Saturday, April 27, 2013

কেন মদিনা সনদ রাষ্ট্রীয় সংবিধান হতে পারে না : হাসান মাহমুদ

কেন মদিনা সনদ রাষ্ট্রীয় সংবিধান হতে পারে না

হাসান মাহমুদ১৮ইএপ্রিল ৪৩ মুক্তিসন (২০১৩)

এ নিবন্ধে মদিনা সনদের ধারাগুলো অনুবাদ করে দিচ্ছি। ওগুলো গোত্রীয় সমাজ, অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধ আর শান্তিচুক্তি, রক্তমূল্য নিয়ে খুনীকে রেহাই দেয়া, মুক্তিপণ নিয়ে যুদ্ধবন্দীকে ছেড়ে দেয়া ইত্যাদির ওপরে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ সমাজে বিশেষ উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছিল। এখন দাসপ্রথা কিংবা জিজিয়া করের মত ওটা ইচ্ছে করলেও প্রয়োগ করা অসম্ভব। দেশে ইন্টারনেটের মত অনিয়ন্ত্রিত সুত্র থেকে কপি-পেষ্ট করে বা সামান্য যোগ-বিয়োগ করে মফিনা সনদ নিয়ে অজস্র লেখালেখি কথাবার্তা হচ্ছে অথচ সুত্রগুলোর মধ্যে পার্থক্য ও সংঘাত আছে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিপজ্জনকভাবে জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে।

আদিতে সনদটি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করেছেন আবু উবাইদ ও ইবনে হিশাম/ইবনে ইসহাক। আমি ড: হামিদুল্লাহ লিখিত বিখ্যাত বই -"দি ফার্স্ট রিটেন কন্সটিটিউশন অফ দি ওয়ার্ল্ড" (পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান) থেকে অনুবাদ করছি, ধারাগুলো প্রধানত: ইবন হিশাম/ইবন ইশাকের দলিল থেকে নেয়া হয়েছে। অনুবাদে সামান্য হেরফের হয়ই তাছাড়া ও দুটোর মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে; আবু উবাইদ-এর দলিলে অনেকগুলো ধারা কম। আমরা নি:সন্দেহ নই আবু উবাইদ-এর ধারাগুলোতে আরো ধারা যোগ করা হয়েছে, নাকি সীরাত-এর ধারাগুলো থেকে কিছু মুছে দেয়া হয়েছে। তবু এ অনুবাদে মূল বক্তব্য কিছুটা পরিস্কার হবে আশা করি। দু'এক জায়গায় কিছুটা অস্পষ্ট রয়ে গেল, সেটা ওই দুই সূত্রের তফাতের কারণে। ধারাগুলোতে "বিশ্বাসী" শব্দে কখন ইহুদী আর কখন মুসলমান বোঝানো হয়েছে তা বাক্য থেকে বুঝে নিতে হবে।"গঠনতন্ত্র" ও "সংবিধান" সমার্থক শব্দ, রাষ্ট্রযন্ত্র চালানোর মূল দলিল। ধারাগুলো হল:-

১. ইহা আল্লাহ'র রসুল মুহম্মদের পক্ষ হইতে - যাহারা কুরাইশদের মধ্যে বিশ্বাসী ও আল্লাহ'র প্রতি আত্মসমর্পণকারী, - এবং মদীনাবাসী ও যাহারা তাহাদের অধীনস্ত বা তাহাদের সহিত যুদ্ধে যোগদান করিবে, (এই দুই পক্ষের - লেখক) তাহাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনার জন্য ।

২.তাহারা সকলে মিলিয়া পৃথিবীর অন্যদের হইতে আলাদা একটি উম্মা।

৩.কুরাইশ হইতে আগত মুহাজিরেরা তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে, যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে ও যৌথভাবে মুক্তিপণ দিয়া তাহাদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে মুসলিমদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৪. এবং বনি আউফ গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৫. এবং বনি হারিথ গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের-লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৬.এবং বনি সাইদা গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৭. এবং বনি জুশাম গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৮. এবং বনি নাজার গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

৯. এবং বনি আমর বিন আওফ গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

১০. এবং বনি নাবিথ গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

১১. এবং বনি আল আওস গোত্র তাহাদের বিজয়ের দায়িত্বে থাকিবে ও আগে যাহা বলা হইয়াছে সেইভাবে যৌথভাবে রক্তমূল্য পরিশোধ করিবে। (গোত্রের- লেখক) উপদলগুলি নিজেরা মুক্তিপণ দিয়া নিজেদের বন্দীদিগকে ছাড়াইয়া আনিবে যাহাতে বিশ্বাসীদের পারস্পরিক ক্রিয়াকর্ম ন্যায়ের ভিত্তিতে হইতে পারে।

১২ক । বিশ্বাসীগণ নিশ্চয়ই কাহাকেও ঋণের চাপে পর্যুদস্ত রাখিবে না -রক্তমূল্য ও মুক্তিপণের ব্যাপারে তাহারা ন্যায় রক্ষা করিয়া চলিবে।

১২খ। কোনো বিশ্বাসীই অন্য বিশ্বাসীর মক্কেলের সহিত (অন্যায়-লেখক)চুক্তিবদ্ধ হইবে না।

১৩.বিশ্বাসীরা নিশ্চয়ই বিদ্রোহী, ডাকাত, প্রতিজ্ঞার খেয়ানতকারী,বিশ্বাসীদের মধ্যে নষ্টামী সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইবে। এই ধরণের কেহ যদি তাহাদের পুত্রও হয় তবুও তাহার বিরুদ্ধে তাহারা দাঁড়াইবে একত্রে।

১৪.কোনো কাফেরকে খুন করার বদলা নিবার জন্য কোনো মুসলিম কোনো মুসলিমকে খুন করিবে না - কোনো মুস্লোমের বিরুদ্ধে কোনো কাফিরকে সাহায্যও করিবে না।

১৫. আল্লাহ'র প্রতিরক্ষা এক। কাহাকেও রক্ষা করিয়া কোনো বিশ্বাসী সকলকে দায়বদ্ধ করিতে পারে (এটা অস্পষ্ট - লেখক)। পৃথিবীর সকলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীরা নিশ্চয়ই ভাই।

১৬. ইহুদীদের মধ্য হইতে যাহারা আমাদের অনুগত হইবে তাহারা সাম্য ও সাহায্য পাইবে। তাহারা অত্যাচারিত হইবে না কিংবা তাহাদের বিরুদ্ধে কাহাকেও সাহায্য করা হইবে না।

১৭. নিশ্চয়ই বিশ্বাসীদের শান্তি এক। আল্লাহ'র পথে কোনো যুদ্ধ হইলে কোনো বিশ্বাসী অন্য বিশ্বাসীরা ব্যতীত (শত্রুর সহিত) শান্তি স্থাপন করিবে না যদি না সেই শান্তি সকলের প্রতি সমান ও বাধ্যতামূলক হয়।

১৮.নিশ্চয়ই আমাদের যোদ্ধাদিগকে প্রতিস্থাপন করা হইবে (অর্থাৎ একদল যুদ্ধ করে আসবে অন্যদল যুদ্ধে যাবে - লেখক)।

১৯. আল্লাহ'র পথে (নিজেদের কারো- লেখক)রক্তপাত হইলে নিশ্চয়ই সকল বিশ্বাসী ঐক্যবদ্ধ হইয়া প্রতিশোধ লইবে।

২০ক । নিশ্চয়ই ধর্মপ্রাণ বিশ্বাসীরা শ্রেষ্ঠ ও সরলতম নেতৃত্বের (গাইডেন্স-এর) অনুসারী।

২০খ। এই বিষয়ে কোনো মুশরিক কোনো কুরাইশের জীবন ও সম্পত্তিকে প্রতিরক্ষা দিতে পারিবে না এবং মুসলমানদের পথে বাধা হইয়া দাঁড়াইবে না।

২১. যদি কেহ কোনো মুসলিমকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে এবং তাহা প্রমাণিত হয়,তবে প্রতিশোধ হিসাবে তাহাকে হত্যা করা হইবে, যদি না নিহতের উত্তরাধীকারীরা (রক্তমূল্যে)রাজী হয়। এবং নিশ্চয়ই এই বিষয়ে সকল বিশ্বাসী ঐক্যবদ্ধ হইবে, অন্য কিছুই তাহাদের জন্য বৈধ হইবে না।

২২. এই দলিলে (সহিফা-তে) যাহা কিছু আছে তাহা যেইসব বিশ্বাসীরা গ্রহণ করিয়াছে এবং আল্লাহ ও কেয়ামতে বিশ্বাস করিয়াছে, তাহাদের জন্য কোনো খুনীকে রক্ষা করা বৈধ হইবে না। খুনীকে কেহ সাহায্য করিলে ও আশ্রয় দিলে কেয়ামতের দিনে আল্লাহ'র অভিশাপ ও ক্রোধ তাহার উপর পড়িবে - এবং তাহার কাছ হইতে কোনো প্রতিদান গ্রহণ করা হইবে না।
২৩. যদি তোমাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হয় তবে আল্লাহ ও মুহম্মদের সিদ্ধান্ত জারী হইবে।

