Saturday, July 20, 2013

ক্যানাডা'র ইসলামী সংগঠন "মুসলিমস ফেসিং টুমরো" - ইসলামের মুখোশে আহমাদ শফি এ যুগের আবু লাহাব


আমরা ইউটিউবে অত্যন্ত বিতৃষ্ণার সাথে নারী সম্পর্কে আহমাদ শফি’র বক্তৃতা দেখেছি। তাঁকে তাঁর সমর্থকেরা ইসলামের উঁচু পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তিনি কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, হেফাজত-এ ইসলাম বাংলাদেশে-এর আমীর ও একটি মাদ্রাসার পরিচালক। কিন্তু তাঁর বক্তৃতা শুনে রসুল (স:)-এর উদ্বেগ মনে পড়েছে, “ইসলাম শুরু করার সময় ছিল অপরিচিত, ইসলাম আবারো অপরিচিত হয়ে যাবে”।
তাঁর বক্তৃতায় রসুলের এই সতর্কবাণী সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ইসলামে নারীর অবস্থান ও ইসলামের বাণী সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই নেই।
কোরান নারী-পুরুষকে সমান অংশীদার করেছে। দুজনেরই সৃষ্টি একই উৎস থেকে, কেউ কারো চেয়ে উৎকৃষ্ট নয় এবং সমাজ ও পরিবারের মঙ্গলের জন্য দুজনেরই সমান দায়িত্ব রয়েছে। তাঁর উদ্ভট দৃষ্টিতে পুরুষের চেয়ে নারী নিকৃষ্ট ও সামাজিক ব্যাধির উৎস। কোরান যেখানে পুরুষের সাথে নারীরকেও ”মু’মিনাত” ও ”মুসলিমাত” বলে সম্বোধন করেছে, শফি সেখানে নারীকে হীনভাবে তেঁতুল বানিয়েছেন, যা পুরুষকে ব্যভিচারে প্রলুব্ধ করে। সুরা নিসা নাজিলই হয়েছে নারীর ওপরে; সেই সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে নারীর অবস্থান উন্নত করেছে যেখানে আগে গোত্রীয় সমাজে শিশুকন্যাকে মেরে ফেলা হত। এর শ্বাশ্বত বাণী হলো যুগে যুগে নারীর উন্নত করে পুরুষের সমান করতে হবে। এর অর্থ হল সময়ের বিবর্তনে নুতন নুতন পরিস্থিতিতে অবশ্যই নারীর অধিকার পুরুষের সমান করে হবে কারণ এভাবেই সমাজের কল্যাণ ও অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।
কিন্তু শফি’র বক্তৃতা কোরানের শিক্ষার বিপরীত। তিনি নারীশিক্ষার নিন্দা করেছেন, পেশাজীবী নারীরা সমাজে উস্কানী দিয়ে ব্যভিচার ছড়ায় বলে অপমান করেছেন, এবং নারীকে গৃহবন্দী করার দাবী করেছেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী, বাইরে নারীর উপস্থিতি নিয়ে ক্রুদ্ধ হয়েছেন, এবং তিনি বলেছেন নারীর একমাত্র কাজ হলো পুরুষের স্বার্থ রক্ষা করা ও সন্তান পালন করা। এটা সুস্পষ্ট যে কোরান ও রসুলের ঐতিহ্য সম্পর্কে শফির জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তাঁর কথায় প্রতিফলিত হয়নি নবুয়ত পাবার আগে পরে বিবি খাদিজা’র শক্তি, প্রজ্ঞা ও সম্পদের ওপরে রসুল (স:) কি বিপুলভাবে নির্ভর করেছেন। স্বনির্ভর নারী হিসেবে বিবি খাদিজার উদাহরণ থেকে সর্বত্র সর্বকাল শিক্ষা নিতে হবে। দরিদ্র ও পশ্চাদপদ জাতির জন্য এ শিক্ষা আরো প্রয়োজনীয় যে, শক্তিশালী ও স্বনির্ভর নারীরা পরিবার ও সমাজের অগ্রগতির শক্তির উৎস যে সমাজে নারী-পুরুষ সমান সম্মান ও অধিকার নিয়ে সন্তানদের গড়ে তোলে।
কোরানে যে নারীকে ইসলামের প্রতি ঘৃণার জন্য নিন্দা করা হয়েছে সে হল রসুলের দুই শত্রু চাচা আবু লাহাবের স্ত্রী ও আবু সুফিয়ানের বোন। ইসলামের মুখোশে আহমাদ শফি এ যুগের আবু লাহাব। এদের জন্যই মুসলিম সমাজের একটা অংশ এখন এত অজ্ঞ, এত পশ্চাদপদ ও এত জঙ্গী। এদের জন্যই রসুলের পরে যুগে যুগে মুসলিম উম্মাহ’র অধ:পতন হয়েছে যার সতর্কবাণী তিনি করেছিলেন। আহমাদ শফি শঠ এবং অজ্ঞ দুটোই। বাংলাদেশের ভেতরে-বাইরে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের উচিত তাঁকে সম্পূর্ণ বর্জন করা।
লেখক পরিচিতি: রাহিল রাজা ও ড. সলিম মনসুর, যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, মুসলিম’স ফেসিং টুমরো

