Thursday, September 18, 2014

আলিমুল হক

18.09.2014   2PM CHINA
\ Supriti Dhar দিদি, আমি ভেবেছিলাম, বরাবরের মতোই আমি চুপ থাকবো। ফেসবুকে তো কিছু লিখবোই না। কিন্তু আজ অনেকদিন বাদে ফেসবুক খুলেই (আমার ভাগনি জানালো আমার অ্যাকাউটন্ট নাকি হ্যাক হয়েছে। সেটা চেক করার জন্যই আসলে ফেসবুক খোলা) আপনার স্ট্যাটাস চোখে পড়লো। জানিনা, আমার নাম উল্লেখ করে আপনি প্রশ্ন না-করলে আমি কিছু লিখতাম কি না। হয়তো কিছুই লিখতাম না। কিন্তু আপনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে জানতে চেয়েছেন আমার অনুভূতির কথা। যদিও একজন বাবার কাছে তার দুটি সন্তানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তার অনুভূতি জানতে চাওয়াটা কতোটা মানবিক আমি জানি না। কিন্তু আপনার প্রশ্নটাকে আমি স্বাভাবিক ও মানবিক হিসেবেই নিচ্ছি। কারণ, আমার সম্পর্কে ২০০৮ সালে একবার এবং সম্প্রতি আরেকবার মিডিয়াতে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে, তাতে আমাকে আপনি যে ঘৃণায় ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বাদ দেননি, তাতেই আমি অবাক হয়েছি। আমার অনুভূতির কথা আপনাকে জানাবো (আমি ভেবেছিলাম ইনবক্সে জানাবো; কিন্তু আপনি ওপেন প্রশ্ন করেছেন বলে ওপেন উত্তরই দিচ্ছি), তবে তার আগে কয়েকটি কথা বলে নিই। ভাববেন না নিজের সাফাই গাইছি। তাহলে ২০০৮ সালেই গাইতে পারতাম। তখন গাইনি, কারণ আমার বাচ্চা দুটো তখন বেঁচে ছিল। ওদের সম্মানের কথা ভেবে আমি মুখ খুলিনি। এখন ওরা নেই; তাই মুখ খুলতেও আমার সমস্যা নেই। দিদি, আপনি 'উইমেন চ্যাপ্টারের' জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন এবং আমি সে জন্য আপনাকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলাম। সেই উইমেন চ্যাপ্টারে আমার হতভাগ্য বাচ্চা দুটোর মা জয়শী জামানের একটি খোলা চিঠি ছাপা হয়েছে। চিঠিটি লেখা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে। সেই চিঠির সঙ্গে সম্ভবত আপনার একটি নোট প্রকাশিত হয়েছে। নোটে আপনি লিখেছেন: "ব্যক্তিগতভাবে জয়শ্রী জামানের আগের স্বামী আলীমুল হককে যতটা জানি, সে আরেকটা নতুন সংসার গড়ে নিয়েছে। থাকে বিদেশে। অনেকদিন তারও চাকরি ছিল না। নতুন প্রেমের কারণে দিগন্ত টিভি থেকে তার চাকরি চলে যায়। খুবই হতাশ ছিলেন তিনিও। কিন্তু যেহেতু সন্তান লালন-পালনের কোনো দায়িত্ব তাকে নিতে হয়নি, তাই জয়শ্রীর মতোন অতটা অতল গহ্বরে তাকে পড়তে হয়নি।" আপনি 'ব্যক্তিগত' শব্দটা লিখেছেন। আপনি আমার সরাসরি শিক্ষক সুব্রত ধর স্যারের বোন এবং আমাদের খুকু আপার প্রিয় বান্ধবি। ফিলিপ দাদার সেড-এর আপনার সঙ্গে আমি কিছুদিন কাজও করেছি। আপনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবেই চেনেন। কিন্তু মিডিয়াতে আমার সম্পর্কে ওই লাইন কটি লিখবার আগে কি আপনি আমাকে এর সত্যতা সম্পর্কে জিঙ্গেস করতে পারতেন না? আপনি কি খুকু আপা বা ফিলিপ দাদার সাথে কথা বলেছিলেন? আপনি লিখেছেন অনেকদিন আমার চাকরি ছিল না। কথাটা সত্য নয়। কারণ, দিগন্ত থেকে চাকরি চলে যাওয়ার আগেই ফিলিপ দাদার সেড-এ আমি জয়েন করেছিলাম। আপনি লিখেছেন 'প্রেমের কারণে' দিগন্ত থেকে আমার চাকরি চলে গেছে। এটাও ঠিক নয়। 'প্রেমের কারণে' নয়, বিয়ে করার কারণে দিগন্ত থেকে আমার এবং আমার স্ত্রী মাহবুবার চাকরি চলে গিয়েছিল। (এবং এ অন্যায়টা দিগন্ত কর্তৃপক্ষ যে করেছিল সেটা তারা দেরিতে হলেও উপলব্ধি করেছিল এবং পরে তারা আমাকে নিউজ কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল এবং মাহবুবাকেও পুনঃনিয়োগ দিযেছিল। আপনারা সেটা জানেন কি না আমি জানি না।) আপনি লিখেছেন, 'খুবই হতাশ ছিলেন তিনি।' এ কথাটাও সত্য নয়। আমি হতাশ হইনি, ভেঙেও পড়িনি। বিশ্বাসী মানুষ হতাশ হয় না। আপনি ফিলিপ দার সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। আপনি লিখেছেন: 'কিন্তু যেহেতু সন্তান লালন-পালনের কোনো দায়িত্ব তাকে (মানে আমাকে) নিতে হয়নি.....'। আসল সত্য হচ্ছে: জয়শ্রীর সঙ্গে আমার ছাড়াছাড়ি হবার দিনই (৬ মার্চ ২০০৮০; ছাড়াছাড়ির কারণ পরে লিখছি) সে জোর করে আমার মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে তার বোন তিলোত্তমার বাসায় ওঠে। আমার মেয়ে সারারাত কেঁদেছে, ঘুমায়নি...বলেছে, আমাকে আব্বুর কাছে দিয়ে আস। পরের দিন সকালে জয়শ্রী বাধ্য হয়ে মেয়েকে দিয়ে গেছে, আমি মেয়েকে নুডুলস রান্না করে খাইয়েছি, সে গোসল করে ঘুমিয়েছে। একমাস পর জয়শ্রী ছিলেটাকেও আমার কাছে দিয়ে গেছে। তারপর আটটি মাস ছেলেমেয়ে দুটো আমার কাছে ছিল। একটি কাজের বুয়া দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ওদের সঙ্গে থাকতো, রান্না করতো, তারপর আমি রাতে অফিস থেকে এলে চলে যেতো। উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় আমরা থাকতাম। বাড়িওয়ালা এখনো বেঁচে আছেন। ওই আটমাস প্রায় সময়ই জয়শ্রী আমাকে এসএমএস করে আবার বিয়ে করার তাগিদ দিত, বলতো আমার বাচ্চা দুটো কাজের বুয়ার কাছে থাকে, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। আমি রাজি হইনি। এভাবে প্রায় ৬ মাস অতিক্রান্ত হবার পর মাহবুবা অনেক সাহস করে আমাকে প্রপোজ করে এবং যথারীতি আমি না করে দিই। কিন্তু পরে আমার মেয়ে মনমনের সঙ্গে আলাপ করলে সে বলেছিল: আব্বু সকল স্টেপ মাদার খারাপ হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি বিয়েতে রাজি হই। এ নিয়ে মাহবুবার পরিবারে ঝামেলা হয় (সে প্রসঙ্গে নাইবা গেলাম) এবং বাধ্য হয়ে (সিনিয়র হিসেবে এ কাজের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি) আমরা বগবাজার কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করি। বিয়ের পরপরই দুটো ঘটনা ঘটে। আমাকে অবাক করে দিয়ে জয়শ্রী আমার ছেলেটাকে নিয়ে যায়। আর দিগন্ত কর্তৃপক্ষ মাহবুবাকে আর আমাকে চাকরিচ্যুত করে কোনো কারণ না-দর্শিয়েই। তখন আমার অবস্থা কেমন হতে পারে নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন। তখন অনেক ঝড় আমার ওপর দিয়ে গেছে....উত্তরার বড় বাসা আমাকে ছেড়ে শেওড়াপাড়ার একরুমের একটি বাসা নিয়ে হয়েছে। তখন আমি জয়শ্রীকে বললাম সেড-এর কাছ থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে মুহাম্মাদের খরচ আলাদাভাবে বহন করা সম্ভব নয়। মনমন-মুহাম্মাদ দু'জন আমাদের সঙ্গে থাকলে কোনোরকমে কষ্ট করে কাটিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু সে ছেলেকে দিতে রাজি হলো না। সে আলাদা বাসা নিল এবং মেয়েও তখন মায়ের সঙ্গে থাকতে চাইল। আমি বেতনের অর্ধেক জয়শ্রিকে প্রতিমাসে দিতে থকলাম।....এরপর এমন একটি মাস যায়নি যেমাসে ওদের আমি টাকা দিইনি (সে অংক দিন দিন বেড়েছে বৈ কমেনি কখনো)...ওদের সঙ্গে নিয়মিত আমার যোগাযোগ ছিল....বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রয়োজনও আমি আমার সাধ্য অনুসারে মেটানোর চেষ্টা করেছি। জয়শ্রী জীবনাচরণ কেমন ছিল তা আপনারা পত্র-পত্রিকায় পড়েছেন। ওসব কথা আমি বলিনি। রিপোর্টাররা নিজেরাই অনুসন্ধান করে বের করছে। এসবের বাইরেও আরো সত্য আছে। আমি সেগুলো এখানে বলতে চাই না। মোদ্দা কথা, বাচ্চা দুটো মায়ের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করতো। সেই বিরক্তি শেষ পর্যন্ত ঘৃণায় রূপ নেয়। আমি ওদের সবসময় বলতাম, খারাপ স্ত্রী বা স্বামী হয়, কিন্তু খারাপ মা বা বাবা হয় না।মনমন আমাকে বলতো: আব্বু, আম্মু বিয়ে করলে আমরা তোমার কাছে চলে আসবো। আমি ইতিবাচকভাবে ওদের বোঝানো চেষ্টা করে গেছি। শেষ দিকে বলতাম: মা, এ লেভেলটা শেষ করলেই চীনে তোর স্কলারশিপ হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধর।....কথা এখানে আর বাড়াবো না। শুধু বলবো আপনি দায়-দায়িত্বের যে কথা আপনি বলছেন তা পিতা হিসেবে পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করেছি। কিন্তু সমস্যা ছিল, ওরা আমার কাছে এসে থাকতে চাইত না। .....যে চিঠিটি জয়শ্রী প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছে সেখানে আমার সম্পর্কে যে কথাগুলো লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে সে 'ভণ্ড' বলেছে। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করবো না। কিন্তু 'রাজাকার মনোবৃত্তি' আর 'পরকীয়া প্রেমের' যে অভিযোগ সে আমার বিরুদ্ধে এনেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি দিগন্তে কাজ করেছি পেশাদার হিসেবে; আমি কখনোই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না, এখনো নেই। আমি ইত্তেফাকে দশ বছর কাজ করেছি....সিএসবি নিউজে কাজ করেছি (সিএসবি নিউজ সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরির। তো, এর জন্য যদি আমি রাজাকার হয়ে থাকি, তাহলে সময় টিভির মালিক আহমেদ জোবায়ের ভাই, নিয়াজ ভাই, তুষার আবদু্ল্লাহ, দানেস ভাই, প্রভাস দাসহ আরো শতাধিক সঙবাদকর্মী কী? উনারাওতো সেখানে কাজ করেছেন!) আমি চ্যানেল আইয়ে কাজ করেছি, আইইউবিতে কাজ করেছি। আর পরকীয়া প্রেমের কারনেই জয়শ্রীর সঙ্গে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে এ কথা সত্য। কিন্তু সেটা আমার পরকীয়া নয়, ওর নিজের পরকীয়া। ঘরে স্বামী থাকতে এবং দুটো ফুটফুটে চাঁদের মতো দুটি সন্তান থাকতে ১৪ বছর বিবাহিত জীবনের পর যদি কোনো স্ত্রী অন্য পুরুষকে প্রেমপত্র লেখে, তাহলে তার সঙ্গে কি বাস করা যায়?! একটি চিঠি প্রমাণ হিসেবে আমি রেখে দিয়েছি। ভেবেছিলাম, বড় হয়ে ছেলে যদি কৈফিয়ত চায় (মেয়ে চাইবে না, কারণ সে নিজেই তার স্বাক্ষী ছিল) তবে, তাকে ওই চিঠি দেখাবো। কিন্তু ছেলে আমার চলে গেছে। তাকে আর তা দেখাতে হবে না। .....জয়শ্রী প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে লিখেছে: '১৪ জুলাই ২০০৮ সালে' নাকি আমি মাহবুবাকে বিয়ে করেছি। এটা ঢাহা মিথ্যা কথা। তখন পর্যন্ত মাহবুবা আমাকে প্রপোজই করেনি। আমাদের বিয়ে হয়েছে ৭ নভেম্বর ২০০৮-এ। সে লিখেছে: আমার মেয়ে ছেঁড়া কাপড় পরেই 'ও' লেভেল পরীক্ষায় চারটি স্টারসহ আট/আটটি 'এ' পেয়েছে। এখানে ওই 'ছেঁড়া কাপড়' শব্দটা প্রতিকী অর্থেও সত্য নয়। ওর 'ও' লেভেলের ফাইনাল পরীক্ষার ফি হিসেবে আমাকে দিতে হয়েছে ৫৬,০০০ টাকা। যে ৫৬ হাজার টাকা দিতে পারে, সে তার মেয়েকে কাপড় কিনে দিতে পারে না, এটা কোন পাগলে বিশ্বাস করবে?!....এবার আমার অনুভূতির কথা বলছি। বেইজিংয় সময় রাত ২টায় যখন আমি বাচ্চাদুটোর মৃত্যুর কথা শুনলাম তখন প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি সারারাত ছটফট করেছি আর মনে মনে আশা করেছি একটি এসমএমএস আসবে মনমনের কাছ থেকে: আব্বু, আম্মুকে ভয় দেখিয়েছি। ...পরের দিন বেরা এগারোটা পর্যন্ত আমি কোনো ফোন ধরতে পারিনি, ভয়ে। শুধু দেখেছি কোনো এসএমএস আসে কিনা। আসেনি। বেলা এগারোটায় আমার অফিস কলগিরা সবাই যখন দল বেধে এলো, তখন বুঝলাম সব শেষ। পরবর্তী দু'টি দিন আমার কিভাবে কেটেছে আমি বলতে পারবো না। আমি এমনটি আমার বাবার ফোনও ধরিনি। (পরে শুনেছি, এটা নিয়েও প্রথম আলোতে রিপোট হয়েছে! হায়রে, সাংবাদিকতা!!) আমার বার বার মনে হচ্ছিল, আমি আমার বাচ্চা দুটোকে বাঁচাতে পারিনি...চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি। সারাক্ষণ ভেবেছি, কোথায় কোথায় ভুল করেছি আমি....এখনো ভাবি, কোথায় ভুলটা হলো....সবচে বড় কথা, দু'দিন আগেও মুহাম্মাদের বই কেনার জন্য আমার ভাতিজা আবদুল্লাহ ওদেরকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছে (আবদুল্লাহর হাতেই আমি ওদের প্রতি মাসে টাকা পাঠাতাম বা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে টাকা লাগলে পাঠাতাম)। তখনও কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না ওদের মধ্যে। কয়েকদিন আগে মুহাম্মাদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তাকে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে জিঙ্গেস কলেই বললো, আম্মু জানে। আমার ছেলেটা কম কথা বলতো।......দিদি, আমার এ কথা গুলো আপনারা কেউ বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এগুলো সত্য। আরো অনেক অনেক কথা আছে। কিন্তু এখানে বলার প্রয়োজন মনে করি না। আমি হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বীকার করছি। কিন্তু সেসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষ্রেত্রেও বাচ্চাদের কথা আমি সবার আগে ভেবেছি। কিন্তু সে সব সিদ্ধান্ত সবক্ষেত্রে ক্লিক করেনি। কারণ, এখানে অনেক ফ্যাক্টারস জড়িত। চীনে আসার ব্যাপারে পত্রিকাগুলো অনেক মিথ্যাচার করেছে। আমি নতুন বৌ নিয়ে মোটেই এখানে মজা করছি না। আমাকে এখানে প্রচণ্ড খাটাখাটনি করতে হয়। চীন বেতারের বাংলা বিভাগের পরিচালক ম্যাডাম ইয়ুকে আপনি জিঙ্গেস করে দেখুন। আমাদের এখানে কাজ বেড়েছে, কিন্তু বেতন বাড়েনি। এখানে বাঙলাদেশের তুলনায় খানিকটা বেতন বেশি। তাই বাচ্চাগুলো বেশি টাকা পাঠাতে পারছিলাম। চীনে না এলে গত মে মাসে মেয়ের এ লেভেলের ফাইনাল এক্সামের ফি বাবদ ৭৫ হাজার টাকা আমি হয়তো দিতে পারতাম না। চীনে এসেছি দু'বছরের ওপর। একমাত্র মহাপ্রাচীর আর ফরবিডেন সিটি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ বা সময় আমি পাইনি। আমার মেয়ে একটা এসএমএস পাঠিয়ে বলতো: কল মি নাও। এমন হয়নি যে আমি সাথে সাথে ফোন করিনি। সেটা রাত দুটো তিনটে হলেও।...আমি মহামানুষ নই। কিন্তু এতোটা খারাপ্ও নই, যতটা পত্র-পত্রিকাগুলো গত কয়েকদিন ধরে লিখেছে। আপনাদের কী মনে হয়: আমি আমার বাকি জীবন এক মুহূর্তের জন্যও বাচ্চা দুটোকে ভুলে থাকতে পারবো? আরেকটি কথা: আপনি আপনার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমার বাচ্চা দুটো আত্মহত্যা করেছে। কী করে নিশ্চিত হলেন? এখনো, যতদূর জানি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসেনি। ব্যাপারটাতো হত্যাকাণ্ডও হতে পারে! প্রথম আলোর রিপোর্টে নাকি এ ধরনের সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। আমি কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। আপনারা যারা এতক্ষণ আমার কথাগুলো পড়েছেন, তারা সবাই বিশ্বাস করবেন এমনটা আমি মনে করি না। কিন্তু আমি জানি, এই নিস্পাপ বাচ্চা দুটোর জন্য আপনাদের মনে ভালোবাসা আর মমতা আছে। আপনারা ওদের জন্য দোয়া করবেন। মেয়েটা আমার ইউরোপীয় মেয়েদের মতো সুন্দর হতে চাইত। বলতো, আব্বু, বেহেশতে গেলে কি আমি ওদের মতো সুন্দর হতে পারবো? আমি বলতাম: তারচে কোটিগুণ বেশি সুন্দর হয়েই তুমি বেহেশতে যাবে। আল্লাহ যেন তার মনে আশা পুরণ করেন। পুনশ্চঃ আমি দিদি প্রশ্নের উত্তরে এতো কথা লিখলাম ব্যক্তি আলিমুল হক হিসেবে নয়, পিতা আলিমুল হক হিসেবে। কোনো শিশু যেন মনে না করে যে, পিতা আলিমুল হক জঘন্য। এটা ভেবে যদি একটি শিশুর মনেও তার নিজের পিতার সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মায়, তাহলে সেটা হবে আমার কাছে খুবই কষ্টের একটা বিষয়।

No comments:

Post a Comment