। আশা করব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ব্যাপারেও সরকার সমান তৎপরতায় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যদি তা না করে তাহলে বুঝব ড. মুহাম্মদ ইউনূস হয়তো আসলেই আইনের ঊর্ধ্বে। এদেশের সাধারণ নাগরিকদের কাছে  ব্যাপারটি লজ্জার নয় কি? 

সূত্র:বিবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম             

নারী দিবসে দিই নারী-পুরুষের সমতার ডাক- সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর

Robi

8 March 2014 18:30:00 PM Saturday BdST
0
 

নারী দিবসে দিই নারী-পুরুষের সমতার ডাক

সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ফন্টের আকারDecrease fontEnlarge font
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। 'ইনস্পায়ারিং চেঞ্জ' বা 'পরিবর্তনকে উত্সাহিত করো’ -এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হবে দিবসটি। বাংলাদেশ সরকার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে 'অগ্রযাত্রার মূল কথা নারী-পুরুষের সমতা'। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে 'রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, নারীর সমতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করি' প্রতিপাদ্য করে দিবসটি পালন করছে। সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতি এবং ধর্মকে আলাদা করতেই হবে।সমাজপ্রগতির সংগ্রামে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এর সফলতা সম্ভব নয়। 
আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চের ৮ তারিখে পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী নারীরা সমাজ প্রগতির ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল এবং  প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন।এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াকু এবং রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস। সমাজপ্রগতির এই ইতিহাস অনেকের জানা। তবু এ সমাজের নীতিনির্ধারক এবং মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বশীলেরা অনেকে এ বিষয়গুলো ইচ্ছে করেই যেন ভুলে থাকেন। তাই মগজে শান দিয়ে  মরচে সরানো এবং চিরপ্রণম্য ক্লারা জেটকিন ও তার সতীর্থ সহযোদ্ধাদের প্রতি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর  মানসে ইতিহাসের দ্বারস্থ হলাম।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের নারী সংগঠন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের  পক্ষে আয়োজিত নারী সমাবেশে  জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির  অন্যতম স্থপতি সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে ক্লারা  জেটকিন নারীর শ্রমঅধিকারের আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চকে মানবসমাজের বিজয়ের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্যে প্রতি বছর ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।  সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সমানাধিকার দিবস হিসেবে ৮ মার্চ দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগলো। বাংলাদেশেও  স্বাধীনতার লাভের আগেই  ১৯৭১  সাল থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। 
আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান,বেলারুশ,বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ,  ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান,  লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া,মন্টিনেগ্রো, রাশিয়া,তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,  উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান,  ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়াতে। এছাড়া, চীন,মেসিদোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরা সরকারী ছুটির দিন ভোগ করেন। 

দৈনিক শ্রমঘণ্টা ১২ থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করার অপরাধে  ১৮৫৭ সালে  নিউইয়র্কে কতো নারী আটক হন, তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে কারাগারে ও নির্যাতিত হন অনেক নারী শ্রমিক। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় 'নারী শ্রমিক ইউনিয়ন'। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় হলো দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। 

এরও বহু আগে ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে ৬০ বছর আগের পটভূমির বিজয় অর্জিত হয়। তবে যে দাবিতে এই আন্দোলন সমতাভিত্তিক  এবং বৈষম্যহীন কাজের পরিবেশ এখনো আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। তাই সেই আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে এখনো।

 সমাজ প্রগতির সংগ্রামে  ৮ মার্চ রক্তাক্ত ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল দিন। এমন দিনে মুক্তির মন্দির সোপানতলে যারা প্রাণ দিয়েছে, তাদের স্মরণ করা আমাদের প্রতিটি নারী-পুরুষের ই দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। 

