Wednesday, April 10, 2013

অগ্নিযুগের বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর শতবছরের গৌরবোজ্জ্বল বিপ্লবী অধ্যায়ের অবসান



চলে গেলেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথী ও চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী পরলোক গমন করেছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।বিপ্লবী বিনোদন বিহারী চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর। তার প্রয়াণের খবরে সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এই অগ্নিপুরুষ। গত ১০ জানুয়ারি ছিল তাঁর ১০৪ তম জন্মদিন। চট্টগ্রামকে আঁকড়ে থাকা এই মানুষটির শেষ ইচ্ছা ছিল তার প্রিয় স্থানেই যেন তাঁর শেষকৃত্য হয়।

শতবছরের আগুনঝরা দিন

বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী জন্মেছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার উত্তর ভূর্ষি গ্রামে। পিতা কামিনী চৌধুরী একজন আদর্শবান আইনজীবী ছিলেন। তিনি ছিলেন স্বদেশি এবং ব্রিটিশবিরোধী প্রথম অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ফটিকছড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন সভা সমিতিতে তিনি যেতেন, সঙ্গে নিয়ে যেতেন শিশুপুত্র বিনোদকে। ১৯২৯ সালে বিনোদ চৌধুরী প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং রায়বাহাদুর বৃত্তিলাভ করেন।

বিনোদ চৌধুরীর লেখাপড়ার মতো দেশপ্রেমে প্রথম হাতেখড়ি হয় ফটিকছড়ি বোর্ড স্কুলে পড়ার সময় পিতার কাছে। বিপ্লবী জীবন শুরুর পর একে একে পরিচয় হয় সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার, মধুসূদন দত্ত, লোকনাথ বল, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তী, অর্ধেন্দু গুহ, গণেশ ঘোষ, নির্মল সেনসহ অনেকের সঙ্গে। বিপ্লব সম্পর্কিত অনেক বই পড়ে ফেলেন তিনি। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকাকালে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম পুলিশের অস্ত্রাগার দখলের লড়াইয়ে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ঘটনার পর বিপ্লবীরা নিকটবর্তী পাহাড়ে অবস্থান নেন।

২২ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম কার্যত স্বাধীন ছিল। মাস্টারদার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে অবস্থান নেন। ইংরেজ সৈন্যরা পাহাড় ঘিরে ফেলে। ৫৪ জন বিপ্লবী মাস্টারদার নেতৃত্বে ও লোকনাথ বলের সেনাপতিত্বে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হন। লোকনাথ বল যুদ্ধের একটা ছক তৈরি করেন, পাহাড়ের তিন দিকে কে কোথায় অবস্থান নেবেন, কীভাবে যুদ্ধ করবেন-সব বুঝিয়ে দেন। শত্রুপক্ষ যেন পাহাড়ে উঠতে না পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। সে অনুযায়ী যুদ্ধ চলে। ইতিমধ্যে বারোজন বিপ্লবী শহীদ হন, বিনোদ বিহারী চৌধুরী সহ আহত হন কয়েকজন। গুলি তার গলার একদিকে ঢুকে বেরিয়ে গেছে অন্যদিকে। রক্তক্ষরণের ফলে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। অভুক্ত বিপ্লবীরা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে বিপ্লবীদের জালালাবাদ পাহাড়ের অবস্থান ত্যাগ করতে হয়। আহত, রক্তাক্ত বিনোদ চৌধুরী পশ্চিম দিকে রওয়ানা দিয়ে অতি কষ্টে এসে পৌঁছান কুমিরার এক আত্মীয় বাড়িতে। এখানে গোপনীয়ভাবে তার চিকিৎসা চলে। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এদিকে এসে পড়ে নতুন বিপদ। গান্ধীজীর নেতৃত্বে লবণ আন্দোলন তখন তুঙ্গে। কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় সেখানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপিত হয়। আত্মীয় বাড়ির লোকেরা শংকিত হন। তারা সিদ্ধান্ত নেন বিনোদ চৌধুরীকে সরিয়ে নিতে হবে। তাকে বউ সাজতে হয়, লাল পাড়ের শাড়ি, হাতে শাঁখা ও চুড়ি পরে বউ সেজে বাড়ি থেকে বের হন, পৌঁছে যান শহরের চাক্তাই। পথে পুলিশের সামনে পড়তে হয় দুবার। ওদিকে বিনোদ বিহারীর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। জীবিত বা মৃত অবস্থায় ধরিয়ে দিতে পাঁচশ টাকা পুরস্কার ঘোষিত হয়।
বাবার পরামর্শে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। মামার সঙ্গে রওয়ানা হন ভারতের মধ্যপ্রদেশের চিন্ডুয়ারা জেলার জুনার দিয়া কয়লা খনিতে। পরিচয় গোপন করে কয়লা খনিতে দিনে এক টাকা মাইনেতে একটা চাকরিও জুটে গেল বিনোদ বিহারী চৌধুরীর। সকাল-বিকাল যারা কয়লা খনিতে যাওয়া-আসা করতেন তাদের নাম, সময় নির্দিষ্ট ফরমে লিখে রাখাই তার কাজ। মধ্যপ্রদেশ থেকে পালিয়ে চাকরির সন্ধানে বহু জায়গায় ঘুরে বেড়ান বিনোদ চৌধুরী। ঝাড়খন্ডেও ছিলেন কিছুদিন। অতঃপর চলে আসেন ঢাকায়। এক ব্যক্তির আশ্রয়ে থাকতেন তাঁতিবাজারের তিনতলা এক বাড়ির নিচতলায়। কয়েকদিন ছিলেন কার্জন হল ও ফরিদপুরে। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের কারো কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ শুরু হয়, এমনকি মাস্টারদার সঙ্গেও। তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন আর পিয়নের চাকরির জন্য ঘুরবেন না, তার কাজ চট্টগ্রামে। তার মতে, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানী চট্টগ্রাম।

