Wednesday, October 23, 2013

তিনি ক্ষমা করার কে- ক্ষমা তো তাঁকেই চাইতে হবে-মুনতাসীর মামুন


শাহরিয়ার কবির কয়েকদিন আগে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক হিন্দুপ্রীতি নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন দৈনিক জনকণ্ঠে। খালেদার এই সদিচ্ছাকে ‘ভূতের মুখে রামনাম’ বলে মন্তব্য করেছেন। শুধু তাই নয়, এটিকে তিনি এক ধরনের ভাঁওতাবাজি বলে মনে করছেন। খালেদা এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য খড়কুটো যা পাচ্ছেন তাই আঁকড়ে ধরছেন এবং সেটি স্বাভাবিক। এ অবস্থায় এতটা কড়া মন্তব্য না করলেও তিনি পারতেন। বরং এভাবে বললে বোধ হয় ভাল হতো যে, সব রাজনীতিবিদই এক আধটু ভাঁওতাবাজিতে অভ্যস্ত। কম আর বেশি। খালেদাও রাজনীতিবিদ, ফেরেশতা নন। আসলে, খালেদার প্রতি তার একটা ক্রোধ আছে। সেটিও স্বাভাবিক। দু’দুবার খালেদা তাঁকে জেলে পুরেছেন, অত্যাচার করেছেন তার ‘হিন্দুপ্রীতি’ ছাড়াবার জন্য। না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এখন সেই খালেদাই হিন্দুপ্রীতিতে গলগল, এটি খানিকটা গোলমেলে তো বটেই। শাহরিয়ার কবিরের বোঝা দরকার, সিচ্যুয়েশন প্রতি ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। এখানে সবাই দাবার ঘুঁটি। আবার সবাই কিস্তিমাতের জন্য চাল দেয়ার সুযোগ খুঁজছে। শাহরিয়ারের মধ্যে এখনও শিশুসুলভ ইনোসেন্স বিরাজ করছে। এই যে ডেভিড বার্গম্যান, যিনি প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ডকুমেন্টারি করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন, আমরা তার কত না ভক্ত ছিলাম। শাহরিয়ার তো তাকে নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দিলেন। সেই ডেভিড এখন বাংলাদেশে বসে নিয়মিত যুদ্ধাপরাধের পক্ষ নিয়ে চর্চা করছেন। আচ্ছা, আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেনের কথাই ধরুন। খালেদা-নিজামীর আমলে তিনি বলেছিলেন, ‘যে সংবিধানের কারণে আজ বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, সে সংবিধানের ওপর হামলা করায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর লজ্জিত হওয়া উচিত। আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যেখানে কোন আইনের শাসন নেই।... এ দেশে সাংবিধানিক শাসন নেই, আইনের শাসনও নেই। জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের কথা বলে জোট সরকার ক্ষমতায় বসেছে, অথচ সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা রাস্তায় চলাচল করার উপায়ও রাখছে না।’ এখানেই থেমে থাকেননি, বলেছেন, ‘তারা [বিএনপি জোট] নাকি সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সমঅধিকারের আন্দোলন করছে। ওই সকল ক্রিমিনালের সঙ্গে আমাদের সমঅধিকার হতে পারে না।’ [জনকণ্ঠ ২৪.০২.২০০৪] আর আজ ড. কামাল হোসেন কি বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে সংবিধান সংশোধনের পরামর্শ দিচ্ছেন না? আসলে, শাহরিয়ার অর্থ বা ক্ষমতার স্বাদ কোনদিন পায়নি।
আমার তো বেগম জিয়ার বক্তব্য শুনতে বেশ লাগে। বক্তব্য দেয়ার আগে পরিপাটি সুসজ্জিত হয়ে আসেন। তারপর সুন্দর সাজানো একটি রোবোটের মতো বলে যান। তাঁর গলা অবশ্য খানিকটা গনগনে, পরিপাটি সাজের সঙ্গে মেলে না, কিন্তু তাঁর অন্য একটি এ্যাফেক্ট আছে, কেমন যেন ক্রর, ক্রর। আর বক্তব্য তো এন্টারটেইনিং। কোন বক্তব্যের সঙ্গে পূর্ববর্তী কাজের মিল নেই। বর্তমান কাজের সঙ্গে তার অনুভবের মিল নেই। থিয়েটারের কি বলে যেন, বীভৎস রসের স্বাদ পাওয়া যায়, নাটকের দর্শকরা কি তা উপভোগ করেন না?