যারা ৮ মার্চ কে  নারীকে ‘সুবিধা দেয়ার জন্যে’  বা ‘নারীকে করুণা’ করে ‘বিশেষ কোন দিবস'’ পালন করা হচ্ছে মনে করেন- এখনই তাদের ভুল ভাঙ্গা প্রয়োজন। সে নারী বা পুরুষ যেই হোন-তাদের বিনীত অনুরোধ করি, নারীদিবসের ইতিহাস পড়ুন। অনুধাবন করুন বাস্তব ইতিহাস। যে রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারী দিবস প্রবর্তন, তার প্রতি  অশ্রদ্ধা পুষে রেখে নারীর প্রতি কোনো বিরূপ চিন্তা সমাজের জন্যে ক্ষতিকর। 

এ কথা গুলোর অবতারণা করছি যৌক্তিক কারণে। নারী  দিবস নিয়ে  সাক্ষাৎকার এবং আলোচনায়  অনেকেই এই দিবস পালনের চরম বিরোধিতা করেন বিভিন্ন সময়ে। এমন কি দেশের সাংবাদিকতায় সুপ্রতিষ্ঠিত অনেক নারীও বলেন, নারীদের জন্যে তারা আলাদা কোন দিবস চান না। এই নারীদের প্রতি বলতে হয় প্রথমতঃ অনেক নারীর  প্রতি নিপীড়ন , রক্তপাত,  তাদের ক্লান্তিহীন  শ্রম,মেধা আর রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনের ফসল  সফল নারীদের আজকের এই রমরমা অবস্থা!

‘শুধু নারীর জন্য কোনো একটি দিন’ (?) পালন করে পুরুষের অধিকার খর্ব  (?) করা হচ্ছে মনে করলে ইতিহাস বিকৃতি হবে। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের জাতিসংঘের স্বীকৃতি পর্যন্ত যাদের আত্মদানের ফসল এই মহান নারী দিবস- এই রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের প্রতি বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা বা অজ্ঞতা প্রায় দু’শো বছর আগের এই দিনে  অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে প্রাণ দিতে প্রস্তুত  অকুতোভয় বীর নারী এবং যোদ্ধাদের মহান আত্মদানের প্রতি চরম অবমাননা করা হবে !! 

সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে এই দিনে  চেনা অচেনা প্রতিটি নারীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পুরুষেরা।  নারীরা সরকারী ছুটি উপভোগ করে প্রিয়জন এবং সন্তানদের সময় দেন। বিজয়ের আনন্দে নারী –পুরুষ একসাথে উদ্ভাসিত হন। আমাদের সমাজে তার কোনো ছায়া নেই। বর্তমান বাম নেতা-কর্মীদেরও সেই চিন্তা চেতনায় উদ্ভাসিত হতে দেখি না। এ-এক ক্রান্তিকাল যাচ্ছে আমাদের। ইতিহাসের দিকে পিঠ ফিরে থাকা প্রজন্ম যেন কোনো এক কালো দিনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে; দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আলোর নিশানা।

সবচেয়ে কষ্ট হয় যখন দেখি  কোনো দল বা মতের বিরোধিতা করতে গিয়ে ফেসবুকে চরম অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা হয় নারীদের। মতের বিরোধিতা থাকতে পারে, পথ ভিন্ন হতে পারে , তাই বলে কোনো নারীর প্রতি অশালীন বা বিরূপ মন্তব্য করা যে কারোর চরম মানসিক বিকারের পরিচয়-- এই সাধারণ সত্যটা এ সমাজে প্রতিষ্ঠা হতে আর কতো সময় লাগবে?

বর্তমান সরকার নারীর জাগরণে এবং উন্নয়নে অনেক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।  তবে অনেক পিছিয়ে থাকা মানসিকতা থেকে নিজেদের বের করে আনতে গোড়া থেকে  কাজ করতে হবে। 

 নারীর বিজয় মানবতার বিজয়। এই ইতিহাসের সঠিক প্রচার এবং প্রকাশ  নারীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রতিষ্ঠায় জরুরি। রাজধানী  থেকে প্রত্যন্ত জনপদ পর্যন্ত  পথে প্রান্তরে   নারী জাগরণের এবং সমাজ প্রগতির প্রতিটি ইতিহাস পর্যালোচনা এবং প্রচার একটু একটু করে বদলে দেবে নারীর প্রতি সমাজের রক্ষণশীলতাকে।

