পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে সেদিন থেকেই রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার দামাল ছেলেরা। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ মাস বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশজুড়ে উদ্্যাপিত হবে মহান স্বাধীনতা দিবস।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পরই মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়।
বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপস নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।'
পরদিন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান (পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পাঠ করেন।
পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল আগেই। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশনামূলক উদাত্ত আহ্বানে বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও শুরু করে। আর ২৬ মার্চ থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, সেনা ছাউনিগুলোতেও। ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মুজিবনগরে আম্রকাননে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ। জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির প্রতি। শ্রদ্ধা জানাবে শহীদ জাতীয় নেতাদের, আত্মত্যাগকারী বাংলার অকুতোভয় বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের। আর বিশ্বজুড়ে যে বন্ধুরা অকৃত্রিম সহযোগিতা করেছে প্রাণের ভয়-ঝুঁকি তুচ্ছ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ সরকার সম্মাননা জানাচ্ছে মিত্র বন্ধুদের। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
No comments:
Post a Comment