বিপ্লবী বিনোদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ফিরলেন বটে, তবে তার প্রিয় মাস্টারদার সান্নিধ্যে নয়, নিক্ষিপ্ত হন জেলে। সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা নিজেও ১৯৩৩-এর ২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয়ে যান। বিপ্লবীদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ব্রিটিশ সৈন্যরা। একে একে ধরা পড়তে লাগলেন বিপ্লবীরা। সঙ্গে সঙ্গেই বিচার কাজ শুরু হয়। এ বছর ১৪ আগস্ট সূর্যসেন ও তারকেশ্বরের ফাঁসির আদেশ হয়, নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৯৩৪-এর ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কারাগারের একই ফাঁসি মঞ্চে সর্বাধিনায়ক মাস্টারদার সঙ্গে বিপ্লবী তারকেশ্বরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তার আগে একই কারাগারে ভিন্ন সেলে বন্দী বিনোদ বিহারী চৌধুরী আরেক বিপ্লবীর অনুরোধে মাষ্টার 'দা কে গান শোনাতে হয়। বিনোদ বিহারী চৌধুরী গেয়ে উঠেছিলেন, "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে , তবে একলা চলো রে...."

বিনোদ বিহারী চৌধুরী ১৯৩৩-এর জুন মাসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও পাঁচ বছর চট্টগ্রাম জেল, কলকাতা প্রেসিডেন্সি ও বহরমপুর জেল এবং দেউলি বন্দীশিবিরে কারাজীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৩৮ সালের শেষদিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান। এক বছরের মাথায় ব্রিটিশ সরকার তাকে এক বছর গৃহবন্দী করে রাখে। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের মধ্যে অনেকেই জেল-দ্বীপান্তর থেকে ছাড়া পেয়ে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও বিনোদ বিহারী চৌধুরী কংগ্রেসের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি এ সময় চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সহসম্পাদক ছিলেন। এ সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ব্রিটিশবিরোধী ভারত ছাড় আন্দোলনের প্রস্তুতিকালে তিনি আবার গ্রেফতার হন। ১৯৪১ থেকে ৪৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেল, ঢাকা জেল এবং হিজলি ও খোকশা বন্দীশিবিরে আটক থাকার পর ১৯৪৫-এর শেষ দিকে ছাড়া পান। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় এক বছর চট্টগ্রাম কারাগারে বিনা বিচারে তাকে কাটাতে হয়। জেলখানা, বন্দীশিবির ও গৃহবন্দী অবস্থায় জীবনের বারোটি বছর অতিবাহিত করেন বিপ্লবী বিনোদ চৌধুরী।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় অনেকের মতো বিনোদ চৌধুরী দেশত্যাগ করেননি। তিনি পাকিস্তানে কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হন। ১৯৪৮ সালের পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের নির্বাচনে কংগ্রেস দলীয় প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করেন। সে সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য আসন নির্ধারিত ছিল ও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের (একাত্তরে শহীদ) নেতৃত্বে বিনোদ চৌধুরী প্রমুখ নেতা আন্দোলন করেন প্রচলিত ধর্মীয় ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের পরিবর্তে যুক্ত নির্বাচন আদায়ের জন্যে। বিনোদ চৌধুরী ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৮ সালে আইউব খান সামরিক আইন জারি করে রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করলে বিনোদ চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দু’শ মাইল পথ পায়ে হেঁটে পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে ভারতের মিজোরাম দিয়ে কলকাতায় উপস্থিত হন। রিফিউজি ক্যাম্পে গিয়ে তরুণ-যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং সেন্টারে পাঠান এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে ভারত সরকারের সহায়তায় বহু সংখ্যক প্রাইমারি স্কুল খুলেন।
কোলকাতায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান নিয়ে থাকবার সুযোগ ছেড়ে মাষ্টার'দার দীক্ষা অনুসরণ করে যে মাতৃভূমির জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছেন , সেই মাতৃভূমিতেই ফিরে এলেন আবার । নিয়েজিত করলেন দেশ গড়ার কাজে।
নামমাত্র সম্মানীতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন। দুই পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র ২৮ বছর বয়সে কোলকাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। বড় ছেলে ক্যন্সার আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যায়। কয়েক বছর আগে তার স্ত্রী বিভা চৌধুরী এ মারা যান। এতো শোক সয়ে ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে সকলকে প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত করতেন এই বিপ্লবী। বড় ছেলে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যান। পুত্রবধু উপালি চৌধুরী এবং একমাত্র নাতি সোমশ্রভ্র চৌধুরী কোলকাতাতেই থাকেন।বড় পুত্রের শেষকৃত্যে কোলকাতা গিয়ে আর চট্টগ্রামের মাটিতে ফিরতে পারলেন না এই মহান বিপ্লবী। তার মহাপ্রয়ানে আমরা শোকাহত। এ মহান বিপ্লবীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

“তরুণ সমাজ যেন অসাম্পদায়িক, চরিত্রবান এবং স্বদেশানুরাগী হয়ে দেশের কল্যাণে আত্মনিবেদন করে ”-১০৩ বছরে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী




(ছবি র ক্যাপশন- ২০০৮ সালে তার রোগমুক্তি কামনা করে আমাদের সময়ে প্রকাশিত কলাম পড়ছেন। ছবি- সুমি খান)
সুমি খান: “অহিংস সত্যম শ্রেয়ং শৌচ সংযম সেবচ । এই ছোট্ট কথা টি বাংলাদেশের ই এক মনীষী মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর। তিনি বৈষ্ঞব ছিলেন । আমেরিকায় এক সভায় যোগ দিয়ে এই কথাটি বলেছিলেন। যা আমেরিকাবাসীকে মুগ্ধ করে। আমাকেও মুগ্ধ করে। এই কথাটি মনে মনে উচ্চারণ করে আমি মানসিক শক্তি আনার চেষ্টা করি। আজ আমার ১০৩ তম জন্মদিনে দৈনিক আমাদের সময়ের মাধ্যমে আমার তরুণ ভাইবোন দের বলি , এই গুণ গুলো যদি মানুষের থাকে তবে আমরা নিজেদের সত্যিকার মানুষ বলে প্রমাণ করতে পারি।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। আমাদের তরুণ সমাজ যেন অসাম্প্রদায়িক, চরিত্রবান এবং স্বদেশানুরাগী হয়ে দেশের কল্যাণে আত্মনিবেদন করে।এই তাদের কাছে আমার একমাত্র নিবেদন।
মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোগী বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী আজ ১০৩ বছরে পদার্পন করলেন।সকাল আটটা থেকে তার বাসায় অনুরাগী ভক্তরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় শুভেচ্ছা জানাবেন।
১৯০৯ সালের ১০ জানুয়ারী বোয়ালখালীর উত্তরভূর্ষী গ্রামে জন্ম নেন। ফটিকছড়ি করোনেশন স্কুলের মেধাবী ছাত্র রামকৃষ্ঞ বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হন। ১৯২৭ সালে বিপ্লবে দীক্ষা নিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের গোপন বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন এই বিপ্লবী।১৮ এপ্রিল ১৯৩০ অস্ত্রগার লুঠ অভিযানে মাস্টারদার সাথে অংশ নেন। ২১ এপ্রিল ১৯৩০ জালালাবাদ যুদ্ধের সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
ব্যক্তিজীবনে তার স্ত্রী বিভা চৌধুরী বীর কন্যা প্রীতিলতার কর্মস্থল চট্টগ্রামের অপর্ণা চরণ গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ২০০৯ সালে মারা যান। দুই ছেলে সুবীর চৌধুরী ও বিবেকানন্দ চৌধুরী। সুবীর চৌধুরী ৩০ বছর বয়সে কোলকাতায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। আরেক ছেলে বিবেকানন্দ কোলকাতায় এক ব্যাংকে চাকরী করেন।তার স্ত্রী উপালী চৌধুরী সহ চট্টগ্রামে এসেছেন বাবার জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে।বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর নাতি সোমশুভ্র চৌধুরী আর্কিটেক্ট ।কোলকাতার এক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
অধ্যাপিকা ড. রীতা দত্ত বলেন , বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী তার একমাত্র পুত্র, নাতির মায়া এবং কোলকাতার নিশ্চিন্ত জীবনের হাতছানি ত্যাগ করে নিজ ভূমি চট্টগ্রামে থেকে গিয়ে এই বিপ্লবী যে দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছেন তা যেন আমাদের নতুন প্রজন্ম অনুসরণ করে।
এই বিপ্লবীর পুত্র বিবেকানন্দ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, “আমার বাবার এদেশে থেকে যাওয়ার পেছনে একটি ইতিহাস আছে।তাই বাবাকে আমাদের কাছে নিতে কখনো জোর করিনি।দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের একটি শপথ ছিল যে যেখানে আছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে থেকে যাওয়া।অনেক কমিউনিষ্টের জন্যেও এই শপথ রক্ষা সম্ভব হয়নি। এই যাওয়াটা অযৌক্তিক ও নয়।
আজীবন নির্লোভ নি:স্বার্থ এবং ত্যাগী এই বিপ্লবী ' স্বাধীনতা পদক 'এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অনুদানের সব টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন এই বিপ্লবী। এর মধ্যে এশিয়াটিক সোসাইটিকে তিন লাখ টাকা এবং অন্যান্য অনুদান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছেন মাস্টারদা সূর্যসেন স্মারক বক্তৃতার জন্যে। সেই অনুদান এখনো ছাত্রদের হাতে দেয়া হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করলেন মহান এই বিপ্লবী। #### সুমি খান/ ০৯/০১/১২

Monday, April 8, 2013

ইসলামের সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচলার জাল বিস্তার করেছে মওদুদী


মওদুদী
(কৈফিয়ত: আমি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ হেয় বা খাটো করার উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরিনি। আমি জানি, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে। উত্তম খাবারের সাথে যেমন সুক্ষ পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহন করলে বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব তেমন অনুভূত হয়না এবং ধীরে ধীরে ঐ বিষাক্ত খাবার সহনীয় হয়ে যায় তেমনি মাওলানা মওদুদীর ত্রুটিযুক্ত কথা ও কাজগুলোকেও জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইয়েরা একসময় তাদের আক্বীদায় পরিনত করেন। ‘তাফহীমুল কোরআন’কে আলেম সমাজ নিষিদ্ধের দাবী করায় বর্তমান সংস্করনগুলো থেকে কিছু আপত্তিকর কথা বাদ দেওয়া হয়েছে যদিও এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া মাওলানা মওদুদী জীবিত থাকাকালীন বা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন ভুল স্বীকার করে তওবা করা হয়নি। তাই মুসলিম ভাইদের ঈমানের হেফাজতের জন্য এগুলো তুলে ধরা আমার জন্য অপরিহার্য ছিল।)

কুরআন শরীফের অনেক আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রথমে ঈমান আনার কথা এবং পরে আমলের কথা বলেছেন। ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা তাই মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় বিভেদ তৈরীর জন্য সদা সক্রিয়। আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেনঃ

“তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্যসমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিল।”
(সূরা তওবা ৪৮)
এক্ষেত্রে ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা মূলতঃ মুসলমানদের থেকেই এজেন্ট তৈরী করে। যারা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসলামী আক্বীদার মধ্যে ফিৎনা তৈরী করে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান ও মানের খেলাফসহ অসংখ্য কুফরী আক্বীদার বিস্তার করেছে সে।
এরপর পাক ভারত উপমহাদেশের এ ধারার অগ্রগামী হয়েছে তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী। স্বয়ং আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, মোদ্দাকথা ইসলামের সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচলার জাল বিস্তার করেছে এই মওদুদী।