এদের আর সুযোগ দেয়া যায় না! -সুমি খান

daily janakantha 19th July 2013

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-07-19&ni=142811

daily janakantha 20th July 2013
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-07-20&ni=142951

daily janakantha 21st July 2013

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-07-21&ni=143077

মিতানূরের মৃত্যু নিয়ে ছেলে প্রিয়-র খোলা চিঠি: তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিলাম আমি-তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন



নানা রকমের গুঞ্জনে অভিনেত্রী মিতা নূরের মৃত্যু রহস্যের জট যেন আর খুলছেই না। পুলিশ এমনকি তার পরিবারও কুল কিনারা করতে পারছেনা ঠিক কি কারণে তিনি এতো বড় প্রাণঘাতি সিদ্ধান্ত নিলেন। এই রহস্য নিয়ে নানা তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। মিতানূরের লাশের ময়নাতদন্তে আঘাতের আলামত পাওয়া গেলেও অভিযোগ করেননি মিতা’র পরিবারের কেউ-ই। রহস্যজনক কারণে সুষ্ঠু তদন্তের আবেদন করা হয়নি। দুই পরিবারের আপস-রফার তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষিতে মিতা নূরের বড় ছেলে শেহজাদ নূর প্রিয় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। এর সার সংক্ষেপ পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।
আমার দেখা সবচেয়ে সংবেদনশীল ও বুদ্ধিমতী নারী হচ্ছেন আমার মা। তিনি সচেতন থাকলে এ ধরনের কাজ করতেন না। অনেক সংবাদ মাধ্যম ভুলভাবে তাকে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু আমি সবাইকে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে বলতে চাই, তার একটি সুখী ও অসাধারণ পরিবার ছিল। মতানৈক্য পৃথিবীর প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র পরিবারেই থাকে, তবে এখানে তেমন সিরিয়াস কিছু ছিল না।
আমার মা’র হয়তো অনেক বন্ধুই ছিলেন, তবে তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিলাম আমি। হয়তো আমি কখনওই সেটি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করিনি। হয়তো আমি কখনওই এটি বুঝতে পারিনি যে, তিনি আমাকে কতটা ভালবাসতেন। তার মৃত্যুর আগের শেষ এক মাস মা অনেকগুলো ব্যাপারে বিষাদগ্রস্ত ছিলেন। যেগুলোর বেশির ভাগই খুব ছোটখাটো বিষয়। তার অনেক মানুষের সঙ্গেই ছোট ছোট মতানৈক্য ছিল, যার মধ্যে আছে আমার বাবা এবং তার বাবা এবং আরও অনেকে। তবে সেগুলো খুবই সাধারণ মতপার্থক্য। তিনি সে সবের ব্যাপারে আমাকে সবই বলেছিলেন এবং আমি তাকে সবসময় বলেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এখানে দুশ্চিন্তার কিছুই নাই। তবে আমার আরও অন্য কিছু করা উচিত ছিল। কিন্তু তারপর ব্যাপারগুলো আরও খারাপ হতে থাকে এবং তিনি সম্ভবত খুব খারাপ বোধ করেছিলেন।

মার যখন খুব খারাপ লাগতো তখন তিনি ঘুমাতেন। অনেক বেশি সময় ঘুমানোর জন্য তিনি ঘুমের ওষুধ খেতেন। তিনি তার জীবনের শেষ দিনও এই একই কাজ করেছিলেন। তবে ওই রাতের ব্যাপারটি অন্যরকম ছিল। ওই ঘুমের বড়িগুলো তার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছিল। আমি জানি, এটা তিনি নিজে থেকে করেননি। কিন্তু তার বিষাদগ্রস্ততা আর ওই ঘুমের বড়িগুলোর প্রতিক্রিয়া থেকেই এটি হয়েছিল। তা না হলে পৃথিবীর সব ছাড়লেও তিনি কখনও আমাকে আর ভাইকে একা ফেলে যেতেন না। তিনি সবসময়ই কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমার সঙ্গে পরামর্শ করতেন। এমনকি এটি সামান্য একটি ব্যাপার হলেও। তিনি যেটি করেছেন এটি তার সিদ্ধান্ত ছিল না। আমি জানি তিনি আমাদের সবাইকে অনেক ভালবাসতেন। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আমি তাকে ভালবাসতাম এবং সবসময় বাসবো। তিনি আমার চিন্তা, স্বপ্ন, জীবন, ভাবনা সবকিছুকে সম্মান করতেন এমনকি নিজের চেয়ে বেশি। আমি যদি আমার জীবনে কোনদিন সফল হই, তার পেছনের পুরো কৃতিত্বই আমার মায়ের। আমার মা এখনও আমার মধ্যে আছেন। তিনি আমাকে সবসময়ই বলবেন কি করবো আর কি করবো না।

