Wednesday, July 18, 2012

পদ্মা সেতু এবং অন্যান্য: দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত প্রতিরোধ করতে হবে




দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ
পদ্মা সেতু এবং অন্যান্য: দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত প্রতিরোধ করতে হবে
সুমি খান
বাঙ্গালী জন্মেছেই টিকে থাকার লড়াই , এক অর্থে অস্তিত্বের লড়াই করার জন্যে।মায়ের ভাষায় কথা বলার লড়াই, পায়ের নীচের মাটি টুকু রক্ষার লড়াই, বিশ্বমানচিত্রে একটি লাল-সবুজ পতাকা উড়ানোর লড়াই।  এই লড়াকু বাঙ্গালীর দুর্ভাগ্য এতো রক্ত , এতো আত্মদানের বিনিময়ে যে অর্জন, তার সুফল ভোগী পাকিস্তানসেবী কুলাঙ্গার দের মিথ্যা প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে নিজের ঘরেই অনেক বড়ো লড়াই  করতে হচ্ছে।বিশাল অংকের টাকার কাছে বিবেক বেচে দিয়ে হিটলারী মিথ্যাচার আর নির্লজ্জতায়  আকন্ঠ ডুবে আছে বাংলাদেশের ‘সুশীল সমাজ’ এর একটি অংশ। উটপাখির মতো বালিতে মুখ বুজে আছেন হয়তো তারা। একাত্তরের পরাজিত পাকি-গোষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়ে আত্মঘাতী যে প্রোপাগান্ডা তারা চালাচ্ছেন, তাতে ‘সমাজের উচ্চশ্রেনীর সুবিধাপ্রাপ্ত অংশ মোটিভেটেড হতে পারে সহজেই । ধৃষ্টতা র জন্যে ক্ষমা চাইছি, তাদের  সার্বিক বিবেচনা বোধ  কতোটা গণমুখী, কতোটা বাস্তবভিত্তিক  সেটা নিয়ে  আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, তাদের  জীবনবোধ এবং বাস্তবতা উর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে  তারা অক্ষম। সেই সুযোগ তাদের নেই। তাই তারা প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন সরকার বিরোধীতার নামে মহাজোট সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ ‘কতোটা খারাপ’ তা প্রতিষ্ঠা করার।
১৯ জুন পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নাকি স্পষ্ট করবে বিএনপি। কে বলে কার কথা!! হাস্যকর এ ঘোষনা তরিকুল ইসলামের। তার নিজের দুর্নীতি স্পষ্ট করার সৎ সাহস আশা করা বোকামী। তবে একটি ভালো কথা বলেছেন তিনি । জয়নাল আবদীন ফারুক প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, রোজার পর পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।  একটি গণতান্ত্রিক দেশে শক্তিশালী এবং গঠনমূলক বিরোধী দলের অস্তিত্ব কতোটা গুরুত্বপূর্ণ , তা বোঝার সাধ্য এদের নেই। ধ্বংসাত্মক ব্যক্তিদেও কাছে সৃষ্টিশীলতা আশা করা বোকামী বটে।
 জামাত-বিএনপি জোট সরকারের সময়ে মস্তিষ্ক বিকানো যে বুদ্ধিজীবি, সম্পাদক অথবা নেতা নেত্রীরা একা অথবা সপরিবারে হাওয়া ভবনের ‘খয়রাত খোর’ হয়ে তারেকের পিছু পিছু ঘুরেছেন ,তাদের দায়িত্ব তারা এখন বেশ ভালোভাবেই পালন করছেন। লন্ডনে বসে তারেক রহমান খুব তৃপ্ত।ভাবছেন তার জন্যে বাংলার মসনদ সাজিয়ে রাখছেন এই ব্যক্তিরা। কর্ণেল তাহের, খালেদ মোশাররফ সহ অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের একের পর এক ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিচার বহির্ভুত ভাবে হত্যা  করে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে রাজাকার  গোলাম আযম,শাহ আজিজুর রহমান সহ একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে পুনর্বাসনের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা কারী পাকিস্তানসেবী জেনারেল জিয়াউর রহমান এর যোগ্য পুত্র তারেক মসনদে বসে আবার রাজাকার বাহিনীকে বাংলাদেশের  রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাবেন। বাংলাদেশ বিরোধী এই কালোশক্তির  হাতে জাতীয় পতাকা তুলে তিরিশ লাখ শহীদের আত্মদানের প্রতি অশ্রদ্ধা আর কালিমা লেপনের কলঙ্কজনক দায়িত্ব পালন করবেন আবার এই স্বপ্নের মদিরতায় বিভোর হয়ে আছেন অনেকে। বলা যায় না, হয়তো সেই কালোস্বপ্নের বাড়া ভাতে ছাই দেবে এদেশের সাধারণ মানুষ। সেই মানসিক দৃঢ়তা এবং মনোবল তাদের আছে। প্রয়োজন শুধু বিচ্ছিন্নতা ভুলে  সকল শুভশক্তির আবার একাত্ম হওয়া।