তার সেই অসংখ্য কুফরী আক্বীদার মাত্র ৫টি ক্ষুদ্র প্রমাণ নিম্নরূপঃ
১) আল্লাহ পাক সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, সেক্ষেত্রে যেনার কারণে (আল্লাহ পাকের আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)
২) ফেরেশতা সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “ফেরেশতা প্রায় ঐ জিনিস যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থির করেছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, ১০ পৃষ্ঠা)
৩) আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছালাত ওয়াস সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “নবীগণ মা’ছূম নন। প্রত্যক নবী গুনাহ করেছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)(তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)
৪) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না।”(নাঊযুবিল্লাহ)(তরজমানুস্‌ সুন্নাহ, ৩য় খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা)
৫) সাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “সাহাবাদিগকে সত্যের মাপকাঠি জানবে না।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(দস্তরে জামাতে ইসলামী, ৭ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, সব মুফতী-মাওলানাদের ইজমা তথা ঐক্যমতে উপরোক্ত আক্বীদাধারী ব্যক্তি মুসলমান নয় বরং মুরতাদ। আরো উল্লেখ্য যে, মওদুদী’র মৃত্যুর পর শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মুখপত্রে বলা হয়েছিল, “মরহুম (মওদুদী) তার ভিন্ন আঙ্গিকে শিয়া মতবাদ প্রচলনেও সহায়তা করেছেন।”
(সাপ্তাহিক শিয়া, লাহোর, ১৯৭৯ ইং, ৫৭ সংখ্যা ৪০/৪১; খোমেনী ও মওদুদী দু’ভাই, পৃষ্ঠা ১২)
বিষাক্ত বীজ থেকে যেমন সুমিষ্ঠ ফল আশা করা যায় না তেমনি ইসলামী আন্দোলন ইত্যাদি মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও মওদুদী নিজেই যে কত বিষাক্ত বীজ ছিলো তা তার উপরোক্ত কুফরী আক্বীদা থেকেই সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। তার উপরোক্ত আক্বীদাগুলো মুসলমানদের সাথে তার বিশ্বাসঘাতকতার স্বরূপই উন্মোচন করে। আর আল্লাহ পাক বিশ্বাসঘাতকদের সম্পর্কে পবিত্র কালামে ইরশাদ ফরমান,

“আল্লাহ পাক পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাসঘাতক পাপী হয়।” (সূরা আন্‌ নিসা ১০৮)
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী যে কারনে আলেম সমাজের নিকট প্রত্যাখ্যাত হলেন নবী-রাসুলগণের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি :
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।

প্রসিদ্ধ নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]
“হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য় সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম প্রকাশ ১৯৯১ইং]
হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]


হযরত মুছা (আ.) সম্পর্কে:
“নবী হওয়ার পূর্বে মুছা(আ.) দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।” [রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খন্ড, ৩১ পৃ.]
“মুছা(আ.) এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ অধৈর্য্যশীল বিজয়ীর মত যে তার শাসন ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত না করেই মার্চ করে সম্মুখে চলে যায় আর পিছনে ফেলে যাওয়া এলাকায় বিদ্রোহের দাবানল দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে।” [তরজমানুল কোরআন ২৯/৪-৫]
হযরত ইব্রাহীম (আ.) সম্পর্কে:
“এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, এটা আমার প্রতিপালক এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসাবে অবহিত করেন, তখন সাময়িক ভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড, ৫৫৮ পৃ.]
হযরত ইসা (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইসা (আ.) মারা গেছেন একথাও বলা যাবেনা, বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট।” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড(সুরা নিসা), ৪২১ পৃ.]
হযরত ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউসুফ (আ.)- ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’- এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি। কারো কারো ধারনা, বরং তিনি এ বলে ডিকটিটরীই চেয়েছিলেন মৌলিকভাবে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান ইতালীর মুসোলিনির যে মর্যাদা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ১২২ পৃ. ৫ম সংস্করন এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ১৫১ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]
হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:
“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]
হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে:
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
“মহানবী (স.) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]
“মহানবী (স.) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।

সকল নবী-রাসুল সম্পর্কে:
“ইসমত বা নিষ্পাপ হওয়াটা মুলত: নবীদের প্রকৃতিগত গুণ নয়।এখানে একটি সুক্ষ বিষয় এই যে, আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে নেন এবং তাদেরকে দু’একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন। যাতে করে মানুষ যেন খোদা বলে ধারনা না করে এবং জেনে রাখে এরাও মানুষ।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৪র্থ সংস্করন ৫৬/৫৭ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৪ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন অক্টোবর ১৯৯১ইং]
“বস্তুত: নবীগণ মানুষ হয়ে থাকেন এবং কোন মানুষই মু’মিনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাপকাঠিতে সর্বদা অটল থাকতে সক্ষম হতে পারেনা। প্রায়শ:ই মানভীয় নাজুক মুহুর্তে নবীর ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষও কিছুক্ষনের জন্য মানবিক দুর্বলতার সামনে পরাভূত হয়ে যান।” [তাফহিমুল কোরআন ২য় খন্ড, ৩৪৩-৩৪৪ পৃ. সংস্করন ১৯৯০ইং]

“কোন কোন নবী দ্বীনের চাহিদার উপর স্থির থাকতে পারেন নি। বরং তারা আপন মানবীয় দুর্বলতার কাছে হার মেনেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, ৩৫ তম সংখ্যা : ৩২৭ পৃ.]

