Tuesday, July 17, 2012

পদ্মা সেতুতে ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা কম হলেও তা একেবারেই অসম্ভব নয়: বিশ্ব ব্যাংক

পদ্মা সেতুতে ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা কম হলেও তা একেবারেই অসম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। পদ্মা সেতুতে ঋণচুক্তি বাতিলের পর উদ্ভূত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য পাঠিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। 
প্রশ্ন-উত্তরে সাজানো সংস্থাটির বক্তব্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজেদের ফিরে আসার সম্ভাবনা যে একটু হলেও রয়েছে, তাই বলা হয়েছে। 

‘পদ্মা সেতু প্রকল্প বাতিল সংক্রান্ত প্রশ্ন-উত্তর’ শিরোনামের তিন পৃষ্ঠার এই বক্তব্যের শেষ প্রশ্নটি ছিল- বাতিল সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কোনো অবকাশ কি আছে? 

উত্তরে বলা হয়েছে, “অন্যান্য দেশে বাতিলকৃত ঋণ পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের কয়েকটি মাত্র নজির রয়েছে। তাই, এটি অসম্ভব নয়। 

“তবে এই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার খুব সীমিত সুযোগ রয়েছে। কারণ, পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির প্রমাণ সম্পর্কে প্রস্তাবিত চারটি অভিযোগের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক আলোচিত দুটি অভিযোগের ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।” 

কী কী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং সরকার এর কোনটিতে সম্মত হয়েছিল- এই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, সরকারকে চারটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সরকার এর মধ্যে দুটি করতে পারেনি। 

দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি বিশেষ যৌথ তদন্ত ও বিচারিক দল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং সরকার একটি বিকল্প প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থা করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যে দুটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল বলে বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে। 

তবে বিশ্ব ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি বাইরের প্যানেল্যের কাছে তথ্য দেওয়ার এবং প্যানেলকে তদন্ত প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ততা মূল্যায়নের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা দুর্নীতি দমন কমিশন মেনে নেয়নি বলে বিশ্ব ব্যাংকের দাবি।  পদ্মা সেতু ঋণচুক্তি বাতিলের ফলে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের চলমান অন্যান্য প্রকল্পে সরাসরি কোনো প্রভাব পড়বে না বলে একটি প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে সংস্থাটি।  

এছাড়া তদন্ত চলাকালে সরকারি দায়িত্ব পালন থেকে সরকারি ব্যক্তিবর্গ (আমলা ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত) ছুটি দিতে সরকার রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। চারটি ব্যবস্থার মধ্যে দুটি বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় সহায়তা বাতিল করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না, বলেছে বিশ্ব ব্যাংক। দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে দাবি করে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা গত মাসে দেয় বিশ্ব ব্যাংক। 

দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসা সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলে আসছেন, বিশ্ব ব্যাংক ‘ভুল’ বুঝে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে বলে তিনি আশাবাদী।   গত ২৯ জুন বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। দেশীয় অর্থায়নের রূপরেখাও সংসদে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বিশ্ব ব্যাংক ১২টি প্রশ্নোত্তরে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, “এটি (ঋণ বাতিল) একটি দুঃখজনক ঘটনা। এই সেতুটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সারা দেশের প্রবৃদ্ধি জোরদার ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য বিশেষ সম্ভাবনাময় ছিল।” বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও বিশ্ব ব্যাংক একই সিদ্ধান্ত নিত বলে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে। 


No comments:

Post a Comment