যা-ই হোক বেশ কিছু টেলিভিশন এবং পত্রিকা যা দাবি করেছে- তা সত্য নয়। আমার মা দুর্বলচিত্তের নারী ছিলেন না। তিনি দৃঢ়চেতা, স্মার্ট, সংবেদনশীল এবং চমৎকার মানুষ ছিলেন। যা হয়েছে তিনি তা চাননি। বরং যেটি হয়েছে তা হলো, তখন তিনি সচেতন ছিলেন না। হয়তো এর বেশির ভাগই আমার ভুল কারণ, আমি আমার মাকে বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয়, আমি ভাল ছেলে নই। কিন্তু আমি এটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, মা যা করেছেন তিনি তার বোধ-বুদ্ধিতে করেননি। এখন আমি মাকে যেটি বলতে পারি, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি মা। শান্তিতে থাকো। যতদিন তোমার সঙ্গে আমার দেখা না হবে, আমি প্রতিদিন তোমাকে দেখতে যাবো।’ নিউজ মিডিয়াগুলো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ভুল জিনিস লেখা বন্ধ করতে পারলে আমি সেটা উৎসাহিত করবো। তাদের গল্পগুলোর কারণে আমি এইসব লিখতে বাধ্য হয়েছি। আমি আশা করি, সত্য একদিন উন্মোচিত হবেই।
আমার মায়ের নিষ্কলঙ্ক খ্যাতি এবং নিষ্কলুষ চরিত্র। সবাই জানেন, তিনি আমার, আমার ভাইয়ের এবং বাবার সঙ্গে কতটা সুখী ছিলেন। তাদের দাম্পত্য জীবন ২৪ বছরের এবং মাত্র সপ্তাহ দুই আগে আমরা তাদের ২৪তম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেছি। মা এমন একজন মানুষ যাকে আমার সারা জীবন খুঁজে ফিরতে হবে। তার শিক্ষা, উপদেশ, চিন্তা আমাকে এবং আমার ভাইকে সারা জীবন পথপ্রদর্শন করার জন্য যথেষ্ট। আমরা দু’জন অবশ্যই একদিন তার মুখ উঁচু করবো, ইনশাল্লাহ…।
আমি“তোমাকে ভালবাসি মা।”

Thursday, July 18, 2013

মর্মান্তিক ত্যাগের ইতিহাস আর অবমূল্যায়নের চিরাচরিত কাহিনী! -মাহবুবুল হক শাকিল


গৌরিপুর জংশনঃ ১৯৭১

১৯৭১ সাল। এপ্রিলের শেষেই মুক্ত গৌরিপুরের পতন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দখলে সবকিছু। গৌরিপুরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রাঁয় সবাই যোগ দিয়েছেন ১১ নম্বর সেক্টরে, পার্শ্ববর্তী পূর্বধলা থানার কাজলা গ্রামের মেজর তাহেরের সেক্টরে।

তেমনি এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিম। কাজলা গ্রাম থেকে মেজর তাহেরের মা এবং বোনদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে পৌছে দেয় ভারতে। হাসিমের তখন দুই মেয়ে, দুই ছেলে। নাবালক দুই ছেলে তার সাথে ভারতে পাড়ি দিলো, দুই কন্যা নানাবাড়ির নিরাপদ আশ্রয়ে, নেত্রকোনার সুসং-দুর্গাপুরে।

হাসিমের বাড়ী গৌরিপুরের শালিহরে। সেখানেই বসবাস ধনী গৃহস্থ মধূসূদন করের। তারও চার ছেলেমেয়ে। বড়ো মেয়ে সুপ্রিয়া ধর, তারপর সুপ্রিয় ধর, সুব্রত শংকর ধর, সাড়ে তিন বছরের সুপ্রীতি ধর।

ময়মনসিংহ শহর থেকে পালিয়ে আসা ধনবান হিন্দুরা তার বাড়ীতে আশ্রিত। ৫০ থেকে ৬০ জন। সঙ্গে কন্যারা, তরুণী।

১৬ মে। দুপুর বেলা। হঠাৎ করেই পাকি হানাদারদের আগমন। মনোরঞ্জন ধরের বাড়ীতে। পাকিরা খবর পেয়েছে বাঙালি রাজাকারের কাছ থেকেই। মনোরঞ্জন বাবু ভারতের দালাল।

পাকি জারজরা আসার খবর মনোরঞ্জন বাবু পেলেন তার দীর্ঘদিনের বাৎসরিক কর্মচারী পাঞ্জর আলীর কাছ থেকে। পাকি জারজেরা শর্ত দিলো, মনোরঞ্জন যদি আত্মসমর্পণ করেন তবে কাউকে আর কিছু করা হবেনা।

অসীম-সাহসী মনোরঞ্জন পরিবার এবং আশ্রিতদের বাঁচানোর জন্য পাকিস্তানী হায়েনাদের কাছে এলেন। বাংলা, ইংরেজি ও উর্দুতে তাদের সাথে কথা বললেন। ওরা তাকে নিয়ে গেলো আরো কথা বলার জন্য। সঙ্গে গেলো বিশ্বস্ত কর্মচারী ষাটোর্ধ্ব পাঞ্জর আলী।