” অন্যদের কথা তো স্বতন্ত্র, প্রায়শ:ই পয়গম্বরগণও তাদের কু-প্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমনের সম্মুখিন হয়েছেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৫ম সংস্করন ১৯৫ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ২৮ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]

আসুন নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কিছু কথা জেনে নেই
১.মওদুদী সাহেব বলেছেন: “প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন” (তাফহীমাত: ২য় খন্ড, পৃ:৪৩)
২. হযরত মুহাম্মদ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন, তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। (তাফহীমুল কুরআন, সুরায়ে নসর এর তাফসীর)
৩.সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নন এমনকি অনুকরণ-অনুসরণের যোগ্যও নন।(দস্তুরে জামাতে ইসলামী, পৃ, ০৭)
৪.হযরত আবু বকর (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পুর্ণ অযোগ্য ছিলেন। (তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দীন: ২২,)

৫.হযরত আলী (রা.) অন্যায় কাজ করেছেন (খেলাফত ও মুলুকিয়াত: ১৪৩)
*হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. বলেছেন মওদুদী জামাত পথভ্রষ্ট; তাদের আক্বীদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিপন্থী।

এই বইগুলো দেখুন-
১. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) -জাস্টিস তাকী উসমানী (রশীদ কল্যান ট্রাস্ট)
২. মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচার্যের ইতিবৃত্ত – মাওলানা মনজুর নোমানী (রহঃ) (ঐ)
৩. মওদূদী সাহেব ও ইসলাম -মুফতি রশীদ আহমাদ লুধীয়ানভী (রঃ) (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৪. মওদূদীর চিন্তাধারা ও মওদূদী মতবাদ -ইজহারে হক ফাউন্ডেশান; প্রাপ্তিস্থানঃ (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৫. ফিতনায়ে মওদুদীয়াত – মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)
৬. ভুল সংশোধন -মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)
৭. সতর্কবাণী -মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)
৮. হক্ব বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব- আল্লামা আহমাদ শফী, হাটহাজারী।
৯. ঈমান ও আক্বীদা -ইসলামিক রিসার্স সেন্টার, বসুন্ধরা।
১০. ফতোয়ায়ে দারুল উলূম (আংশিক)
১১. ইসলামি আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ -মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন(১১/১, বাংলাবাজার, ঢাকা)
১২. আহসানুল ফতোয়া
যাদের সত্য যাচাইয়ের প্রয়োজন তারা ইচ্ছে করলেই তা করতে পারেন।
লক্ষ্য করুন এবং বিবেচনা করুন :—-
১. মুজাদ্দিদ ও ইমাম মাহদী হওয়ার দাবি মিস্টার মওদুদীর
মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য শুনে নদভী সাহেব মিস্টার মওদুদীকে সম্বোধন করে পুনঃ লিখলেন, ‘আপনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যে জাওয়াব দিয়েছেন, তাতে একথা পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, আপনি মুজাদ্দিদে কামিল বা ইমাম মাহদী হওয়ার দাবিকে অস্বীকার করেন না।’ (ইজাহে ফতওয়া, ৮৪ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদীর অভিপ্রায় ছিলো, দুর্ভাগ্যবশত মুজাদ্দিদরূপে নিজেকে জাহির করার সুযোগ না পেলেও পরবর্তীকালে তার রেখে যাওয়া জামাতে ইসলামীর পালিত শিষ্যগণ তার মুজাদ্দিদরূপে জাহির হওয়ার স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করবেন। তাই তো দেখতে পেলাম, মিস্টার মওদুদীর ইন্তেকালের পরপরই জামাতের গোপন নেতা মাও. দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এক সভায় মিস্টার মওদুদীকে মুজাদ্দিদ বলে ঘোষণা দিয়ে ফেললেন। তার বক্তৃতার ক্যাসেট এখনও আমাদের নিকট বিদ্যমান।
মিস্টার মওদুদী শুধু মুজাদ্দিদ ও ইমাম মাহদী হিসেবে জাহির হওয়ার স্বপ্নই দেখেনি, বরং একজন খোদমোখতার বা স্বয়ংসম্পন্ন মুজতাহিদ হওয়ারও আকাঙ্খা করেছিলো। এদিকেই ইঙ্গিত দিয়ে সে বললো, ‘পূর্ববর্তী মুজতাহিদগণের কার্যবলীতে যে এজতেহাদী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, বর্তমান যুগে সে শক্তি যথেষ্ট নয়। বরং বর্তমানে তাজদীদী খেদমত আঞ্জাম দেয়ার জন্য এক নতুন এজতেহাদী শক্তির প্রয়োজন। তাই বর্তমান পরিসি’তিতে এমন এক স্বয়ংসম্পন্ন মুজতাহেদের প্রয়োজন, যিনি পূর্ববর্তী মুজতাহিদগণের ইলম ও পথের অনুসারী হবেন না। যদিও ফায়দা অন্বেষণ তিনি প্রত্যেকের থেকেই করবেন। (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন)
২. ইসলামী চাল-চলন সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, ইসলামী পোশাক-পরিচ্ছদ-প্রকৃতি চাল-চলন ইত্যাদি গ্রহণ করবে। এসব ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করবে না। (এমদাদুল মুফতিয়ীন, ২য় খণ্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, পোশাক পরিচ্ছদ, চাল-চলন, আকৃতি-প্রকৃতি চুল কার্টিং ইত্যাদির ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করাতে দোষ নেই। (নাঊযুবিল্লাহ) (তরজুমানুল কুরআন, ছফর সংখ্যা, ১৩৬৯ হিজরী)
৩. দাড়ি রাখা সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কেটে ছেঁটে এর কম করা হারাম। (বুখারী শরীফ, ৭৫ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, ১২৯ পৃষ্ঠা, আবু দাউদ শরীফ ২২১ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, দাড়ি কাটা ছাঁটা জায়িয। কেটে ছেঁটে এক মুষ্টির কম হলেও ক্ষতি নেই। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পরিমাণ দাড়ি রেখেছেন সে পরিমাণ দাড়ি রাখাকে সুন্নত বলা এবং এর অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়। (নাউযুবিল্লাহ) (রাছায়েল মাছায়েল, ১ম খণ্ড, ২৪৭ পৃষ্ঠা)
৪. সুন্নত সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত, আখলাক ও স্বভাব-চরিত্র আমাদের অনুকরণের জন্য উত্তম নমুনা বা সুন্নত। (বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, ১০৮৪)
মিস্টার মওদুদী বলে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত, আখলাককে সুন্নত বলা এবং তা অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে সাংঘাতিক ধরনের বিদয়াত ও মারাত্মক ধর্ম বিগড়ন। (নাউযুবিল্লাহ) (রাছায়েল মাছায়েল, ২৪৮ পৃষ্ঠা)
৫.সিনেমা সম্পর্কে মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, সিনেমা দেখা নাজায়িয ও হারাম। (কিফায়াতুল মুফতিয়ীন, ২য় খণ্ড, ১৭৬ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, প্রকৃতরূপে সিনেমা দেখা জায়িয। (নাঊযুবিল্লাহ) (রাছায়েল মাছায়েল, ২য় খণ্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা)
৬. নামায, রোযা ইত্যাদি সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, দ্বীনের আসল মকছুদ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কায়েম করা। ইসলামী হুকমত উক্ত মকছুদ অর্জনে সহায়ক। (শরহুল আকায়েদ, ৩০৪ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, দ্বীনের আসল মকছুদ ইসলামী হুকুমত। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সমস্ত ইবাদতই উক্ত মকছুদ অর্জনের মাধ্যম। (নাঊযুবিল্লাহ) (আকাবেরে উম্মত কী নজরমে, ৬৪ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদীর উপরোক্ত মন্তব্যের ফল এই দাঁড়ায় যে, ইসলামী হুকুমত অর্জিত হলে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতের কোন প্রয়োজন নেই। যেহেতু মকছুদ অর্জিত হলে মাধ্যমের আর প্রয়োজন থাকে না। (নাঊযুবিল্লাহ)

