Thursday, July 19, 2012

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে ভারত৻


দেহাবশেষ ভারত দেবে বাংলাদেশকে



’৭১-এ যুদ্ধ চলাকালীন নিহত মুক্তি বাহিনীর দুই হাজারেরও বেশি সদস্যকে ভারতের অর্ধে বা ‘নো ম্যানস ল্যাণ্ডে’ কবর দেওয়া হয়েছিলো৻
সেই যোদ্ধাদের দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তা দেওয়া হবে বাংলাদেশের হাতে৻
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেছেন, গত জুন মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ভারতে আসে৻
সেই সময়ে এই মর্মে একটি তালিকাও দিল্লির হাতে তুলে দেয় ঢাকা৻
বিবিসি বাংলার হাতে আসা এই তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের শনাক্ত করতে প্রয়োজনে ‘ডিএনএ পরীক্ষা’ করা হতে পারে বলে জানান সৈয়দ আকবরউদ্দিন৻
অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে মি: আকবরউদ্দিন বলেন, কবরে শায়িত মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করতে প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষাও করা হতে পারে৻
মোট ২৪১৬ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা বলা হয়েছে তালিকায়৻
কি আছে তালিকায় ?
শহীদ অধ্যাপক ওয়াহাব তালুকদার: অধ্যাপক ওয়াহাব তালুকদারের কবরটি রয়েছে ভারতের কুচবিহার জেলার কলামতী গ্রামে৻ গ্রামটি জয়মনিরহাটের কুড়িগ্রামের লাগোয়া৻ জয়মনিরহাটের কাছে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ‘পিলার নম্বর ৯৫৪’ সংলগ্ন অঞ্চলে তিনি শহীদ হয়েছিলেন৻ তাঁর মুক্তিফৌজ নম্বর ছিলো এস এইচ এ ০০৩৯৭৬৻
শহীদ তৌহিদুল ইসলাম: মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার আগে শহীদ তৌহিদুল ইসলাম পূর্ব পাকিস্তানে পুলিশে কাজ করতেন৻ তাঁর কবরটি রয়েছে শিখরপুর স্কুলে৻ স্কুলটি ভারতীয় সীমান্তের লালগোলা বর্ডার আউটপোস্টের কাছে৻ ১৯৭১ সালে ২১শে আগস্ট রাজশাহী-চাপাই নবাবগঞ্জ রোডে ‘অভয়া সেতুর‘ লড়াই-এ শহীদ হয়েছিলেন তৌহিদুল ইসলাম৻ তাঁর দেহ লালগোলার মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো৻ আর সেইখানে শিবিরের কাছেই শায়িত আছেন শহীদ তৌহিদুল ইসলাম৻
শহীদ দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট ইমদাদুল হক, বীর উত্তম: শহীদ দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট ইমদাদুল হকের কবর রয়েছে ভারতীয় সীমান্তের আট কিলোমিটার ভিতরে কদমতলার চল্লিশধন বলে এক জায়গায়৻ আরও নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে জায়গার নাম কুকিতাল৻ কবরটি একটি মসজিদের আছে এবং জমির মালিক মসজিদের ইমাম৻ ১৯৭১ সালের ৭ই নভেম্বর ধামাই-এর চা বাগান সংলগ্ন অঞ্চলে পাকিস্তানি ফৌজের উপরে হামলা চালান ইমদাদুল হক৻ সেই সময়ে তিনি ৮ নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন৻ তিনি শহীদ হ্ওয়ার পরে অভিযান বন্ধ করে দিতে হয়৻ ইমদাদুল হকের সঙ্গীসাথীরা তাঁর দেহ ভারতে নিয়ে যান৻
"কাজটি সহজ নয়, কিন্তু কাজটি করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
সৈয়দ আকবরউদ্দিন, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রক মুখপাত্র
এই ভাবে তালিকায় ২৪১৬ জনের কথা বলা হয়েছে৻ তবে নাম দেওয়া হয়েছে মোট ২৪ জনের৻
বাকিদের নাম না থাকলেও, ঠিকানা কিন্তু রয়েছে৻ যেমন, তালিকার ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রায় ২০০০ স্বাধীনতা সংগ্রামীর কবর রয়েছে আমপাতি গ্রামে৻ গ্রামটি মেঘালয়ের পশ্চিম-গারো পর্বতের কাছে৻’