গৌরিপুর জংশন। মনোরঞ্জন কাকাবাবুর শেষ কথা ছিল পাঞ্জর আলীর সাথে- "ভাই, আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারবি?" পাজ্ঞর আলী পারেনি।

আমাদের মনোরঞ্জন আর ফিরে আসেননি।

২১ আগষ্ট, ১৯৭১ সাল। আবারো পাকবাহিনীর আক্রমন। লক্ষ্যস্থল আবারো শালিহর। এবারের টার্গেট-মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিমের বাড়ী। ষ্টেশনমাষ্টার অবাঙালি, বিহারি সলিমুদ্দিন পথপ্রদর্শকের ভূমিকায়।

আবুল হাসিমের বাবা গ্রামীণ ব্যবসায়ী সাবেদ হোসেন ব্যাপারী এবং ১৩ জন নিম্নবর্গীয় হিন্দুসহ ১৭ জনকে সেদিন তুলে নেয়া হলো। গৌরিপুর জংশন থেকে গুডস ট্রেন রওনা দিলো অজানা গন্তব্যের দিকে। স্বাধীন দেশে এই মানুষগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাদটিকাঃ
১.বর্ণিত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিম আমার কন্যার নানা।
২. ১৯৭৩ এর নির্বাচনে আবুল হাসিম বা ১১ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার তার চাচাতো ভাই তোফাজ্জল হোসেন চুন্নু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। পেয়েছিলেন এবং এমপি হয়েছিলেন এডভোকেট নাজিমুদ্দিন আহমেদ তিনি ১৯৮৮ সালে জামাতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছিলেন।
৩. আবুল হাসিম সাহেব ২০১২ সালের ১৫ আগষ্ট মৃত্যুবরণ করেন ( কি অদ্ভূত যোগাযোগ!)

অভিনন্দন টিউলিপ!!


“আমি যদি বাংলাদেশে গিয়ে দাঁড়াতাম, আপনারাই কিন্তু বলতেন, ডায়নেস্টি পলিটিকস। নিজে পেরেছ করতে, না কি তোমার ফেমিলি থ্রু নিয়ে করছ,” বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। যুক্তরাজ্যের আগামী সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত করার পর বৃহস্পতিবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন টিউলিপ।

কিলবার্নের একটি রেস্তোরাঁয় সদ্য বিবাহিত টিউলিপের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন মা শেখ রেহানাও, যাকে সচরাচর এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায় না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে কিলবার্নে তার নির্বাসিত জীবনের স্মৃতিচারণ করে মেয়ের জন্য প্রবাসী বাঙালিদের ভোট চেয়েছেন।
গত রোববার লেবার পার্টির মনোনয়নযুদ্ধে জয়ী ৩১ বছর বয়সি টিউলিপ বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলোকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে সপ্রতিভ ভাবে নিজের রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন।

রাজনৈতিক পরিবারের এই সন্তান বলেন, “আমার উদ্দেশ্য মানুষকে সাহায্য করার, বাংলাদেশে বলেন, চায়নায় বলেন, আমেরিকায় বলেন, ইংল্যান্ডে বলেন, মানুষের সমস্যা তো সব জায়গায় থাকে। মানুষের সাহায্য সব জায়গায়ই লাগে। আমার ডিউটি হল গিয়ে মানুষের কাজ করা।”

প্রবাসে রাজনীতিতে লেবার পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী টিউলিপ।ধীরে ধীরে নিজের আসন তৈরি করে এখন হাউস অফ কমন্সে যাওয়ার পথে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনী। এক্ষেত্রে নিজের চেষ্টাই মুখ্য তার কাছে।“আমি এখানে এসে প্রথমে কাউন্সিলর হলাম। লেবার পার্টিতে আমি গর্ডন ব্রাউনের জন্য কাজ করেছি। তারপরে পলিসি অ্যাডভাইসর হিসেবে কাজ করেছি। এরপর আস্তে আস্তে নমিনেশনটা পেয়ে এখন পার্লামেন্টে ঢুকছি। আমি নিজেই করেছি, আমি চাচ্ছি যে আমি নিজেই (নিজের চেষ্টায়) পার্লামেন্টে ঢুকি।”

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী বর্তমানে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য, তিনিও বিরোধী দল লেবার পার্টির। টিউলিপ নির্বাচিত হলে তিনি হবেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বাংলাদেশি।

টিউলিপ ২০১০ সাল থেকে ক্যামডেন কাউন্সিলের সদস্য। এই কাউন্সিলে তিনিই প্রথম বাঙালি নারী।লেবার পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ক্যামডেনের আরেক কাউন্সিলর স্যালি গিমসন ও হ্যাকনি বারার ডেপুটি মেয়র সোফি লিন্ডেন। তবে ভোটাভুটিতে রায় পক্ষে আনেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ রেহানাও বলেন, “ও (টিউলিপ) নিজের প্রচেষ্টায় এত দূর এসেছে, এখানে আমার কোনো সাহায্য নেই। আমি মা হিসেবে দোয়া করি, যতটুকু সাহায্য করার আমি করি, আপনারা ওকে দোয়া করবেন। যেন নানার নাম রাখতে পারে।”