৭.যাকাত সম্পর্কে মওদুদীর বক্তব্য-
ইসলাম ধর্ম বলে, যাকাত আদায়ের জন্য তামলীকে ফকীর (দরিদ্রকে মালিক বানানো) জরুরী। (মাকছুত, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, যাকাত আদায়ের জন্য তামলীকে ফকীর জরুরী নয়। (নাঊযুবিল্লাহ) (তরজুমানুল কুরআন, যিলহজ্জ সংখ্যা, ১৩৭৫ হিজরী)
৮. যাকাতের টাকা সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, মসজিদ, কূপ, পুকুর ইত্যাদি প্রভৃতির নির্মাণ কার্যে যাকাতের টাকা ব্যবহার করা জায়িয নেই। (কিফায়াতুল মুফতী, ৪র্থ খণ্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, মসজিদ, কূপ, পুকুর প্রভৃতির নির্মাণ কার্যে যাকাতের টাকা ব্যবহার করা জায়িয। (নাঊযুবিল্লাহ) (তরজুমানুল কুরআন, যিলহজ্জ সংখ্যা, ১৩৭৫ সংখ্যা)

৯.যাকাতের মাল হতে আপন ভাতা গ্রহণ সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্যইসলাম ধর্ম বলে, ইসলামী হুকুমতের পক্ষ হতে ধনীদের কাছ থেকে যাকাত আদায়ের জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিই কেবল যাকাতের মাল হতে আপন ভাতা পাওয়া যোগ্য। (আহছানুল ফতওয়া, ৪র্থ খণ্ড, ২৮৫ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, ইসলামী হুকুমতের নির্ধারণ ছাড়াই যদি কোন ব্যক্তি, দল বা জামায়াত যাকাত আদায়, গণনা ও বণ্টনের জন্য দাঁড়ায় তবে সেও আপন ভাতা যাকাতের মাল হতে গ্রহণ করতে পারবে। (নাঊযুবিল্লাহ) (রাছায়েল মাছায়েল, ২য় খণ্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা)
১০.সাহরী সম্পর্কে মিস্টার মওদুদীর বক্তব্য
ইসলাম ধর্ম বলে, সাহরীর শেষ সীমা সুবহে সাদিক। সুবহে সাদিক হওয়ার পর পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। (তিরমিযী শরীফ, ১২৫ পৃষ্ঠা)
মিস্টার মওদুদী বলে, সাহরীর জন্য এমন কোন শেষ সীমা নির্দিষ্ট নেই, যার কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট এদিক ওদিক হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। (নাঊযুবিল্লাহ) (তাফহীমুল কুরআন, ১ম খন্ড, ১৪৬ পৃষ্ঠা)
মুখে এক আর অন্তরে আরেক। ইসলামের পরিভাষায় এদের বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিক যে কারণে দো-দেল বা দো-যবান হয় তার পিছনে মূল কাজ করে স্বার্থগত প্রবণতা তথা দুনিয়ার লিপ্সা। এ লিপ্সা হতে পারে প্রভাব প্রতিপত্তির, হতে পারে অর্থের, হতে পারে রাজনৈতিক ক্ষমতার। সারা জীবন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলে, নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বলে, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া শিরক বলে আজ নিজামী-সাঈদী গং সেসব কাজই সমর্থন করছে। পাশাপাশি মদের দাম কমানোসহ মদের কারখানার অনুমতি দিলেও বা আমেরিকা-আফগানিস্তানসহ ইরাক আক্রমণ করলেও সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করে গেছে, ইসলামের নাম ভাঙিয়ে আকাশ ফাটানো শ্লোগানধারী বর্ণচোরা ঐ মহলটি। তবে যে কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্ণচোরা ঐ মহলটি জন্মগতভাবেই পেয়েছে গিরগিটির ন্যায় ঘন ঘন রং বদলানোর প্রবণতা তথা মুনাফিকী খাছলত।
হাদীছ শরীফ-এ মুনাফিকদের চারটি খাছলত বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে দু’টি হলো- ১. কথা বললে মিথ্যা বলা, ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করা।
হাদীছ শরীফ-এর এ ভাষ্য অনুযায়ী তথাকথিত জামাতে ইসলামীর জন্মদাতা মওদুদী কোন্ পর্যায়ের মুনাফিকরূপে সাব্যস্ত হন তা বিচারের জন্য পাঠকের নিকট নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর পরস্পর বিরোধী মন্তব্য ও বক্তব্য (প্রথম পর্যায়ে ইসলামী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার প্রচেষ্টায় নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে এবং পরবর্তিতে তথাকথিত ইসলামী দলের ভিত্তিতে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাবার লোভে নারী নেতৃত্ব সমর্থনের পক্ষে) যা চরম নির্লজ্জতার, বেহায়াপনার ও নগ্ন স্বার্থবাদিতার জ্বলন্ত প্রমাণ এখানে পেশ করা গেলো-