যাক, ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে গেল। কী করব, বাঙালীর টিপিক্যাল স্বভাব আর গেল না। ফিরে আসি পূর্ব প্রসঙ্গে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় যে খালেদা আগে কখনও করেননি তা নয়, করেছেন। কিন্তু বিজয়ার শুভেচ্ছা বোধহয় এই প্রথম। প্রশ্ন, হঠাৎ তিনি বিএনপির মৌলিক আদর্শ থেকে পিছিয়ে এলেন কেন? তারপরের প্রশ্ন, বিএনপির মৌলিক আদর্শ কী? দু’টি প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে দেয়া যায়। মৌলিক আদর্শ হলো, বাবু কালচারের বাবুদের বাংলায় বলা যায়, ঘোমটার নিচে খেমটা নাচ। সামনে ঘোমটাটা হচ্ছে ইসলাম, ঐ আফিম দিয়ে বা ঐ নামে জিকির তুলে মানুষকে ‘ঐক্যবদ্ধ’ করা ও আওয়ামী এবং হিন্দুদের নিকেশ করা। পাকিস্তানীদের মতো আওয়ামী লীগার ও হিন্দুদের তারা একই মনে করেন। পাকিস্তানীদের মতো ভুল বললাম, এদের দেহ বাংলাদেশী, দিল পাকিস্তানী। এ কারণে তারা ব্যবহার করে দা, কুড়াল, বর্শা। খোকা বাবু এসব নিয়ে সম্প্রতি এই সব পাকিস্তানীদের তৈরি থাকতে বলেছিলেন। সুতরাং, তার এই হিন্দুপ্রীতি শাহরিয়ার কেন, সবাইকে চমকে দিয়েছে। এর কারণ, অনুমান করছি, আসন্ন নির্বাচনে, খালেদার হয়ত ধারণা, যদি হয়, তাহলে বহুল পরিমাণে অন্যান্য সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট দরকার। নির্বাচনে শুধু জয়ী হওয়ার জন্য নয়, এটাও প্রমাণ করা যে, তিনি শুধু রাজাকারদের বা পাকিস্তানীমনাদের নেতা নন, তিনি হিন্দু বা ‘ভারতীয়মনা’দেরও নেতা। এই ভঙ্গি করা বিশেষ জরুরী হয়ে পড়েছে এ কারণে যে, জামায়াত পিতা মওদুদীর পুত্র সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে এসে বলে গেছেন, খালেদার পার্টনার জামায়াত নেতারা অবৈধ। জারজ শব্দটা তিনি বলেছেন, আমি আর সেটা উল্লেখ করলাম না। হিন্দু চাকরবাকর দু’একজন আছে অবশ্য খালেদার কিন্তু তাদের সবাইকে হিন্দু রাজাকার হিসেবেই জানে। যা হোক খালেদা যে শুধু পাকিস্তানীমনা জারজদের নয়, বাঙালীদেরও নেতা এই ইমেজটা আন্তর্জাতিক পটভূমিকায়ও খুব জরুরী হয়ে উঠেছে। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড দ্বারা প্রমাণিত যে তিনি, দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসীদের নেতা, এও পাকিস্তানীদের নেতা, পুরনো পাকি বা যুদ্ধাপরাধীদের নেতা। আরও আছে, তিনি জঙ্গীদের নেতা, তিনি মৌলবাদী জঙ্গীদের নেতা, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মাতা।
বিজয়ার অনুষ্ঠানে যারা গিয়েছিলেন তাদের একজন এসে বিস্ফোরিত চোখে জানালেন, ভাই একি কা-! খালেদা জিয়া হলে ঢুকলেন আর হিন্দু রমণীরা উলুধ্বনি দিয়ে উঠলেন। এই উলুধ্বনিকে হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া একসময় তুলনা করে চিৎকার করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ এলে মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। এখন তিনি যে অবগাহন করলেন উলুধ্বনিতে তার কী হবে? তাঁর কাছে কি এই উলুধ্বনি আযানের চেয়ে মধুর শুনিয়েছে? পরে কি তিনি শুদ্ধ হওয়ার জন্য কয়েকবার স্নান করেছেন? উলুধ্বনি বিষয়ে তার ব্যাখ্যা জরুরী। নাহলে প্রকাশ্যে তিনি আমাদের বলতে বাধ্য করবেন যে, তিনি একজন ভাঁওতাবাজ। মিথ্যাবাদী। অন্য রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাঁর কোন তফাত নেই। শাহরিয়ার লিখেছেন, এই উলুধ্বনি খালেদার কানে নিশ্চয় গরম সিসা ঢেলে দিয়েছে। হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি দিয়ে খালেদার হিন্দু নিধনের জবাব দিয়েছেন। শাহরিয়ারের জ্ঞাতার্থে বলি, ধর্মমতে, মুনাফেকদের কানে গরম সিসা আগে থেকেই ঢালা আছে।
