Saturday, March 8, 2014

৩০০ কোটি টাকার কর ফাঁকিঃ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনের ঊর্ধ্বে?

ড. ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে ?

Fri, March 7, 2014, 9:04 pm BDT
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের প্রথম নোবেলজয়ী ব্যক্তির নাম। নোবেলের পাশাপাশি পেয়েছেন দেশি বিদেশি হাজারো পুরস্কার ও সম্মাননা। বিশ্বের নামি দামি অনেক লোকের সাথে তার উঠাবসা। দেশ-বিদেশ ঘুরে ঘুরে তিনি নানা সভা সেমিনারে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দেন। তার নোবেল পদক বা অন্যান্য কর্মকাণ্ড দেশের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনছে?

যে ইউনূস সাহেব প্রায়ই দেশের বিভিন্ন ব্যাপারে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেন সেই ইউনূস সাহেব নিজে দেশের আইনের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল সেই ব্যাপারেই আজ একটু আলোকপাত করতে চাই।

একজন ব্যক্তি যত বিখ্যাতই হন না কেন, তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একটি দেশের নাগরিক। সেই দেশের আইন কানুন আর দশজন সাধারণ নাগরিকের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তার বেলাতেও ঠিক একই রকমভাবেই প্রযোজ্য। রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তাদের বরং আরও বেশি সজাগ হওয়া উচিৎ। কেননা তাদের দেখেই অন্যরা উৎসাহিত হবে। কিন্তু বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালনে গাফিলতি করে বা এড়িয়ে যায় তারচেয়ে লজ্জাজনক আর কিছুই হতে পারে না। আমাদের ইউনূস সাহেব ঠিক এই কাজটিই করেছেন।

একটু পেছনে ফিরে যাই। সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৭৬ সালে ড. ইউনূস চট্টগ্রামের জোবেরা গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই তখন এই কাজের মূল পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণই ছিল এই প্রকল্পের দৃশ্যমান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য কতটা পূরণ হয়েছে বা দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প কতটা ভূমিকা পালন করতে পেরেছে তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু এই প্রকল্প ইউনূস সাহেবকে ঠিকই লাভবান করতে পেরেছে। তাকে বিশ্ববিখ্যাত করেছে, এমনকি নোবেল পদক পর্যন্ত এনে দিয়েছে।

১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পই ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক এ রুপান্তরিত হয়। মানুষের কল্যাণই যদি মূল উদ্দেশ্য হত তাহলে এই ব্যাংকের মাধ্যমেই তা করা যেত। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হত না।  ইউনূস সাহেব কিন্তু এই পথে হাটেননি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গড়ে তুলেছেন আরও প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রতিষ্ঠান যার প্রতিটিই লাভজনক। তারমানে যে সামাজিক আন্দোলন বা মানুষের কল্যাণের বাতাবরণে উনি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প শুরু করেছিলেন তা হয়ে উঠল একটি বেনিয়া ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। ব্যাপারটা অনৈতিক হলেও আইনসিদ্ধ।

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের অধিকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ড. ইউনূস সাহেব কিন্তু এসব কিছুর ধার ধারেন নি। তা তিনি করবেনই বা কেন? তিনি বিখ্যাত মানুষ। তাই তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়কর দেয়ার ব্যাপারে সব সময়ই উদাসীন। কিভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়া যায় বা এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘসূত্রিতার জালে জড়ানো যায় তার সবকিছুই করেছেন উনি। এই ব্যাপারে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া যেতে পারে।

ড. ইউনূসের মালিকানাধীন বেশ কিছু লাভজনক প্রতিষ্ঠানের নাম নিচে দেয়া হল-
১) গ্রামীণ ট্রাস্ট
২) গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট
৩) গ্রামীণ ব্যাংক বারোয়ার্স ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট লিমিটেড
৪) গ্রামীণ ব্যাংক
৫) গ্রামীণ কল্যাণ
৬) গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশ
৭) গ্রামীণ মৎস্য ও পশু সম্পদ ফাউন্ডেশন
৮) গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
৯) গ্রামীণ কম্যুনিকেশন্স
১০) গ্রামীণ শক্তি
১১) গ্রামীণ সামগ্রী
১২) গ্রামীণ হেলথ কেয়ার 
১৩) প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট 
১৪) ইউনূস সেন্টার 
১৫) ইউনূস ক্যালোডোনিয়া কলেজ অব নার্সিং


