Wednesday, July 25, 2012

নিরীহ মানুষদের ওপর নির্যাতন চালানোয় জামায়াতে ইসলামী নেতা মো. কামারুজ্জামান:কামারুজ্জামানের ‘যুদ্ধাপরাধের’ দ্বিতীয় সাক্ষী

একাত্তরে একটি হিন্দু বাড়ি দখল করে আল বদর ক্যাম্প বসিয়ে নিরীহ মানুষদের ওপর নির্যাতন চালানোয় জামায়াতে ইসলামী নেতা মো. কামারুজ্জামানের ভূমিকা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্ণনা করেছেন এক সাক্ষী মোহন মুন্সী 

ট্রাকভর্তি লাশ নিয়ে কামারুজ্জামানকে দেখার কথাও জানান মোহন মুন্সী। মুক্তিবাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে যে আল বদর বাহিনী মারছে, তার নজির হিসেবে ট্রাকভর্তি লাশ শেরপুর জেলা শহরের বাসিন্দাদের দেখাতে কামারুজ্জামান নিয়ে যান  তিনি। কামারুজ্জামানের কাছে গোলাম আযমের কাছ থেকে টেলিগ্রাম আসত বলেও জানান মোহন মুন্সী 

বুধবার সাক্ষ্য দেওয়া মনোয়ার হোসেন খান, যিনি মোহন মুন্সী নামে পরিচিত, ওই আল বদর ক্যাম্পের পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন। ৬৩ বছর বয়সি এই ব্যক্তি বর্তমানে শেরপুরের একটি বিদ্যালয়ের কর্মচারী। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের ‘যুদ্ধাপরাধের’ দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে একাত্তরের ঘটনা বর্ণনা করেন সাদা শ্মশ্র“মণ্ডিত ও মাথায় টুপিধারী মোহন মুন্সী। মানবতাবিরোধী সাত ধরনের অভিযোগে এই ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচার চলছে। 

মোহন মুন্সী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ১৭/১৮ দিন পর কামারুজ্জামান এলাকার মানুষদের ডেকে বলেন, জামালপুর থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের ডেকে আনছেন। পরদিন কামারুজ্জামান ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে ভোরে চলে যান এবং দুপুরেই ফেরেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই নির্যাতনের মুখে বিপুল সংখ্যক হিন্দু দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই রকম একটি দলকে কামারুজ্জামান ও তার সঙ্গীরা আটকে লুটপাট চালায় বলে জানান মোহন মুন্সী। 

এই দলের সুরেন সাহার বাড়ি দখল করে কামারুজ্জামান দখল করে সেখানে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে আল বদর ক্যাম্প স্থাপন করে বলে সাক্ষ্যে বলা হয়। ওই ক্যাম্পেরই পাহারাদার ছিলেন মোহন মুন্সী। 

আল বদর ক্যাম্পের পাহারাদার হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মোহন মুন্সী বলেন, তিনি দাদার দরজির দোকানে কাজ করতেন। একাত্তরের শুরুতে আধা সামরিক বাহিনীতে কাজ পাওয়ার কথা শুনে তিনিও এসেছিলেন। পরে তিন মাস তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই সময় কোনো টাকা দেওয়া না হলেও খাবার দেওয়া হত। 

মোহন মুন্সী ভেবেছিলেন, প্রশিক্ষণ শেষে তারা আনসার বাহিনীতে যোগ দেবেন। কিন্তু ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে ওই প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তাদের আল বদর বাহিনীতে ভিড়িয়ে দেওয়া হয়।  আল বদর বাহিনীতে যোগ দিতে তার কাছে স্থানীয় যুবকরা এলে  মোহন মুন্সী  তাদের ফিরিয়ে দিতেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও আল বদর বাহিনী ছেড়ে দেন। 

ক্যাম্পের পাহারাদার থাকার সময় গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা ট্রাইব্যুনালকে জানান মোহন মুন্সী। তাকে আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর রিয়াজের কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন কামারুজ্জামান। 

“মেজর রিয়াজ না আসা পর্যন্ত মোস্তফাকে আটকে রাখতে বলেন কামারুজ্জামান। ওই সময় মোস্তফাকে বেঁধে বেদম মারধর করে আল বদর সদস্যরা,” বলেন মোহন মুন্সী। এরপর কামারুজ্জামান ও নাসির (কামারুজ্জামানের সহযোগী) মোস্তফাকে নিয়ে বেরিয়ে যান। পরে তারা দুজন ক্যাম্পে ফিরলেও মোস্তফাকে ফিরতে দেখেননি সাক্ষী। “নাসিরকে বলতে শুনি, কমান্ডার এখন ভালোই গুলি করেন, নিশানা এখন অনেক ভালো,” বলেন মোহন মুন্সী। সাক্ষীর বক্তব্যে স্পষ্ট, কামারুজ্জামান ও নাসির ওই ব্যক্তিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন। 
। সাক্ষীর বক্তব্য দেওয়ার পর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার তাকে পুনরায় জেরা করা হবে। 

No comments:

Post a Comment