রাজাকার কুল শিরোমনি গোলাম আজম  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাজত এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের প্রিজন সেলে বাড়ি থেকে পাঠানো ১৫/২০ পদের চর্ব চোষ্য লেহ্য পেয় খাচ্ছেন চেটে পুটে। সাথে তার যোগ্য সাগরেদ মীর কাশেম, নিজামী, মুজাহিদ সাইদী , সাকাচৌ, কাদের মোল্লা। ব্যারিষ্টার রাজ্জাক , মিজানুল, তাজুল বাহিনী তো আছেনই  দেশে-বিদেশে লবিং করে এই কুখ্যাত বর্বর খুনিদের  বাঁচানোর প্রচেষ্টায়।
 মার্কিন আইনী সহায়তা কারী সংস্থা ক্যাসেডি এসোসিয়েটস কে জামায়াতীরা এখন  ‘মালাউন’ , ‘বিধর্মী’ ‘ইহুদী’ ‘নাসারা ’ বলছে না। সাড়ে সাতশো কোটি টাকায়  এদের লবিষ্ট নিয়োগেও দ্বিধা নেই ।  এখন ‘জান বাঁচাতে তাদের লাগবে। কাজ শেষ হলে পাছায় লাথি দিয়ে বলবে,“ যাশ্ধসঢ়; শালা মালাউনের বাচ্চা!!”
একাত্তরের মতো  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভেতরে বাইরে  এভাবেই মিথ্যাচার করে সুবিধা আদায় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এটাই যে তাদের নীতি।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল সহ  এ জাতির কিছু কুসন্তান  জামায়াত রক্ষা মিশনে যে নির্লজ্জভাবে নেমেছেন, এদেশকে যারা ভালোবাসেন, লাখো  শহীদের প্রতি যাদের ন্যুনতম দায়িত্ববোধ এবং শ্রদ্ধা আছে, তাদের একাত্ম হয়ে নব্য রাজাকার-আলবদর বাহিনী ঠেকানো জরুরী। এ পবিত্র মাটিতে  থেকে মায়ের রক্তের সাথে বেইমানী করে আর কতো মিথ্যাচার আর চাপাবাজি করবেন এরা?

 তাই এখনো বাংলাদেশের কিছু মানুষ অস্তিত্বের সংগ্রাম করে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানী জান্তা জেনারেল নিয়াজি সফল হয়েছে তার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনায়।
সিপিবি  সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম লিখেছেন, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে  একসময়ে যমুনা সেতু ছিল তাদের অতি আদরের স্বপ্ন কন্যা। পূর্ব বাংলার পাট বিক্রি সহ অন্যান্য আয়ের টাকা দিয়ে  পশ্চিম পাকিস্তানে নতুন রাজধানী নির্মান, বড় বড় স্থাপনা এবং ব্যয়বহুল ‘তারবেলা বাঁধ ’নির্মান করে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সালে ৮২ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করে পাকিস্তানের ইন্দাস নদীর উপর ৮ হাজার ৯শ’৯৯ ফুট দৈর্ঘ্য পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ  ‘তারবেলা’ তৈরি করার কাজ শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে ১ হাজার ৪শ’৯৭ মিলিয়ন ইউএস ডলারে নির্মান শুরু হয় , শেষ হয় ১৯৭৪ সালে । সেলিম ভাই  লিখলেন, তাদের বক্তৃতায়  পাকিস্তান সরকারের শোষণ বৈষম্যের অন্যতম জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে যমুনা সেতু  নির্মানে পাকিস্তান সরকারের অনিচ্ছা বড় রাজনৈতিক ইস্যু ছিল। সাধারণের বোধগম্য ভাষায় বক্তৃতায় তারা উদাহরণ দিতেন“তার বেলায় টাকার অভাব হয়না, আমার বেলায়  শুধু ‘টাকা নেই, টাকা নেই’ ?”