এক সময়ের পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসনের আসনে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচিত হলে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা সবার জন্য যেন থাকে, তা নিশ্চিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন টিউলিপ।

“ইনশাল্লাহ আমি যদি জিতি,,, আমাদের সবাই এখানে যেন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে ইক্যুয়াল এক্সেস পায়। বলতেছে যে এ এন ই ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে; আমাদের ভীষণ ক্ষতি হবে, যদি এ এন ই ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। আমি ক্যাম্পেইন করব এই এএনই ডিপার্টমেন্ট খোলা রাখার জন্য। আমাদের ওয়ার্ল্ড ফ্রি হসপিটাল প্রটেক্ট করার জন্য।”

যে আসনে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন, স্বামী ব্যবস্থাপনা পরামর্শক ক্রিস্টিয়ান পার্সির সঙ্গে এই এলাকাতেই থাকেন টিউলিপ।
“অনেকে জিজ্ঞাস করে, তুমি এখানে দাঁড়ালে কেন। হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে। আমি তো বড় হয়েছি হ্যাম্পস্টেড কিলবার্ন এলাকায়। আমি এখানে স্কুলে পড়ছি, এখানে আমি আমার হাসবেন্ডের সঙ্গে থাকি।”

“আপনার এটা নাও জানতে পারেন। ১৯৭৫ এর পর বাংলাদেশে পুরো পরিবার যখন মারা গেলেন, আমার মা এখানে এসেছিলেন। জাস্ট এই রাস্তার পাশের রাস্তায় ছিলেন। এজন্য আমার জন্য এই কনস্টিটিউন্সিটা খুবই ইমপোর্টেন্ট। আমি এই কনস্টিটিউন্সিতে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই।”সবার ন্যূনতম আয় বাড়াতে চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন লেবার পার্টির এই সদস্য, যার সংবাদ সম্মেলনের পেছনের পর্দাজুড়ে লেখা ছিল- ‘ভোট লেবার’।

মনোনয়ন নিশ্চিত করলেও নির্বাচিত হওয়ার কাজটি যে কঠিন, তা উপলব্ধি করতে পারছেন টিউলিপ। বললেন,“ইলেকশন জেতা আরো কঠিন। আমাদের ইলেকশন হবে ২০১৫ এ। আমাদের (লেবার পার্টি) এখনকার এমপি যে গ্লেন্ডা জ্যাকসন, তার মেজরিটি অনলি ৪২ ভোট। এজন্য আমার অনেক কাজ করতে হবে।”এজন্য এলাকার বাঙালিদের সহযোগিতা ও সমর্থন চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই সদস্য।“আপনাদের সাহায্য ছাড়া আমি পারব না পার্লামেন্টে যেতে।”
বঙ্গবন্ধুর তৃতীয প্রজন্মের প্রতি অভিনন্দন এবং শুভকামনা। বিশ্বজয় করে বাঙ্গালীর জয়ধ্বজা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাক্ বঙ্গবন্ধুর তুতীয় প্রজন্ম!!

রাষ্ট্র বনাম মির্জা ফখরুল ইসলাম - আলমগীর সাত্তার


রাষ্ট্র বনাম মির্জা ফখরুল ইসলাম - আলমগীর সাত্তার, সাবেক বৈমানিক ও মুক্তিযোদ্ধা


কয়েকদিন আগে আমাদের দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সঙ্গে আমার পছন্দের একটি দৈনিক পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক ‘রাষ্ট্র বনাম মির্জা ফখরুল’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। ওই নিবন্ধে লেখক সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী এবং বিএনপি দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে প্রশংসামূলক অনেক কথাই লিখেছেন। সবকিছুর উত্তর দেয়ার আমার কোন ইচ্ছা নেই। তবে এমন সম্মানিত ব্যক্তির শুধু একটি বিষয়ে আমি মৃদু প্রতিবাদ করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (সব অধ্যাপকই আমাদের মতো আমজনতার কাছে বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র) সাহেব তার নিবন্ধের এক জায়গায় লিখেছেন, মির্জা সাহেব খালেদা জিয়ার আমলে প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের কোন অভিযোগ কখনও উচ্চারিত হয়নি। কথাগুলো পড়ে রবিঠাকুরের গানের একটি কলি মনে পড়ে গেল ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়!’ ওই গানের কলিটি স্মরণ করে এবং শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকের লেখাটা পড়ে, বলতে ইচ্ছা করে, “সখী মিথ্যা কাহারে কয় ”!

