Wednesday, April 10, 2013

“তরুণ সমাজ যেন অসাম্পদায়িক, চরিত্রবান এবং স্বদেশানুরাগী হয়ে দেশের কল্যাণে আত্মনিবেদন করে ”-১০৩ বছরে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী




(ছবি র ক্যাপশন- ২০০৮ সালে তার রোগমুক্তি কামনা করে আমাদের সময়ে প্রকাশিত কলাম পড়ছেন। ছবি- সুমি খান)
সুমি খান: “অহিংস সত্যম শ্রেয়ং শৌচ সংযম সেবচ । এই ছোট্ট কথা টি বাংলাদেশের ই এক মনীষী মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর। তিনি বৈষ্ঞব ছিলেন । আমেরিকায় এক সভায় যোগ দিয়ে এই কথাটি বলেছিলেন। যা আমেরিকাবাসীকে মুগ্ধ করে। আমাকেও মুগ্ধ করে। এই কথাটি মনে মনে উচ্চারণ করে আমি মানসিক শক্তি আনার চেষ্টা করি। আজ আমার ১০৩ তম জন্মদিনে দৈনিক আমাদের সময়ের মাধ্যমে আমার তরুণ ভাইবোন দের বলি , এই গুণ গুলো যদি মানুষের থাকে তবে আমরা নিজেদের সত্যিকার মানুষ বলে প্রমাণ করতে পারি।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। আমাদের তরুণ সমাজ যেন অসাম্প্রদায়িক, চরিত্রবান এবং স্বদেশানুরাগী হয়ে দেশের কল্যাণে আত্মনিবেদন করে।এই তাদের কাছে আমার একমাত্র নিবেদন।
মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোগী বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী আজ ১০৩ বছরে পদার্পন করলেন।সকাল আটটা থেকে তার বাসায় অনুরাগী ভক্তরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় শুভেচ্ছা জানাবেন।
১৯০৯ সালের ১০ জানুয়ারী বোয়ালখালীর উত্তরভূর্ষী গ্রামে জন্ম নেন। ফটিকছড়ি করোনেশন স্কুলের মেধাবী ছাত্র রামকৃষ্ঞ বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হন। ১৯২৭ সালে বিপ্লবে দীক্ষা নিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের গোপন বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন এই বিপ্লবী।১৮ এপ্রিল ১৯৩০ অস্ত্রগার লুঠ অভিযানে মাস্টারদার সাথে অংশ নেন। ২১ এপ্রিল ১৯৩০ জালালাবাদ যুদ্ধের সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
ব্যক্তিজীবনে তার স্ত্রী বিভা চৌধুরী বীর কন্যা প্রীতিলতার কর্মস্থল চট্টগ্রামের অপর্ণা চরণ গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ২০০৯ সালে মারা যান। দুই ছেলে সুবীর চৌধুরী ও বিবেকানন্দ চৌধুরী। সুবীর চৌধুরী ৩০ বছর বয়সে কোলকাতায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। আরেক ছেলে বিবেকানন্দ কোলকাতায় এক ব্যাংকে চাকরী করেন।তার স্ত্রী উপালী চৌধুরী সহ চট্টগ্রামে এসেছেন বাবার জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে।বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর নাতি সোমশুভ্র চৌধুরী আর্কিটেক্ট ।কোলকাতার এক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
অধ্যাপিকা ড. রীতা দত্ত বলেন , বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী তার একমাত্র পুত্র, নাতির মায়া এবং কোলকাতার নিশ্চিন্ত জীবনের হাতছানি ত্যাগ করে নিজ ভূমি চট্টগ্রামে থেকে গিয়ে এই বিপ্লবী যে দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছেন তা যেন আমাদের নতুন প্রজন্ম অনুসরণ করে।
এই বিপ্লবীর পুত্র বিবেকানন্দ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, “আমার বাবার এদেশে থেকে যাওয়ার পেছনে একটি ইতিহাস আছে।তাই বাবাকে আমাদের কাছে নিতে কখনো জোর করিনি।দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের একটি শপথ ছিল যে যেখানে আছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে থেকে যাওয়া।অনেক কমিউনিষ্টের জন্যেও এই শপথ রক্ষা সম্ভব হয়নি। এই যাওয়াটা অযৌক্তিক ও নয়।
আজীবন নির্লোভ নি:স্বার্থ এবং ত্যাগী এই বিপ্লবী ' স্বাধীনতা পদক 'এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অনুদানের সব টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন এই বিপ্লবী। এর মধ্যে এশিয়াটিক সোসাইটিকে তিন লাখ টাকা এবং অন্যান্য অনুদান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছেন মাস্টারদা সূর্যসেন স্মারক বক্তৃতার জন্যে। সেই অনুদান এখনো ছাত্রদের হাতে দেয়া হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করলেন মহান এই বিপ্লবী। #### সুমি খান/ ০৯/০১/১২

No comments:

Post a Comment