Tuesday, December 27, 2016

বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ভারতে ব্রাত্য কেন? - অমিত গোস্বামী



গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিক। তখন টেলিভিশন দেখার জন্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব বাড়িতে ছাদের ওপরে অ্যালমুনিয়ামের দু’টি অ্যান্টেনা শোভা পেত। একটা ভারতের সরকারী চ্যানেলের জন্যে। অন্যটা বি’টিভি অর্থাৎ বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্যে। যে কোন বাড়ি সন্ধ্যের পরে বাংলাদেশ। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বাকের ভাই অর্থাৎ বর্তমান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর। ভারতের দূরদর্শন তখন দূয়োরানি। বি’টিভির বিজ্ঞাপনের জোরে বাজারে বিকোচ্ছে বাংলাদেশি সাবান, গুঁড়ো দুধ, কনডেন্সড মিল্ক, পেস্ট। চোরা পথে আসছে সব। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদ বি’টিভির প্রচারে তখন রীতিমত হিরো। বাংলাদেশের টিভি নাটকের জনপ্রিয়তায় ঢাকা পড়ে গেছে কলকাতায় তৈরী বাংলা সিনেমা। উপায় না দেখে কলকাতা দূরদর্শন শনিবারে চালিয়ে যাচ্ছে উত্তম, সুচিত্রা, সুপ্রিয়া, সৌমিত্র। তা সত্ত্বেও বোকাবাক্স শাসন করে যাচ্ছে পদ্মাপারের রাজ্জাক, ববিতা। এ এক অদ্ভুত বাংলাদেশি রাজত্ব বিরাজ করছে টেলিভিশনে। তীব্র আকর্ষনে সন্ধ্যে হলেই খুলছে টিভি নামক চৌখুপি বাক্স আর বাজছে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’।

কিন্তু ১৯৯০ সালে ভারতের বাজারে এল কেবল চ্যানেল মাত্র চারটে প্রাইভেট চ্যানেল নিয়ে। তার একটি বিবিসি নিউজ। সেই সময় থেকে বি’টিভির পিছু হটা শুরু। আরেকটা ফ্যাক্টর অবশ্যই কাজ করেছিল। স্বৈরতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশে তীব্র হতেই পেশাদারীত্বের উতকর্ষ ছেড়ে বি’টিভি হয়ে গেল কর্তাভজা লাউডস্পীকার। মুখ ফেরাতে শুরু করল ভারতীয় বাঙালি দর্শক। মুছে গেল বাংলাদেশ আমাদের টেলিভিশন সেট থেকে। বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতায় লড়তে শুরু করল ভারতীয় চ্যানেলগুলি। তখন বিদেশী চ্যানেলগুলির সম্প্রচার হত সিঙ্গাপুর বা হংকং থেকে। কিছু প্রযুক্তিগত সুবিধা পাওয়ার কারনে। ভারতীয় চ্যানেলগুলি প্রতিযোগিতার চাপে সেই প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়ার জন্যে নিজেদের অফিস করে নিল সিঙ্গাপুরে।



অর্থাৎ দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গেল ভারতীয় চ্যানেলগুলি এবং জনপ্রিয়তার হিসেবে পিছনে ফেলে দিল বিদেশী চ্যানেলদের। কিন্তু তখন কোথায় বাংলাদেশের টেলিভিশন শিল্প? তারা এই আকাশলড়াই থেকে নিজেদের দূরে রেখে মন দিল ভারতীয় চ্যানেলের অনুকরনে। কিন্তু দুধ যদি পাওয়া যায় মানুষ ঘোল খাবে কেন? বাজার অর্থনীতির নিয়ম মেনে সুযোগ পেতেই বাংলাদেশের টিভি বাজারের দখল নিল ভারতের চ্যানেলগুলি। আজ বাস্তব এই যে বাংলাদেশে ভারতের কমপক্ষে ৪২টি টিভি চ্যানেল দেখানো হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তথা অবশিষ্ট ভারতে বাংলাদেশের প্রায় ৩০টি চ্যানেলের মধ্যে অনিয়মিতভাবে দুই একটি দেখা যায়। প্রশ্ন ওঠে এই পরিস্থিতি কেন? সম্প্রতি একটী জরিপের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ বাংলাদেশে টেলিভিশন দেখেন এমন নারীদের ৬৬ শতাংশের বেশি অধিকাংশ সময় ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখেন। চ্যানেলগুলোর শীর্ষে রয়েছে স্টার জলসা। বাংলাদেশের ৫৮ শতাংশ নারী দর্শক নিয়মিত এই চ্যানেলটি দেখেন।“ জরিপটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ।

 সিনেমা, টেলিভিশন বা বিনোদন জগতে আদর্শ খুব বেশি একটা কাজ করে না। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন চ্যানেল আপনার হাতের মুঠোয়। আপনি আপনার রিমোট কন্ট্রোল চাপতে থাকুন। বাংলাদেশে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইন্ডিয়া প্রভৃতি দেশের ভালো ভালো চ্যানেল দেখতে পাবেন। সুতরাং ইন্ডিয়ার ওই চ্যানেলটি দেখব না, এসব কথা বলে এখন আর পার পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের অনেকের ধারনা, যেখানে আজ ভারত সারা বিশ্বের দর্শকদের তাদের চলচ্চিত্র, হিন্দি সিরিয়াল, নাটক, গান, নাচ দিয়ে মাতিয়ে তুলছে সেখানে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব হয়তো বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোকে তাদের দেশে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না। কিন্তু ধারনাটা সম্পূর্ণ ভুল। বাংলাদেশে ভারতের টিভি চ্যানেলের প্রচার নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন বা আবেদন করা হয়েছে অনেকবার। কিন্তু বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার না হওয়ার পিছনে আসল কারনটা কি?


ভারতে বিদেশী টিভি চ্যানেল দেখাতে হলে কিছু নিয়ম নীতি পালন করতে হয়। সম্প্রতি ভারতীয় হাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ভারতে দেখানোর ক্ষেত্রে ভারত সরকারের কোনো আইনি বাধা নেই। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে যে কেউ ভারতে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল ডাউনলিংক করতে পারবে”।


বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “ভারতীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও ভারতে কোনো বাংলাদেশি চ্যানেল ডাউনলিংকের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। কোনো কোম্পানি যদি বাংলাদেশি চ্যানেল ডাউনলিংক করতে চায়, তাহলে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় নীতিমালা অনুযায়ী সর্বতোভাবে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো টেলিভিশন চ্যানেল ভারতে ডাউনলিংকের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেনি”।



তবে আবেদনকারী কোম্পানিকে প্রথম টেলিভিশন চ্যানেল ডাউনলিংকের জন্য ৫ কোটি ভারতীয় টাকা এবং পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিটি অতিরিক্ত চ্যানেল ডাউনলিংকের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ ভারতীয় টাকা নেট মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এই মূল্য ছাড়াও ডাউনলিংকের অনুমতি মঞ্জুরের সময় ১০ লাখ ভারতীয় টাকা ফি দিতে হবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আপলিংক করা প্রতিটি চ্যানেল ডাউনলিংকের জন্য বার্ষিক ফি হিসেবে ১৫ লাখ ভারতীয় টাকা দিতে হবে। ডাউনলিংকের নিবন্ধন ও অনুমতি ১০ বছর বহাল থাকবে। এটা করতে পারলে মাল্টি সিসটেম অপারেটররাও (এমএসও) সেই চ্যানেল বিপণনের ব্যবস্থা করতে পারবে। কিন্তু বিদেশি টিভি চ্যানেল প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ডাউনলিংক ফি বেশি হওয়ায় ভারতীয় কেবল অপারেটররা আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। 

 ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বেসরকারি চ্যানেল চালাতে আগ্রহী এখানকার চ্যানেল বিপণনকারী সংস্থাগুলো। কলকাতাসহ রাজ্যের বাঙালি দর্শকদের মধ্যে বাংলাদেশি চ্যানেল প্রদর্শনের জন্য নিয়মিত দর্শকদের কাছ থেকে চাপ সহ্য করতে হচ্ছে বিপণনকারীদের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল আইনগতভাবে ভারতে ডাউন লিঙ্কের অনুমোদন নিয়ে না আসায় দর্শকদের কাছে বাংলাদেশের চ্যানেল পৌঁছে দিতে পারছে না বিপননকারী সংস্থাগুলো। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি চ্যানেলের মালিক আমাকে একান্ত আড্ডায় বলেছেন, “বাংলাদেশের মাত্র ২০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের বাজারে দেশীয় চ্যানেলগুলো চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর যদি ভারতে সম্প্রচারের জন্য বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয় তাহলে বিপদে পড়তে হবে।“


এতক্ষনে আসল সমস্যা বোঝা গেল। প্রথম ডাউনলিংকের জন্য ৫ কোটি ভারতীয় টাকা, সাথে ডাউনলিংকের অনুমতি মঞ্জুরের সময় ১০ লাখ ভারতীয় টাকা এবং ডাউনলিংকের জন্য বার্ষিক ফি হিসেবে ১৫ লাখ ভারতীয় টাকা প্রতি চ্যানেলকে দিতে হবে। এখানে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখা দরকার। ইংরেজি বা হিন্দি চ্যানেলের প্রসার সর্বভারতীয়। কিন্তু বাংলা চ্যানেলের প্রচার শুধু বাংলাভাষীদের মধ্যে। কাজেই সারা ভারতে প্রচারিত বিদেশী চ্যানেলদের সাথে বাংলাদেশের চ্যানেলদের একই রকম অর্থ জমা দেওয়ার ফরমানে তাদের ইচ্ছে বা উৎসাহ আজ অবধি তৈরী হয় নি। 


