Saturday, March 30, 2013

জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি


জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।



শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তিন সংগঠনের নেতারা বলেন, জামায়াত-শিবিরকে আইন করে নিষিদ্ধ করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

নিষিদ্ধ করার আগে জামায়াতের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র কার্যকর হবে বলেও অভিমত তাদের।

বিকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনগুলোর নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য আমরা সব সময়ই মাঠে ছিলাম, থাকবো। কিন্তু আইন করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো সশস্ত্র প্রতিরোধে গেলে তা গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করতে পারে, যার ঘোষণা আগেই জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে।”

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামী নামের সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামীরই আরেকটি সংগঠন। তারা আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে তার জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে।

“সরকার যদি এ ধরনের কর্মসূচিতে অনুমতি দেয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য এর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছু হতে পারে না।”
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তরুণ প্রজন্মের সব কর্মসূচি অহিংস ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব অহিংস কর্মসূচির বিরুদ্ধে তারা ইতোমধ্যেই সহিংস প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি একে খন্দকার বলেন, জামায়াত আজকে যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা তাদের এ ধরনের প্রথম কাজ নয়।

“মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এ দলটির রাজনীতি করার অধিকার শুধু নয়, এ দেশে তাদের থাকারও অধিকার নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ছয়টি দাবি জানানো হয়।

তাদের প্রধান দাবি হলো- জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জঙ্গি ও সহিংস আগ্রাসন চালানোর অপরাধে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা।

এই গোষ্ঠীর আর্থিক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে সেজন্য এদের ব্যাপারে পরিপূর্ণ সতকর্তা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ অবলম্বন করা ।

এছাড়া সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূক শাস্তির দাবি জানানো হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষী ও তাদের পরিবারের পূর্ণ নিরাপত্তার দেয়াসহ অন্যান্য কাজে ট্রাইব্যুনালের জনবল ও রসদের ঘাটতি পূরণের দাবি তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আগ্রাসন ও নির্বিচার সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা এবং গণজাগরণ মঞ্চসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক সব সংগঠনকে দেশের সর্বত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালনের অনুমতি এবং সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার দাবি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গণআদালতের বিচারক আবু ওসমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

Monday, March 25, 2013

বাংলাদেশ শুধুই আমার বাবার কবরস্থান: প্রবীর সিকদার

http://uttaradhikar71news.com » খবর

আজ ২৬ মার্চ- হাজার বছরের ইতিহাসের রক্ত আখরে লেখা অনন্য এক গৌরবোজ্জ্বল দিন


আজ ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের রক্ত আখরে লেখা অনন্য এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনার দিন। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক দুঃশাসন আর শোষণ-বঞ্চনার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার দিন। আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার ডাক এসেছিল। শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। রুশ-ভারত মিত্রশক্তির কাছে নয় মাসের মধ্যে পরাজিত হয় পাকিস্তান -মার্কিন শক্তি। এই দিনে কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধী, কমরেড জ্যোতি বসু, প্রণব মুখার্জী , পন্ডিত রবিশংকর , তার বন্ধু জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতকে- ভারতের প্রতিটি বন্ধুকে।

পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে সেদিন থেকেই রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার দামাল ছেলেরা। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ মাস বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশজুড়ে উদ্্যাপিত হবে মহান স্বাধীনতা দিবস।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পরই মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়।

বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপস নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।'

পরদিন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান (পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পাঠ করেন।

পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল আগেই। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশনামূলক উদাত্ত আহ্বানে বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও শুরু করে। আর ২৬ মার্চ থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, সেনা ছাউনিগুলোতেও। ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মুজিবনগরে আম্রকাননে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ। জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির প্রতি। শ্রদ্ধা জানাবে শহীদ জাতীয় নেতাদের, আত্মত্যাগকারী বাংলার অকুতোভয় বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের। আর বিশ্বজুড়ে যে বন্ধুরা অকৃত্রিম সহযোগিতা করেছে প্রাণের ভয়-ঝুঁকি তুচ্ছ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ সরকার সম্মাননা জানাচ্ছে মিত্র বন্ধুদের। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।


ইবনে সিনার পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা:২৫% কমিশন দিয়ে চিকিৎসাসেবার নামে বেশি অর্থ আদায়



ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে নালিশি মামলা করা হয়েছে।
রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা আকিল উজ্জামান খান বাদী হয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এ আবেদন করেন।
আরজিতে বলা হয়, বিবাদী প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সব ডাক্তারি পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে তা থেকে ২৫% কমিশন দিয়ে থাকেন। আরও বলা হয়, জেলা সরকারি হাসপাতালে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা খরচ ৩০ টাকা। বিভাগীয় শহরে তা ৫০ টাকা। ফার্মগেটের গ্রিনল্যান্ড অ্যান্ড প্যাথলজিতে একই পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা। তাই ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে ২৫% কমিশন দিয়ে চিকিৎসাসেবার নামে বেশি অর্থ আদায় করা প্রতারণাযোগ্য অপরাধ। এ কারণে ন্যায়বিচার চেয়ে এ মামলা করা হয়েছে।
আজ সোমবার মহানগর হাকিম তানভীর আহমেদ ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।
মামলায় ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক (প্রশাসন), ইবনে সিনা ট্রাস্টের সচিব, প্রধান হিসাবরক্ষক এবং বিজ্ঞাপন ও বিপণন বিভাগের প্রধানকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ১৬ মার্চ বাদী টেলিভিশনসহ অন্যান্য প্রচারমাধ্যমে দেখেন যে, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে ২৫% কম খরচে চিকিৎসা করা হয়। পরদিন বাদী ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করতে যান। এ জন্য তাঁকে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ফির ২৫% কমিশন দিয়ে ১৪০ টাকা জমা দিতে বলা হয়। ওই পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ফি ১৮৬ টাকা। এ সময় বাদী জানতে চান, সরকার নির্ধারিত ফির সঙ্গে পরীক্ষার মূল্যমান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গড় মানদণ্ড বজায় রেখে এ কমিশন রাখা হয়েছে কি না। বিবাদী প্রতিষ্ঠান তা জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।