খালেদা-নিজামীর আমলে যত হিন্দু নারী ধর্ষিত হয়েছেন, সেটি ১৯৪৭ সালের পর বিভিন্ন দাঙ্গায়ও হয়নি। এই ধর্ষিতাদের প্রতীক পূর্ণিমা, সীমা আরও অনেকে। খালেদা-নিজামীর আমলে যত হিন্দু দেশ ত্যাগ করেছেন, ১৯৪৭ সালের পর এত হিন্দু কখনও ভিটেমাটি ত্যাগ করেননি। আপনারা মফস্বলের খবর রাখেন কিনা জানি না। সাদেক হোসেন ধোঁকার দা কুড়াল বর্শার থিওরির পর বরিশালের প্রচুর হিন্দু ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন। জনকণ্ঠের মফস্বলের পাতায়ই সে খবর বেরিয়েছে। যে সব হিন্দু বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছিলেন তারা যেন এসব তথ্য মনে রাখেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি খালেদার একটি বিখ্যাত উক্তি আমি ক্ষমা করে দিলামের কথা মনে হলো। নির্বাচন বিষয়ে সরকারের প্রস্তাবের বিপরীতে, না, না, না, বলার সময় তিনি হঠাৎ ঘোষণা করেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে যারা আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতীতে নানারকম অন্যায়-অবিচার করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন, আমি তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করছি। আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। সরকারে গেলেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ নেব না।
আমি কথা দিচ্ছি, আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ও অধিক নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার কাজে। প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মতো কোন ইচ্ছা ও সময় আমার নেই। [কালের কণ্ঠ, ২২.১০.১৩]
এ প্রসঙ্গটি ছিল সেই সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। এই ক্ষমাতত্ত্ব এত জরুরী মনে হলো কেন? তার একটি কারণ, তিনি জানেন, তিনি যত পরিপাটি হয়েই বক্তৃতা মঞ্চে আসুন না কেন, তাঁর ক্ররতার যে জবাব নেই তা মানুষজন জানেন। জেনারেল জিয়া যে রকম ক্রর ছিলেন, তিনিও তার চেয়ে কম নন। জেনারেলের যোগ্য স্ত্রী। তাঁর ২০০১-০৬ সালের শাসন যে মানুষ ভোলেনি এটি আর কেউ না হলেও তিনি ভাল জানেন। অপরাধী সবসময় আগ্রাসী হয়। কেন তিনি হঠাৎ এমন বলছেন সেটি জিজ্ঞাসার দায়িত্ব ছিল ক্ষমতাবান সাংবাদিকদের। কিন্তু তারা হচ্ছেন এমবেডেড জার্নালিস্ট। খালেদা বা বিএনপির নেতারা কোন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন না। সাংবাদিকরা সেটা জেনেও যান। প্রেস রিলিজটা নিয়ে আসার জন্য। কারণ, খোকার দা কুড়াল যে সত্যি তা তারা জানেন। আরও জানেন, বিএনপি নেতারা অর্থ খরচে কার্পণ্য করেন না।
