Saturday, November 23, 2013

সংখ্যালঘু রক্ষা করবে জামায়াত-শতাব্দীর তামাশা: হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ



 এবার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামছে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ক্রিমিনাল সংগঠন জামায়াত! বাংলাদেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আজ দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশেরও ঘোষণা দিয়েছে একাত্তরে গণহত্যার জন্য দায়ী এই উগ্রপন্থী সংগঠনটি। নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতসহ উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তাদের বিতাড়নের যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে ঠিক সেই মুহূর্তেই বিএনপির এ উগ্রপন্থী রাজনৈতিক মিত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার নামে মাঠে নামছে। কেবল তাই নয়, দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য রীতিমতো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ১৪ দলকে দায়ী করেই দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী উগ্রবাদী সংগঠনের উদ্যোগে কথিত ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা সভা, সমাবেশ ও সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার’ নামে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারের কৌশল নেয়া হয়েছে। জামায়াতের এ ন্যক্কারজনক অপতৎপরতার অংশ হিসেবেই শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায় ভারতের ওপর চাপানো হয়েছে এক জাময়াতী সংগঠনের তথাকথিত সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা থেকে। যেখানে মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদকে। 
জামায়াতের এ ধরনের তৎপরতাকে নাটক ও বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জামায়াতের এ তৎপরতাকে নাটক অভিহিত করে বলেছেন, এরা দেশকে তালেবানী রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন দেখছে। গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন ধ্বংস করতে সদা তৎপর। এরাই নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘুদের বিতাড়নের মাধ্যমে দেশকে তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্নে বিভোর। জামায়াতের এ ধরনের তৎপরতা নাটক ও বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা। কিন্তু মানুষ জানে এরা কারা। জানা গেছে, আজ দেশজুড়ে বিক্ষোভ-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে একাত্তরে গণহত্যার জন্য দায়ী এই উগ্রবাদী সংগঠনটি। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান শুক্রবার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সারাদেশের সকল মহানগরী, জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচী হবে। বাংলাদেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তাহীনতায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আরোহন করে তখনই তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিশেষ করে জামায়াতÑশিবিরকে ঘায়েল করার হীন উদ্দেশ্যে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সে সরকারেরই পবিত্র দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জামায়াতÑশিবির কখনও জড়িত ছিল না। বরং যখনই সংখ্যালঘুদের ওপর কেউ আঘাত দিয়েছে তখনই জামায়াতÑশিবিরের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশে সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তিনি বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ক্যাডারদের কোন বিচার হয়নি। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। উদাহরণ আর না বাড়িয়ে আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে কিস্তিমাত করতে সিদ্ধহস্ত। জামায়াত নেতা বলেন, ইসলাম সব সময়ই সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা বিধানের জন্য তাগিদ দেয়। কাজেই কোন সত্যিকারের মুসলমান কখনও সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। বাংলাদেশের কোন ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা কখনও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয়, দোকানপাটে হামলা করে না। বরং হামলা প্রতিরোধ করে। আওয়ামী লীগের লোকরাই সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, জমা-জমি দখল করেছে এবং সংখ্যালঘুদের সব সময়ই রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে থাকে। 
জানা গেছে, জামায়াতের এ ন্যক্কারজনক অপতৎপরতার অংশ হিসেবেই শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায় ভারতের ওপর চাপানো হয়েছে এক জামায়াতী সংগঠনের তথাকথিত সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা থেকে। যেখানে মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদকে। সংগঠনটি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদকে সাম্প্রদায়িক সংগঠন আখ্যায়িত করে বলেছে মুসলমান ও আদিবাসী প্রতিনিধি যে সংগঠনে নেই সেটা কী করে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে এ গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ আব্দুর রব, কবি আব্দুল হাই শিকদার, অধ্যাপক ফাদার তপন ডি রোজারিও, ড. সুকোমল বড়ুয়া, সঞ্জীব চৌধুরী, সুশীল বড়ুয়া প্রমুখ। আলোচনায় বক্তারা ১৯৪৭ সাল পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে সংখ্যালঘু কমে যাওয়ায় আফসোস করতে শোনা গেলেও ২০০১ সাল-পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন সুকৌশলে। এমনকি কাদের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মাতৃভূমিতে না থাকতে পারার যন্ত্রণা নিয়ে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় তা উঠে আসেনি আলোচনায়। অধিকাংশ বক্তার আলোচনার মূল মেসেজ ছিল দেশে জামায়াত-শিবির নয়, আওয়ামী লীগই সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করে। তারাই নির্যাতন করে সংখ্যালঘুদের ওপর। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যত নির্যাতন হয়েছে তা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে একটি দল ফায়দা লুটতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে। তারা দাবি করেন, বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। এভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্যাহত থাকলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌম হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা। রামু, পাবনার সাঁথিয়াসহ যত বড় বড় হামলা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর করা হয়েছে সব ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল জড়িত বলে তারা দাবি করেন। তাঁরা বলেন, মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ঘটনাগুলো ঘটার আগে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার চরম ব্যর্থতা রয়েছে। বক্তারা বলেন, ঘটনা ঘটিয়ে জামায়াত এবং নিরীহ আলেম সমাজের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়। প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন ঘটনায় অপরাধীদের বিচার হয় না। তবে আলোচকরা সকল ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করার দাবি করলেও তাদের আলোচনায় রাজনীতির চিত্র ফুটে ওঠে।
 আলোচনায় অংশ নিয়ে রিপন দে নামের একজন বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচার করা হয়েছে গোলটেবিল আলোচনায় লিখিত বক্তব্যে তা তুলে ধরা হয়নি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান রিপন নামের এ তরুণ। তাঁর এ বক্তব্যে আয়োজকরা এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। এমনকি সঞ্চালক রিপনের বক্তব্যের কোন ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান না করে আরেকজন বক্তার কাছে চলে যান। নিজেদের অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে জাহির এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তারা সব ধর্মের মহান পুরুষদের মানবকল্যাণে বলা বাণী বা বক্তব্য তুলে ধরেন আলোচনায়।
 দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে জামায়াতের অর্থায়নে গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহর, অন্তত তিনমাস অন্তর ঢাকায় একটি করে আলোচনাসভা করার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের বিষয়ে বলা হয়, এ সংগঠন একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন। ভারতের এজেন্ডা অনুযায়ী এ সংগঠন সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে কাজ করে। তাঁরা বলেন, দেশে মুসলিম ধর্ম ও আদিবাসীরা রয়েছে তাদের সংগঠনে না রাখলে এ সংগঠন কোনভাবে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হতে পারে না। 
 দেশজুড়ে নানা কৌশলে উস্কানি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর জন্য কাজ করছে জামায়াত-শিবিরসহ উগ্রবাদী গোষ্ঠী। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিচারের পর চালানো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় জামায়াত-শিবিরসহ উগ্রবাদীদের নক্সা অনুযায়ীই চলছে নাশকতা। নাশকতার ছকে রেখেছে হিন্দু, বৌদ্ধসহ সকল সংখ্যালঘু পরিবার ও উপাসনালয়। কক্সবাজারের রামুর সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়াবহতার পর রবিবারও একই কায়দায় পরিকল্পিতভাবে ফেসবুকে মহানবীকে (স) কটূক্তির খবর ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালানো হতে পারে আরো বিভিন্ন স্থানে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা। দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে সংখ্যালঘুদের ওপর তারা হামলা করছে বলে মনে করছে পুলিশও। এক. সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করে অরাজকতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন। দুই. হামলার প্রত্যুত্তরে সংখ্যালঘুরা পাল্টাহামলা চালালে ধর্মের দোহাই দিয়ে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি করা।

