Monday, November 4, 2013

পাকিনেতা ইসহাক খান খাকওয়ানী বললেন -বিএনপি পাকিস্তান প্রেমী , সাকা নিরপরাধ : সুমি খান


“বাংলাদেশের লাখো লাখো মানুষ পাকিস্তান ভালোবাসে । বিএনপি তার মধ্যে প্রধান। একাত্তরে সালে সাকা চৌধুরী লাহোরে ছিলেন, কোন অপরাধ করেন নি” - গত ২৫ অক্টোবর পাকিস্তান ডেইলি নিউজে প্রকাশিত লেখাটিতে এভাবেই ঘাতকদের পক্ষে সাফাই গাইলেন একাত্তরের ঘাতক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক বন্ধু ইসহাক খান খাকওয়ানী। তিনি পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী হেভিওয়েট রাজনীতিক।
‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ‘এর প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খান । জনশ্রুতি আছে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা আইএস আই য়ের নির্দেশনায় তিনি দলটি গঠন করেছেন। এই দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান খাকওয়ানী সম্প্রতি বাংলাদেশের পাকিপ্রেমীদের ভালোবাসার টানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি আত্মকথন লিখেছেন। বিপুল সম্পদশালী জমিদার পরিবারের সন্তান ইসহাক খান খাকওয়ানী পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ এবং রেলওয়ে মন্ত্রী ছিলেন। আফগানিস্তানের নানগড় এলাকার উপজাতি খোগওয়ানি গোত্রভুক্ত ‘খাকওয়ানি’ জমিদার পরিবারের সন্তান ইসহাক পেশায় ইঞ্জিনীয়ার। মীর মর্তুজা ভুট্টোর সাথে ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে যোগ দেবার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার অভিষেক। ২০০২ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগে যোগ দেন। ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল পোলোর আ্যাম্বেসেডর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। প্রশ্ন আসতে পারে, এই সম্পদশালী ব্যক্তিটি রাজনীতিতে তার অবস্থান দৃঢ় থেকে দৃঢ় করার জন্যেই কি আইএসইইয়ের বার্তাবাহকের কাজ করছেন?
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা , ধর্ষণ , বুদ্ধিজীবিহত্যা এবং অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যারা অত্যাচারী পাকিস্তান সরকারের প্রতি ‘দায়িত্ব’ পালন করেছেন,পাকি সরকারের বেতনভুক্ত সেই ঘাতকদের বিচারপ্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই গাত্রদাহের সৃষ্টি করেছে পাকিদের। এর বাইরে থাকতে পারেন নি খাকওয়ানী । নিরপেক্ষতা দেখাতে লেখায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে সম্মান করার ভান করেছেন তার লেখার একটি লাইনে, যা হাস্যকর বটে!
তিনি এক দিকে স্বীকার করেছেন বালুচিস্তানসহ ৫টি প্রদেশের পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য এবং অপশাসনে বিদ্রোহ করছে স্খানীয় জনগণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতি এ দেশের মানুষের প্রতি স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্বাধিকার আন্দোলনের নৈতিক অধিকারকে অস্বীকার করলেন ইসহাক খান খাগওয়ানী। স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যের প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। একাত্তর পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে তুলনা করেছেন পরাধীন জাতির সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার । একে ‘পাকি ঔদ্ধত্য’ না বলে পারা যায় না!
একাত্তরের ঘাতকদের প্রত্যক্ষ ভাবে সমর্থন দিয়ে তিনি একাত্তরের গণহত্যা , ধর্ষন সহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির সাথে তার একাত্মতা প্রমাণ করে ঘাতকদের পক্ষে তাদের এক এবং অভিন্ন শক্ত অবস্থান!
পারিবারিক বন্ধু সাকা চৌধুরীকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে গিয়ে ইসহাক খান তার লেখার শেষ দিকে এসে স্বীকার করলেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান সংগঠক।তবে ইসহাক খানের দাবিমতে বঙ্গবন্ধু নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ই চান নি! তিনি একদিকে একাত্তরে সাকা চৌধুরীর অপরাধ অস্বীকার করলেন, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না চাওয়ায় বঙ্গবন্ধুর উদারতা বলে উল্লেখ করলেন! স্ববিরোধিতা একেই বলে।
ইসহাক খান বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সম্পাদকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আক্ষেপ করেছেন ডেইলী ষ্টারের সম্পাদকের কাছে পাঠানোর পর ও তার লেখা এখনো প্রকাশ হয়নি বলে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালৈর প্রতিটি রায়ের সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যম পাকিস্তান কে ধুয়ে ফেলে- এটাও তার ক্ষোভের কারণ। এর পর ও তার আশাবাদ মুদ্রার অন্যপিঠ দেখে। তার গভীর পর্যবেক্ষণ বলে, মুদ্রার অন্যপিঠ হচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি এবং সাধারন অনেক মানুষ মানসিক ভাবে এখনো পাকিস্তানের পক্ষেই অবস্থান করছে। তার আশাবাদ , তার পারিবারিক বন্ধু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতি আওয়ামী লীগ এবং তার অনুসারীরা অনুকম্পা দেখাবে। এবং এটা বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধী দল এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ‘পাকিপ্রেম’ ভালো লাগার নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত ।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সশরীরে উপস্থিত থেকে বর্বর নির্যাতন করে হত্যা করেছেন অনেক নিরীহ মানুষ কে । সা কা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে দানবীর শিক্ষানুরাগী সমাজহিতৈষী নূতন চন্দ্র সিংহ কে। প্রত্যক্ষদর্শী সালাহউদ্দিন আহমেদ সা কা চৌধুরীর টর্চার সেলে বন্দী ছিলেন। তার অত্যাচারেরর শিকার। প্রাণে বেঁচে গেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক ১৮ বছর বয়সে ফকা-সাকার বর্বর নির্যাতনে নিহত হন একাত্তরে। প্রত্যক্ষদর্শী তার বোন জোহরা বেগম। তিনি জাতীয় আর্টির সাবেক সাংসদ হারুণ অর রশীদের স্ত্রী। জ্যোৎস্নাবালা র সামনে সাকা চৌ দাঁড়িয়ে থেকে নির্দেশ দিয়ে জ্রোৎস্নাবালার স্বামী, ভাশুর সহ তার পরিবারের ২৮ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছে । জ্যোৎস্নাবালা কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুঁজো হয়ে বেঁচে ছিলেন ২০১২ সাল পর্যন্ত। তার ইন্টারভিউ আছে। আদালতে অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে। আপনি এই নিরীহ সাধারণ মানুষ গুলোর চোখের জল , স্বজন হারানোর বেদনা, গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রনা,সাকা চৌধুরীর বর্বর নির্যাতনে নিহত দের স্বজন অথবা আহত দের কান্না এবং তথ্য প্রমাণ সহ আদালতে সাক্ষ্যপ্রদান ইসহাক খানের কানে পৌঁছেনি । যারা হত্যাকারীর পক্ষে অবস্থান নেন, তাদের কানে কোন মানবিক বাণী পৌঁছাবে না – এটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই সাকা চৌধুরীর সহপাঠী কোন এক বিচারপতি শামীমের দাবি ই তার কাছে মূখ্য হয়ে উঠেছে। এ যেন চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী! এরকম ভয়ংকর খুনির পক্ষ নিলে ধর্মেও সইবে না।পাকিদের আবারো জানিয়ে দেবে এদেশের মানুষ -বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে তিরিশ লাখ বাঙ্গালীর ঘাতক জারজদের কখনো ক্ষমা করবে না।
Sumikhan29bdj@gmail.com

No comments:

Post a Comment