Friday, October 25, 2013

নষ্ট গিয়াস কামালের চোখে : একুশে টিভি, ড. হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা -তার কন্যার প্রেমিক রিক্সাচালকের হামলা এবং সালীম সামাদ তথ্যসন্ত্রাসী

ড. হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন -
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক
সব সংঘ-পরিষদ; চলে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে-চ’লে যাবে এই সমাজ-সভ্যতা-সমস্ত দলিল
নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চলে গেছে নষ্টদের অধিকারে। চ’লে যাবে শহর বন্দর ধানক্ষেত কালো মেঘ লাল শাড়ি শাদা চাঁদ পাখির পালক
মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ পবিত্র প্যাগোডা।

কবিতাটা মনে পড়লো এক নষ্ট লোকের মৃত্যুর খবর শুনে।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে একুশে টেলিভিশন এক যুগান্তকারী অধ্যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে দেয়ার প্রত্যয়ে মানবতার কল্যাণে সায়মন ড্রিংয়ের নেতৃত্বে এই টেলিভিশন গণমানুষের অধিকারের কথা বলতো। জাতীয়তাবাদী-জামায়াত চক্রের সাংবাদিকদের শীর্ষ সর্দার গিয়াস কামাল চৌধুরী একুশে টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার জন্য হাইকোর্টে ১৯৯৯ সালে 'জনস্বার্থে' একটি মামলা দায়ের করেন। বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয়তাবাদী সরকার বন্ধ করে দেয় এই টেলিভিমন। এর নাট বল্টু খুলে নিয়ে এনটিভি -আর টিভি শুরু করেন বেগমের উপদেষ্টা ফালু সাহেব। এই ইতিহাস সবার ই জানা। আরো জানা আছে সেই একুশে টিভি এখন জাতীয়তাবাদী-জামায়াতী শক্তির মিথ্যাচারের শক্ত হাতিয়ার। সত্যি সেলুকাস! মঙ্গলযাত্রা কী আর মঙ্গলেই থাকে? অমঙ্গলেই যাত্রা হলো তার!এখনো তবু আমরা স্বপ্ন দেখি -শুভ শক্তির জয় হবেই একদিন!!
হুমায়ুন আজাদ স্যারের উপর হামলার পর কোন একদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে দৈনিক খবরপত্র হেডলাইন পড়ে চমকে উঠি। গিয়াস কামাল চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকাটির রিপোর্টের ভাষা এবং তথ্য এতোটাই নোংরা এতোটাই ঘৃণ্য , যা সভ্য সমাজের কলংক। তবু এই ঘৃন্য ব্যক্তিদের স্বরূপ উন্মোচনের জন্যেই তুলে ধরলাম তার মূল অংশ।
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদের কন্যার সাথে এক রিক্সাচালকের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেন নি হুমায়ুন আজাদ। তার কারণে সেই রিক্সাচালকের সাথে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। এর প্রতিশোধ নিতেই সেই রিক্সাচালক তার সঙ্গীদের নিয়ে হুমায়ুন আজাদের উপর রাতের অন্ধকারে এই হামলা করে। " খবরপত্রের পুরনো সংখ্যা সংগ্রহ করে বিশাল লীড রিপোর্টে রগরগে বর্ণনার এই মিথ্যা গল্প পড়ে পাঠক বুঝে নিতে পারেন গিয়াস কামাল চৌধুরীর চরিত্র।
সাংবাদিক সালীম সামাদ কে 'তথ্য সন্ত্রাসী ' হিসেবে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি বিএসএস থেকে। এর পর ই সালীম সামাদ কে গ্রেফতার করা হয়। একুশে টেলিভিশন
একাত্তরে নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনি। তার মা নাকি কবি ছিলেন । ধিক্ এমন জন্ম কে! যে সন্তান মাতৃহন্তা,যে সন্তান মাতৃভূমির প্রতি, জাতীয় পতাকার প্রতি কলংক লেপন করে দেয়-এমন সন্তান কে ধিক্কার জানাই।

খন্দকার মোশতাকের অনুসারী এই প্রবঞ্চক মিথ্যাবাদী এবং তার সমর্থকদের প্রতি যাদের এখনো শ্রদ্ধা আছে- তাদের বাস্তববাদী হয়ে আরেকবার ভেবে দেখবার অনুরোধ রইলো আমার। হুমায়ুন আজাদ স্যারের কবিতার ভাষায় আবার বলতে হয়,

অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ,মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না;
আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, – তার অনেক কারণ রয়েছে ।

তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্ট ভ্রষ্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের কথা: তার রাজনীতিঅর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমলিন জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন করে আমাকে পীড়ন কোরো না!!

