Sunday, March 24, 2013

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ১১ পাকিস্তানি মৈত্রী সম্মাননা পেলেন



ঢাকা: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যখন এ দেশে গণহত্যাসহ মানবতার বিরুদ্ধে যতো অপরাধ করেছে, সেই সময়ে পাকিস্তানেও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ সরকার এবার সেই সব বন্ধুদের সম্মাননা জানিয়েছে।
মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত সেইসব বন্ধুরা হলেন-পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ নাসিম আখতার, অ্যাডভোকেট জাফর মালিক, দার্শনিক প্রয়াত একবাল আহমেদ (মরণোত্তর), মানবাধিকার কর্মী বেগম তাহিরা মাজহার আলী(মরণোত্তর), রাজনীতিবিদ মীর গাউস বকশ, কবি ও সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, কবি হাবিব জালিব, রাজনীতিবিদ মালিক গোলাম জিলানি, রাজনীতিবিদ ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আশরাফ মালিক, অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীর, রাজনীতিবিদ কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ, কবি ও সাংবাদিক আনোয়ার পীরজাদো এবং কবি ও মানবাধিকার কর্মী আহাম্মদ সালিম।
যে অবদানের এ সম্মাননা:

• পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ বেগম নাসিম আখতার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির(ন্যাপ)কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্তৃক অপারেশন সার্চ লাইট’র একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তার কাছে গণহত্যার বিবরণ শুনে কবি আহমদ সালিম কবিতা রচনা করে কারাবরণ করেন। তিনি গণহত্যার প্রতিবাদ করেন, বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর লাহোর কারাগারে বন্দি ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে গিযে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিষ্টি বিতরণও করেন এ নেত্রী।
• অ্যাডভোকেট জাফর মালিক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধর মুক্তির জন্য সোচ্চার ছিলেন।
• প্রয়াত ইকবাল আহমেদ ছিলেন একজন দার্শনিক।তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে নানামুখী প্রয়াস গ্রহণ করেন।
• বেগম তাহিরা মজুমদার আলী একজন মানবাধিকার কমী। ১৯৭১ সালে তার নেতৃত্বে লাহোরের মল রোডে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি গ্রেফতার হন।
• প্রয়াত মীর গাউস বকশ বিজেঞ্জো বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ট সুহ্রদ ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার পার্টি বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তানের জনগণকে অবহিত করেন।
• প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার প্রতিবাদ করে কবিতা নিবন্ধ প্রকাশসহ বিবৃতি প্রদান করেন।
• প্রয়াত হাবিব জালিব ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আওয়ামী পার্টির নেতা হিসাবে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং কবিতা প্রকাশ করেন।
• প্রয়াত মালিক গোলাম জিলানি পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে তিনি একটি খোলা চিঠি লিখে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি করেন। এ জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়।
• প্রয়াত শামীম আশরাফ মালিক ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ গ্রেফতার হওয়া বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দেন।
• প্রয়াত ওয়ারিস মীর একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক হিসাবে দৈনিক জং পত্রিকায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
• প্রয়াত কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন নির্ভরযোগ্য সহযোগী। তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সিনিযর সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি আত্মগোপনে থেকে গণহত্যার প্রতিবাদ ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রচেষ্টা চালান।
• প্রয়াত আনোয়ার পীরজাদা ছিলেন একজন পাইলট। তিনি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের খাটি নেতা হিসাবে বর্ণনা করেন। সামরিক সরকার তাকে চাকরিচ্যুত সাতবছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলার জন্য।
• আহমদ সালিম তার কবিতার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে বহু কবিতা রচনা করে প্রতিবাদ জানান। এজন্য তাকে জরিমানা ও কারাবরণ করতে হয়।



একাত্তরে বাঙালির পাশে দাঁড়ানো ৬৯ বিদেশি বন্ধুকে রোববার সম্মাননা জানায় বাংলাদেশ। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই ষষ্ঠ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রথমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বিদেশি বন্ধুদের পরিচিতি ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
রীতি অনুযায়ী বিদেশি বন্ধুদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তার মৃত্যুতে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মাননা তুলে দেন।
এ পর্বের সম্মাননার ২০৩ জন বিদেশি বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ৬৯ জন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা তাদের প্রতিনিধি এবার সম্মাননা নিতে ঢাকায় এসেছেন।
এবার ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ পেয়েছেন কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো ও যুক্তরজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যারল্ড উইলসন (মরণোত্তর)।
তাদের পক্ষে কিউবার রাষ্ট্রদূত ও হ্যারল্ড উইলসনের ছেলে অধ্যাপক রবিন উইলসন সম্মাননা গ্রহণ করেন।
আর ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়া হয় ৬৭ বিদেশি বন্ধুকে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটির পশ্চিমবঙ্গ শাখাকেও মৈত্রী সম্মাননা দেওয়া হয় ।

No comments:

Post a Comment