Sunday, March 3, 2013

রাজীব হত্যাকারী পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে:সাত দিনের রিমান্ডে


ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এই দলের আরও দুজনকে পুলিশ খুঁজছে।নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বেলাল আহমেদের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে।

সাত দিনের রিমান্ডে গ্রেপ্তার ছাত্ররা
ডিবির উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আজ শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ডিবি কার্যালয়ে শনিবার এ ব্যাপারে সংবাদ ব্রিফিং করা হয়। সেখানে জানানো হয়, ডিবি পুলিশ মো. ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ (২২), মো. মাকসুদুল হাসান অনিক (২৩), মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), মো. নাঈম সিকদার ইরাদ (১৯) ও নাফিস ইমতিয়াজকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা সবাই বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্ররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজকক্ষে নামাজ পড়তে গিয়ে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হন। সেই সূত্রে তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতেন।
ডিবির দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্ররা জানিয়েছেন, তাঁদের দলের এক বন্ধু একসময় বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁদের কিছু ব্লগের ঠিকানা দেন। সেখান থেকেই তাঁরা ‘থাবা বাবা’সহ কয়েকজন ব্লগারের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন এবং ‘থাবা বাবা’ নামধারী ব্লগারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের পলাশনগর এলাকার নিজ বাসার সামনের রাস্তায় রাজীবকে খুন করেন তাঁরা।

রাজীবকে হত্যার জন্য দুটি দল গঠন?

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্ররা পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাটি সম্পর্কে তাদের জানিয়েছে। সে ভাষ্য অনুযায়ী, রাজীবকে হত্যার পরিকল্পনার পর তাঁরা ‘ইনটেল গ্রুপ’ গঠন করেন। এই দলের কাজ ছিল ব্লগ ও ফেসবুক থেকে তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা ও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। আর রাজীবকে হত্যার জন্য তাঁরা ‘এক্সিকিউশন গ্রুপ’ গঠন করেন। প্রায় এক মাস তাঁরা রাজীবকে অনুসরণ করেছেন।

যেভাবে তাঁরা রাজীবকে খুন করেন

ডিবি পুলিশের কাছে দেওয়া ওই ছাত্রদের ভাষ্যমতে, ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে যান এবং ব্লগার রাজীবকে খোঁজা শুরু করেন। এর এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রাজীবের বন্ধুদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে তাঁরা রাজীবকে চিনতে পারেন। এরপর এই দলের সদস্য মো. এহসান রেজা রুম্মন শাহবাগ থেকে সাইকেলে করে বাসে ওঠা রাজীবকে অনুসরণ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যান। তিনি প্রথম দিন রাজীবের বাসা চিহ্নিত করতে পারেননি। পরে আবার তাঁকে অনুসরণ করে পলাশনগরের বাসাটি চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
এরপর কয়েক দিন ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা পলাশনগর এলাকায় রেকি করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা রাজীব কখন বাসায় আসেন, কখন বের হন, কার সঙ্গে ঘোরাফেরা করেন এবং কী ধরনের কাজ করেন—সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।
এই দলের সদস্য মো. মাকসুদুল হাসান অনিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র কেনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি নিজেই বাড্ডা নতুন বাজারের একটি দোকান থেকে চাপাতি ও ছোরা কেনেন। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে ১৫ ফেব্রুয়ারি দলের সদস্যরা সাইকেল ও বাসে চড়ে বিকেল চারটার দিকে পলাশনগরে রাজীবদের বাসার গলিতে অবস্থান নেন স্কুলব্যাগ, ক্রিকেটের ব্যাট ও বল নিয়ে। তাঁরা গলিতে ক্রিকেট খেলতে থাকেন এবং রাজীবের বাসায় ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
সন্ধ্যার দিকে রাজীব বাসার গেটের কাছাকাছি পৌঁছার পর এক্সিকিউশন গ্রুপের সদস্য মো. ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, মো. মাকসুদুল হাসান অনিক চাপাতি ও ছোরা দিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তাঁরা দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান এবং একটি চাপাতি রাস্তার মোড়ের পানের দোকানের সামনে ফেলে যান। এলোপাতাড়ি কোপ মো. মাকসুদুল হাসান অনিকের পায়ের জুতায় লেগে পায়ের বুড়ো আঙুলের কিছু অংশ কেটে যায় এবং তিনি কাকরাইলে গিয়ে জুতা জোড়া জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড়ে ফেলে যান। এ ছাড়া তাঁরা একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের নালায় ফেলে যান।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত সরঞ্জাম উদ্ধার

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত দুটি চাপাতি, চারটি ছোরা, একটি বাইসাইকেল, এক জোড়া কেডস, সাতটি বিভিন্ন মডেলের মুঠোফোন ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইলে জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড় থেকে জুতা জোড়া উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের নালা থেকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের বিস্তারিত তথ্য

ফয়সালের বাড়ি ঢাকার মাতুয়াইলে। তিনি কোডা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাকসুদুলের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। তিনি ম্যাপললিফ থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁরা দুজনই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। এহসানের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় ও নাঈমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁরা উভয়েই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। নাফিসের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তিনি সানশাইন গ্রামার স্কুল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএতে ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বিভিন্ন এলাকায় অভিযান

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য পশ্চিম বিভাগের ডিসি মোল্লা নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এডিসি মশিউর রহমান, এডিসি মানস কুমার পোদ্দার ও জ্যেষ্ঠ এসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির একাধিক দল ঢাকার কাকরাইল, বারিধারা, বসুন্ধরা, পান্থপথ ও খিলগাঁও এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজীব হত্যায় জড়িত সন্দেহে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন রাজীব

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের পলাশনগরে নিজ বাড়ির সামনে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এ ব্যাপারে পল্লবী থানায় মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে।
প্রাথমিক তদন্তে হত্যার সঙ্গে সাতজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় ডিবি পুলিশ। পলাতক অন্য দুজনকে ধরতে পুলিশ তত্পরতা - See more at: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-02/news/333300#sthash.ER0PlaLV.dpuf

No comments:

Post a Comment