Saturday, November 23, 2013

সংখ্যালঘু রক্ষা করবে জামায়াত-শতাব্দীর তামাশা: হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ



 এবার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামছে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ক্রিমিনাল সংগঠন জামায়াত! বাংলাদেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আজ দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশেরও ঘোষণা দিয়েছে একাত্তরে গণহত্যার জন্য দায়ী এই উগ্রপন্থী সংগঠনটি। নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতসহ উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তাদের বিতাড়নের যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে ঠিক সেই মুহূর্তেই বিএনপির এ উগ্রপন্থী রাজনৈতিক মিত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার নামে মাঠে নামছে। কেবল তাই নয়, দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য রীতিমতো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ১৪ দলকে দায়ী করেই দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী উগ্রবাদী সংগঠনের উদ্যোগে কথিত ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা সভা, সমাবেশ ও সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার’ নামে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারের কৌশল নেয়া হয়েছে। জামায়াতের এ ন্যক্কারজনক অপতৎপরতার অংশ হিসেবেই শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায় ভারতের ওপর চাপানো হয়েছে এক জাময়াতী সংগঠনের তথাকথিত সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা থেকে। যেখানে মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদকে। 
জামায়াতের এ ধরনের তৎপরতাকে নাটক ও বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জামায়াতের এ তৎপরতাকে নাটক অভিহিত করে বলেছেন, এরা দেশকে তালেবানী রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন দেখছে। গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন ধ্বংস করতে সদা তৎপর। এরাই নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘুদের বিতাড়নের মাধ্যমে দেশকে তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্নে বিভোর। জামায়াতের এ ধরনের তৎপরতা নাটক ও বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা। কিন্তু মানুষ জানে এরা কারা। জানা গেছে, আজ দেশজুড়ে বিক্ষোভ-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে একাত্তরে গণহত্যার জন্য দায়ী এই উগ্রবাদী সংগঠনটি। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান শুক্রবার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সারাদেশের সকল মহানগরী, জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচী হবে। বাংলাদেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তাহীনতায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আরোহন করে তখনই তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিশেষ করে জামায়াতÑশিবিরকে ঘায়েল করার হীন উদ্দেশ্যে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সে সরকারেরই পবিত্র দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জামায়াতÑশিবির কখনও জড়িত ছিল না। বরং যখনই সংখ্যালঘুদের ওপর কেউ আঘাত দিয়েছে তখনই জামায়াতÑশিবিরের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশে সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তিনি বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ক্যাডারদের কোন বিচার হয়নি। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। উদাহরণ আর না বাড়িয়ে আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে কিস্তিমাত করতে সিদ্ধহস্ত। জামায়াত নেতা বলেন, ইসলাম সব সময়ই সংখ্যালঘুদের জানমাল ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা বিধানের জন্য তাগিদ দেয়। কাজেই কোন সত্যিকারের মুসলমান কখনও সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। বাংলাদেশের কোন ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা কখনও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয়, দোকানপাটে হামলা করে না। বরং হামলা প্রতিরোধ করে। আওয়ামী লীগের লোকরাই সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, জমা-জমি দখল করেছে এবং সংখ্যালঘুদের সব সময়ই রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে থাকে। 