 ১৯৭০ সালে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল যমুনা সেতুর বাস্তবায়ন।১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে যমুনা সেতু বাস্তবায়ন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং জাইকাকে আমন্ত্রন জানানো হয় এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নে সম্পৃক্ত হবার জন্যে। স্বাধীনতার পর যমুনা ব্রীজের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। স্বাধীন দেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন এ দেশ কখনো মার্কিন তাবেদারী করবেনা। সেটা তিনি কাজেও প্রমাণ করেছিলেন। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, “ঘাস খেয়ে থাকবো , তবু শর্তযুক্ত ঋণ নেবো না।  এ  কঠোর নীতির কারণে স্বাধীনতার পরবর্তী কয়েকটি বছর বিশ্বব্যাংক এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে মুক্ত থেকে প্রবল আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্ব সভায় দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের মানুষ। এ আত্মমর্যাদা সবাই সইতে পারেনা। পুঁজিবাদী সা¤্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের ¯্রােত ভাসিয়ে নিয়ে যায় এই আত্ম মর্যাদা।এদেশে বিরাষ্ট্রীয়করণ, ব্যক্তিখাতের একচ্ছত্র প্রাধান্য  প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা বিশ্বব্যাংক জুটিয়ে নেয় উচ্ছিষ্ট ভোগী লোভী আত্মঘাতী পিতৃঘাতী বাঙ্গালী লুটেরাদের। পুঁজিবাদী সা¤্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর লালিত এই দল সহজে বিকিয়ে দেয় দেশ এবং নিজের মাটি।পিতার রক্তে রাঙ্গিয়ে নেয় নিজেদের।
 একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় বন্দী করে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যা জেলহত্যার মধ্যে দিয়ে এদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়  মার্কিন-পাকিস্তান সেবী কালো শক্তি।এ জাতিকে মেধা , মনন সবদিকে নিঃস্ব করতে বদ্ধপরিকর অন্ধকারের  এই শক্তি।
উইকিলিকস এর তথ্যমতে পরবর্তীতে যমুনা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়ন  কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করে ১৯৮৫ সালের মে মাসে  এরশাদ কাজ শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে খালেদা জিয়া ভিত্তিপ্রস্তর দেন।১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা প্রথম বার ক্ষমতায় এসে যমুনা সেতুর কাজ দ্রুততার সাথে শেষ করে যান চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করে দেন। ৬শ’ ৯৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় যমুনা সেতু নির্মানে।এডিবি,আইডিএ, ওইসিডি প্রত্যেকে ২শ’ মিলিয়ন করে   ১% সুদে ঋণ দেয়।এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, দৃশ্যত:১% এই সুদ অবশ্য ২৫% এ গিয়ে দাঁড়ায়। সা¤্রাজ্যবাদী এই দাতাসংস্থা গুলো শুভংকরের ফাঁকি দিয়েই আমাদের মতো উন্নয়নশীল (তাদের ভাষায় ‘গরীব’) দেশ গুলো থেকে সব লুটেপুটে নেয়।বাকি ৯৬ মিলিয়ন ডলার এদেশের মানুষ দিয়েছে। সেই সময় থেকেই পদ্মা নদীতে সেতু নির্মানের দাবি জোরালো ভাবে উঠে আসে।
 মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এর ভাষায় শুরু থেকেই পদ্মা সেতু জাতির ‘স্বপ্ন কন্যা’ হিসেবেই সাধারণ মানুষ তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং নির্ভেজাল জাতীয় স্বার্থের দৃষ্টিতে দেখেছে।  আর এজন্যেই জাতির এ স্বপ্ন কন্যার জন্যে হাত বাড়িয়েছে সবাই। ভুল বললাম সমাজের ছোট্ট সেই অংশ  ছাড়া। দীন দুঃখিনী মায়ের দেয়া মোটা কাপড় পরার চেয়ে বিদেশী প্রভুর কাছে মা কে বিক্রি করে পা চাটা কুকুরের মতো  বিষাক্ত‘পার্সেন্টেজ’ ভোগ করে বিলাসী কাপড় পরার সাধ যাদের।দেশের বৃহত্তম পাটকল আদমজী, চট্টগ্রাম ষ্টীল মিল, রেলওয়ে, টিসিবি সহ আরো অনেক কিছু আমরা হারিয়েছি বিশ্বব্যাংকের ফাঁদে পা দিয়ে।
 বিদেশী অর্থায়ন না হলে এই নষ্ট মস্তিষ্কের লোকেদের পার্সেন্টেজের ভাগ টা খুব কম হয়ে যায়। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক তার নানান শর্তের বেড়াজালে বন্দী করে পুরো টাকাটাই নয়, তার চেয়ে বেশী ই হাতিয়ে নেয়। সেটা জেনে বুঝেও অন্ধের মতো সবাই তার জন্যে মায়াকান্না করার মূর্খতা আর কতোদিন?
