Saturday, April 27, 2013

কেন মদিনা সনদ রাষ্ট্রীয় সংবিধান হতে পারে না : হাসান মাহমুদ

কেন মদিনা সনদ রাষ্ট্রীয় সংবিধান হতে পারে না

হাসান মাহমুদ১৮ইএপ্রিল ৪৩ মুক্তিসন (২০১৩)

এ নিবন্ধে মদিনা সনদের ধারাগুলো অনুবাদ করে দিচ্ছি। ওগুলো গোত্রীয় সমাজ, অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধ আর শান্তিচুক্তি, রক্তমূল্য নিয়ে খুনীকে রেহাই দেয়া, মুক্তিপণ নিয়ে যুদ্ধবন্দীকে ছেড়ে দেয়া ইত্যাদির ওপরে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ সমাজে বিশেষ উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছিল। এখন দাসপ্রথা কিংবা জিজিয়া করের মত ওটা ইচ্ছে করলেও প্রয়োগ করা অসম্ভব। দেশে ইন্টারনেটের মত অনিয়ন্ত্রিত সুত্র থেকে কপি-পেষ্ট করে বা সামান্য যোগ-বিয়োগ করে মফিনা সনদ নিয়ে অজস্র লেখালেখি কথাবার্তা হচ্ছে অথচ সুত্রগুলোর মধ্যে পার্থক্য ও সংঘাত আছে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিপজ্জনকভাবে জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে।

আদিতে সনদটি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করেছেন আবু উবাইদ ও ইবনে হিশাম/ইবনে ইসহাক। আমি ড: হামিদুল্লাহ লিখিত বিখ্যাত বই -"দি ফার্স্ট রিটেন কন্সটিটিউশন অফ দি ওয়ার্ল্ড" (পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান) থেকে অনুবাদ করছি, ধারাগুলো প্রধানত: ইবন হিশাম/ইবন ইশাকের দলিল থেকে নেয়া হয়েছে। অনুবাদে সামান্য হেরফের হয়ই তাছাড়া ও দুটোর মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে; আবু উবাইদ-এর দলিলে অনেকগুলো ধারা কম। আমরা নি:সন্দেহ নই আবু উবাইদ-এর ধারাগুলোতে আরো ধারা যোগ করা হয়েছে, নাকি সীরাত-এর ধারাগুলো থেকে কিছু মুছে দেয়া হয়েছে। তবু এ অনুবাদে মূল বক্তব্য কিছুটা পরিস্কার হবে আশা করি। দু'এক জায়গায় কিছুটা অস্পষ্ট রয়ে গেল, সেটা ওই দুই সূত্রের তফাতের কারণে। ধারাগুলোতে "বিশ্বাসী" শব্দে কখন ইহুদী আর কখন মুসলমান বোঝানো হয়েছে তা বাক্য থেকে বুঝে নিতে হবে।"গঠনতন্ত্র" ও "সংবিধান" সমার্থক শব্দ, রাষ্ট্রযন্ত্র চালানোর মূল দলিল। ধারাগুলো হল:-

১. ইহা আল্লাহ'র রসুল মুহম্মদের পক্ষ হইতে - যাহারা কুরাইশদের মধ্যে বিশ্বাসী ও আল্লাহ'র প্রতি আত্মসমর্পণকারী, - এবং মদীনাবাসী ও যাহারা তাহাদের অধীনস্ত বা তাহাদের সহিত যুদ্ধে যোগদান করিবে, (এই দুই পক্ষের - লেখক) তাহাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনার জন্য ।

২.তাহারা সকলে মিলিয়া পৃথিবীর অন্যদের হইতে আলাদা একটি উম্মা।

৩.কুরাইশ হইতে আগত মুহাজিরেরা তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে, যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে ও যৌথভাবে মুক্তিপণ দিয়া তাহাদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে মুসলিমদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৪. এবং বনি আউফ গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৫. এবং বনি হারিথ গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের-লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৬.এবং বনি সাইদা গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৭. এবং বনি জুশাম গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৮. এবং বনি নাজার গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৯. এবং বনি আমর বিন আওফ গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