Sunday, March 24, 2013

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ১১ পাকিস্তানি মৈত্রী সম্মাননা পেলেন



ঢাকা: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যখন এ দেশে গণহত্যাসহ মানবতার বিরুদ্ধে যতো অপরাধ করেছে, সেই সময়ে পাকিস্তানেও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ সরকার এবার সেই সব বন্ধুদের সম্মাননা জানিয়েছে।
মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত সেইসব বন্ধুরা হলেন-পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ নাসিম আখতার, অ্যাডভোকেট জাফর মালিক, দার্শনিক প্রয়াত একবাল আহমেদ (মরণোত্তর), মানবাধিকার কর্মী বেগম তাহিরা মাজহার আলী(মরণোত্তর), রাজনীতিবিদ মীর গাউস বকশ, কবি ও সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, কবি হাবিব জালিব, রাজনীতিবিদ মালিক গোলাম জিলানি, রাজনীতিবিদ ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আশরাফ মালিক, অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীর, রাজনীতিবিদ কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ, কবি ও সাংবাদিক আনোয়ার পীরজাদো এবং কবি ও মানবাধিকার কর্মী আহাম্মদ সালিম।
যে অবদানের এ সম্মাননা:

• পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ বেগম নাসিম আখতার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির(ন্যাপ)কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্তৃক অপারেশন সার্চ লাইট’র একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তার কাছে গণহত্যার বিবরণ শুনে কবি আহমদ সালিম কবিতা রচনা করে কারাবরণ করেন। তিনি গণহত্যার প্রতিবাদ করেন, বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর লাহোর কারাগারে বন্দি ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে গিযে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিষ্টি বিতরণও করেন এ নেত্রী।
• অ্যাডভোকেট জাফর মালিক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধর মুক্তির জন্য সোচ্চার ছিলেন।
• প্রয়াত ইকবাল আহমেদ ছিলেন একজন দার্শনিক।তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে নানামুখী প্রয়াস গ্রহণ করেন।
• বেগম তাহিরা মজুমদার আলী একজন মানবাধিকার কমী। ১৯৭১ সালে তার নেতৃত্বে লাহোরের মল রোডে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি গ্রেফতার হন।
• প্রয়াত মীর গাউস বকশ বিজেঞ্জো বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ট সুহ্রদ ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার পার্টি বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তানের জনগণকে অবহিত করেন।
• প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার প্রতিবাদ করে কবিতা নিবন্ধ প্রকাশসহ বিবৃতি প্রদান করেন।
• প্রয়াত হাবিব জালিব ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আওয়ামী পার্টির নেতা হিসাবে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং কবিতা প্রকাশ করেন।
• প্রয়াত মালিক গোলাম জিলানি পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে তিনি একটি খোলা চিঠি লিখে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি করেন। এ জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়।
• প্রয়াত শামীম আশরাফ মালিক ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ গ্রেফতার হওয়া বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দেন।
• প্রয়াত ওয়ারিস মীর একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক হিসাবে দৈনিক জং পত্রিকায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
• প্রয়াত কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন নির্ভরযোগ্য সহযোগী। তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সিনিযর সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি আত্মগোপনে থেকে গণহত্যার প্রতিবাদ ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রচেষ্টা চালান।
• প্রয়াত আনোয়ার পীরজাদা ছিলেন একজন পাইলট। তিনি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের খাটি নেতা হিসাবে বর্ণনা করেন। সামরিক সরকার তাকে চাকরিচ্যুত সাতবছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলার জন্য।
• আহমদ সালিম তার কবিতার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে বহু কবিতা রচনা করে প্রতিবাদ জানান। এজন্য তাকে জরিমানা ও কারাবরণ করতে হয়।



একাত্তরে বাঙালির পাশে দাঁড়ানো ৬৯ বিদেশি বন্ধুকে রোববার সম্মাননা জানায় বাংলাদেশ। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই ষষ্ঠ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রথমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বিদেশি বন্ধুদের পরিচিতি ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
রীতি অনুযায়ী বিদেশি বন্ধুদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তার মৃত্যুতে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মাননা তুলে দেন।
এ পর্বের সম্মাননার ২০৩ জন বিদেশি বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ৬৯ জন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা তাদের প্রতিনিধি এবার সম্মাননা নিতে ঢাকায় এসেছেন।
এবার ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ পেয়েছেন কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো ও যুক্তরজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যারল্ড উইলসন (মরণোত্তর)।
তাদের পক্ষে কিউবার রাষ্ট্রদূত ও হ্যারল্ড উইলসনের ছেলে অধ্যাপক রবিন উইলসন সম্মাননা গ্রহণ করেন।
আর ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়া হয় ৬৭ বিদেশি বন্ধুকে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটির পশ্চিমবঙ্গ শাখাকেও মৈত্রী সম্মাননা দেওয়া হয় ।