নারী ও আইন পরিষদঃ
মাওলানা মওদুদী মাসিক তরজুমানুল কোরআন ১৯৫২ সালে আগস্ট সংখ্যায় পাকিস্তানের জন্য কতিপয় সাংবিধানিক প্রস্তাব পেশ করে। উক্ত প্রস্তাবগুলোর বিরুদ্ধে কোন কোন মহল থেকে যে সব অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তার উত্তর সে তরজুমানুল কোরআনের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রদান করে। তন্মধ্যে একটি অভিযোগ ছিল, ‘কোন নারীর আইন পরিষদ সদস্য হওয়া উচিত নয়’ তার এই প্রস্তাবের উপর। এর উত্তরে মাওলানা মওদুদী যা কিছু লিখেছে, তা মাসিক আল ফুরকানেও ১৯৫২ সালে লিপিবদ্ধ হয়। যার বিবরণ নিম্নরূপ:
প্রথম পর্যায় (যখন মাওঃ মওদুদীর ইসলামী দলের প্রতিষ্ঠা পাবার পথে প্রচেষ্ট)
একটি অভিযোগ আমার এই প্রস্তাবের উপর উত্থাপন করা হয় যে, “কোন নারীর আইন পরিষদ সদস্যা হওয়া উচিত নয়।” এ প্রসঙ্গে আমার নিকট প্রশ্ন করা হয় যে, সেটা কোন্ ইসলামী নীতি, যেটা নারীদেরকে সদস্যা হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে?
কুরআন-হাদীছের সেই নির্দেশ কোনটি, যেটা আইন পরিষদের সদস্যপদ পুরুষদের জন্যই রিজার্ভ বলে সাব্যস্ত করে? উক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদানের আগে, এটা জরুরী মনে করি, যে আইন পরিষদের সদস্য পদের জন্য নারীদের নিয়ে আলোচনা চলছে, তার সঠিক ধরন ও স্বরূপ পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।
উক্ত পরিষদসমূহের নাম ‘আইন পরিষদ’ রাখার কারণে এ ভুল ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে যে, উক্ত পরিষদসমূহের কাজ কেবল আইন তৈরি করা। এ ভুল ধারণা পোষণ করে মানুষ যখন দেখতে পায় যে, ছাহাবায়ে কেরামের যুগে মুসলিম নারীগণও আইন-বিষয়ক মাসয়ালার আলাপ-আলোচনা, গবেষণা, মত প্রকাশ সবকিছু করতেন এবং অনেক সময় স্বয়ং ‘খলীফা’ তাঁদের মতামত জেনে নিয়ে সে অনুসারে কাজও করতেন তখন তারা আশ্চর্যান্বিত হয় যে, বর্তমানে ইসলামী নীতিমালার নাম নিয়ে এ ধরনের ‘পরিষদে’ নারীদের অংশগ্রহণকে কিভাবে গলদ বলা যেতে পারে। কিন্তু, আসল ঘটনা হলো এই যে, বর্তমান যুগে যে সব পরিষদ উক্ত নামে আখ্যায়িত হয়, সেসবের কাজ কেবল আইন তৈরি করা নয়।
বরং বাস্তব ক্ষেত্রে উক্ত পরিষদই সমগ্র দেশের প্রশাসন ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে, মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে দেয়, আইন- শৃঙ্খলার যাবতীয় নীতি নির্ধারণ করে, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়াদি নির্ধারণ করে এবং যুদ্ধ, শান্তি ও চুক্তি সন্ধি সবকিছুর চাবিকাঠি তারই হাতে থাকে।
এ হিসেবে উক্ত পরিষদের স্থান কেবল একজন আইনজ্ঞ ও মুফতির স্থান বিশেষ নয়, বরং সমগ্র দেশের নেতৃত্বেরই বিশেষ স্থান। কোরআন মানুষের জীবনে এ বিশেষ স্থান ও দায়িত্ব কাকে দিয়ে থাকে এবং কাকে দেয়না, তা একবার পাঠ করে দেখুন।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা নিসা’-এর ৩৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলেন,
“পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ পাক একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেক্কার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ পাক যা রক্ষণীয় করেছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হিফাযত করে।”
মহান আল্লাহ পাক উক্ত আয়াতে পরিষ্কার ভাষায় ‘কওয়ামিয়্যাত’ বা ‘কর্তৃত্বের’ গুরু দায়িত্ব ও জিম্মাদারী পুরুষকেই প্রদান করেছেন এবং নেক্কার নারীদের দু’টি বৈশিষ্ট্যের বিষয় বর্ণনা করেছেন,
১. তারা যেন আনুগত্যপরায়ণা হয় এবং
২. পুরুষদের অনুপসি’তে সে সব বস্তুকে হিফাযত করে যেগুলোকে মহান আল্লাহ পাক হিফাযত করতে চান।
আপনি হয়তো বলবেন যে, এটা তো পারিবারিক জীবনের জন্য বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন প্রসঙ্গে তো বলা হয়নি। কিন্তু, এখানে জেনে রাখা দরকার যে,
প্রথমতঃ ‘পুরুষগণ নারীদের সরদার বা নেতা’ এটা সাধারণ ভাবে বলা হয়েছে। ‘ফিলবুয়ুত’ বা ‘গৃহভ্যন্তরে’ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। তাই এ হুকুমকে কেবল পারিবারিক জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায়না।
দ্বিতীয়তঃ আপনার একথা যদি মেনেও নেয়া যায়, তবু আমি (মওদুদী) জিজ্ঞেস করছি, যাকে পরিবার বা গৃহে নেতৃত্বের স্থান বা জিম্মাদারী প্রদান করা হয়নি বরং অধীনস্থ (অনুগতা)-এর স্থানে রাখা হয়েছে, আপনি তাকে সমস্ত গৃহের একত্রিত রূপ অর্থাৎ সমগ্র রাষ্ট্রে অধীনস্থতার পর্যায় থেকে তুলে নিয়ে নেতৃত্বের স্থানে নিয়ে যেতে চান? গৃহের নেতৃত্বের চেয়ে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব তো অনেক বড় এবং উচ্চ পর্যায়ের জিম্মাদারী। এখন আল্লাহ পাক সম্পর্কে আপনার কি এই ধারণা যে, তিনি নারীকে তো একটি গৃহের নেতা বা সরদার করছেন না, কিন্তু লাখ লাখ ঘরের একত্রিত রূপ রাষ্ট্রের তাকে নেতা করবেন?
পবিত্র কোরআন পরিষ্কার ভাষায় নারীদের কর্মপরিধি নির্ধারিত করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন,
“তোমরা গৃহভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৪)
তারপর আপনি বলবেন যে, এ আদেশ তো নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানিত নারীদেরকেই দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমার (মওদুদী) প্রশ্ন হলো যে, আপনার পবিত্র ধারণায় নবী পরিবারের নারীদের মধ্যে কী কোন বিশেষ দোষত্রুটি ছিল, যার কারণে পরিবারের বাইরে কোন দায়িত্ব পালনে তাঁরা অযোগ্য ছিলেন? এদিক দিয়ে অন্যান্য নারীরা কি তাঁদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলো? কুরআনের এ পর্যায়ের যাবতীয় আয়াত যদি কেবল নবী পরিবারের জন্যই অবতীর্ণ হয়, তবে কি অন্যান্য মুসলিম নারীদের ‘তাবাররুজে জাহেলীয়্যাত’ বা জাহেলীয়্যাত যুগের সাজে বের হওয়ার অনুমতি রয়েছে? তাদের জন্য কি বেগানা পুরুষদের সাথে এমন ভাবে কথা বলার অনুমতি রয়েছে, যাতে তাদের অন্তরে লোভ লালসার সৃষ্টি হয়? মহান আল্লাহ পাক কী নবী পরিবার ব্যতীত অন্যান্য মুসলিম পরিবারকে ‘রিজস’ বা ‘অপবিত্রতা’ লিপ্তাবস্থায় দেখতে চান?
এবার আসুন হাদীছের দিকে।
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যখন তোমাদের ধনী শ্রেণী কৃপণ হবে, যখন তোমাদের যাবতীয় কাজে কর্তৃত্ব তোমাদের নারীদের হাতে চলে যাবে, তখন তোমাদের জন্য পৃথিবীর উপরিভাগের চেয়ে অভ্যন্তর ভাগ অধিক কল্যাণকর হবে।” (তিরমিযী)
“হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। যখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলো যে, (ইরানী) পারস্যের জনগণ কিসরার কন্যাকে (মেয়ে) তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছে, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কখনো সাফল্য অর্জন করতে পারে না, যে জাতি স্বীয় কাজকর্মের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বভার একজন নারীর হাতে সোপর্দ করে।” (বুখারী ও তিরমিযী)
উপরোক্ত হাদীছ দু’টি মহান আল্লাহ পাক-এর বাণী ‘পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’- এর প্রকৃত ব্যাখ্যা বর্ণনা করে। এর দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা নারী জাতির কর্ম পরিধির বহির্ভূত বিষয়। একটা প্রশ্ন অবশ্য থেকে যায়, তাহলো নারীদের কর্মপরিধি কি? এ প্রশ্নের উত্তরে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ হাদীছ শরীফটি পরিষ্কার ব্যক্ত করে যে,
“…. এবং নারী তার স্বামীর গৃহ এবং তার সন্তানদের হিফাযতকারিনী। তাদের সম্পর্কে সে জিজ্ঞাসিত হবে।” (আবূ দাউদ)

