Sunday, October 20, 2013

পাকিস্তানী জারজদের রাজনীতিও মানতে হবে? -মুনতাসীর মামুন


নাথান থর্নবার্গ চিলির সান্তিয়াগো থেকে সাপ্তাহিক টাইম পত্রিকার জন্য একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। চিলিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসন্ন। সেখানে একজন প্রার্থী মিশেল বাখেলেত। বয়স ৬২। আগেও তিনি চিলির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মাঝখানে জাতিসংঘের মহিলা সম্পর্কিত বিষয়ে নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। ৬২ বছরের এই মহিলার বাবা ছিলেন এক সময় চিলির বিমানবাহিনীর একজন জেনারেল। পিনোচেট ক্ষমতা দখল করলে তাঁকে হত্যা করা হয়।
সান্তিয়াগো থেকে খানিকটা দূরে তালাগান্তে নামক ছোট এক শহরের টাউন স্কোয়ারে মিশেলের নির্বাচনী সভা। তিনি বলছিলেন কোন অপর পক্ষ [প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর ছেলেবেলার বান্ধবী, যার বাবাও ছিলেন এয়ারফোর্সের জেনারেল। এবং রটনা আছে তাঁর বাবাই মিশেলের বাবাকে নিপীড়ন করে হত্যা করেন]-কে কী কী কারণে ভোট দেয়া উচিত নয়। কারণ, মিশেলকে বলতে হলো না, নিচ থেকে একজন চিৎকার করে বললেন, ‘তাদের কোন স্মৃতি নেই।’
এই স্মৃতি এখন চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি ইস্যু। সেই স্মৃতি ইস্যুটি কী? ৪০ বছর আগে, ১৯৭৩ সালে চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকে হত্যা করে জেনারেল পিনোচেট ক্ষমতা দখল করে নেন। আমেরিকার সাহায্যে আলেন্দে চিলির অধিবাসীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন যা কহতব্য নয়। আধুনিক ইতিহাসে তা ‘ডার্টি ওয়ার’ নামে খ্যাত। ঐ সময় সরকারী হিসেবে হত্যা করা হয়েছে ৩,২০০ জন, ২৯,০০০ জনকে নির্যাতন করা হয়েছে এবং নির্বাসনে গেছেন দু’ লাখ। পাবলো নেরুদাকে সে সময় নানা হেনস্থা করা হয় এবং সেই সময় তিনি মারাও যান। ঐ স্মৃতি চিলির লেখকরা, সাংবাদিকরা অমর করে রেখেছেন। ইসাবেলা আলেন্দের উপন্যাস সে সময়ের দুর্দান্ত দলিল। পিনোচেট এক সময় তাড়িত হয়, তাকে কাঠগড়ায়ও দাঁড় করানো হয়। কিন্তু স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ায় তার বিচার সম্পন্ন হয়নি। এরপর চিলিতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চলছে। সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হচ্ছে। তার ঢেউ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলেও লেগেছে।
এ বছর আবারও নির্বাচনে স্মৃতি কেন ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে? কেননা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ইভালিন ম্যার্থেইর ওপর আলেন্দের ছায়া। সেই ছায়ায় বড় হয়ে ওঠা কাউকে চিলির বাসিন্দারা গ্রহণ করতে রাজি নন। যদিও ইভালিন ঐ সব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন এবং বলছেন এ কারণে জান্তার কৃতকর্মের জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়ারও কারণ নেই।