২৪. এবং নিশ্চয়ই ইহুদীরা বিশ্বাসীদের সহিত একত্রে যুদ্ধ করিলে নিজেদের খরচ বহন করিবে।

২৫। (এই ধারাটি অস্পষ্ট - লেখক)।
এবং নিশ্চয়ই বনি আউফ গোত্রের ইহুদীরা ও বিশ্বাসীরা একত্রে একটি উম্মা হিসাবে গণ্য হইবে। কারণ তাহারা তাহাদের ধর্মে এবং মুসলিমেরা তাহাদের ধর্মে - একটি গোত্রের প্রকৃত সদস্য। কিন্তু কেহ চুক্তিভঙ্গ বা অত্যাচার করিলে সে তাহার নিজের ও তাহার পরিবারের উপর অত্যাচার করিল।

২৬. নিশ্চয়ই বনি নাজ্জার গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।

২৮. নিশ্চয়ই বনি আল হারিথ গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।

২৮. নিশ্চয়ই বনি সাইদা গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।


২৯. নিশ্চয়ই বনি জুসান গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।

৩০. নিশ্চয়ই বনি আল আউস গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে।

৩১. নিশ্চয়ই বনি তালাবা গোত্রের ইহুদীরা বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে। কিন্তু কেহ চুক্তিভঙ্গ বা অত্যাচার করিলে সে তাহার নিজের ও তাহার পরিবারের উপর অত্যাচার করিল।

৩২. এবং জাফনা (গোত্র- লেখক) নিশ্চয়ই তালাবাহ গোত্রেরই অংশ - তাহাদের মতই।

৩৩. নিশ্চয়ই বনি আশ শুতাইবা গোত্র বনি আউফ গোত্রের ইহুদীদের মতই অধিকার পাইবে। সকলে (চুক্তি - লেখক) মানিয়া চলিবে, কেহই ভঙ্গ করিতে পারিবে না।

৩৪. নিশ্চয়ই তালাবাহ গোত্রের উপদলগুলি প্রধান দলের সমান অধিকার পাইবে।


৩৫.নিশ্চয়ই ইহুদীদের সকল উপদলগুলি প্রধান দলের সমান অধিকার পাইবে।

৩৬ক। এবং নিশ্চয়ই তাহাদের কেহই মুহম্মদের অনুমতি ব্যতীত কোনো যুদ্ধে যাইতে পারিবে না।

৩৬খ। কেহ জখম হইলে তাহার বদলা নিবার ব্যাপারে কেহই বাধা দিতে পারিবে না। হত্যার জন্য হত্যাকারী নিজে ও নিজের পরিবারসহ দায়ী থাকিবে - অন্যথায় অবিচার হইবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাহাদের সহিত আছেন যাহারা এইগুলি অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলে।

৩৭ক। এবং নিশ্চয়ই ইহুদীরা বহন করিবে তাহাদের (যুদ্ধের) খরচ ও মুসলিমরা বহন করিবে তাহাদের খরচ। তাহারা একত্রে যুদ্ধ করিবে তাহাদের বিরুদ্ধে যাহারা এই দলিলের (সহিফা'র) যাহারা অংশীদার তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ইহাদের পরস্পরের সহিত পরামর্শ করিবে ও পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছা রাখিবে। সকলে (চুক্তি) রক্ষা করিবে,কেহই লংঘন করিবে না।

৩৭খ। নিশ্চয়ই কেহই বন্ধুদের প্রতি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিবে না এবং অত্যাচারিতকে সাহায্য করা হইবে।


৩৮. এবং নিশ্চয়ই ইহুদীরা বিশ্বাসীদের সহিত একত্রে যুদ্ধ করিলে নিজেদের খরচ বহন করিবে-(হুবহু ধারা ২৪-লেখক)


৩৯. এবং নিশ্চয়ই এই দলিলে (সহিফা-য়)অংশগ্রহণকারীদের জন্য মদীনার উপত্যকা সংরক্ষিত এলাকা।


৪০. এবং নিশ্চয়ই যাহাকে প্রতিরক্ষা দেওয়া হইয়াছে তাহাকে আদি প্রতিরক্ষিত ব্যক্তির মতই গণনা করা হইবে (এটুকু অস্পষ্ট - লেখক)।
তাহার কোনো ক্ষতি করা হইবে না এবং সে-ও চুক্তি লংঘন করিবে না।