অধ্যাপক সাহেব তার লেখা নিবন্ধে যাদের অনেক প্রশস্তি গেয়েছেন তাদের প্রসঙ্গে কিন্তু কথাগুলো বলছি না।
কেবল মনে পড়ে গেল, তাই লিখলাম। এ কথাগুলো কোন বইয়ে পড়েছিলাম, তাও মনে করতে পারছি না।

এবার বিমানের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে মির্জা সাহেব বিমানের কতটা ক্ষতি করে গেছেন, তার একটা উদাহরণ দেয়া যাক।

বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো বাংলাদেশ বিমানের জন্য ১১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১০ খানা নতুন এ্যারোপ্লেন কেনা হবে। বিমানের ফ্লিট প্ল্যান কমিটি তাদের বিদ্যার সীমাবদ্ধতা নিয়ে অনেক গবেষণা করে এবং অনেক সময় ব্যয় করে ২০০৩ সালের শেষদিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে: নতুন প্লেনগুলো বোয়িং কোম্পানি থেকেই কেনা হবে। বিমানের বোর্ড সভায় তা অনুমোদিত হলো।

তারেক রহমান জানতেন না, বোয়িং কোম্পানি থেকে প্লেন কিনলে কোন কমিশন পাওয়া যাবে না। আমেরিকার ফেডারেল আইন অনুযায়ী ওই দেশের কোন কোম্পানি বিদেশে কিছু বিক্রি করার জন্য কাউকে কোন কমিশন দিতে পারবে না। কিন্তু অনুদান দিতে পারে। ওই অনুদান আবার ব্যক্তি বা কোন গোষ্ঠীকে দেয়া যাবে না। ব্যাপারটা জানার পর তারেক রহমানের তো আক্কেলগুরুম। এত বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে এ্যারোপ্লেন কিনব, অথচ কোন কমিশন পাওয়া যাবে না, তা কি হয়! তবে আর প্লেন কিনে লাভ কি? তারেক রহমান তখন তখনকার বিমানের প্রতিমন্ত্রী মীর নাসিরকে বললেন, আমরা বোয়িং কোম্পানি থেকে উড়োজাহাজ কিনব না। আমরা কিনব, এয়ার বাস কোম্পানি থেকে প্লেন। মীর নাসির পড়ে গেলেন মহাবিপদে। বিমান বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে, সব বোর্ড সদস্যের সম্মতিক্রমে তিনি বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। এখন কোন অজুহাত দেখিয়ে বোয়িং প্লেনের পরিবর্তে এয়ারবাস এ্যারোপ্লেনের পক্ষে নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবেন?

তারেক রহমান তার মাকে বলে মীর নাসিরকে মন্ত্রিত্বের পদ থেকে অপসারিত করে নিজের একান্ত অনুগত মির্জা ফখরুল ইসলামকে বিমানের প্রতিমন্ত্রী পদে নিয়োগদানের ব্যবস্থা করলেন। মির্জা সাহেব প্রতিমন্ত্রী হয়েই বিমানের ফ্লিট প্ল্যান কমিটিকে নির্দেশ দিলেন, বোয়িং প্লেন বাদ দিয়ে এয়ারবাস প্লেন কেনার জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করতে। ব্যাপারটা সহজ ছিল না। এক বছরেরও বেশি সময় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যাত্রী বহনের উপযুক্ততা, সিট-মাইলের কস্ট বা মূল্য ইত্যাদি হিসাব করে তৈরি করা ফ্লিট প্ল্যান বললেই তো আর রাতারাতি পরিবর্তন করা যায় না। তবু ফ্লিট প্ল্যান কমিটি অনেক রকমের যুক্তিতর্কের উপস্থাপনা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আপতত ৪ খানা বিভিন্ন মডেলের এয়ারবাস প্লেন ক্রয় করা হবে। বোয়িং প্লেনের বিষয়টা পরে দেখা যাবে।

এ্যারোপ্লেন ক্রয় করার জন্য বিদেশী ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থাও করা হলো। কিন্তু বিদেশী ব্যাংকগুলো চাইল, বাংলাদেশ ব্যাংক কম করে হলেও উড়োজাহাজগুলোর মোট মূল্যের ১৫ শতাংশ পেমেন্টের গ্যারন্টার হতে হবে।

প্রয়াত সাইফুর রহমান সাহেব তখন বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী। সিলেট বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য তখন ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই প্রকল্পের কাজটি পাওয়ার জন্য বিএনপি দলের গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলী সমর্থিত একটি গ্রুপ ছিল। অন্য আর একটি গ্রুপ ছিল সাইফুর রহমান সাহেবের বড় পুত্র নাসের রহমান কর্তৃক সমর্থিত। সাইফুর রহমান সাহেব স্বাভাবিকভাবেই চেয়েছিলেন তার ছেলের সমর্থক গ্রুপটি কাজটি পাক। ইলিয়াস আলীর পেছনের জোরটা ছিল তারেক রহমানের আশীর্বাদ। এই সমর্থন, আর্শীবাদ ইত্যাদির সঙ্গে অবশ্যই জড়িত ছিল বড় অংকের অর্থকড়ি। বিষয়টা উল্লেখ না করলেও চলত। যা হোক, শেষ পর্যন্ত ইলিয়াস আলী গ্রুপই প্রকল্পের কাজটি পেয়ে যায়। এতে করে সাইফুর রহমান সাহেব তো রেগেমেগে একাকার। রাগান্বিত হয়ে প্রথমে তো তিনি পদত্যাগের হুমকি দিলেন। তিনি কেন পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন, তা তো দেশবাসীও জানতে পারল না। কিন্তু কেন পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন, দেশবাসী অবশ্যই তা জানতেন না।