 পরিশেষে উদাত্ত আহ্বান জানাই , নারী দিবস নিয়ে যারা এখনো ভুল ধারণা পোষণ করে আছেন –তারা অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করুন শ্রমজীবী নারীদের আত্মদানের এই দিনটিকে। আপনার পাশের নারীটি আপনার বন্ধু , সহযোদ্ধা । আপনার সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং সম্মান  তার প্রাপ্য; করুণা বা অশ্রদ্ধা নয়।  তবেই নারী তার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং অনুপ্রেরণা নিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেবে।তেমনি নারীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রেরণা আর শক্তিতে পুরুষ এগিয়ে নেবে সমাজকে। আলোকের ঝর্নাধারায় ধুয়ে যাক্ যতো কলুষ, যতো ফাঁকি, যতো  গ্লানি !

 নারী-পুরুষ একসাথে  অনন্ত গৌরবে এগিয়ে যাক্ সমাজপ্রগতির পথে!  নারী দিবস ২০১৪ সফল হোক্!!  Sumikhan29bdj@gmail.com
৮ মার্চ ২০১৪

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F/273184-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95.html#sthash.uHN8XJGd.dpuf

Friday, March 7, 2014

মোস্টওয়ান্টেড টপটেরর জাওয়াহিরির হুমকি এবং এদেশের গণমাধ্যম

20 February 2014 20:50:00 PM Thursday BdST

সম্প্রতি আফগানিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আলকায়েদা প্রধান বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড টপটেরর জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ এক অডিও বার্তায় বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানো হয়। 

২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের নামে তাণ্ডবের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির পতনের স্বপ্ন দেখেছিলো যুদ্ধাপরাধী শক্তি। তাতে ব্যর্থ হয়ে ‘হাজার হাজার মানুষ’ হত্যার গল্পকথা ফেঁদে বিশ্বজুড়ে জঙ্গি জনগোষ্ঠীকে একাট্টা করতে মাঠে সোচ্চার অন্ধকারের শক্তি আলকায়েদা-জামায়াত। 

জাওয়াহিরির এই বার্তায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশ সরকারকে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার হিসাবে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়েছেন জাওয়াহিরি। মিশরীয় এই জঙ্গি সংগঠক তার অনুসারী জামায়াত-হেফাজতিদের বিপন্নতা সইবে কী করে! যারা গত কয়েক দশক থেকে তাদের অর্থ এবং মানুষ যোগান দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক লবিস্ট টোবি ক্যাডম্যান ও আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি জামায়াতে ইসলামীর হয়ে বর্তমান সরকারকে হুমকি দেবার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, সন্ত্রাসীদের আওয়ামী লীগকে ভয় করা উচিত। 

গত রোববার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জয় লিখেছেন, বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী আয়মান আল-জাওয়াহিরি আমাদের সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন তার সন্ত্রাসী ভাইদের দমন করায়, যাদের ক্যাডম্যান রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। 
গত রোববার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জয় লিখেছেন, বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী আয়মান আল-জাওয়াহিরি আমাদের সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন তার সন্ত্রাসী ভাইদের দমন করায়, যাদের ক্যাডম্যান রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। 

আমার কাছে বিষয়টা খুব মজার মনে হয়েছে, টোবি ক্যাডম্যান এবং আল-কায়েদা উভয়ই জামায়াতের পক্ষ থেকে আমাদের সরকারকে হুমকি দিচ্ছে।

আমরা একজন ভাড়াটে আইনজীবী ও দালাল পেয়েছি, যিনি  তাদের পক্ষে, যারা পথচারীদের ওপর নির্বিচারে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। সেই বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। 

নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে ক্যাডম্যানের অভিযোগ এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদা প্রধানের জিহাদের ডাক বাংলাদেশ সরকারের জন্য ভালো হয়েছে মনে করেন জয়। জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও তাদের আইনি প্রতিনিধিদের সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছে, এটা তাই প্রমাণ করে যে, আমরা ভালো লোক। 