১০. এবং বনি নাবিথ গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

১১. এবং বনি আল আওস গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

১২ক । বিশ্বাসীগণ নিশ্চয়ই কাহাকেও ঋণের চাপে পর্যুদস্ত রাখিবে না -রক্তমূল্য ও মুক্তিপণের ব্যাপারে তাহারা ন্যায় রক্ষা করিয়া চলিবে।

১২খ। কোনো বিশ্বাসীই অন্য বিশ্বাসীর মক্কেলের সহিত (অন্যায়-লেখক)চুক্তিবদ্ধ হইবে না।

১৩.বিশ্বাসীরা নিশ্চয়ই বিদ্রোহী, ডাকাত, প্রতিজ্ঞার খেয়ানতকারী,বিশ্বাসীদের মধ্যে নষ্টামী সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইবে। এই ধরণের কেহ যদি তাহাদের পুত্রও হয় তবুও তাহার বিরুদ্ধে তাহারা দাঁড়াইবে একত্রে।

১৪.কোনো কাফেরকে খুন করার বদলা নিবার জন্য কোনো মুসলিম কোনো মুসলিমকে খুন করিবে না - কোনো মুস্লোমের বিরুদ্ধে কোনো কাফিরকে সাহায্যও করিবে না।

১৫. আল্লাহ'র প্রতিরক্ষা এক। কাহাকেও রক্ষা করিয়া কোনো বিশ্বাসী সকলকে দায়বদ্ধ করিতে পারে (এটা অস্পষ্ট - লেখক)। পৃথিবীর সকলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীরা নিশ্চয়ই ভাই।

১৬. ইহুদীদের মধ্য হইতে যাহারা আমাদের অনুগত হইবে তাহারা সাম্য ও সাহায্য পাইবে। তাহারা অত্যাচারিত হইবে না কিংবা তাহাদের বিরুদ্ধে কাহাকেও সাহায্য করা হইবে না।

১৭. নিশ্চয়ই বিশ্বাসীদের শান্তি এক। আল্লাহ'র পথে কোনো যুদ্ধ হইলে কোনো বিশ্বাসী অন্য বিশ্বাসীরা ব্যতীত (শত্রুর সহিত) শান্তি স্থাপন করিবে না যদি না সেই শান্তি সকলের প্রতি সমান ও বাধ্যতামূলক হয়।

১৮.নিশ্চয়ই আমাদের যোদ্ধাদিগকে প্রতিস্থাপন করা হইবে (অর্থাৎ একদল যুদ্ধ করে আসবে অন্যদল যুদ্ধে যাবে - লেখক)।

১৯. আল্লাহ'র পথে (নিজেদের কারো- লেখক)রক্তপাত হইলে নিশ্চয়ই সকল বিশ্বাসী ঐক্যবদ্ধ হইয়া প্রতিশোধ লইবে।

২০ক । নিশ্চয়ই ধর্মপ্রাণ বিশ্বাসীরা শ্রেষ্ঠ ও সরলতম নেতৃত্বের (গাইডেন্স-এর) অনুসারী।

২০খ। এই বিষয়ে কোনো মুশরিক কোনো কুরাইশের জীবন ও সম্পত্তিকে প্রতিরক্ষা দিতে পারিবে না এবং মুসলমানদের পথে বাধা হইয়া দাঁড়াইবে না।

২১. যদি কেহ কোনো মুসলিমকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে এবং তাহা প্রমাণিত হয়,তবে প্রতিশোধ হিসাবে তাহাকে হত্যা করা হইবে, যদি না নিহতের উত্তরাধীকারীরা (রক্তমূল্যে)রাজী হয়। এবং নিশ্চয়ই এই বিষয়ে সকল বিশ্বাসী ঐক্যবদ্ধ হইবে, অন্য কিছুই তাহাদের জন্য বৈধ হইবে না।