খালেদার ক্ষমাতত্ত্বে অনেকে উদ্বেলিত হয়েছেন। তার বদান্যতায় তারা আপ্লুত। সব নবীই তো ক্ষমা করে গেছেন মূর্খদের। খালেদাও করলেন। উদ্বেল অবস্থা কেটে গেলে তার বক্তব্যটি পর্যালোচনা করে দেখুন। এমন স্বার্থপর ক্ষমা প্রদর্শন আগে কেউ করেছেন কী না সন্দেহ। তিনি তাঁর ও তাঁর দুই পুত্রের যারা সমালোচনা করেছেন তাদের ক্ষমা করেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন সরকারকেও। কারণ, তারা তাঁর এক পুত্রের চুরি ধরে টাকা ফেরত দিয়েছে সরকারকে। সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের টাকা খাওয়া ভবন, যা হাওয়া ভবন নামে পরিচিত, তার সমালোচনা করেছেন, তাদের তিনি ক্ষমা করলেন। কিন্তু এগুলো কি ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণ? না, সত্য তথ্য। সত্য তথ্যকে অবলীলাক্রমে তিনি অপবাদ আখ্যা দিলেন! তাঁর পুত্রদের প্রতি কে অন্যায় অবিচার করেছে? আমরা বা আওয়ামী লীগ? না জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল ও আদালত। তিনি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চান না? তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাসই হচ্ছে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ইতিহাস। এখনও তিনি বলছেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন [জনকণ্ঠ, ২১.১০.১৩]। অর্থাৎ এখনও মিথ্যা বলছেন। তিনি আমলাতন্ত্রকে ইঙ্গিত করে বলছেন, তাদেরও তিনি ক্ষমা করলেন।
অথচ একতরফা ক্ষমা ঘোষণার দু’তিন দিন আগে বলছেন, কোর্ট চলছে সরকারী নির্দেশে। সরাসরি অবমাননা। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুল জারী করলেও বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে চুপ। খোকার দা কুড়াল যে কথার কথা নয় বিচারকরাও তা জানেন। সোহরাব হাসানের ভাষায় বলতে হয় ‘তিনি ক্ষমা করলেন, ক্ষমা চাইলেন না।’
না, বেগম জিয়া ক্ষমা চাইতে পারেন না। তিনি জেনারেল পত্নী, আত্মগর্বে বলীয়ান। তাদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতে হয়। এবং একমাত্র সাধারণ মানুষই পারে নির্বাচনে যথাযথভাবে পরাজিত করে তাঁকে ক্ষমা চাওয়াতে। এই পরাজয় হবে, তাঁর কৃতকর্মকে ক্ষমা না করা। অন্য অর্থে, তাঁর ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমতাগর্বী এই মহিলা ঘোষণা করেছেন, তাঁর ভবিষ্যত সরকার [তিনি ধরেই নিয়েছেন তিনি জয়ী হবেন] হবে সব নাগরিকের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার। অর্থাৎ রাজাকার জামায়াতী, হেফাজত বা এক কথায় হেজাবি ও ধর্মব্যবসায়ীদের সরকার। আসলে, তিনি কোন ক্ষেত্রে কোন ছাড় দিতে রাজি নন। ছাড় অন্যদের দিতে হবে। না হয় সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক কেউ স্থান পাবে না। অর্থাৎ হেজাবিদের তিনি ছাড়বেন না।
আমি বরং বেগম জিয়াকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি আমাকে রিমান্ডে নিয়ে [তাঁর ভাষা ধার করে বলতে হয় তখন তাঁর নির্দেশে কোর্ট চলত] জেলে পুরে অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। তাঁকে তো জেলে নেয়ার নাম করে বিলাসবহুল অট্টালিকায়ই রাখা হয়েছে। রিমান্ডেও নেয়া হয়নি। তার থেকে ক্ষমা করার অধিকার আমার বেশি। আমি ব্যক্তি হিসেবে তাকে ক্ষমা করলাম। প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যরা তাকে ক্ষমা করছে কিনা? বা অন্য কথায় তিনি ক্ষমা করার কে? এই ক্ষমার অধিকার তিনি পেলেন কীভাবে? সেটি কি ঈশ্বর প্রদত্ত না খোকা বা ধোঁকার রাম দা, চাইনিজ কুড়াল আর তীক্ষè বর্শার জোর?