পিনোচেট যা করেছিলেন, আমাদের এখানে জেনারেল জিয়া তার চেয়ে ভয়ঙ্কর কা- করেছেন। পিনোচেট সেনাবাহিনী ও সিভিলিয়ান মিলে মাত্র ৩২০০ জন হত্যা করেছিলেন। জিয়া, বিভিন্ন বিবরণ অনুসারে এর চেয়ে বেশি সেনা হত্যা করেছিলেন। আমাদের সেনাদের মানস গঠন এমন ছিল যে, তাঁরা এরপরও জিয়াকে অবতার মনে করতেন। কিন্তু যে অপরাধে সবচেয়ে বেশি অপরাধী জিয়া সে কারণে তাঁর বিচার হয়নি, হওয়া উচিত ছিল। হয়ত এক সময় হবেও। তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের দল ও রাজাকার-আলবদরদের ক্ষমতায় এনেছিলেন। এবং নামডাকঅলা আলবদর রাজাকারদের মন্ত্রী, স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। অর্থাৎ ৩০ লাখ হত্যাকারীর ক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন। এটি কম গুরুতর অপরাধ নয়। দেশদ্রোহমূলক অপরাধ। তাঁর কারখানা থেকে বাংলাদেশে নও মুসলিমদের মতো নও রাজাকারদের উৎপাদন করা শুরু করলেন। রাজাকার ফ্যাক্টরির উৎপাদন বেড়েছে এবং তাদের জন্য বাংলাদেশে বাজার পেয়েছে এ কথা স্বীকার না করার অর্থ বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। যারা জিয়াকে ১৯৭৫ সালের পর সমর্থন করেছেন তাদের মুক্তিযোদ্ধা না বলাটা শ্রেয়। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা একটি প্রত্যয় যাকে খ-িতভাবে শুধু ১৯৭১ সালের ৮/৯ মাসের ঘটনায় বিচার করা যাবে না। জিয়াউর রহমানই প্রথম মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও লাঞ্ছিতদের স্মৃতি অবলোপনের কাজটি শুরু করেন। এ কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন নিশানই পাকিস্তান প্রাপ্ত জেনারেল এরশাদ। স্বৈরাচারী এই বৃদ্ধ এখনও রাজনীতির মাঠ দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। এরপর জেনারেলপতœী ও যুদ্ধাপরাধীদের সময়। এই সময় ঠিক কতজনকে খুন, গ্রেফতার এবং নিপীড়ন করা হয়েছে তা জানা যাবে না। এদের দোসর তখনকার সেনাপতি [নাম ভুলে গেছি] সেনাবাহিনীর সাহায্যে ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে ৪৯ জনকে হত্যা করে যার বিচার হয়নি। এই জেনারেলকে নিয়ে কিছু মানবাধিকার কর্মীর তিন উদ্দিনের সময় নাচানাচি সবার চোখে পড়েছে। শেখ হাসিনার সম্পাদনায় বেশ কয়েক বছর আগে দু’খ-ে একটি বই বেরিয়েছিলÑ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নমুনা।’ এর দু’খ-ে ৮০০ পাতায় বিএনপি-জামায়াত আমলে যেসব হত্যা করা হয়েছিল তার বিবরণ আছে। শেখ হাসিনা সম্পাদনা করেছেন দেখে তা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কারণ, প্রতিটি ভুক্তি ডকুমেন্টেড, চিত্রের সংখ্যাও কম নয়। প্রতি পাতায় গড়ে ৪টি এন্ট্রি থাকলে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩,২০০।
একেবারে পিনোচেটের রাজত্বকালের সমান।
আমাদের দেশেও নির্বাচন আসন্ন [যদি হয়]।
শেখ হাসিনা প্রতিটি ভাষণে খালেদা-নিজামীদের অত্যাচারের কথা, যুদ্ধাপরাধীদের কথা তুলে ধরছেন। অনেকে বলছেন, এসব বকওয়াজ আর কত? তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি, দুর্নীতি-মামলার দাবি যদি বকওয়াজ না হয়, এটি বকওয়াজ হবে কেন? এই প্রচারের কারণ, পুরনো ডানপন্থী শক্তিশালী এস্টাবলিশমেন্ট চায় না এসব প্রসঙ্গ আবার আলোচনায় আসুক।
চিলিতে এই স্মৃতির প্রসঙ্গ আবার আসছে কেন?
