Wednesday, January 29, 2014

জামাতের সন্ত্রাসের শিকার বাদশা র চিঠি

ছাত্রলীগ করতাম বলেই শিবির ক্যাডাররা সেদিন গভীর রাতে শহীদ হবিবুর রহমান হল থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় টেনে হিচড়ে পার্শ্ববর্তী জিয়া হলের পিছনে নিয়ে যায়,লোহার পাইপ দিয়ে সারা শরীরে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় তারপর চাপাতি দিয়ে মাথায় কোপ দেয়,নারায়ে তাকবীর বলে দুই হাতের রগ কেটে দেয়,ডান পায়ে ১৩ টি কোপ দেয়..মৃত ভেবে আমায় ফেলে রেখে যায় ।
একই দিনে বিশ্ববদ্যালয়ের এস এম হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফারুককে হাত পায়ের রগ কেটে ম্যানহোলে ঢুকিয়ে হত্যা করে,হাত পায়ের রগ কেটে দেয় লেলিন ও ফিরোজ নামের আরো দুই ছাত্রের । বঙ্গবন্ধু হলের আসাদ ও কাওসার নামের দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে শিবির ক্যাডার রা । আমার সহপাঠীরা মুমূর্ষু অবস্থায় আমাকে ভর্তি করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে । ।পরদিন অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ।প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন,প্রতিমন্ত্রী টুকু,শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ,স্বাস্থ মন্ত্রী রুহুল হক,এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী নানক,বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজার রহমান ফিজার সহ শতাধিক এমপি মন্ত্রী সহ ছাত্রলীগ সভাপতি ও সেক্রেটারী আমার শয্যাপাশে এসে দাড়ান,এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা সহ অন্যরা সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন । ৩৩ দিন হাসপাতালে থাকার পর বের হয়ে দেখি পাশে কেউ নেই ।
চিকিৎসা পূনর্বাসন তো দুরের কথা কেউ একটু খোঁজ ও রাখেনি ।। সেই ঘটনার কোনও বিচারও হয়নি । চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে পরিবার হয়েছে নিঃস্ব আর আমি হয়েছি প্রতিবন্ধী..বেচে থাকার মতো একটা চাকরীর আশায় ঘুরেছি মন্ত্রী এমপি আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ।। কেউ কথা রাখেনি,বরং পেয়েছি লান্ছনা।। বৃদ্ধ বাবার পেনশনের টাকায় সংসার চলেনা,প্রতিবন্ধী হয়ে সংসারের বোঝা হয়ে আছি ।। ইচ্ছে করে আত্মহত্যা করি কিন্তু বৃদ্ধ বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তাও পারিনা । সেদিন ফারুক মরে গিয়ে বেচে গিয়েছে আর আমি আমরা বেচে আছি মরার মতো ।।
সেদিনের শিবিরের হামলায় আহত আসাদ আজ অন্ধ,কাওসার ফিরোজের অবস্থাও আমাদের মতো করুন,

প্লিজ আপু যদি সম্ভব হয় আমাদের করুন অবস্থা নিয়ে কিছু একটা লিখুন,যদি তাতে আপনার এই অভাগা ছোট ভাইদের জীবনের কোন গতি হয় ।।

Tuesday, January 28, 2014

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় ৩০ জানুয়ারী

বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার নতুন করে তদন্তের পর অতিরিক্ত এগারজনকে আসামি করে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

এই এগারজনের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া।এই অভিযোগ গঠনের ফলে চাঞ্চল্যকর ওই অস্ত্র পাচারের ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার সাত বছরের বেশি সময় পর বিচার কাজ শুরু হচ্ছে।অভিযুক্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক প্রভাবশালী কর্মকর্তাও রয়েছেন।

চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আহাদুর রহমানকে পুনরায় জেরা করা ও আদালত পরিবর্তনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদ সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। ফলে আগামী ৩০ জানুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণা করতে কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৩ জানুয়ারি এ মামলার বিচার শেষে রায় প্রদানের জন্য দিন ধার্য করেন চট্টগ্রামের একটি বিশেষ আদালত। এ অবস্থায় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কর্ণফুলী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুর রহমানকে পুনরায় জেরা ও আদালত পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মামলার তিন আসামি। আবেদনকারীরা হলেন এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মোঃ আবদুর রহিম, সাবেক উপপরিচালক লিয়াকত হোসেন ও সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান। আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী ও শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খন্দকার মোহাম্মদ দিলীরুজ্জামান।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তিন আসামির করা চারটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে ৩০ জানুয়ারি ধার্য তারিখে রায় ঘোষণায় আইনগত কোনো বাধা নেই। আবেদনকারী সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খানের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটিতে খালাসের সময় ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাদুর রহমান বাদী হয়ে দুটি মামলা (অস্ত্র ও চোরাচালান) করেন। দুই মাস পর মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তাতে স্থানীয় চোরাকারবারি হাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। বাকিদের প্রায় সবাই স্থানীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আদালতের নির্দেশে মামলা দুটির অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। নতুন ১১ জনকে আসামি করে ২০১১ সালের ২৬ জুন সিআইডি উভয় মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়। তারা হলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, সাবেক পরিচালক শাহাবুদ্দিন আহমদ, সাবেক উপপরিচালক লিয়াকত হোসেন, সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হক, সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন ও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া। শেষ দুজন পলাতক ও বাকিরা কারাগারে আছেন। 

কে এই রাজাকারের দালাল ড. পিয়াস করিম?- আবুল কাশেম হৃদয়

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৩

দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার ঢাকার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দেয়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. পিয়াস করিমের বাবা ও নানা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। তারা ছিলেন জেলা শান্তি কমিটির নেতা। শুধু তাই নয় মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা অ্যাডভোকেট এম এ করিম ও নানা জহিরুল হক লিল মিয়ার বাড়িতে গ্রেনেড চার্জ করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধের পর ড. পিয়াস করিমের বাবা অ্যাডভোকেট এম কে করিমকে দালালির অপরাধে দালালি আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি অনেকদিন কুমিল্লা কারাগারে বন্দি ছিলেন।

ড. পিয়াস করিম কুমিল্লা শহরের জজকোর্ট রোডের অ্যাডভোকেট এম এ করিমের ছেলে। তার বাবা অ্যাডভোকেট এম এ করিম মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলা শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতি করতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি হোমনার রামপুরে। পিয়াস করিমের বাবা এম এ করিম বিয়ে করেন আরেক মুসলিম লীগ নেতা জহিরুল হক লিল মিয়ার মেয়ে বাচ্চুকে।

জহিরুল হক লিল মিয়া এর আগে আওয়ামী মুসলীম লীগের সভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। ছিলেন যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় জহিরুল হক লিল মিয়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লার জজকোর্টের উত্তর পাশে জহিরুল হক লিল মিয়ার বাড়ি এবং জজকোর্ট রোডের এম এ করিমের বাড়িতে গ্রেনেড চার্জ করেছিলেন। আর এ গ্রেনেড চার্জে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল কবির বীর প্রতীক, বাহার উদ্দিন রেজা বীর প্রতীক ও মুক্তিযোদ্ধা খোকন। 