আমি অতিশয় আনন্দিত যে, সন্ত্রাসীরা আমাদের একই সঙ্গে ঘৃণা এবং ভয় করে! তাদের উচিৎ আওয়ামী লীগকে ভয় করা, অনেক ভয়।  

জয় বলেন, সরকার ও তার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শুধু অধিকার নয়, তাদের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন রক্ষা করা। যদি কোনো সন্ত্রাসী মানুষের গায়ে আগুন দিতে চায় বা বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে চায়, পুলিশের দায়িত্ব তাদের থামাতে যে কোনো এবং সব ধরনের প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করা। 
যখন একজন নিরীহ নাগরিক এবং একটা সন্ত্রাসীর মাঝ থেকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে তখন আমরা অবশ্যই বেছে নেব কীভাবে নাগরিকদের রক্ষা করা যায়। 

কথাটি এক অর্থে ঠিক বলেছেন তিনি, রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যদি কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গি সংগঠন এদেশের মাটিকে ব্যবহার করে প্রশ্রয় না পান, তবে আওয়ামী লীগ তাদের ত্রাস বটে, তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সব ধরনের ষড়যন্ত্র করবে এটাই স্বাভাবিক। 

তবে জেনে বা না জেনে যখন সেই ষড়যন্ত্রের সহায়ক শক্তি  হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীর সংশ্লিষ্টতা থাকে – তা ভয়ংকর বিপজ্জনক!  এ কারণে সরকার এবং দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সতর্ক ভূমিকা জনগণ প্রত্যাশা করে।

গত বছরের হেফাজতের সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের পতনে ব্যর্থ হয় জামায়াত-বিএনপি। তার ঝাল মেটাতে হাজার হাজার 'তৌহিদী' জনতা হত্যা'র গুজব ছড়ানো পুরনো প্যাচাল নতুন করে আল-কায়েদার বার্তায় প্রচার করে যুদ্ধাপরাধীদের নির্লজ্জ সমর্থন করা হলো। 

একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে  আল কায়েদা প্রধান জাওয়াহিরির ক্ষোভ স্পষ্ট হয়েছে এ বার্তায়। ঘাতকের প্রতি ঘাতকের, ধর্মব্যবসায়ীর প্রতি ধর্মব্যবসায়ীর টান থাকবেই। তবে এক গোয়ালের গরুর লক্ষ্য এক। সেটা আদায়ে ষড়যন্ত্র, দায়িত্ব আর যন্ত্রণা যে একই, এই সহজ কিন্তু ভয়ংকর বাস্তবতা বুঝতে বা মেনে নিতে আমাদের সমস্যা কোথায়? প্রতিরোধের প্রস্তুতি কতোটা আমাদের? কেবলই মতভেদ আর বিচ্ছিন্নতা। আর কতো? দেয়াল সন্নিকটে। পিঠ ঠেকে গেছে। আর বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক ১৭ ফেব্রুয়ারি কুতুবদিয়ায় নৌবাহিনীর বার্ষিক মহড়া দেখার পর জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশে আল কায়দা  আগে যে ফেসিলিটিজ পেতো, তা এখন পায় না বলেই হুমকি দিচ্ছে। 

তাই আল কায়দার হুমকি সবসময় আছে , তা মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ক্ষমতায় এসেই বলেছেন, এদের বের করে দাও। অনেককে বের করে দেয়া হয়েছে। আগে অনেক সরকারি সংস্থাও তাদের সুবিধা দিয়েছিল। তাই প্রধানমন্ত্রীর  জীবনের ঝুঁকি অনেক আগে থেকেই আছে। 

প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল তারেকের এ বক্তব্য বাস্তব সত্য বলেই আমরা বারবার জেনেছি। 

সারা বিশ্বে আল কায়দা বা মুসলিম ব্রাদার হুড ভয়ংকর সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তার জবাবও পাচ্ছে। মুরসির ফাঁসি নিশ্চিত বলে বলছে আমার মিশরীয় অনেক বন্ধু। মানবতার চরম অবমাননার শাস্তি একদিন পেতেই হয়-এ তার প্রমাণ। এ বাস্তবতায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আল কায়েদা বা মুসলিম ব্রাদারহুডের জঙ্গিবাদ এবং সভ্যতার প্রতি তারা কতো বড়ো হুমকি সে সম্পর্কে  স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। 