ইউনূসের মালিকানাধীন উপরোক্ত প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতেই কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মোট হিসেবে যা প্রায় সোয়া তিনশ কোটি টাকারও উপরে। এর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের (টিআইএন নম্বরঃ ০৮৭-৩০০-২৮১৪) কাছেই আয়কর বিভাগের পাওনা রয়েছে প্রায় দুইশ কোটি টাকা। এই অর্থ আদায়ের জন্য আয়কর বিভাগের দায়েরকৃত মামলাটিও বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে ছয়মাসের স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত আছে। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের (টিআইএন নম্বরঃ ০৭০-২০০-১৮৮৪) কাছে আয়কর বিভাগের পাওনা আছে প্রায় সত্তর কোটি টাকা, গ্রামীণ ব্যাংক বারোয়ার্স ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট লিমিটেডের (টিআইএন নম্বরঃ ০৮১-৩০০-২১৮৫) কাছে প্রায় বিশ কোটি টাকা গ্রামীণ ট্রাস্ট (টিআইএন নম্বরঃ ১৪২-২০০-৪৯০৩) ও গ্রামীণ কল্যাণ (টিআইএন নম্বরঃ ০৭০-২০০-৯৬৫০) প্রতিটির কাছে আয়কর বিভাগের পাওয়া আছে প্রায় দশ কোটি টাকা।


অত্যন্ত ধূর্ত ইউনূস সাহেব আয়কর বিভাগের প্রতিটি দাবির বিপরীতেই মামলা করে রেখেছেন এবং মামলাগুলোকে দীর্ঘসূত্রিতার জালে জড়ানোর সম্ভাব্য সব ব্যবস্থাই করেছেন। বেশিরভাগ মামলাই এখন আপিলাধীন বা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত অবস্থায় আছে।

আয়কর বিভাগের প্রতিটি দাবিই যে যৌক্তিক তার বড় প্রমাণ হচ্ছে আইনী লড়াই শেষে ইউনূস সাহেবের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার মত আদায়ও করা হয়েছে। এখানে একটি মজার ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। শুধুমাত্র যেসব প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে ‘ইউনূস’ যুক্ত আছে শুধুমাত্র সেইসব প্রতিষ্ঠানের আয়করই আদায় করা গিয়েছে। ‘গ্রামীণ’ যুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত দাবিকৃত কোনো আয়কর আদায় হয়নি। অতএব এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ নিয়ে নানা ছলাকলা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের প্রতি তার কর্তব্য পালন থেকে বিরত থাকছেন এবং দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে আয়কর এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।মূলত রাষ্ট্রের অর্থায়নের অন্যতম মূল ভিত্তিই হল এই আয়কর। এ কারণে নিয়মিত আয়কর দাতাদের যেমন পুরস্কৃত করা হয় ঠিক তেমনি কর খেলাপির জন্য প্রতিটি দেশেই রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। শুধু আইনী শাস্তিই নয়,করখেলাপীদের সব দেশের মানুষই ঘৃণার চোখে দেখে। কারণ করখেলাপিরা কর না দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্বের বরখেলাপ করেন।

বাংলাদেশেও করখেলাপীদের জন্য রয়েছে যথাযথ শাস্তির বিধান।করখেলাপী ব্যক্তিরা এদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষিত হন।করখেলাপি হওয়ার কারণে আমরা অনেক রাজনীতিবিদকে দুদকে তলব করতে শুনি, অনেক সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে দেখি। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ আমরা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সরকার কেন এই ব্যাপারে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না?   ইউনুস স্যার কে গাটাতে গেলেই বুঝি অনেক জটিলতা!

তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার। মুখে দারিদ্র দূরীকরণ বা মানুষের কল্যাণের কথা বললেও গ্রামীণ ব্যাংক প্রজেক্ট ছিল ড. ইউনূসের জন্য একটা লাভজনক ব্যবসার সূচনা। এর থেকেই তিনি আরও অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। মানুষের উপকার করতে  চাইলে এতো প্রতিষ্ঠানের দরকার হয় না। 


বিল গেটস তার একমাত্র ‘মেলিন্ডা ও গেটস ফাউন্ডেশন’ এর মাধ্যমেই পৃথিবীর নানা দেশে দারিদ্রতা দূরীকরণে কাজ করছেন। সেখানে ইউনূস সাহেব পঞ্চাশের বেশি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন শুধুমাত্র নিজের ব্যবসায়িক সুবিধা লাভের হীন উদ্দেশ্য নিয়ে।

অনেকে বলেন ইউনূস সাহেব বিখ্যাত মানুষ, নোবেলজয়ী। তার ব্যাপারে এসব অভিযোগ আনা ঠিক না। আরে ভাই, নোবেল প্রাইজ দিয়ে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের পেটে ভাত যাবে না। কিন্তু ড. ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি দেয়া প্রায় তিনশ কোটি টাকা আদায় করা যাবে কি কখনো? এই কর পরিশোধ তার নৈতিক দায়িত্ব।  তা দিয়ে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো।

আমরা হলমার্ক, ডেসটিনিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপ লক্ষ্য করেছি। আশা করব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ব্যাপারেও সরকার সমান তৎপরতায় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যদি তা না করে তাহলে বুঝব ড. মুহাম্মদ ইউনূস হয়তো আসলেই আইনের ঊর্ধ্বে। এদেশের সাধারণ নাগরিকদের কাছে  ব্যাপারটি লজ্জার নয় কি? 

সূত্র:বিবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম             

No comments:

Post a Comment