Tuesday, July 17, 2012

যুক্তরাষ্ট্রের এইচএসবিসি শাখা, সৌদি আরব ও বাংলাদেশের এমন কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়েছে যারা আল কায়েদা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনকে আর্থিক সহযোগিতা করার সঙ্গে জড়িত



  যুক্তরাষ্ট্রের এইচএসবিসি শাখা সৌদি আরব ও বাংলাদেশের সন্দেহজনক ব্যাংকের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের একটি উপকমিটি এ অভিযোগ করেছে। 
মেক্সিকোর মাদক ব্যবসার অবৈধ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত সিনেটের ওই উপকমিটি সোমবার একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এ অভিযোগ করেছে।
  যুক্তরাষ্ট্রের এইচএসবিসি শাখা,  সৌদি আরব ও বাংলাদেশের এমন কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়েছে যারা আল কায়েদা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনকে আর্থিক সহযোগিতা করার সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে সন্দেহ করা হয়।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনো শাখার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবৈধ অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) সম্পন্ন হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকটির কার্যক্রম পরিচালনাকারী শাখা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। 
সিনেটে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। 
যুক্তরাষ্ট্রে এইচএসবিসির শাখাকে ব্যবহার করে মেক্সিকোর মাদক পাচারকারীরা তাদের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছে বলে দাবি করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে। এছাড়া সিরিয়া, কেইম্যান আইল্যান্ড, ইরান এবং সৌদি আরবের কালো টাকাও ব্যাংকটির কোনো কোনো শাখার মাধ্যমে পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়েছে। 
সোমবার এ সংক্রান্ত সিনেট উপকমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর কার্ল লেভিন সাংবাদিকদের বলেন, “ব্যাংকটি তাদের যুক্তরাষ্ট্র শাখা ব্যবহার করে অন্যান্য দেশের শাখাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক কার্যক্রমে প্রবেশের দরজা হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র এইচএসবিসি মেক্সিকোর মাদক ব্যবসায় অর্জিত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সহায়তা করেছে বলেও জানান তিনি। 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকোর মাদক চক্রগুলো  ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্র শাখাকে ব্যবহার করে ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যবর্তী সময়েতাদের অবৈধ অর্থ পাচার করে।
সিনেটর লেভিন ব্যাংকটির যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমকে তদারকির জন্য নিয়োজিত ফেডারেল কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের ‘কম্পট্রোলার অব দি কারেন্সি’ কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই সংস্থাটি এইচএসবিসির মানি লন্ডারিংয়ের কার্যক্রমে নজরদারির দুর্বলতা জানা থাকলেও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।”
এছাড়া মানি লন্ডারিংয়ের জন্য ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষের শিথিল নজরদারিকে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কর্তৃপক্ষের শিথিল নজরদারির কারণে ব্যাংকটি বিশ্বজুড়ে কালো টাকা পাচারের অন্যতম বাহনে পরিণত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘কম্পট্রোলার অব দ্য কারেন্সি’ কর্তৃপক্ষের প্রধান থমাস কারিও মঙ্গলবারের শুনানির সময় সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংক থেকে এ ব্যাপারে আসা অভিযোগের ব্যাপারে এইচএসবিসির সংশ্লিষ্ট নির্বাহীরা কর্ণপাত না করায় এ সমস্যা দীর্ঘ আট বছর বজায় থাকতে পেরেছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
 ব্যাংকটির কোনো কোনো শাখা ইরান ও অন্যান্য দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের সঙ্গে লেনদেনে জড়িত ছিলো বলেও দাবি করা হয়েছে। 
তবে এ সব অভিযোগের ব্যাপারে এইচএসবিসি এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তাদের নির্বাহীরা শুনানির সময় সংঘটিত ভুলগুলোর ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুনানির সময় ব্যাংকের কার্যক্রমে সংঘটিত ভুলগুলোর ব্যাপারে তাদের গৃহীত ব্যবস্থার ওপর পূর্ণাঙ্গ তথ্য উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ভুলগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করা হয় ওই বিবৃতিতে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়ে ব্যাংকটি তাদের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে গত বছর পরিবর্তন করেছে বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বলেছে, তারা এইচএসবিসির মাধ্যমে সংঘটিত ‘মানি লন্ডারিং’ কার্যক্রমের ওপর একটি তদন্ত পরিচালনা করছে।

এ প্রসঙ্গে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই এইচএসবিসির সঙ্গে কথা বলেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস বিভাগের মুখপাত্র আলিসা ফিনেলি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। তবে সম্ভাব্য কোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

No comments:

Post a Comment