২২. এই দলিলে (সহিফা-তে) যাহা কিছু আছে তাহা যেইসব বিশ্বাসীরা গ্রহণ করিয়াছে এবং আল্লাহ ও কেয়ামতে বিশ্বাস করিয়াছে, তাহাদের জন্য কোনো খুনীকে রক্ষা করা বৈধ হইবে না। খুনীকে কেহ সাহায্য করিলে ও আশ্রয় দিলে কেয়ামতের দিনে আল্লাহ'র অভিশাপ ও ক্রোধ তাহার উপর পড়িবে - এবং তাহার কাছ হইতে কোনো প্রতিদান গ্রহণ করা হইবে না।
২৩. যদি তোমাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হয় তবে আল্লাহ ও মুহম্মদের সিদ্ধান্ত জারী হইবে।

২৪. এবং নিশ্চয়ই ইহুদীরা বিশ্বাসীদের সহিত একত্রে যুদ্ধ করিলে নিজেদের খরচ বহন করিবে।

২৫। (এই ধারাটি অস্পষ্ট - লেখক)।
এবং নিশ্চয়ই বনি আউফ গোত্রের ইহুদীরা ও বিশ্বাসীরা একত্রে একটি উম্মা হিসাবে গণ্য হইবে। কারণ তাহারা তাহাদের ধর্মে এবং মুসলিমেরা তাহাদের ধর্মে - একটি গোত্রের প্রকৃত সদস্য। কিন্তু কেহ চুক্তিভঙ্গ বা অত্যাচার করিলে সে তাহার নিজের ও তাহার পরিবারের উপর অত্যাচার করিল।

২৬. নিশ্চয়ই বনি নাজ্জার গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।

২৮. নিশ্চয়ই বনি আল হারিথ গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।

২৮. নিশ্চয়ই বনি সাইদা গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।


২৯. নিশ্চয়ই বনি জুসান গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।

৩০. নিশ্চয়ই বনি আল আউস গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।

৩১. নিশ্চয়ই বনি তালাবা গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে। কিন্তু কেহ চুক্তিভঙ্গ বা অত্যাচার করিলে সে তাহার নিজের ও তাহার পরিবারের উপর অত্যাচার করিল।

৩২. এবং জাফনা (গোত্র- লেখক) নিশ্চয়ই তালাবাহ গোত্রেরই অংশ - তাহাদের মতই।

৩৩. নিশ্চয়ই বনি আশ শুতাইবা গোত্র বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে। সকলে (চুক্তি - লেখক) মানিয়া চলিবে, কেহই ভঙ্গ করিতে পারিবে না।

৩৪. নিশ্চয়ই তালাবাহ গোত্রের উপদলগুলি প্রধান দলের সমান অধিকার পাইবে।


৩৫.নিশ্চয়ই ইহুদীদের সকল উপদলগুলি প্রধান দলের সমান অধিকার পাইবে।

৩৬ক। এবং নিশ্চয়ই তাহাদের কেহই মুহম্মদের অনুমতি ব্যতীত কোনো যুদ্ধে যাইতে পারিবে না।

৩৬খ। কেহ জখম হইলে তাহার বদলা নিবার ব্যাপারে কেহই বাধা দিতে পারিবে না। হত্যার জন্য হত্যাকারী নিজে ও নিজের পরিবারসহ দায়ী থাকিবে - অন্যথায় অবিচার হইবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাহাদের সহিত আছেন যাহারা এইগুলি অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলে।

৩৭ক। এবং নিশ্চয়ই ইহুদীরা বহন করিবে তাহাদের (যুদ্ধের) খরচ ও মুসলিমরা বহন করিবে তাহাদের খরচ। তাহারা একত্রে যুদ্ধ করিবে তাহাদের বিরুদ্ধে যাহারা এই দলিলের (সহিফা'র) যাহারা অংশীদার তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ইহাদের পরস্পরের সহিত পরামর্শ করিবে ও পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছা রাখিবে। সকলে (চুক্তি) রক্ষা করিবে,কেহই লংঘন করিবে না।

৩৭খ। নিশ্চয়ই কেহই বন্ধুদের প্রতি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিবে না এবং অত্যাচারিতকে সাহায্য করা হইবে।


৩৮. এবং নিশ্চয়ই ইহুদীরা বিশ্বাসীদের সহিত একত্রে যুদ্ধ করিলে নিজেদের খরচ বহন করিবে-(হুবহু ধারা ২৪-লেখক)