Friday, November 22, 2013

চরম বিভ্রান্ত তারিক আলি হতাশ করেছেন শ্রোতাদের :আবদুল মান্নান

আমাদের যৌবনকালের একজন নায়ক দীর্ঘ প্রায় ৪৩ বছর পর বাংলাদেশে ঘুরে গেলেন। এই নায়ক কোনো সিনেমার নায়ক নন, রাজনৈতিক অঙ্গনের নায়ক, পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক তারিক আলি। ষাটের দশকে দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্র প্রচণ্ড ঠান্ডা লড়াইয়ে ব্যস্ত। একদিন এক দেশ পারমাণবিক বোমা ফাটায় তো আরেক দিন অন্য দেশ। তখন একটি প্রচলিত বিশ্বাস ছিল যে যৌবনে সবাইকে মার্ক্সবাদে দীক্ষিত হতে হবে। ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স চুটিয়ে বাংলায় মার্ক্সবাদী বই বিক্রি করছে। কলকাতা থেকে এল নীহার কুমার সরকারের ছোটদের রাজনীতি আর ছোটদের অর্থনীতি। বলা যেতে পারে, মার্ক্সিস্ট হওয়ার সহজ পাঠ।
ষাটের দশকের শেষের দিকে যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ তুঙ্গে, তখন প্রথমে আমাদের সামনে রাজনৈতিক নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হলেন উত্তর ভিয়েতনামের রাজনৈতিক গুরু হো চি মিন। তরুণদের সামনে তখন কিউবা আর দক্ষিণ আমেরিকার মার্ক্সিস্ট বিপ্লবী চে গুয়েভারা এক মহানায়ক। আজকের মতো ঘরে ঘরে তখন টেলিভিশন ছিল না। বিত্তবানদের বাড়িতে ছিল রেডিও। আর ছিল হাতে গোনা কয়েকটি খবরের কাগজ। হঠাৎ একদিন খবর এল, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্ররোচনায় পূর্ব বার্লিনের মাঝ বরাবর কাঁটাতারের বেড়া তুলে পুরো বার্লিন শহরটাকেই পূর্ব জার্মানি দুই ফালি করে দিয়েছে। সে এক লোমহর্ষক খবর বটে। শহর দুই ভাগ মানে পরিবার দুই ভাগ, জায়গা-জমিন-সম্পদ দুই ভাগ। ব্যাপারটা যেহেতু সোভিয়েত-মন্ত্রে দীক্ষিত পূর্ব জার্মানি করেছে, সেহেতু দেশের মার্ক্সবাদে দীক্ষিত ব্যক্তিরাও বেশ শিহরণ অনুভব করল। ঘটনা থেমে থাকল না; বছর না ঘুরতেই কাঁটাতারের বেড়া জায়গা করে দিল আস্ত একটা দেয়ালকে।
ভিয়েতনাম তো বটেই, যেখানেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন, সেখানেই সোভিয়েত ইউনিয়নের মদদ। অ্যাঙ্গোলা, কিউবা, বলিভিয়া, চিলি—কোনো জায়গাই বাদ যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, সব দেশেই লাল ঝান্ডার জয়জয়কার। যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা আত্মরক্ষার ভূমিকায়। ইউরোপের তরুণেরা শুরু করলেন ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন। সামনে থেকে যাঁরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন পাকিস্তানের লাহোর থেকে বিলেতে পড়ালেখা করতে আসা দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ, তারিক আলি। পারিবারিকভাবে আলি পরিবার পাঞ্জাবের ক্ষমতাশালী ভূস্বামী হলেও বাবা সাংবাদিক মাজহার আলি খান বাম রাজনীতির সঙ্গে আজীবন জড়িত। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে তিনি আর তাঁর স্ত্রী তাহেরা মাজহার আলি খান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মওলানা ভাসানীর সঙ্গে পরিবারটির একটি সুসম্পর্ক ছিল। তাহেরার বাবা সরদার সেকান্দার হায়াত খান একসময় (১৯৩৭-৪২) পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনিও বাম রাজনীতির একজন সমর্থক ছিলেন।
ইউরোপে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে সেই আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ল আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে। আন্দোলনের মশাল তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাম আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের হাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাসে সেই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে। ১৯৭০ সালের ৪ মে কেন্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর ন্যাশনাল গার্ড গুলি চালালে চারজন ছাত্র ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। কেন্টের কয়েক হাজার মাইল দূর থেকে আমরা মৃত কমরেডদের লাল সালাম জানালাম। এ সময় পশ্চিমা বিশ্ব দুনিয়ার অন্য প্রান্তে আরেকটি অগ্ন্যুৎপাতের সূত্রপাতের সঙ্গে পরিচিত হলো, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন। সেই বিশ্বের মানুষ জানল, এই আন্দোলনের সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পূর্ববঙ্গের ছাত্র-জনতা এবং তাঁদের অন্যতম সেনাপতি তোফায়েল আহমেদ। তারিক আলি, জন লেনন (বিটলস খ্যাত) ইকো ওনো, অ্যাঞ্জেলা ডেভিসের পাশাপাশি লন্ডন-নিউইয়র্কের পত্রপত্রিকায় ছাপা হতে লাগল বাংলা আর বাঙালির খবর। সত্তরের নির্বাচনের পর দৃশ্যে আবির্ভাব ঘটল আরেকজন কালজয়ী মহানায়কের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সত্তরে তারিক আলি এলেন ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবনের সামনে বটতলায় তিনি যখন লাখো ছাত্র-জনতার জনসমুদ্রে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি তাঁর পরনের লম্বা কুর্তার পকেট থেকে বিপ্লবের আগুন বের করে তা চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। তারিক আলির সেই অপরাহের বক্তৃতা কী যে এক উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল, তা এখন বোঝানো যাবে না। ইউরোপে ফেরার আগে দেখা করতে ভুললেন না বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু বটতলায় তারিক আলির দেওয়া বক্তৃতার প্রশংসা করলেন।
১৯৭০ থেকে ২০১৩—দীর্ঘ ৪৩ বছরের ব্যবধানে বিশ্ব অনেক পাল্টে গেছে। পতন হয়েছে বার্লিন দেয়ালের, সঙ্গে ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের। বাম রাজনীতি এখন অনেকটা গৃহবন্দী। তারিক আলি এখন আর মার্ক্সবাদ প্রচার করেন না; ইতিহাস আর সাহিত্যচর্চা করেন। সময় পেলে সিনেমা বানান। থাকেন বিলেতে। সময় পেলে পত্রিকায় বিশ্লেষণধর্মী কলাম লেখেন। নিজ দেশে মৌলবাদীদের কাছে অবাঞ্ছিত। কারণ, তাদের মতে তিনি একজন নাস্তিক; যদিও তিনি ইসলাম নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন। ঢাকায় হে উৎসব উপলক্ষে সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেলেন ৭০ বছর বয়সী তারিক আলি। একটি উঁচু মাপের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক পড়ন্ত বিকেলে তারিক আলির জন্য ‘হিস্টোরি অ্যান্ড ফিকশন’ (ইতিহাস ও কল্পকাহিনি) শিরোনামে একটি সেমিনার আয়োজন করেছিল। বেশ প্রশংসনীয় উদ্যোগ। হলভর্তি শ্রোতাদের উপচে পড়া ভিড়। ৭০ বছর বয়সেও তারিক আলির গলার জোর এবং বলার ভঙ্গি এতটুকু বদলায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা দর্শক-শ্রোতাদের ধরে রেখেছিলেন। বললেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে তিনি অবাক হননি। কারণ, এটি অনিবার্য ছিল।
তাঁর মতে, সোভিয়েত রাষ্ট্রকাঠামো অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়েছিল। সামরিক বাহিনীর পেছনে তাদের বিশাল ব্যয় ছিল সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। এর ফলে একসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন আর্থিক সংকটে পড়লে তার পতন ত্বরান্বিত হলো। মানুষ ভুলভাবে মনে করল, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একমাত্র বিকল্প মুক্তবাজার অর্থনীতি। তিনি আরও বললেন তার পরিণতি কী হতে পারে, এর জ্বলন্ত প্রমাণ গ্রিস, পর্তুগাল, স্পেন আর ইতালির চরম অর্থনৈতিক সংকট আর দেউলিয়া হওয়া। তাঁর মতে, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা ও ব্রাজিলের একটা অংশ ২০০৭-০৮-এর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছে। কারণ, তারা সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটা সংমিশ্রণ ঘটাতে পেরেছে। এক রহস্যজনক কারণে তিনি কিউবা সম্পর্কে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি।
একজন শ্রোতা তাঁর কাছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে তিনি নির্দ্বিধায় বললেন, বঙ্গবন্ধু বাকশাল কায়েম করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করেছিলেন। সুতরাং, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড অবধারিত ছিল। তাঁর হয়তো এটি জানা নেই, বাকশাল ব্যবস্থাটি কখনো কার্যকর করার সুযোগ বঙ্গবন্ধু পাননি। আর বাকশাল ব্যবস্থাকে সময়ের প্রেক্ষাপটে বিচার করতে হবে। তিনি একবারও বললেন না বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে নিক্সন প্রশাসনের ভূমিকা অথবা সে সময়কার যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে খাদ্য চালান নিয়ে নোংরা রাজনীতি, যার ফলে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ। তাঁর কথায় মনে হয়েছে, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনাটি দুঃখজনকভাবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। বাকশাল গঠনে বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকাকে তিনি সমালোচনা করে বলেন, এটি ছিল একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তাঁর মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নেই।
তারিক আলি শ্রোতাদের জানালেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং এর বারোটা বাজিয়েছে পিএলও আর হামাস। সময় থাকতে ফিলিস্তিন নেতাদের উচিত এক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নেওয়া। একপর্যায়ে বললেন, ইউরোপের ইতিহাস বইয়ে ইউরোপীয় সভ্যতায় মুসলমানদের কোনো অবদানের কথা পড়ানো হয় না। সেখানে মুসলমানদের ইতিহাস এক প্যারাগ্রাফে সীমাবদ্ধ। 
দুঃখজনকভাবে তিনি একবারও বলেননি, পাকিস্তানে ইতিহাসই পড়ানো হয় না। বাংলাদেশ সম্পর্কে সেই দেশের সত্তর-পরবর্তী প্রজন্ম সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তাঁর এসব বক্তব্য শ্রোতাদের হতাশ করেছে।
তারিক আলি সেদিন দু-একটি চরম সত্য কথা বলেছেন। তাঁর মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট, সেটি অনেকটা ১৯৪৭ সালের চেতনা বনাম ১৯৭১ সালের চেতনার লড়াই। ১৯৪৭ সালের চেতনা চরমভাবে ভুল ছিল। কারণ, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে কোনো রাষ্ট্রের জন্ম হতে পারে না।
 বললেন, সৌদি আরব দুটি বস্তু বিশ্বকে উপহার দেয়। প্রথমটি তেল আর দ্বিতীয়টি ওয়াহাবি মতবাদনির্ভর জঙ্গিবাদ। খোদ সৌদি আরবে ওয়াহাবিদের সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য না হলেও এই মতবাদ তারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে, যা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করেছে। ইরাক, আফগানিস্তান অথবা ইয়েমেনে গণতন্ত্র রপ্তানি করতে যুক্তরাষ্ট্র বেশ উৎসাহী, কিন্তু সৌদি আরবের ব্যাপারে নিশ্চুপ। এ ক্ষেত্রে তাদের অভিমত, মুসলমানেরা গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়।
 তবে এই তারিক আলির সঙ্গে আমার দেখা এবং জানা তারিক আলির অনেক তফাত। মনে হলো, তিনি চরমভাবে বিভ্রান্ত। হয়তো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনাও বদলে যায়। সবশেষে সেদিনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ দিতেই হয়।
আবদুল মান্নানসাবেক উপাচার্যচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সহকর্মী ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত তেহেলকা প্রকাশক-সম্পাদক তেজপাল :অভিযোগকারিণীর ভূমিকা রহস্যজনক