আল কায়দার হুমকি বাংলাদেশের জন্যে নতুন কিছুই নয়। জাওয়াহিরির মরিয়া বক্তব্যের এ বার্তা জামায়াত-বিএনপি প্রেমীদের একাত্মতা নতুন করে মনে করিয়ে দিলো কেবল।

ভারতের বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলাম আর ভারতের আম আদমি পার্টি একাট্টা হয়েছে । বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই আল কায়েদার সঙ্গে কাজ করছে।ভারতের আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লীতে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের সঙ্গেই আছে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের জামায়াতে ইসলাম হিন্দ এর কেন্দ্রীয় কমিটি মারকাজে মজলিশে শুরার  প্রভাবশালী সদস্য হাসান রাজা ইসলামিক একাডেমিসহ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং তার সভাপতিত্বে দিল্লিতে আয়োজিত এক বিশাল অনুষ্ঠানে তারা আম আদমি পার্টিকে আমন্ত্রণ জানায়। 

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ছিল জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ইউনাইটেড মিল্লি ফোরাম। ছবিসহ এই সংবাদ প্রকাশ করে জামায়াতের সহযোগী এ সংগঠনগুলোকে  কাগুজে বাঘের সঙ্গে তুলনা করেছে নর্দান ভয়েজ অনলাইন। জামায়াত আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের অতিথি আম আদমি পার্টির শীর্ষ সংগঠক সঞ্জয় সিং জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে বলেছেন, আম আদমি পার্টি ধর্ম বর্ণ গোত্র ভেদাভেদ করে না। তাই তারা জামায়াতের সঙ্গে একাত্ম।

পাকিস্তানের কোন কোন গণমাধ্যম বাংলাদেশের সাফল্যের সংবাদ গর্বের সঙ্গে প্রচার করছে। ২৩ অক্টোবর ২০১৩ পাকিস্তানের সাংবাদিক মুতাজা হায়দার ডন পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন, ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশকে জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘শুয়োরের দেশ’  (শুকরের দেশ) বলেছিলো,  পশ্চিম পাকিস্তানিরা ‘ভুখা নাঙ্গা’ বলে যে বাঙালিদের বকা ঝকা করতো, একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন করে সেই বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান, এমনকি ভারতকেও ছাড়িয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায়।

তাই বাংলাদেশ আর দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুধাপীড়িত দেশ নেই । গ্লোব্যাল হাঙ্গার ইনডেক্স এর জরিপ তুলে ধরে ডন লিখেছে, পাকিস্তান এখনো ক্ষুধাপীড়িত নাগরিকদের মুখে অন্ন জোগানোর চেষ্টায় ছুটাচ্ছে, আর বাংলাদেশ মানব উন্নয়নের ঘোড়ায় লাগাম ছুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দোর্দণ্ড প্রতাপে। 
সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে জঙ্গি গোষ্ঠী সর্বত্র হত্যা, সন্ত্রাস আর পহরণের তাণ্ডব চালাচ্ছে। 

পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন  জইশ আল আদল ইরান ও ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়ায় বন্দি ৩শ’ সুন্নির সঙ্গে তাদের বিনিময় করার দাবি করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষের কাছে । সুন্নি এ জঙ্গিগোষ্ঠী বলেছে, ইরানি রক্ষীদের আটকের পেছনে তাদের হাত রয়েছে। অজ্ঞাত জায়গায় ৫ জনকে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমন একটি ছবি পোস্ট করে তা ইরানি রক্ষীদের বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। 

শুক্রবার আল আরাবিয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে, আটককৃত ইরানি রক্ষী সার্জেন্ট জামশেদ দানাইফার্দ ভিডিওতে বলেছেন, তারা নিরাপদ ও ভালো আছেন। এদের মুক্ত করতে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে দেশটিতে সেনা অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছে ইরানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুলরেজা রহমানি ফাজলি।

