Tuesday, September 16, 2014

সাঈদীর দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত রায় বুধবার

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল দুটির রায় ঘোষণা আগামীকাল বুধবার । প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে আপিল দুটির রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকার ১ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
  সাাঈদীর চুড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে দেশের সবগুলো কারাগারে- জনকন্ঠকে বললেন, মহাকারাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখারউদ্দিন । তিনি বলেন , শ্রীপুরে জঙ্গী ছিনতাই ঘটনার পর থেকে যুদ্ধাপরাধ মামলা , বোমা হামলা মামলার মতো চাঞ্চল্যকর মামলার সময়ে র‌্যাব , পুলিশ সহ নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করি আমরা। সাম্প্রতিক সময়ে বাজাওে একটি বই ছেড়ে বলা হয় , কারাগার থেকে এই বইটি লিখেছেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী । এ প্রসংগে কারামহাপরিদর্শক বলেন ,  এই বইতে কারাগারের কোন কথা নেই । বইটি
সাঈদী আগে লিখেছেন । কারাগারে কোন বই লিখেন নি বলেই সাঈদী নিজে  কারাকর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বললেন কারামহাপরিদর্শক

দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষনার পর যে সহিংসতা ছড়ানো হয়েছে-সেই ভয়াবহতা প্রতিরোধে আমরা সব রকমের প্র¯তুতি গ্রহণ করেছ বলে জানালেন পুলিশের
মহাপরিদর্শক হাসা মাহমুদ খন্দকার। 
এর্টনী জেনারেল মাহবুবে আলম জনকন্ঠকে বলেন,  দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর চল্লিশ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিরীগ মানুষকে  নির্বিচার হত্যার মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছেন, সেটা  আদালতে প্রমাণ হয়েছে । সেই  অনুযায়ী  বিজ্ঞ আদালত সাঈদীর অপরাধের  সর্বোচ্চ  সাজা মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে আসামি পক্ষ ঘুরেফিরে এটাই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে যে রাজাকার সাঈদী এবং জামায়াত নেতা সাঈদী এক ব্যক্তি নন। তাদের আবেদনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যনালের বিচারকবৃন্দ তাদের রায়ে  বলেছেন “ আমরা যে রায়  ঘোষণা করেছি , তা চল্লিশ বছর আগের ‘দেল্লা রাজাকারের বিরুদ্ধে’  , বর্তমান সময়ের আলোচিত  ধর্মীয় আলোচক বা সুবক্তা’  সাঈদীর পরিচিতি রায়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন আদালত। এর্টনী জেনারেল মাহবুবে আলম জনকন্ঠকে বলেন, এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকবে বলেই আমার প্রত্যাশা  ।
৭৪ বছর বয়সী সাঈদী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে কারাবন্দি সাঈদী। মা ও ছেলের মৃত্যুর পর দুই দফায় কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন পিরোজপুর থেকে দুই বার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দিলে সহিংস বিক্ষোভে নামে জামায়াতকর্মীরা।
সাঈদীর রায় দেওয়ার সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ফজলে কবীরও আসামির সুবক্তা পরিচিতি,সংসদ সদস্য হওয়া, জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বলেছিলেন, “আজ যার বিরুদ্ধে মামলার রায় দেয়া হচ্ছে, তাকে জানতে হলে আমাদের চল্লিশ বছর পেছনে তাকাতে হবে। তখন পিরোজপুরে সাঈদীকে মানুষ চিনত `দেলু'  নামে।”
এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।দুই পক্ষের আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এখন চূড়ান্ত রায় দেবে আপিল বিভাগ।  রায়ে বলা হয়, “সেই সময়ের ৩০ বছরের যুবক সাঈদী ছিলেন রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য। উর্দু ভাল বলতে পারতেন বলে পাকিতানি সেনাদের সব অপারেশনেই তিনি তাদের সঙ্গে ছিলেন।” তাদের এই রায় আপিল বিভাগেও বহাল থাকবে বলে আশা করছেন বললেন  রাষ্ট্রপক্ষের  অন্যতম কৌসুলি ব্যারিষ্টার  তুরিন আফরোজ জানান।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি মামলা রায়ের অপেক্ষায় আছে৷ এর একটি আপিল বিভাগে, দুটি ট্রাইব্যুনাল-১-এ এবং একটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ আছে৷ এগুলোর মধ্যে তিনটি মামলার শুনানি শেষ হয়েছে এক থেকে দুই মাস আগে৷আপিল বিভাগে চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় থাকা মামলাটি জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর৷ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আছে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও ফরিদপুরের বিএনপির নেতা পলাতক জাহিদ হোসেনের মামলার রায়৷ আর ট্রাইব্যুনাল-২-এ রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মামলা৷সাঈদীর চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা: ৫০ কার্যদিবস শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল সাঈদীর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষ হয়৷ তবে রায় ঘোষণা হয়নি এখনো৷ গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-১ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন৷