 তাহলে বাংলাদেশে যে ভারতীয় চ্যানেলগুলি প্রচারিত হচ্ছে সে জন্যে তাদের বাংলাদেশ সরকারকে কি দিতে হচ্ছে? কেবল নেটওয়ার্ক অ্যাসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা কোয়াব সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের প্রায় অর্ধশত চ্যানেল প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু এর বিনিময়ে তারা খুবই কম অর্থ দিচ্ছে। ভারতীয় চ্যানেল মাত্র তিন লাখ টাকার টোকেন মানি দিয়ে বাংলাদেশে চালু করা যায়। আরো একটা কথা, বেশিরভাগ ভারতীয় চ্যানেল 'ফ্রি টু এয়ার' (বিনামূল্যের) হওয়ায় সব চ্যানেল সম্প্রচার করা অত্যন্ত সুবিধাজনক। 


 বুঝলাম। কিন্তু এ তো অন্যায়। কোথায় ৫ কোটিরও বেশি আর কোথায় ৩ লক্ষ ! কেবল অপারেটররা ব্যবসায়ী। তারা তাদের সুবিধা দেখবেন। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান একমাত্র করতে পারেন দুই দেশের সরকার। কিন্তু তার আগে জানিয়ে রাখি যে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরে প্রায় ৪৪ বছর পরে প্রথম বাস্তবসম্মত সম্প্রচার নীতিমালা এতদিনে তৈরী হয়েছে। কিন্তু এখনো সম্প্রচার আইন তৈরী হয় নি। কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশের সময় এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু হয় নি। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। কারণ তিস্তার স্রোত বাংলাদেশের জন্যে যতটা জরুরী, বাংলাদেশের চ্যানেন তেমনই ভারতে আসা জরুরী। না হলে যেটা হবে সেটা হল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে যাবে না ফিরে – সেটা আর হবে না।


 বাংলাদেশের বর্তমান সরকার অনেক কাজ করছেন যা বাস্তবোচিত ও ভবিষ্যতের জন্যে ভাল ফল আনতে বাধ্য। কাজেই তাদের কাছে এই প্রত্যাশা করা যেতেই পারে এই সমস্যা সমাধানে তারা উদ্যোগী হবে। কিন্তু বাংলাদেশের চ্যানেলদের পশ্চিমবঙ্গে গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু?



ভারতের অন্যতম বৃহত্তম চ্যানেল বিপণনকারী সংস্থা মন্থন'র পরিচালক শিবশঙ্কর চক্রবর্তীর মতে, বাংলাদেশে যেহেতু অধিকাংশ পশ্চিমবঙ্গবাসীর পূর্বপুরুষের ভিটা এবং একই সংস্কৃতি, ভাষা এবং খাদ্যাভ্যাসের ফলে এখানে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে আসলে দর্শকদের যেমন বাংলাদেশি চ্যানেল দেখার সুযোগ হবে তেমনই চ্যানেলগুলোও ব্যবসা করতে পারবে। জিটিপিএল নামে আর একটি বৃহত্তম চ্যানেল বিপণনকারী সংস্থার পরিচালক সুষেন বলেন, "প্রতিদিন কয়েক শ ফোন আসে। সবারই দাবি, অন্য বিদেশি চ্যানেল দেখা গেলে কেন বাংলাদেশের খবর-নাটক-ছবি কোনো চ্যানেলে দেখানো যাচ্ছে না। এর জবাব আসলে আমরা দিতে পারি না।" ভারতের জি-গ্রুপের বিপণনকারী সংস্থার সিটি কেবলের পরিচালক সুরেশ শেঠিয়া মনে করেন যেহেতু বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল এখানে দেখানো হয় না তাই যারাই আগে এ উদ্যোগ নিয়ে আসবে তারা অবশ্যই ব্যবসা করতে পারবে। 

 বাংলাদেশের চ্যানেলগুলি ভারতে এলে আরেকটি লাভ হবে। ব্যাপারটা একটু খুলে বলি। বাংলাদেশের কোম্পানি প্রাণ গ্রুপ কলকাতার নাগেরবাজারের কাছে একটি অফিস নিয়ে ভারতে ব্যবসা জগতে তাদের উপস্থিতির ক্ষীন স্বাক্ষর রেখেছেন। তারা জি টিভির কয়েকটি খুব জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের তারা মূল স্পনসর। কোটি কোটি টাকা ঢেলেছেন। অবশ্যই ভারতীয় কোম্পানি হিসেবে। উদ্দেশ্য বাংলাদেশে যাতে তাদের প্রোডাক্টের ব্যাপক প্রচার হয়। হয়েছেও। তার সাথে উপরি লাভ হয়েছে এই যে প্রাণ গ্রুপের প্রোডাক্টের জনপ্রিয়তা পশ্চিমবঙ্গে এতটাই বেড়ে গেছে যে তাদের সেই দাবি মেটানোর ক্ষমতা নেই। একই ভাবে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলির আগমনে বেশ কিছু ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা শুরু করবে। এই যে পারস্পরিক ব্যবসায়িক পরিযান বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বলবান করে তুলবে। 


 ভারতের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জীবদ্দশায় বলেছিলেন, ’এটা অনুচিত। মানা যায় না। আমরাতো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে পাই, তবে বাধা কেন বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের ওপর?'


কবি শঙ্খ ঘোষ বললেন, ’বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু। পাকিস্তানি চ্যানেল দেখা যায়, অথচ বাংলাদেশের চ্যানেল দেখতে পারি না। এটা কী করে হয়!’


অর্থাৎ এদেশের সুশীল সমাজ বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তবে আরেকটি কথা বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ খেয়ে নেয় বিজ্ঞাপন। সেই প্রেক্ষিতে ব্রিটেন ও ভারতে এই বিজ্ঞাপনের ভাগ ১১ শতাংশ। কাজেই বাংলাদেশের চ্যানেলগুলিকেও আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে গেলে সাবালক হতেই হবে। কিন্তু শেষ অবধি বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান করেন সেটাই দেখার। না হলে বাংলা সংস্কৃতি যে অবাঙালি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হবে তা বলাই বাহুল্য।

Tuesday, December 20, 2016

শুভ বিয়ে বার্ষিকী মা -সুমি খান


 একজন বাঙ্গালী মায়ের কোলে আমার জন্ম। আমার মা নূরজাহান খানের বিয়ে বার্ষিকী ২০ ডিসেম্বর। তাই কিছু কথা লিখবার ইচ্ছে হলো আজ।  ১৯৬৪ সালের ২০শে ডিসেম্বর তৎকালীন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা ম্যাজিষ্ট্রেট জামাল আহমেদ সিদ্দিকীর  আদরের কন্যার বিয়ে হলো আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা হোলটাইমার বিপ্লবী , জমিদার ফজলুর রহমান খানের পুত্র সাইফুদ্দিন খানের  সঙ্গে।

নূরজাহান খান ১৯৪৯ সালের ১১ আগষ্ট কোলকাতা মেডিকেল কলেজে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময়ে তাঁর মাতা জাহান আরা বেগম জটিল টাইফয়েডে আক্রান্ত হন।এর তিন দিন পর নূরজাহান খানের মা জাহান আরা বেগমের জীবন সংকটময় হয়ে গেলে তাঁকে কোলকাতা মেডিকেল কলেজের  আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।নূরজাহান খানের জন্মের ২১ দিন পর ২ সেপ্টেম্বর তাঁর মা জাহান আরা বেগম কোলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
৬ নতি নাতনির সাথে ২০১৩ সালে জন্মদিনের দিন
নূরজাহান খানের পিতা জামাল আহমেদ সিদ্দিকী কোলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বাংলা এবং আইনবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণী নিয়ে ডবল এম.এ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ল্যান্ড এ্যাকুইজিশান ডেপুটি কমিশনার ছিলেন।অবিভক্ত বাংলার ব্রিটিশ এক্সাইজ সুপারিন্টেন্ডেন্ট শফিকুর রহমান সিদ্দিকী নূরজাহান খানের পিতামহ।
নূরজাহান খানের মাতামহ অবিভক্ত বাংলার পোস্টমাস্টার জেনারেল সৈয়দ জাকির হোসেন চট্টগ্রাম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা।
বড়ো বোনের  বিয়েতে ছোট ভাইবোন দের প্রীতি অর্ঘ


হোলটাইমার স্বামীর রোজগার ছিল না। তাই ব্যাংকে চাকরি নিতে হলো । সেই ১৯৭০ সালে। ব্যাংকিং, মহিলা পরিষদ আর 
Saifuddin A Khan & Nurjahan Khan @ Kolkata Res of Mamata Ghosh
একেবারে বিপরীত পরিবেশে সংসার করে  তিনটি সন্তানকে জন্ম দিয়ে তাদের স্বনির্ভর করে গড়ে তুলেছেন। দেশমাতৃকার সংগ্রামে উৎসর্গ করলেন নিজেকেও।

সেই কৈশোরে অফ হোয়াইট বেনারসী কাতান পরে এক একান্নবর্তী জমিদার বাড়ির বৌ হতে হলো তাকে। তবু প্রবল প্রতাপে বিনয় আর পরম ধৈর্যের সাথে আকৈশোর রাজনীতির বরপুত্র হোলটাইমার একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ডালিম হোটেলের টর্চার সেলের বর্বর অত্যাচারে জীর্ণ চিররুগ্ন সাইফুদ্দিন খানের নিবিড় পরিচর্যা আর সেবা করে তাঁকে ২০০৭ পর্যন্ত জীবন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় রেখেছেন পাশে থেকে। একই সাথে সাইফুদ্দিন খানের পরিবার বন্ধু স্বজন-প্রত্যেককে আপনার চেয়ে আপন ভেবে পরিচর্যা করেছেন চিরকাল। ২০০৭ সালের ২০ মে থেকে ২৭ জুন বাবা আইসিইউ তে ছিলেন। সে সময়েও আমার মা এবং দুই ভাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার বাবার সাথে ছিলেন;তাঁর সেবা করেছেন সুস্থ করে তুলবার জন্যে। সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ২৮ জুন ২০১৬ ভোরে আমাদের প্রিয় বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তবে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে টের পা্ই আমার প্রতিটি সৎ কাজে বাবা আমার সাথে আছেন ।