বিবিসি বলেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ওই রক্ষীদের ইরানের সিসতান বেলুচিস্তান অঞ্চল থেকে আটক করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। কঠোরতার সঙ্গে বিষয়টি দেখার ও বন্দিদের মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইসলামাবাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন ইরানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাজলি।  

ইরানি রক্ষীদের যে দিন আটক করা হয়, সেই দিনই ইরানে নিযুক্ত পাকিস্তানি শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে পাঠায় ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই বিষয়ে ইসলামাবাদ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির নেতাদের ও সদস্যদের (যারা পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে) বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে দাবি জানায়।

১৭ ফেব্রুয়ারি একই দাবির পুনারাবৃত্তি করে ফাজলি বলেছেন, অন্যথায়  আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানের অবশ্যই ইরানকে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে।

আবারো পাকিস্তানের ডন পত্রিকার একটি সংবাদ তুলে ধরতে হয়। 

২০১৩  সালের ৩ সেপ্টেম্বর মোস্ট ওয়ান্টেড এক্সট্রিমিস্ট লিডার আবু জারারা আল ইয়েমিনিকে পাকিস্তানের মুরিরি এলাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্যাকেশন স্পটের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় সৌদি আরবের বিশেষ বাহিনী। ৪টি হেলিকপ্টারে করে এই বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানের  পাঞ্জাবের রাওয়িন্ড এলাকায় অবতরণ করে। 

সেখান থেকে উটে চড়ে মুরুরি এলাকায় গিয়ে ঘাড়ে ধরে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জারারাকে । জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তান এবং অন্যরা ঘটনার বর্ণনা শুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, এই  গ্রেফতার অভিযান মার্কিন বাহিনীর। জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তান এবং জামিয়াত উলামায়ে ইসলাম বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাস্তায়।  

পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করে বারবার এমন মার্কিনি হামলা বরদাশত করা হবে না। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশের জন্যে দাবি তোলে। এমনও বলে, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে যদি জারারাও হয়, পাকিস্তান সরকারের লজ্জিত হওয়া উচিত! কারণ, সে একজন মুক্তিযোদ্ধা; আমেরিকার বিরুদ্ধে সে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছে!  কিন্তু  জারারাকে গ্রেফতার করেছে সৌদি আরব বাহিনী –এ তথ্য জানার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতি  ঠগবাজ নেতাদের এতোক্ষণের ক্ষুব্ধ মনোভাব আর কুঁচকানো ভুরু বদলে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে।  নিজেদের দেশে   ‘বাপের দেশ’ সৌদি আরবের অভিযানে যেন চরম উল্লসিত তারা। ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বক্তব্য দিয়ে পাকিস্তানের জনগণ এবং সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানায় পাকিস্তানের জঙ্গিবিরোধী অভিযান সফল করা এবং এতে সহযোগিতা করার জন্যে। এবার জামায়াত কার পক্ষে বলবে?

যথারীতি এখানেও একই হঠকারী ভণ্ড আচরণ জামায়াতের। চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজাহার এর মাদ্রাসায় ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরির সময়ে শক্তিশালী বিষ্ফোরণে তিন মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়। ঘটনার পরপর হেফাজতে ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে মুফতি ইজাহারের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে হাস্যকরভাবে বলে, এ ঘটনা সামান্য কম্পিউটার বিষ্ফোরণ এবং পুরোটাই পুলিশের সাজানো । এ মামলায় ইজাহার এবং তার পুত্র হেফাজতের সামরিক শাখার প্রধান হারুণ ইজাহারের বিরুদ্ধে  চার্জশিট দেয় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, ইজাহার এবং তার পুত্র হেফাজতের কেউ নয়! চমৎকার!