৩৯. এবং নিশ্চয়ই এই দলিলে (সহিফা-য়)অংশগ্রহণকারীদের জন্য মদীনার উপত্যকা সংরক্ষিত এলাকা।


৪০. এবং নিশ্চয়ই যাহাকে প্রতিরক্ষা দেওয়া হইয়াছে তাহাকে আদি প্রতিরক্ষিত ব্যক্তির মতই গণনা করা হইবে (এটুকু অস্পষ্ট - লেখক)।
তাহার কোনো ক্ষতি করা হইবে না এবং সে-ও চুক্তি লংঘন করিবে না।


৪১. এখানকার আদি অধিবাসীদের অনুমতি ব্যতীত কাহাকেও আশ্রয় দেওয়া যাইবে না।


৪২. এবং নিশ্চয়ই এই দলিলে (সহিফা-য়)অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যদি ঝগড়া বা হত্যা সংঘটিত হয়, যাহা হইতে সমস্যার উদ্ভব হইতে পারে, তাহা আল্লাহ এবং আল্লাহ'র রসুল মুহম্মদের (আল্লাহ তাঁহাকে পছন্দ ও রক্ষা করুন) কাছে আনা হইবে। এই দলিলকেযাহারা অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলে আল্লাহ তাহাদের রক্ষাকর্তা।


৪৩. এবং নিশ্চয়ই কোনো প্রতিরক্ষা দেওয়া হইবে না কুরাইশদিগকে এবং তাহাদের সাহায্যকারী দিগকে।


৪৪.এবং নিশ্চয়ই মদীনাকে আক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে তাহারা (মুসলিম ও ইহুদীরা) পরস্পরকে সাহায্য করিবে।

৪৫ক। (এটা আবু উবাইদ থেকে নেয়া হল কারণ ইবন হিশাম/ইবন ইশাকের ভাষা অস্পষ্ট- লেখক) যদি মুসলিমরা তাহাদের কোনো বন্ধু-গোত্রের সহিত ইহুদীদেরকে শান্তি স্থাপনের আহ্বান জানায় তবে ইহুদীরা তাহা করিবে। অপরপক্ষে ইহুদীরাও যদি একই আহ্বান করে তবে মুসলিমদের উপর তাহা বাধ্যতামূলক হইবে, যুদ্ধরত(মুসলিমদের বিরুদ্ধে- লেখক) কোনো গোত্র ব্যতীত।

৪৫খ। প্রতি দলের দায়িত্বে থাকিবে (শহরের?) যে অংশ তাহাদের মুখোমুখী।

৪৬। এই দলিলের (সহিফা'র) লংঘন না করিয়া অন্যান্য শরিকদের প্রতি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করিলে দলিলের অংশীদার হিসাবে আল আউস গোত্রের ও তাহাদের উপদলের ইহুদীরা একই অধিকার পাইবে। অন্যায়কারীরা নিজের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই পায় না এবং নিশ্চয়ই এই দলিলকে যাহারা অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলে আল্লাহ তাহাদের রক্ষাকর্তা।

৪৭। এবং নিশ্চয়ই এই দলিল (কিতাব) কোনো অত্যাচারী বা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারীকে রক্ষা করিবে না। যে কেহ (যুদ্ধে) যাইবে তাহাকে নিরাপত্তা দেওয়া হইবে;যে মদীনাতে রহিয়া যাইবে তাহাকে নিরাপত্তা দেওয়া হইবে; দেওয়া হইবে না শুধুমাত্র অত্যাচারী বা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারীকে।

এবং নিশ্চয়ই এই দলিলকে যাহারা অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলে আল্লাহ তাহাদের রক্ষাকর্তা,মুহম্মদের মতই, আল্লাহ তাঁহাকে পছন্দ ও রক্ষা করুন।

***********************************************

ধারাগুলো পড়লেন। এখন বলুন, রাষ্ট্রীয় সংবিধান তো দুরের কথা, এই শান্তিচুক্তি কি বাস্তবে কোনভাবেই প্রয়োগ করা সম্ভব?