তেহেলকা সংবাদ পত্রের সম্পাদক তরুণ তেজপালের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করতে গেছে গোয়া পুলিশ।  তেজপাল পুলিশের তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়ে অনুরোধ করেছেন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে  এই অভিযোগের বাস্তবতা নিশ্চিত করতে।এ  ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংবাদ জগতে তোলপাড় চলছে।ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনে  তার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে গোয়া পুলিশএফআইআর করার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে  গণমাধ্যম জগতের আলোচিত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৎপর গোয়া পুলিশ। তারা তেজপালের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণের সন্ধানও করছেন। গোয়ায় ওই পাঁচ তারা হোটেলটির সিসিটিভি ফুটেজ থেকে উক্ত ঘটনার সূত্র খুঁজছে পুলিশ। 
   অভিযোগ কারিণী মেইল করেছেন তেহেলকার ম্যানেজিং এডিটর সোমা চৌধুরীর কাছে। তিনি বলেছেন,৭ এবং ৮ নভেম্বরগোয়ায় তেহেলকার একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন তেজপাল তার শ্লীলতাহানি করেছেন। এই ঘটনাটি প্রকাশ পেলে ঝড় ওঠে সংবাদ মহলে।তরুণ তেজপাল জানান তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগের কথা জানতে পেরে তিনি খুবই দুঃখিত, তিনি এরকম কিছু আশা করেননি। তাই শাস্তি স্বরূপ তিনি ছয় মাসের কর্মবিরতি নিচ্ছেন।  এ দিকে তেহেলকার ম্যানেজিং এডিটর সোমা চৌধুরী  রহস্যজনক ভাবে এই বিষয়ে আপত্তি করে বলেন-“তার বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই দাবি করে তিনি বলেন, তেজপালের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল; তিনি ঘটনাটিকে অন্য ভাবে দেখছেন।" সোমা বলেন, তার এরকম কোন উদ্দেশ্য ছিল না এবং  তিনি ঠিক এমনটি বলতে চাননি। " তুমুল আলোচনায় এখন তেজপাল-সোমা   এবং ধর্ষণের অবিযোগকারিনীর  বক্তব্য!!
Tarun_Tejpal_20131024.jpg20050114006401801

 তেজপালের এই বক্তব্যকে ঘিরেও জল্পনার উৎপত্তি হয়। জাতীয় মহিলা কমিশন তেজপালের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বলেন-“তিনি অভিযুক্ত তাই তার কিরূপ শাস্তি হওয়া উচিত তা তিনি নির্ধারণ করার কে? শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করলে চলবে না। তাকে উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে।” 

তেহেলকার ম্যানেজিং ডাইরেক্টরও এই কথাতেই সুর মেলান। এমনকি ঘটনাটির পুলিশি তদন্তের দাবীতে সরব হন তহেলকার বহু সদস্য।  এডিটর গিল্ড অফ ইন্ডিয়াও ঘটনাটির উপযুক্ত তদন্তের দাবী করেছে। 
তরুণ তেজপাল যিনি সংবাদ জগতের একটি পরিচিত মুখ, তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা এবং ধর্ষনের অভিযোগ ওঠায় দেশের রাজনৈতিক মহলেও এর প্রভাব পড়েছে।  তেহেলকার উপর  ক্ষুব্ধ  অনেকে তেজপালের শাস্তির দাবীতে সরব। বিজেপি এদের মধ্যে অন্যতম! দাবি উঠেছে  কংগ্রেস সমর্থক বলেই তেজপালের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখতে !!
 তবে এই ঘটনার  শেষ পরিণতি কি হবে তা পুলিশী  তদন্ত এবং সোমা চৌধুরীর ভূমিকা ই বলে দেবে।
- See more at: http://indiajournal.in/?p=7246#sthash.4ZC3Uk9a.dpuf

Thursday, November 21, 2013

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রকৃত নায়ক ড. কিসিঞ্জার এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো




বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে নিজ হাতে হত্যা করেছিল মোহাম্মদী বেগ, তার অর্থ এই নয়, মোহাম্মদী বেগই সিরাজ হত্যার আসল ব্যক্তি। ঠিক তেমনি ডালিম, ফারুক, রশীদ, মেজর নূর বঙ্গবন্ধু হত্যা-নাটকের মূল চরিত্র নয়। সিরাজ হত্যার মূল পরিকল্পক ছিল ব্রিটিশ বেনিয়া শক্তির প্রতিনিধি লর্ড ক্লাইভ। বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল পরিকল্পক ছিল মার্কিন প্রতিনিধি তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কিসিঞ্জার এবং তার দোসর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। এরা দুজনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ১৯৭১ সালে পরাজিত হয়েছিলেন।মাহমুদুল বাসার চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। আর ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে, সপরিজনে হত্যা করা হয়। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম হত্যাকা-ের অন্যতম একটি ১৫ আগস্টের হত্যাকা-। বাংলাদেশের একদল বিভ্রান্ত সেনাসদস্য এই হত্যা সংঘটিত করেছে। এরা ছিল ক্রীড়নক। দেশি-বিদেশি শক্তিশালী ষড়যন্ত্রকারী একটি চক্র এই হত্যার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে নিজ হাতে হত্যা করেছিল মোহাম্মদী বেগ, তার অর্থ এই নয়, মোহাম্মদী বেগই সিরাজ হত্যার আসল ব্যক্তি। ঠিক তেমনি ডালিম, ফারুক, রশীদ, মেজর নূর বঙ্গবন্ধু হত্যা-নাটকের মূল চরিত্র নয়। সিরাজ হত্যার মূল পরিকল্পক ছিল ব্রিটিশ বেনিয়া শক্তির প্রতিনিধি লর্ড ক্লাইভ। বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল পরিকল্পক ছিল মার্কিন প্রতিনিধি তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কিসিঞ্জার এবং তার দোসর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। এরা দুজনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ১৯৭১ সালে পরাজিত হয়েছিলেন। 
খুব অপমানিত হয়েছিলেন এরা। একটা অপমানিত বোধ থেকে কিসিঞ্জার ও ভুট্টো বঙ্গবন্ধু হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধুকে বাঁকা নজরে দেখতেন খন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমান। এর প্রমাণ ইতিহাসে আছে। দুজনই ছিলেন ক্ষমতালিপ্সুু, উচ্চাভিলাষী এবং ষড়যন্ত্রকারী, এর প্রমাণও ইতিহাসে আছে।
মোশতাক চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে, তারপর মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারে নিজেকে অস্থায়ী সরকারের প্রধান বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তুমুল প্রতিবাদের মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর কলকাতা গিয়ে তিনি ড. আনিসুজ্জামানের কাছে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। ড. আনিসুজ্জামানের 'আমার একাত্তর' বইতে তা লেখা আছে। ১৯৭১ সালে খন্দকার মোশতাক পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার যে চক্রান্ত করেছিলেন, এর সঙ্গে জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিলেন।
মোশতাক এবং জিয়া দু'জনই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন। একজন রাজনৈতিক অঙ্গনে বসে, অন্যজন সেনাবাহিনীর পরিম-লে বসে। যতদিন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন, ততদিন দু'জনই বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি থেকে নিখুঁত অভিনয় করেছেন। যাতে আঘাতটা ভেতর থেকে করতে পারেন।
ড. ওয়াজেদের বই পড়ে জানা যায় যে, মোশতাকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রবল তর্ক হয়েছে বাকশাল গঠন নিয়ে। তারপরও মোশতাক, তাজউদ্দীন, জেনারেল ওসমানী, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের মতো মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেননি। জিয়া বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী তার 'ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা' গ্রন্থে বলেছেন, জিয়াউর রহমান ভবনে যেতেন। বঙ্গবন্ধুর সামনে জিয়াউর রহমান নতজানু হয়ে বঙ্গবন্ধুকে খোশামোদ করে কথা বলতেন। খামাখা অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলতেন, 'আগে আমার বুকে গুলি লাগবে, তারপর বঙ্গবন্ধুর বুকে লাগবে'। (অধ্যাপক আবু সাইয়িদ- বঙ্গন্ধু হত্যাকা- ফ্যাক্টস্ অ্যান্ড ডকুমেন্টস্)। অর্থাৎ জিয়া জানতেন বঙ্গবন্ধুর বুক টার্গেট করা হয়েছে।
১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা জিয়ার সঙ্গে গোপনে দেখা করেন। তারা জিয়ার কাছে বঙ্গবন্ধু সরকার উৎখাতের প্রস্তাব করেন। জিয়া বলেন, 'আমি এ সবে থাকতে পারি না, তোমরা জুনিয়ররা এ সব করলে করতে পারো'। অর্থাৎ তোমরা এগিয়ে যাও; আমি আছি পেছনে।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষক, দার্শনিক ও অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান একটি বই লিখেছেন, নাম "শতাব্দীর স্মৃতি"। সেখানে স্মৃতিচারণায় সাইদুর রহমান বলেছেন যে, ১৯৭৪ সালে তার ভাইরার বাসায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার দেখা হয়। জিয়া তার কাছে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাংঘাতিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও বিষোদগার করেন।
অথচ প্রজাতন্ত্রের সেবক হয়ে জাতির পিতার বিরুদ্ধে এবং সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে এমন ক্রুদ্ধতা প্রকাশ করতে পারেন না। জিয়ার সৎ সাহস থাকলে তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারতেন।
জিয়ার কুটিল চেহারা চেনার জন্য নিরন্তর গবেষণা করা উচিত। আমার বন্ধু সাংবাদিক স্বদেশ রায় একবার বলেছিলেন যে, তিনি 'মেজর জেনারেল গণতন্ত্র' নাম দিয়ে জিয়াউর রহমানের ওপর বই লিখবেন। লিখেছেন কিনা জানি না।
মেজর রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম প্রণীত 'লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে', সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তের গ্রন্থের ভাষায় ইতিহাসের তিনি একজন খলনায়ক। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের উস্কানি দিয়েছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সেনা অভ্যন্তরে ফারুক ও রশীদের ডিফেন্স দিয়েছিলেন। তখন সেনাবাহিনীর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার মতো নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া গড়ে ওঠার বিপক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়া জিয়া সেনাবাহিনীতে বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে লবিং করে ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিলেন।
জিয়া ও মোশতাক দুজনই মতলববাজ ও সম্প্রদায়িক। একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তারা বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিতে পারেননি। তাই দেখা গেল, জিয়া ১৫ আগস্ট সকালে নির্বিকারভাবে, উৎফুল্ল মনে সেভ করতে বসেছেন। খবর এলো রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বললেন, সো হোয়াট। ওইদিন তিনি সেনাছাউনিতে গিয়ে খুনি ফারুককে বললেন, ঋধবঁয়ব পড়সব ঃড় সব ধহফ শরংং সব, ুড়ঁ যধাব ফড়হব ধ মৎবধঃ লড়ন, (বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস)।
জিয়া ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে যে ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন তার পুরস্কার দিতে বঙ্গবন্ধু কার্পণ্য করেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন না। তাই তাকে সেনাবাহিনীর প্রধান না বানিয়ে জেনারেল সফিউল্লাহকে বানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু জিয়াকে তেমন আমল দিতেন না। একবার বলেছিলেন, আমাদের জিয়া বড় মুক্তিযোদ্ধা, কেবল আমার বিরুদ্ধে একটু আধটু ষড়যন্ত্র করে। অর্থাৎ জিয়ার চোখের ভাষা বঙ্গবন্ধু বুঝতেন, তাই গুরুত্ব দিতেন না। এই ক্ষোভ জিয়ার মনে সাপের বিষের মতো কাজ করেছিল।
বঙ্গবন্ধু গবেষক, লন্ডন প্রবাসী লেখক আবদুল মতিন বিজয় দিবসের পর ও বঙ্গবন্ধু বইতে দেখিয়েছেন, কেন জেনারেল ওসমানী জিয়াকে গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের হস্তক্ষেপে তার মীমাংসা হয়। আবদুল মতিন আরো জানিয়েছেন যে, জিয়া ভারতের কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে ভারত সরকার এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিয়েছেন।
ধূর্ত, চতুর, উচ্চাভিলাষী জিয়া জেনারেল সফিউল্লাহর দৌর্বল্যেরও সুযোগ নেন। '৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে তিনি হজরত মাবিয়া ও সম্রাট আওরঙ্গজেবের মতো দক্ষতার সঙ্গে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কাজে লাগান। কিছুদিন আগে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন একটি কলামে বলেছেন, দেশে এখন ৫০ ভাগ পাকিস্তান সমর্থিত লোকজন আছে।
এই কৃতিত্ব জিয়াউর রহমানের। পাকিস্তান সমর্থিত লোকজন, আমলা-আর্মি ও এলিটদের নিয়ে তিনি দল গঠন করেছেন। তিনি যেভাবে ১৯৭১ সালের ম্যান্ডেট পরিবর্তন করেছেন তা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করে সম্ভব ছিল না। তার রাজত্বে ফারুক-রশীদরা ফ্রিডম পার্টি নাম দিয়ে দল গঠন করে কুড়াল মার্কা নিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে রাজনীতি করেছে। এই আস্কারা জিয়াউর রহমান দিয়েছেন। এখনো তার স্ত্রী এবং তার দল যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করে যাচ্ছেন।
অনেকে বলেন, দুই নেত্রীর সমঝোতার দরকার। বেগম জিয়া যদি ১৫ আগস্টের মতো জাতীয় শোক দিবসে কাল্পনিক জন্মদিন পালন করেন তাহলে সমঝোতা হবে কেমন করে? এই আদর্শিক সংঘাত সহজে মিটবে বলে মনে হয় না। ১৯৭৮ সালে এক কলামে আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন, জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধু হত্যার পালের গোদা। গবেষকদের উচিত শুধু চোখের পানি না ফেলে এই পথে আরো গবেষণা করা।