তবে ‘শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভারতে কবরের তালিকা’ শীর্ষক তিন পাতার তথ্যসমৃদ্ধ তালিকাটির কয়েকটি জায়গায় নির্দিষ্টতার অভাব রয়েছে৻
যেমন, ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ৩৫ জন ‘অজানা স্বাধীনতা সংগ্রামী’র প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে যে তাঁদের কবর রয়েছে ‘নো ম্যানস ল্যাণ্ডে’, সিলেট সীমান্তের তামাবিল চেকপোস্টের কাছে৻
‌এই যাবতীয় কবরের সঙ্গে নাম মিলিয়ে দেহাবশেষ খুঁজে বার করা যে সহজ কাজ নয় তা স্বীকার করছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক৻
মুখপাত্র সৈয়দ আকবারউদ্দিনের বক্তব্য
“কাজটি সহজ নয়, কিন্তু কাজটি করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,” বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন৻
আর সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে মি: আকবরউদ্দিন বলেন, “গত মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা যখন ভারতে এসেছিলেন তখন তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পূর্ব সীমান্তে৻ তাঁরা গিয়েছিলেন আগরতলা, শিলং, গৌহাটি এবং কলকাতায়৻ প্রতিটি জায়গায় রাজ্য সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন৻ একটি নোডাল অফিসারের পদ তৈরি করা হয়৻ এই অফিসাররা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কবরের স্থান চিহ্নিতকরণের কাজ করবেন৻”
এই বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে বলে জানান মি: আকবরউদ্দিন৻
"প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছিলো৻ সেই সহমতকে এখন বাস্তবায়িত করা হচ্ছে মাত্র৻"
সৈয়দ আকবরউদ্দিন, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রক মুখপাত্র
“প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছিলো৻ সেই সহমতকে এখন বাস্তবায়িত করা হচ্ছে মাত্র৻”
আর এই কারণেই ভারতের তিন প্রধান মন্ত্রক - প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকেও সক্রিয় করতে মাঠে নেমেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর৻
তিস্তা বা সীমান্ত চিহ্নিতকরনের ক্ষেত্রে চুক্তি সই করেও কিছুটা পিছিয়ে যেতে হয়েছে ভারত সরকারকে৻ এ ক্ষেত্রে অবশ্য তাই কোনও ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে গোড়া থেকেই সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়েছে ভারত৻
তবে সমস্যা বা প্রশ্ন একটা থাকছে.স্বাধীনতার চল্লিশ বছর বাদে কিভাবে বোঝা যাবে তালিকায় যাঁর নাম রয়েছে তাঁর কবরই খুঁড়ে তোলা হলো ?
“প্রথমে চিহ্নিতকরণ এবং পরে তা বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া…এমনটাই কিছুদিন আগে করা হয়েছিলো বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ক্ষেত্রে৻ নানান ব্যবস্থা সেক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছিলো৻ যেমন তাঁর জানাজায় যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিলো৻ স্থানীয় মানুষের সাহায্য নেওয়া হয়েছিলো৻ এই ধরনের পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রেও গ্রহণ করা হতে পারে৻ এবং প্রয়োজনে ডি এন এ পরীক্ষার সম্ভাবনাও থাকছে,” বললেন সৈয়দ আকবরউদ্দিন৻
তবে যেহেতু কাজটি জটিল ও বিস্তৃত, ফলে ঠিক কতো দিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হবে তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে নারাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রক

No comments:

Post a Comment