সমষ্টিগতভাবে খালেদা জিয়া ও তাঁর ঠ্যাঙ্গাড়ে দল বা বাহিনীকে ক্ষমা করা যায় না অন্তত কয়েকটি কারণে-
১. তিনি বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে মিথ্যা বলছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক এটি মানতে তিনি রাজি নন। তিনি ইতিহাস বিকৃত করছেন। অতএব বাঙালী জাতির কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ইচ্ছাকৃতভাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ হওয়ার তারিখটি নিজের জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করে ৬০/৬৫ পাউন্ডের কেক কাটছেন। এটি জাতির জনকের শুধু অবমাননা নয়, তাঁর লেফটেন্যান্ট মওদুদের ভাষায় রুচি বিগর্হিত। আমরা বলব ধৃষ্টতা।
৩. তিনি যুদ্ধাপরাধী বা আলবদর রাজাকারদের ক্ষমতায় এনেছেন। তারা যখন রাষ্ট্রীয় পতাকা গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন তখন তা ছিল ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতি ও ৬ লাখ বীরাঙ্গনার বুকে লাথির মতো। রাজাকারদের আলবদরদের নেতাকে আর যাই হোক ক্ষমা করা যায় না।
৪. ধর্ম নিয়ে মিথ্যা বলা যা ধর্মদ্রোহিতার সমান। যেমন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে।
অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করা যাবে কিনা তা বিবেচনা করা যেতে পারে-
১. তার আমলে হিন্দু মুসলমান নারী। বিশেষ করে নির্যাতিতা হিন্দু নারীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. যে সব খ্রীস্টানের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. তাঁর নির্দেশে তাঁর ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনীর নেতাদের অত্যাচারে যে সব হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছেন, দেশ ত্যাগ করেছেন তাদের লুণ্ঠিত টাকা, মালামাল ফেরত ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. তাঁর ও রাজাকারদের আমলে যে ৩২০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে ও আওয়ামী লীগার ও সমর্থকদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, তাঁদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
৫. জঙ্গী মৌলবাদী ও হেফাজতীদের সাহায্যে মানুষ হত্যা, দমন-নিপীড়ন, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, কোরান পোড়ানোতে সাহায্য করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. তাঁর দুই পুত্রের অপকর্মের জন্য সরকার ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অপকর্মের সাজা দিয়ে তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতাগ্রাসী প্রবণতাকে বন্ধ করতে হবে এবং এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৭. যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
না, ক্লান্ত লাগছে। বাংলাদেশে আর কোন মহিলা দেশ জাতি মানুষের এত ক্ষতি করেননি। এত দুষ্কর্মও করেননি। তাঁর ক্ষমা চাওয়ার ফিরিস্তি দিতে গেলে বড়সড় একটি বই লিখতে হবে। আমি তো মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করলাম। তিনি ক্ষমা করার কে? আমরা তাকে ক্ষমা করব কিনা সেটাই বিবেচ্য।

No comments:

Post a Comment