Tuesday, November 19, 2013

সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে- কবির সুমন


আজ ২০ই নভেম্বর। বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুদিবস।

বেগম সুফিয়া কামালের দর্শন আমি জীবনে প্রথম পাই ১৯৯৬ সালে; আমার প্রথম সঙ্গীত সফরে বাংলাদেশে – যখন আমি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের জন্য তহবিল তুলতে গিয়েছিলাম। তাঁর কথা আমি আগে শুনেছি, পড়েছি, খুব বেশি পড়ার সুযোগ পাই নি। পশ্চিম বঙ্গের ক’জন আর অন্নদা শংকর রায়ের মতো বেগম সুফিয়া কামালের খবর রাখেন? ক’টা লেখা বেরিয়েছে তাঁর উপর? কিছুই না। আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা যখন নিয়ে গেলে তাঁর বাড়িতে আমার একটা প্রথম উদ্ঘাটন হলো যে আমার সামনে যিনি বসে আছেন তিন সাক্ষাৎ আমার মা। আমি দ্বিতীয় বার এক মায়ের দর্শন পেলা। আমার প্রথম মা উমা চট্টোপাধ্যায় আর দ্বিতীয় মা বেগম সুফিয়া কামাল। আমার ভাবতে গর্ব হয় আমার গর্ভধারিনী মা উমা চট্টোপাধ্যায়কে শুনিয়েছিলাম তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘বেঁচে থাক… ’

মাটিতে পায়ের কাছে বসে পড়লাম। কোনোদিন তাঁকে আগে দেখি নি। তিনি আমায় আদর করছেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর আমিও তাঁকে আদর করছি। আমিও…! ছেলেরা যেমন মায়ের সাথে করে। আমি তাঁর গাল টিপে দিচ্ছিলাম। অতো মিষ্টি একজন মানুষ যে হতে পারে আমার জানা ছিলো না। ঠিক আমি নিজের মাকে যেভাবে আদর করতাম সেভাবে আমি খালাম্মাকে আদর করেছি। বেগম সুফিয় কামাল আমাদের খালাম্মা, মাসী মা। আর আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে তিনি হলেন ‘নানী’।

আমার কান্না এসে যাচ্ছে। এই একজন মানুষের কথা ভাবলে আমার কান্না পাই।

তারপর আমি যে গানটি লিখেছিলাম সেটি আমি লিখি নি আসলে – সময় লিখিয়ে নিয়েছে; আমার আসল যে বাঙালি-চেতনা, মানবচেতনা সেটা লিখিয়ে নিয়েছে। যে বাঙালি আজ বড়ো কম দেখি পশ্চিম বঙ্গে, যে বাঙালিকে বাঙালিয়ানা প্রমাণ করতে হয় ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে।

না, আমি সে বাঙালি না। আমি একটা অন্য বাঙালি; যার দেশ একটা জায়গায় না। বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন সারা পৃথিবীর মানুষ।

তার উপর গানটি লিখে আমি প্রথম গেয়েছিলাম বাংলাদেশেই। ১৯৯৮ বাংলাদেশে আমার দ্বিতীয় সঙ্গীত সফরে, মিরপুর স্টেডিয়ামে।

ঐ তো লক্ষ ছেলেমেয়ে
নাতিনাতনি দামাল
সবুজ দ্বীপের মত মাঝখানে
সুফিয়া কামাল

এক একটা দেশ থাকে মানচিত্রেই শুধু রাখা
কারুর নয়নে থাকে স্বদেশের ছবিখানি আঁকা
আমি সেই স্বদেশের ছবি দেখি আপনার মুখে
সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে।

মাটিতে পায়ের কাছে বসেছি ধুলোর মত আমি
পৃথিবীকে চুমু খায় গানে গানে আমার বোকামি
বোকারাই গান লেখে, গান বাঁধে, গান গেয়ে মরে
এবার মরলে আমি জন্মাব আপনার ঘরে।

আপনার ঘর মানে ঘর আর বাইরের মিল
ভাষার থালায় ভাত খেতে বসে অপার নিখিল
কারা ভাত কেড়ে নেয় সাবধান সামাল সামাল
ভাত মানে ভাষা আর খালাম্মা সুফিয়া কামাল।
আজ ২০ই নভেম্বর। বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুদিবস।

বেগম সুফিয়া কামালের দর্শন আমি জীবনে প্রথম পাই ১৯৯৬ সালে; আমার প্রথম সঙ্গীত সফরে বাংলাদেশে – যখন আমি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের জন্য তহবিল তুলতে গিয়েছিলাম। তাঁর কথা আমি আগে শুনেছি, পড়েছি, খুব বেশি পড়ার সুযোগ পাই নি। পশ্চিম বঙ্গের ক’জন আর অন্নদা শংকর রায়ের মতো বেগম সুফিয়া কামালের খবর রাখেন? ক’টা লেখা বেরিয়েছে তাঁর উপর? কিছুই না। আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা যখন নিয়ে গেলে তাঁর বাড়িতে আমার একটা প্রথম উদ্ঘাটন হলো যে আমার সামনে যিনি বসে আছেন তিন সাক্ষাৎ আমার মা। আমি দ্বিতীয় বার এক মায়ের দর্শন পেলা। আমার প্রথম মা উমা চট্টোপাধ্যায় আর দ্বিতীয় মা বেগম সুফিয়া কামাল। আমার ভাবতে গর্ব হয় আমার গর্ভধারিনী মা উমা চট্টোপাধ্যায়কে শুনিয়েছিলাম তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘বেঁচে থাক… ’

মাটিতে পায়ের কাছে বসে পড়লাম। কোনোদিন তাঁকে আগে দেখি নি। তিনি আমায় আদর করছেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর আমিও তাঁকে আদর করছি। আমিও…! ছেলেরা যেমন মায়ের সাথে করে। আমি তাঁর গাল টিপে দিচ্ছিলাম। অতো মিষ্টি একজন মানুষ যে হতে পারে আমার জানা ছিলো না। ঠিক আমি নিজের মাকে যেভাবে আদর করতাম সেভাবে আমি খালাম্মাকে আদর করেছি। বেগম সুফিয় কামাল আমাদের খালাম্মা, মাসী মা। আর আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে তিনি হলেন ‘নানী’।

আমার কান্না এসে যাচ্ছে। এই একজন মানুষের কথা ভাবলে আমার কান্না পাই।

তারপর আমি যে গানটি লিখেছিলাম সেটি আমি লিখি নি আসলে – সময় লিখিয়ে নিয়েছে; আমার আসল যে বাঙালি-চেতনা, মানবচেতনা সেটা লিখিয়ে নিয়েছে। যে বাঙালি আজ বড়ো কম দেখি পশ্চিম বঙ্গে, যে বাঙালিকে বাঙালিয়ানা প্রমাণ করতে হয় ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে।

না, আমি সে বাঙালি না। আমি একটা অন্য বাঙালি; যার দেশ একটা জায়গায় না। বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন সারা পৃথিবীর মানুষ।

তার উপর গানটি লিখে আমি প্রথম গেয়েছিলাম বাংলাদেশেই। ১৯৯৮ বাংলাদেশে আমার দ্বিতীয় সঙ্গীত সফরে, মিরপুর স্টেডিয়ামে।

ঐ তো লক্ষ ছেলেমেয়ে
নাতিনাতনি দামাল
সবুজ দ্বীপের মত মাঝখানে
সুফিয়া কামাল

এক একটা দেশ থাকে মানচিত্রেই শুধু রাখা
কারুর নয়নে থাকে স্বদেশের ছবিখানি আঁকা
আমি সেই স্বদেশের ছবি দেখি আপনার মুখে
সুফিয়া কামাল মানে বাংলাদেশের ছোঁয়া বুকে।

মাটিতে পায়ের কাছে বসেছি ধুলোর মত আমি
পৃথিবীকে চুমু খায় গানে গানে আমার বোকামি
বোকারাই গান লেখে, গান বাঁধে, গান গেয়ে মরে
এবার মরলে আমি জন্মাব আপনার ঘরে।

আপনার ঘর মানে ঘর আর বাইরের মিল
ভাষার থালায় ভাত খেতে বসে অপার নিখিল
কারা ভাত কেড়ে নেয় সাবধান সামাল সামাল
ভাত মানে ভাষা আর খালাম্মা সুফিয়া কামাল।

No comments:

Post a Comment