Thursday, July 18, 2013

অভিনন্দন টিউলিপ!!


“আমি যদি বাংলাদেশে গিয়ে দাঁড়াতাম, আপনারাই কিন্তু বলতেন, ডায়নেস্টি পলিটিকস। নিজে পেরেছ করতে, না কি তোমার ফেমিলি থ্রু নিয়ে করছ,” বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। যুক্তরাজ্যের আগামী সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত করার পর বৃহস্পতিবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন টিউলিপ।

কিলবার্নের একটি রেস্তোরাঁয় সদ্য বিবাহিত টিউলিপের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন মা শেখ রেহানাও, যাকে সচরাচর এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায় না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে কিলবার্নে তার নির্বাসিত জীবনের স্মৃতিচারণ করে মেয়ের জন্য প্রবাসী বাঙালিদের ভোট চেয়েছেন।
গত রোববার লেবার পার্টির মনোনয়নযুদ্ধে জয়ী ৩১ বছর বয়সি টিউলিপ বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলোকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে সপ্রতিভ ভাবে নিজের রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন।

রাজনৈতিক পরিবারের এই সন্তান বলেন, “আমার উদ্দেশ্য মানুষকে সাহায্য করার, বাংলাদেশে বলেন, চায়নায় বলেন, আমেরিকায় বলেন, ইংল্যান্ডে বলেন, মানুষের সমস্যা তো সব জায়গায় থাকে। মানুষের সাহায্য সব জায়গায়ই লাগে। আমার ডিউটি হল গিয়ে মানুষের কাজ করা।”

প্রবাসে রাজনীতিতে লেবার পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী টিউলিপ।ধীরে ধীরে নিজের আসন তৈরি করে এখন হাউস অফ কমন্সে যাওয়ার পথে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনী। এক্ষেত্রে নিজের চেষ্টাই মুখ্য তার কাছে।“আমি এখানে এসে প্রথমে কাউন্সিলর হলাম। লেবার পার্টিতে আমি গর্ডন ব্রাউনের জন্য কাজ করেছি। তারপরে পলিসি অ্যাডভাইসর হিসেবে কাজ করেছি। এরপর আস্তে আস্তে নমিনেশনটা পেয়ে এখন পার্লামেন্টে ঢুকছি। আমি নিজেই করেছি, আমি চাচ্ছি যে আমি নিজেই (নিজের চেষ্টায়) পার্লামেন্টে ঢুকি।”

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী বর্তমানে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য, তিনিও বিরোধী দল লেবার পার্টির। টিউলিপ নির্বাচিত হলে তিনি হবেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বাংলাদেশি।

টিউলিপ ২০১০ সাল থেকে ক্যামডেন কাউন্সিলের সদস্য। এই কাউন্সিলে তিনিই প্রথম বাঙালি নারী।লেবার পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ক্যামডেনের আরেক কাউন্সিলর স্যালি গিমসন ও হ্যাকনি বারার ডেপুটি মেয়র সোফি লিন্ডেন। তবে ভোটাভুটিতে রায় পক্ষে আনেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ রেহানাও বলেন, “ও (টিউলিপ) নিজের প্রচেষ্টায় এত দূর এসেছে, এখানে আমার কোনো সাহায্য নেই। আমি মা হিসেবে দোয়া করি, যতটুকু সাহায্য করার আমি করি, আপনারা ওকে দোয়া করবেন। যেন নানার নাম রাখতে পারে।”

এক সময়ের পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসনের আসনে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচিত হলে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা সবার জন্য যেন থাকে, তা নিশ্চিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন টিউলিপ।

“ইনশাল্লাহ আমি যদি জিতি,,, আমাদের সবাই এখানে যেন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে ইক্যুয়াল এক্সেস পায়। বলতেছে যে এ এন ই ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে; আমাদের ভীষণ ক্ষতি হবে, যদি এ এন ই ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। আমি ক্যাম্পেইন করব এই এএনই ডিপার্টমেন্ট খোলা রাখার জন্য। আমাদের ওয়ার্ল্ড ফ্রি হসপিটাল প্রটেক্ট করার জন্য।”

যে আসনে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন, স্বামী ব্যবস্থাপনা পরামর্শক ক্রিস্টিয়ান পার্সির সঙ্গে এই এলাকাতেই থাকেন টিউলিপ।
“অনেকে জিজ্ঞাস করে, তুমি এখানে দাঁড়ালে কেন। হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে। আমি তো বড় হয়েছি হ্যাম্পস্টেড কিলবার্ন এলাকায়। আমি এখানে স্কুলে পড়ছি, এখানে আমি আমার হাসবেন্ডের সঙ্গে থাকি।”

“আপনার এটা নাও জানতে পারেন। ১৯৭৫ এর পর বাংলাদেশে পুরো পরিবার যখন মারা গেলেন, আমার মা এখানে এসেছিলেন। জাস্ট এই রাস্তার পাশের রাস্তায় ছিলেন। এজন্য আমার জন্য এই কনস্টিটিউন্সিটা খুবই ইমপোর্টেন্ট। আমি এই কনস্টিটিউন্সিতে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই।”সবার ন্যূনতম আয় বাড়াতে চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন লেবার পার্টির এই সদস্য, যার সংবাদ সম্মেলনের পেছনের পর্দাজুড়ে লেখা ছিল- ‘ভোট লেবার’।

মনোনয়ন নিশ্চিত করলেও নির্বাচিত হওয়ার কাজটি যে কঠিন, তা উপলব্ধি করতে পারছেন টিউলিপ। বললেন,“ইলেকশন জেতা আরো কঠিন। আমাদের ইলেকশন হবে ২০১৫ এ। আমাদের (লেবার পার্টি) এখনকার এমপি যে গ্লেন্ডা জ্যাকসন, তার মেজরিটি অনলি ৪২ ভোট। এজন্য আমার অনেক কাজ করতে হবে।”এজন্য এলাকার বাঙালিদের সহযোগিতা ও সমর্থন চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই সদস্য।“আপনাদের সাহায্য ছাড়া আমি পারব না পার্লামেন্টে যেতে।”
বঙ্গবন্ধুর তৃতীয প্রজন্মের প্রতি অভিনন্দন এবং শুভকামনা। বিশ্বজয় করে বাঙ্গালীর জয়ধ্বজা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাক্ বঙ্গবন্ধুর তুতীয় প্রজন্ম!!

No comments:

Post a Comment