মাহমুদুল বাসার: প্রাবন্ধিক, গবেষক

Wednesday, November 20, 2013

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সিএনএনঃ পরিকল্পনা আইএসআইয়ের, বাস্তবায়নে সা কা চৌধুরী


 image_70790 বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানা হত্যা মামলায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা-আইএসআই জড়িত বলে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন সিএনএনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক খবরে দাবি করা হয়েছে। 
ভারত সরকারের সচিবালয় সাউথ ব্লকের বরাত দিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সিএনএন।
২৯ অক্টোবর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনায় ছিল শেখ হাসিনা এবং সে সময়ের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদকে হত্যা। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহ হলেও তা করার পরিকল্পনা ছিল আগের দিন। সেদিন শেখ হাসিনা এবং মইন ইউ আহমেদ বিডিআর দরবার হলে গেলেও ষড়যন্ত্রকারীরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিতে পারেনি।
আইএসআই শেখ হাসিনার মধ্যপন্থী মতাদর্শিক অবস্থানের কারণে শঙ্কিত হয়েই এই পরিকল্পনার আদেশ দেয় বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রক্তক্ষয়ী এই ষড়যন্ত্রের খেসারত ঢাকাকে বেশ ভালোভাবেই দিতে হয়েছে। অন্যদিকে  তৎকালীন মাত্র দুই মাস মেয়াদ অতিক্রান্ত  শেখ হাসিনার সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য যা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর)  উচ্চপদস্থ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭০ জন নিহত হন । ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের একদল সদস্য তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডটি এতই বর্বর ছিল যে, শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরই নয় তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করে ম্যানহোলের মধ্যে স্তুপ করে রাখা হয়েছিল। এর বাইরে গণকবরও দেয়া হয়েছিল অনকে লাশ।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জড়িত: বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জড়িত ছিলেন বলেও সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘ভারত এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এই ঘটনায় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এবং আইএসআইয়ের চর সালাইদ্দিন কাদের চৌধুরীর জড়িত থাকার প্রমাণ আছে’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিএনপি নেতাকে প্রতিবেদনে এই অঞ্চলের অপরাধ জগতের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িত।
বাংলাদেশে সালাউদ্দিন চৌধুরী একজন  বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগিদের মধ্যে একজন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে দশট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ঘটনার সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ আছে। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ভারতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র চোরাচালান হচ্ছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিডিআরের সদস্যদের মধ্যে নানা বিষয়ে ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে পিলখানা হত্যা ঘটানো হয়। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীতেও পাকিস্তানপন্থী কর্মকর্তারা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। এই পরিকল্পনা এতটাই সূচারু ছিল যে, কোনো গোয়েন্দা সংস্থা তা ধরতে পারেননি। এই ঘটনায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক ফজলুর রহমানকেও ব্যবহার করেন।
ফজলুর রহমানকে সালাইদ্দিন কাদের চৌধুরী ৪০ কোটি টাকা দেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আর ফজলুর রহমান সে সময় বিডিআরের চারজন উপসহকারী পরিচালককে পাঁচ কোটি কারা করে দেন। আর চারশজন সিপাইকে দেয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা করে। কেউ কেউ ৫০ লাখ টাকা করে পেয়েছেন বলেও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনা চলাকালে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত সরকারে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারত শেখ হাসিনাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিও নেয়। ভারতের সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) প্রণব মুখার্জি শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ রেখেছেন।
পাকিস্তানি চরের ফোনে আঁড়ি পেতে তথ্য উদ্ধার: সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ রসুলের সাথে টেলিফোন কলে আঁড়ি পেতে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই কর্মকর্তার সাথে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যোগাযোগ ছিল।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ওই পাকিস্তানি কর্মকর্তা ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং পাকিস্তানকে সব জানিয়েছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টায় সাজ্জাদ রসুল আইএসআইয়ের সদরদপ্তরে ফোন করে সে সময় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন বাংলাদেশ সরকার এবং সেনা কর্মকর্তা কিছুই জানতে পারেননি, তখন পাকিস্তানী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা কীভাবে ভেতরের সব ঘটনাপ্রবাহ জানলেন, তা একটি বড় প্রশ্ন’। ওই সময় জামায়াতে ইসলামীর বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও ফোনে দুবাই, লন্ডন এবং ইসলামাবাদে আইএসআইয়ের চরদের সাথে ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলের তুলনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার মধ্যপন্থী। ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান কঠোর। এই সরকার টিকে থাকলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের বিচারের ভয়ও পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের মধ্যে ছিল। গোটা বিদ্রোহে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদও নানা সহযোগিতা করেছেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত নীতি এবং অন্যান্য অবস্থানের কারণে শেখ হাসিনা সরকারকে নিয়ে পাকিস্তান উদ্বিগ্ন ছিল। এ জন্যই পথের কাটা দূর করার চেষ্টা করেছে আইএসআই।

একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি র উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলামের প্রয়াণে বিনম্র শ্রদ্ধা - সুমি খান

আজ সকালে ভ্যানকুয়েভারের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলা কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে
 প্রতিষ্ঠার  প্রথম উদ্যোক্তা 
কানাডাপ্রবাসী রফিকুল ইসলাম!!
 তার প্রয়াণে আমাদের গভীর শোক এবং  বিনম্র শ্রদ্ধা

                                     স্বরব্যঞ্জন পদকের স্বীকৃতি পেলেন  অন্তিম শয্যায়  

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রথম দাবি ওঠে ১৯৯৭ সালে, ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের জন্মস্থান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন গফরগাঁও থিয়েটার ওই দাবির পক্ষে শোভাযাত্রা করে দেয়াল ও বাস-ট্রেনে পোস্টার সেঁটে দেয়। দুই বছর পর তাদের একুশের সংকলনেও স্লোগান ছাপে-বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস চাই! একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই!' 
১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি কানাডাপ্রবাসী  মুক্তিযোদ্ধা  রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে ১৯৫২ সালে ভাষাশহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
 সে সময় জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের নজরে আসে চিঠিটি। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি রফিককে অনুরোধ করেন জাতিসংঘের অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করতে। এরপর আরেক কানাডাপ্রবাসী আবদুস সালামকে সঙ্গে নিলেন রফিক। তাঁরা 'অ্যা গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ভ্র' নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। 
১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ কফি আনানকে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে লেখা একটি চিঠিতে প্রস্তাব করেন, যার উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে, �The Bengali have played a very important role in protecting their Mother Language from serious crisis related to its existence. In today's world there are many nations and/or communities still facing serious crisis and threat against their Mother Languages.�
প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন সাতটি ভাষার ১০ জন প্রতিনিধি। তাঁরা হলেন অ্যালবার্ট ভিনজন ও কারমেন ক্রিস্টোবাল (ফিলিপিনো), জ্যাসন মোরিন ও সুসান হজিন্স (ইংরেজ), ড. কেলভিন চাও (ক্যান্টনিজ), নাজনীন ইসলাম (কাচ্চি), রেনাটে মার্টিনস (জার্মান), করুণা জোসি (হিন্দি) এবং রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম (বাংলা)।
 এর জবাবে জাতিসংঘ জানায়, এসব সাংস্কৃতিক বিষয় দেখভাল করে ইউনেসকো। সুতরাং দাবিটা ওখানে পাঠাতে হবে। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময় হাসান ফেরদৌস রফিক ও সালামকে উপদেশ দেন ইউনেসকোর ভাষা বিভাগের জোসেফ পডের সঙ্গে দেখা করতে। জোসেফের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি বলেন, ইউনেসকোর আনা মারিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। এই আনা মারিয়া নামের ভদ্রমহিলা রফিক-সালামের কথা মন দিয়ে শুনে বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চিন্তাটা বেশ যুক্তিযুক্ত, তবে কোনো সংগঠনের দাবি তারা আমলে আনতে পারেন না। জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাব পাঠালে তবেই একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে।
এবার রফিকুল ইসলাম চিঠি লিখলেন আমাদের দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝে তাড়াতাড়ি একটি প্রস্তাব বানিয়ে পাঠিয়ে দিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেক দ্রুত পদক্ষেপ নিলেন। শিক্ষাসচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক কফিলউদ্দিন আহমেদ, মসিউর রহমান (প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তৎকালীন পরিচালক), সৈয়দ মোজাম্মেল আলী (ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত), ইকতিয়ার চৌধুরী (কাউন্সেলর), তোজাম্মেল হকসহ (ইউনেসকোর সেক্রেটারি জেনারেলের শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা) অন্য অনেকেই এতে জড়িত হন। তাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করে আরো ২৯টি দেশকে প্রস্তাবটির পক্ষে নিয়ে আসেন। অন্য বাংলাদেশি ও প্রবাসীদের কাছে ব্যাপারটা অগোচরেই ছিল। কয়েকজন ছাড়া কেউ টের পেল না, বাংলা ভাষাকে গৌরবান্বিত করতে পর্দার অন্তরালে কী ধুন্ধুমার কাজ চলছে।
১৯৯৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইউনেসকোর কাছে প্রস্তাব উত্থাপনের শেষ দিন। তখনো প্রস্তাব এসে পৌঁছায়নি। শেষ পর্যন্ত কি স্বপ্নটি অধরাই থেকে যাবে? রফিক-সালাম তখন নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেছেন। টেলিফোনের সামনে বসে আছেন, কখনো চোখ রাখছেন ই-মেইলে। কই, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তো কোনো সাড়াই আসছে না! আসলে লিখিত প্রস্তাবটিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সইটাই বাকি ছিল। আর প্রধানমন্ত্রী তখন পার্লামেন্টে। ওদিকে পার্লামেন্টের সময়সূচির পর ইউনেসকোতে প্রস্তাব উত্থাপনের সময়সীমা পার হয়ে যাবে। সব পরিশ্রম বোধ হয় জলেই গেল! প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে অনুরোধ করা হলো, তিনি যেন দ্রুত প্রস্তাবটিতে সই করেন। এরপর ফ্যাক্স করতে হবে ইউনেসকোর দপ্তরে। না হলে শেষরক্ষা আর হবে না। সময়সীমা শেষ হওয়ার মাত্র এক ঘণ্টা আগে ফ্যাক্সবার্তা পৌঁছাল ইউনেসকোর অফিসে। আহ্, শান্তি! প্যারিসে, ইউনেসকোর সদর দপ্তরে ১৬ নভেম্বর বসল ৩০তম সম্মেলন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বহুল প্রত্যাশিত প্রস্তাবটি সেখানে উত্থাপিত হলো না। রফিক-সালামরা আরো একটি হতাশ দিন পার করলেন। দেখা যাক, পরদিন কী হয়!
১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সভার শুরুতেই প্রস্তাবটি উত্থাপন করল বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। অন্য ২৫টি দেশের সদস্যরা সেটিকে অনুমোদন করেন। এমনকি ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার মূলোৎপাটনের ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত হয়েছিল, সেই পাকিস্তানও একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সমর্থন জানায়। 
২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো পালিত হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইউনেসকোর পর জাতিসংঘও একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখন কিন্তু দিনটি আর শুধু আমাদের নয়, সমগ্র বিশ্বের। বিশ্বের সব জাতির মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার দিন- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইংরেজ-ফরাসি-চাকমা-সাঁওতাল- সবাই যাতে তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে, গর্ব করতে পারে, সে লক্ষ্যেই জাতিসংঘ এ দিবসটি করেছে। পাশাপাশি সবাই জানতে পারবে- এই দিনেই বীর বাঙালিরা প্রাণ দিয়ে দাম দিয়েছিল মাতৃভাষার।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি !
সকল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা  এবং ভালবাসা ! দুঃখ হয় , তার জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন না। এর চেয়ে হতাশার আর কী আছে!! সবশেষে বাংলাদেশ সরকার এবং সুধী সমাজের কাছে প্রত্যাশা তারা যেন  বাংলার বীর সন্তান কৃতি সন্তান  রফিকুল ইসলাম এর অবদানের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন!!

 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকবার্তা দিয়েছেন। বার্তায় প্রধানমন্ত্রী একালের ভাষাবীর রফিকুল ইসলামের অসীম অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, মাতৃভাষার জন্য এক রফিক রক্ত দিলেন, আরেক রফিক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এনে দিলেন। যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। মাননীয় প্রধান তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ দিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে জাতীয় পতাকায় রাষ্ট্রীয় ভাবে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য অটোয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে একজন প্রতিনিধি ভ্যাঙ্কুভারে গেছেন।

Tuesday, November 19, 2013

মহান স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই জননী সাহসিকা!- সুমি খান



সকল অপশাসন, দুঃশাসন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদী মিছিলের নেতৃত্বে  ছিলেন জননী সাহসিকা সুফিয়া কামাল!বাংলাদেশে  মানবাধিকার ,নারী জাগরণ, নারী অধিকার আদায় ও নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ অতুলনীয় সুফিয়া কামালের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধা!!


সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে  বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলনের মিছিল

আজ ২০ নভেম্বর।কবি,বুদ্ধিজীবী,সমাজনেত্রী,নারী ব্যক্তিত্ব এবং নারী জাগরণের পথিকৃৎ কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।১৯৯৯ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে তার জীবনাবসান হয়।  তিনি তীব্র ঘৃণা করতেন রাজাকার,আলবদর, আল শামসদের।আমৃত্যু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছেন।নিজ মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়ে স্থিরচিত্তে যিনি নয় মাসে নয়টি কাঁথা সেলাই করেন অখণ্ড মনযোগে , তিনি কি বাঙালির হাজার বছরের শ্রেয় চেতনা ও মূল্যবান অর্জনকেই ঐতিহ্যের সুতোয় গেঁথে নেন না? এই সুফিয়া কামালই একক অনন্য।১৯৭০-এর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত ব্রাত্যজনের কাছে সেবায় ও দরদে যিনি চিহ্নিত হয়েছিলেন 'মা-ফাতেমা' হিসেবে-তিনিই মুক্তিযুদ্ধে সন্তানদের পাঠিয়ে কাঁথায় স্বপ্ন বুনে 'মা-সাহসিকা' হয়ে উঠেছিলেন।এই সুফিয়া কামাল অনন্য দ্বিতীয় রহিত।তার মতো আর নয় কেউ।বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অংশের ভূগোলকে তিনি ব্যাপ্ত করে রাখবেন নিজস্ব দ্যুতিতে, অনিঃশেষ মায়ামমতা ও বিপুল বৈভবে।
 বঙ্গবন্ধু কে সপরিবারে নির্মম হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা র পর  জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজাকার পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে শ্লোগান মুখর ঝাঁঝাঁলো মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন জননী সাহসিকা। তখন জিয়াউর রহমান তার পেটোয়া লাঠিয়াল  বাহিনী দিয়ে ও তাকে ঠেকাতে না পেরে ক্ষুদ্ধ প্রশ্ন করেছিলেন," এই অশিক্ষিতা মহিলার এতো শক্তি কি করে? এতো লোক কি করে তাকে মানে?"  শুনে স্মিতভাষী বেগম সুফিয়া কামাল মৃদু হেসেছিলেন শুধু, কোন মন্তব্য করেন নি! একই ভাবে স্বৈরাচারী বিশ্ববেহায়া এরশাদের তখ্ত ও কেঁপেছিলো জননী সাহসিকার দৃপ্ত সংগ্রাম আর আন্দোলনের প্রখর তাপে!