৪১. এখানকার আদি অধিবাসীদের অনুমতি ব্যতীত কাহাকেও আশ্রয় দেওয়া যাইবে না।


৪২. এবং নিশ্চয়ই এই দলিলে (সহিফা-য়)অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যদি ঝগড়া বা হত্যা সংঘটিত হয়, যাহা হইতে সমস্যার উদ্ভব হইতে পারে, তাহা আল্লাহ এবং আল্লাহ'র রসুল মুহম্মদের (আল্লাহ তাঁহাকে পছন্দ ও রক্ষা করুন) কাছে আনা হইবে। এই দলিলকেযাহারা অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলে আল্লাহ তাহাদের রক্ষাকর্তা।


৪৩. এবং নিশ্চয়ই কোনো প্রতিরক্ষা দেওয়া হইবে না কুরাইশদিগকে এবং তাহাদের সাহায্যকারী দিগকে।


৪৪.এবং নিশ্চয়ই মদীনাকে আক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে তাহারা (মুসলিম ও ইহুদীরা) পরস্পরকে সাহায্য করিবে।

৪৫ক। (এটা আবু উবাইদ থেকে নেয়া হল কারণ ইবন হিশাম/ইবন ইশাকের ভাষা অস্পষ্ট- লেখক) যদি মুসলিমরা তাহাদের কোনো বন্ধু-গোত্রের সহিত ইহুদীদেরকে শান্তি স্থাপনের আহ্বান জানায় তবে ইহুদীরা তাহা করিবে। অপরপক্ষে ইহুদীরাও যদি একই আহ্বান করে তবে মুসলিমদের উপর তাহা বাধ্যতামূলক হইবে, যুদ্ধরত(মুসলিমদের বিরুদ্ধে- লেখক) কোনো গোত্র ব্যতীত।

৪৫খ। প্রতি দলের দায়িত্বে থাকিবে (শহরের?) যে অংশ তাহাদের মুখোমুখী।

৪৬। এই দলিলের (সহিফা'র) লংঘন না করিয়া অন্যান্য শরিকদের প্রতি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করিলে দলিলের অংশীদার হিসাবে আল আউস গোত্রের ও তাহাদের উপদলের ইহুদীরা একই অধিকার পাইবে। অন্যায়কারীরা নিজের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই পায় না এবং নিশ্চয়ই এই দলিলকে যাহারা অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলে আল্লাহ তাহাদের রক্ষাকর্তা।

৪৭। এবং নিশ্চয়ই এই দলিল (কিতাব) কোনো অত্যাচারী বা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারীকে রক্ষা করিবে না। যে কেহ (যুদ্ধে) যাইবে তাহাকে নিরাপত্তা দেওয়া হইবে;যে মদীনাতে রহিয়া যাইবে তাহাকে নিরাপত্তা দেওয়া হইবে; দেওয়া হইবে না শুধুমাত্র অত্যাচারী বা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারীকে।

এবং নিশ্চয়ই এই দলিলকে যাহারা অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলে আল্লাহ তাহাদের রক্ষাকর্তা,মুহম্মদের মতই, আল্লাহ তাঁহাকে পছন্দ ও রক্ষা করুন।

***********************************************

ধারাগুলো পড়লেন। এখন বলুন, রাষ্ট্রীয় সংবিধান তো দুরের কথা, এই শান্তিচুক্তি কি বাস্তবে কোনভাবেই প্রয়োগ করা সম্ভব?

না, সম্ভব নয়।

*************************************************************

লেখক ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য,- দ্বীন রিসার্চ সেন্টার হল্যাণ্ড-এর রিসার্চএসোসিয়েট, - মুসলিমস ফেসিং টুমরো'র জেনারেল সেক্রেটারী, - ফ্রিমুসলিমস কোয়ালিশন-এর ক্যানাডা প্রতিনিধি, - আমেরিকান ইসলামিক লিডারশীপ কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং খুলনা'র “সম্মিলিত নারীশক্তি”র উপদেষ্টা। শারিয়ার ওপরে বই "শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি" ও আন্তর্জাতিক প্রশংসিত ডকু-মুভি "হিল্লা", "নারী" ও "শারিয়াপ্রহেলিকা" - লণ্ডন ও টরন্টো'র স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষাক্লাসে দেখানো হয়

No comments:

Post a Comment