আরো বলে যাই-
আমি আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,আমি পোশাক পরতে চেয়েছিলাম একান্ত আপন রীতিতে,
আমি চুল আঁচড়াতে চেয়েছিলাম নিজের রীতিতে,আমি উচ্চারন করতে চেয়েছিলাম আন্তর মৌলিক মাতৃভাষা-আমি নিতে চেয়েছিলাম নিজের নিশ্বাস।
আমি আহার করতে চেয়েছিলাম আমার একান্ত মৌলিক খাদ্য,আমি পান করতে চেয়েছিলাম আমার মৌলিক পানীয়।
আমি ভুল সময়ে জন্মেছিলাম। আমার সময় তখনো আসে নি।আমি ভুল বৃক্ষে ফুটেছিলাম। আমার বৃক্ষ তখনো অঙ্কুরিত হয় নি।
আমি ভুল নদীতে স্রোত হয়ে বয়েছিলাম। আমার মেঘ তখনো আকাশে জমে নি।আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি গান গাইতে চেয়েছিলাম আপন সুরে,ওরা আমার কন্ঠে পুরে দিতে চেয়েছিলো ওদের শ্যাওলা-পড়া সুর।
আমি আমার মতো স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে বাধ্য করেছিলো ওদের মতো ময়লা-ধরা স্বপ্ন দেখতে।
আমি আমার মতো দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলো ওদের মতো মাথা নিচু করে দাঁড়াতে।
আমি আমার মতো কথা বলতে চেয়েছিলাম,ওরা আমার মুখে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলো ওদের শব্দ ও বাক্যের আবর্জনা।
আমি খুব ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে ওদের মতো করেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলো বাইরে।
ওরা মুখে এক টুকরো বাসি মাংস পাওয়াকে বলতো সাফল্য,ওরা নতজানু হওয়াকে ভাবত গৌরব,
ওরা পিঠের কুঁজকে মনে করতো পদক,ওরা গলার শেকলকে মনে করতো অমূল্য অলংকার।
আমি মাংসের টুকরা থেকে দূরে ছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।আমি নতজানু হওয়ার বদলে নিগ্রহকে বরণ করেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি পিঠ কুঁজের বদলে বুকে ছুরিকাকে সাদর করেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।আমি গলার বদলে হাতেপায়ে শেকল পড়েছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।.....

আদালতে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে হুমায়ুন আজাদ স্যারকে যারা হামলা করেছিলো , তারা জেএমবির জঙ্গী। পুলিশ হেফাজতে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে- জামাত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ওয়াজে নির্দেশ দেবার পর তারা এই হামলা করে। জেএমবি জামাত খুনি জারজ ঘাতকদের সহযোগী গিয়াস কামাল চৌধুরী যে তথ্য তুলে ধরেছিলেন তার 'খবরপত্রের' লীড নিউজে আদালতে সেই তথ্য তুলে ধরার সৎসাহস ছিল না তো! পারেন নি, পারবেন ও না। কারণ, মিথ্যুকেরা কোন সৎসাহস ধারণ করে না। তবু এই মিথ্যাবাদী - ধর্মেও যার স্থান নেই- তিনি এই নষ্ট সমাজের সমাজপতিদের দ্বারা বিশেষ'সম্মানিত' হবেন- নরঘাতক কুমিরদের চোখে জল ও ঝরবে বটে তার জন্যে!!অবাক হই,তার দীর্ঘ জীবদ্দশায় তার অপরাধের কোন বিচার কেউ চাইলো না । এ কারণেই তার অনুসারীদের এতো দাপট! আবারো ধিক্কার জাতির এই কুলাঙ্গার সন্তানের প্রতি!!

No comments:

Post a Comment