তিনি  ছিলেন এক বিশাল শক্তির প্রতীক।এই সমাজ সম্পৃক্ততায় তিনি হয়ে উঠেছেন আরো বড় মাপের মানুষ। বিপুল মানুষের সঙ্গে আত্মিক  সংযোগ এবং বিপুলতর নিঃসহায় জনের জন্য গভীরতর ভালোবাসা ও নিরন্তর উদ্বেগই সুফিয়া কামালকে অসামান্য উচ্চতায় স্থাপন করেছে।এই সামগ্রিক উচ্চতা সমকালীন বাংলাদেশে আর কেউ অর্জন করেননি।সে জন্যই তিনি সমকালীন বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শত প্রতিকুলতা তাকে দমাতে পারেনি।



সুফিয়া কামাল ছিলেন মানবতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে এবং যাবতীয় অন্যায়, দুর্নীতি ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন সমাজসেবী ও নারী নেত্রী। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি কর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত পরিবারে।
সুফিয়া কামাল তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি।তার বাবা সৈয়দ আবদুল বারি ছিলেন উকিল।মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি তার বাবাকে হারান।মাত্র বারো বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯২৩ সালে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে সুফিয়ার বিবাহ হয়।তখনকার পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে বাস করেও নিজস্ব চেষ্টায় এবং মায়ের স্নেহ ও পরিচর্যায় তিনি স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত হন।বিয়ের পর তিনি জাকজমকপূর্ণ পোশাক পরা বন্ধ করে তাতের শাড়ি পরা শুরু করেন। এ সময় তিনি নারী কল্যাণমূলক সংগঠন মাতৃমঙ্গল-এ যোগ দেন।

১৯২৩ সালে সুফিয়া কামাল রচনা করেন তার প্রথম গল্প সৈনিক বধূ যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা বাসন্তী প্রকাশিত হয়।

১৯২৯ সালে সুফিয়া কামাল যোগ দেন বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলামে। এখানে নারী শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারসহ নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো। বেগম রোকেয়ার আদর্শ সুফিয়াকে প্রভাবিত করেছে। ১৯৩১ সালে সুফিয়া কামাল মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম ইন্ডিয়ান মহিলা ফেডারেশনের সদস্য নির্বাচিত হন।



কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সুফিয়া কামাল

১৯৩৩-৪১ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা কর্পরেশন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। স্কুলের চাকরির পাশাপাশি তার সাহিত্য চর্চাও চলতে থাকে। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তার সাঁঝের মায়া কাব্যগ্রন্থটি।এর ভূমিকা লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটির প্রশংসা করেন।১৯৪৭-এ সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকা প্রকাশিত হলে তিনি তার প্রথম সম্পাদক নিযুক্ত হন। এ বছরই তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন।
১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন কবি-সম্পাদক সুফিয়া কামাল ...

''মুসলিম সমাজ আজ এক কঠোর দায়িত্ব গ্রহণের সম্মুখীন। অর্জিত স্বাধীনতা, সম্মান ও গৌরব অক্ষুণ্ন রাখতে হলে কেবল পুরুষেরই নয়, মুসলিম নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে নতুন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের কাজে। তার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ নারীসমাজকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সেই স্বাধীন সার্বভৌম আদর্শ রাষ্ট্রের সত্যিকার দাবিদার হতে পারে সগৌরবে।এর জন্য চাই আমাদের মানসিক প্রসার, আশা-আকাঙ্ক্ষার ব্যাপ্তি আর জীবন সম্পর্কে এক স্থির ধারণা।’''

১৯৩২ সালে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। ১৯৩৩-১৯৪১ সাল পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারি স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেন।১৯৪৬ সালে কলকাতায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে দাঁড়ান।পরের বছর তিনি কলকাতায় মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'বেগম' পত্রিকার প্রথম সম্পাদক নিযুক্ত হন।

মহীয়সী নারী, জননী সাহসিকা, সমাজের মুক্তির পথ রচয়িতাদের অন্যতম পথিকৃৎ সুফিয়া কামাল অকুতোভয়ে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, মানব মুক্তি, নারী মুক্তি, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সব সময়ই ছিলেন সামনের সারিতে।১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি আয়োজিত ‘শান্তি মিছিলে’ সুফিয়া কামাল সম্মুখভাবেই ছিলেন।

১৯৪৭ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা চলে আসেন।এ সময় সুফিয়া সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও জড়িয়ে পড়েন।তিনি যেসব সংগঠন প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা করেন তার মধ্যে আছে, বাংলাদেশ মহিলা পুনর্বাসন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন কমিটি, দুস্থ পুনর্বাসন সংস্থা, ছায়ানট, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন এবং নারী কল্যাণ সংস্থা।

তিনি ছায়ানট, কচিকাঁচার মেলা ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ছিলেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।তার দুই মেয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে আগরতলায় হসপিটাল স্থাপন করেন।

তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- সাঁঝের মায়া (১৯৩৮), একাত্তরের ডায়েরী, মোর যাদুদের সমাধি পরে, একালে আমাদের কাল, মায়া কাজল (১৯৫১),কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭) ইত্যাদি।২০০২ সালে বাংলা একডেমী সুফিয়া কামালের রচনাসমগ্র প্রকাশ করে।

সাহিত্যচর্চার জন্য সুফিয়া কামাল অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জাতীয় পুরস্কার 'তঘমা-ই-ইমতিয়াজ' লাভ করেন।কিন্তু ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি তা বর্জন করেন।এ ছাড়াও তিনি বাংলা একডেমী পুরস্কার (১৯৬২), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), উইমেনস ফেডারেশন ফর ওয়ার্ল্ড পিস ক্রেস্ট (১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক (১৯৯৬), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭) লাভ করেন।

জীবন যে কত বড় এবং তা যে সাধনায়, ত্যাগে, সদিচ্ছায়, শ্রমে, অঙ্গীকারে কত সুন্দর ও তাৎপর্যপূর্ণভাবে  মানবতার কল্যাণে, দেশের কল্যাণে উৎসর্গ করা  যায় তার অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বেগম  সুফিয়া কামাল। 
যে রক্ষণশীল মুসলমান সমাজে তার জন্ম সেখান থেকে তিনি শুধু উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে বেরিয়ে আসেননি,  দুঃসহ নিগড়ে আবদ্ধ বাঙালি মুসলমান নারী সমাজকে তিনি জাগরণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন-  শৃঙ্খলমুক্ত জীবনে আহ্বান করেছেন  তথাকথিত সমাজ সংস্কারের নিগড়ে শৃঙ্খলিত অগণিত নারী -পুরুষকে!

রক্ষণশীল ও আভিজাত্যের বৃত্ত ভেঙেই তিনি সাহসী - দৃঢ় পদচারণা শুরু করেছিলেন।বৃত্ত যিনি ভাঙতে পারেন তিনি আরো বৃত্ত ভাঙার জন্য প্রস্তুতি নেন।সুফিয়া কামালও তাই করেছেন আমৃত্যু। অশুভ, অসুন্দর অকল্যাণের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ উজ্জীবিত করেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আজ তোমার মহা প্রয়াণের দিনে  তোমার মহান স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা  জানাই  জননী সাহসিকা!

স্মৃতির সেফটিপিন : অপরাহ্ণ সুসমিতো


---------------------

মুসলিম হলে তিনদিন ব্যাপী রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন হবে । আমাদের সবার খুব উৎসাহ । গৌতম বলল : বেগম সুফিয়া কামাল আসবেন ।

আমার আগ্রহ গেল বেড়ে ।

এর আগে বেগম সুফিয়া কামালকে কখনো দেখিনি । পরিকল্পনা হলো রাতে আমি,মনজু মিলে নাসিমের চকবাজারের ডেরায় থাকবো । যেদিন সম্মেলন শুরু হবে সেদিন থেকে শুরু বাস মালিক সমিতির ধর্মঘট শুরু হয়ে গেল । কি জ্বালা ! সেদিন আবার সাপ্তাহিক ছুটি ।
হল থেকে চট্টগ্রাম শহরে যাই কি করে ? মনজু,আমি হলে থাকি । গৌতম,নাসিম শহরে । ওদের কোনো সমস্যা নেই ।

ওরা তো ঠিকঠাক চলে আসবে । আমরা ?