কারণ, বিভিন্ন সরকার ও নাগরিকরা নিহতদের সমাধি, স্মৃতিচিহ্ন অক্ষুন্ন রেখেছেন। নিপীড়ন কেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ করেছেন। মানুষ এবং পর্যটকরা নিয়ত সেখানে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, চিলির টিভিতে ‘প্রহিবিটেড ইমেজ’ বা ‘নিষিদ্ধ চিত্র’ নামে একটি সিরিজ দেখানো হচ্ছে। পিনোশের ও সেনাবাহিনীর ডার্টি ওয়ারের অনেক অজানা ফুটেজ পাওয়া গেছে, যা মানুষকে আবার ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। ফলে এস্টাবপন্থী ডানে-রা খানিকটা বিপদে আছে।

আমাদের এখানে কী হচ্ছে? জিয়াউর রহমান ও তাঁর উত্তরসূরিদের কথা দূরে থাকুক যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেই এস্টাবলিশমেন্ট একটি শক্তি তৈরি করেছে। এবং টাকা কিভাবে আদর্শ বদলে দেয় তার নমুনা হরদম পাওয়া যাচ্ছে। এক সময় ডেভিড বার্গম্যানকে আমরা সমর্থন করেছি, তাঁর প্রচার করেছি যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তিনি একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলেন। সেই ডেভিড এখন নিয়ত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লিখছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচিতদের পত্র-পত্রিকা তা ছাপছে। কয়েকদিন আগেও ডেভিড ডেইলি স্টারে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লেখার সুযোগ পেয়েছেন। যদ্দুর মনে পড়ে তিনি কাদের মোল্লার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিচার প্রক্রিয়ায় দু’একটি ত্রুটি থাকতেও পারে সে জন্য কাদের মোল্লা মুক্তি পেতে পারে না, কোন অনুকম্পা পেতে পারে না। কারণ, কাদের মোল্লা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেনÑ এটি তো সত্য। ডেভিড যে চারজনের ওপর তাঁর ডকুমেন্টারি করেছিলেন তার মধ্যে আশারাফ-মঈনুদ্দিন ছাড়া বাকিরা ‘নামি’ কোন যুদ্ধাপরাধী নয়। তাদের খুনী হিসেবে তুলে ধরে তখন তিনি আফসোস করেছেন তাঁদের বিচার হচ্ছে না বলে। তাঁরা খুনী হলে কাদের মোল্লা নন? বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটি ধরে যদি কাদের মোল্লা ছাড়া পান তা’হলে তা হবে ন্যাচারাল জাস্টিসের বিরুদ্ধে। আজ পর্যন্ত যে সব যুদ্ধাপরাধীকে হত্যা করা যায়নি, তাদের বিচার হয়েছে এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটি আছে কি না আছে সেগুলো বিচার না করে প্রত্যেকের দন্ড দেয়া হয়েছে এবং আশ্চর্য, বার্গম্যান হচ্ছেন ড. কামাল হোসেনের মেয়ের জামাই, যেই কামাল হোসেন যিনি ১৯৭৩ সালের আইনের একজন প্রণেতা।
এ প্রসঙ্গে আরেকজন ব্রিটিশ জুলিয়ান ফ্রানসিসের কথা ধরা যাক। তাঁকে বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দিয়েছে। ডেভিডের প্রবন্ধ পড়ে তিনি সেই ডেইলি স্টারেই লিখেছেন [লেখাটি ছাপা হয়েছে নিশ্চয় স্টারের নিরপেক্ষতা তুলে ধরার জন্য], ‘যে একজন বাংলাদেশের জন্ম দেখেছে, তার যাছে এটি কষ্টের এবং অসুবিধাজনক এটা বুঝতে যে, অনেক বাঙালী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে। হ্যাঁ, ন্যায্য বিচার হতে হবে। [ডেভিডের ভাষা] অনেকে এখন গণহত্যা হয়েছে বলেও মানতে চান না। কেউ যখন এসব কথা আমাকে বলেন বা এসব কথা পড়ি তখন আমি শুধু ক্রুদ্ধ নয়, খুব অবাক হই।’ আমাদের স্মৃতিহীনতা যে আমাদের একটা বড় অংশকে অসভ্য করে তুলেছে সেটিই এ মন্তব্যে স্পষ্ট। বিদেশী ও সভ্য মানুষ দেখে জুলিয়ান আমাদের সেই অংশটিকে জারজ বা হারামজাদা বলেননি।
এ প্রসঙ্গে জুলিয়ান লেখেন, ১৯৭১ সালে শরণার্থী ক্যাম্পে তিনি ১০ বছরের এক বালিকার মুখোমুখি হলেন। সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে। বালিকাটি নিষ্কম্পস্বরে বলছিল, আমার বাবা-মা, পাঁচ ভাই ও এক বোনকে হত্যা করেছে পাকিস্তানী সেনারা। আমি এখন কী কবর? এ প্রশ্ন তার মতো ছিল আরও অনেকের। জুলিয়ান লিখেছেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয় তরুণদের ভালভাবে জানা উচিত।
শুধু জানা নয়, প্রত্যাখ্যান করা উচিত। যারা এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে নানা তর্ক করেন তাদেরও প্রত্যাখ্যান করা উচিত। রাজনীতির নামে তারা ঐসব স্মৃতিকে মুছে দিতে চায়।