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতোটা দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমরা নিজেরা তৈরি করবো পদ্মা সেতু; তার অর্থমন্ত্রীর সুর যেন উল্টো। বিশ্বব্যাংকের সাথে তার পুরনো প্রেম আমৃত্যু টেনে নেবেন হয়তো। তা নেন, সমস্যা নেই। তবে সারা জাতিকে এই প্রেমের ‘কাবাব মে হাড্ডি ’ বানানোর চেষ্টায় যেন তিনি ক্ষ্যান্ত দেন।অত্যন্ত মেধাবী এই ব্যক্তিটি বারবার সাধারণ মানুষের অন্তরে  ঘা দিচ্ছেন । এলাকায় গিয়ে সম্প্রতি আগামী বার নির্বাচনের প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়ে এসেছেন। তিনি ভুলে গেছেন, বাঙ্গালী বড়ো আত্মভোলা জাতি। ভালো কাজ বিশেষ মনে রাখেনা। তবে খারাপ যা করেছেন, তা কখনো ভুলে না।আগামীতে প্রার্থীতা করতে হলে ক্ষমতার শেষ সময়টি তাকে দাতাদের পা চাটা ভুলে যেতে হবে।
 অর্থমন্ত্রী বলেছেন দেশে ৫ থেকে ৮ লাখ কালো টাকা আছে, তা বাজেয়াপ্ত করলে ২০ থেকে ৩০ টি পদ্মা সেতু হবে। আহা!! এতো বড়ো সুন্দর কথা ! কালো টাকার মালিক তো হাতে গোণা। তাদের ভোট কি আপনার জন্যে খুব জরুরী, মাননীয় অর্থমন্ত্রী? আপনি সেই উদ্যোগ ই নেন না কেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী ? একই সাথে মাগুড়ছড়া ট্যাংরাটিলা গ্যাস বিষ্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। তারেক-কোকো-মামুনের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার ই বা কি হলো মাননীয় অর্থমন্ত্রী? এর সবটাই জনগণের টাকা।এই মহান দায়িত্ব কঠিন হলেও , এতে আপনি সফল হলে  দেশের সাধারণ মানুষ আপনার প্রতি এবং এই সরকারের প্রতি আরো অনেক আস্থাশীল হবেন।
মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃঢ়প্রত্যয়ী  ভূমিকা  উদ্বিগ্ন করেছে বিশ্বব্যাংক কে। হঠাত সুর পাল্টেছে তারা। তাই বলে এই ফাঁদে পা দেয়া যাবেনা । বিশ্বব্যাংক চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বেও ধনী দেশ গুলোর অঙ্গুলি হেলনে।তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অর্থনৈতিক শৃঙ্খলে বন্দী করে, মিথ্যা দুর্নাম দিয়ে আক্রমণ না করলে, যুদ্ধবিধ্বস্ত না হলে ,অস্থিতিশীল না থাকলে  অথবা এদেশের মানুষগুলোর হাতে ভিক্ষার থালা না দেখলে তারা  শান্তি পায়না। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের বিপর্যয় আরো সংকটগ্রস্থ কওে তুলেছে আমাদের বাস্তবতাকে। তবু সাধারণ মানুষ অনেক আশায় বুক বেঁধেছে। তারা বিশ্বসভায় বুক ফুলিয়ে বলবে, “আমরাই পারি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাসী আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন সাধারণ জনগণ। এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রমাণ করবে আমরাও পারি।   যে দেশের নারী শ্রমিকেরা মাত্র ৫০ পয়সা করে জমিয়ে  সোনার বালা গড়িয়ে রাষ্ট্রপ্রধান কে দিতে পারে, সে দেশের ভয় কি?  এদেশের সাধারণ মানুষের সাথে মিশে আমার আত্মবিশ্বাস প্রবল। আমরা পারবো। প্রাগের ঐতিহাসিক ন্যাশনাল থিয়েটার  সাধারণ মানুষের টাকায় তৈরি । ১৮৬৮ সালের ২৮ একর জমির উপর এর ১৬  মে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।  কথায় বলে, দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ। নিজেদের আর কতো খাটো করবো আমরা? বিশ্বব্যাংকের যতো অপকর্ম প্রকাশিত হবে একদিন। তাদের ফাঁদে আর পা দেয়া নয়।
ছোটকালে পীর খানজাহান আলীর আত্মজীবনী মূলক গল্প পড়েছিলাম, ‘যে কুপথে চলে, সে কূয়ায় পড়ে।’ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন এ কথাটির প্রতিফলন দেখতে পাই আমি। পাকিস্তান নিজের নাক কেটে অন্যেও যাত্রা ভঙ্গ করতে চেয়ে আজ নিজেরাই রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। এদেশে এখনো গ্লোব্যাল ক্যাপিটালিজমের ধামাধারী যারা , তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে একদিন।  আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে প্রত্যেকের মাঝে।
বুঝতে হবে এ প্রকল্পের  ব্যয় দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। প্রথম ব্যয় ছিল ১৪০ কোটি ডলার। ২০০৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদেও নির্বাহী কমিটি একনেকে ১৪৭ কোটি ২৭ লাখ ডলারে  প্রথম প্রকল্পটি অনুমোদন করে।২০০৯ সালে ততকালীন যোগাযোগমন্ত্রী  সৈয়দ আবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন ১৯০ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে  পদ্মা সেতুর অর্তায়ন বিষয়ক আন্ত:মন্ত্রনালয় বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন  পদ্মা সেতু নির্মানে ব্যয় হবে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার।  এখন এই ব্যয় ২৯০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। মনে রাখতে হবে বিশ্বব্যাংকের সাথে চুক্তি করলে তাদের হুকুমে চলতে হবে। তাদের পছন্দে বিশেষজ্ঞ  নিয়োগ করতে হবে নির্ধারিত বেতনে  নিয়োগ দিতে হবে।এটি সমাজহিতৈষি কোন সংস্থা নয়, মুনাফালোভী
অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত বলেছেন  বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ থেকে পদ্মা সেতুর মতো তিনটি সেতু নির্মান সম্ভব।তিনি বলেছেন , অপ্রদর্শিত অর্থ, কালো টাকা এবং অন্যান্য উতস থেকে এই অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হতে পারে।দেশের বীমা কোম্পানীগুলোর লাইফফান্ডের অলস পড়ে থাকা ১১ হাজার কোটি টাকা এই সেতু নির্মানে বিনিয়োগ করা যেতে পারে বলেছে বিআইএ (বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন)। বেসরকারী ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি (বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস) এই প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সহ অনেক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতুর বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেছেন দেশে বিশেষজ্ঞ আছেন, তবে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং অর্থেও ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিবিদ, স্থপতি এবং প্রকৌশলীদের দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। যাতে তাদের ত্যাগ এবং দূরদর্শী  চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে।
 পরিশেষে আবারো সিপিবি সাধারণ সম্পাদক  মেধাবী  ছাত্র, মেধাবী রাজনীতিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সাথে একমত আমি। পদ্মা সেতু কোন ‘আওয়ামী প্রোজেক্ট’ নয়,এটি  একটি জাতীয় প্রকল্প। জাতির সমস্ত শক্তি এবং সম্মতিকে এ কাজে সমবেত করতে হবে।মহাজোট সরকারের মাত্র ১৬ মাস মেয়াদ আছে। সামনে কারা সরকার গঠন করবে কেউ জানেনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের পথে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। একটি সর্বদলীয় জাতীয় পরামর্শ সভা ডাকা প্রয়োজন। দ্রুত কাজ শুরু করতে হবে। দেশে অনেক মেধাবী, সৎ মানুষ আছে। যাদের নিয়ে গ্রহণযোগ্য তদারকী কমিটি করা প্রয়োজন।নিঃস্বার্র্থভাবে তারা মনিটর করবেন যাতে কোন দুর্নীতি অথবা কাজে গাফিলতি না হয়। দেশের সেনাবাহিনীকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যায়, সুদক্ষ সেনাদল আছে যারা এ কাজে পরীক্ষিত।
এখানে সেলিম ভাইয়ের কাছে প্রশ্ন ,আপনি বলেছেন পদ্মা সেতু নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকে একটি বড়ো শিক্ষা দেশ পরিচালনার চলতি নীতি-দর্শনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে  মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে সূচিত মুজিব-তাজউদ্দিনের মতো স্বনির্ভরতার পথ গ্রহণ করতে হবে।বিএনপি তা করবেনা, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।দল এবং দলীয় আধিপত্য এড়িয়ে লুটেরা ধনিক শ্রেণী ও বিশ্বব্যাংকের সা¤্রাজ্যবাদের বেড়াজাল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার মতো নাটকীয় পদক্ষেপ নেয়া আওয়ামীলীগের পক্ষেও সম্ভব না। শুধুমাত্র বামদলগুলোর পক্ষেই সম্ভব এমন দাবী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের। আজন্ম বামপরিবাওে বেড়ে ওঠার সুবাদে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় দঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি তার এ আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ। সেলিম ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি,কমরেড মণি সিংহ বা কমরেড ফরহাদ এর মতো ত্যাগী নেতৃত্বের শূন্যতা প্রতি মুহুর্তে উপলব্ধি করছে জাতি। বাম নেতাদের আত্মকেন্দ্রিকতা এবং কিছু কিছু নেতার দুর্নীতি এবং আত্মম্ভরীতা  বুর্জোয়া দল গুলোর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। মাঠপর্যায়ে  আপনাদের যেসব নেতা কর্মী অসৎ এবং দুর্নীতিগ্রস্থ, কেন্দ্র থেকে বিপুল উৎসাহে তাদের পিঠ চাপড়ানো হয়। অসৎ সংগঠককে ধওে রাখার জন্যে প্রয়োজনে দীর্ঘদিনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের অপমান জনক ভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। যার পরিণতি বাম সংগঠন গুলোর এই সংকটজনক পরিস্থিতি। আত্মসমালোচনা এবং আত্মবিশ্লেষণের জায়গা থেকে বাম সংগঠন গুলো অনেক দূরে। আত্মশ্লাঘা বৃথা। প্রসঙ্গত: বলি,দুর্জনেরা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময়ে জেনারেল মাসুদ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে বসানোর জন্যে। ড. মুহাম্মদ ইউনুস নাকি বলেছিলেন তাকে ২০ বছরের জন্যে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে, তবেই তিনি রাজী। এতে ভয় পেয়ে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে মইন উ আহমেদের কাছে আবার  ছুটে গিয়েছিলেন জেনারেল মাসুদ। বলেছিলেন , আমরাই কতোদিন ক্ষমতায় থাকি তার ঠিক নেই, ২০ বছরের নিশ্চয়তা কী করে দেই ওনাকে?
  তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের অনাচার অনিয়ম দূর করার জন্যে  ৫ বছর যথেষ্ট সময় নয় । এর উপর যদি আগের ৫ বছরের যতো ভালো কাজ , যতো জনহিতকর কাজ মমতার ভাষায় ‘সিপিএম এর ষড়যন্ত্র’ বা ‘আওয়ামী হঠাও’ ম্যানিয়া থেকে পরবর্তী ৫ বছর সব ধ্বংস করে ফেলা বা স্থগিত করা হয়, তাহলে এদেশের দুর্ভাগ্য কোনদিন ই কাটবে না।মিথ্যে অহমিকা ভুলে  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে একসাথে কাজ করতে হবে।জনগণ ই  নির্ধারণ করবে তাদের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। আস্থা রাখতে হবে জনগণের উপর। তাদের সুখে- দুঃখে যাকে পাবে তাকেই ব্যালটের মাধ্যমে বুকে টেনে নেবে জনগণ। মহাজোট সরকারের জন্যে আগামী নির্বাচনে পদ্মা সেতু নির্মান কাজ শুরু করা  এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার  নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ন ফ্যাক্টর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যে এই দু’টি  বড়ো চ্যালেঞ্জ ।তার  প্রতি জনগণের আস্থা আছে। তার মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা রা যদি শেষ সময়ে অন্তত নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারেন, তবেই এর সুফল পাবেন তারা এবং দেশের জনগণ।

No comments:

Post a Comment