জানা গেছে, জামায়াতের এ ন্যক্কারজনক অপতৎপরতার অংশ হিসেবেই শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায় ভারতের ওপর চাপানো হয়েছে এক জামায়াতী সংগঠনের তথাকথিত সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা থেকে। যেখানে মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদকে। সংগঠনটি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদকে সাম্প্রদায়িক সংগঠন আখ্যায়িত করে বলেছে মুসলমান ও আদিবাসী প্রতিনিধি যে সংগঠনে নেই সেটা কী করে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে এ গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ আব্দুর রব, কবি আব্দুল হাই শিকদার, অধ্যাপক ফাদার তপন ডি রোজারিও, ড. সুকোমল বড়ুয়া, সঞ্জীব চৌধুরী, সুশীল বড়ুয়া প্রমুখ। আলোচনায় বক্তারা ১৯৪৭ সাল পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে সংখ্যালঘু কমে যাওয়ায় আফসোস করতে শোনা গেলেও ২০০১ সাল-পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন সুকৌশলে। এমনকি কাদের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মাতৃভূমিতে না থাকতে পারার যন্ত্রণা নিয়ে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় তা উঠে আসেনি আলোচনায়। অধিকাংশ বক্তার আলোচনার মূল মেসেজ ছিল দেশে জামায়াত-শিবির নয়, আওয়ামী লীগই সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করে। তারাই নির্যাতন করে সংখ্যালঘুদের ওপর। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যত নির্যাতন হয়েছে তা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে একটি দল ফায়দা লুটতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে। তারা দাবি করেন, বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। এভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্যাহত থাকলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌম হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা। রামু, পাবনার সাঁথিয়াসহ যত বড় বড় হামলা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর করা হয়েছে সব ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল জড়িত বলে তারা দাবি করেন। তাঁরা বলেন, মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ঘটনাগুলো ঘটার আগে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার চরম ব্যর্থতা রয়েছে। বক্তারা বলেন, ঘটনা ঘটিয়ে জামায়াত এবং নিরীহ আলেম সমাজের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়। প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন ঘটনায় অপরাধীদের বিচার হয় না। তবে আলোচকরা সকল ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করার দাবি করলেও তাদের আলোচনায় রাজনীতির চিত্র ফুটে ওঠে।
 আলোচনায় অংশ নিয়ে রিপন দে নামের একজন বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচার করা হয়েছে গোলটেবিল আলোচনায় লিখিত বক্তব্যে তা তুলে ধরা হয়নি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান রিপন নামের এ তরুণ। তাঁর এ বক্তব্যে আয়োজকরা এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। এমনকি সঞ্চালক রিপনের বক্তব্যের কোন ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান না করে আরেকজন বক্তার কাছে চলে যান। নিজেদের অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে জাহির এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তারা সব ধর্মের মহান পুরুষদের মানবকল্যাণে বলা বাণী বা বক্তব্য তুলে ধরেন আলোচনায়।
 দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে জামায়াতের অর্থায়নে গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহর, অন্তত তিনমাস অন্তর ঢাকায় একটি করে আলোচনাসভা করার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের বিষয়ে বলা হয়, এ সংগঠন একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন। ভারতের এজেন্ডা অনুযায়ী এ সংগঠন সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে কাজ করে। তাঁরা বলেন, দেশে মুসলিম ধর্ম ও আদিবাসীরা রয়েছে তাদের সংগঠনে না রাখলে এ সংগঠন কোনভাবে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হতে পারে না। 
 দেশজুড়ে নানা কৌশলে উস্কানি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর জন্য কাজ করছে জামায়াত-শিবিরসহ উগ্রবাদী গোষ্ঠী। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিচারের পর চালানো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় জামায়াত-শিবিরসহ উগ্রবাদীদের নক্সা অনুযায়ীই চলছে নাশকতা। নাশকতার ছকে রেখেছে হিন্দু, বৌদ্ধসহ সকল সংখ্যালঘু পরিবার ও উপাসনালয়। কক্সবাজারের রামুর সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়াবহতার পর রবিবারও একই কায়দায় পরিকল্পিতভাবে ফেসবুকে মহানবীকে (স) কটূক্তির খবর ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালানো হতে পারে আরো বিভিন্ন স্থানে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা। দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে সংখ্যালঘুদের ওপর তারা হামলা করছে বলে মনে করছে পুলিশও। এক. সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করে অরাজকতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন। দুই. হামলার প্রত্যুত্তরে সংখ্যালঘুরা পাল্টাহামলা চালালে ধর্মের দোহাই দিয়ে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি করা।

No comments:

Post a Comment