উদ্বোধন সন্ধ্যায় । সকাল থেকে ভাবনা মাথায় ।

নাস্তা করতে এলাম সকাল সকাল রব ভাইয়ের দোকানে । চা খেতে খেতে ভাবছিলাম কি করা যায় ? বিধানদা এসে তখন হাজির । রোদ বাড়ছে,আস্তে আস্তে সবার ঘুম ভাঙ্গছে । অনেকেই নাস্তা করতে বেরুচ্ছে । বিধানদাকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ লাল,উস্কুখুস্কু ।

কিন্তু মনে হলো মেজাজ শরীফ চনমনে । বিধানদা রসায়নের ছাত্র,আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র । খুব দিল দরাজ মানুষ । জুয়া খেলে জেতায় তার সুনাম সর্বজনবিদিত । অনুমানে ঢিল ছুঁড়লাম । “কি বিধানদা কাল তো হেভী জিতলেন” ।
বিধানদা শিশুর মতো হাসি দিলেন ।

বুঝে গেলাম ঢিল লেগেছে । বিধানদা এলাহী নাস্তার অর্ডার করলেন । আরো নিশ্চিত হওয়া গেল যে তার পকেটের স্বাস্থ্য ভালো । বিধানদার আবার গান বাজনায় আগ্রহ আছে । কথায় কথায় জানালাম আজ সন্ধ্যায় তো রবীন্দ্র সম্মেলন মুসলিম হলে কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট । বাস চলছে না ।

বিধানদা গম্ভীর হয়ে শুধু বললেন

: কুছতা ভাবিয়ো না । তোমারে সন্ধ্যা বেলায় টেক্সীতে করিয়া লইয়া যাইমু নে । ( বিধানদা সুনামগঞ্জের ছেলে )

আমার অন্তরে শান্তিনিকেতনের সুশীতল বাতাসের ঢেউ খেলে গেল । হলের চারপাশটা মূহুর্তে ভালো হয়ে গেল । ক্যাম্পাসের রোদ,ছুটির সকাল চনমনে হয়ে উঠলো ।

সন্ধ্যাবেলা ট্যাক্সী করে বিধানদা,মনজু আর আমি মুসলিম হলে এসে হাজির । ওখানে গিয়ে রেজা স্যার,হোসাইন কবীর,শিলু,দীনা,রুমানা,নাসিম,গৌতম,সুজিতকে আবিস্কার করলাম ।
আমার অপেক্ষা কখন বেগম সুফিয়া কামালকে দেখবো ।

কিছুক্ষণ পর দেখি আনিসুজ্জামান স্যার বেগম সুফিয়া কামালকে হাত ধরে ধরে নিয়ে আসছেন । লোকজনের ভীড় জমে গেছে । আমি মুগ্ধ চোখে সাঁঝের মায়ার কবি সুফিয়া কামালকে দেখতে থাকি । নীল পাড়ের শাদা সুতি শাড়ি । চোখে খুব পাওয়ারের চশমা । মূহুর্তেই ভালো লেগে যায়,আপনা থেকেই শ্রদ্ধা জাগে । সুজিত দৌঁড়ে গিয়ে এক ফাঁকে অটোগ্রাফ নিয়ে আসে ।
অটোগ্রাফ পেয়ে সুজিত তো মহা খুশী । অটোগ্রাফের দিকে তাকিয়ে দেখি বেগম সুফিয়া কামালের কাঁপা কাঁপা হাতের লেখা ।

ওমা নিজেই নিজের নামের বানান ভুল করেছেন । কামালের জায়গায় কমাল লিখেছেন ।

সম্মেলন শুরু হলো । হল ভর্তি লোকজন । সারা বাংলাদেশ থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত পিপাসু মানুষ । আমরা দলবল এক সাথে বসতে পারলাম না । কে কোথায় ছিটকে পড়লো কে জানে । সুজিত অটোগ্রাফের পৃষ্ঠাটা আমার কাছ থেকে নিতে ভুলে গেল ।

খুলনা থেকে আসা ছেলে মেয়েরা মঞ্চে পারফর্ম করছে । আমার বুক পকেটে অটোগ্রাফের পৃষ্ঠাটা । একটু পর পর পকেটে হাত দিয়ে দেখি কাগজটা আছে কি না । কি রকম যে এক অনুভূতি !

শ্রদ্ধেয়া বেগম সুফিয়া কামাল বেঁচে নেই । আনিসুজ্জামান স্যার এখনো আছেন মাথার উপর ছাতা হয়ে ।

সুজিত এখন আর বাংলাদেশে নেই । বাবরী মসজিদ নিয়ে তুমুল দাঙ্গার পর সুজিতদের কুমিল্লার বাড়ি থেকে ওদের উচ্ছেদ করা হয়েছে । বন্ধুরা বয়সী ঈগল পাখির থাবা চোখের কোণে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে ।

যায় দিন তুমুল বর্ষার মতো ।

অটোগ্রাফটা আমার কাছে স্মৃতির সেপটিপিন হয়েই পড়ে থাকলো, টাটকা এখনো ।

সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে- কবির সুমন


আজ ২০ই নভেম্বর। বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুদিবস।

বেগম সুফিয়া কামালের দর্শন আমি জীবনে প্রথম পাই ১৯৯৬ সালে; আমার প্রথম সঙ্গীত সফরে বাংলাদেশে – যখন আমি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের জন্য তহবিল তুলতে গিয়েছিলাম। তাঁর কথা আমি আগে শুনেছি, পড়েছি, খুব বেশি পড়ার সুযোগ পাই নি। পশ্চিম বঙ্গের ক’জন আর অন্নদা শংকর রায়ের মতো বেগম সুফিয়া কামালের খবর রাখেন? ক’টা লেখা বেরিয়েছে তাঁর উপর? কিছুই না। আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা যখন নিয়ে গেলে তাঁর বাড়িতে আমার একটা প্রথম উদ্ঘাটন হলো যে আমার সামনে যিনি বসে আছেন তিন সাক্ষাৎ আমার মা। আমি দ্বিতীয় বার এক মায়ের দর্শন পেলা। আমার প্রথম মা উমা চট্টোপাধ্যায় আর দ্বিতীয় মা বেগম সুফিয়া কামাল। আমার ভাবতে গর্ব হয় আমার গর্ভধারিনী মা উমা চট্টোপাধ্যায়কে শুনিয়েছিলাম তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘বেঁচে থাক… ’

মাটিতে পায়ের কাছে বসে পড়লাম। কোনোদিন তাঁকে আগে দেখি নি। তিনি আমায় আদর করছেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর আমিও তাঁকে আদর করছি। আমিও…! ছেলেরা যেমন মায়ের সাথে করে। আমি তাঁর গাল টিপে দিচ্ছিলাম। অতো মিষ্টি একজন মানুষ যে হতে পারে আমার জানা ছিলো না। ঠিক আমি নিজের মাকে যেভাবে আদর করতাম সেভাবে আমি খালাম্মাকে আদর করেছি। বেগম সুফিয় কামাল আমাদের খালাম্মা, মাসী মা। আর আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে তিনি হলেন ‘নানী’।

আমার কান্না এসে যাচ্ছে। এই একজন মানুষের কথা ভাবলে আমার কান্না পাই।

তারপর আমি যে গানটি লিখেছিলাম সেটি আমি লিখি নি আসলে – সময় লিখিয়ে নিয়েছে; আমার আসল যে বাঙালি-চেতনা, মানবচেতনা সেটা লিখিয়ে নিয়েছে। যে বাঙালি আজ বড়ো কম দেখি পশ্চিম বঙ্গে, যে বাঙালিকে বাঙালিয়ানা প্রমাণ করতে হয় ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে।

না, আমি সে বাঙালি না। আমি একটা অন্য বাঙালি; যার দেশ একটা জায়গায় না। বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন সারা পৃথিবীর মানুষ।

তার উপর গানটি লিখে আমি প্রথম গেয়েছিলাম বাংলাদেশেই। ১৯৯৮ বাংলাদেশে আমার দ্বিতীয় সঙ্গীত সফরে, মিরপুর স্টেডিয়ামে।

ঐ তো লক্ষ ছেলেমেয়ে
নাতিনাতনি দামাল
সবুজ দ্বীপের মত মাঝখানে
সুফিয়া কামাল

এক একটা দেশ থাকে মানচিত্রেই শুধু রাখা
কারুর নয়নে থাকে স্বদেশের ছবিখানি আঁকা
আমি সেই স্বদেশের ছবি দেখি আপনার মুখে
সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে।

মাটিতে পায়ের কাছে বসেছি ধুলোর মত আমি
পৃথিবীকে চুমু খায় গানে গানে আমার বোকামি
বোকারাই গান লেখে, গান বাঁধে, গান গেয়ে মরে
এবার মরলে আমি জন্মাব আপনার ঘরে।

আপনার ঘর মানে ঘর আর বাইরের মিল
ভাষার থালায় ভাত খেতে বসে অপার নিখিল
কারা ভাত কেড়ে নেয় সাবধান সামাল সামাল
ভাত মানে ভাষা আর খালাম্মা সুফিয়া কামাল।
আজ ২০ই নভেম্বর। বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুদিবস।

বেগম সুফিয়া কামালের দর্শন আমি জীবনে প্রথম পাই ১৯৯৬ সালে; আমার প্রথম সঙ্গীত সফরে বাংলাদেশে – যখন আমি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের জন্য তহবিল তুলতে গিয়েছিলাম। তাঁর কথা আমি আগে শুনেছি, পড়েছি, খুব বেশি পড়ার সুযোগ পাই নি। পশ্চিম বঙ্গের ক’জন আর অন্নদা শংকর রায়ের মতো বেগম সুফিয়া কামালের খবর রাখেন? ক’টা লেখা বেরিয়েছে তাঁর উপর? কিছুই না। আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা যখন নিয়ে গেলে তাঁর বাড়িতে আমার একটা প্রথম উদ্ঘাটন হলো যে আমার সামনে যিনি বসে আছেন তিন সাক্ষাৎ আমার মা। আমি দ্বিতীয় বার এক মায়ের দর্শন পেলা। আমার প্রথম মা উমা চট্টোপাধ্যায় আর দ্বিতীয় মা বেগম সুফিয়া কামাল। আমার ভাবতে গর্ব হয় আমার গর্ভধারিনী মা উমা চট্টোপাধ্যায়কে শুনিয়েছিলাম তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘বেঁচে থাক… ’