সুমি খান: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, sumikhan29bdj@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪ - See more at: http://www.banglanews24.com/
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%
http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%

Wednesday, March 5, 2014

একজন শ্লোগানকন্যা যখন তারকা

লাকি আক্তার তরুণ নেতৃত্বের একজন। তার ফেসবুক পোষ্টে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা উঠে এসেছে।সেটা মানতে পারি আমি গণতন্ত্রের স্বার্থে। কিন্তু রাজাকার পুনর্বাসন কারী -হেফাজতের রক্ষক এবং শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্যকারী বেগম খালেদা জিয়ার জন্যে লাকীর কান্নাকাটির পর তাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক মানতে আর মন চাইছে না, দুঃখিত!! আর প্রথম আলোতে প্রকাশিত তিনটি গল্পে শাহবাগ এবং শ্লোগানের কোন এক অগ্নিকন্যাকে চরম অশ্লীল ভাবে উপস্থাপনের পরও প্রথম আলো তে তার লেখা প্রকাশ করা তার আত্মঘাতী প্রচারমুখীনতার প্রকাশ মাত্র! কী ভয়াবহ রাজনীতি!! এ প্রসঙ্গে আমার আরো কিছু কথা আছে। ইসলামী ব্যাংক যতোক্ষণ রাষ্ট্রায়ত্ত করা হবে না- ততোক্ষণ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত এই ব্যাংকটির দান অনুদান গ্রহণ নিয়ে সমালোচনা থাকাই স্বাভাবিক। তবে জনপ্রিয় উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার ও দাবি করেন ইসলামী ব্যাংকের কোনকিছুতেই জামাতের কারো মালিকানা নেই! তাকে উপস্থাপনা করতে ডাকলে তিনি কেন যাবেন না?  মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন! অন্ধ হলে কী আর প্রলয় বন্ধ থাকে? লাকী আক্তারের ফেসবুক পোষ্ট তুলে ধরলাম। এর পর আমার মন্তব্য-
Lucky Akter -"একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছেন, আবার ইসলামী ব্যাংকের চেক বিতরণ করছেন।আপনাদের একাধিক নেতা জবির একাধিক হল দখল করে আছে আবার আপনাদের ছাত্র সংগঠন শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে হল উদ্ধারে, হলের জমি পুন:রুদ্ধারে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। 
খালেদা জিয়া তার বাসভবন ছাড়তে হয়েছিল, র‍্যাংগস ভবন ভেঙে ফেলতে হয়েছিল। আর হাজী সেলিম পার পেয়ে যাবে কেন??
এসব নাটক বন্ধ করেন। সর্প হয়ে দংশন করা আর ওঝা হয়ে ঝাড়ার কৌশল ত্যাগ করেন।"
----------------------------আমি সুমি খান ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে কিছু প্রশ্ন করি আপনাকে, লাকী আক্তার- ২ পয়সা মূল্যে বেআইনী ভাবে দুইটি রাজসিক বাড়ী যুগ যুগান্তর দখলে রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া- যার জন্যে এতো মন পুড়ছে লাকির-তাকে বলি,এক বিলাসী রাজরাণীর একটি বাড়ি এখন কতো পরিবারের আশ্রয়, জানেন, লাকি?সেই বাড়ি হারিয়ে আকুল নয়নে কান্না করা একজন 'অসহায় বিধবা' খালেদা এখন কতো মিলিয়ন ডলারের মালিক , জানেন আপনি, লাকি? তিনি শাহবাগ আন্দোলন আর আপনাদের সম্পর্কে এতো অশ্লীল মন্তব্য করার পর ও তার প্রতি এতো মায়া আপনার,লাকি?" বর্তমান বাম রাজনীতিকদের কি তাহলে বিএনপি প্রীতি ই যথেষ্ট? একাত্তরের ঘাতকদের পুনর্বাসন কারী কে সমর্থন করে মুক্তিযুদ্ধের অান্দোলন করছেন লাকি? হিপোক্রেসি আর কাকে বলে??ঘাতকদের বিচার করছেন শেখ হাসিনা। তাকে হত্যা করার এতো প্রচেষ্টা,তার একমাত্র উদ্দেশ্য একাত্তরের ঘাতকদের বাঁচিয়ে দেয়া-এই সাধারণ বিষয় যারা বোঝেন না, বা বুঝতে চান না-তারা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নন।বাম রাজনীতিকদের ন্যূনতম রাজনৈতিক জ্ঞান ও লাগে না দেখছি আজকাল?