বাহার উদ্দিন রেজা বীর প্রতীকের কাছ থেকে জানা গেছে, মেলাঘর থেকে কমান্ডার হায়দারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা জহিরুল হক লিল মিয়া এবং এম এ করিমের বাসায় গ্রেনেড হামলা করা হয়। তাদের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর যাতায়াত ছিলো। তিনি জানিয়েছেন, কী পর্যায়ে গেলে একজন কমান্ডার তাদের বাড়িতে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তা বুঝে নিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলে দালাল আইনে গ্রেফতার হন ড. পিয়াস করিমের বাবা অ্যাডভোকেট এম এ করিম। তিনি অনেকদিন কুমিল্লা কারাগারে ছিলেন।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর বাবাকে বাঁচাতে পিয়াস করিম কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগে নাম লেখান। যদিও জেলা ছাত্রলীগে তার কোনো পদবি ছিল না। সে সময়ের জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রুস্তম আলী তার ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পিয়াস করিম কুমিল্লা মডার্ন স্কুল, কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশুনার পর আমেরিকায় চলে যান।

স্বাধীনবাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট রুস্তম আলীর কাছ থেকে জানা গেছে, পিয়াস করিম তার বাবাকে বাঁচাতে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত সাথে থাকেননি। তিনি জানান, পিয়াস করিম নকশালের রাজনীতির সাথেও যুক্ত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ড. পিয়াস করিম শুক্রবার রাতে এক টক শোতে শাহবাগের আন্দোলনকে অবৈধ আখ্যা দেন। এখবর শাহবাগে ছড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাকে রাজাকারের দালাল আখ্যা দিয়ে বয়কটের ঘোষণা দেয়া হয়। 

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও সম্পাদক, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ,
সাধারণ সম্পাদক, কুমিল্লা প্রেসক্লাব

Monday, January 27, 2014

নিউজ টুইস্টিং: স্যাম্পল প্রথম আলো

আমার ব্লগ লিখেছেনঃ চোর (তারিখঃ মঙ্গলবার, ২৮/০১/২০১৪ - ০০:১৯)

৪ টি সংবাদের শিরোনাম দেখা যাক:

১) নেতাদের হাত সোনার নৌকায়, শিশুরা না খেয়ে রাস্তায় (প্রথম আলো প্রিন্ট ভার্সন, ২৫শে জানুআরি, ২০১৪, আপডেট ০২:১১)

২) সোনার নৌকা বিক্রির টাকা দান করলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (প্রথম আলো, অনলাইন ভার্সন, ২৫শে জানুআরি, ২০১৪, আপডেট ২১:২৪)

৩) রাজসিক সংবর্ধনা: বর্ণিল তোরণ আর সোনার নৌকা (প্রথম আলো, প্রিন্ট সংস্করণ, ২৭শে জানুআরি, ২০১৪, আপডেট ০০:১৪)

৪) মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র: শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না (প্রথম আলো, অনলাইন ভার্সন, জানুআরি ২৭, ২০১৪, আপডেট ১৯:৪৩)

---------------

এখানে ইস্যু ২টা: 

ক)সোনার নৌকা উপহার নেয়ার বিলাস, 

খ)শিশুদেরকে না খাইয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা।

-------------------

একটা নিউজের ফোকাস কি, সেটা তার শিরোনামই নির্ধারণ করে। এই নিউজগুলোর শিরোনাম থেকে দেখা যায়, প্রথম নিউজে রাজনৈতিক নেতাদের (এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম) হাতে উঠেছে উপহারপ্রাপ্ত সোনার নৌকা, যেখানে এই নেতাকে সম্বর্ধনা দিতে শিশুদেরকে না খাইয়ে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। খুবই হৃদয়-বিদারক দৃশ্য। নেতা নিজে বিলাশবহুল সোনার নৌকা উপহার নিচ্ছেন। আবার শিশুদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ নেই, তাদেরকে জোর করে দাঁড়িয়ে রাখা হচ্ছে তাকে সম্বর্ধনা দিতে!

দ্বিতীয় নিউজে দেখা যায় সোনার তৈরি সেই নৌকা বিক্রয়ের টাকা তিনি দান করে দিয়েছেন একটি প্রতিবন্ধী শিশুসংস্থায়। তবে উল্লেখ্য, প্রতিমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শিশুদের অনেকে ক্ষুধায় কাহিল হয়ে পড়লেও দুপুরে তাদের কাউকে কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ দুইটা ইস্যুর ১টা সুরাহা হলো।

তৃতীয় লেখাটা একটা কলাম, যা ঘটনার ২দিন পরে দুই ইস্যুকে ফোর্স করেই লেখা হয়েছে, যদিও আমরা জানি একটি ইস্যু ইতিমধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এটা অবশ্য সম্ভব। একটা কলাম প্রোসেস করতে সময় লাগে। তাছাড়া আলী ইমাম মজুমদারের লেখা, সোহরাব হাসান বা আসিফ নজরুলের না। সুতরাং প্রেস পর্যন্ত পৌঁছাতে একটু সময় লাগবেই।

চতুর্থ নিউজে দেখা যায়, প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটা সার্কুলার জারি করেছে যে, শিশুদেরকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। অর্থাৎ দ্বিতীয় ইস্যুতেও সরকারের টনক নড়লো।

এই চারটি নিউজ এক করলে যেটা দাঁড়ায়, তাহলো 'সরকারের' অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রথম আলো খুব সোচ্চার। প্রথম আলোর নিউজের চাপেই সরকারে টনক নড়েছে। অর্থাৎ সরকারকে সাইজে রাখতে দেশ ও জনগণের সেবার প্রথম আলো প্রকৃত বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করছে।------------------------------

সাদা চোখে মোটামুটিভাবে ওরকম একটা ইম্প্রেশনই সৃষ্টি হয়। কিন্তু চোখটা খুলে আরেকটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে চেষ্টা করে দেখি অন্য কিছু দেখা যায় কিনা।

নিউজ ২-এই আছে,

ভবিষ্যতে তাঁকে আর এ ধরনের উপহার না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানেই তিনি এ উপহারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় একটি প্রতিবন্ধী সংস্থায় দান করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

অর্থাৎ প্রথম আলো প্রথম নিউজটা করার আগেই প্রতিমন্ত্রী বিলাসবহুলভাবে চিত্রিত করা উপহারটির ব্যাপারে তার অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। এবং ওই অনুষ্ঠানেই উপহারটির অর্থ প্রতিবন্ধী শিশুদের সংস্থায় দান করার কথা বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, প্রথম আলো চাপ প্রয়োগের আগেই মন্ত্রী কাজটি করে ফেলেছেন!

এক্ষেত্রে অবশ্য প্রথম আলো মন্ত্রীকে ভবিষ্যতদ্রষ্টা হিসেবে প্রচার করতে পারে। অর্থাৎ প্রথম আলো একটা চাপ-নিউজ করবে, এটা তিনি আগে থেকেই জানতেন। তাই ওই ঘোষণা দিয়েছেন! 

এখানে আরেকটা পয়েন্ট উল্লেখযোগ্য হলো, প্রিন্টভার্সনে, যেটাই মূলপত্রিকা এবং বেশিরভাগ পাঠকের হাতে পৌঁছায়, খবরের এই অংশটুকু চেপে যাওয়া হয়েছে!

এবার ইস্যু খ; অর্থাৎ শিশুদেরকে না খাইয়ে রাখার ব্যাপারে সার্কুলারের বিষয়ে আসা যাক। মন্ত্রণালয় কি প্রথম আলোর চাপেই এই ইস্তেহার জারি করেছে, নাকি এরকম নিয়ম-কানুন আগেই ছিলো?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে প্রথম নিউজটায় (২৫ তারিখ)।

 সেখানে নিউজটা শুরুই হয়েছে এভাবে,

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে মন্ত্রী-সাংসদদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার চলছেই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে রাস্তায় কষ্ট দিয়ে মন্ত্রী-সাংসদেরা নিজ এলাকায় সংবর্ধনা নিচ্ছেন, গ্রহণ করছেন সোনার নৌকা উপহার।

দেখা যাচ্ছে, প্রথম নিউজটা লেখার সময়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এরকম নির্দেশনা বলবৎ ছিলো! তাহলে প্রথম আলো চাপ দেয়ার সময় পেলো কই?

এক মন্ত্রীকে না হয় ভবিষ্যতদ্রষ্টা হিসেবে চালানো যাবে; কিন্তু পুরো মন্ত্রণালয়কে কি সেই আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দেয়া ঠিক হবে!

দেখা যাচ্ছে, দুইটা ইস্যুর কোনোটাতেই প্রথম আলোর চাপের কোনো ভূমিকা নাই। সরকারের মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় আগে থেকেই এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে রেখেছে। তাহলে এই ক্রেডিট ছিনতাইয়ের চেষ্টা কেন?

অবশ্য সুশীলদের নিয়ে এই সমস্যা, এরা গাছেরটাও খাবে, তলারটাও কুড়াবে। সারাক্ষণ সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রেখে প্রকারান্তরে যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে সুবিধা করে দিবে। আবার যখন কোনোভাবেই সরকারকে ঠেকাতে পারছে না, তখন আবার ক্রেডিটের সময় আগে থালা পেতে দিবে!

--------------------------------

একটা উদাহরণ দিয়া শেষ করি। নোবেল ইনুচের ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানুআরির ১২ তারিখে এটি কি অন্তর্বর্তী সরকার নয়? আর্টিকেলে লিখেছে,

এই নির্বাচনের স্বরূপ আরও উন্মোচিত হয়েছে। আগে থেকেই বলা হয়েছিল, এই নির্বাচন হবে প্রহসনের নির্বাচন। ৫ জানুয়ারি সরকার গায়ের জোরে ‘পোকা খাওয়া’ নির্বাচন করে তা ভালোভাবে প্রমাণ করেছে। ভারত ছাড়া আর কোনো বিদেশি রাষ্ট্র, সরকার, এমনকি জাতিসংঘ পর্যন্ত এই নির্বাচন মেনে নিতে পারেনি।

ভোটারবিহীন নির্বাচনে ‘বিজয়ী’ দলের সরকারকে বৈধ বলার সুযোগ নেই।

এই হারামজাদাই মাত্র এক সপ্তাহ পরে জানুয়ারির ২০ তারিখে' বিএনপি এখন কী করবে' শিরোনামের আর্টিকেলে লিখেছে,

আশা করি খালেদা জিয়া, বিএনপি বা ১৮-দলীয় জোট এখন উপলব্ধি করতে পারছে যে ৫ জানুয়ারি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করা আরও কঠিন কাজ হবে। নির্বাচন যতই প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রহসনের হোক না কেন, বাস্তব সত্য হলো: একটা নির্বাচন হয়েছে। ১৪-দলীয় জোট নতুন সরকার গঠন করেছে। এটা বাস্তব। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই বিএনপিকে নতুন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সরকারকে অবৈধ বলা যাবে না, জনসমর্থিতও বলা যাবে না। এটা নিয়ম রক্ষার প্রশ্নবিদ্ধ সরকার।

এক সপ্তাহের মধ্যেই সরকার অবৈধ থেকে বৈধ হয়ে গেছে!

এই না হলে সুশীল!

https://www.amarblog.com/index.php?q=chor%2Fposts%2F176921
(লেখার বক্তব্য সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব মত)

Sunday, January 26, 2014

সংগীতে অশিক্ষিত, অদক্ষ, বেরসিক ও সাংস্কৃতিক গুন্ডাদের রাজত্ব : কবির সুমন


এত বড় একটা ভূখণ্ড। উপমহাদেশ। এত রকমের মানুষ, তাদের এত রকমের ভাষা। জাতীয়, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অভ্যেস ও বদভ্যেস, রীতি, পোশাক। গানবাজনাতেও কত বৈচিত্র। ধ্রুপদী সংগীত তো হিন্দুস্তানি ও কর্নাটকি এই দুই ভাগে স্পষ্ট বিভক্ত। তেমনই পল্লিগীতি, লোকসংগীতের অজস্র আলাদা রূপ, সুরের ধাঁচা, বিশেষ বিশেষ স্বরের প্রয়োগ, তাল, ছন্দ। আমরা বাঙালিরা, বিশেষ করে স্কুল-কলেজে পড়া সংস্কৃতিমান বাঙালিরা, কথায় কথায় বাউল-ভাটিয়ালি আওড়াই। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে নানান শহুরে ব্যান্ড দেশি-বিদেশি নানান যন্ত্রের সঙ্গতে সেই সব গান গেয়ে-বাজিয়ে নাম করেন, টাকা করেন, বেশ করেন। কিন্তু হাঙ্গেরির সংগীতরচয়িতা ও পিয়ানোশিল্পী বেলা বার্টোক (১৮৮১-১৯৪৫) যেমন নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে হাঙ্গেরীয় পল্লিগীতির স্বরলিপি করে রেখেছিলেন, রেকর্ডিং-ও করেছিলেন সে যুগের অনুন্নত যন্ত্র দিয়ে, আমাদের দেশে কেউ তা করেননি। করে থাকলেও, খুব সীমিত ভাবে। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের উপমহাদেশ সংগীত ও স্বরলিপিকে এক জায়গায় আনতে পারেনি আজও। তার ফলে এক দিকে দেখা দিয়েছে ব্যাপক সাংগীতিক নিরক্ষরতা, অন্য দিকে বিস্মৃতি। স্বরলিপি লেখার রীতি না থাকায়, ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আমাদের দেশে, বিশেষ করে নগরসভ্যতার বাইরে, কী ধরনের সুর-তাল ছিল, গানবাজনার কাঠামো ও রূপগুলো কেমন ছিল, সেই ধারণা আমাদের সীমিত ও গোলমেলে। গুরুশিষ্য পরম্পরার দৌলতে ধ্রুপদ খেয়াল ও ঠুংরির বেশ কিছু ‘গান’ দীর্ঘকাল থেকে গেলেও কালের স্রোতে সেগুলির মধ্যে নতুন নতুন উপাদান ঢুকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। ঘরানার হেরফেরেও ‘গান’-এর রূপে, এমনকী ‘কথা’তেও পার্থক্য লক্ষ করা গিয়েছে।

স্বরলিপি না থাকায় আমাদের দেশের সংগীত ও সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কেউ কেউ বলবেন, তা কেন, আমাদের সংগীতবিদ্যা তো গুরুমুখী। গুরুর মুখে শুনে শুনে ছাত্রছাত্রীরা চিরকাল শিখে যাবে। দীর্ঘকাল সেটাই হয়েছে। বাদ সেধেছে চলতি যুগ ও তার হালচাল। ভাল শিক্ষক এখন পাওয়া ভার। সংগীতশিক্ষক হিসেবে যে-সে বাজারে নেমে পড়েছে। কোনও কোনও নবীন শিল্পী আবার গানের বাজারে একটু নাম করে গিয়ে শিক্ষকতা করতে শুরু করেছেন। এঁদের কাছেই অনেকে যাচ্ছেন গান শিখতে। যা শিখছেন, তার নমুনা আমরা টেলিভিশন চ্যানেলে-চ্যানেলে পাচ্ছি। সকলেই এখন গায়ক-গায়িকা, সকলেই গীতিকার-সুরকার, যেন শিক্ষার, দক্ষতা অর্জনের কোনও প্রয়োজনই নেই বাংলা গানের ক্ষেত্রে।

স্বরলিপি করে রাখার রীতি থাকলেই যে কোনও গানের ঐতিহ্য সুরক্ষিত হবে, তার স্থিরতা নেই; অন্তত আমাদের বাংলায়। রবীন্দ্রনাথের গানের ওপর কপিরাইট উঠে যাওয়ার পর থেকে বিজ্ঞাপন-গান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশির ভাগ এমন ভাবে, যেন তাঁর গান নিয়ে যথেচ্ছাচার না করলে আমাদের ফাঁসি হবে বা মাওবাদী হিসেবে জেলে পচতে হবে। 

একটি বাংলা ছায়াছবিতে ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ গানটির সঙ্গে ‘হুল্লা হুল্লা’ ধ্বনি প্রযুক্ত হওয়ায় আমি কয়েক জন শিক্ষিত বাঙালি তরুণের কাছে কারণটা জানতে চেয়েছিলাম। তাঁদের কেউ কেউ আবার ছবিও করেন, অভিনয় করেন। উত্তর পেলাম কেন? ‘পাগলা হাওয়া’, ‘পাগল আমার মন’ এই সব কথা তো মূল গানেই আছে। পাগলা আর পাগল আছে, সুতরাং হুল্লা হুল্লা হুপ্ হুপ্। একই যুক্তিতে তা হলে ‘পাখি বলে চাঁপা’ গানটিতে কাক-সমেত নানা রকমের পাখির ডাক জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। 

সংগীতে অশিক্ষিত, অদক্ষ, বেরসিক ও সাংস্কৃতিক গুন্ডাদের রাজত্ব প্রায় কায়েম হয়ে যাওয়ায় যা যা হওয়ার, হচ্ছে তাই-ই। কথায় কথায় আমরা যাঁদের উদাহরণ দিই, সেই সাহেবদের দেশে কেউ এক বার চেষ্টা করে দেখুন তো শুবার্টের আর্টসং, গার্শ্উইনের সুর করা গান, বের্টোল্ট ব্রেশ্টের লেখা কুর্ট ও ভাইল বা হান্স আইজ্লারের সুর করা গান নিয়ে সমকালীন বাঙালিসুলভ যথেচ্ছাচার করতে! 

স্বরলিপি থেকে নড়তে পারবেন না কেউ। মূল সুর নিয়ে বা মূল সুরের সঙ্গে নিজেদের খামখেয়াল জুড়ে কোনও গান রেকর্ড করা বা সেই গান কোনও ছায়াছবিতে প্রয়োগ করার কথা কেউ ভাবতেও পারবেন না। আর তার দরকারই বা কী। প্রয়োজন মতো নতুন গান বানিয়ে নিলেই তো হয় ।

শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার বিচার অবিলম্বে শেষ করতে হবে:মোনায়েম সরকার

বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী, সাবেক কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা শাহ এএমএস কিবরিয়া ২৭ জানুয়ারি, ২০০৫ রাত ৮টায় ঘাতকের গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময়টায় তিনি ব্যস্ত থাকতেন সিরডাপ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবৃস্থার সংস্কার’ নিয়ে। বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি এ নিয়ে সিরিয়াস লেখালেখি করছিলেন শেষের দিনগুলোতে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানও চেয়ে নিয়ে এ বিষয়ে তার একটি লেখা ছাপালেন শেষ যাত্রার আগের দিন।

আমি প্রস্তাব করেছিলাম, এ বিষয়ে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটা সেমিনার করার জন্য। তিনি রাজি হয়েছিলেন। তারপর সেমিনার পেপারও তৈরি করে ফেললেন। মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় ছিল। ওই বয়সেও দ্রুত লিখতে পারতেন। তার ইংরেজি লেখাও ছিল চমৎকার। সারাজীবন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে ইংরেজি ভাষায় লিখতেন। অভ্যাসমতো তিনি ওই সেমিনার পেপারটিও বাংলা ও ইংরেজি দু’ভাষাতেই তৈরি করেছিলেন। ফোনে তার সঙ্গে সেমিনারের প্রস্তুতি নিয়েও কথা হল। কিন্তু সিরডাপ মিলনায়তনে ৩১ জানুয়ারি সেমিনার আর করা হল না। এর আগেই চিরবিদায় নিলেন শামস কিবরিয়া।
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল শাহ এএমএস কিবরিয়ার নেতৃত্বে। তার ইচ্ছায় আমি ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক পদের দায়িত্ব নিই। ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে অসংখ্য সেমিনার করেছি তার নেতৃত্বে। মনোগ্রাম, পুস্তক-পুস্তিকাসহ ২৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে ফাউন্ডেশন থেকে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ওপর ২২ পর্বের সিডি-ডিভিডি নির্মিত হয়েছে। শামস কিবরিয়ার উৎসাহ ও প্রেরণায় বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ প্রকল্পের পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজও সম্পন্ন করেছিলাম আমরা। বাংলা একাডেমির সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক দেরিতে হলেও একাডেমি ২০০৮ সালের বইমেলায় গ্রন্থটি প্রকাশ করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (প্রতিরোধ শিবির, মুজিবনগর সরকার ও শরণার্থী শিবিরের) ওপর তিনটি থিমেটিক ম্যাপ, আরও কত কী! কত স্মৃতি, কত কথা! ভাবতে গেলে এই বয়সেও বার বার শিশুর মতো কেঁদে উঠি।
সফল আমলার জীবনশেষে ১৯৯১-এ তার আওয়ামী লীগে যোগদানের পেছনে আমারও বিশেষ ভূমিকা ছিল। শেখ হাসিনা তাকে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করতে দ্বিধা করেননি। তিনি সভানেত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা পদের দায়িত্বে আসীন হন তার মেধা ও প্রজ্ঞার গুণে। ১৯৯৬ ও ২০০১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় দলের পক্ষ থেকে মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে আমিও নির্বাচন-পরিচালনা কাজে যুক্ত ছিলাম। সেই সময় রাষ্ট্রপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে অধিকাংশ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে তার নেতৃত্বেই আমরা গিয়েছি। প্রেস মিট করেছি কতবার। দেখেছি তার বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য, বলার ও বোঝানোর ক্ষমতা। ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে এসে আওয়ামী লীগ তাকে অর্থমন্ত্রী বানিয়ে যে ভুল করেনি, তা প্রমাণ করেছেন তিনি। আমি অর্থনীতি ভালো বুঝি না। কিন্তু কিবরিয়া ভাই যখন বলতেন, পার্লামেন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতেন কিংবা মৃদুভাষণে বসে বিভুরঞ্জন বা হাসান মামুনকে ব্রিফ করতেন, আমার কাছে খুব সহজবোধ্য মনে হতো।
মৃদুভাষণ বের করার সময় তিনি আমার ওপরই নির্ভর করলেন বেশি, বললেন- যাদের নেয়া হল, আপনিই তো তাদের ভালো করে চেনেন। আমি হয়তো কাজের মধ্য দিয়ে চিনব। তিনি অল্প দিনেই তাদের চিনলেন, তাদের যোগ্যতায় আস্থা রাখলেন। মৃদুভাষণ অফিসে এলে প্রায়ই আমাকে যেতে বলতেন। বিদেশে গেলে বলতেন, আপনি সব দেখবেন। নিজের চেয়ার দেখিয়ে বলতেন, আপনি এখানে বসবেন।
নিহত হওয়ার আগে কিবরিয়া ভাইয়ের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। দেশে ও বিদেশে তার চিকিৎসা চলছিল। আমাদের উৎকণ্ঠা ছিল। আবারও নির্বাচনে দাঁড়ানোর দৃঢ় মনোভাব ছিল তার। আমি কিবরিয়া ভাইকে বলেছিলাম, নির্বাচন না করে ’৯৬ সালের মতো অর্থমন্ত্রী হতে পারেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সরকার সাহেব, এমপি না হয়ে মন্ত্রী হলে অন্যেরা করুণার দৃষ্টিতে দেখে।’
দেশ নিয়ে, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার গভীর উৎকণ্ঠা ছিল। তিনি বলতেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার না হলে জনগণ চাইলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। হরতালে তার ব্যক্তিগত আপত্তি ছিল, তারপরও তিনি বলতেন- ওরা যা করছে তাতে হরতাল ছাড়া করবেনটা কী। বেগম জিয়ার সরকারকে তিনি বলতেন, ‘টেফ্লন সরকার’। বলতেন, এর গায়ে কোনো কিছুই যেন লাগছে না, সব পিছলে যাচ্ছে।
দেশে মৌলবাদী উত্থানের শংকা তার মনে ছিল পুরোপুরি। বলতেন, মোনায়েম সাহেব, আপনি তো গ্রামে যান না, তাই বুঝতে পারছেন না, ভেতরে ভেতরে কী সর্বনাশ হয়ে চলেছে। গ্রামগঞ্জে সন্ত্রাসী মৌলবাদীরা মসজিদ ও মাদ্রাসাভিত্তিক ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। ক্ষমতায় গেলেও আমরা এই নেতিবাচক পরিবর্তনের ধারা ঠেকাতে পারব কি না কে জানে। মাঝে মাঝে খুব হতাশও হয়ে পড়তেন। বলতেন, চলেন দেশ-টেশ ছেড়ে চলে যাই। ওরাই থাকুক এ দেশে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা হামলায় কিবরিয়া ভাইয়ের সতর্ক বাণীর কথা স্মরণ হয়েছিল।
কিন্তু তার কাজকর্মে হতাশার কোনো ছাপ দেখতাম না। দারুণ প্রত্যয়ী হয়ে তিনি লিখতেন, বক্তৃতা করতেন। হবিগঞ্জে জীবনের শেষ যে বক্তৃতা করেছেন, তাতেও রয়েছে সেই প্রত্যয়ী মনোভাব। ‘বাংলাদেশের সামাজিক বিবর্তন কি পশ্চাতমুখী?’ শিরোনামে তার শেষ যে অসমাপ্ত লেখাটি পাওয়া গেছে, তা পড়লে বোঝা যাবে তার উৎকণ্ঠা। দেশের মানুষও তো উৎকণ্ঠিত। মৃদুভাষণ লিখেছে- ‘উদ্বিগ্ন মানুষের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে বেশিদিন দাঁড়িয়ে থাকতে দেয়া হল না।’
কিন্তু দেখতে তো পাচ্ছি, শামস কিবরিয়ার মৃত্যু গোটা জাতিকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বিদেশেও তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। তার মতো একজন সজ্জন মানুষকেও যদি এভাবে হত্যা করা হয়, তাহলে এ দেশে কে নিরাপদ? দেশের ভবিষ্যৎই বা কী? তার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে উদ্বেলিত হয়েছে জাতি ও বিশ্ব জনমত। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছে রাস্তায়। সরব প্রতিবাদও জানানো হয়েছে একের পর এক হরতাল করে। দেশের বিশিষ্টজনেরা নতুন করে নেমে এসেছিল প্রতিবাদে।
মেধাবী ছাত্র, রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র সচিব, অর্থনীতিবিদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী এসব অভিধা ছাড়িয়ে তিনি একজন প্রাজ্ঞ দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ও দার্শনিক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তাই মানুষের শোকে-অশ্র“তে মহীয়ান হয়ে উঠেছে কিবরিয়া ভাইয়ের আত্মদান। আমরা তার প্রিয়জনেরাও শোক ভুলে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার অবকাশ পাচ্ছি যেন।
কিবরিয়া পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে আসমা ভাবী, ড. রেজা ও ড. নাজলী শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশে-বিদেশে যে সাহসী প্রতিবাদী ভূমিকা রাখছেন- তা কিবরিয়া ভাইয়ের আপসহীন সংগ্রামী ভূমিকারই প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। 

স্ট্র্যাটেজিক কারণেই আমেরিকা বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী : কে কে গঙ্গোপাধ্যায়


শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীরূপে শপথগ্রহণ করলেন।এই নির্বাচনের পথ পাড়ি দেয়া মোটেই সহজ ছিল না। আগামী দিনেও শাসনক্ষমতা পরিচালনা করা সহজ হবে বলে মনে হয় না। 

কারণ বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার সরে যাওয়া এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা ওই সময় সরকার এবং নির্বাচন পরিচালনা করার দাবিতে, নির্বাচন বানচাল করার সব রকম প্রয়াস করেছেন।

এ কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম ইত্যাদি ধর্মীয় কট্টরপন্থী সংগঠনকে। এই দলগুলো পাকিস্তানপন্থী। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকারের দমননীতির এরা সহযোগী ছিলেন। লাখ লাখ নিরপরাধ সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিদগ্ধ সমাজের জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিদের এরা নৃশংসভাবে কতল করেছিল। আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার চলছে। তাদের এক প্রধান কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার ব্রিটিশ এবং মার্কিন সরকার এই রায় কার্যকর না করার জন্য শেখ হাসিনা সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এই বিএনপি সমর্থিত কট্টরপন্থীরা দেশব্যাপী সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল সংখ্যাঘু সম্প্রদায়সহ বহু মানুষকে হত্যা, বাড়ি, দোকান বাজার লুট, বিভিন্ন গ্রামে, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে, রাস্তা অবরোধ, বাস অটো জ্বালিয়ে দেশব্যাপী সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে কোনস্থানেই প্রার্থী দেয়নি।

কিন্তু শেখ হাসিনা তাঁর সঙ্কল্পে অনড়, অটল ছিলেন। অনন্ত সাহস এবং ধৈর্যের সঙ্গে তিনি পরিস্থিতির মোকাবেলা করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চলবে। তিনি ঘোষণা করেছিলেন এবং বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থা করে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বপ্রকার সহায়তা করেন। ফলে ১৫০টির অধিক আসনে আওয়ামী লিগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে।
ধারণা করা অবাস্তব হবে না, আগামী দিনে বেগম খালেদা জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত এবং হেফাজতে ইসলাম ইত্যাদি সংগঠন প্রতি পদে সমগ্র রাষ্ট্রে অরাজকতা সৃষ্টি করে চলবে। প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর হস্তে আইনের শাসন বলবত করতে হবে। এই ধর্মীয় কট্টরপন্থী সংগঠনগুলো পাকিস্তানের সর্ববিধ সাহায্য এবং সমর্থন লাভ করে চলেছে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কয়েকটি ধনী ইসলামিক রাষ্ট্র এদের বিভিন্ন এনজিও মারফত অর্থ সাহায্য দিয়ে চলেছে। তাদের উদ্দেশ্য আবার একটু ভিন্ন। যেমন বাংলাদেশে কট্টর ইসলামিক সরকার যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে তার প্রয়াস করা। বিশেষ করে বাংলাদেশী সাহিত্য সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য এবং ভা-ার বাংলাদেশে বর্তমান, তা ধ্বংস করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জায়গায় একমাত্র ইসলামিক জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ থেকে যত বেশি সংখ্যায় সম্ভব ইসলাম ধর্মীয় ব্যক্তিদের ভারতে অনুপ্রবেশ ঘটানোর ব্যবস্থা করা। ফলে ভবিষ্যতে এমন একদিন আসবে, যেদিন ভারতবর্ষে মুসলমান সম্প্রদায় প্রধান জনগোষ্ঠী হয়ে দেখা দেয়।সেজন্য দরিদ্র, ভূমিহীন, শিক্ষাহীন বাংলাদেশীদের হাতে মোটা টাকা এককালীন দান হিসাবে ধরিয়ে দিয়ে ভারতে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দেয়া। ভারতে জমি কিনে ঘর করে তারা ভারতীয় হয়ে বসবাস আরম্ভ করবে। বাংলাদেশ সরকার তাদের আর কোনদিন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করবে না। এই বিষয় সেই সব অনুপ্রবেশকারীদের প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দেয়া হয়।

ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে ভোটে জয়লাভই প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য। সে কারণে সেই সব দলের সদস্যরা বিভিন্ন প্রশংসাপত্র জুগিয়ে দিয়ে এদের হাতে ভোটার কার্ড ধরিয়ে দিতে কাল হরণ করেন না। একটাই শর্ত, আগামী নির্বাচনে সেই দলের প্রতীক চিহ্নে ভোট দিতে হবে। অন্যায়ভাবে ভারতে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার অনেক প্রয়াস থমকে গিয়েছে। কারণ ভোটার পরিচিতি কার্ড দেখানোর পর প্রশাসন কোন কিছু করার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। এই সব রাজনৈতকি দলের কাছে ভোটে জয়লাভই একমাত্র লক্ষ্য রাষ্ট্রের উন্নয়ন, অনুন্নয়ন, সুরক্ষা, অসুরক্ষা কোন ধর্তব্যের বিষয় নয়। শুধু এই রাজ্যই নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, এমনকি জম্মু কাশ্মীর রাজ্যেও এমন ভোটার পাওয়া যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।
পাকিস্তান আজও মনে করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষ পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান বিভাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেননি, ভারতীয় সামরিক বাহিনীই এই অবস্থার জন্য দায়ী। অতএব তারা বাংলাদেশের জন্মাবধি সেই রাষ্ট্রে দেশদ্রোহী, পাকিস্তানপন্থীদের সর্বতোভাবে সাহায্য এবং সমর্থন দিয়ে এসেছে, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন সেই সব কট্টরপন্থী, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে সমর্থন করে চলেছে, বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। পাক-মার্কিন সম্পর্ক সেই সিয়েটোসেন্টো চুক্তির আমল থেকে চলে আসছে। ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতির বিশ্বাসী কিন্তু মার্কিন সরকার অস্ত্র উপকরণ বিক্রয়ে আপেক্ষিক মূল্য ছাড়াও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দানে যেমন ভারতে সেইসব অস্ত্র নির্মাণের লাইসেন্স দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে অনীহা প্রদর্শন করায় বাধ্য হয়ে ভারতকে সোভিয়েত ইউনিয়নের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল। অতএব পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার এবং ভারত শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে একটি বাজার মাত্র। এমনকি পরমাণু চুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট সাহায্য করা সত্ত্বেও ভারত নতুন পরমাণু চুক্তির বরাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়নি। বিদেশী মূলধনের বিনিয়োগের বিষয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশানুরূপ সুযোগ পায়নি। এর কারণ ভারতের প্রবল বিরুদ্ধ জনমত।


এইসব কারণে পাকিস্তানের ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধের বিশেষ করে কট্টর জিহাদী সংগঠন, আইএসআই এবং পাক সামরিক বাহিনীর সাহায্যের (২৬/১১ সমেত), অকাট্য প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে পায়নি। যদিও হেডলি গ্রেফতার হয়ে তাদেরই হেফাজতে রয়েছে বহুদিন। বর্তমানে চীন সমগ্র দক্ষিণ চীনসমুদ্র তাদের রাষ্ট্রীয় পরিধির অঞ্চল বলে অভিহিত করেছে। জানিয়েছে, ওই অঞ্চল তাদের প্রতিরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। সেনকাকুু দ্বীপগুলোর মালিকানা নিয়ে জাপান ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম সীমায় পৌঁছেছে। স্বভাবতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সমর্থনে আসরে পদার্পণ করেছে। এমতাবস্থায় “দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রের সংগঠন” (এ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস) যথেষ্ট সঙ্কটের সম্মুখীন। এই অঞ্চলে তারা কোনভাবেই বৃহৎ শক্তির রেষারেষি পছন্দ করছে না।

বাংলাদেশ ভূখন্ড ভৌগোলিক দিক দিয়ে এই অঞ্চলের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের নিরাপত্তার চুক্তি রয়েছে। চীন তার রাষ্ট্রীয় সীমার চারদিকে বিভিন্ন রাষ্ট্রে অর্থ সাহায্য এবং উন্নয়নের সহায়তা করে তাদের উপস্থিতি এবং প্রভাব বাড়িয়েছে। এমতাবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ ভূখন্ডে তাদের উপস্থিতি এবং প্রভাব বিস্তার করতে আগ্রহী কিন্তু এ কাজটি খুবই সহজ হয়ে যায় যদি জামায়াত সমর্থন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে।


এই সমস্ত কিছু বিবেচনা করলেই কী কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনা সরকারকে পুনর্নির্বাচনে যাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন, তা কিছুটা পরিষ্কার হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার সেইসব উপদেশে কর্ণপাত করেনি। আগামী দিনে বিএনপি এবং জামায়াত সম্মিলিতভাবে এই সরকারকে গদিচ্যুত করার জন্য কী ধরনের আন্দোলনে নামবে, সে চিন্তাও তারা করেননি। তারা কঠোর হস্তে সেইসব অপচেষ্টার মোকাবেলা করতে বদ্ধ পরিকর।

আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের মুক্তিসেনা ও তাঁদের সমর্থকরা শেখ হাসিনাকে শক্তি যোগাবে। ইতোমধ্যে ভারত এবং রাশিয়া শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে। দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

লেখক : ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল

যুদ্ধাপরাধ বিচার ও নতুন ষড়যন্ত্র : তুরিন আফরোজ


একাত্তরে সংঘটিত অপরাধের বিচার চেয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে গত ১৫ জানুয়ারি মামলা করেছে প্রজন্ম ’৭১ নামের একটি বাংলাদেশী সংগঠন।

বাংলাদেশে আমরা যে ‘প্রজন্ম ’৭১-কে চিনি, যার সভাপতি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের পুত্র সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর, যে সংগঠনকে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ ২০০০ সালে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক’-এ সম্মানিত করেছে ,এটি সেই সংগঠন নয়

অপরাধের বিচার দাবি করা, যে কোন সভ্য সমাজেরই নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর সেখানে অপরাধটি যদি হয় গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ তাহলে সামাজিক-রাজনৈতিক কোন রকম আপোসের প্রশ্নই আসে না। এ সকল ঘৃণ্য অপরাধের বিচার হওয়া মানব সভ্যতার জন্য অপরিহার্য।
কিন্তু বিচার দাবি করাটাই যদি কোন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে দাঁড়ায়, আইনী জটিলতার সুযোগ নিয়ে প্রকৃত অপরাধী ব্যক্তি বা সংগঠনের রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন ভূলুন্ঠিত হয় মানবতা, সফল হয় অপরাধী-চক্রান্ত।
বিজয় লাভের পর থেকেই বাংলাদেশের জনগণ একাত্তরের সংঘটিত অপরাধের বিচার দাবি করে আসছে। এই দাবিকে সত্য মেনে প্রণীত হয়েছে ১৯৭২ সালের দালাল আইন এবং ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন।

১৯৭২-এ গঠিত হয়েছে দালাল আইনের অধীনে বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশ রাষ্ট্র শুধু আইন প্রণয়ন এবং ট্রাইব্যুনাল গঠন করেই থেমে থাকেনি, বরং দৃঢ়তার সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে প্রমাণ করেছে এই বিচার বিষয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জোর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

পঁচাত্তরপরবর্তী রাজনৈতিক মেরুকরণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে বাধ্য করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধ বিচারের অঙ্গীকার থেকে সরে দাঁড়াতে। রাজনৈতিক পরিম-লে যুদ্ধাপরাধী চক্রের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচারের দাবিটিকে ‘সামগ্রিক বিস্মৃতি’ এর অন্তরালে পর্যবশিত করার পুরোদস্তুর প্রয়াস চালানো হয় বছরের পর বছর।

 ধ্বংস করা হয় প্রয়োজনীয় দলিলপত্র, নিপীড়ন চালানো হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর, জাতিগত মগজ ধোলাইয়ের উদ্দেশ্যে একাত্তরের ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার নগ্ন-ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চালানো হয়।

১৯৯২ সালে ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলন’ সময়ের গতি পাল্টে দেয়। ‘গণআদালত’ থেকে যুদ্ধাপরাধ বিচারের দাবিটি আবারও ইতিহাসের রাজপথে নতুন স্লোগানের জন্ম দেয়, নতুন আবেগ নিয়ে আবির্ভূত হয়।
 কিন্তু থেমে থাকেনি বিচারবিরোধী চক্রান্ত। নিত্য নতুন কৌশল নিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে তারা একের পর এক মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আসছে।

॥ ষড়যন্ত্র ১৯৯৩ ॥

গণআদালতের অব্যাবহিত পরই হঠাৎ করে দেখা যায় দেশজুড়ে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিরুব্ধে একের পর এক ফৌজদারী আইনে মামলা করা হচ্ছে। এই তৎপরতায় অনেকেই যারপরনাই খুশি হলেন, ভাবলেন এই তো বেশ বিচার শুরু হয়ে গেছে।
 কিন্তু এই পুরো ব্যাপারটিই ছিল একটি গভীর চক্রান্তের অংশ। ফৌজদারী আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রচুর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মামলা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, এমনও হতে পারে যে একজন প্রকৃত অপরাধী বেকসুর খালাস পেয়ে যাচ্ছে। সুতরাং যুদ্ধাপরাধীরা নিজেদের লোক দিয়ে মামলা করিয়ে একবার খালাস পেয়ে গেলে তাদের আর পুনর্বার বিচারের সুযোগ থাকবে না। এতে লাভ অনেক  বিচারের নামে বিচারও হলো, আবার সসম্মানে খালাসও পেল। দায়মুক্তির এর চাইতে বেশি ভাল কৌশল আর কি-ই বা হতে পারে? 
জাহানারা ইমামের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সামাজিক প্রতিহতকরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই ‘পাইকারী দরে’ ফৌজদারী আইনের অধীনে মামলা দায়ের করার ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করা হয়েছে।

॥ ষড়যন্ত্র ২০০৬ ॥

এর পর যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয় দেশের বাইরে থেকে। রেমন্ড সোলেমান নামে এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী যুবক হঠাৎ করে অস্ট্রেলিয়ার আদালতে বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার চেয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বসে। আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি বেশ দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এরূপ মামলা দায়ের করায় প্রবাসী স্বঘোষিত আন্তর্জাতিক আইন বিশারদ একজন তো সোলেমানকে ‘বাঘের বাচ্চা’ নামে অভিহিত করে ফেললেন, তাঁর পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারণাও চালিয়ে গেলেন।
বললেন, নির্মূল কমিটি যা পারেনি, অস্ট্রেলিয়ার এক বাঙালী যুবক তা করে দেখিয়েছে।

 কিন্তু ষড়যন্ত্রটি ছিল অন্যরকম। কোনভাবে অস্ট্রেলিয়ার আদালত থেকে মামলাটি খারিজ করাতে পারলে প্রতিষ্ঠিত হবে যে, একাত্তরে পাকিস্তান বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেনি। এতে লাভবান হবে দু’পক্ষ ।
এক, পাকিস্তান রাষ্ট্র কলঙ্কমুক্ত হবে; দুই, পাকিস্তান রাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশী দোসররা পাবে দায়মুক্তি। এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ার কারণে মামলাটি অস্ট্রেলিয়ার কোর্ট গ্রহণ না করে ফেরত দিয়ে দেয়ায় সেই ষড়যন্ত্রটি সফলতার মুখ দেখতে ব্যর্থ হয়।
মজার ব্যাপারটি হলো, পরে অনুসন্ধান করে জানা যায়, এই সোলেমান ছিল একজন শিবিরকর্মী এবং আইএসআই-এর মদদপুষ্ট এবং অর্থাশ্রিত তথাকথিত ‘বাংলাদেশপ্রেমী’(!)।
 আর সেই যে আন্তর্জাতিক আইন বিশারদ যিনি সারাবিশ্বে ‘বাঘ মামা’ হয়ে সোলেমানের দায়েরকৃত মামলার পক্ষে ব্যাপক জনপ্রচারণা চালালেন, তিনি পরবর্তীতে ‘স্কাইপি কেলেঙ্কারির’ অন্যতম নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হলেন।

॥ ষড়যন্ত্র ২০০৯ ॥

২০০৮ সালের নির্বাচনপরবর্তী সময়ে যখন যুদ্ধাপরাধ বিচারের ইস্যুটি বাংলাদেশে নতুন গতি পায় ঠিক তখনই শুরু হলো আরেক নতুন ষড়যন্ত্র। এবার যুদ্ধাপরাধ বিচারবিরোধীরা নামল নতুন দাবিতে বিচার হলে তা করতে হবে ওঈঈ-তে।
সুতরাং রোম স্ট্যাটিউটে বাংলাদেশকে পক্ষ বানিয়ে ওঈঈ-তে বিচার না করা গেলে নাকি কোন বিচারই হবে না, ‘আন্তর্জাতিক মান’ লঙ্ঘিত হবে। সোলেমানের সেই ‘বাঘ মামা’-কে হঠাৎ দেখা গেল ঘন ঘন বাংলাদেশে আগমন করতে। উদ্দেশ্য একটাই - দেশীয় ট্রাইব্যুনাল নয়, বরং ওঈঈ-তে যেন যুদ্ধাপরাধ বিচারটি করা হয়।
 বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে জামায়াত-বিএনপি জোটও একই দাবি তুললো। তৎকালীন বিরোধীদলীয় অনেক প্রথিতযশা আইনজীবীকেও দেখা গেল নির্ভাবনায় দাবি জানাতে যেন ওঈঈ-তে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করা হয়। আর শুরু না হওয়াতে দেশে-বিদেশে সরকার পতনের আন্দোলনকে গতিশীল করার চেষ্টা চালানো হয়। 

কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, ওঈঈ-র কোন এখতিয়ার নেই ২০০২ সালের ১ জুলাইয়ের পূর্বে সংঘটিত কোন অপরাধের বিচার করার। তাহলে ১৯৭১-এ সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার কি করে ওঈঈ-তে করা সম্ভব? একটি অর্থহীন অবাস্তব দাবিকে সামনে রেখে যুদ্ধাপরাধ বিচারকে নস্যাত করাই ছিল এই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য।

॥ ষড়যন্ত্র ২০১৪ ॥

গত ১৫ জানুয়ারি হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাত্তরের অপরাধের বিচার চেয়ে অভিযোগ এনেছে প্রজন্ম ’৭১ নামক সংগঠনটি। 

মামলার কপি ১৯ জানুয়ারি জাতিসংঘ অফিস নেদারল্যান্ডের দূতাবাসে দেয়া হয়েছে। (জনকণ্ঠ, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪, পৃষ্ঠা-১, কলাম-২) ঐ একই তারিখে (১৯ জানুয়ারি) জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ এক বিবৃতিতে জানান যে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল বাংলাদেশের ভূখন্ডের বাইরে কোথাও নতুন করে গঠন করার পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। (প্রথম আলো, ২১ জানুয়ারি, ২০১৪, পৃষ্ঠা-১৪, কলাম-৮)

ঘটনাপ্রবাহে প্রতীয়মান হয় যে, গত ১৯ জানুয়ারি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলে একই সঙ্গে দুটো সংগঠন (প্রজন্ম ’৭১ ও জামায়াতে ইসলামী) বাংলাদেশে সংঘটিত একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক বিচার এবং এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। বিশ্বাস করার জন্য ঘটনাটি খুব বেশি কাকতালীয়। তবে এটুকু নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, যে দাবিটি প্রজন্ম ’৭১ তুলেছে তা দূরভিসন্ধিমূলক। 
কারণ—
প্রথমত,
প্রজন্ম ’৭১ নামক সংগঠনটি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিচার চেয়ে কোন দাবি এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে গঠিত তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউসন টিম বা মাননীয় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছে বলে আমার জানা নেই।
উপরন্তু ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন রায়ে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে যে, ১৯৭৩ সালের আইনের অধীনে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব। কাদের মোল্লার আপীলের রায়েও একই সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।
ইতোমধ্যে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের মাধ্যমে গঠিত তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউসন টিম। এই মর্মে বিশদ রিপোর্টও প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে (উযধশধ ঞৎরনঁহব, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, পৃষ্ঠা-১, কলাম-৬)।
সুতরাং দেশীয় একটি তদন্ত ও বিচারিক কাঠামো বহাল থাকা অবস্থায় এবং সেখানে তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পরও কেন তারা ওঈঈ-তে মামলা দায়ের করতে গেলেন এটা মোটেও সুস্পষ্ট নয়।
দ্বিতীয়ত
ওঈঈ-তে যেখানে ২০০২ সালের ১ জুলাইয়ের পূর্বে সংঘটিত অপরাধের বিচার কোনক্রমেই সম্ভব নয়, সেখানে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে ওঈঈ-তে মামলা করার মানেই হলো মূলত এই বিষয়ে আমাদের দেশীয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও মামলার অগ্রগতিকে অযাচিতভাবে প্রতিহত করা; অনর্থক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা; নতুবা নিহায়ত পক্ষে ওঈঈ-তে আন্তর্জাতিক বিচারের ধুয়া তুলে দেশীয় তদন্ত ও মামলার কাজকে দীর্ঘায়িত করা।
তৃতীয়ত
বাংলাদেশে চলমান নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রক্রিয়ার দাবি জানানো বা ঐ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করা হলো বাংলাদেশে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকীস্বরূপ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী এ ধরনের কর্মকান্ড  রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। অবিলম্বে এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রয়াস নস্যাত করা জরুরী।

লেখক : আইন সম্পাদক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি —