Sunday, September 14, 2014

আইএসআইএস নির্যাতনের অভিজ্ঞতা জানাল ইয়াজিদি তরুণী

 ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
"দিনভর নানা রকম লোক আসে৷ তাদের সঙ্গে আমাদের যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হয়৷ চাকরের মতো খাটায় আমাদের৷ পান থেকে চুন খসলে মারধর তো বটেই, আগ্ণেয়াস্ত্র উঁচিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়৷" ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস-এর এমনই নৃশংস ও ভয়াবহ অত্যাচারের কথা উঠে এল অপহৃত এক  ইয়াজিদি নাবালিকার বক্তব্যে৷
মেয়েটির অনুরোধেই তার আসল নাম প্রকাশ করা যায়নি৷ ইউরোপে গিয়ে পড়াশোনা করে একসময় বড় হওয়ার স্বপ্ণ দেখত যে মেয়ে, সেই মেয়েই এখন অপহৃত ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস-এর হাতে৷ আর যে জঙ্গি সংগঠন এতদিন ধরে দাবি করেছে তারা শিশু ও বিধবা মহিলাদের সম্মান করে৷
কিন্তু এই নাবালিকা কিশোরীর জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতাই জঙ্গিদের দাবি খআরিজ করে দিয়েছে৷ গত ৩ আগস্ট ইরাকের সিনজর থেকে জঙ্গিরা তাকে অপহরণ করে৷ মিয়ামি (নাম পরিবর্তিত) তার বাবা-মা কুর্দিস্তানের বাসিন্দা৷ তাঁদের কাছ থেকে ফোন নম্বর পেয়ে মিয়ামির সঙ্গে কথা বলে একটি ইটালিয়াম সংবাদপত্র সংস্থা৷ অপহরণকারীদের এখানে কীরকম জীবন কাটাচ্ছে, তা বিশ্বকে জানাতে এই সাক্ষাত্কারের অনুমতি দেওয়া হয়৷
মিয়ামি জানিয়েছে, সে যেখানে বন্দি সেখানে ১২-৩০ বছরের ৪০ জন মহিলা  রয়েছে৷ অস্ত্র দেখিয়ে তাদের আটকে রাখা হয় অন্ধকার ঘরে৷ সেখানেই চলে যৌন নির্যাতন৷ কখনও সিরিয়া থেকে লোকেরা আসে৷ তাদের সঙ্গে যৌন সংসর্গে বাধ্য করা হয় সদ্য কিশোরীদের৷ সেই অত্যাচার দিনের পর দিন সহ্য করতে করতে কথাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কয়েকজনের৷ মিয়ামির কথায়, ‘‘আমার মনে হয় এই অন্ধকারের কোনও শেষ নেই৷ মনে হয় মারতে মারতে ওরা কেন আমায়ে প্রাণে মেরে ফেলে না৷ তা হলে হয়তো বেঁচে যাব৷ কিন্তু ওরা এত কাপুরুষ প্রাণে মারে না৷"
অন্ধকার ঘরে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় দিন কাটছে মিয়ামির মতো আরও অনেক মেয়েদের৷
অ্যামনেস্টি ইণ্টারন্যাশনালের রিপোর্ট বলছে ইসলামিক এই জঙ্গিরা শেষ মাসে সিরিয়া থেকে হাজারেরও বেশি বিভিন্ন্ বয়সী মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে৷
মিয়ামির কথায়, ‘‘কখনও মনে হয় মরে যাই৷ জলে ঝাঁপ দিই৷ জীবনটা শেষ করে দিই৷ কখনও মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা জাগে৷ মনে হয় হয়তো কখনও এই নরক থেকে উার পাব৷ আবার বাবা-মাকে  একবার জড়িয়ে ধরতে পারব৷" এমন অত্যচারেই জীবন শেষ হয়ে যাবে বুঝতে পেরে অনেকেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে৷
শুধু এই অত্যাচারেই শেষ নয়৷ মিয়ামির মতো মেয়েদের হাতে ফোন ধরিয়ে জোর করে বাবা-মাকে ফোন করে এই যৌন অত্যাচারের কাহিনি বলতে বাধ্য করা হয়৷
শেষে সে জানায়  " আমার শরীর তো ওরা আগেই শেষ করে দিয়েছে৷ এবার আমার আত্মাকেও তিল তিল করে মেরে ফেলছে৷ আমি জানি না কোনওদিন এই নরক থেকে বেরোলেও, এই ভয়াবহ স্মৃতি মন থেকে মুছতে পারব কি না?'

No comments:

Post a Comment