Friday, September 19, 2014

দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ:জয়শ্রী জামানের ৫০ বন্ধু ও সহকর্মী

দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ:জয়শ্রী জামানের ৫০ বন্ধু ও সহকর্মী

 সম্প্রতি দুই সন্তানহারা সাংবাদিক জয়শ্রী জামানকে নিয়ে কিছু গণমাধ্যম দায়িত্বহীনভাবে কুৎসা রটনা করছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে শোকবিধ্বস্ত জয়শ্রী জামানের প্রতি সমবেদনামূলক এবং দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের জন্যে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জয়শ্রী জামানের  ৫০ জন বন্ধু ও সহকর্মী । বৃহস্পতিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে তারা সদ্য সন্তানহারা মায়ের আর্তচিৎকার অন্তরের অন্ত:স্থলে ধারণ করে সহকর্মীর চরম দু:সময়ে সাংবাদিকতায় পেশাদারীত্ব প্রত্যাশা করেন। শুক্রবার দিনব্যাপী চ্যানেল আইতে এই আবেদন প্রচার করা হয়। বিভিন্ন অনলাইনেও এই বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। বিবৃতিটি এখানে তুলে ধরা হলো।

    দু’ দিন ধরে দুঃসহ সময় পার করছি আমরা। সাংবাদিক জয়শ্রী জামান ও আলীমুল হকের দুই সন্তান চিরশ্রী জামান মনমন (১৭) ও মোহাম্মদ বিন আলীম (১৫) গত সোমবার আত্মহত্যা করলে শুধু সাংবাদিক সমাজই না গোটা দেশ শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। জয়শ্রী ও আলীমুলের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে বেশ ক’বছর আগে। তাদের দুই সন্তানের একসঙ্গে আত্মহত্যার ঘটনাটি বাবা-মায়ের বন্ধন অটুট না থাকলে যে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, সেই নির্মম সত্যটাই প্রমাণ করে দিয়েছে। অথচ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়ার বদলে আমরা মেতে উঠেছি কুৎসিত সাংবাদিকতায়। নারীর চরিত্র হননে মত্ত হয়েছে আমাদের গণমাধ্যমের একটি অংশ। কয়েকটি পত্রিকায় এই ঘটনায় আঙ্গুল তোলা হয়েছে জয়শ্রী জামানের দিকে, যা আমাদের ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে।

একইরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। সাংবাদিকতার নীতির বাইরে গিয়ে কল্পিত গল্পগাথা যে সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে সে কথাটাও আমরা ভুলে গেছি। ২০১১ সালে স্বামীর নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোমানা মঞ্জুরের কথা আমরা এখনো ভুলে যাইনি। রোমানার স্বামী হাসান সাইদ মারা যাবার পর পুরো পরিস্থিতিই বদলে গেল। রোমানা ওপর হওয়া অত্যাচারের কথা সমাজ, গণমাধ্যম ভুলে গেল। তখন প্রকাশিত হতে থাকলো কথিত “ইরানি বন্ধুর” সঙ্গে রুমানা মঞ্জুরের ছবি আর সূত্রবিহীন মেইল। অথচ রুমানা দেশের বাইরে পড়াাশুনা করছিলেন। তখন যে কারো সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে। এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এজন্য তো তার ওপরে করা অত্যাচার জায়েয হয়ে যায় না।

আমরা ভুলে যাই নি ২০১০ সালে জুরাইনে দুই সন্তান নিয়ে মায়ের আত্মহত্যার কথা। সেখানেও একজন নারী সাংবাদিককে নিয়ে বিস্তর  লিখেছে গণমাধ্যম। কয়েকটা দিন পার হওয়ার পর দেখলাম, মূল ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে দেদারসে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লিখা হচ্ছে সেই নারী সাংবাদিককে নিয়ে। আত্মহত্যার মূল ঘটনাটি লিখতে মজা না পেয়ে নারী সহকর্মীকে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতাতেই বিকৃত আনন্দ ছিলো অনেকের। সমুদ্র সৈকতে কিংবা ঘরের ভেতরে তোলা টিশার্ট পরা ছবি দিয়ে সেই ঘটনার আপডেট জানানো হয়েছে বহুদিন।

ঐশীর ঘটনাটিও আমাদের সমাজকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াটাই যেন একমাত্র কারণ ছিলো কিংবা জিন্স-টিশার্ট। ঘটনার মূলে যাওয়ার চেয়ে ঐশীকে নিয়ে লেখালেখিই আনন্দের বিষয় ছিলো অনেকের। লক্ষ্য ছিল জিন্স-টিশার্ট পরা টিনএজ একটি মেয়ের ছবি দিয়ে নিউজ করে পত্রিকার পাঠক আর অনলাইনগুলোর হিট বাড়ানো।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নিহত হওয়ার পরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আমাদের প্রিয় বন্ধু-সহকর্মী রুনির মৃত্যুর পর কতো কথা শুনেছি। হ্যাঁ...সব কথাই হয়েছে রুনিকে নিয়ে(প্রিয় বন্ধু সাগরকে নিয়ে বললেও সেটা সুখকর হতো না আমাদের কাছে)। রিপোর্টের লাইনে লাইনে রুনির চরিত্র হনন করা হয়েছে নানা ভাবে। যার কারণে এখনো আমরা সাগর-রুনি হত্যারহস্য জানতে পারি নি। তবে রুনির বেলায় আমরা রুনির বন্ধু-সহকর্মী ও স্বজনেরা প্রতিবাদ করেছিলাম। জয়শ্রী জামানকে নিয়ে লেখা সংবাদগুলোর বেলায়ও আমরা একযোগে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জয়শ্রীর দুই সন্তানের আত্মহত্যার ঘটনা তো প্রত্যেক অভিভাবকের বিবেককে জাগিয়ে তোলার কথা। নিজের সন্তানের নিরাপদ জীবনের জন্য সচেতন হয়ে উঠার কথা।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বাচ্চা দুটি ছিল জয়শ্রী জামানের প্রাণ। এই দুই সন্তানের জন্যই জয়শ্রী জামানকে ছুটে বেড়াতে হতো রাজধানীর এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মনমন আর আলীমকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছিল জয়শ্রী। আজ যখন ওরাও চলে গেলো তখন তার আর তো হারাবার কিছু নেই। তবুও সব হারানো নি:স্ব জয়শ্রীকে আমরা বাঁচতে দিচ্ছি না। একজন সন্তানহারা মায়ের আর্তচিৎকার আমাদের কর্ণকুহরে পৌঁছে না। আমরা মানবিকতার হাত প্রসারিত করে তার পাশে দাঁড়াইনি। বরং কিভাবে তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল ‘সম্মানটুকু’ ধুলিসাৎ করা যায় সেজন্য যেনো কেউ কেউ আদাজল খেয়ে লেগেছে। যার সব হারিয়েছে তাকে চরম অনৈতিক ,অশালীন এবং অন্যায়ভাবে দায়ী করা হচ্ছে । হায়রে সাংবাদিকতা!

অত্যন্ত মেধাবী  চীরশ্রী জামান মনমন ও আলীমকে নিয়েই দু‘চোখে রঙিন স্বপ্ন ছিল জয়শ্রীর। মনমন চারটি স্টার মাকর্সসহ ‘এ’ পেয়েছিল ‘ও’ লেভেলে। গিটার বাজাতো। জাপানী ভাষা জানতো। মনমনও মায়ের মতোই বিনয়ী ও ভদ্র ছিল। অথচ ওই দুটি বাচ্চাকে ‘মাদকাসক্ত’  বানানোর অপচেষ্টা হয়েছে। বুধবার কিছু পত্রিকা লিখেছে,“বাবা তাদের জীবন থেকে আগেই চলে গেছেন। মাও সে পথেই হাঁটছেন।” মা' যে সে পথে হাটঁছেন এটা কিসের ভিত্তিতে বলছে পত্রিকাগুলো?
অথচ কম্যুনিটির প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে দূরে সরে না থেকে আমরা যদি জয়শ্রী-আলীমুলের সাজানো সংসারটি ধরে রাখার চেষ্টা করতে পারতাম তা হলে হয়তো আজ দুটি মেধাবী শিশুকে অকালে ঝরে যেতে হতো না। আমরা যদি জয়শ্রীর চাকরী টি স্থায়ী করতে সহযোগিতা করতে পারতাম, অথবা  মেধাবী মেয়ে চীরশ্রীর জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারতাম তা হলে হয়তো সন্তান দু‘টিকে নিয়ে আরেকটু ভালোভাবে থাকতে পারতো জয়শ্রী। এই সন্তানদেও মনে ও কোন হতাশা জন্মাতো না।
ডনজেদেও বিচ্ছিন্নতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনুতাপ তো নেই-ই, কেউ কেউ দু:খজনক বিষয়টিকে মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে ‘সংবাদ পণ্য’ করার চেষ্টা করছেন। সমাজের বিবেক, সমাজের দর্পণ হিসেবে যারা কাজ করছেন, তারা কি দয়া করে একবার ভেবে দেখবেন বিষয়গুলো? আমাদের বিবেক জাগ্রত হোক॥

আমরা জয়শ্রী জামানের বন্ধু ও সহকর্মীরা:- দিল মনোয়ারা মনু, ইখতিয়ারউদ্দিন, ফরিদা ইয়াসমিন, মাহমুদ হাফিজ, কাওসার রহমান, সুপ্রীতি ধর, পারভীন সুলতানা ঝুমা, ফজলুল বারী, জাহিদ নেওয়াজ খান, শারমীন রিনভী, প্রভাষ আমিন, ইলিয়াস খান, মানস ঘোষ, রানা হাসান, অঞ্জন রায়, মেনন মাহমুদ, শাহনাজ গাজী, ফাতেমা জোহরা হক কাকলী, সুমি খান, গোধূলী খান, জুলহাস আলম, রোজিনা ইসলাম, জাহানারা পারভীন, নাদিরা কিরণ, জাকিয়া আহমেদ, ইশরাত জাহান ঊর্মি, সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, তানবীর সিদ্দিকী, শাহেদা ফেরদৌসী, ফারহানা লাকি, মুনমুন শারমীন শামস্, জেসমিন পাপঁড়ি, সাজু রহমান, লীনা পারভীন, মোরসালিন মিজান, তাসকিনা ইয়াসমিন, লাবনী গুহ রায়, দৌলত আক্তার মালা, শামীম আরা শিউলি, সুলতানা রহমান, ফারহানা মিলি, সেবিকা দেবনাথ, রুখসানা ইয়াসমিন, সাবরিনা করিম মোর্শেদ, আঙ্গুর নাহার মন্টি ,ঝর্ণামনি, আগুন সহমিকা, আলফা আরজু। ### ১৯.০৯.২০১৪

Thursday, September 18, 2014

মিডিয়াকে বলছি, দায়িত্বশীল হোন, প্লিজ

মিডিয়াকে বলছি, দায়িত্বশীল হোন, প্লিজ

দুই সন্তানহারা মা জয়শ্রী’র নামে কুৎসা লিখবেন না প্লিজ


দু’ দিন ধরে দুঃসহ সময় পার করছি আমরা। সাংবাদিক জয়শ্রী জামান ও আলীমুল হকের দুই সন্তান চিরশ্রী জামান মনমন (১৭) ও মোহাম্মদ বিন আলীম (১৫) গত সোমবার আত্মহত্যা করলে শুধু সাংবাদিক সমাজই না গোটা দেশ শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। জয়শ্রী ও আলীমুলের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে বেশ ক’বছর আগে। তাদের দুই সন্তানের একসঙ্গে আত্মহত্যার ঘটনাটি বাবা-মায়ের বন্ধন অটুট না থাকলে যে ভয়...াবহ পরিণতি হতে পারে, সেই নির্মম সত্যটাই প্রমাণ করে দিয়েছে। অথচ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়ার বদলে আমরা মেতে উঠেছি কুৎসিত সাংবাদিকতায়। নারীর চরিত্র হননে মত্ত হয়েছে আমাদের গণমাধ্যমের একটি অংশ। কয়েকটি পত্রিকায় এই ঘটনায় আঙ্গুল তোলা হয়েছে জয়শ্রী জামানের দিকে, যা আমাদের ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে।

একইরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। সাংবাদিকতার নীতির বাইরে গিয়ে কল্পিত গল্পগাথা যে সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে সে কথাটাও আমরা ভুলে গেছি। ২০১১ সালে স্বামীর নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোমানা মঞ্জুরের কথা আমরা এখনো ভুলে যাইনি। রোমানার স্বামী হাসান সাইদ মারা যাবার পর পুরো পরিস্থিতিই বদলে গেল। রোমানা ওপর হওয়া অত্যাচারের কথা সমাজ, গণমাধ্যম ভুলে গেল। তখন প্রকাশিত হতে থাকলো কথিত “ইরানি বন্ধুর” সঙ্গে রুমানা মঞ্জুরের ছবি আর সূত্রবিহীন মেইল। অথচ রুমানা দেশের বাইরে পড়াশুনা করছিলেন। তখন যে কারো সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে। এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এজন্য তো তার ওপরে করা অত্যাচার জায়েয হয়ে যায় না।

আমরা ভুলে যাই নি ২০১০ সালে জুরাইনে দুই সন্তান নিয়ে মায়ের আত্মহত্যার কথা। সেখানেও একজন নারী সাংবাদিককে নিয়ে বিস্তর লিখেছে গণমাধ্যম। কয়েকটা দিন যাওয়ার পর দেখলাম, মূল ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে দেদারসে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লিখা হচ্ছে সেই নারী সাংবাদিককে নিয়ে। আত্মহত্যার মূল ঘটনাটি লিখতে মজা না পেয়ে নারী সহকর্মীকে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতাতেই বিকৃত আনন্দ ছিলো অনেকের। সমুদ্র সৈকতে কিংবা ঘরের ভেতরে তোলা টিশার্ট পরা ছবি দিয়ে সেই ঘটনার আপডেট জানানো হয়েছে বহুদিন।

ঐশীর ঘটনাটিও আমাদের সমাজকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াটাই যেন একমাত্র কারণ ছিলো কিংবা জিন্স-টিশার্ট। ঘটনার মূলে যাওয়ার চেয়ে ঐশীকে নিয়ে লেখালেখিই আনন্দের বিষয় ছিলো অনেকের। লক্ষ্য ছিল জিন্স-টিশার্ট পরা টিনএজ একটি মেয়ের ছবি দিয়ে নিউজ করে পত্রিকার পাঠক আর অনলাইনগুলোর হিট বাড়ানো।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নিহত হওয়ার পরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আমাদের প্রিয় বন্ধু-সহকর্মী রুনির মৃত্যুর পর কতো কথা শুনেছি। হ্যা...সব কথাই হয়েছে রুনিকে নিয়ে (প্রিয় বন্ধু সাগরকে নিয়ে বললেও সেটা সুখকর হতো না আমাদের কাছে)। রিপোর্টের লাইনে লাইনে রুনির চরিত্র হনন করা হয়েছে নানা ভাবে। যার কারণে এখনো আমরা সাগর-রুনি হত্যারহস্য জানতে পারি নি। তবে রুনির বেলায় আমরা রুনির বন্ধু-সহকর্মী ও স্বজনেরা প্রতিবাদ করেছিলাম। জয়শ্রী জামানকে নিয়ে লেখা সংবাদগুলোর বেলায়ও আমরা একযোগে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জয়শ্রীর দুই সন্তানের আত্মহত্যার ঘটনা তো প্রত্যেক অভিভাবকের বিবেককে জাগিয়ে তোলার কথা। নিজের সন্তানের নিরাপদ জীবনের জন্য সচেতন হয়ে উঠার কথা।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বাচ্চা দুটি ছিল জয়শ্রী জামানের প্রাণ। এই দুই সন্তানের জন্যই জয়শ্রী জামানকে ছুটে বেড়াতে হতো রাজধানীর এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মনমন আর আলীমকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছিল জয়শ্রী। আজ যখন ওরাও চলে গেলো তখন তার আর তো হারাবার কিছু নেই। তবুও সব হারানো নি:স্ব জয়শ্রীকে আমরা বাঁচতে দিচ্ছি না। একজন সন্তানহারা মায়ের আর্তচিৎকার আমাদের কর্ণকুহরে পৌঁছে না। আমরা মানবিকতার হাত প্রসারিত করে তার পাশে দাঁড়াইনি। বরং কিভাবে তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল ‘সম্মানটুকু’ ধুলিসাৎ করা যায় সেজন্য যেনো কেউ কেউ আদাজল খেয়ে লেগেছে। যার সব হারিয়েছে তাকেই দায়ী করা হচ্ছে কারণ হিসেবে। হায়রে সাংবাদিকতা!

অত্যন্ত মেধাবী মনমন ও আলীমকে নিয়েই দু চোখে রঙিন স্বপ্ন ছিল জয়শ্রীর। মনমন চারটি স্টার মাকর্সসহ ‘এ’ পেয়েছিল ‘ও’ লেভেলে। গিটার বাজাতো। জাপানী ভাষা জানতো। মনমনও মায়ের মতোই বিনয়ী ও ভদ্র ছিল। অথচ ওই দুটি বাচ্চাকেও মাদকাসক্ত বানানোর অপচেষ্টা হয়েছে। গতকাল কয়েকটি পত্রিকা লিখেছে,“বাবা তাদের জীবন থেকে আগেই চলে গেছেন। মাও সে পথেই হাঁটছেন।” মা' যে সে পথে হাটঁছেন এটা কিসের ভিত্তিতে বলছে পত্রিকাগুলো? অথচ কম্যুনিটির প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে দূরে সরে না থেকে আমরা যদি জয়শ্রী-আলীমুলের সাজানো সংসারটি ধরে রাখার চেষ্টা করতে পারতাম তা হলে হয়তো আজ দুটি মেধাবী শিশুকে অকালে ঝড়ে যেতে হতো না। আমরা যদি মেধাবী মেয়েটির জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারতাম তা হলে হয় তো সন্তান দুটিকে নিয়ে আরেকটু ভালোভাবে থাকতে পারতো জয়শ্রী। আমাদের মধ্যে অনুতাপ তো নেই-ই, কেউ কেউ দু:খজনক বিষয়টিকেও মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে ‘সংবাদ পণ্য’ করার চেষ্টা করছেন। সমাজের বিবেক, সমাজের দর্পণ হিসেবে যারা কাজ করছেন, তারা কি দয়া করে একবার ভেবে দেখবেন বিষয়গুলো?

আমরা জয়শ্রী জামানের বন্ধু ও সহকর্মীরা:-
দিল মনোয়ারা মনু, ইখতিয়ারউদ্দিন, ফরিদা ইয়াসমিন, মাহমুদ হাফিজ, সুপ্রীতি ধর, পারভীন সুলতানা ঝুমা, ফজলুল বারী, জাহিদ নেওয়াজ খান, শারমীন রিনভী, প্রভাষ আমিন, ইলিয়াস খান, মানস ঘোষ, রানা হাসান, অঞ্জন রায়, মেনন মাহমুদ, শাহনাজ গাজী, ফাতেমা জোহরা হক কাকলী, সুমি খান, গোধূলী খান, জুলহাস আলম, রোজিনা ইসলাম, জাহানারা পারভীন, নাদিরা কিরণ, জাকিয়া আহমেদ, ইশরাত জাহান ঊর্মি, সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, তানবীর সিদ্দিকী, শাহেদা ফেরদৌসী, ফারহানা লাকি, মুনমুন শারমীন শামস্, জেসমিন পাপঁড়ি, সাজু রহমান, লীনা পারভীন, মোরসালিন মিজান, তাসকিনা ইয়াসমিন, লাবনী গুহ রায়, দৌলত আক্তার মালা, শামীম আরা শিউলি, সুলতানা রহমান, ফারহানা মিলি, সেবিকা দেবনাথ, রুখসানা ইয়াসমিন, সাবরিনা করিম মোর্শেদ, আঙ্গুর নাহার মন্টি ও ঝর্ণামনি।

জীবন পিয়াসী তৃষ্ঞার আশে- সুমি খান

 (তন্বী জয়ন্তীদের জন্যে)
তৃষাতুর প্রাণ জোছনার ছায়া
আলোর হল্কা মরীচিকা মায়া
পরাজিত রাতে হার মেনে নেয়া

মিথ্যে প্রবোধে 
এতো ভুল আর এতো ক্ষরণে
 এতো প্রাণ জাগে তৃষ্ঞা হরণে
সবুজাভ সাধ তৃষিত প্রাণে
কেবলি বেসুর 
বেতাল অগ্নিবানে
ছুঁয়েছো অধর নিবিড় আলিঙ্গনে !!!!
-------------+++++------
কোন্ অকরুণ
চিতার চাবুকে
নীল কশাঘাতে
বিষজল সুখে
চোখ ছলছলকাঁপিত অধর
নীল অভিমানে
প্রাণ জর্জর!!

জানোনি তো তুমি
চাওনি জানতে!!

 লোভাতুর  সুখে
  টেনেছিলে বুকে
  ফেলে গেছো মিছে
  মরীচিকা পিছে
  অর্ন্তজ্বালা    
মুক্তিপিয়াসী
আমি ভেসে গেছি-
জীবন পিয়াসী তৃষ্ঞার আশে।

-----------------------
ও জীবন তুমি
কিছু তো দিয়েছো
কিছু ভালোবাসা
কিছু কাছে আসা
কিছু টা পিয়াসী
প্রাণের জোযারে

হয়তো  ভুলে
বা মিথ্যে প্রবোধে
তুমি তো ভাসালে
আঁখির জোয়ারে
ও জীবন তুমি
চুম্বনে ভাসো
মেঘহীন দূর
নীলিমায় এসো
হোক ভুল, হোক্ মিথ্যে প্রবোধে-

তিল তিল গড়া বালির প্রাচীরে
ভাঙ্গনের ঢলে তীব্র জোয়ারে
যতোই ভাসাও অকূলে,
ও জীবন তুমি ভরা জোছনায়
আজ বুঝি নেমে এলে!!
9.00 pm 
18.09.2014
Daily Janakantha Office

সুবিধাবাদী মমতার জামায়াত কানেকশন - ড. বিজন সরকার

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতকে দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এমপি আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে  অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতকে দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এমপি আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে  অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় অভিযোগটি যে গুরুতর, তা প্রমাণ করে। বিষয়টি বন্ধু-প্রতিম ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। তেমন গুরুতর না হলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মাথাব্যথা হওয়ার কথা নয়।

আহমেদ হাসান ইমরান ২০০১ সালে ভারতে নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ছিলেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, সিমি বহুগুণে শক্তিশালী হয়ে ভারত-বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। সিমির প্রাক্তন অনেক নেতা এখন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিতে যুক্ত।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও ইমরানের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে একই ধরনের রিপোর্ট করেছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নলিয়াখালিতে জঙ্গি-গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনায় ইমরানের সক্রিয় সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়। রিপোর্টটি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়ার পরেও কেন মনোনয়ন দিয়ে ইমরানকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হল, সেই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র মমতাই দিতে পারবেন।তৃণমূলের আরেক এমপি অভিনেত্রী মুনমুন সেন ও পাকিস্তানের তেহরিক-ই ইনসাফ নেতা ইমরান খানের মধ্যে এখনো নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার সংস্থার দাবি। পাকিস্তানের আইএসআই’র সাথে মুনমুন সেন সরাসরি জড়িত, সেই সন্দেহও রয়েছে কিছু কিছু মহলের। গোয়েন্দারা বলছেন, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদী-অধ্যুষিত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়াতে ইমরানের তেহরিক-ই ইনসাফের ক্ষমতায় শরিক পাকিস্তানি জামায়াত। প্রদেশটি উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অতি সম্প্রীতি নওয়াজ শরীফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আইএসআই’র প্রেসক্রিপশনে আজাদি মার্চ করে ইমরানের পিটিআই। আন্দোলনটি যে আইএসআইয়ের নির্দেশনায় হয়েছে, তা ইমরানের উদ্যোগে অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান জাভেদ হাশ্মিরই গণমাধ্যমকে বলেছেন।যে প্রশ্নটি সবার সামনে চলে আসে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসব জানতেন কি না?’। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের উগ্র-গোষ্ঠীর মধ্যকার নিবিড় যোগাযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতার গোচরেই হয়েছে বলে মনে হয়। যদিও তাঁর দল অস্বীকার করছে। বলছে, এটি বিজেপির রাজনীতি।কিন্তু তাদের দাবি তেমন গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। সারদার মাধ্যমে জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নেওয়া দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা তাই প্রমাণ করে।
রথমতঃ পাকিস্তানি হাইকমিশনারের কলকাতা সফর ও মমতার সাথে সাক্ষাতের পেছনে মুনমুন সেন ও ইমরান খানের  আগ্রহ এবং ঘনিষ্ঠতা ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাজ করেছে। চির বৈরি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সাথে একজন মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হতেই পারে। কিন্তু সেই সাক্ষাৎটি যখন আইএসআইপন্থি পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আগ্রহে অনুষ্ঠিত হয়, তখন এর পেছনের উদ্দেশ্য বেশ পরিষ্কার হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, সাক্ষাতের পরপরই কলকাতার একটি সাংবাদিক দলকে পাকিস্তান সফরের ব্যবস্থা করা হয়। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে তেমন প্যারা-ডিপ্লোমেসি স্থান পায় না। কেন্দ্রকে আড়ালে রেখে পাকিস্তানের সাথে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্যারা-ডিপ্লোমেসি চালিয়ে যাওয়ার সাথে অন্যান্য পাকিস্তানপ্রেমি কর্মকাণ্ডগুলি মিলে যায়। খোদ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণই বিশ্বাস করে যে, মমতা সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপে এই অঞ্চলের উগ্রপন্থিদের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিন হচ্ছে।

তৃতীয়ত:  কলকাতায় পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে রাজ্যের মুসলিমদের জন্য পাকিস্তানে যাওয়ার ভিসা প্রসেস সহজ করার অনুরোধের অভিযোগও রয়েছে মমতার বিরুদ্ধে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও মুসলিম বাস করেন। সেই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা পাকিস্তানি ভিসা সহজ করার অনুরোধ করেন নি। আজ যদি মমতা সারা ভারতের মুসলিমদের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার কথা বলতেন, কারো তেমন কিছু বলার থাকত না।

চতুর্থতঃ উর্দুভাষী মানুষের আনাগোনা কলকাতায় উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, যা সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, মমতার উগ্র রাজনীতি প্রীতির জন্যই রাজ্যের ভেতর অন্য দেশের মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে।

পশ্চিমবঙ্গ আমাদের প্রতিবেশী হওয়ায় মমতার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরাও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তে গরু চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায় সারদা কেলেঙ্কারির টাকার একটি বিরাট অংশ বিনিয়োগ হয়েছে। বিনিয়োগের লভ্যাংশ দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ব্যয় হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা।

গোয়েন্দা তথ্যে আরও জানা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসও নির্বাচনে জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিল। গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত বলা যায়। সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ অর্থের আদান প্রদান বিষয়ে মুখ খুলতে চাইলেও মমতা সরকারের নির্দেশে গঠিত কল্যাণ কমিশন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। কল্যাণ নিজে থেকেই কমিশনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।

বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশের জামায়াতের নেতা-কর্মীরা তৃণমূল পক্ষে কাজ করেছিল। বিশেষ করে মালদা, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর (৬০-৮০%), মুর্শিদাবাদ জেলাতে (৯০%)সহ বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় জামায়াতের কর্মীরা তৃনমূলের পক্ষে গণসংযোগ করেন।

ভারতের জাতীয়, আঞ্চলিকও স্থানীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটির ইলেকটোরাল বিহেভিয়ার পর্যালোচনা করলে মমতার বিতর্কিত রাজনৈতিক পদ্দক্ষেপগুলোর কারণ বোঝা যায়।

ঐতিহাসিকভাবে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (বাংলাদেশের মত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয় না) প্রবল। বিশেষ করে সিপিএম ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা প্রায়ই হত এবং সংখ্যালঘু মুসলমানরা নিরাপত্তাহীনতায় দিনানিপাত করত। সিপিএম ক্ষমতায় আসার পর তেমন দাঙ্গা হয়নি এবং ফলে সংখ্যালঘু ২৭ শতাংশ ভোট সিপিএমের কোষাগারে যায়। সিপিএম মুসলমানদের মধ্যে ভূমি বিতরণ করেও মুসলমান সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করেছিল। একই সাদৃশ্য দেখা যায় বিহারে। ১৯৯০ সালে লালু প্রসাদ যাদব ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি ব্যবহার করে লালু ক্ষমতায় থাকেন। একই পদ্ধতিতে উত্তর প্রদেশে মুলায়েম সিং যাদব ক্ষমতায় আসেন।এখন নিরাপত্তা সংখ্যালঘু মুসলমানের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। তাদের সচেতনতা বেড়েছে। তারা শিক্ষা, চাকরি ও দারিদ্র অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে এসেছে।সেসব ইস্যুকে গুরত্ব না দেওয়ার জন্য লালু প্রসাদ যাদবের ক্ষমতা চলে যায় নিতিশের হাতে। ঠিক একই কারণে মুলায়েম সিং ইউপিতে মায়াবতীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।


পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলমানরাও আগের মত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নন। সিপিএমের জমানায় সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে থাকার কারণেই বামফ্রন্টের মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। যেখানে সারা ভারতে স্বাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ২৭ শতাংশ ভোটের মালিক সংখ্যালঘু মুসলমানদের হার ৫৭.৫। এমনকি বাম শাসিত কেরালায় সংখ্যালঘুদের স্বাক্ষরতার হার ৮৯.৪ শতাংশ। একটি গবেষণায় দেখা যায়, কেরালায় মুসলমানদের দারিদ্র ১৫ বছরে (১৯৮৭-২০০৪) ৫৬ থেকে ৩১ এ নেমে এলেও পশ্চিমবঙ্গে নেমেছে ৫৩ থেকে ৪৪ শতাংশে।মুসলমানদের প্রতি অবহেলার কারণেই সিপিএম ২০১১ সালে ক্ষমতা হারায়। মমতা ২৯৪ তে ২২৫ আসন পেয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় যান। রাজ্যসভার মত লোকসভার নির্বাচনেও সিপিএমের শোচনীয় পরাজয় হয়। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি আসনের মধ্যে ২০টিতে জয় নির্ধারণই ভোটের মালিক সংখ্যালঘুরা। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৩৪ আসন পায়, যেখানে ২০০৯ সালে ১৯ এবং ২০০৪ সালে একমাত্র নিজের আসনটিতে জিতে আসেন মমতা।পাশাপাশি মমতার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিগত আচার আচরণ নির্মোহ-ভাবে বিশ্লেষণ করলে অসহনশীলতা, নীতিহীনতা, রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা মমতার রাজনৈতিক বিকাশ ধারায় প্রবলভাবেই পাওয়া যায়।

জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করলেও, কংগ্রেসের রাজনীতি দিয়েই মমতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু। মমতা ১৯৮৪ সালে বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে সাড়া ফেলে দেন। এরপর সারা ভারতের যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে লোকসভায় আবার নির্বাচিত হয়ে নরসিমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় মানব সম্পদ ও ক্রীড়ামন্ত্রী হিসাবে স্থান পান মমতা।কিন্তু পরে কলকাতায় ক্রীড়া উন্নয়নের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ এনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। ১৯৯৬ সালের দিকে নিজ দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএমকে সহযোগিতার অভিযোগ আনেন এবং পরিচ্ছন্ন কংগ্রেসের দাবি জানিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় শাল পেঁচিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন।

১৯৯৬ সালে পেট্রোলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মমতা সমাজবাদী পার্টির নেতা অমর সিংহের জামার কলার ধরে টানা-হেঁচড়া করেন মমতা। রেলের প্রতি অবহেলার অভিযোগে ১৯৯৭ সালে সংসদে তৎকালীন রেল-মন্ত্রী রাম বিলাসের দিকে নিজের শাল ছুঁড়ে মারেন। ১৯৯৮ সালে লোকসভায় নারী সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে সমাজবাদী পার্টির এমপি দারোগা প্রসাদ সরোজকে জামার কলার ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করে। তৃণমূল কংগ্রেস খুব অল্প সময়ে বামফ্রন্টের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে প্রকাশ পায়। তৃণমূল ১৯৯৯ সালে বিজেপির নেতৃত্বের সরকারে সামিল হলে রেলের দায়িত্ব পান মমতা। কিন্তু রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে সরকার থেকে বের হয়ে যায় তৃণমূল।
২০০১ সালের শেষের দিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা কংগ্রেসের সাথে নির্বাচনী জোট করেন। তারপরেও নির্বাচনে বামফ্রন্ট জয় লাভ করে। ২০০৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনেও বড়োসড়ো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে মমতার তৃণমূল।

মমতা ২০০৪ সালে আবার ফিরে যান বিজেপির কোয়ালিশন সরকারে। তখন কয়লা এবং খনির দায়িত্বে ছিলেন। এটিই হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সাথে মমতার শেষ কোয়ালিশন। কারণ বর্তমান ভোটের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিজেপির সাথে জোট করা আর মমতার পক্ষে সম্ভব নয়।

২০০৬ সালে সিপিএম সরকারের শিল্পনীতির বিরোধিতা এবং ২০০৭ সালের নন্দী গ্রামের গণহত্যার প্রতিবাদের ফলে মমতার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের একটি বৃহৎ অংশ বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। বামফ্রন্টের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

২০০৯ সালে লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে ১৯টি জয় করে তৃণমূল। নিজেদের উত্থানের ঘণ্টা বাজায়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকারে আবারও রেলের দায়িত্ব পান মমতা। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৫ বছরে ক্ষমতায় থাকা সিপিএমকে হারিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে। অভিযোগ রয়েছে, সারদা ১৩০ কোটি টাকা তৃণমূলের নির্বাচনে অর্থায়ন করেছিল, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের জামায়াতকে  দিয়েছিল।

সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংকটিই মমতার ক্ষমতার প্রাণশক্তি। নির্বাচনের আগে জামা মসজিদ শাহির ইমাম বুখারি এবং টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম বারখাতি তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান।

মমতার মত পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ জানেন, কেন লালু প্রসাদ যাদবকে সরিয়ে নীতিশ, মুলায়েম সিংকে সরিয়ে মায়াবতী ক্ষমতায় ছিল। এমনকি খোদ পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেসের কাছ থেকে সিপিএম, এবং সিপিএমের কাজ থেকে নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এবং লোকসভায় দ্বিতীয় বিরোধী দল।
মমতা এমন কিছু করতে চাইবে না যেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তার বিপক্ষে চলে যায়। ক্ষমতায় আসার পরেই ৩০০০০ হাজার ইমামকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা প্রদান হাইকোর্ট দ্বারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলেও মমতার প্রতি সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। তিস্তা পানি চুক্তি না করার পেছনেও অন্যতম কারণ হল- তিস্তার তীরে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই ধর্মীয় সংখ্যালঘু। মমতা জানেন ভারতের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি কোনো দলের জন্য নির্দিষ্ট নয়। আগে প্রোগ্রেসিভ অল্টারনেটিভ তেমন ছিল না, এখন অনেক আছে।

মমতার নিজেও জানেন, ইমরানের মত সিমির অনেক প্রাক্তণ নেতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি? সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি ব্যবহার করে ইমরান খানের মত সিমির নেতারা ভারতের ভেতরে ও বাইরে ভারতের স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তা খোদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গোয়েন্দারই সন্দেহ করে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে তার নিজ দলের জঙ্গি-বান্ধব রাজনীতিবিদ ইমরান থেকে শুরু করে মুনমুন সেনের মত অনেক সেলিব্রেটি জড়িত। যদি ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জামায়াত টাকা নিয়ে ২০১১ সালের বিধান সভা ও ২০১৪ সালে লোকসভার নির্বাচন করা যায়, প্রশ্ন থেকে যায় কোন নৈতিক ক্ষমতার জোরে সারদার টাকা জামায়াতকে দিতে না করবেন মমতা?

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, দেশের ভেতর জঙ্গি উত্থান ঘটল কিনা, তাও মমতার কাছে মুখ্য নয়।  মুখ্য সংখ্যালঘু ভোটের কিছু সুবিধাবাদী প্রতিনিধিকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকা। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা আর বাংলাদেশ, অনেক দূরের বিষয়।

মমতা এমন এক রাজনীতিবিদ, যার কাছে নিজ দলের স্বার্থই প্রাধান্য পায়। নিজের স্বার্থের জন্য প্রথমে বিজেপি, পরে কংগ্রেস, আবার বিজেপি, আবার কংগ্রেস জোটে গিয়েছিল। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগে বিজেপি থেকে কোয়ালিশনের জন্য ইঙ্গিত দিলেও মমতার সাড়া পাওয়া যায়নি। কারণ বিজেপির বিপক্ষে গিয়ে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি হারাতে হবে এই ভয়ে।
ড: বিজন সরকার: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথ কোরিয়া, 
bipoly3001@yahoo.com  বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৪:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যুদ্ধাপরাধী এবং ঘৃণ্য ঘাতক সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের কোন বিকল্প নেই: দায় একা শেখ হাসিনার নয় - সুমি খান

 আর্টিকেল ৪৯ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে কাউকেই ক্ষমা করতে পারেন। এই বিষয়টি আমরা আমজনতা ভুলে যেতে পারি, নীতিনির্ধারকেরা কেন ভুলে যান?  অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন একাত্তরের ঘাতক এবং তাদের অনুসারী জামাত শিবিরের ক্যাডার বাহিনী কখনো কোন দুর্বলতম মুহুর্তেও তাদের নিধন যজ্ঞে দেরি করে না। এসবে নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। সবাই যদি ভাবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একলার দায় সব, সেটা কি ঠিক ? নিজেরা কেন একটু নিজেদেও দিকে দেখি না?

একাত্তরে নারী ধর্ষণ, হত্যাসহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড  দিলেও আপিলের রায়ে সুপ্রীম কোর্ট তার  সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ড  দিয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালী হত্যায় মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই পেলেও জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ ও নারী অপহরণ করে ধর্ষণে সহায়তার দায়ে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া’ পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে জামায়াতের নায়েবে আমির ঘাতক  দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে।

এই রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী তার  নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমি একজন ব্যক্তি, সরকারের সদস্য ও নাগরিক হিসাবে সর্বোচ্চ আদালতের যে কোনো আদেশ ও রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা আশা করি, সেটা না হওয়ায় আমি মর্মাহত।” দুর্ভাগ্য আমাদের, আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি শুনেছেন সাঈদী পিস কমিটির মেম্বার ছিলেন।  আদালতে সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০ টি অভিযোগ এনে  তথ্য প্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ তম অভিযোগ পিরোজপুর থানার পাশে বিপদ সাহার কন্যা ভানু সাহাকে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে জোর করে ধর্ষন  দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে তিনি এসব তথ্য জানবার কথা । একই সাথে অনুদ্ঘাটিত তথ্য তার নির্দেশে উদ্ঘাটিত হবে –এমটাই প্রত্যাশা জনগণের। এ প্রেক্ষিতে জনগণের প্রত্যাশা - আইনমন্ত্রী বলতে পারতেন তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে –সাঈদী  পাকিস্তান সরকারের গেজেটভুক্ত জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর গোলাম আযমের নেতৃত্বে গঠিত শান্তি কমিটি বা পিস কমিটির সদস্য ছিলেন ।
আপিল বিভাগের এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “আগামীতে রিভিউ করতে পারা যাবে কি না তা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার আগ পর্যন্ত  বলা যাচ্ছে না। কারণ আব্দুল কাদের মোল্লার রায় রিভিউ করার জন্য আসামিপক্ষ আবেদন করেছিল। তার পুরো রায় এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।” তবে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আমাকে বলেছেন, রিভিউর কোন সুযোগ নেই।

সকালে রায় ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে বিক্ষোভ শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ। তাদের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আঁতাত করে সরকার এই রায় দিয়েছে।এ অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “প্রশ্নই আসে না। সমঝোতার ‘স’ ও হয়নি। মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত শিবিরের টেরোরিস্টদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো অবকাশ নেই।” এদেশের আপামর জনগণ সেটাই বিশ্বাস করতে চায়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য সাঈদীকে। পরের বছর ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াত নেতাদের মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধেই সবার আগে অভিযোগ গঠন হয়। একাত্তরে ৩ হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর ও ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২০টি ঘটনায় ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন এবং আসামিপক্ষে ১৭ জনের সাক্ষ্য শুনে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।দুই পক্ষের আপিল আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল তা রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে আপিল বিভাগ। তার পাঁচ মাস পর বুধবার এই ঘোষণা করা হলো। ৭৪ বছর বয়সী সাঈদী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে কারাবন্দি তিনি। তবে এর মধ্যে মা ও ছেলের মৃত্যুর পর দুই দফায় কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন পিরোজপুর থেকে দুই বার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর  একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর একে একে তদন্ত শুরু হয়। এর ভিত্তিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেও ও  গ্রেপ্তার করা হয়। বিচার চলাকালীন  দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত মিছিল নিয়ে নামে এবং সেই মিছিল থেকে সহিংসতা ছড়ায়।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ড দেবার পর পর ই জামায়াত শিবিরের  সহিংসতায় সারাদেশে ৩৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ চারজন, আওয়ামী লীগ ছাত্র লীগের দুই কর্মী।চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বাকিদের প্রায় সবাইকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াত।গাইবান্ধায় তিন পুলিশসহ ৬ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ জন, রংপুরে ৫ জন, সাতক্ষীরায় ৪ জন, চট্টগ্রামে এক পুলিশসহ ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন, নোয়াখালীতে ২ জন এবং ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার, দিনাজপুর, বগুড়া, মৌলভীবাজার, নাটোর ও রাজশাহীতে একজন করে নিহত হয়েছেন।দেশব্যাপী সংঘাতে আহত হয়েছে দুই শতাধিক। জামায়াত-শিবিরকর্মীরা বহু গাড়ি ও দোকান পাট ভাংচুর করেছে। কয়েকটি স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরেও হামলা হয়েছে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তির

এই রায়ের পর খালেদা জিয়া জামায়াত-আওয়ামী লীগের আঁতাত হয়েছে বিশ্বাস করে মনোক্ষুন্ন হবেন কি? জানিনা  আওয়ামী লীগের সাথে কোনভাবেই এখন তিনি পেরে উঠছিলেন না। তবে তার ভরসার জায়গা জামায়াত তাকে আশ্বস্ত করবে তাদের মতো করে কৌশুলী কথা বলে । তবে হ্যাঁ , সাদা চোখে মনে হচ্ছে  আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির ক্ষতি বেশি হয়েছেবিএনপির কর্মীদেও মধ্যে অধিকাংশই শিবির বিদ্বেষী। খোদ খালেদা জিয়ার  সমাবেশে তার উপস্থিতিতেই শিবিরের ক্যাডাররা ছাত্রদলের ছেলেদেও আক্রমণ করেছে বিভিন্ন সময়ে।

সাঈদীর আপিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক  আইনমন্ত্রী  ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, “সর্বোচ্চ আদালত সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দেয়। আদালত সেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। রায় পছন্দ হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু সব রায়ই আমাদের গ্রহণ করতে হয়, গ্রহণ করতে হবে।” মনে পড়ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হবার পর ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদকে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর সংকট, অবকাঠামোগত সংকট । প্রসিকিউটর দের ফাইল রাখবার কোন জায়গা ছিলনা প্রায় দু’বছর। গোপনীয় নথি বগলদাবা করে প্রসিকিউটর রা   রাতের বেলা বাড়ি নিয়ে যেতেন ।  সকালে  এনে আবার কাজ করতেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে  একাধিক বার  আমাদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন,“ ট্রাইব্যুনালের পেছনে আমরা অনেক খরচ করেছি, আর খরচ করা সম্ভব না। ৃ” তিনি শুধু নন এই ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে সংশ্লিষ¦ট মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্মানিত নীতিনির্ধারকেরা কখনো কি একাত্ব হয়ে সমস্যা এবং সংকট নিরসনে সিরিয়াসলি ভেবেছেন?

এ মামলার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কোনো দুর্বলতা ছিল কিনা প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। তিনি বলেছেন , “আমি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না দেখে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। তবে প্রসিকিউশন টিমের যা অবস্থা, সেখানে পরিবর্তন আসা উচিৎ।”মন্ত্রী বলেন, “ট্রাইব্যুনালে কিছু কিছু মামলা চলছে, কিছু রায় অপেক্ষমান আছে। প্রসিকিউশন টিমের যেন কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য আমি কোনো পরিবর্তন আনিনি। তবে দ্রুত এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।” মাননীয় আইনমন্ত্রী একা নন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী , স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী , অর্থমন্ত্রী সহ এই বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট দেও জরুরী ভাবে বৈঠক করে ট্রাইব্যুনালের  সকল জটিলতা অবসান প্রয়োজন। আমি এই ট্রাইব্যুনালের প্রথম দিন থেকে এর সাথে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে  শিরায় শিরায় যেন টান অনুভব করি। পিতার রক্তঋণ শুধবার দায় থেকে হয়তো।  মনে মনে ভাবি -যদি একাত্তরের ঘাতকদের  বিরুদ্ধে  জাতি ন্যায়বিচার পায়- শহীদ এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কিছুটা হলেও দায় শোধ হতো নিশ্চয়ই।  বাবা দেখে যেতে পারেন নি এই ঘাতকদেও বিচার । এক কাদেও মোল্লার ফাঁসি আমাদেও আত্মবিশ্বাসী করেছে বটে। তবু ভয় হয় -আমরা কি মৃত্যুর আগে দেখে যেতে পারবো অবশিষ্ট শীর্ষঘাতকদের ফাঁসির কাঠে ঝুলানো কার্যকর হয়েছে?
sumikhan29bdj@gmail.com

আলিমুল হক

18.09.2014   2PM CHINA
\ Supriti Dhar দিদি, আমি ভেবেছিলাম, বরাবরের মতোই আমি চুপ থাকবো। ফেসবুকে তো কিছু লিখবোই না। কিন্তু আজ অনেকদিন বাদে ফেসবুক খুলেই (আমার ভাগনি জানালো আমার অ্যাকাউটন্ট নাকি হ্যাক হয়েছে। সেটা চেক করার জন্যই আসলে ফেসবুক খোলা) আপনার স্ট্যাটাস চোখে পড়লো। জানিনা, আমার নাম উল্লেখ করে আপনি প্রশ্ন না-করলে আমি কিছু লিখতাম কি না। হয়তো কিছুই লিখতাম না। কিন্তু আপনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে জানতে চেয়েছেন আমার অনুভূতির কথা। যদিও একজন বাবার কাছে তার দুটি সন্তানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তার অনুভূতি জানতে চাওয়াটা কতোটা মানবিক আমি জানি না। কিন্তু আপনার প্রশ্নটাকে আমি স্বাভাবিক ও মানবিক হিসেবেই নিচ্ছি। কারণ, আমার সম্পর্কে ২০০৮ সালে একবার এবং সম্প্রতি আরেকবার মিডিয়াতে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে, তাতে আমাকে আপনি যে ঘৃণায় ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বাদ দেননি, তাতেই আমি অবাক হয়েছি। আমার অনুভূতির কথা আপনাকে জানাবো (আমি ভেবেছিলাম ইনবক্সে জানাবো; কিন্তু আপনি ওপেন প্রশ্ন করেছেন বলে ওপেন উত্তরই দিচ্ছি), তবে তার আগে কয়েকটি কথা বলে নিই। ভাববেন না নিজের সাফাই গাইছি। তাহলে ২০০৮ সালেই গাইতে পারতাম। তখন গাইনি, কারণ আমার বাচ্চা দুটো তখন বেঁচে ছিল। ওদের সম্মানের কথা ভেবে আমি মুখ খুলিনি। এখন ওরা নেই; তাই মুখ খুলতেও আমার সমস্যা নেই। দিদি, আপনি 'উইমেন চ্যাপ্টারের' জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন এবং আমি সে জন্য আপনাকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলাম। সেই উইমেন চ্যাপ্টারে আমার হতভাগ্য বাচ্চা দুটোর মা জয়শী জামানের একটি খোলা চিঠি ছাপা হয়েছে। চিঠিটি লেখা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে। সেই চিঠির সঙ্গে সম্ভবত আপনার একটি নোট প্রকাশিত হয়েছে। নোটে আপনি লিখেছেন: "ব্যক্তিগতভাবে জয়শ্রী জামানের আগের স্বামী আলীমুল হককে যতটা জানি, সে আরেকটা নতুন সংসার গড়ে নিয়েছে। থাকে বিদেশে। অনেকদিন তারও চাকরি ছিল না। নতুন প্রেমের কারণে দিগন্ত টিভি থেকে তার চাকরি চলে যায়। খুবই হতাশ ছিলেন তিনিও। কিন্তু যেহেতু সন্তান লালন-পালনের কোনো দায়িত্ব তাকে নিতে হয়নি, তাই জয়শ্রীর মতোন অতটা অতল গহ্বরে তাকে পড়তে হয়নি।" আপনি 'ব্যক্তিগত' শব্দটা লিখেছেন। আপনি আমার সরাসরি শিক্ষক সুব্রত ধর স্যারের বোন এবং আমাদের খুকু আপার প্রিয় বান্ধবি। ফিলিপ দাদার সেড-এর আপনার সঙ্গে আমি কিছুদিন কাজও করেছি। আপনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবেই চেনেন। কিন্তু মিডিয়াতে আমার সম্পর্কে ওই লাইন কটি লিখবার আগে কি আপনি আমাকে এর সত্যতা সম্পর্কে জিঙ্গেস করতে পারতেন না? আপনি কি খুকু আপা বা ফিলিপ দাদার সাথে কথা বলেছিলেন? আপনি লিখেছেন অনেকদিন আমার চাকরি ছিল না। কথাটা সত্য নয়। কারণ, দিগন্ত থেকে চাকরি চলে যাওয়ার আগেই ফিলিপ দাদার সেড-এ আমি জয়েন করেছিলাম। আপনি লিখেছেন 'প্রেমের কারণে' দিগন্ত থেকে আমার চাকরি চলে গেছে। এটাও ঠিক নয়। 'প্রেমের কারণে' নয়, বিয়ে করার কারণে দিগন্ত থেকে আমার এবং আমার স্ত্রী মাহবুবার চাকরি চলে গিয়েছিল। (এবং এ অন্যায়টা দিগন্ত কর্তৃপক্ষ যে করেছিল সেটা তারা দেরিতে হলেও উপলব্ধি করেছিল এবং পরে তারা আমাকে নিউজ কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল এবং মাহবুবাকেও পুনঃনিয়োগ দিযেছিল। আপনারা সেটা জানেন কি না আমি জানি না।) আপনি লিখেছেন, 'খুবই হতাশ ছিলেন তিনি।' এ কথাটাও সত্য নয়। আমি হতাশ হইনি, ভেঙেও পড়িনি। বিশ্বাসী মানুষ হতাশ হয় না। আপনি ফিলিপ দার সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। আপনি লিখেছেন: 'কিন্তু যেহেতু সন্তান লালন-পালনের কোনো দায়িত্ব তাকে (মানে আমাকে) নিতে হয়নি.....'। আসল সত্য হচ্ছে: জয়শ্রীর সঙ্গে আমার ছাড়াছাড়ি হবার দিনই (৬ মার্চ ২০০৮০; ছাড়াছাড়ির কারণ পরে লিখছি) সে জোর করে আমার মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে তার বোন তিলোত্তমার বাসায় ওঠে। আমার মেয়ে সারারাত কেঁদেছে, ঘুমায়নি...বলেছে, আমাকে আব্বুর কাছে দিয়ে আস। পরের দিন সকালে জয়শ্রী বাধ্য হয়ে মেয়েকে দিয়ে গেছে, আমি মেয়েকে নুডুলস রান্না করে খাইয়েছি, সে গোসল করে ঘুমিয়েছে। একমাস পর জয়শ্রী ছিলেটাকেও আমার কাছে দিয়ে গেছে। তারপর আটটি মাস ছেলেমেয়ে দুটো আমার কাছে ছিল। একটি কাজের বুয়া দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ওদের সঙ্গে থাকতো, রান্না করতো, তারপর আমি রাতে অফিস থেকে এলে চলে যেতো। উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় আমরা থাকতাম। বাড়িওয়ালা এখনো বেঁচে আছেন। ওই আটমাস প্রায় সময়ই জয়শ্রী আমাকে এসএমএস করে আবার বিয়ে করার তাগিদ দিত, বলতো আমার বাচ্চা দুটো কাজের বুয়ার কাছে থাকে, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। আমি রাজি হইনি। এভাবে প্রায় ৬ মাস অতিক্রান্ত হবার পর মাহবুবা অনেক সাহস করে আমাকে প্রপোজ করে এবং যথারীতি আমি না করে দিই। কিন্তু পরে আমার মেয়ে মনমনের সঙ্গে আলাপ করলে সে বলেছিল: আব্বু সকল স্টেপ মাদার খারাপ হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি বিয়েতে রাজি হই। এ নিয়ে মাহবুবার পরিবারে ঝামেলা হয় (সে প্রসঙ্গে নাইবা গেলাম) এবং বাধ্য হয়ে (সিনিয়র হিসেবে এ কাজের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি) আমরা বগবাজার কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করি। বিয়ের পরপরই দুটো ঘটনা ঘটে। আমাকে অবাক করে দিয়ে জয়শ্রী আমার ছেলেটাকে নিয়ে যায়। আর দিগন্ত কর্তৃপক্ষ মাহবুবাকে আর আমাকে চাকরিচ্যুত করে কোনো কারণ না-দর্শিয়েই। তখন আমার অবস্থা কেমন হতে পারে নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন। তখন অনেক ঝড় আমার ওপর দিয়ে গেছে....উত্তরার বড় বাসা আমাকে ছেড়ে শেওড়াপাড়ার একরুমের একটি বাসা নিয়ে হয়েছে। তখন আমি জয়শ্রীকে বললাম সেড-এর কাছ থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে মুহাম্মাদের খরচ আলাদাভাবে বহন করা সম্ভব নয়। মনমন-মুহাম্মাদ দু'জন আমাদের সঙ্গে থাকলে কোনোরকমে কষ্ট করে কাটিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু সে ছেলেকে দিতে রাজি হলো না। সে আলাদা বাসা নিল এবং মেয়েও তখন মায়ের সঙ্গে থাকতে চাইল। আমি বেতনের অর্ধেক জয়শ্রিকে প্রতিমাসে দিতে থকলাম।....এরপর এমন একটি মাস যায়নি যেমাসে ওদের আমি টাকা দিইনি (সে অংক দিন দিন বেড়েছে বৈ কমেনি কখনো)...ওদের সঙ্গে নিয়মিত আমার যোগাযোগ ছিল....বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রয়োজনও আমি আমার সাধ্য অনুসারে মেটানোর চেষ্টা করেছি। জয়শ্রী জীবনাচরণ কেমন ছিল তা আপনারা পত্র-পত্রিকায় পড়েছেন। ওসব কথা আমি বলিনি। রিপোর্টাররা নিজেরাই অনুসন্ধান করে বের করছে। এসবের বাইরেও আরো সত্য আছে। আমি সেগুলো এখানে বলতে চাই না। মোদ্দা কথা, বাচ্চা দুটো মায়ের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করতো। সেই বিরক্তি শেষ পর্যন্ত ঘৃণায় রূপ নেয়। আমি ওদের সবসময় বলতাম, খারাপ স্ত্রী বা স্বামী হয়, কিন্তু খারাপ মা বা বাবা হয় না।মনমন আমাকে বলতো: আব্বু, আম্মু বিয়ে করলে আমরা তোমার কাছে চলে আসবো। আমি ইতিবাচকভাবে ওদের বোঝানো চেষ্টা করে গেছি। শেষ দিকে বলতাম: মা, এ লেভেলটা শেষ করলেই চীনে তোর স্কলারশিপ হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধর।....কথা এখানে আর বাড়াবো না। শুধু বলবো আপনি দায়-দায়িত্বের যে কথা আপনি বলছেন তা পিতা হিসেবে পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করেছি। কিন্তু সমস্যা ছিল, ওরা আমার কাছে এসে থাকতে চাইত না। .....যে চিঠিটি জয়শ্রী প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছে সেখানে আমার সম্পর্কে যে কথাগুলো লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে সে 'ভণ্ড' বলেছে। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করবো না। কিন্তু 'রাজাকার মনোবৃত্তি' আর 'পরকীয়া প্রেমের' যে অভিযোগ সে আমার বিরুদ্ধে এনেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি দিগন্তে কাজ করেছি পেশাদার হিসেবে; আমি কখনোই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না, এখনো নেই। আমি ইত্তেফাকে দশ বছর কাজ করেছি....সিএসবি নিউজে কাজ করেছি (সিএসবি নিউজ সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরির। তো, এর জন্য যদি আমি রাজাকার হয়ে থাকি, তাহলে সময় টিভির মালিক আহমেদ জোবায়ের ভাই, নিয়াজ ভাই, তুষার আবদু্ল্লাহ, দানেস ভাই, প্রভাস দাসহ আরো শতাধিক সঙবাদকর্মী কী? উনারাওতো সেখানে কাজ করেছেন!) আমি চ্যানেল আইয়ে কাজ করেছি, আইইউবিতে কাজ করেছি। আর পরকীয়া প্রেমের কারনেই জয়শ্রীর সঙ্গে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে এ কথা সত্য। কিন্তু সেটা আমার পরকীয়া নয়, ওর নিজের পরকীয়া। ঘরে স্বামী থাকতে এবং দুটো ফুটফুটে চাঁদের মতো দুটি সন্তান থাকতে ১৪ বছর বিবাহিত জীবনের পর যদি কোনো স্ত্রী অন্য পুরুষকে প্রেমপত্র লেখে, তাহলে তার সঙ্গে কি বাস করা যায়?! একটি চিঠি প্রমাণ হিসেবে আমি রেখে দিয়েছি। ভেবেছিলাম, বড় হয়ে ছেলে যদি কৈফিয়ত চায় (মেয়ে চাইবে না, কারণ সে নিজেই তার স্বাক্ষী ছিল) তবে, তাকে ওই চিঠি দেখাবো। কিন্তু ছেলে আমার চলে গেছে। তাকে আর তা দেখাতে হবে না। .....জয়শ্রী প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে লিখেছে: '১৪ জুলাই ২০০৮ সালে' নাকি আমি মাহবুবাকে বিয়ে করেছি। এটা ঢাহা মিথ্যা কথা। তখন পর্যন্ত মাহবুবা আমাকে প্রপোজই করেনি। আমাদের বিয়ে হয়েছে ৭ নভেম্বর ২০০৮-এ। সে লিখেছে: আমার মেয়ে ছেঁড়া কাপড় পরেই 'ও' লেভেল পরীক্ষায় চারটি স্টারসহ আট/আটটি 'এ' পেয়েছে। এখানে ওই 'ছেঁড়া কাপড়' শব্দটা প্রতিকী অর্থেও সত্য নয়। ওর 'ও' লেভেলের ফাইনাল পরীক্ষার ফি হিসেবে আমাকে দিতে হয়েছে ৫৬,০০০ টাকা। যে ৫৬ হাজার টাকা দিতে পারে, সে তার মেয়েকে কাপড় কিনে দিতে পারে না, এটা কোন পাগলে বিশ্বাস করবে?!....এবার আমার অনুভূতির কথা বলছি। বেইজিংয় সময় রাত ২টায় যখন আমি বাচ্চাদুটোর মৃত্যুর কথা শুনলাম তখন প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি সারারাত ছটফট করেছি আর মনে মনে আশা করেছি একটি এসমএমএস আসবে মনমনের কাছ থেকে: আব্বু, আম্মুকে ভয় দেখিয়েছি। ...পরের দিন বেরা এগারোটা পর্যন্ত আমি কোনো ফোন ধরতে পারিনি, ভয়ে। শুধু দেখেছি কোনো এসএমএস আসে কিনা। আসেনি। বেলা এগারোটায় আমার অফিস কলগিরা সবাই যখন দল বেধে এলো, তখন বুঝলাম সব শেষ। পরবর্তী দু'টি দিন আমার কিভাবে কেটেছে আমি বলতে পারবো না। আমি এমনটি আমার বাবার ফোনও ধরিনি। (পরে শুনেছি, এটা নিয়েও প্রথম আলোতে রিপোট হয়েছে! হায়রে, সাংবাদিকতা!!) আমার বার বার মনে হচ্ছিল, আমি আমার বাচ্চা দুটোকে বাঁচাতে পারিনি...চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি। সারাক্ষণ ভেবেছি, কোথায় কোথায় ভুল করেছি আমি....এখনো ভাবি, কোথায় ভুলটা হলো....সবচে বড় কথা, দু'দিন আগেও মুহাম্মাদের বই কেনার জন্য আমার ভাতিজা আবদুল্লাহ ওদেরকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছে (আবদুল্লাহর হাতেই আমি ওদের প্রতি মাসে টাকা পাঠাতাম বা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে টাকা লাগলে পাঠাতাম)। তখনও কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না ওদের মধ্যে। কয়েকদিন আগে মুহাম্মাদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তাকে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে জিঙ্গেস কলেই বললো, আম্মু জানে। আমার ছেলেটা কম কথা বলতো।......দিদি, আমার এ কথা গুলো আপনারা কেউ বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এগুলো সত্য। আরো অনেক অনেক কথা আছে। কিন্তু এখানে বলার প্রয়োজন মনে করি না। আমি হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বীকার করছি। কিন্তু সেসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষ্রেত্রেও বাচ্চাদের কথা আমি সবার আগে ভেবেছি। কিন্তু সে সব সিদ্ধান্ত সবক্ষেত্রে ক্লিক করেনি। কারণ, এখানে অনেক ফ্যাক্টারস জড়িত। চীনে আসার ব্যাপারে পত্রিকাগুলো অনেক মিথ্যাচার করেছে। আমি নতুন বৌ নিয়ে মোটেই এখানে মজা করছি না। আমাকে এখানে প্রচণ্ড খাটাখাটনি করতে হয়। চীন বেতারের বাংলা বিভাগের পরিচালক ম্যাডাম ইয়ুকে আপনি জিঙ্গেস করে দেখুন। আমাদের এখানে কাজ বেড়েছে, কিন্তু বেতন বাড়েনি। এখানে বাঙলাদেশের তুলনায় খানিকটা বেতন বেশি। তাই বাচ্চাগুলো বেশি টাকা পাঠাতে পারছিলাম। চীনে না এলে গত মে মাসে মেয়ের এ লেভেলের ফাইনাল এক্সামের ফি বাবদ ৭৫ হাজার টাকা আমি হয়তো দিতে পারতাম না। চীনে এসেছি দু'বছরের ওপর। একমাত্র মহাপ্রাচীর আর ফরবিডেন সিটি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ বা সময় আমি পাইনি। আমার মেয়ে একটা এসএমএস পাঠিয়ে বলতো: কল মি নাও। এমন হয়নি যে আমি সাথে সাথে ফোন করিনি। সেটা রাত দুটো তিনটে হলেও।...আমি মহামানুষ নই। কিন্তু এতোটা খারাপ্ও নই, যতটা পত্র-পত্রিকাগুলো গত কয়েকদিন ধরে লিখেছে। আপনাদের কী মনে হয়: আমি আমার বাকি জীবন এক মুহূর্তের জন্যও বাচ্চা দুটোকে ভুলে থাকতে পারবো? আরেকটি কথা: আপনি আপনার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমার বাচ্চা দুটো আত্মহত্যা করেছে। কী করে নিশ্চিত হলেন? এখনো, যতদূর জানি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসেনি। ব্যাপারটাতো হত্যাকাণ্ডও হতে পারে! প্রথম আলোর রিপোর্টে নাকি এ ধরনের সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। আমি কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। আপনারা যারা এতক্ষণ আমার কথাগুলো পড়েছেন, তারা সবাই বিশ্বাস করবেন এমনটা আমি মনে করি না। কিন্তু আমি জানি, এই নিস্পাপ বাচ্চা দুটোর জন্য আপনাদের মনে ভালোবাসা আর মমতা আছে। আপনারা ওদের জন্য দোয়া করবেন। মেয়েটা আমার ইউরোপীয় মেয়েদের মতো সুন্দর হতে চাইত। বলতো, আব্বু, বেহেশতে গেলে কি আমি ওদের মতো সুন্দর হতে পারবো? আমি বলতাম: তারচে কোটিগুণ বেশি সুন্দর হয়েই তুমি বেহেশতে যাবে। আল্লাহ যেন তার মনে আশা পুরণ করেন। পুনশ্চঃ আমি দিদি প্রশ্নের উত্তরে এতো কথা লিখলাম ব্যক্তি আলিমুল হক হিসেবে নয়, পিতা আলিমুল হক হিসেবে। কোনো শিশু যেন মনে না করে যে, পিতা আলিমুল হক জঘন্য। এটা ভেবে যদি একটি শিশুর মনেও তার নিজের পিতার সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মায়, তাহলে সেটা হবে আমার কাছে খুবই কষ্টের একটা বিষয়।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা-মহিউদ্দিন আহমেদ:


সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪
Dr. Mohiuddin Ahmedবাংলাদেশ সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রতি বছর সংবাদপত্র ও সাময়িকীর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা। এই প্রতিবেদনটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব দৈনিক, সাপ্তাহিক অর্ধ-সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক এবং ত্রৈমাসিক পত্রপত্রিকা বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়, তার তালিকা থাকে। পত্রিকার আরও কিছু বর্ণনার মধ্যে থাকে, পত্রিকার নাম, কী ভাষায় প্রকাশিত হয়, প্রথম প্রকাশের তারিখ, সম্পাদকের নাম, প্রকাশকের নাম ঠিকানা, কোথায় মুদ্রিত হয়, সেই ছাপাখানার নাম ও ঠিকানা, পত্রিকার আকার– ‘ব্রডশিট’ নাকি ‘ট্যাবলয়েড’ এবং প্রতি কপির মূল্য।
এই বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রতি বছর প্রকাশ করা সম্ভব হয় না, এই প্রকাশনার কাজটি সহজও নয়। তারপরও আমি ২০০৮, ২০১০ ও ২০১১ সালের প্রতিবেদন তিনটি জোগাড় করতে সফল হয়েছি। ২০১১ সালের সর্ব সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটির শুরুতে, ৬ নম্বর পৃষ্ঠায় দেখা যায়, ১৯৭২ এ সারা দেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৩০, সব ধরনের পত্রিকা এবং সাময়িকীর সংখ্যা ৩০০। আর ২০১১ সালে সারা দেশে দৈনিক পত্রিকার এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১৮এ; আর সব ধরনের সাময়িকীর সংখ্যা হচ্ছে ৯৪৩।
২০১১ সালের ১১৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটিতে জেলাওয়ারি পত্রপত্রিকার বর্ণনাও আছে। আছে আগের বছরগুলোর বর্ণনাও। তবে আমার আজকের আলোচনার জন্য শুধু ঢাকা জেলার দৈনিক পত্রিকার সংখ্যাটিই বেশি প্রাসঙ্গিক। ঢাকা জেলা, মানে ঢাকা মহানগর থেকেই, দেখতে পাচ্ছি প্রায় সবগুলো দৈনিক প্রকাশিত হচ্ছে। এই সংখ্যাটি হচ্ছে ২৩০। আর একটি সূত্র থেকে জেনেছি এই সংখ্যাটি এখন ৩০০ এরও উপর। তবে আমি ২৩০ সংখ্যাটি নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
এই তালিকার এক নম্বরে আছে কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার। এই পত্রিকাটির পরে নাম আছে দৈনিক ‘সংবাদ’, ২ নম্বরে এবং তারপর ইত্তেফাক। দৈনিক ‘সংবাদ’ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো আছে প্রতিবেদনটির ১২ পৃষ্ঠায়: পত্রিকাটির ভাষা: বাংলা; প্রথম প্রকাশের তারিখ ১৯৫১ এর ১৭ মে। সম্পাদকের নাম আলতামাস কবির; প্রকাশক, আলতামাস কবির, ৮৭, বিজয়নগর, ঢাকা; মুদ্রণ: দি সংবাদ লিমিটেড, ৩৬ পুরানা পল্টন, ঢাকা; আকার ৫৬/৩৫ এবং দাম প্রতিকপি ৮ টাকা।
২৩০টি দৈনিক পত্রিকার এই তালিকার ১৭ নম্বরে আছে ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’, ২৭ নম্বরে দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’, ৬৭এ ট্যাবলয়েড দৈনিক ‘মানবজমিন’, ৬৯এ দৈনিক প্রথম আলো, ৭৪এ যুগান্তর এবং সবশেষে, ২৩০ নম্বরে আছে ‘পূর্ব আলো’ নামের একটি পত্রিকা। এই পত্রিকাটির সম্পাদকের নামের কলামে লেখা আছে ‘‘বেস্টওয়ে মিডিয়া এন্ড কম্যুনিকেশন লি: পক্ষে: মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বসতি কন্ডোমিনিয়াম, লেভেল নং: ৭, বাড়ি নং: ১৫, সড়ক নং ১৭, বনানী-বা/এ, ঢাকা– ১২১৩’’।
পত্রিকার কত রকমের অদ্ভূত ও উদ্ভট নাম হতে পারে, তা এই প্রতিবেদনেও দেখা যায়। এমন একটি পত্রিকার নাম ‘ক খ গ’; তালিকার ১৫৭ নম্বরে। পত্রিকাটির বর্ণনায় ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনটির ২৭ পৃষ্ঠায় এই কথাগুলো আছে: ভাষা: বাংলা; প্রথম প্রকাশ ০৯-০১-২০০৮; সম্পাদক শওকত মাহমুদ, ফোন: ০১৭১৫-১৬৭০৯২; প্রকাশক শওকত মাহমুদ, ৭০ পাইওনিয়ার রোড, নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০। মুদ্রণ: টিউলিপ প্রিন্টার্স, ৩৪, সোনারগাঁও রোড, হাতিরপুল, ঢাকা। পত্রিকার আকার ৫৬/৪০, দাম প্রতি কপি ৪.০০ টাকা।
বাংলাদেশের বিএনপি জামায়াতপন্থী, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিকদের নেতা শওকত মাহমুদ ঠিক কোন্ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন, আমার জানার আগ্রহ অনেকদিনের। কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না। এখন এই প্রতিবেদনে দেখলাম।
২.
বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরন ঘটছে, আর বিস্ফোরন ঘটছে আমাদের পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর প্রকাশনায়ও। এই বিস্ফোরনটা প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরে। এক ঢাকা শহরে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত আছে ২৩০টি ইংরেজি ও বাংলা দৈনিক!! ঢাকা শহরের বিপরীতে দুনিয়ার আর কোনো দেশের আর কোনো শহরে কি এতগুলো দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়? আমার জানামতে লন্ডনের মত এত বড় বিখ্যাত ও বড় শহরে ‘ব্রডশীট’ ও ‘ট্যাবলয়েড’ মিলিয়ে আছে গোটা ১৫ দৈনিক; নিউইয়র্কে আছে মাত্র দুটো দুনিয়াজোড়া বিখ্যাত দৈনিক– ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এবং ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’। ওয়াশিংটনে আছে মাত্র একটি, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। ওয়াশিংটন শহরে ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ নামের আর একটি দৈনিক আছে; কিন্তু এই দৈনিক ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ অন্য দৈনিক ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এর ধারে কাছেও নেই নামে এবং প্রভাবে।
তো ঢাকা শহরে এতগুলো দৈনিক কেন আছে, কেন প্রকাশিত হয়, তার ব্যাখ্যা আমাদের পত্রিকা মালিকদের সমিতি– ‘নিউজ পেপার্স্ অওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’, নোয়াব, বা সম্পাদকের সংগঠন ‘সম্পাদক পরিষদ’ কখনও স্পষ্টভাবে দেয় না। এমন ব্যাখ্যা দিলে যে তাদের অনেক গোমর, পত্রিকা জগতের অনেক অ-জানা কথা, কেলেংকারি এবং দুর্নীতি, অনিয়ম বেনিয়মও বেরিয়ে আসবে।
আমাদের মিডিয়া জগতের মানুষজন অন্যের কেলেংকারি সন্ত্রাস দুর্নীতি, প্রকাশ করতে যেমন ফুলটাইম, ওভারটাইম আগ্রহী, তার হাজার ভাগের এক ভাগও নয় নিজেদের অন্যায় অবৈধ কাজকর্ম তুলে ধরতে।
আমাদের দেশের সম্পাদক সাংবাদিকরা কঠোরভাবে একটি নীতি মেনে চলার চেষ্টা করেন: কাকের মাংস কাকে খায় না। বাংলাদেশে সম্পাদক সাংবাদিকরা নিজেদের কাকের সঙ্গে প্রায়ই তুলনা করতে ভালোবাসেন এবং যেহেতু কাক কাকের মাংস খায় না, তারাও একে অন্যের মাংস খাবেন না। মানে, একে অন্যের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ঘুষ এবং অন্যায় ও অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ– তার কোনো খবর তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করবেন না, করা যাবে না।
বাংলাদেশের এই সব সম্পাদক-সাংবাদিক যারা এই নীতিতে বিশ্বাস করেন তারা লক্ষ্য করেননি যে কাক কোনো প্রিয় প্রাণি, পাখি নয়, তার আওয়াজটা কর্কশ, কাককুল কোনো বাড়ির আশে পাশে ডাকতে থাকলে, মানুষজন দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তবে কাকের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রচণ্ড মিল দেখতে পাই– কাক যেমন কর্কশ আমাদের কিছু কিছু সাংবাদিকও কর্কশ চরিত্রের, কথায় কথায় হুমকি ধামকি দিয়ে থাকেন। তারা যে পত্রিকার মালিকের বেতনভূক্ত সাংবাদিক তা তাদের কথাবার্তায় চাপা পড়ে যায় তাদের দাম্ভিক আচরণে। তারা প্রায়ই হুমকি দেন অমুকের খবর কাভার করব না, অমকুকে বর্জন করব, অমুককে সাংবাদিকদের কাছে মাফ চাইতে হবে, ইত্যাদি। কিন্তু পত্রপত্রিকার কাজ তো সংবাদ ‘কভার’ করা, সেজন্য সাংবাদিককে তো বেতন ভাতা দেওয়া হয়। সংবাদ জোগাড় না করতে পারলে, তা তো সংশ্লিষ্ট সংবাদিক বা সাংবাদিকদের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা। তাহলে তাকে কেন পত্রিকার মালিক বেতন ভাতা দেবেন?
এই প্রসঙ্গে আমার খুবই মনে পড়ছে সাত আট বছর আগে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের এক নেতা, ফটোসাংবাদিক হিসেবে বেশি পরিচিত মরহুম হাজী জহির পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং ফটোসাংবাদিকরা প্রতিবাদে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ সংস্থায় কর্মরত গোধূলী নামের আর এক ফটোসাংবাদিক এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তার দায়িত্ব ঠিকই নিয়মিতভাবে পালন করতে থাকলেন। বিষয়টা হল, গোধুলী যদি ‘স্ট্রাইক’ করতে থাকেন, তাকে হয়ত চাকুরীচ্যুত হতে হত। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বলে তার বেতনভাতাও নিশ্চয়ই বেশি ছিল। সুতরাং গোধূলী কিছুতেই তার চাকুরী হারাতে চাইলেন না। তার উপর উন্নত দেশগুলোতে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোতে প্রতিবাদে ধর্মঘটে যাওয়া বা কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া তারা চিন্তাও করতে পাওে না।
৩.
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক থেকে একটি বই জোগাড় করেছি। বইটির নাম FLAT EARTH NEWS; লিখেছেন নিক ডেভিস (Nick Davies) নামের এক সাংবাদিক। চাট্টো এন্ড উইন্ডাস (Chatto & Windus) প্রকাশিত ৪০৮ পৃষ্ঠার এই বইতে এককালের লন্ডন ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সাংবাদিক এই নিক ডেভিস তার এই পত্রিকাটিকেও বিভিন্ন ব্যর্থতা অনিয়ম বেনিয়েম এবং ধান্দাবাজীর জন্য কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত ইংরাজি সাপ্তাহিক ‘দি সানডে টাইমস’এর উপর তার এই বইটিতে প্রায় ৪৫ পৃষ্ঠায় যে ‘অধ্যায়টি’ আছে তার শিরোনাম ‘ইনসাইট ইনটু দি সানডে টাইমস’ (Insight into the Sunday Times)। (এই পত্রিকাটিতেই ১৯৭১ এর ১৩ জুন এন্থনী ম্যাসকারেনহাসের সেই সাড়াজাগানো প্রায় ১০ হাজার শব্দের রিপোর্টটি পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠাসহ ভিতরের আরও কয়েকটি পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর। তার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই দীর্ঘ বিবরণ সারা দুনিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পরে এই বিবরণ The Rape of Bangladesh নামের বইতে আরও বিস্তারিত বর্ণনাসহ প্রকাশিত হয়েছিল।)
নিক ডেভিসের এই হার্ডকভার বইটির মলাট উল্টালেই ফ্ল্যাপে ফ্ল্যাপে ঘনকালো বড় হরফে এই কথাগুলো আছে: Finally I was forced to admit that I work in a corrupted profession.
পশ্চিমা দেশের এক সাংবাদিক, এই নিক ডেভিস বলছেন তিনি সাংবাদিকতার যে পেশায় আছেন সেটি দুর্নীতিগ্রস্ত। তো এইসব উন্নত দেশে গণমাধ্যমের দুর্নীতি নিয়ে এটি প্রথম বা শেষ বই নয়। এমন প্রকাশনা, এমন আত্মস্বীকৃতি হাজার হাজার আছে। কিন্তু বাংলাদেশে ‘কাকের মাংস কাক খায় না’ এমন এক উদ্ভট যুক্তিতে আমাদের সম্পাদক সাংবাদিকরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অন্ধকার জগতকে আর কতদিন আড়াল করে রাখবেন?
৪.
২০১১ এর প্রতিবেদনের হিসাব মতে বাংলাদেশে এখন ৭১২টি পত্রপত্রিকা এবং সাময়িকী প্রকাশিত হচ্ছে। ১৬ কোটি জনসংখ্যার জন্য এই সংখ্যাটি হয়ত মোটেও বেশি মনে হবে না। কিন্তু দেশের শিক্ষার হার এবং আর্থিক সঙ্গতি, কয়জন মানুষ প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়ে একটি পত্রিকা কিনতে পারে, এই প্রশ্নগুলো বিবেচনায় নিলে পত্রপত্রিকার এই সংখ্যাটি অবশ্যই বিশাল। আমাদের কোন কোন জেলা শহরেও এখন দৈনিক পত্রিকার বিস্ফোরণ ঘটছে। এগুলোতে কি সৎ সাংবাদিকতার চর্চা হচ্ছে? এই পত্রিকাগুলোর সাংবাদিক-সম্পাদক কর্মচারীরা কি নিয়োগপত্র, নিয়মিত বেতন-ভাতা, সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন? তাহলে কেন এতগুলো পত্রপত্রিকা?
কবি আবু হাসান শাহরিয়ার বাংলাদেশে পত্রপাত্রিকার এমন বিস্ফোরনের একটা কারণ দিয়েছেন। আবু হাসান শাহরিয়ার তার ‘অর্ধসত্য’ (প্রকাশক: সাহিত্য বিকাশ) বইটিতে ‘‘কৃপণের মুঠিধরা হিসেবের গোপন চালাকি’’ শিরোনামের একটি লেখায়, বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোর কোন কোনটির চরিত্র এবং অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে এই কথাগুলো লিখেছেন: ‘‘সম্পদ পাহারায় বড়লোকরা আগে কুকুর পুষত, এখন পোষে দৈনিক। একুশ শতকের দৈনিক হচ্ছে বড় লোকের বাড়ীর পোষা কুকুর।’’
ভূমিদস্যুরা যেভাবে তাদের মালিকানার পত্রিকাগুলোর অপব্যবহার করে চলেছে, আবু হাসান শাহরিয়ারের একটু আগের উদ্ধৃতির কথাগুলোতে তার যথার্থ প্রমাণ এবং সত্যতা পাওয়া যায়। ভূমিদস্যুরা যেমন একপক্ষকে হামলা করে, আবার প্রতিপক্ষও তার পত্রিকাকে হামলা মোকাবেলায় ব্যবহার করে এমন অপব্যবহারে এই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমটির প্রতি মানুষজনের আস্থা-বিশ্বাসই যে সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এদিকে ‘নোয়াব’ বা ‘সম্পাদক পরিষদ’ বা সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোরও কোনো দায়-দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না।
আমাদের পত্রিকাগুলো ছাড়া গত পনের বিশ বছরে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অগ্রযাত্রাও লক্ষ্যণীয়। ইতোমধ্যে ২৭টির মতো প্রাইভেট চ্যানেল প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার সম্প্রচারে আছে। আছে পনের বিশটির মত এফএম রেডিও চ্যানেল। আছে অনলাইন নিউজ চ্যানেলও অনেকগুলো। এগুলোর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে।
এই যে এত বিশাল একটি গণমাধ্যম বাংলাদেশের মানুষজনকে দিন দুনিয়া সম্পর্কে অবহিত রাখার সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এই চেষ্টাগুলো কতটুকু সফল, কোথায় কোথায় তাদের ব্যর্থতা, কোথায় মালিক-সম্পাদকদের ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য ধরনের ধান্দাবাজি তার মনিটরিং এর জন্য নিয়মিত কোনো ব্যবস্থা আমাদের কোনো পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে নেই। বিবিসি বাংলায় প্রতি সপ্তাহে, সাধারণত মঙ্গলবার ভোর ৬-৩০এর ‘প্রভাতী’তে, ‘প্রীতিভাজনেষু’ নামের প্রায় পনের মিনিটের একটি অনুষ্ঠানে বিবিসি বাংলায় প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর উপর শ্রোতাদের মন্তব্য, পরামর্শ, উপদেশ এবং সমালোচনাও প্রচারিত হয়। এসব মন্তব্য সমালোচনার জবাবও দেওয়া হয় বিবিস বাংলার পক্ষ থেকে। কোনো কোনো সমালোচনা গ্রহণ করা হয়, শ্রোতাদের ধন্যবাদ দেওয়া হয় ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
‘আলজাজিরা’ টিভি চ্যানেলে প্রতি শনিবার দুপুর ২-৩০ এ, রোববার রাত ৮-৩০ এ এবং সোমবার ১০-৩০-এ লিসেনিং পোস্ট (Listening Post) নামের আধঘন্টার একটি অনুষ্ঠান আমার খুব প্রিয়। এই অনুষ্ঠানে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে কোনো বিশেষ ইস্যুকে কেমন ‘কভারেজ’ দেওয়া হয়েছে, ‘কভারেজ’ পক্ষপাতিমূলক না নিরপেক্ষ তার উপর আলোচনা হয়। গাজায় ইসরায়েল প্রায় দুই মাস যেমন হামলা চালিয়েছে তাতে পশ্চিমা গণমাধ্যম যে নিরপেক্ষ ছিল না তা এই অনুষ্ঠানে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। গত সপ্তাহে দেখলাম পাকিস্তানে ইমরান খান এবং তাহেরুল কাদরীর বিক্ষোভকে ‘জিও নিউজ’ আর ‘এ আর ওয়াই’ চ্যানেল দুটির পারস্পরিক বিরোধী অবস্থান নিয়ে আলোচনা। জিও নিউজ সমর্থন দিয়েছে নেওয়াজ শরীফের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে; আর এ আর ওয়াই সমর্থন দিয়েছে ইমরান খান এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণকে। এই বিষয়টির উপর চমৎকার বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় কথাবার্তা ছিল।
আমাদের দেশে এমন অনুষ্ঠান জরুরি হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে গুরুত্ব চাইবে, ক্ষমতা প্রয়োগ করবে; কিন্তু কারও কাছে দায়বদ্ধ থাকবে না তা তো হতে পারে না। আমাদের গণমাধ্যমে কতটুকু সাংবাদিকতা থাকছে আর কতটুকু মালিকের বিভিন্ন কিসিমের স্বার্থের পক্ষে প্রতিপক্ষকে হামলা হুমকি চলছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি মালিকের স্বাধীনতা এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা এখন ফরজ। আগামী দিনগুলোতে এই কলামে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
আমাদের অকার্যকর জাতীয় সংসদের বিপরীতে আমাদের গণমাধ্যম জনমানুষের পক্ষে বিশেষ করে যারা অবহেলিত নির্যাতিত, যারা এই দেশের সংখ্যালঘু, প্রবল ভূমিকা রাখছে। আমার এই কলামে তাদের নন্দিত ভূমিকার কথাও উদাহরণসহ অবশ্যই থাকবে।
মহিউদ্দিন আহমেদ:
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব, কলাম লেখক।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতকে দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এমপি আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে  অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় অভিযোগটি যে গুরুতর, তা প্রমাণ করে। বিষয়টি বন্ধু-প্রতিম ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। তেমন গুরুতর না হলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মাথাব্যথা হওয়ার কথা নয়।

আহমেদ হাসান ইমরান ২০০১ সালে ভারতে নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ছিলেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, সিমি বহুগুণে শক্তিশালী হয়ে ভারত-বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। সিমির প্রাক্তন অনেক নেতা এখন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিতে যুক্ত।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও ইমরানের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে একই ধরনের রিপোর্ট করেছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নলিয়াখালিতে জঙ্গি-গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনায় ইমরানের সক্রিয় সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়। রিপোর্টটি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়ার পরেও কেন মনোনয়ন দিয়ে ইমরানকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হল, সেই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র মমতাই দিতে পারবেন।

ahmed_hasan_imranইমরানের সাথে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত গোলাম আজমের ছেলে মামুন আল আজমের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ইমরান ভারতের জামায়াতে ইসলাম-ই হিন্দ-এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন বেশ কয়েক বছর। আল আজম আইডিবি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর থাকা অবস্থায় ভারতের পূর্বাঞ্চলে ব্যাংকটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ইমরান। সেই থেকে ইমরান আর আল আজমের সম্পর্ক।

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ায় কলকাতার ধর্মতলায় কিছু ইসলামিক সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল করেছিল। পরে জানা যায়, বাংলাদেশের জামায়াত ও সিমির মদদেই মিছিলগুলি হয়। আহমেদ হাসান ইমরান এই মিছিলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কেন্ত্রীয় সরকারকে তা নিশ্চিত করে।

তৃণমূলের আরেক এমপি অভিনেত্রী মুনমুন সেন ও পাকিস্তানের তেহরিক-ই ইনসাফ নেতা ইমরান খানের মধ্যে এখনো নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার সংস্থার দাবি। পাকিস্তানের আইএসআই’র সাথে মুনমুন সেন সরাসরি জড়িত, সেই সন্দেহও রয়েছে কিছু কিছু মহলের। গোয়েন্দারা বলছেন, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।

ধর্মীয় উগ্রবাদী-অধ্যুষিত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়াতে ইমরানের তেহরিক-ই ইনসাফের ক্ষমতায় শরিক পাকিস্তানি জামায়াত। প্রদেশটি উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অতি সম্প্রীতি নওয়াজ শরীফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আইএসআই’র প্রেসক্রিপশনে আজাদি মার্চ করে ইমরানের পিটিআই। আন্দোলনটি যে আইএসআইয়ের নির্দেশনায় হয়েছে, তা ইমরানের উদ্যোগে অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান জাভেদ হাশ্মিরই গণমাধ্যমকে বলেছেন।

যে প্রশ্নটি সবার সামনে চলে আসে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসব জানতেন কি না?’। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের উগ্র-গোষ্ঠীর মধ্যকার নিবিড় যোগাযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতার গোচরেই হয়েছে বলে মনে হয়। যদিও তাঁর দল অস্বীকার করছে। বলছে, এটি বিজেপির রাজনীতি।

কিন্তু তাদের দাবি তেমন গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। সারদার মাধ্যমে জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নেওয়া দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা তাই প্রমাণ করে।

imranপ্রথমতঃ পাকিস্তানি হাইকমিশনারের কলকাতা সফর ও মমতার সাথে সাক্ষাতের পেছনে মুনমুন সেন ও ইমরান খানের  আগ্রহ এবং ঘনিষ্ঠতা ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাজ করেছে। চির বৈরি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সাথে একজন মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হতেই পারে। কিন্তু সেই সাক্ষাৎটি যখন আইএসআইপন্থি পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আগ্রহে অনুষ্ঠিত হয়, তখন এর পেছনের উদ্দেশ্য বেশ পরিষ্কার হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, সাক্ষাতের পরপরই কলকাতার একটি সাংবাদিক দলকে পাকিস্তান সফরের ব্যবস্থা করা হয়। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে তেমন প্যারা-ডিপ্লোমেসি স্থান পায় না। কেন্দ্রকে আড়ালে রেখে পাকিস্তানের সাথে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্যারা-ডিপ্লোমেসি চালিয়ে যাওয়ার সাথে অন্যান্য পাকিস্তানপ্রেমি কর্মকাণ্ডগুলি মিলে যায়। খোদ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণই বিশ্বাস করে যে, মমতা সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপে এই অঞ্চলের উগ্রপন্থিদের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিন হচ্ছে।

তৃতীয়ত:  কলকাতায় পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে রাজ্যের মুসলিমদের জন্য পাকিস্তানে যাওয়ার ভিসা প্রসেস সহজ করার অনুরোধের অভিযোগও রয়েছে মমতার বিরুদ্ধে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও মুসলিম বাস করেন। সেই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা পাকিস্তানি ভিসা সহজ করার অনুরোধ করেন নি। আজ যদি মমতা সারা ভারতের মুসলিমদের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার কথা বলতেন, কারো তেমন কিছু বলার থাকত না।

চতুর্থতঃ উর্দুভাষী মানুষের আনাগোনা কলকাতায় উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, যা সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, মমতার উগ্র রাজনীতি প্রীতির জন্যই রাজ্যের ভেতর অন্য দেশের মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে।

পশ্চিমবঙ্গ আমাদের প্রতিবেশী হওয়ায় মমতার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরাও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তে গরু চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায় সারদা কেলেঙ্কারির টাকার একটি বিরাট অংশ বিনিয়োগ হয়েছে। বিনিয়োগের লভ্যাংশ দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ব্যয় হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা। 

গোয়েন্দা তথ্যে আরও জানা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসও নির্বাচনে জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিল। গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত বলা যায়। সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ অর্থের আদান প্রদান বিষয়ে মুখ খুলতে চাইলেও মমতা সরকারের নির্দেশে গঠিত কল্যাণ কমিশন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। কল্যাণ নিজে থেকেই কমিশনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।

বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশের জামায়াতের নেতা-কর্মীরা তৃণমূল পক্ষে কাজ করেছিল। বিশেষ করে মালদা, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর (৬০-৮০%), মুর্শিদাবাদ জেলাতে (৯০%)সহ বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় জামায়াতের কর্মীরা তৃনমূলের পক্ষে গণসংযোগ করেন।

ভারতের জাতীয়, আঞ্চলিকও স্থানীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটির ইলেকটোরাল বিহেভিয়ার পর্যালোচনা করলে মমতার বিতর্কিত রাজনৈতিক পদ্দক্ষেপগুলোর কারণ বোঝা যায়।

ঐতিহাসিকভাবে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (বাংলাদেশের মত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয় না) প্রবল। বিশেষ করে সিপিএম ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা প্রায়ই হত এবং সংখ্যালঘু মুসলমানরা নিরাপত্তাহীনতায় দিনানিপাত করত। সিপিএম ক্ষমতায় আসার পর তেমন দাঙ্গা হয়নি এবং ফলে সংখ্যালঘু ২৭ শতাংশ ভোট সিপিএমের কোষাগারে যায়। সিপিএম মুসলমানদের মধ্যে ভূমি বিতরণ করেও মুসলমান সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করেছিল। একই সাদৃশ্য দেখা যায় বিহারে। ১৯৯০ সালে লালু প্রসাদ যাদব ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি ব্যবহার করে লালু ক্ষমতায় থাকেন। একই পদ্ধতিতে উত্তর প্রদেশে মুলায়েম সিং যাদব ক্ষমতায় আসেন।

এখন নিরাপত্তা সংখ্যালঘু মুসলমানের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। তাদের সচেতনতা বেড়েছে। তারা শিক্ষা, চাকরি ও দারিদ্র অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে এসেছে।

সেসব ইস্যুকে গুরত্ব না দেওয়ার জন্য লালু প্রসাদ যাদবের ক্ষমতা চলে যায় নিতিশের হাতে। ঠিক একই কারণে মুলায়েম সিং ইউপিতে মায়াবতীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। 

পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলমানরাও আগের মত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নন। সিপিএমের জমানায় সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে থাকার কারণেই বামফ্রন্টের মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। যেখানে সারা ভারতে স্বাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ২৭ শতাংশ ভোটের মালিক সংখ্যালঘু মুসলমানদের হার ৫৭.৫। এমনকি বাম শাসিত কেরালায় সংখ্যালঘুদের স্বাক্ষরতার হার ৮৯.৪ শতাংশ। একটি গবেষণায় দেখা যায়, কেরালায় মুসলমানদের দারিদ্র ১৫ বছরে (১৯৮৭-২০০৪) ৫৬ থেকে ৩১ এ নেমে এলেও পশ্চিমবঙ্গে নেমেছে ৫৩ থেকে ৪৪ শতাংশে।

Mamataমুসলমানদের প্রতি অবহেলার কারণেই সিপিএম ২০১১ সালে ক্ষমতা হারায়। মমতা ২৯৪ তে ২২৫ আসন পেয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় যান। রাজ্যসভার মত লোকসভার নির্বাচনেও সিপিএমের শোচনীয় পরাজয় হয়। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি আসনের মধ্যে ২০টিতে জয় নির্ধারণই ভোটের মালিক সংখ্যালঘুরা। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৩৪ আসন পায়, যেখানে ২০০৯ সালে ১৯ এবং ২০০৪ সালে একমাত্র নিজের আসনটিতে জিতে আসেন মমতা।

পাশাপাশি মমতার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিগত আচার আচরণ নির্মোহ-ভাবে বিশ্লেষণ করলে অসহনশীলতা, নীতিহীনতা, রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা মমতার রাজনৈতিক বিকাশ ধারায় প্রবলভাবেই পাওয়া যায়।

জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করলেও, কংগ্রেসের রাজনীতি দিয়েই মমতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু। মমতা ১৯৮৪ সালে বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে সাড়া ফেলে দেন। এরপর সারা ভারতের যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে লোকসভায় আবার নির্বাচিত হয়ে নরসিমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় মানব সম্পদ ও ক্রীড়ামন্ত্রী হিসাবে স্থান পান মমতা।কিন্তু পরে কলকাতায় ক্রীড়া উন্নয়নের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ এনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। ১৯৯৬ সালের দিকে নিজ দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএমকে সহযোগিতার অভিযোগ আনেন এবং পরিচ্ছন্ন কংগ্রেসের দাবি জানিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় শাল পেঁচিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন।

১৯৯৬ সালে পেট্রোলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মমতা সমাজবাদী পার্টির নেতা অমর সিংহের জামার কলার ধরে টানা-হেঁচড়া করেন মমতা। রেলের প্রতি অবহেলার অভিযোগে ১৯৯৭ সালে সংসদে তৎকালীন রেল-মন্ত্রী রাম বিলাসের দিকে নিজের শাল ছুঁড়ে মারেন। ১৯৯৮ সালে লোকসভায় নারী সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে সমাজবাদী পার্টির এমপি দারোগা প্রসাদ সরোজকে জামার কলার ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করে। তৃণমূল কংগ্রেস খুব অল্প সময়ে বামফ্রন্টের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে প্রকাশ পায়।

তৃণমূল ১৯৯৯ সালে বিজেপির নেতৃত্বের সরকারে সামিল হলে রেলের দায়িত্ব পান মমতা। কিন্তু রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে সরকার থেকে বের হয়ে যায় তৃণমূল।

২০০১ সালের শেষের দিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা কংগ্রেসের সাথে নির্বাচনী জোট করেন। তারপরেও নির্বাচনে বামফ্রন্ট জয় লাভ করে। ২০০৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনেও বড়োসড়ো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে মমতার তৃণমূল।

মমতা ২০০৪ সালে আবার ফিরে যান বিজেপির কোয়ালিশন সরকারে। তখন কয়লা এবং খনির দায়িত্বে ছিলেন। এটিই হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সাথে মমতার শেষ কোয়ালিশন। কারণ বর্তমান ভোটের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিজেপির সাথে জোট করা আর মমতার পক্ষে সম্ভব নয়।

২০০৬ সালে সিপিএম সরকারের শিল্পনীতির বিরোধিতা এবং ২০০৭ সালের নন্দী গ্রামের গণহত্যার প্রতিবাদের ফলে মমতার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের একটি বৃহৎ অংশ বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। বামফ্রন্টের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

২০০৯ সালে লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে ১৯টি জয় করে তৃণমূল। নিজেদের উত্থানের ঘণ্টা বাজায়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকারে আবারও রেলের দায়িত্ব পান মমতা। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৫ বছরে ক্ষমতায় থাকা সিপিএমকে হারিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে। অভিযোগ রয়েছে, সারদা ১৩০ কোটি টাকা তৃণমূলের নির্বাচনে অর্থায়ন করেছিল, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের জামায়াতকে  দিয়েছিল।

সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংকটিই মমতার ক্ষমতার প্রাণশক্তি। নির্বাচনের আগে জামা মসজিদ শাহির ইমাম বুখারি এবং টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম বারখাতি তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান।

মমতার মত পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ জানেন, কেন লালু প্রসাদ যাদবকে সরিয়ে নীতিশ, মুলায়েম সিংকে সরিয়ে মায়াবতী ক্ষমতায় ছিল। এমনকি খোদ পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেসের কাছ থেকে সিপিএম, এবং সিপিএমের কাজ থেকে নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এবং লোকসভায় দ্বিতীয় বিরোধী দল।

মমতা এমন কিছু করতে চাইবে না যেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তার বিপক্ষে চলে যায়। ক্ষমতায় আসার পরেই ৩০০০০ হাজার ইমামকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা প্রদান হাইকোর্ট দ্বারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলেও মমতার প্রতি সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। তিস্তা পানি চুক্তি না করার পেছনেও অন্যতম কারণ হল- তিস্তার তীরে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই ধর্মীয় সংখ্যালঘু। মমতা জানেন ভারতের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি কোনো দলের জন্য নির্দিষ্ট নয়। আগে প্রোগ্রেসিভ অল্টারনেটিভ তেমন ছিল না, এখন অনেক আছে।

মমতার নিজেও জানেন, ইমরানের মত সিমির অনেক প্রাক্তণ নেতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি? সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি ব্যবহার করে ইমরান খানের মত সিমির নেতারা ভারতের ভেতরে ও বাইরে ভারতের স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তা খোদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গোয়েন্দারই সন্দেহ করে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে তার নিজ দলের জঙ্গি-বান্ধব রাজনীতিবিদ ইমরান থেকে শুরু করে মুনমুন সেনের মত অনেক সেলিব্রেটি জড়িত। যদি ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জামায়াত টাকা নিয়ে ২০১১ সালের বিধান সভা ও ২০১৪ সালে লোকসভার নির্বাচন করা যায়, প্রশ্ন থেকে যায় কোন নৈতিক ক্ষমতার জোরে সারদার টাকা জামায়াতকে দিতে না করবেন মমতা?

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, দেশের ভেতর জঙ্গি উত্থান ঘটল কিনা, তাও মমতার কাছে মুখ্য নয়।  মুখ্য সংখ্যালঘু ভোটের কিছু সুবিধাবাদী প্রতিনিধিকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকা। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা আর বাংলাদেশ, অনেক দূরের বিষয়।

মমতা এমন এক রাজনীতিবিদ, যার কাছে নিজ দলের স্বার্থই প্রাধান্য পায়। নিজের স্বার্থের জন্য প্রথমে বিজেপি, পরে কংগ্রেস, আবার বিজেপি, আবার কংগ্রেস জোটে গিয়েছিল। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগে বিজেপি থেকে কোয়ালিশনের জন্য ইঙ্গিত দিলেও মমতার সাড়া পাওয়া যায়নি। কারণ বিজেপির বিপক্ষে গিয়ে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি হারাতে হবে এই ভয়ে। 

ড: বিজন সরকার: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথ কোরিয়া, bipoly3001@yahoo.com - See more at: http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/324435.html#sthash.ve6ugkh2.dpuf

Wednesday, September 17, 2014

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৩ (খসড়া)




১।    সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন।- (১) এই আইন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৩ নামে অভিহিত হইবে।
(২) এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে কার্যকর হইবে এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিক- তাহারা যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তাহাদের সকলের উপর প্রযোজ্য হইবে।
(৩) এই আইন অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২।    সংজ্ঞা।-বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
(ক)    “শিশু” (Child) অর্থ অনুর্ধ্ব আঠার বৎসরের কম বয়সী কোন ব্যক্তি;
(খ)    “নাবালক” (Minor) অর্থ পুরুষ হইলে একুশ বৎসরের কম এবং নারী হইলে আঠার বৎসরের কম বয়সী কোন ব্যক্তি।
(গ)    “বাল্যবিবাহ” অর্থ সেই বিবাহ যাহাতে সম্পর্ক  পড়্গদ্বয়ের যে কোন একজন নাবালক।
(ঘ)    “শিশু বিবাহ” (Child marriage) অর্থ সেই বিবাহ যাহাতে সম্পর্ক স্থাপনকারী পক্ষদয়ের যে কোন একজন শিশু।
(ঙ)    “সম্পর্ক স্থাপনকারী পক্ষ” (Contracting party) অর্থ যেই পড়্গদ্বয়ের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইয়াছে বা হইতে যাইতেছে এমন যে কোন এক পড়্গ।
(চ)    “সিটি কর্পোরেশন” বলিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অধ্যাদেশ, ১৯৮২ (১৯৮২ সালের ৩৫ নং অধ্যাদেশ) সনের ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ (১৯৮৩ সনের ৪০ নং অধ্যাদেশ) অথবা খুলনা সিটি কর্পোরেশন অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ (১৯৮৪ সনের ৭২ নং অধ্যাদেশ) এর আওতাধীনে গঠিত সিটি কর্পোরেশনকে বুঝাইবে।
(ছ)    “পৌরসভা” বলিতে পৌরসভা অধ্যাদেশ, ১৯৭৭ (১৯৭৭ সনের ২৬ নং অধ্যাদেশ) এর অধীন গঠিত পৌরসভাকে বুঝাইবে।
(জ)    “ইউনিয়ন পরিষদ” বলিতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ (১৯৮৩ সনের ৫১ নং অধ্যাদেশ) অধীনে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদকে বুঝাইবে ।
(ঝ)    “বিবাহ পরিচালনাকারী” বলিতে নিকাহ রেজিস্ট্রার বা ধর্মীয় নেতা অন্য কোন ব্যক্তি যিনি বিবাহ অনুষ্ঠান/পরিচালনা করেন।
৩।    শিশু বিবাহকারীর শাস্তি।- একুশ বৎসরের অধিক বয়স্ক কোন পুরুষ বা আঠার বৎসরের অধিক বয়স্ক নারী কোন শিশু বা নাবালকের সহিত বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি করিলে সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় হইবে।
৪।    বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠান বা পরিচালনা করিবার শাস্তি।- কোন ব্যক্তি বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠান বা পরিচালনা করিলে সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় হইবে, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, বিবাহটি বাল্যবিবাহ ছিল না বলিয়া বিশ্বাস করিবার মত যথেষ্ট যুক্তি ছিল।
৫।    বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের সহিত সম্পর্কিত পিতামাতা বা অভিভাবকের শাস্তি।-(১) যেই ক্ষেত্রে কোন নাবালক কোন বাল্যবিবাহের চুক্তি করে এবং পিতামাতা অথবা আইনানুগ বা বেআইনী যে কোন এখতিয়ারেই হউক না কেন, কোন ব্যক্তি উক্ত নাবালকের উপর কর্তৃত্ব সম্পন্ন হইয়া উক্ত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করিবার ক্ষেত্রে কোন কাজ করিলে বা সম্পন্ন করিবার অনুমতি প্রদান করিলে বা স্বীয় অবহেলার জন্য বিবাহটি বন্ধ করিতে ব্যর্থ হইলে, সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় হইবে।
(২) যেই ক্ষেত্রে কোন নাবালক বাল্যবিবাহের চুক্তিবদ্ধ হয় সেই ক্ষেত্রে বিপরীত বিষয় প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত, উক্ত নাবালকের উপর কর্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি স্বীয় অবহেলায় বিবাহটি বন্ধ করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন বলিয়া বিবেচিত হইবে।
৬।    নিকাহ রেজিস্ট্রার-এর নিবন্ধন বাতিল।- স্বেচ্ছায় বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানে/আয়োজনে সহায়তাকারী নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিবন্ধন বাতিল করা হইবে,যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, বিবাহটি বাল্যবিবাহ ছিল না বলিয়া বিশ্বাস করিবার মত যথেষ্ট যুক্তি ছিল।
৭।    বিবাহের বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে দাখিলকৃত প্রমাণ।- বিবাহের সময় কন্যা ও বরের বয়স প্রমাণের জন্য বিবাহ অনুষ্ঠান বা পরিচালনাকারীর নিকট সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ইস্যুকৃত জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা এসএসসি/সমমানের পরীক্ষার সনদ দাখিল করিতে হইবে। উক্তরূপ প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হইয়া বিবাহ অনুষ্ঠান বা পরিচালনাকারী বিবাহ অনুষ্ঠান/ পরিচালনা করিবেন।
৮।    বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের সংবাদ।- (১) কোন ব্যক্তি বা জনপ্রতিনিধি বা সরকারি/বেসরকারী কোন সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারী বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের কোন সংবাদ অবহিত হইলে তিনি তৎক্ষণাৎ তাহা নিকটবর্তী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা নিকটবর্তী আদালতকে বা হেল্পলাইন সেন্টার (১০৯২১)-এ লিখিত অথবা মৌখিকভাবে অবহিত করিবেন।
(২) উপধারা (১) অনুসারে প্রাপ্ত সংবাদ অথবা কোন প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি অথবা আদালত উক্ত বিবাহ বন্ধ অথবা আইনানুগ অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
৯।    এখতিয়ার।- ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ (১৮৯৮ সালের ৫ নং আইন) এর ১৯০ ধারায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ব্যতীত অন্য কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ আমলে গ্রহণ করিতে বা উহার বিচার করিতে পারিবে না।
১০।    অপরাধ আমলে গ্রহণের মেয়াদ।- কোন আদালত এই আইন অনুযায়ী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার এক বৎসর পর কোন অপরাধ আমলে গ্রহণ করিতে পারিবে না।
১১।    সরেজমিনে তদন্ত।- কোন আদালত এই আইন অনুসারে কোন অভিযোগ বা কার্যধারা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা নিরূপনের নিমিত্ত সরেজমিনে স্বয়ং তদন্ত করিতে পারিবেন অথবা অধস্তন কোন সরকারি কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা অন্য কোন ব্যক্তিকে উক্তরূপ তদন্ত করিবার নির্দেশ দিতে পারিবেন এবং উক্তরূপ তদন্ত কাজ আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে সম্পন্ন করিতে হইবে।
১২।    আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা এবং আপোষযোগ্যতা।- এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং আপোষযোগ্য হইবে।
১৩।    বিচারের কার্যপদ্ধতি।- (১) এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচার বা কার্যধারা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যর্বিধির বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।
(২) এই আইনের অধীন অপরাধের বিচার বা কার্যধারা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ (১৮৯৮ সালের ৫ নং আইন) এর Chapter XXII অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি প্রযোজ্য হইবে।
১৪।    আইন লংঘন করিয়া বিবাহ অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষমতা।- (১) আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগ বা অন্য কোন উপায়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আদালত যদি এই মর্মে নিশ্চিত হন যে, এই আইনের লংঘন ঘটাইয়া কোন বিবাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে বা বিবাহ অনুষ্ঠান অত্যাসন্ন তাহা হইলে আদালত এই আইনের ৩, ৪, ৫ ও ৬ ধারায় উল্লিখিত যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে উক্ত বিবাহ অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিতে পারিবেন।
(২) আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নোটিশ প্রদান করতঃ কারণ দর্শানোর সুযোগ প্রদান না করিয়া উপাধারা (১) অনুযায়ী প্রদত্ত যে কোন আদেশ প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করিতে পারিবেন না।
(৩) আদালত স্বেচ্ছায় বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে উপধারা (১) অনুযায়ী প্রদত্ত যে কোন আদেশ প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করিতে পারিবেন।
(৪) যখন কোন আদালত এইরূপ কোন আবেদন প্রাপ্ত হন তখন আদালত আবেদনকারীকে ব্যক্তিগতভাবে বা আইনজীবীর মাধ্যমে তাহার নিকট হাজির হইবার সুযোগ প্রদান করিবেন এবং আদালত যদি আবেদন সম্পূর্ণ বা আংশিক নাকচ করেন, তাহা হইলে তিনি উহার কারণ লিপিবদ্ধ করিবেন।
(৫) উপধারা (১) মোতাবেক কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারী হইয়াছে এইরূপ বিষয় জানা সত্ত্বেও সেই ব্যক্তি উক্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিলে ছয় মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় হইবে।
১৫।     বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জনমত গঠন।-বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচারণার জন্য বিধি দ্বারা নিরূপিত পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করিবে।
১৬।     বাল্যবিবাহ নিরুৎসাহিতকরণ।- বাল্যবিবাহ নিরুৎসাহিতকরণ করিবার লক্ষ্যে শিশু বা অভিভাবককে সরকারের চলমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কার্যক্রমে সম্পৃক্তকরণ বা অন্য কোন প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হইবে।
১৭।     বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসনিক উদ্যোগ।- বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বা প্রতিকারের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক বা  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা  সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোন কর্মকর্তা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বা প্রতিকারের লক্ষ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিবে।
১৮।     বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিকল্প বিরোধ পদ্ধতি।- সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ স্ব-স্ব এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যথাসম্ভব বিকল্প বিরোধ পদ্ধতি (Alternate Dispute Resolution) অনুসরণ করিবে।
১৯।    কতিপয় ক্ষেত্রে বিবাহ বাতিল।- আদালত যথাযথ শুনানী অন্তে সন্তুষ্ট হইয়া নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বিবাহ বাতিলের আদেশ দিতে পারিবেনঃ
(ক) বিবাহটি বাল্যবিবাহ এবং উক্ত বিবাহ অনুষ্ঠানের বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল;
(খ) জালিয়াতি, প্রতারণা বা জোরপূর্বক বা মানব পাচারের মাধ্যমে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইলে; এবং
(গ) জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং ধর্ষণ পরবর্তীতে ধর্ষকের সহিত বিবাহে বাধ্য করা হইলে।
২০।    বাল্যবিবাহের ফলে জন্মগ্রহণকারী শিশুর নিরাপত্তা।- এই আইনের ১৯ ধারার অধীনে বাতিলকৃত বাল্যবিবাহের ফলে জন্মগ্রহণকারী শিশুর নিরাপত্তা/হেফাজত/ভরণপোষনের দায়িত্ব যথাযথ আদালত কর্তৃক নির্ধারণ করা হইবে।
২১।    পাঠ্য সূচীতে অন্তর্ভুক্তি।- বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে শিক্ষাথী ও সমাজকে সচেতন করিবার লক্ষ্যে সরকার সকল স্তরের পাঠ্যসূচীতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করিবার উদ্যোগ গ্রহণ করিবে।
২২।    বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন।- বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের নিমিত্ত এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি দ্বারা সরকার সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সমন্বয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করিতে পারিবে। উক্ত কমিটির কার্যাবলী বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
২৩।     বিধি প্রণয়ন।- সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে নিম্নলিখিত বিষয়সহ সংশ্লিস্ট অন্যান্য বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করিত পারিবেঃ
(ক) বাল্যবিবাহের সামাজিক ও আর্থিক ক্ষতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা;
(খ) বাল্যবিবাহ নিরোধ সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে এবং জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন;
(গ) বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সম্পর্কিত বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবেদন প্রেরণ;
(ঘ) বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা; এবং
(ঙ) সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটি বা সরকারি/বেসরকারী ব্যক্তিবর্গ/জনপ্রতিনিধিকে বাল্যবিবাহ নিরোধের জন্য দায়িত্ব অর্পণ।
২৪।     রহিতকরণ ও হেফাজত।-(১) এই আইন বলবৎ হইবার সঙ্গে সঙ্গে The Child Marriage Restraint Act, 1929 ( Act No. XIX of 1929) অতঃপর বিলুপ্ত আইন  বলিয়া উল্লিখিত, রহিত হইবে।
(২) উপরোক্ত রহিত হওয়া সত্ত্বেও রহিত আইনের অধীনে কৃত কোন কার্য বা কার্যধারা অথবা প্রণীত সকল বিধি, প্রবিধান, আদেশ, জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি বা নোটিশ বা অনুমোদিত সকল কার্যক্রম এই আইনের অধীন কৃত, প্রণীত, প্রদত্ত, জারিকৃত বা অনুমোদিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
২৫।    বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে বিধান।- এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন এই আইন বলবৎ হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে কোন আদালতে বিচারাধীন ৩, ৪ ও ৫ ধারায় বর্ণিত অপরাধের সহিত সম্পর্কিত মামলা বা উহার আপীল বা অন্যকোন আইনগত কার্যধারা উক্ত একই আদালতে এমনভাবে চলিতে থাকিবে যেন এই আইন প্রণীত হয় নাই।

Tuesday, September 16, 2014

সাঈদীর দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত রায় বুধবার

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল দুটির রায় ঘোষণা আগামীকাল বুধবার । প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে আপিল দুটির রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকার ১ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
  সাাঈদীর চুড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে দেশের সবগুলো কারাগারে- জনকন্ঠকে বললেন, মহাকারাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখারউদ্দিন । তিনি বলেন , শ্রীপুরে জঙ্গী ছিনতাই ঘটনার পর থেকে যুদ্ধাপরাধ মামলা , বোমা হামলা মামলার মতো চাঞ্চল্যকর মামলার সময়ে র‌্যাব , পুলিশ সহ নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করি আমরা। সাম্প্রতিক সময়ে বাজাওে একটি বই ছেড়ে বলা হয় , কারাগার থেকে এই বইটি লিখেছেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী । এ প্রসংগে কারামহাপরিদর্শক বলেন ,  এই বইতে কারাগারের কোন কথা নেই । বইটি
সাঈদী আগে লিখেছেন । কারাগারে কোন বই লিখেন নি বলেই সাঈদী নিজে  কারাকর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বললেন কারামহাপরিদর্শক

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষনার পর যে সহিংসতা ছড়ানো হয়েছে-সেই ভয়াবহতা প্রতিরোধে আমরা সব রকমের প্র¯তুতি গ্রহণ করেছ বলে জানালেন পুলিশের
মহাপরিদর্শক হাসা মাহমুদ খন্দকার। 
এর্টনী জেনারেল মাহবুবে আলম জনকন্ঠকে বলেন,  দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর চল্লিশ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিরীগ মানুষকে  নির্বিচার হত্যার মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছেন, সেটা  আদালতে প্রমাণ হয়েছে । সেই  অনুযায়ী  বিজ্ঞ আদালত সাঈদীর অপরাধের  সর্বোচ্চ  সাজা মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে আসামি পক্ষ ঘুরেফিরে এটাই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে যে রাজাকার সাঈদী এবং জামায়াত নেতা সাঈদী এক ব্যক্তি নন। তাদের আবেদনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যনালের বিচারকবৃন্দ তাদের রায়ে  বলেছেন “ আমরা যে রায়  ঘোষণা করেছি , তা চল্লিশ বছর আগের ‘দেল্লা রাজাকারের বিরুদ্ধে’  , বর্তমান সময়ের আলোচিত  ধর্মীয় আলোচক বা সুবক্তা’  সাঈদীর পরিচিতি রায়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন আদালত। এর্টনী জেনারেল মাহবুবে আলম জনকন্ঠকে বলেন, এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকবে বলেই আমার প্রত্যাশা  ।
৭৪ বছর বয়সী সাঈদী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে কারাবন্দি সাঈদী। মা ও ছেলের মৃত্যুর পর দুই দফায় কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন পিরোজপুর থেকে দুই বার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দিলে সহিংস বিক্ষোভে নামে জামায়াতকর্মীরা।
সাঈদীর রায় দেওয়ার সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ফজলে কবীরও আসামির সুবক্তা পরিচিতি,সংসদ সদস্য হওয়া, জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বলেছিলেন, “আজ যার বিরুদ্ধে মামলার রায় দেয়া হচ্ছে, তাকে জানতে হলে আমাদের চল্লিশ বছর পেছনে তাকাতে হবে। তখন পিরোজপুরে সাঈদীকে মানুষ চিনত `দেলু'  নামে।”
এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।দুই পক্ষের আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এখন চূড়ান্ত রায় দেবে আপিল বিভাগ।  রায়ে বলা হয়, “সেই সময়ের ৩০ বছরের যুবক সাঈদী ছিলেন রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য। উর্দু ভাল বলতে পারতেন বলে পাকিতানি সেনাদের সব অপারেশনেই তিনি তাদের সঙ্গে ছিলেন।” তাদের এই রায় আপিল বিভাগেও বহাল থাকবে বলে আশা করছেন বললেন  রাষ্ট্রপক্ষের  অন্যতম কৌসুলি ব্যারিষ্টার  তুরিন আফরোজ জানান।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি মামলা রায়ের অপেক্ষায় আছে৷ এর একটি আপিল বিভাগে, দুটি ট্রাইব্যুনাল-১-এ এবং একটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ আছে৷ এগুলোর মধ্যে তিনটি মামলার শুনানি শেষ হয়েছে এক থেকে দুই মাস আগে৷আপিল বিভাগে চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় থাকা মামলাটি জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর৷ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আছে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও ফরিদপুরের বিএনপির নেতা পলাতক জাহিদ হোসেনের মামলার রায়৷ আর ট্রাইব্যুনাল-২-এ রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মামলা৷সাঈদীর চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা: ৫০ কার্যদিবস শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল সাঈদীর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষ হয়৷ তবে রায় ঘোষণা হয়নি এখনো৷ গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-১ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন৷

এর আগে আপিল নিষ্পত্তি হওয়া একমাত্র মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা করতে আপিল বিভাগ প্রায় দুই মাস সময় নিয়েছিলেন৷ গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কাদের মোল্লাকে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ, তারও প্রায় তিন মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়৷ ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার সাজা কার্যকর হয়৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের ঘটনা সেটিই প্রথম ৷ কার্যত ছয় মাস ধরে ঝুলছে নিজামীর রায় ৷ তিন দফায় মামলার কার্যক্রম শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনো রায় ঘোষণা হয়নি৷ নিজামীর বিরুদ্ধে করা মামলার রায় প্রায় ছয় মাস ধরে ঝুলে আছে৷
প্রথম দফায় নিজামীর মামলার কার্যক্রম শেষ হয় গত বছরের ১৩ নভেম্বর৷ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা টানা ৮৪ ঘণ্টা হরতালের জন্য নিজামীর আইনজীবীরা চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপনের নির্ধারিত দিনে আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন৷ এ জন্য ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত করে দেন৷ কিন্তু পরে আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ চাইলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন৷ ২০ নভেম্বর আবারও মামলার কার্যক্রম শেষ হয়৷ কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর৷ এরপর দীর্ঘ ৫৩ দিন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়নি সরকার৷ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর নিজামীর মামলায় দুই পক্ষ আবার নতুন করে যুক্তি উপস্থাপন করে৷ ২৪ মার্চ তৃতীয় দফায় রায়ের অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু হয়৷
দুই ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে নিজমীর মামলাটিই সবচেয়ে বেশি সময় (২৬ মাস) ধরে চলছে৷ ২০১২ সালের ২৮ মে নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-১-এ তাঁর বিচার শুরু হয়৷ একই দিনে ট্রাইব্যুনাল-২-এ কাদের মোল্লার বিচার শুরু হয়েছিল৷ নিজামীর মামলায় ১৭ মাস ধরে দুই পক্ষের ৩০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়৷ ওই সময়ের মধ্যে কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যায়৷
ট্রাইব্যুনাল-১ এ পর্যন্ত তিনটি মামলার রায় দিয়েছেন৷ সাঈদীর মামলার রায় দিতে এই ট্রাইব্যুনালের এক মাস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায় দেড় মাস ও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের রায়ের জন্য দুই মাস সময় নিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল৷
ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপির নেতা পলাতক এম এ জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার রায়ও গত এক মাসে ঘোষিত হয়নি৷ গত ১৭ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটির কার্যক্রম শেষ হয়৷ একাত্তরে স্থানীয়ভাবে ‘খোকন রাজাকার’ নামে পরিচিত জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৯ অক্টোবর ১১টি অভিযোগের বিচার শুরু হয়৷
এটি আসামির অনুপস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের তৃতীয় মামলার বিচার৷ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদ এবং একাত্তরের আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলা দুটির বিচার হয় আসামির অনুপস্থিতিতে৷ বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর পালিয়ে যান৷ । মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিদেশে চলে যান, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি৷
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষ হয় ৪ মে৷ ওই দিন মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় রাখেন ট্রাইব্যুনাল-২৷
এই ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ছয়টি মামলার রায় দিয়েছেন। অপেক্ষমাণ রাখার পর রায় ঘোষণা করতে ট্রাইব্যুনাল-২-এর গড়ে এক মাস করে সময় লেগেছে৷ সবচেয়ে বেশি ৪১ দিন সময় লেগেছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসানে মাহাম্মাদ মুজাহিদের মামলার রায় দিতে৷ আর সবচেয়ে কম সময় (২৫ দিন  ) লেগেছে পলাতক বাচ্চু রাজাকারের চুড়ান্ত রায় দিতে।


Sunday, September 14, 2014

মিশরের দেবী আইসিসের নামে জঙ্গি গোষ্ঠী:মোবাইল অ্যাপের নাম বদল

মিশরের দেবী আইসিসের নামে নামকরণ হয়েছিল আমেরিকার জনপ্রিয় মোবাইল ওয়ালেট অ্যাপলিকেশনটির। কে জানত, শিশুদের মঙ্গলকারী দেবীর নামটাকেও রেয়াত করবে না জেহাদিরা! শিশুদের সুরক্ষা আর শান্তির জন্য যুগ যুগ ধরে যে দেবীকে পূজো করা হয়েছে সেই আইসিসের (যার ইংরেজি বানান হুবহু মিলে যায় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসআইএস-এর নামের সঙ্গে) নামেই আতঙ্ক ছড়াবে বিশ্ব জুড়ে!

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আইএসআইএস নির্যাতনের অভিজ্ঞতা জানাল ইয়াজিদি তরুণী

 ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
"দিনভর নানা রকম লোক আসে৷ তাদের সঙ্গে আমাদের যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হয়৷ চাকরের মতো খাটায় আমাদের৷ পান থেকে চুন খসলে মারধর তো বটেই, আগ্ণেয়াস্ত্র উঁচিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়৷" ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস-এর এমনই নৃশংস ও ভয়াবহ অত্যাচারের কথা উঠে এল অপহৃত এক  ইয়াজিদি নাবালিকার বক্তব্যে৷
মেয়েটির অনুরোধেই তার আসল নাম প্রকাশ করা যায়নি৷ ইউরোপে গিয়ে পড়াশোনা করে একসময় বড় হওয়ার স্বপ্ণ দেখত যে মেয়ে, সেই মেয়েই এখন অপহৃত ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস-এর হাতে৷ আর যে জঙ্গি সংগঠন এতদিন ধরে দাবি করেছে তারা শিশু ও বিধবা মহিলাদের সম্মান করে৷
কিন্তু এই নাবালিকা কিশোরীর জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতাই জঙ্গিদের দাবি খআরিজ করে দিয়েছে৷ গত ৩ আগস্ট ইরাকের সিনজর থেকে জঙ্গিরা তাকে অপহরণ করে৷ মিয়ামি (নাম পরিবর্তিত) তার বাবা-মা কুর্দিস্তানের বাসিন্দা৷ তাঁদের কাছ থেকে ফোন নম্বর পেয়ে মিয়ামির সঙ্গে কথা বলে একটি ইটালিয়াম সংবাদপত্র সংস্থা৷ অপহরণকারীদের এখানে কীরকম জীবন কাটাচ্ছে, তা বিশ্বকে জানাতে এই সাক্ষাত্কারের অনুমতি দেওয়া হয়৷
মিয়ামি জানিয়েছে, সে যেখানে বন্দি সেখানে ১২-৩০ বছরের ৪০ জন মহিলা  রয়েছে৷ অস্ত্র দেখিয়ে তাদের আটকে রাখা হয় অন্ধকার ঘরে৷ সেখানেই চলে যৌন নির্যাতন৷ কখনও সিরিয়া থেকে লোকেরা আসে৷ তাদের সঙ্গে যৌন সংসর্গে বাধ্য করা হয় সদ্য কিশোরীদের৷ সেই অত্যাচার দিনের পর দিন সহ্য করতে করতে কথাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কয়েকজনের৷ মিয়ামির কথায়, ‘‘আমার মনে হয় এই অন্ধকারের কোনও শেষ নেই৷ মনে হয় মারতে মারতে ওরা কেন আমায়ে প্রাণে মেরে ফেলে না৷ তা হলে হয়তো বেঁচে যাব৷ কিন্তু ওরা এত কাপুরুষ প্রাণে মারে না৷"
অন্ধকার ঘরে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় দিন কাটছে মিয়ামির মতো আরও অনেক মেয়েদের৷
অ্যামনেস্টি ইণ্টারন্যাশনালের রিপোর্ট বলছে ইসলামিক এই জঙ্গিরা শেষ মাসে সিরিয়া থেকে হাজারেরও বেশি বিভিন্ন্ বয়সী মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে৷
মিয়ামির কথায়, ‘‘কখনও মনে হয় মরে যাই৷ জলে ঝাঁপ দিই৷ জীবনটা শেষ করে দিই৷ কখনও মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা জাগে৷ মনে হয় হয়তো কখনও এই নরক থেকে উার পাব৷ আবার বাবা-মাকে  একবার জড়িয়ে ধরতে পারব৷" এমন অত্যচারেই জীবন শেষ হয়ে যাবে বুঝতে পেরে অনেকেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে৷
শুধু এই অত্যাচারেই শেষ নয়৷ মিয়ামির মতো মেয়েদের হাতে ফোন ধরিয়ে জোর করে বাবা-মাকে ফোন করে এই যৌন অত্যাচারের কাহিনি বলতে বাধ্য করা হয়৷
শেষে সে জানায়  " আমার শরীর তো ওরা আগেই শেষ করে দিয়েছে৷ এবার আমার আত্মাকেও তিল তিল করে মেরে ফেলছে৷ আমি জানি না কোনওদিন এই নরক থেকে বেরোলেও, এই ভয়াবহ স্মৃতি মন থেকে মুছতে পারব কি না?'