ন্যাপ নেতা, গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি  মওলানা আহমেদুর রহমান আজমী ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আমাদের বাসায় ছিলেন। 

আম্মুও ব্যাংকে চাকরি করতো, আব্বুও । দু'জনেই লাঞ্চ ব্রেকে বাড়ি ফিরতেন। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে দু'জনের লাঞ্চ ব্রেক। আম্মু সোজা রান্নাঘরে ঢুকে আব্বুর জন্যে তেল মসলা ছাড়া পথ্য তৈরিতে ব্যস্ত।   নরোম ভাত, শিং মাগুর মাছের পাতলা ঝোল, হালকা রান্না সব্জি তৈরি করে তিন ছেলেমেয়ের খাওয়া তদারক করে, খাইয়ে, তাদের ঘুম পাড়িয়ে আবার অফিসে ছুটতেন। এর মধ্যে মহিলা পরিষদের দায়িত্বশীল সাংগঠনিক সম্পাদিকা, সাধারণ সম্পাদিকা এবং পর্যায়ক্রমে সভাপতির দায়িত্ব পালন। রাজপথে মিছিল, আদালতে নির্যাতিতাদের মুক্তির আবেদন। আর অফিসে খাতা খুলে তার উপর রেখে এসেছেন চশমা । আবার তিন ছেলেমেয়ের  তিনটি স্কুলে তাদের পড়ালেখা এবং বাঁদরামীর তদারকি করতে নিয়মিত হাজিরা। এভাবেই কেটে গেলো পুরো চাকরীজীবন। অফিস থেকে লাঞ্চ ব্রেকে এসে  আম্মুকে কখনো টেবিলে বসে যত্ন করে ভাত খেতে দেখিনি। হয়তো হাতে প্লেট রেখে একটু নাড়াচাড়া করেই কোনরকমে মুখে পরে কাজে নেমে গেলো। চলে গেলেন রাজপথে। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের মিছিল থেকে  মনিকা গোমেজ ( তাকে মহিলা পরিষদের সাথে সম্পৃক্ত করেন নূরজাহান খান), নূরজাহান বেগম সহ মাত্র ৪ নারী উদ্যত কামানের মুখে মিলিটারীর হাত থেকে ছাত্রদের কেড়ে নিয়েছেন অনেকবার । যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নূরজাহান খান শ্লোগানমুখর ঝাঁঝালো মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে প্রকম্পিত করেছেন রাজপথ , এখনো অব্যাহত সেই ধারাবাহিকতা। তবে নেতৃত্বের লোভ কখনো ছিলনা , এখনো নেই। তাই মিছিলের পেছনে থাকতেই আজীবন ভালোবাসেন আমার মা নূরজাহান খান । 
আদরের বোনপো নোটন হাসনাতের জন্মদিনে সুমনা হাসান এর আমন্ত্রনে তাদের বাড়িতে  সাথে  বড়ো পুত্রবধু এবং ছোট পুত্র 


বড়ো বোন রওশন আরা , মেজো বোন শওকত আরা জাফর এবং বেআইনের সাথে ভাগ্নী ইসরাত জাহান এর আমন্ত্রনে তার বাড়িতে



আবার ছেলে মেয়ের বিয়ে হবার পর কুটুম্ববাড়ির প্রতি দায়িত্বশীলতার বিন্দু মাত্র ত্রুটি যেন না হয় সেই খেয়াল। কন্যার শ্বশুর বাড়ি বা পুত্রের শ্বশুরবাড়ি র প্রত্যেকের প্রতি সমান দায়িত্বশীল। জামাতা বা পুত্রবধু- প্রত্যেকের  মা , তাদের প্রতিটি সুখ-দুঃখের যেন নিরন্তর সঙ্গী তিনি। জামাতার সখ ছিল তিনি হোলটাইমার হবেনন চাকরি করবেন না। তাকে বাস্তবতায় আনলেন , প্রথমে বেসরকারী কলেজে চাকরি এবং পরবর্তীতে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ালেন ।
চট্টগ্রামের বাতিঘরে নাতি নাতনির সাথে ২০১৩


দুই পুত্র এবং পুত্রবধুদের সাথে

 আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান খুব বদমেজাজী ছিলেন । মায়ের প্রতিটি কাজে ভুল ধরা আর দোষ ধরা যেন বাবার প্রধান কাজ ছিল। আর সেই ধারাবাহিকতাতেই নূরজাহান খানের কঠিন সমালোচক ছিলেন। তবু একটি কথা সবসময়ে বলতেন, "অনেক দায়িত্বশীল কাজের মধ্যে আলীমকে বিসিএস দিতে রাজি করিয়ে  'বাসুর মা  ( আমাদের বাড়িতে নূরজাহান খানের যেন প্রথম পরিচয় -তিনি 'বাসুর মা' )  বিশাল কাজ করেছে ।" সত্যিই, একথা বলতেই হবে, মায়ের দূরদর্শীতার কোন তুলনা নেই ।
মায়ের দুই কৃতি পুত্র তাদের সততা, নিষ্ঠা, নিরন্তর শ্রম, মেধা আর মননে বিশ্বজয় করেছে। পায়ের নিচে তাদের সর্ষে । তাদের জগত এখন বিশ্বময় । বিশ্বের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নিরন্তর ছুটে বিস্তৃত করেছে তাদের কর্মপরিসর ; জয় করেছে মানুষের মন।
    স্বভাবতঃই পুত্র গরবে গরবিনি আমার মা ।   আমার দুই ভাইও তাদের প্রতিটি কাজে, প্রতি মুহূর্তে মায়ের আশীষ নিয়ে শুরু করেন। মানুষের জন্যে কাজ করতে দূর দূরান্তে ছুটে যান মা। মায়ের কাজ করতে অনেক কষ্ট হয় । তাই পুত্রদের উদ্বেগ অনেক।
প্রসঙ্গক্রমে একটি কথা মনে পড়ছে, মায়ের কাজে যেন কষ্ট না হয় , তাই  মায়ের পুত্রেরা হ্যারিয়ার গাড়ি কিনে দিলো মা'য়ের জন্যে। একথা মনে পড়ছে কারণ,  সেদিন ফেসবুকে একজন কবি পোস্ট করলেন, তাঁর কবিতা লিখবার জন্যে কবিদের সাথে বসতে হয়, বিভিন্ন বৈঠকে যেতে হয়। তাঁর গাড়ি তিনি অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছিলেন। 
সেই মা'য়ের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ পুত্রেরা তাঁর জন্যে নতুন গাড়ি কিনে দিয়েছেন, যাতে তাঁদের মা কবিতার আড্ডায় নিয়মিত যেতে পারেন। ভীষণ গর্বিত সেই কবি মা সাথে সাথে ফেসবুকে পোষ্ট দিলেন। সবাই আশীর্বাদ করলেন তাঁর সন্তানদের।

 আমার মায়ের কৃতি পুত্রদ্বয় মায়ের মতোই নিভৃতচারী। তাদের  ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা অসাধারণ। তাদের এতো এতো ভালো কাজ, মানবতার সেবা- কিছু নিয়েই ফেসবুকে লিখা যাবে না। কারণ , তারা বিশ্বাস করেন, অন্তরের সততা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা অনেক বেশি জরুরী।  তারা বলে , মানুষের কাছে বলে বেড়ানো কাজে কখনো সততা থাকে না; লোকদেখানো হয় মাত্র। তবু তাদের না বলা কিছু কথা এই লেখাতে তুলে ধরার অপরাধে আমি দায়ী হয়ে রইলাম। 
কথাগুলো অবধারিত ভাবে চলে এসেছে এই বলতে যে, এভাবেই একজন  নিভৃতচারী মায়ের একাকী সংগ্রাম, একনিষ্ঠতা, সততা, দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাসের স্বীকৃতি দিলো সময়।
 ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ জামাতা আলেক্স আলীম এবং  দৌহিত্র ঋতবান আলীমের শুভেচ্ছা গ্রহণ করলেন বিনয়ের সাথে

সেই  যে  মায়ের ব্যাংকার জীবনের গল্প বলছিলাম, একদিন পুত্রবধু ঘরে এলো । বড়ো আদরের বৌ। ফুলকিতে মহিলা পরিষদের মিটিং করে বেরিয়ে একদিন দেখলো, শ্যামলা বরণ একহারা গরনের মিষ্টি একটি মেয়ে গান শিখছে, আর হেসে গড়িয়ে পড়ছে । মা ভাবলেন, "এমন হাস্যোজ্জ্বোল আর প্রাণোচ্ছল মেয়েই তো চাই আমার ছেলের জন্যে" । মালিহা শফিক নতুন বৌ হয়ে ঘরে এলো।
 নতুন বৌয়ের নিজের মতো করে তৈরি হবার সময় দিতে হবে। তাই আম্মু সকালে অফিস যাবার সময়ে টেবিলে মালিহার নাশতা তৈরি করে অফিসে যেতো।চকলেট খুব পছন্দ মালিহার। তাই অফিস থেকে ফিরবার সময়ে দোকান থেকে চকলেটের প্যাকেটের  লহর কিনে আনতো। এর পরে ছোট বৌ মাকসুরা সুমন এলো ঘরে । এ্ই দুই বৌই  তাদের স্বভাবজাত গুণ দিয়ে আমাদের বাড়ির সকলের মন জয় করেছে। আর তাই তারা আমার মায়ের চোখে পৃথিবীর সেরা বৌ, যারা  পুত্র কন্যার চেয়ে ও অনেক বেশি আমার মায়ের কাছে। তাদের দু'জনের সাথেই আমার  মায়ের বন্ধুত্ব এতো নিবিড়, যা আমাদের বাড়িতে সবসময়েই অন্যদের উৎসাহ দিয়েছে।  সুদূর বিলেতে বসেও এই দুই বৌ প্রতি মুহূর্তে আমার মায়ের খোঁজ খবর নিচ্ছে , পরামর্শ দিচ্ছে। তাদের কোন কিছুতে মায়ের পরামর্শ নিচ্ছে।এইতো জীবনের সৌন্দর্য । 

যা বলছিলাম, মায়ের সেই ব্যাংকার জীবনের ধারাবাহিকতায় -নাতি নাতনি হবার পরের লাঞ্চব্রেকগুলো তে যুক্ত হয়েছে তাদের জন্যে তাদের প্রিয় খাবার রান্না এবং সেসব আবার গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে খাওয়ানো। ৬ জন নাতি নাতনি কখনো ঈদে বা  পারিবারিক অনুষ্ঠানে ঢাকা বা চট্টগ্রামে এক হলেই সবাইকে একসাথে খাইয়েছেন মা। এখনো আমার ৪ ভাইপো ভাইঝি কঙ্কা, যুবরাজ, অপলা, অনিন্দ্য  তাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়  দাদিবুজির কোল আর  দাদিবুজির রান্নার জন্যে সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পেরিয়ে ছুটে আসতে যেন এক পায়ে খাড়া। 

     বাবা-মা বরাবরই তাদের পরিবারের সাথে মিলিয়েছেন রাজনীতির সহযোদ্ধাদের । দেশের কাজ করা বা  রাজনীতি  করা মানে 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো'. বলা হতো! সেই অর্থে বনের মোষ কে ঘরে আশ্রয় দদেবার কথা ভেবেছেন ক'জন?  
বাবার প্রতিটি কাজ মা নিজের বলে অন্তর থেকে মেনে নিয়েছিলেন। স্বজন, পরিবার, পরিজন , বন্ধু , রাজনৈতিক সহযোদ্ধা বা শীর্ষ নেতারা -সবকিছু মায়ের অন্তরের অন্তঃস্থলে ঠাঁই নিয়েছে । 
 নীরব, তবে নিরন্তর সেবাযত্নে সেই ষাটের দশক থেকে দেশের তাবৎ তাবত বড়ো  নেতা, নেত্রী, সাধারণ তৃণমূল  কর্মীদের অনেকে আমার মায়ের হাতের রান্না খেয়েছেন,মায়ের সেবা যত্নে আমাদের বাড়িতে অনেক রাত কাটিয়েছেন। ১৯৬৮-১৯৭০ মওলানা ভাসানী, হেনা দাস, কমরেড আবদুস সালাম (বারীণ দত্ত) ,বেগম সুফিয়া কামাল,  বেগম মতিয়া চৌধুরী , সাংবাদিক বজলুর রহমান, দৈনিক সংবাদের প্রকাশক এবং সম্পাদক আহমেদুল কবির, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত,  পংকজ ভট্টাচার্য, মালেকা বেগম ,  বেলা নবী , ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না, আয়েশা খানম , ডা. ফওজিয়া মোসলেম,  রাখী দাশ পুরকায়স্থ,  মালেকা বানু, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম , মঞ্জুরুল আহসান খান ,  রাশেদ খান মেনন , হায়দার আকবর খান রনো, সাইফুদ্দিন মানিক,  খাপড়া ওয়ার্ডের বিপ্লবী, ন্যাপ কমিউনিষ্ট পার্টি গেরিলা দলের মুক্তিযোদ্ধারা .  স্বাধীন দেশে  সিপিবি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিটি কেন্দ্রীয় নেতা , এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের অনেককে্ই আমাদের ছোট্ট সাধারণ বাড়িতে  দেখেছি সেই ছোটকাল থেকে । তাঁদের  কারো কারো ছবি আছে এখনো । কারো কারো অটোগ্রাফ ও আছে। ছোটবেলায় শখ ছিল অটোগ্রাফ নেবার । 
 অনেকের মতো ক্যারিয়ারিস্ট হয়ে একজন সফল ব্যাংকার হতে পারতেন নূরজাহান খান।
না, তা তিনি হন নি। কেবল ত্যাগ আর তিতিক্ষা যার জীবনের ব্রত। তিনিই আমার মা , বিশ্বভূবন মাঝে যাহার নাইকো তুলনা। 

যিনি  হাসতে হাসতে কৃতঘ্নদের  আঘাতের গভীর ক্ষত  হৃদয়ে বয়ে যেতে পারেন জীবনভর।  জন্মের সাথে সাথে যিনি মা'কে হারিয়েছেন।

শত সহস্র সন্তানের 'মা' হয়ে উঠেছেন তাঁর কন্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথে। 
জীবনভর বিনা অপরাধে নিরন্তর ভিত্তিহীন মিথ্যা অভিযোগের রক্তাক্ত কাঁটা নীরবে বয়ে মানবসেবা করে যাচ্ছেন -তিনি আমার মা। আমার অহংকার  আমার মা'য়ের বিনয়, ত্যাগ আর সীমাহীন ধের্য!
আদরের দৌহিত্রের থেকে বিয়ে বার্ষিকীর শুভেচ্ছা নিতে গিয়ে  সাথে রসিকতা-" ক্ষমা করা যায় না?"

 আজ বাবা থাকলে অনেক অনেক সুখী হতেন নিঃসন্দেহে। মনে মনে শুধু বলি, মা তুমি শতায়ু হও -সকলকে ভালোবেসে সকলের সাথে এভাবেই  চিরদিন হাসি আনন্দে মেতে  থাকুক তোমার মানবতায় উৎসর্গিত জীবন।  আজকের দিনে আব্বু আম্মু দু'জনের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা!!



Saturday, December 10, 2016

রাজাকারের মাতাল নাচন - সুমি খান


রক্ত নষ্ট 
ভক্ত নষ্ট 
নষ্ট সময় 
 ইতিহাসের -
মাতাল নাচন
 কালো রাতের-
ঠাঁই হয়ে যায়
ল্যাজের ডগায়-
দিনলিপিকার রাজাকারের -
মাতায় ফাগুন
লাগায় আগুন
দিগ্বিদিকে !

কলম জ্বলে
দাবানলে
চোখের কোণে
লাল লেলিহান-
আগুন জ্বলে!

ওগো পিতা
কোথায় জাগো ?
আবার এসো
জাগাও তোমার ঘুমপুরীর এই
ঘুমে বেঘোর সন্তানদের!

পিতা মোদের
একটু এসো
মাদুর পেতে
দাওয়ায় বোসো!

হিমেল হাওয়ায়
দোলা দিয়ে
হাঁক দিয়ে যা্ও -
যার যা আছে
ঝাঁপিয়ে পড়ার!

ওগো পিতা  -
পিতা মোদের
একটিবারের জন্যে এসো-

দৃষ্টি মলিন
মগজ ঘোলা-
উঠোন জুড়ে শকুনীরা-
জড়ো হয়ে
রক্ত নিয়ে
হোলিখেলা
করবে বলে 
পাকসেনাদের ভ্রষ্ট বীজে
মাতৃভূমির পবিত্রতা
নষ্ট করে!
রক্তে ধোয়া অহর্নিশি  প্রহরগুলো 
সব ভুলেছে!

একাত্তরের
২৫শে মার্চ রাতের থেকে 
১৪ ডিসেম্বরের কালো রাত্তিরেতে-
নষ্ট ভ্রষ্ট বীজের হাতে 
গ্রামের পরে গ্রাম জ্বেলেছে 
কালো হাতে মশাল দিয়ে
চাঁন তারা তে মুখ ভরিয়ে
তোমার আমার ঘর পুড়েছে-

স্বেচ্ছাবন্দি  মগজগুলো-
রক্তখেকো শকুন গুলো
 মুখোশ প'রে-
ভূমির সারি দখল করে
মুঠো মুঠো টাকা নিয়ে পকেট ভরে-
তোমার নামে 'জয়ধ্বনি'র
মাতন তোলে !

এই আমিটা ক্ষুদ্র হলেও
মুঠো তুলে
পরান খুলে
বজ্রশপথ তোমার নামে 
আকাশ পানে
চোখটি মেলি 
তোমায় দেখি-
পিতা আমার -
পরানের গহীন ভিতর
যেমন জাগো নিত্যপ্রহর

হাঁক দিয়ে যাও তাই-
জাগো বাহে ...................কুন্ঠে সবাই!
রাত ২টা ১০ মিনিট, ১১ ডিসেম্বর প্রথম প্রহর






Wednesday, November 30, 2016

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নির্বাচনে মুক্তচিন্তার দাবিদারদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা:অশনি সংকেতের বার্তা -সুমি খান

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নির্বাচন ২০১৭ সমাপ্ত হলো। নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকে , হারজিত থাকে, সেটাই স্বাভাবিক। যারা নির্বাচনে জয়ী হযেছেন, তাদের কারো প্রতি আমার কোন ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে তাদের প্রতি আমার শুভকামনা রইলো । 

নির্বাচনে জয় পরাজয়, হারজিত মেনে নেবার মতো সৎসাহস আমার আছে । যে কোন সৎ, পেশাদার সাংবাদিকের ই সেটা থাকে । এই নির্বাচনে যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা দেশকে ভালোবেসে পেশাদারীত্ব প্রতিষ্ঠায় তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কোন সিন্ডিকেটের কাছে অন্তত মাথা বেচে দেন নি।  ্তআর তা্রই তাঁরা নির্বাচনের রায় তখনি মেনে নেবেন, যখন, সেটা স্বাভাবিক নিয়মে স্বচ্ছভাবে হবে। তারা সেই রায় মেনে নেবার মতো সৎসাহস রাখেন। 
কিন্তু সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি অপশক্তির কোন অপচেষ্টা এই নির্বাচনের মাধ্যমে সফল হয়, সেটা মেনে নেয়া যে কোন শুভশক্তির জন্যে বিপর্যয় ডেকে আনবে সুনিশ্চিত।আর সেই  বাস্তবতার কিছুটা তুলে ধরার জন্যেই এই লেখার প্রয়াস। এই নির্বাচনে গঠনতন্ত্রের চরম লঙ্ঘন করা হয়েছে , সহযোগী সদস্যদের ভোটার করা হয়েছে। হাতে চিরকূট ধরিয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে-ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন । তাবড় তাবড় সাংবাদিক নেতারা মাঠে নেমেছেন প্রকাশ্যে। 
এই কাজে নাকি তারা মাঠে নেমেছে সেই নভেম্বর ২০১৬ থেকে।যখন 'সুমি খান' বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সেবার।  তবু যতো গালমন্দ, যতো শাপশাপান্ত সব যেন সুমি খানের জন্যেই প্রযোজ্য। প্রথম দিকে বিস্মিত হয়েছি আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছি, তবু চেষ্টা করে গেছি একনিষ্ঠভাবে এই পেশায় নিয়োজিত সংবাদকর্মীদের জন্যে কাজ করে যেতে। প্রতিকূল বাস্তবতায় অনেকটা এগুলেও শেষ করতে পারিনি অনেক গঠনমূলক কাজ। সেটা যেন অন্যতম 'হাতিয়ার'  হয়েছে অপশক্তির জন্যে।  

 এই নষ্ট, ভ্রষ্ট বাস্তবতা কিছুটা অনুমান করে ও শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমি নারী বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থিতা করেছি । 
একটি বছর এই পদে থেকে চরম প্রতিকূলতার মুখে পড়েছি প্রতিটি কাজে। কোন কাজ বা কোন অনুষ্ঠানে যেন আমি অংশ নিতে না পারি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে কমিটির মূল ক'জন নেতা।
 চরম নারী- বিদ্বেষী অবস্থান থেকে তারা সতর্কতার সাথে আমাকে প্রতিটা দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রেখেছে, যা একটু নজর দিলেই প্রত্যক্ষ করা যায়। তারই অংশ 'বেগম' পত্রিকার সম্পাদকের জীবদ্দশায় নূরজাহান বেগমকে নারী দিবসের সম্মাননা দেবার উদ্যোগ ঠেকালো কার্যনির্বাহী কমিটি। নীতিনির্ধারক বা নিয়ন্ত্রকদের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের চুড়ান্ত প্রকাশ ঘটালেন।  ৭৫ বছর সাংবাদিকতা করে নারীদের অগ্রযাত্রায় সমাজকে এগিয়ে নেবার পর ৯৩ বছর বয়সে ও পুরুষতান্ত্রিকতার হিংসার গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারেননি সাংবাদিকতার অগ্রদূত এই মহীয়সী ব্যক্তিত্ব। সেই রূঢ় বাস্তবতায় আমি সুমি খান যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ। 

কমিটিতে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার চাঁদাবাজ সাংবাদিকদের সম্পৃক্ততা ঠেকানো সম্ভব না। পেশাদার সাংবাদিকদের সম্পৃক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। স্বপ্ন দেখেছি -অনেক আলোর ঝলকানিতে অন্ধকার কেটে যাবে ধীরে ধীরে। কিন্তু না। অন্ধকার তাদের প্রবঞ্চনা, নষ্টামি আর ভ্রষ্টাচারের মিথ্যাচারে ভুলিয়েছেন অনেককে। তবে আশার কথা, যথারীতি সেই ছলনায় ভুলেন নি শুভ শক্তির নিরন্তর লড়াকু সৈনিকেরা। তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার।

সৎ সাংবাদিকদের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় আমি নীরব লড়াই করে গেছি নিরন্তর । সাথে ছিল আমার বাবার আদর্শ, আমার মায়ের নিরন্তর লড়াই এবং তীব্র অনুপ্রেরণা। আশৈশব লালন করা সমাজ সংস্কারকদের ত্যাগ এবং তিতিক্ষার দৃষ্টান্ত সামনে রেখে পেশাজীবি সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠায় উজাড় করে দিয়েছি নিজেকে । অনেক বঞ্চনার আর যন্ত্রনার এ পেশা বেছে নিতে আনন্দ নেই;তবে সততা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মানসিক প্রশস্তি আছে।

আমার স্নেহের ছোট বোন উম্মুল ওয়ারা সুইটি, ঝর্ণা মণি, জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না, মোরসালিন মিজানসহ আমার অনেক শ্রদ্ধার এবং স্নেহের ভাইবোনেরা প্রানান্ত সহযোগিতা করেছেন , তাঁদের কাছে আমি বারবার কৃতজ্ঞতা জানাই ।
পরিকল্পিতভাবে আমাকে প্রতি পদে হেনস্থা করেছে যারা,তাদের একজন ( যার কুরুচিপূর্ণ এবং অশ্লীল বাক্যবাণ শুধু মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বা নির্যাতিত দের পরিবারের সন্তানদের প্রতি)। তাতে জোর দিয়েছেন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সহ অন্য কেউ কেউ।
এ ব্যাপারে আমাদের নারী সদস্যদের নেতৃত্বস্থানীয়রা কিছুটা জানেন। তার পরও এবারের ডিআরইউ নির্বাচনে তাদের অবস্থান তারা পরিস্কার করলেন।তবে কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে চরম 'সোচ্চার' এ বোনেরা নিজেদের পুরুষতন্ত্রের কাছে সমর্পনেই বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করেন ? নাকি তারা পুরুষতন্ত্রের কাছে স্বেচ্ছাজিম্মি?
যাঁরা আমার ত্যাগ, সততা ও নিষ্ঠার প্রতি আস্থা রেখেছেন,তাঁদের মূল্যবান ভোট আমার জন্যে নিশ্চিত করেছেন,সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ।
সিনিয়র সাংবাদিক মাহমুদা চৌধুরী ভোট দিয়ে এসে আমার কানে কানে বললেন," সুমি , তোমাকেই ভোট দিলাম, তোমার মতো সৎ আর সাহসী সাংবাদিক আর কে আছে বলো তো? আমি তোমাকেই তাই ভোট দিলাম।" আপার স্নেহশীল মন ভালোবাসার তোড়ে বাড়িয়েই বলেছেন নিঃসন্দেহে।আপার মতো অনেকেই আমাকে সমর্থন করে ভোট দিয়েছেন;সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছেন ও আমাকে। তাঁদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আমার প্রিয় সাংবাদিক বোনেরা যে যা করেছেন, তাদের ভবিষ্যত তাঁরা নির্ধারণ করেছেন। তাদের সহযোগিতা -অসহযোগিতা সবকিছুর প্রতি, তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমার বিনম্র কৃতজ্ঞতা ।
ডিআরই্উ নেতৃত্বে অবস্থানকারী এক নেতা বললেন, " সুমি আপা, আপনার বিরুদ্ধে 'প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ' হয়েছে । এটা আমি বারবার বলবো। 'সুমি খান' কে ঠেকাতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির সাথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ দাবিদার বেশ কয়েকটি শক্তি (তাদের দূরদর্শীতার প্রতি সন্দেহ করা আমার জন্যে বাতুলতা মাত্র) একাত্ম হয়ে পরিকল্পিত ভাবে 'কাজ' করেছেন । আপনার বিরুদ্ধে'কলাগাছ ' দাঁড় করিয়ে হলেও আপনাকে হারানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে । সেই ষড়যন্ত্রে ও আপনাকে পরাজিত করতে পারেনি; পরাজিত হয়েছে নীতি নৈতিকতা। "
নির্বাচনে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে শারমীন সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীরা গড়ে ৪০০ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছে।
সম্মানিত সদস্য বললেন," আপনি তার চেয়ে ৩৭ ভোট কম পেয়েছেন মাত্র। সেক্ষেত্রে এটা পরিষ্কার হলো, আপনি অনেক মানুষের সমর্থন পেয়েছেন; শুধু একটি চিহ্ণিত গোষ্ঠীর পরিকল্পিত 'নেগেটিভ ভোট' গেছে আপনার বিরুদ্ধে। আপনাকে নারী সাংবাদিকেরা নেগেটিভ ভোট দিয়েছেন। "
শুরু থেকে্ই আমাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার সকল অপচেষ্টা ঠেকিয়ে কিছু কিছু কাজ করে আমি অনেক 'অপরাধ ' করেছি। প্রথম বারের মতো বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করেছি, মুক্তিযোদ্ধার এক সন্তানকে অশ্লীল অশালীন ভাষায় আক্রমণ করার পর তার দিকে তেড়ে এলে আমি সামনে দাঁড়িয়ে গেছি তাঁর অপমান লাঞ্ছনা ঠেকাতে ।
অনেকে জানালেন, রাতের পর পর রাত একুশে টেলিভিশনের গলিতে ভোজের আয়োজন করে সংগ্রাম আর নয়াদিগন্তের সাংবাদিকদের নেতৃত্বে 'নির্বাচনী পরিকল্পনা' (?) করেছেন । " আমি শুনে গেলাম কথা গুলো। মেলালাম কিছু ঘটনা - বেশ কয়েক জন সক্রিয় ছিলেন ভোটার দের প্রভাবিত করতে । তাদের মধ্যে ৫ জন ভোট দেবার সময়ে গেটেই দাঁড়িয়ে থাকেন বা অফিস রুমে বসে থাকেন ভোটারদের প্রভাবিত করতে। সাতসকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন তারা। ভেতরে বাইরে সবখানে 'নির্বিকার ' চলে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন তারা।
ভোট দেবার জন্যে কোলে করে আনা হয়েছে কয়েকজন অশীতিপর বৃদ্ধকে । লাঠি হাতে বৃদ্ধরা এসেছেন অনেক কষ্টে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ভোট দিয়েছেন -এঁরা সবাই ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং সংগ্রামের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক এবং বিভিন্ন পদে কর্মরত সাবেক কর্মকর্তারা । বেশ বৃদ্ধএক ভোটারের কাছে ভোট চাইলাম আর আমার নাম জিজ্ঞেস করে হাতে লেখা চিরকূট বের করলেন মেলালেন আমার নাম। না, চিরকূটে যে নারী সাংবাদিকের নাম-তা যে আমার নাম নয়। আমার মুখের দিকে কেমন অসহায় চোখে তাকিয়ে বৃদ্ধ ব্যক্তি সিঁড়ি বেয়ে উঠে চলে গেলেন ভোট দিতে।
জাল ভোট দিতে গিয়ে একজন ধরা পড়লো । তার মুখভর্তি দাড়ি। কার পক্ষে ভোট দিতে এসেছে এই জাল ভোটার -সেটা উদ্ধার করা হলেও প্রকাশ করা হয় নি।ধামা চাপা পড়ে গেলো কি?
সমাজে মানুষের অধিকারের লড়াই করতে গিয়ে আমি সংসার ,পড়ালেখা, চাকরি ,নিজের পত্রিকার কাজ সব বিসর্জন দিয়েছিলাম । আমার প্রিয় বন্ধু এবং ছোট বোনেরা বিভিন্ন সময়ে আমার আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসেছেন ,তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি। অনেকে আসেন নি কোন অনুষ্ঠানেই; বরং কটাক্ষ করে নানা রকমের মন্তব্য করেছেন। সেসব বিচক্ষণ নারীবাদী সাংবাদিকদের চিন্তা চেতনা এবং দূরদর্শীতা তাদের উপর ছেড়ে দিলাম। তবে এই নারীদের কেউ কেউ গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিবাদী সৈনিক ও বটে!
একজন মন্তব্য করলেন, "এই 'প্রতিবাদী' নারীরা জামাতের ষড়যন্ত্রের সহযোগী শক্তি হয়ে গেলেন দ্বিধাহীন চিত্তে, বীরদর্পে, বীরত্বের সাথে!! বেশ উৎসবমুখর সাজে উৎসবের আয়োজনে হৈ হৈ রৈ রৈ করে ভোট দিয়েছেন;কাজ করেছেন জামাত মনোনীত প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে। "

ডিআরইউ প্রেসিডেন্ট জামালউদ্দিন এবং সেক্রেটারী রাজু আহমেদ তাদের প্রার্থী দিনার সুলতানাকে জিতিয়ে আনার জন্যে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মাহমুদা ডলি ( গণজাগরণের যোদ্ধা প্রকৌশলী রাজীব, নীলাদ্রি সহ ব্লগারদের হত্যার পর যে সাংবাদিক অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ মনগড়া রিপো্র্ট লিখেছে নিহতদের ব্যক্তিজীবন কটাক্ষ করে।) কে অভিনন্দন জানালেন। জামায়াতের এক সংগঠক দিনার সুলতানাকেে বললেন, "আমরা এই নির্বাচনে যে পোস্টে যাকে চেয়েছিলাম, প্রত্যেককে সেই পোষ্টে জয়ী করেছি; আপনি জিতেছেন- আমি খুব খুশি, খুব খুব খুশী । " এ বক্তব্য অনেক বার্তা দেয় !
নারী বিষয়ক সম্পাদক পদটির প্রতি চরম অশ্রদ্ধা অনেক নারী সাংবাদিকের। এমন কথাও অনেকে বলেছেন, তারা ঘেন্না করেন। নারী সমাজ এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকার রাখার জন্যে গঠনতান্ত্রিক ভাবে তৈরি গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি বিলুপ্ত করার পক্ষে ও তারা জোরালো মত দেন। অবার লাগে, আমরা কতোটা আত্মঘাতী হলে এমন কথা বলতে পারি। নিজেদের দায়িত্বশীলতার প্রতি চরম অবমাননা করেও 'নারীবাদী' হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন বেশ অহংকারের সাথে। তবু তাদের প্রতি আমার শুভকামনা রইলো ।
মেলানো যায় ঘটনা পরম্পরা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আইরিন নিয়য়াজি মান্নার বিরদ্ধে নয়াদিগন্ত পত্রিকার লুৎফা শাহানা কে হঠাৎ দাঁড় করানো হয়। মান্না এর আগে একটি বছর প্রানান্ত কাজ করেছে । লুৎফা শাহানা কে জয়ী করে ৩/৪ মাসের মধ্যে আমেরিকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অনেকে বলেন, এমনই চুক্তি ছিল লুৎফা শাহানার সঙ্গে । ২০১৬ সালে আমাকে নির্বাচিত করে নারী সাংবাদিকদের মধ্যে যারা ডিআরইউতে সক্রিয়, তারা। একই ভাবে সেবার আমার বিরুদ্ধে অনেককে অনুরোধ করে ও কাউকে পান নি তখনকার প্রভাবশালী নেতারা। এবার ও 'সুমি খান' এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী প্রার্থী খুঁজে বেড়ায় । কে্উ কে্উ বলে ,সুমি খানকে সরিয়ে বাম সংগঠনের এক কর্মীকে নারী বিষয়ক সম্পাদক পদে নিশ্চিত করা হয়, তাকে বিদেশে পাঠানোর চুক্তি ও করা হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় এ পদে আসতে হলে তাকে আরো ২ বছর অপেক্ষা করতে হবে। নিউজরুমে বসে হতাশায় আর বিষন্নতায় ডুবে গেলো বেচারী; তার আর বিদেশে যাওয়াই হলো না।ব্যর্থ হলেও থেমে রইলো না কালো শক্তি । আবার হন্তদন্ত হয়ে মাঠে নামলেন প্রভাবশালী সেই নেতারা। যে করেই হোক সুমি খান কে 'হঠাতে ' হবে। বেশ ভালো একটা 'প্রার্থী' পাওয়া গেলো। প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন দলের অংশ এক নেতার স্ত্রী । তার স্বামীর অনুসারীরা সবাই মাঠে নামলেন । দুর্জনেরা বলে, খালেদা জিয়ার দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও আসতে পারে, সে যে কোন পর্যায়েই হতে পারে।
তাকে অনেকে অনেক ভাবে বললো , আগামী বার তাকে একক প্রার্থী করা হবে , এবার যেন তিনি প্রার্থীতা থেকে সরে যান। তিনি বললেন, কারা তাকে প্রার্থী করেছে তিনি জানেন না। তবে খুব চাপে আছেন। আরো বললেন, আগামীতে কখনো তিনি ডিআরইউতে আসবেন না। যে সংগঠন কে তিনি ধারণ ই করেন না, সেই সংগঠনে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির সহায়ক হয়ে দায়িত্ব নিতে রাজী হয়ে গেলেন মতায়নে বেশ এগিয়ে রয়েছেন বামেরা ও -এই গুঞ্জন কি তবে আবারো সত্য প্রমাণিত হলো?


নির্বাচনে ব্যাপক খাটাখাটনি করলেন যারা 'মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির দাবিদার' সেই সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার প্রশ্ন এই । সাথে রাখলেন বামনেতা স্বামীর সকল সহযোগীকে। তাহলে নির্বাচনে কারা জয়ী হলো? এ্ই বাস্তবতায় যারা আনন্দিত, ভেবে দেখুন -এ কোন অশনি সংকেত নয় তো? কারো কারো আশঙ্কা, 'প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের' ধারাবাহিকতার টার্গেট জাতীয় নির্বাচন নয় তো?

Wednesday, October 5, 2016

ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান কি ভারতের পক্ষে ভাল? -স্বপন দাশগুপ্ত

গত দু’সপ্তাহ ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান। কেবলমাত্র রাগ বা ক্ষোভ নয়, সকলেই চিন্তিত আক্রমণরত পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আর প্রসঙ্গত এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ছে, পাকিস্তানের কুখ্যাত আইএসআই (Inter-Services Intelligence)-এর সাবেক প্রধান হামিদ গুলের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপচারিতার বিষয়টি।



সালটা ১৯৯৯। ওয়াশিংটন ডিসি-তে ব্লেয়ার হাউস চুক্তির কিছু পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয় জম্মু-কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে হামলা থামাতে। ইসলামাবাদের (প্রথম ও একবারই গেছি ওখানে) আবাহাওয়ায় তখন হতাশা এবং ইতিবাচক, এই দু’ধরণের অনুভূতির মিশ্রণ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ওয়াশিংটনে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টনের তলব এবং আমেরিকার ভৎসনার মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের চুক্তিতে সাক্ষর করা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল ইসলামাবাদে, আবার একইসঙ্গে সেখানকার একাংশ আশান্বিত হতে শুরু করেছিলেন, ফের লাহোর বাস যাত্রা শুরু হবে এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপিত হবে। 
ভারতে তখন লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গেছে এবং পাকিস্তানের তথাকথিত ‘ভারত বন্ধু’রা মনে করেছিলেন কংগ্রেস সেবারে সরকার গঠন করবে।

ইসালামাবাদ থেকেই আমি হামিদ গুলকে ফোন করলাম (ফোন নম্বরটা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন এক বিদেশি সাংবাদিক) একটা ছোট্ট সাক্ষাৎকারের জন্য। রাওয়ালপিন্ডিতে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না । কারণ, এই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার অনুমতি ছিল না;আর কোনও সামরিক এলাকায় তো যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

অনেক পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ, আমলা এবং সামরিক প্রধানদের বক্তব্য শুনেছি, যাঁরা অবসর গ্রহণের পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারের অংশ নেন। শ্রোতারা তাঁদের বক্তব্য শুনতে পছন্দও করে। 
অবশ্যই তাঁরা কখনও একপেশে বক্তব্য রাখেন না। আমার সৌভাগ্য যে হামিদ গুল এই গোষ্ঠীভুক্ত নন। 
তিনি আমাকে  যা বললেন এবং কাশ্মীর ও আফগানিস্তানের জেহাদিদের সামনে যে উত্তেজক ভাষণ রাখেন তার মধ্যে খুব একটা ফারাক ছিল না।


 আইএসআই-এর সাবেক প্রধান হামিদ গুল প্রথমে সৌজন্য প্রকাশ করছিলেন; কিন্তু তিনি রাগে ফুটছিলেন।তাঁর সমস্ত রাগ উপচে পড়ছিল ‘মেরুদন্ডহীন’ পাকিস্তানি প্রশাসনের ওপর। 

কারণ, সেই সময় পাকিস্তানি সরকার আমেরিকার চাপের কাছে সম্পূর্ণভাবে নতি স্বীকার করে বসে আছে। তিনি খুব জোরের সঙ্গে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বলতে পারেন ভারত আন্তর্জাতিক মহলে এতটা প্রভাব খাটাতে পারে কেন? তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের জোরের জায়গাটা হল দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থান। 
কোনও আন্তর্জাতিক শক্তিই ভারতের বাজারকে কিংবা বিপুল অর্থনৈতিক পরিসরকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।
 যতদিন অর্থনীতির শক্তি হিসেবে ভারতের কদর থাকবে ততদিন পাকিস্তান তাদের ‘ঐতিহাসিকভাবে শত্রু’ দেশের থেকে অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

ওই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের কী করণীয় ছিল? হামিদ গুলের মতে, কার্গিল যুদ্ধ দেখিয়ে দিল এটাই পাকিস্তানের একমাত্র এবং দীর্ঘায়িত পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে ভারত কোনও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। অতীতেও পাকিস্তান আক্রমণাত্মক কৌশল গ্রহণ করেছিল এবং ভারতকে বিভিন্ন সময় রক্তাক্ত করেছিল। 
গুল এই মনোভাবকেই আরও এক ধাপ এগিয়ে দিলেন তাঁর নিজের যুক্তিতে।

তাঁর মতে, পাকিস্তানকে নিশ্চিত করতে হবে যে, ভারতের ঐক্য যেন কোনওভাবেই সুরক্ষিত না থাকতে পারে। 
আয়তনগতভাবে ভারত যে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে তা নষ্ট করতে হবে। ভারতের ভাঙন নিয়ে তাঁর এই কৌশলগত অবস্থান একজন ভারতীয় সংবাদিককে তিনি নির্দ্বিধায় জানিয়েছিলেন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই পাকিস্তান তার বৃহৎ আয়তনের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি নিয়ে বিচলিত। পাকিস্তানের নীতিপ্রণেতারা মনে করতেন, ভারতের একতা আসলে কৃত্রিম এবং অচিরেই ‘হিন্দু একতা’র কারণে ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
 দুর্ভাগ্যবশত ভারত টিকে গেছে।
কিন্তু পাকিস্তান ১৯৭১ সালে ভেঙে পড়েছিল। আর তখন থেকেই ঢাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর লজ্জাজনক আত্মসমর্পনের প্রতিশোধ নেওয়াটাই পাকিস্তানের কৌশলগত দর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
পাকিস্তান সর্বদাই কাশ্মীরের জন্য লালায়িত ছিল। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পর ভারতকে টুকরো টুকরো করা পাকিস্তানিদের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।

ভারতে অল্প সংখ্যক নির্বোধ বুদ্ধিজীবী আছেন যাঁরা মনে করেন, পুরো জম্মু-কাশ্মীর না হলেও নিদেনপক্ষে কাশ্মীর উপত্যকা পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া উচিত। তাঁরা এও মনে করেন, এর ফলে সত্তর বছরের পুরনো বিবাদ মিটে যাবে সহজেই, আর প্রতিরক্ষা বাবদ একটা বড় খরচ বেঁচে যাবে, সেই অর্থ দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে কাজে লাগবে।

আমার মতে তাঁরা দু’দিক দিয়ে ভুল। প্রথমত, কাশ্মীর কোনওভাবেই পাকিস্তানের একমাত্র চাহিদা নয়।
 এক্ষেত্রে ১৯৫০ সালে মুসলিম লীগের এক নেতার বক্তব্য মনে পড়ে যাচ্ছে।  যিনি বলেছিলেন- কাশ্মীর হল ‘সাম্প্রতিক চাহিদা’।পাকিস্তানের বৃহত্তর উদ্দেশ্য হল ভারতকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া- অষ্টম শতাব্দীর খন্ডিত ভারতের ইতিহাস থেকে এই ভাবনার উদয় হয়েছে পাকিস্তানের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে।
 দ্বিতীয়ত, এই ভারতভাগের তত্ত্বের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ইসলামি মতবাদের উন্মেষের জোরালো তাত্ত্বিক যোগ রয়েছে। ইসলামি আধুনিক মতবাদের ধারকরা আজ সংখ্যায় নগণ্য।
 ইসলামি রাষ্ট্রগুলোতে একটি জনমত গড়ে উঠছে যারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারে বিশ্বাস করে।তাঁরা চায় চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা, যাতে এই উপমহাদেশে তাঁরা খলিফার স্বপ্নরাজ্য বানাতে পারে।

ভারতের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দিয়ে চলেছে পাকিস্তান ।এই সন্ত্রাসবাদী হামলা এ দেশের বিচ্ছিন্নকারী শক্তিগুলিকে মদত দিচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। 
এত প্ররোচনার মুখেও ভারত সরকার চুপ করে থাকতে বাধ্য হয়।কারণ, আন্তর্জাতিক মহলের সতর্ক বাণী ভারত জানে, তাই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশই সতর্কতা অবলম্বন করছে। 
কিন্তু এই অসহায়ত্ব সাধারণ মানুষ মেনে নিতে রাজি নয় ।তারা ক্ষোভে ফুঁসছে। বিশেষ করে কাশ্মীরের একের পর এক সমস্যা এবং পাঠানকোট ও উরি হামলার পর।

কোনও সন্দেহ নেই এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিশেষ নজরদারি এবং নিপুণ রাজনৈতিক কৌশলের প্রয়োজন হয়। 
যদিও দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তাভাবনা থেকে দেখলে পাকিস্তানকে প্রতিরোধ করা উচিত এবং তা শুধুমাত্র কূটনৈতিক ভাবে নয়।
 ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি অনুযায়ী ভারত আস্থা রেখেছিল গণতান্ত্রিক, স্থায়ী এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের উপর। কারণ, ভারত চিরকালীন দ্বন্দ্বের অবসান চেয়েছিল। কিন্তু এখন এই ধারণা বদলে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

গুল তাঁর উগ্র চিন্তাভাবনা থেকে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছিলেন ভবিষ্যৎ-এ পাকিস্তান কোন পথে যাবে। আদর্শগতভাবে দেখলে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন সমস্যা নিয়ে ভারতের মাথা ঘামানো উচিত নয়। 
যখন পাকিস্তানের নিজের দেশের দর্শন’ই তাদের নিজেদের ভালো থাকতে দিচ্ছে না, তখন ভারতের কি ‘ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান’ এই তত্ত্বে আস্থা রাখা উচিত ?  হামিদ গুল-তত্ত্ব ভারতও প্রয়োগ করতে পারে।

লেখক- প্রবীণ সাংবাদিক ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসভার  সাংসদ

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, না কি সিন্ধ-বালোচিস্তানে ছায়াযুদ্ধ?-সুবীর ভৌমিক


Subir Bhoumik  with sumi khan and Adam Dawla at Dhaka
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’এর কৌশল কি সঠিক, না কি পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ, বালোচিস্তানে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটা অনেক বেশি কার্যকরী হবে? বর্তমান পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে বেশি করে আলোচনা প্রয়োজন।

কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী অঞ্চল উরিতে যখন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সেনাছাউনিতে ফিদায়েঁ হামলা চালিয়ে ১৭ জন ভারতীয় সেনা জওয়ানকে হত্যা করল, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হুমকির সুরে বলেন- ‘‘এর যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং এই ঘটনার জন্য দ্রুত পাকিস্তানকে দায়ী করে বলেন- ‘‘পাকিস্তান সন্ত্রাসী রাষ্ট্র।’’

মোদীর উপদেষ্টারা এবং মন্ত্রীসভার সদস্যরা পাকিস্তানে পাল্টা হামলা চালানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ’দের সঙ্গে বসে প্রাক্তন কূটনীতিবিদ ও মেজর জেনারেলরা আলোচনা করতে থাকেন। ভারতের পাকিস্তানের উপর পাল্টা হামলা চালানো উচিত হবে কি হবে না, এই বিষয়ে। যদিও তাঁরা সকলেই একমত যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের মদত যোগাচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে একের পর এক প্যানেল বসছে, গরম গরম আলোচনা চলছে। একটি চ্যানেলে প্রাক্তন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ভারতকে নিজস্ব ফিদায়েঁ বাহিনী তৈরী করতে হবে’’। এই বক্তব্যে কট্টরপন্থী ভারতীয়রাও চমকে গিয়েছিলেন। জেনারেল রায়চৌধুরির বক্তব্যকে সেদিন টেলিভিশন চ্যানেলে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্যরাও যেমন মেনে নেননি তেমনি পোড়খাওয়া কূটনীতিবীদরাও ওই বক্তব্যকে সমর্থন করেননি।

পাকিস্তান নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর কৌশল ব্যর্থ হওয়ায় এবং মাস দুয়েক আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্রপন্থী বুরহান ওয়ানির মৃত্যু নিয়ে কাশ্মীর অগ্নীগর্ভ হয়ে ওঠায়, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে যে- ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া বৃথা।
 দিল্লি চাপ তৈরি করছে যদি আলোচনা করতেই হয়, তাহলে কেবল আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। 
এদিকে এই মুহুর্তে কাশ্মীরের মানুষের ভারত সরকারের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানও পরিষ্কার করে বলছে, আলোচনায় কাশ্মীর ইস্যুকেই প্রাধান্য দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দে‍ওয়া ভাষণকে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। কেন নরেন্দ্র মোদী পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং বালোচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপন করলেন!
 ইন্দিরা গান্ধী থেকে মনমোহন সিং পর্যন্ত কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘসময় ধরে অশান্ত থাকা বালোচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থাগুলির যোগাযোগ রক্ষা করায় বিরোধিতা করেননি, কিন্তু তাঁরা কেউ প্রকাশ্যে এই বিষয়টি কখনও উত্থাপন করেননি। 
আর এখন অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো বালোচ ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই পরিষেবা মোবাইল অ্যাপস-এর মাধ্যমেও পাওয়া যাবে। 
বালোচ নেতা ব্রাহমদুগ বুগতি, যাঁর বাবা পারভেজ মুসারফের আমলে বিমান হামলায় নিহত হয়েছিলেন, তিনি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে বসে নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান (বালোচিস্তানের ইস্যুগুলিকে উত্থাপন করার জন্য) এবং দেশে ও দেশের বাইরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সেনাবহিনীকে কাঠগড়ায় তোলেন। সম্প্রতি ভারতের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘে বালোচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপন করেন, আবার পাকিস্তান ভারতের কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তোলে।

অবাক হই না যখন, ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার কুলভূষণ যাদবকে, পাক-সেনাবাহিনী আটক করে এবং বালোচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে মদত দেওয়ার জন্য ভারতকে দোষারোপ করে। 
ইসলামাবাদের অভিযোগ পাকিস্তানের সবচাইতে বড় প্রদেশ বালোচিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর জন্য কুলভূষণ যাদবকে ভারত নিয়োগ করেছিল। যদিও ভারত এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে বলে, কুলভূষণ বর্তমানে একজন ব্যবসায়ী, পাক-গুপ্তচরেরা ইরান থেকে তাঁকে অপহরণ করে এবং জোর করে তাঁকে ভারতের বিরুদ্ধে বলিয়ে নেয়। 
কাশ্মীর নিয়ে ভারত যতটা উদ্বিগ্ন, বালোচিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের ততটাই চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পাকিস্তানের এই প্রদেশটি কেবলমাত্র খনিজ সম্পদে সম্বৃদ্ধ নয়, এখানে রয়েছে সমুদ্র বন্দর গদর। চিন এই বন্দরটি নতুন করে সাজাচ্ছে। প্রস্তাবিত ৪৬বিলিয়ন ডলারের চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (CPEC) ক্ষেত্রে গদর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিনের সিংকিয়াং প্রদেশের সঙ্গে গদর বন্দরের সংযোগ স্থাপন হলে আরবসাগরে ড্রাগনদের প্রবেশ সহজ হবে। ফলে এটি পাকিস্তানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগের মস্ত বড় ক্ষেত্র।
CPEC প্রকল্পের প্রস্তাবিত সড়কপথ।


কিন্তু বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা প্রস্তাবিত এই করিডরটির বিরোধিতা করছে, তারা নিয়মিত প্রকল্প নির্মাণকারী পাকাস্তানী কর্মী, আধিকারিকদের উপর হামলা চালাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক নির্মাণকারীদের উপর, যারা CPEC-র সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তানের যে সংস্থাটি কাজটি করছে তারা ভারতের ‘বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন’-এর সমতুল্য একটি সংস্থা। ২০১৪ সাল থেকে (মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন যে বছর) বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ৪৪জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছে, ১০০জনের উপর কর্মী গুরুতরভাবে জখম হয়েছে। অধিকাংশ হামলা চালানো হয়েছে বালোচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্ফারণ ঘটিয়ে। হ্যাঁ এই হামলাগুলি অবশ্যই উরিতে ভারতীয় সেনা ছাউনিতে ফিদায়েঁ হামলা বা গত জানুয়ারিতে পাঠানকোটে ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার মতো উচ্চমার্গের নয়। কিন্তু এই হামলাগুলি পাকিস্তানের অর্থনীতির উপর সরাসরি আঘাত হানছে। কাশ্মীর ভারতের কাছে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোনও প্রদেশ নয়। ভরতের একমাত্র মুসলিম প্রধান রাজ্য কাশ্মীরে বিক্ষোভ, আন্দোলনের মোকাবিলা করতে হচ্ছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে, যাতে পাকিস্তানের দ্বিজাতিতত্ব ভুল প্রমানিত হয়। কাশ্মীরের বনজ সম্পদ ও পর্যটন অর্থনৈতিকভাবে ভারতের কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার থেকে খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ বালোচিস্তান অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বালোচিস্তানের হামলার খবর খুব একটা সংবাদমাধ্যমে আসে না, কারণ এই প্রদেশে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত। তবে পাকিস্তান CPEC’র প্রকল্পটি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সামরিক ও অসামরিক এজেন্সিগুলি এই প্রকল্পে কর্মরতদের জন্য নিরাপত্তা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে চিনের কর্মীদের জন্য। পাকিস্তান সূত্রে খবর, CPEC প্রকল্পে কর্মরত ৭০৩৬ জন চিনা কর্মীর জন্য ১৪৫০৩ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু সামরিক এবং অসামরিক নিরাপত্তাবাহিনীকে নিয়ে কৌশল স্থির করতে বিশেষ নিরাপত্তা বিভাগকে (SSD) যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। SSD’র নর্দান ডিভিশন (খুনজেরাব পাস থেকে রাওয়ালপিন্ডি পর্যন্ত) সুরক্ষিত। কিন্তু সাউদার্ন ডিভিশন যেটা রাওয়ালপিন্ডি থেকে গদর পর্যন্ত বিস্তৃত সেখানে সমস্যা রয়েছে। পাকিস্তানের ঐতিহ্যশালী ‘ডন’ পত্রিকায় সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে লেখা হয়েছে- ‘‘এই ইস্যুগুলোর দ্রুত সমাধান না হলে, CPEC’র প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময়সীমার উপর প্রভাব পরবে, যা গভীর চিন্তার বিষয়।’’

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দেওয়ার ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় কোনও নতুন ঘটনা নয়। উত্তর ঔপনিবেশিক সময় থেকে এই ঘটনা চলে আসছে। ভারতের কশ্মীর ভূখন্ডের দখল যেনতেন প্রকারে নেওয়ার মানসিকতা থেকে পাকিস্তান শুরু থেকেই জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দিতে শুরু করে। ১৯৪৭-৪৮ এবং ১৯৬৫ সালে কাশ্মীরে বড় ধরনের জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটায় পাকিস্তান। ভারত মোক্ষম জবাব দেয় ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি গেরিলা বাহিনীকে মদত দেয় এবং সেনা অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করে। পরোক্ষভাবে আমেরিকার সম্মতিতে তিব্বতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ১৯৬৬ সাল নাগাদ ভারত আশ্রয় এবং প্রশিক্ষণ দেয়। এর পাল্টা হিসাবে উত্তরপূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে অস্ত্র সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে চিন। প্রখ্যাত ভারতীয় গুপ্তচর বিশেষজ্ঞ বি রমন তাঁর লেখা ‘Kaoboys of R&AW’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, সিন্ধ প্রদেশের বিক্ষোভকে কিভাবে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ব্যবহার করেছে এবং তার পাল্টা হিসাবে পাকিস্তান কিভাবে পাঞ্জাবের খালিস্তান আন্দোলনকারীদের সাহায্য করেছিল। ১৯৭০-৮০ দশকে চট্টগ্রামের বুদ্ধধর্মালম্বী গেরিলা বাহিনী ‘শান্তি বাহিনী’কে মদত দেওয়ার পাল্টা হিসাবে বাংলাদেশ পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত এবং আশ্রয় দিতে শুরু করে। আর শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই’কে ভারতের মদত দে‍ওয়ার ঘটনাতো ইতিহাস।

এক বছর আগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল পাকিস্তানকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘তোমরা মুম্বইয়ের মতো আরেকটি ঘটনা যদি ঘটাও, তাহলে তোমাদের বালোচিস্তান হারাতে হবে।’’ ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রাক্তন প্রধান সেই সময় কাজ করেছেন, যখন দিল্লি খরচ বাঁচানোর জন্য শত্রু দেশগুলির ভূখন্ডে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত যোগাত। পাকিস্তান পরমাণু হামলার যে হুমকি প্রতিনিয়ত দিয়ে চলেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এই মুহুর্তে ১৯৭১-এর কায়দায় চিরাচরিত পদ্ধতিতে যুদ্ধ করা কার্যত অসম্ভব। আবার এখন যে আন্তঃসীমান্ত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এর কথা বলা হচ্ছে, বারংবার এই পন্থা অবলম্বন করলে তার ফল হতে পারে ভয়ানক। বরং পাকিস্তানের গোলমেলে অঞ্চলগুলিতে (বালোচিস্তান, সিন্ধ, গিলগিট-বাল্টিস্তান) ভারত ছায়া যুদ্ধ চালিয়ে গেলে পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যু থেকে পিছু হটতে বাধ্য হবে।
লেখক- প্রবীণ সাংবাদিক BBC, " Insurgent Crossfire" (1996) বইটির লেখক।