না, সম্ভব নয়।

*************************************************************

লেখক ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য,- দ্বীন রিসার্চ সেন্টার হল্যাণ্ড-এর রিসার্চএসোসিয়েট, - মুসলিমস ফেসিং টুমরো'র জেনারেল সেক্রেটারী, - ফ্রিমুসলিমস কোয়ালিশন-এর ক্যানাডা প্রতিনিধি, - আমেরিকান ইসলামিক লিডারশীপ কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং খুলনা'র “সম্মিলিত নারীশক্তি”র উপদেষ্টা। শারিয়ার ওপরে বই "শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি" ও আন্তর্জাতিক প্রশংসিত ডকু-মুভি "হিল্লা", "নারী" ও "শারিয়াপ্রহেলিকা" - লণ্ডন ও টরন্টো'র স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষাক্লাসে দেখানো হয়

Thursday, April 25, 2013

অভিমানে রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চান সাজেদা চৌধুরী



রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। গতকাল রবিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় রাজনৈতিক সহকর্মীদের সামনে তিনি বলেছেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পাড়ি দিয়ে এখন তিনি ক্লান্ত ও অসুস্থ। তাই রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চান তিনি। সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সংসদীয় দলের ওই সভায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পান অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার কষ্টে সাজেদা চৌধুরী রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সহকর্মীদের কাছে বিদায় চাইলেন।
সাজেদা চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করার পর থেকেই সাজেদা চৌধুরী পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে থাকেন। এ নিয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে জোর লবিংও চালিয়ে যান তিনি। সাজেদার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও পরিবেশন করা হয়।
সূত্র জানায়, সংসদীয় দলের সভায় শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস, দলের জন্য তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরেন। শেষে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নাম প্রস্তাব করার জন্য সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব, গুরুত্ব ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে একজনের নাম প্রস্তাব করার পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের নাম প্রস্তাব করেন। একে একে অন্য শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রস্তাব সমর্থন করেন। এক পর্যায়ে মাইক্রোফোন নিয়ে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, 'দলের প্রতি বিশ্বস্ততা, ত্যাগ-তিতিক্ষা দায়িত্বশীলতার কিছু কথা আমারও বলতে হয়। দীর্ঘদিন এ দলের সঙ্গে কাজ করে চলেছি। বিভিন্ন দুঃসময়ে বড় বড় নেতারা দলের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেনি। সেই দুঃসময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। দলের প্রয়োজনে লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আজ আমি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত ও অসুস্থ।' আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি আরো বলেন, 'আমি রাজনীতি থেকে বিদায় চাই। আমাকে বিদায় দিন।'
রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন প্রসঙ্গে সাজেদা বলেন, 'যেহেতু রাষ্ট্রপতি হিসেবে দল হামিদকে সমর্থন জানিয়েছে, আমিও সমর্থন জানাই।'
পরে সাজেদা চৌধুরীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরে তাঁর বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানান তোফায়েল আহমেদ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, সাজেদা চৌধুরীর বক্তৃতার সময় উপস্থিত নেতারা বিরক্তি প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাজেদা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ। কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে চাই।' সূত্র : কালের কণ্ঠ

Tuesday, April 23, 2013

কারাগারে নিরীহ সুব্রত অধিকারী: পথ চেয়ে আছে মা- ছেলে কবে মুক্ত হবে?





দুই তারিখ সারাটা রাত নির্ঘুম আমরা সবাই । মোবাইলের ওপাশে সেই পুরাতন ভোঁতা কণ্ঠস্বর । আপনার ডায়েল কৃত নাম্বারটি ………।।

রাত বাড়ছে সাথে সাথে ভয় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে । ক্রমেই মনে হচ্ছিল ও বুঝি আর বেঁচে নেই ।
তিন তারিখ সকালে ডিবির ব্রিফিং থেকে জানতে পারলাম সুব্রত অধিকারী শুভ কে গ্রেফতার করা হয়েছে ।

