Sunday, October 28, 2012

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক


নয়া দিল্লি, অক্টোবর ২৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সফরের প্রথম দিনে ভারতের লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

বিজেপি নেত্রী সুষমা এই উদ্বেগের প্রতি সহমর্মী হয়ে সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের সফরে রোববার দুপুরে নয়া দিল্লি পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিকালে দিল্লির ৮ নম্বর সবদরজং সড়কে বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাসভবনে যান তিনি।

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি চেয়ারপারসন তাজ প্যালেসে যান। তাদের বৈঠকের বিষয়বস্তু সেখানে সাংবাদিকদের জানান বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতা সীমান্তে হত্যা নিয়ে তার উদ্বেগের কথা বলেছেন। জবাবে সুষমা স্বরাজ বলেছেন, সীমান্ত হত্যা কমে এসেছে। তবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি (লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা) এই সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসা উচিৎ বলে মনে করেন।”

সীমান্তে হত্যা বন্ধ না হলে তা দুদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে খালেদাকে জানিয়েছেন ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা।

বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন জানান।

“সৌহার্দ্য ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে সুষমা স্বরাজ বাসার আঙিনায় এসে অভ্যর্থনা ও বিদায় জানান।”

দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার ওপর দুই নেতা আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে সুষমা বলেন, ভারতের বিরোধী দল বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

জবাবে খালেদা জিয়া বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ বজায় রেখে ভারতের সঙ্গে স্বচ্ছতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান তিনি।

সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে ভারতে খালেদা জিয়ার এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ভারত বলছে, এটা বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে নয়া দিল্লির যোগাযোগের অংশ।

অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার বিষয়ে শমসের মবিন বলেন, “এই বিষয়ে খালেদা জিয়া লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতাকে বলেছেন, তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান আশা করে বিএনপি।”

এজন্য দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি যৌথ কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের প্রতি সুষমা স্বরাজ একমত পোষণ করেন বলে শমসের মবিন জানান।

বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আরো বেশি বাংলাদেশি পণ্যের ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চান বিরোধীদলীয় নেতা।

খালেদা জিয়া ভারতের বিরোধীদলীয় নেতাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সুবিধাজনক সময়ে সফর করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করতে সন্ধ্যায় হোটেলে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই।

ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান।

বিরোধীদলীয় নেতা সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সফরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। আজমীরে সুফি সাধক হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) মাজার জিয়ারতও বিরোধীদলীয় নেতার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে।

দুপুরে নয়া দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দরে পৌঁছলে খালেদাকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপ হাইকমিশনার মাহবুব হাসান সালেহসহ দূতাবাস কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন।

ভারত সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক হাইকমিশনার সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য খালেদা রাব্বানী, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ।

খালেদার এই সফরের সংবাদ জানাতে তার সঙ্গে রয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক সুমন মাহমুদ।

সফর শেষে আগামী ৩ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে প্রেসসচিব জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০০৬ সালে ভারত সফরে যান। সেবার তিনি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে প্রতিবেশী দেশটিতে এটাই তার প্রথম সফর। বিডিনিউজ

No comments:

Post a Comment