বার্ষিক বাজেট উপস্থাপনের আগে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের হুমকি বিএনপি দলটির নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় ফেলে দিল। কিন্তু পদত্যাগের কথা বললেই তো তা করা যায় না। সাইফুর রহমানের পুত্রধনরা তো সততার ব্যাপারে ধোয়া তুলসীপাতা ছিলেন না। পুত্রধনদের তো তারেক রহমানের আক্রোশ থেকে বাঁচাতে হবে! অর্থমন্ত্রী সাহেব আর পদত্যাগ করলেন না।



সাইফুর রহমান সাহেব পদত্যাগ করলেন না বটে, কিন্তু উড়োজাহাজ কেনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি দেয়ার কাজটা বন্ধ রাখলেন। তিনি গ্যারান্টির চিঠি ইস্যু করতে সরাসরি অস্বীকার না করে নানা টালবাহানা করে কাজটি বিলম্বিত করতে শুরু করলেন। টালবাহানার ধরনটা ছিল এমন যে, দরকষাকষি করে উড়োজাহাজের দাম কিছুটা কমানো যায় কিনা। এমন মহৎ প্রচেষ্টাÑ কোন মডেলের উড়োজাহাজ বিমানের জন্য বেশি উপযোগী হবে, এমন ধরনের প্রশ্নের সদুত্তর চাচ্ছিলেন। এমনি করে কালক্ষেণ করতে করতে বিএনপি দলটির ক্ষমতাসীন থাকার সময় ফুরিয়ে গেল।



এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারেক রহমান এনারা চুপচাপ বসে ছিলেন না। পুরনো ডিসি-১০ প্লেন দিয়ে যে বাংলাদেশ বিমান চালিয়ে রাখা সম্ভব নয় এবং জরুরী ভিত্তিতে যে নতুন এ্যারোপ্লেন কিনতে হবে, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মির্জা ফখরুল এবং জিয়াপুত্র ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখলেন। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এক এক করে বিমানের ৫ খানা ডিসি-১০ প্লেনের মধ্যে ৪ খানাই অচল করে রাখলেন। ওই সময় উক্ত প্লেনগুলো ভাল সার্ভিসই দিচ্ছিল। বিমানের কোন গন্তব্যে যেতেই ডিসি-১০ প্লেনগুলোর কোন বাধা ছিল না। ওই প্লেনগুলোর ইঞ্জিনের ডি-চেক করার তখন ব্যবস্থা করা হয়েছিল হল্যান্ডের ডাচ এয়ারলাইনের সঙ্গে। পরে ব্যবস্থা করা হয় জার্মানির একটি কোম্পানির সঙ্গে। ডিসি-১০ প্লেনের এক একটা ইঞ্জিন ডি-চেকের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়, কিন্তু মেইন্টেন্যান্সের অর্থ পরিশোধ করে সেগুলো আর ফেরত আনা হয় না। এক এক করে এমনিভাবে ডিসি-১০ প্লেনের ১০টি ইঞ্জিন বিদেশে পড়ে রইল। ফলে ৫ খানার মধ্যে ৪ খানা ডিসি-১০প্লেন আর উড্ডয়নক্ষম রইল না। এর চাপ পড়ল বিমানের তখনকার ৩ খানা এয়ারবাস এ্যারোপ্লেনের ওপরও। এমনি করে বিমানের সমস্ত সিডিউল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ল।



২০০৬ সালে মির্জা সাহেব যখন বিমানের প্রতিমন্ত্রী তখনকার কয়েকটি দিনের ফ্লাইট সিডিউলের বিপর্যয়ের খ-কালীন একটি চিত্র তুলে ধরছি: ২০০৬ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র এক সপ্তাহের চিত্র। উক্ত এক সপ্তাহে বিমানের ৪১টি ডিসি-১০ প্লেনের ফ্লাইটের একটি ফ্লাইটও সময়মতো ছাড়তে পারেনি। মাত্র একটি ফ্লাইট অল্প বিলম্বে ছেড়েছিল। বাকি ৪০ টি ফ্লাইট অনেক বিলম্বে ছেড়েছে অথবা ক্যান্সেল হয়েছে। ওই একই সময় এয়ারবাস-৩১০ প্লেনের ১১৬টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র ১৭% ফ্লাইট নিয়মিত সময় চলাচল করেছে। এর পরের সপ্তাহে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ডিসি-১০ প্লেনের ৬৭টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র একটি ফ্লাইট সময়মতো ছেড়েছিল। এয়ারবাস প্লেন দিয়ে পরিচালিত ৯৬টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র ১৬টি চলেছিল নিয়মিত সময়ে। ওই সময় একটানা ২১ দিন সময় যাবত বিমানের ডিসি-১০ প্লেনের কোন ফ্লাইটই সময়মতো চলাচল করেনি।