নিজ চোখে দেখলাম মিডিয়ার সামনে দাগী আসামীর মত হাজির করা হয়েছে তাকে । তার সাথে জব্দকৃত অস্ত্র হিসেবে দেখিয়েছে মডেম আর ল্যাপটপ । তার অপরাধ সে ধর্ম ‘অবমাননা ‘ করেছে ।
প্রচণ্ড লজ্জা পেলাম । সুব্রত অধিকারী আসলে কে , সে আসলে কি লিখেছে ? সেই প্রশ্নের উত্তর না জেনেই তাকে একটা নোংরা মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হল ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র সুব্রত। সদা হাসিখুশি আর সবার জন্য নিবেদিতপ্রান এই ছেলেটির একটা চমৎকার গুণ -নিজের আচরন , জ্ঞান আর প্রজ্ঞা দিয়ে সবার মন জয় করে নেয়া। ক্যান্সার আক্রান্ত বাচ্চাদের জন্য সুব্রত প্রতি তিন মাস পর পর রক্ত দিত । ওজন কম হওয়ায় ডাক্তার তার রক্ত নিতে চাইতো না ।কিন্তু নাছোড় বান্দা ছেলেটা , সুন্দর যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতো, এই রক্ত একটা বাচ্চার জীবন বাঁচাবে। তাই তার নিজের ক্ষতির চেয়ে বাচ্চার জীবন বেশি জরুরী । গত শীতে নিজের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ১২টা সোয়েটার কিনে দিয়েছিল পথ শিশুদের । অথচ নিজের সোয়াটার ছিল না, পরে বন্ধুর গিফট করা সস্তা জ্যাকেটা দিয়ে পুরো শীতটাই পার করেছে সে।
নিছক বিনোদনের মধ্যম হিসেবে ফেইসবুকে তার বিচরন শুরু হয় ২০০৮ থেকে । দুই লাইন কবিতা কিংবা বানী কিংবা সারা দিন কেমন গেল এসব নিয়ে স্ট্যাটাস দিত । ২০১২ থেকে সে সমাজ সচেতনতা মূলক স্ট্যাটাস দেয়া শুরু করে , তার একটা স্ট্যাটাস এ লেখা ছিল ,

“ধর্ষণ ঠেকাতে স্প্রে! ( ভারত )
সত্যি এটি পুরুষের জন্য খুবই লজ্জার। একটি রাষ্ট্রে পুরুষ কতোটা হিংস্র ও নোংরা হলে মেয়েরা স্প্রে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটা যদি বাঙলাদেশেও হয় তাহলে দেখা যাবে মেয়েরা ডান হাতে ছেলেদের বা বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে হাই (HI) বলছে আর বাম হাতে ব্যাগের মধ্যে স্প্রে ধরে আছে। পুরুষ হও বা মানুষ হও যাই হও না কেন পশু হইও না। পৃথিবীর শুরু থেকেই এই ধর্ষণ শব্দটি ও কর্মটি পুরুষের সাথে মিশে আছে। যু্দ্ধক্ষেত্রে হোক আর সামাজিকক্ষেত্রে হোক ধর্ষণ তার রক্তে মিশে গেছে ” ।

তার খুব ক্ষোভের একটা যায়গা ছিল জামাতের ভণ্ডামি । সে মনে প্রানে চাইত যুদ্ধাপরাধীর বিচার হোক । দেশ থেকে জামাত নামক ভণ্ড দলটা নির্মূল হোক । সে লিখেছে ,

“সাতক্ষীরার একটি গ্রামে জামাত-শিবিরের বেজন্মরা কয়েকদিন আগে হিন্দুদের গ্রামে হামলা করে। গর্ভবতী এক মহিলার পেটে তারা লাথি দিয়ে আঘাত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঐ মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই বেজন্মরাই আমাদের সমাজে ধর্মের রক্ষক হিসেবে পরিচিত। তারাই কে মুসলিম কে নাস্তিক তার সার্টিফিকেট দেয়।

কিন্তু এতো হায়নার মাঝেও কিছু মানুষ দেখে প্রাণ ফিরে পাই । শত অন্ধকারেও আশার আলো দেখি।

এই নিউজটা দিল হিমেল ভাই। সাতক্ষীরার প্রতিনিধি তাকে এই সংবাদ জানায়।

তার পকেটে ৩২০০ টাকা ছিল পুরাটাই সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে দিয়ে দিয়েছে। ঐ সময় উপস্থিত তিন জনের কাছ থেকেই প্রায় দশ হাজার টাকা উঠেছে। আপাদত জরুরী ভিত্তিতে এই সামান্য টাকা গুলো পাঠানো হল। অর্থের আরো প্রয়োজন হতে পারে। আশা করি আমরা সবাই সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেব।

জামাতের বেজন্মরা ঐ মায়ের পেটেই শুধু লাথি দেয় নি, লাথি দিয়েছে আমাদের মাতৃভূমির পেটে। এই বেজন্মরা হয় এই দেশে থাকবে না হয় আমরা। পাকিস্তানি গেলমানদের জায়গা এই দেশে না। পাকিস্তানের গেলমান পাকিস্তানে ফিরে যা” ।

তার দেশাত্মবোধ ছিল প্রচণ্ড প্রবল । একুশে ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাস্তায় পরে থাকা একটা পতাকা দেখে সে ধুলো ঝেড়ে মাথায় বেঁধে নিয়েছিল । বলেছিল , “ মায়ের আঁচল ধুলোয় লুটাবে কেন , এর জায়গা তো মাথায়” । তার ব্লগের ৯০ ভাগ লেখাই দেশ কে নিয়ে , সে ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর সাক্ষাতকার নিয়েছিল । মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক মামার দেশ প্রেমের প্রতিটি অক্ষর সে লিখছে ব্লগে । সে লিখেছে জামাতের নিপীড়ন , একাত্তরে সংগ্রাম পত্রিকার ভূমিকা আসলেই কি ছিল তাই নিয়ে ।
তার চেতনা এর শাণিত যে সে বার বার প্রতিবাদী হয়েছে , আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নামে মিথ্যাচার নিয়ে । একবার ফেইসবুকে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নাম নিয়ে কোন বর্বর একটা নোংরা আইডি খুলেছিল । শুভ সঙ্গে সঙ্গে তার তীব্র প্রতিবাদ করেছে । সে লিখেছে ,

“বাঙালি কতোটা নোংরা তার জন্য বাঙালির বেডরুমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাঙালির ফেসবুই যথেষ্ট। শেখ হাসিনার নামে একটা নোংরা একাউন্ট দেখলাম। মাথা এডিট করে লাগানো ওখানে। একই জিনিস খালেদা জিয়ার হোক তা চাই না। এমন নোংরামীই মাধ্যমেই আমরা আমাদের পরিচয় জানান দিচ্ছি”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে একটা চমৎকার পোষ্ট দিয়েছিল ব্লগে। ও মনে প্রানে বিশ্বাস করত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান তিনি ।
শুভ ধার্মিকদের শ্রদ্ধা করত । তার মুসলিম বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সব সময় সালাম দিত । সে কোন দিন কাউকে ধর্ম নিয়ে একটা বাজে কথা বলেনি । বরং সে লিখেছে ,
“টুপি দেখলেই জামাত নয় , ধার্মিক দেখলেই ঘৃণা নয়” ।

মসজিদে আগুন দিল যখন জামাত শিবিরের সন্ত্রাসীরা , তখন শুভ খুব কষ্ট পেয়েছিল । সে লিখেছিল ,

“মসজিদের ভেতরে আগুন দেওয়া, নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের মারা, অস্ত্র নিয়ে মসজিদে প্রবেশ, মসজিদে মারামারি, রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য মসজিদ ব্যবহার, ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়া, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, ধর্মের নামে মানুষ খুন ইত্যাদি করেও জামাত-শিবির একটি ইসলামিক দল।”

এই অল্প বয়সী ছেলেটা তার এক বছরের ব্লগিং জীবনে মাত্র ২৫-৩০টা লেখা দিয়েছে । তার প্রতিটি লেখাই ছিল তার বোধের প্রকাশ । জীবন সম্পর্কে সে তার ছোট্টা জীবনে ধারণা এখনো এতটা গভীর হয়নি কিন্তু তার জানার চেষ্টা আছে শত ভাগ । ব্লগে তার আইডি সুব্রত শুভ , লালু কসাই , আজাদ । অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় বন্ধুরা মজা করে ওকে ডাকে লালু কসাই। তাই সে তার ব্লগ নাম এটাই দিয়েছিল ।
তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সারমর্ম করলে এমন দাঁড়ায় ,