বর্তমান নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু প্রধান ইস্যু নয়। অনেকে কৌশলীভাবে এটিকে মূল ইস্যু বলতে চান। এটি নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ইস্যু। মূল ইস্যু, এখানে মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক রাজনীতি, যা মূল ধারার রাজনীতি চলবে, না বিচ্যুত ধারা, যার প্রতিভূ ১৮ দল, সেটি চলবে। যদি ক্ষমতায় না আসে ১৮ দল তবে তাদের রাজনীতির প্রভাব বহুলাংশে হ্রাস পাবে। আওয়ামী লীগবিরোধিতা থাকুক, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার ও বিরোধী দলের রাজনীতি হবে বাংলাদেশভিত্তিক। পাকিস্তানী মানসের, যুদ্ধাপরাধের রাজনীতি এখানে চলতে দেয়া যাবে না।
টাকার প্রশ্ন তুলেছিলাম। টাকা এখন যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালেও পৌঁছেছে। এতে অনেকের মতিভ্রম হবে, অনেকের মতলবী চেহারাটা পরিষ্কার হবে। হচ্ছেও। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, শুনেছি কাদের সিদ্দিকী আমাদের অনেকের প্রতি লেখার মাধ্যমে লোষ্ট্র নিক্ষেপ করছেন। যার যা কাজ করবেন তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি যখন শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন নিজেকেই খাটো করেন। বাচ্চু আমাকে একদিন দুঃখ করে বলেছিল, কাদের সিদ্দিকী প্রশ্ন তুলেছেন আমি আবার মুক্তিযোদ্ধা হলাম কবে, কয় নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি? এ ধরনের প্রশ্ন ওঠালে তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন সে প্রশ্নও উঠবে।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর বা আমাকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে থেকে আমরা অন্যায় করেছি। তা’হলে সে সময় দেশে অবস্থানরত ছয় কোটিও অন্যায় করেছিল। কবি ইকবালের ভাষায় বলতে হয়, ‘আরে ভাই হাম ওফাদার নেহিতো তুভি দিলদার নেহি।’ আমি বা ছয় কোটি বাংলাদেশের প্রতি ‘অবিশ্বস্ত’ ছিলাম, আপনি [ও কি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী ছিলেন]? থাকলে, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনকারী ১৮ দল বা তাদের চাকর-বাকরদের সঙ্গে হাঁটাহাঁটির দরকার ছিল না। তিনি কি খোঁজ নিয়েছেন কেন তার উপাধি পাল্টে মানুষজন ব্রিজোত্তম সিদ্দিকী বলে? যত অপরাধই করি ভারতেশ্বরী হোমসের মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখল করতে যাইনি।
স্মৃতিহীন মানুষ পরিবারেও এক সময় বোঝা হয়ে ওঠে, ঘনিষ্ঠরাও তখন তার আশু মৃত্যু কামনা করে। যাঁরা ১৯৭১ ও ২০০১-৭ সালের স্মৃতি ভুলে যাবেন রাজনীতির স্বার্থে, রাজনীতিতে এক সময় তাঁরাও বোঝা হয়ে উঠবেন। আপাতত হয়ত স্বার্থ উদ্ধার হবে। মনে রাখা দরকার, জামায়াত গত তিন বছরে প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পেয়ে যা করেছে, ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের একটা বড় অংশকে হয় মরণপণ যুদ্ধ করতে হবে, নয় দেশ ত্যাগ বা মৃত্যুবরণ করতে হবে। মওদুদীপুত্র জামায়াতকে জারজ বলতে দ্বিধা করেন না আর পাকিস্তানের জারজ তাদের বন্ধু বলে ডাকতে দ্বিধা করে না।
সামনের বন্ধুর পথ মানি। ১৯৭১ ও ২০০১-৭ সালেও তাই ছিল। কিন্তু স্রেফ আদর্শ ও বিশ্বাসের জোর থাকায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা জিততে পারেনি। স্মৃতিও টাটকা ছিল। এ প্রসঙ্গে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কয়েকটি মন্তব্য স্মর্তব্য। লিখেছিলেন তিনি, ‘এই নশ্বর দুনিয়ায় সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়, সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, বেঁচে থাকে কেবল ভাবনা, আদর্শ এবং স্বপ্ন।... যে ধারণার জন্য কোনও ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত থাকে। সহস্র জীবনের মধ্য দিয়েই সেই ধারণার বারংবার পুনর্জন্ম হয়। [আর] ‘এই ভাবেই ভাবনা, আদর্শ ও স্বপ্ন এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বাহিত হয়ে চলে...এ জগতে ত্যাগ ও ক্লেশ স্বীকার ছাড়া কোনও আদর্শ পূর্ণতা পায়নি।’ মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন কি এই মন্তব্যের উদাহরণ নয়?

No comments:

Post a Comment