মাটিতে পায়ের কাছে বসে পড়লাম। কোনোদিন তাঁকে আগে দেখি নি। তিনি আমায় আদর করছেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর আমিও তাঁকে আদর করছি। আমিও…! ছেলেরা যেমন মায়ের সাথে করে। আমি তাঁর গাল টিপে দিচ্ছিলাম। অতো মিষ্টি একজন মানুষ যে হতে পারে আমার জানা ছিলো না। ঠিক আমি নিজের মাকে যেভাবে আদর করতাম সেভাবে আমি খালাম্মাকে আদর করেছি। বেগম সুফিয় কামাল আমাদের খালাম্মা, মাসী মা। আর আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে তিনি হলেন ‘নানী’।

আমার কান্না এসে যাচ্ছে। এই একজন মানুষের কথা ভাবলে আমার কান্না পাই।

তারপর আমি যে গানটি লিখেছিলাম সেটি আমি লিখি নি আসলে – সময় লিখিয়ে নিয়েছে; আমার আসল যে বাঙালি-চেতনা, মানবচেতনা সেটা লিখিয়ে নিয়েছে। যে বাঙালি আজ বড়ো কম দেখি পশ্চিম বঙ্গে, যে বাঙালিকে বাঙালিয়ানা প্রমাণ করতে হয় ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে।

না, আমি সে বাঙালি না। আমি একটা অন্য বাঙালি; যার দেশ একটা জায়গায় না। বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন সারা পৃথিবীর মানুষ।

তার উপর গানটি লিখে আমি প্রথম গেয়েছিলাম বাংলাদেশেই। ১৯৯৮ বাংলাদেশে আমার দ্বিতীয় সঙ্গীত সফরে, মিরপুর স্টেডিয়ামে।

ঐ তো লক্ষ ছেলেমেয়ে
নাতিনাতনি দামাল
সবুজ দ্বীপের মত মাঝখানে
সুফিয়া কামাল

এক একটা দেশ থাকে মানচিত্রেই শুধু রাখা
কারুর নয়নে থাকে স্বদেশের ছবিখানি আঁকা
আমি সেই স্বদেশের ছবি দেখি আপনার মুখে
সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে।

মাটিতে পায়ের কাছে বসেছি ধুলোর মত আমি
পৃথিবীকে চুমু খায় গানে গানে আমার বোকামি
বোকারাই গান লেখে, গান বাঁধে, গান গেয়ে মরে
এবার মরলে আমি জন্মাব আপনার ঘরে।

আপনার ঘর মানে ঘর আর বাইরের মিল
ভাষার থালায় ভাত খেতে বসে অপার নিখিল
কারা ভাত কেড়ে নেয় সাবধান সামাল সামাল
ভাত মানে ভাষা আর খালাম্মা সুফিয়া কামাল।

জামাতের টাকার গুন - মিনা ফারাহ’র ডিগবাজি


হায়রে, জামাতের টাকার কি গুন!লাউ হয়ে যায় বেগুন!!!
Article of মিনা ফারাহ, January 23, 2011 in Bangla Blog, Politics:
http://minafarah.com/?p=30

আমিও চাই দ্রুত বিচার হোক। মুক্তিযুদ্ধে আমারও আত্মীয়-স্বজন মারা গেছে। আমার নিজের বাড়িটিই ছিল কামারুজ্জামানের আলবদর হেডকোয়ার্টার, যেখানে বসে পাকিস্তানীদের সঙ্গে কামারুজ্জামান মানুষ হত্যার নীল নকশা তৈরি করতো। নয় মাস পরে ফিরে এসে দেখি, মেঝেতে রক্ত মাখা। তাদের তৈরি জেলখানা। যমটুপি। অস্ত্র। দড়ি। গর্ত। গণহত্যার নীল নকশা তৈরি শেষে কার্যকর হতো সেরিপুলে। কামারুজ্জামানের বিষয়ে আমি বহু আগে থেকেই জাগরণের কাজটি করে আসছি। যারা আমার বাড়িতে তার হয়ে কাজ করেছে, পরবর্তীতে সাক্ষী দিয়েছে, টিভিতে বহুবার প্রচার হয়েছে শেরপুরের সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে রাজাকার মোহন মুন্সির মুখে কামরুজ্জামানের কুকর্মের কাহিনী।

জোট এবং তাদের বিচারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে লবি করছে বর্তমান বিরোধীদল। যেহেতু নিউইয়র্ক শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ২৮ বছর আছি, একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে নিয়ত দেখছি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি প্রবাসেও কতোটা শক্তিশালী। গেল একমাসে বাচ্চু রাজাকার, সাঈদী, কামারুজ্জামানের মুক্তির দাবিতে বিশাল মিটিং-লবি হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টেও তারা গেছে। ফান্ডিং করেছে নিউইয়র্কের চেনা ব্যক্তিত্বরা। এতোবড় মিটিং, লবি খোদ ঢাকায় হয়েছে কি-না সন্দেহ। নিউইয়র্কের অধিকাংশ বাংলা মিডিয়া এদের অন্যতম সমর্থক। গণতন্ত্র থাকলে এর চর্চাও যে কতোটা ভয়াবহ হয়ে ওঠে, নিউইয়র্ক শহরে বসে সেই অভিজ্ঞতায় প্রায় সারাক্ষণই টইটুম্বুর আমি।

নয়া দিগন্তের সাথে মিনা ফারাহর সাক্ষাৎকার (18.3.13) প্রশ্ন আকারে এখানে তুলে ধরা হলো।
http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=142034

প্রশ্ন : যুদ্ধাপরাধ বিচারে আপনি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু আপনি সাক্ষ্য দেননি। কেন?

মিনা ফারাহ : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ১০ এপ্রিল আমরা পরিবারের সবাই ভারত চলে যাই। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে ভারত থেকে বাড়ি ফিরে আসি। আসার পর শুনি আমাদের বাড়িতে ক্যাম্প করা হয়েছিল; কিন্তু আমি এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না। কাউকে দেখিওনি। কারো নামও আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না। আমার কাছে তদন্ত কর্মকর্তা গিয়েছিলেন। আমি বলেছি আমি যা শুনেছি তাই বলতে পারব। আমি নিজে কিছু দেখিনি এবং শোনা কথার বাইরে কিছু জানিও না। তারা আমার শোনা কথাই রেকর্ড করল। কিন্তু পরে আমি জানতে পারলাম আমি যা বলেছি তার সাথে তদন্ত কর্মকর্তার লিখিত জবানবন্দীর মিল নেই। এরপর আপনাদের নয়া দিগন্তেই একটি প্রবন্ধ লেখার মাধ্যমে আমি আমাকে সাক্ষী হিসেবে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেই।

অ্যানরেন্ডের স্কুল বনাম জিম জোন্সের দরগা
সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৩, ০১:৩২ অপরাহ্ন

মিনা ফারাহ
ইদানীং বাংলা খবর দেখলে আগে নিশ্চিত হতে হয়, এটা মিসর নাকি বাংলাদেশ?পানির ড্রাম লুকিয়ে রেখে ঢেলে দিচ্ছে পেট্রল। মানুষের পশুবৃত্তিকে উসকে দিচ্ছে রাজনীতিবিদেরা। হয়েছে ক্যান্সারÑ চলছে কালাজ্বরের চিকিৎসা!
রাজনীতিবিদদের রাজনীতিহীনতায় দেশটি প্রায় কলোনি। প্রতিবেশী দেশ বন্ধু হয়, আপনজন হয় না। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘হাসিনাজি আমাদের আপনজন, মনে হয় তিনি এই বাংলারই মেয়ে।’ সাম্রাজ্যবাদীদের কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে ভারত, যেভাবে পশ্চিমারা সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার করছে মধ্যপ্রাচ্য ও
আফ্রিকায়। যাদের দায়িত্ব সার্বভৌমত্ব রা করা তারাই তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবী। জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনের সময় ২০ মিনিটের মিটিং কেন্দ্র করে নয়া দিগন্তে যে কথা আগেই লিখেছিলাম, সেটাই সত্য হলো। ‘জঙ্গিবাদ প্রশ্নে মনমোহনকে বুঝিয়েছেন হাসিনা, ওবামাকে ম্যানেজ করলেন মনমোহন।’ এভাবেই সাম্রাজ্যবাদী অবস্থান কায়েম করছে ভারত।
সম্ভবত মার্কিনিরা চায়, খালেদা। ভারত চায়, হাসিনা। কোনপর্যায়ে নামিয়েছি দেশটাকে! মতার নাম ইয়াবা। ১/১১-এর রিহ্যাব সেন্টার থেকে বেরহয়েই রাজনীতিবিদেরা ফিরে গেছেন যার যার ইয়াবা আস্তানায়। ইয়াবা কেউ খায় না, ইয়াবাই তাকে খায়। সর্বত্রই ‘ঐশী’র কালোছায়া। ’৭৫-এর স্বৈরাচার ভুলে গেছি। আবার বাকশাল প্রত্যাবর্তনে তবুও নীরব মানুষ।অ্যাক্টিভিজমের ভিত্তিতে লেখাটি পর্যাপ্ত নমনীয় নয় বলে দুঃখিত।