১/ ” সুব্রত শুভ বাংলাদেশ নাস্তিক কমিউনিটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত”

২/ “সুব্রত শুভর” সাথে আসিফ মহিউদ্দিন, শর্মি আমিনদের মতো ইসলামবিদ্বেষীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে

৩/ “সুব্রত শুভ” হিন্দু নির্যাতনের দোহাই দিয়ে প্রায়ই মুসলিমদের ধর্মীয় বিষে কটু মন্তব্য করে যা সাম্প্রদায়িক অস্হিতিশীলতার সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট ।

কার ফেইসবুক বন্ধু ভিন্ন বিশ্বাসের হওয়া অপরাধ এই কথাটা কোন আইনে আছে আমার জানা নেই । যদি থেকে থাকে তাহলে আমরা সবাই অপরাধী । সুব্রত শুভ এর ফ্রেন্ড লিস্ট এ তথাকথিত কয়েকজন নাস্তিক (যদিও ইসলাম ধর্ম মতে কাউকে “নাস্তিক” বলার আগে অনেক কিছু ভেবে চিনতে বলতে হয়।) আছে বলে তাঁর উপর মামলাটি করা হয়েছে । তাহলে বাংলাদেশর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অধীনে মাষ্টার্স এর শেষ পর্বে মুসলিম দর্শনে যে বা যারা আরজ আলী মাতুব্বর এর দর্শন অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাঁদের কে ও নাস্তিক বলা যায়। কেননা আরজ আলী মাতব্বর তো একজন ইসলাম বিরোধী ছিলেন। তাই আশা করছি অচিরেই বর্তমান সরকার ঐ ব্যাক্তিদের (মাষ্টার্স এর মুসলিম দর্শনে যে বা যারা আরজ আলী মাতব্বর এর দর্শন অন্তর্ভুক্ত করেছেন) খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ ।
মসজিদ, মন্দির পোড়াবার খবর যখন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হল তখন সকল ধর্মের মানুষ প্রতিবাদ করেছিল , শুভ তাদের ব্যতিক্রম নয় । সে লিখেছিল ,
“”যে দেশে যে ধর্মের মানুষ বেশী সেই দেশে ঐ ধর্ম নিয়ে কথা বললে বা সমালোচনা করলে; বেশি সংখ্যক মানুষ যখন আঘাত পায় তখন তাকে ধর্মানুভূতি বলে। কিন্তু অন্য ধর্মের মূর্তি ভাঙলে , মসজিদ ভাঙলে বা ঐ ধর্ম নিয়ে খোঁচালেও ধর্মানুভূতিতে আঘাত আসে না। ইহাই ধর্মানুভূতির অনুভূতি।”

তার এই ছোট্ট জীবনে শুধু দেশ কে দেশের মানুষ কে ভালবাসার জন্যই কি আজ তার এমন পরিণতি ? সাত দিনের রিমান্ড, এখন জেল হাজত আর কদিন পরে কি মিথ্যা অপরাধে দায়ী দেখিয়ে তার শাস্তি হয়ে যাবে ?
যে মুসলিম ভাইদের মসজিদ পোড়াবার প্রতিবাদ সে করেছে , যে হিন্দু ভাইদের মন্দির ভাঙ্গার প্রতিবাদ সে করেছে আজ তাকে তারাই কি ভালবেসে মুক্ত করে আনবে না ? যে প্রধানমন্ত্রী কে সে মায়ের সম্মান দিয়েছে তিনি কি ওর পাশে দাঁড়াবেন না ?
ও প্রকৃত ধার্মিকদের শ্রদ্ধা করত , সম্মান করতো, আজ তারা কি ওর পাশে দাঁড়াবে না ?
আমাদের দেশে একটা মিথ্যা মামলা দেয়া অনেক সহজ । আমরা সবাই তা জানি । কিন্তু সত্যের জয় চিরকাল হয়েছে । শুভর মায়ের অশ্রু, হাজার হাজার মানুষের ভালবাসা , ওকে ফিরিয়ে আনবে এই আমাদের প্রত্যাশা । http://khoborbangla.com/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B9-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4-%E0%A6%85%E0%A6%A7/