ডিসি-১০ প্লেনের ১০টি ইঞ্জিন ইচ্ছাকৃতভাবে বিদেশে ফেলে রাখা এবং ফ্লাইট সিডিউল সংক্রান্ত যে সব তথ্য পরিবেশন করা হলো, সে সবের রেকর্ড, কাগজপত্র সবই বিমান অফিসে আছে। তাই এ লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করলেই এ সবের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।



মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সময় নিউইয়র্কে নর্থ আটলান্টিক ট্রাভেল এজেন্সি নাম দিয়ে বিএনপিঅলাদের কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি মিলে একটি সিন্ডিকেট করে। মির্জা সাহেব বিমানের নিউইয়র্ক অফিসকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিলেনÑবিএনপিঅলাদের ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ছাড়া অন্যরা বিমানের টিকেট বিক্রি করতে পারবে না। ওই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্কের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করত। ফলে ঢাকা-নিউইয়র্কের মধ্যে বিমানের যাত্রী কমতে শুরু করল। এক পর্যায়ে বিমানের ঢাকা-নিউইয়ের্কের ফ্লাইটই বন্ধ করে দিতে হলো।

এ সব ছাড়া মির্জা সাহেবের মন্ত্রিত্বের সময়ের অন্যান্য দুর্নীতির বিষয় আলোচনা করলাম না লেখাটার কলেবর বৃদ্ধি না করার ইচ্ছা থেকে। আমার বক্তব্য হলো, বাংলাদেশ বিমানের বর্তমান বেহাল অবস্থার সূচনাটা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই করে গেছেন। একবার যদি কোন এয়ারলাইন্সের ওপর যাত্রীরা আস্থা হারিয়ে ফেলে, তবে ওই এয়ারলাইন্স আর সহজে ঘুরে দাঁড়াতে পারে না।

শুনেছি ম্যাকারেল মাছের পচন ধরলে ওগুলোকে নাকি বেশি শাইনিং (ঝযরহরহম) দেখায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অধ্যাপক লিখেছেন যে, বিমানের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে মির্জা সাহেবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বা অনিয়মের কোন অভিযোগ ছিল না। তাকে শুধু বলব, যে পত্রিকায় তিনি নিবন্ধটি লিখেছেন ওই পত্রিকাসহ অন্যান্য ওই সময়ের পত্রিকাগুলো যেন পড়ে দেখেন।

আমার বক্তব্য হলো, আপনার লেখার স্বাধীনতা আছে। পা-িত্য আছে। আপনি সুলেখকও বটে। তাই লিখুন।দেশে বিদেশে বাঙ্গালীরা এবং বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ গুনুমুগ্ধ ভক্ত গন

সুখে থাকুন, ভালো থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন-জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু
daily Janakantha



Wednesday, July 17, 2013

ঘাতক দের আইনজীবি দের সমালোচনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি


মুজাহিদের রায় পড়ে শুনানোর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল - এর চেয়ারম্যান আসামী পক্ষের আইনজীবিদের তীব্র সমালোচনা করে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, " আমরা লক্ষ্য করছি,রায় হলেই হরতাল আহ্বান করা হয়, এবং রায় ঘোষণার দিন ডিফেন্স ল'য়ার এবং কন্ডাক্টিং ল'ইয়ার রা আদালতে উপস্থিত হন না। জুনিয়ার ল'য়ার দের পাঠান তারা । তাদের আদালতে আসা উচিত।" এর পর টক শো প্রসঙ্গে বলেন, “ যতো রাত বাড়ে , কথা ও গভীর হয়, আমরা এখানে দুর্বল। বাইরে কথা বলতে পারি না। তবে এখানে (এজলাসে) তো আমরা বলতে পারি । রায় ভালো না লাগলেই প্রত্যাখ্যান করেন, ফাঁসি দাবি করেন।আদালতের রায়ের বিষয়ে কথা বলা আদালত অবমাননার সামিল। আপনারা কেউ সংক্ষুব্ধ হলে আপীলের সুযোগ আছে। ভাল। বিচারকদের বিষয়ে অনেক কথা বলা হয়। আমরা টেলিভিশনে দেখি।মনে রাখতে হবে, আদালতের হাত অনেক লম্বা।আমরা শপথ নিয়ে এই জায়গায় এসেছি। কারো প্রতি বিরাগ বা অনুরাগ রেখে জাজমেন্ট দেই না ।"
জামাত মুখপাত্র ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক কখনো রায়ের দিন আদালতে আসেন না। মুজাহিদের রায়ের দিন বিকেল তিনটায় তার বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি।