Monday, January 27, 2014

নিউজ টুইস্টিং: স্যাম্পল প্রথম আলো

আমার ব্লগ লিখেছেনঃ চোর (তারিখঃ মঙ্গলবার, ২৮/০১/২০১৪ - ০০:১৯)

৪ টি সংবাদের শিরোনাম দেখা যাক:

১) নেতাদের হাত সোনার নৌকায়, শিশুরা না খেয়ে রাস্তায় (প্রথম আলো প্রিন্ট ভার্সন, ২৫শে জানুআরি, ২০১৪, আপডেট ০২:১১)

২) সোনার নৌকা বিক্রির টাকা দান করলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (প্রথম আলো, অনলাইন ভার্সন, ২৫শে জানুআরি, ২০১৪, আপডেট ২১:২৪)

৩) রাজসিক সংবর্ধনা: বর্ণিল তোরণ আর সোনার নৌকা (প্রথম আলো, প্রিন্ট সংস্করণ, ২৭শে জানুআরি, ২০১৪, আপডেট ০০:১৪)

৪) মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র: শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না (প্রথম আলো, অনলাইন ভার্সন, জানুআরি ২৭, ২০১৪, আপডেট ১৯:৪৩)

---------------

এখানে ইস্যু ২টা: 

ক)সোনার নৌকা উপহার নেয়ার বিলাস, 

খ)শিশুদেরকে না খাইয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা।

-------------------

একটা নিউজের ফোকাস কি, সেটা তার শিরোনামই নির্ধারণ করে। এই নিউজগুলোর শিরোনাম থেকে দেখা যায়, প্রথম নিউজে রাজনৈতিক নেতাদের (এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম) হাতে উঠেছে উপহারপ্রাপ্ত সোনার নৌকা, যেখানে এই নেতাকে সম্বর্ধনা দিতে শিশুদেরকে না খাইয়ে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। খুবই হৃদয়-বিদারক দৃশ্য। নেতা নিজে বিলাশবহুল সোনার নৌকা উপহার নিচ্ছেন। আবার শিশুদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ নেই, তাদেরকে জোর করে দাঁড়িয়ে রাখা হচ্ছে তাকে সম্বর্ধনা দিতে!

দ্বিতীয় নিউজে দেখা যায় সোনার তৈরি সেই নৌকা বিক্রয়ের টাকা তিনি দান করে দিয়েছেন একটি প্রতিবন্ধী শিশুসংস্থায়। তবে উল্লেখ্য, প্রতিমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শিশুদের অনেকে ক্ষুধায় কাহিল হয়ে পড়লেও দুপুরে তাদের কাউকে কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ দুইটা ইস্যুর ১টা সুরাহা হলো।

তৃতীয় লেখাটা একটা কলাম, যা ঘটনার ২দিন পরে দুই ইস্যুকে ফোর্স করেই লেখা হয়েছে, যদিও আমরা জানি একটি ইস্যু ইতিমধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এটা অবশ্য সম্ভব। একটা কলাম প্রোসেস করতে সময় লাগে। তাছাড়া আলী ইমাম মজুমদারের লেখা, সোহরাব হাসান বা আসিফ নজরুলের না। সুতরাং প্রেস পর্যন্ত পৌঁছাতে একটু সময় লাগবেই।

চতুর্থ নিউজে দেখা যায়, প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটা সার্কুলার জারি করেছে যে, শিশুদেরকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। অর্থাৎ দ্বিতীয় ইস্যুতেও সরকারের টনক নড়লো।

এই চারটি নিউজ এক করলে যেটা দাঁড়ায়, তাহলো 'সরকারের' অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রথম আলো খুব সোচ্চার। প্রথম আলোর নিউজের চাপেই সরকারে টনক নড়েছে। অর্থাৎ সরকারকে সাইজে রাখতে দেশ ও জনগণের সেবার প্রথম আলো প্রকৃত বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করছে।------------------------------

সাদা চোখে মোটামুটিভাবে ওরকম একটা ইম্প্রেশনই সৃষ্টি হয়। কিন্তু চোখটা খুলে আরেকটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে চেষ্টা করে দেখি অন্য কিছু দেখা যায় কিনা।

নিউজ ২-এই আছে,

ভবিষ্যতে তাঁকে আর এ ধরনের উপহার না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানেই তিনি এ উপহারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় একটি প্রতিবন্ধী সংস্থায় দান করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

অর্থাৎ প্রথম আলো প্রথম নিউজটা করার আগেই প্রতিমন্ত্রী বিলাসবহুলভাবে চিত্রিত করা উপহারটির ব্যাপারে তার অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। এবং ওই অনুষ্ঠানেই উপহারটির অর্থ প্রতিবন্ধী শিশুদের সংস্থায় দান করার কথা বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, প্রথম আলো চাপ প্রয়োগের আগেই মন্ত্রী কাজটি করে ফেলেছেন!

এক্ষেত্রে অবশ্য প্রথম আলো মন্ত্রীকে ভবিষ্যতদ্রষ্টা হিসেবে প্রচার করতে পারে। অর্থাৎ প্রথম আলো একটা চাপ-নিউজ করবে, এটা তিনি আগে থেকেই জানতেন। তাই ওই ঘোষণা দিয়েছেন! 

এখানে আরেকটা পয়েন্ট উল্লেখযোগ্য হলো, প্রিন্টভার্সনে, যেটাই মূলপত্রিকা এবং বেশিরভাগ পাঠকের হাতে পৌঁছায়, খবরের এই অংশটুকু চেপে যাওয়া হয়েছে!

এবার ইস্যু খ; অর্থাৎ শিশুদেরকে না খাইয়ে রাখার ব্যাপারে সার্কুলারের বিষয়ে আসা যাক। মন্ত্রণালয় কি প্রথম আলোর চাপেই এই ইস্তেহার জারি করেছে, নাকি এরকম নিয়ম-কানুন আগেই ছিলো?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে প্রথম নিউজটায় (২৫ তারিখ)।

 সেখানে নিউজটা শুরুই হয়েছে এভাবে,

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে মন্ত্রী-সাংসদদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার চলছেই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে রাস্তায় কষ্ট দিয়ে মন্ত্রী-সাংসদেরা নিজ এলাকায় সংবর্ধনা নিচ্ছেন, গ্রহণ করছেন সোনার নৌকা উপহার।

দেখা যাচ্ছে, প্রথম নিউজটা লেখার সময়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এরকম নির্দেশনা বলবৎ ছিলো! তাহলে প্রথম আলো চাপ দেয়ার সময় পেলো কই?

এক মন্ত্রীকে না হয় ভবিষ্যতদ্রষ্টা হিসেবে চালানো যাবে; কিন্তু পুরো মন্ত্রণালয়কে কি সেই আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দেয়া ঠিক হবে!

দেখা যাচ্ছে, দুইটা ইস্যুর কোনোটাতেই প্রথম আলোর চাপের কোনো ভূমিকা নাই। সরকারের মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় আগে থেকেই এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে রেখেছে। তাহলে এই ক্রেডিট ছিনতাইয়ের চেষ্টা কেন?

অবশ্য সুশীলদের নিয়ে এই সমস্যা, এরা গাছেরটাও খাবে, তলারটাও কুড়াবে। সারাক্ষণ সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রেখে প্রকারান্তরে যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে সুবিধা করে দিবে। আবার যখন কোনোভাবেই সরকারকে ঠেকাতে পারছে না, তখন আবার ক্রেডিটের সময় আগে থালা পেতে দিবে!

--------------------------------

একটা উদাহরণ দিয়া শেষ করি। নোবেল ইনুচের ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানুআরির ১২ তারিখে এটি কি অন্তর্বর্তী সরকার নয়? আর্টিকেলে লিখেছে,

এই নির্বাচনের স্বরূপ আরও উন্মোচিত হয়েছে। আগে থেকেই বলা হয়েছিল, এই নির্বাচন হবে প্রহসনের নির্বাচন। ৫ জানুয়ারি সরকার গায়ের জোরে ‘পোকা খাওয়া’ নির্বাচন করে তা ভালোভাবে প্রমাণ করেছে। ভারত ছাড়া আর কোনো বিদেশি রাষ্ট্র, সরকার, এমনকি জাতিসংঘ পর্যন্ত এই নির্বাচন মেনে নিতে পারেনি।

ভোটারবিহীন নির্বাচনে ‘বিজয়ী’ দলের সরকারকে বৈধ বলার সুযোগ নেই।

এই হারামজাদাই মাত্র এক সপ্তাহ পরে জানুয়ারির ২০ তারিখে' বিএনপি এখন কী করবে' শিরোনামের আর্টিকেলে লিখেছে,

আশা করি খালেদা জিয়া, বিএনপি বা ১৮-দলীয় জোট এখন উপলব্ধি করতে পারছে যে ৫ জানুয়ারি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করা আরও কঠিন কাজ হবে। নির্বাচন যতই প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রহসনের হোক না কেন, বাস্তব সত্য হলো: একটা নির্বাচন হয়েছে। ১৪-দলীয় জোট নতুন সরকার গঠন করেছে। এটা বাস্তব। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই বিএনপিকে নতুন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সরকারকে অবৈধ বলা যাবে না, জনসমর্থিতও বলা যাবে না। এটা নিয়ম রক্ষার প্রশ্নবিদ্ধ সরকার।

এক সপ্তাহের মধ্যেই সরকার অবৈধ থেকে বৈধ হয়ে গেছে!

এই না হলে সুশীল!

https://www.amarblog.com/index.php?q=chor%2Fposts%2F176921
(লেখার বক্তব্য সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব মত)

No comments:

Post a Comment