এর আগে আপিল নিষ্পত্তি হওয়া একমাত্র মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা করতে আপিল বিভাগ প্রায় দুই মাস সময় নিয়েছিলেন৷ গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কাদের মোল্লাকে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ, তারও প্রায় তিন মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়৷ ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার সাজা কার্যকর হয়৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের ঘটনা সেটিই প্রথম ৷ কার্যত ছয় মাস ধরে ঝুলছে নিজামীর রায় ৷ তিন দফায় মামলার কার্যক্রম শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনো রায় ঘোষণা হয়নি৷ নিজামীর বিরুদ্ধে করা মামলার রায় প্রায় ছয় মাস ধরে ঝুলে আছে৷
প্রথম দফায় নিজামীর মামলার কার্যক্রম শেষ হয় গত বছরের ১৩ নভেম্বর৷ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা টানা ৮৪ ঘণ্টা হরতালের জন্য নিজামীর আইনজীবীরা চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপনের নির্ধারিত দিনে আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন৷ এ জন্য ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত করে দেন৷ কিন্তু পরে আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ চাইলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন৷ ২০ নভেম্বর আবারও মামলার কার্যক্রম শেষ হয়৷ কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর৷ এরপর দীর্ঘ ৫৩ দিন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়নি সরকার৷ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর নিজামীর মামলায় দুই পক্ষ আবার নতুন করে যুক্তি উপস্থাপন করে৷ ২৪ মার্চ তৃতীয় দফায় রায়ের অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু হয়৷
দুই ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে নিজমীর মামলাটিই সবচেয়ে বেশি সময় (২৬ মাস) ধরে চলছে৷ ২০১২ সালের ২৮ মে নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-১-এ তাঁর বিচার শুরু হয়৷ একই দিনে ট্রাইব্যুনাল-২-এ কাদের মোল্লার বিচার শুরু হয়েছিল৷ নিজামীর মামলায় ১৭ মাস ধরে দুই পক্ষের ৩০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়৷ ওই সময়ের মধ্যে কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যায়৷
ট্রাইব্যুনাল-১ এ পর্যন্ত তিনটি মামলার রায় দিয়েছেন৷ সাঈদীর মামলার রায় দিতে এই ট্রাইব্যুনালের এক মাস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায় দেড় মাস ও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের রায়ের জন্য দুই মাস সময় নিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল৷
ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপির নেতা পলাতক এম এ জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার রায়ও গত এক মাসে ঘোষিত হয়নি৷ গত ১৭ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটির কার্যক্রম শেষ হয়৷ একাত্তরে স্থানীয়ভাবে ‘খোকন রাজাকার’ নামে পরিচিত জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৯ অক্টোবর ১১টি অভিযোগের বিচার শুরু হয়৷
এটি আসামির অনুপস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের তৃতীয় মামলার বিচার৷ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদ এবং একাত্তরের আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলা দুটির বিচার হয় আসামির অনুপস্থিতিতে৷ বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর পালিয়ে যান৷ । মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিদেশে চলে যান, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি৷
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষ হয় ৪ মে৷ ওই দিন মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় রাখেন ট্রাইব্যুনাল-২৷
এই ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ছয়টি মামলার রায় দিয়েছেন। অপেক্ষমাণ রাখার পর রায় ঘোষণা করতে ট্রাইব্যুনাল-২-এর গড়ে এক মাস করে সময় লেগেছে৷ সবচেয়ে বেশি ৪১ দিন সময় লেগেছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসানে মাহাম্মাদ মুজাহিদের মামলার রায় দিতে৷ আর সবচেয়ে কম সময় (২৫ দিন  ) লেগেছে পলাতক বাচ্চু রাজাকারের চুড়ান্ত রায় দিতে।


No comments:

Post a Comment