পবিত্র কুরআন শরীফ-এর বাণী ‘এবং তোমরা তোমাদের গৃহসমূহেই অবস্থান করবে’ এর সঠিক ব্যাখ্যা এটাই যা উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা গেলো। এর অতিরিক্ত ব্যাখ্যায় রয়েছে সে সব হাদীছ, যেগুলোতে নারীদেরকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কাজ গৃহবহির্ভূত ফরয ও ওয়াজিব থেকেও নিষ্কৃতি দেয়া হয়েছে।
‘জুমুয়ার নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানদের অধিকার ও দায়িত্ব। কিন্তু, চার ব্যক্তি ব্যতীত: গোলাম, নারী, ছেলে-মেয়ে ও অসুস্থ ব্যক্তি।”(আবু দাউদ)

“হযরত উম্মে আতীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে জানাযার সাথে চলতে নিষেধ করা হয়েছে।” (বুখারী)

“যদিও আমাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গীর পক্ষে আমাদের নিকট শক্তিশালী যৌক্তিক প্রমাণাদিও রয়েছে এবং কেউ চ্যালেঞ্জ করলে সেগুলো পেশও করতে পারে, কিন্তু প্রথমতঃ এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়নি। দ্বিতীয়তঃ আমরা কোন মুসলমানের এ হক বা অধিকার স্বীকারও করি না যে, সে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট আহকাম শুনার পর সেমতে আমল করার আগে এবং আমল করার জন্য শর্ত হিসেবে যুক্তি সংক্রান্ত প্রমাণাদির দাবি করবে।
কোন মুসলমান যদি সত্যিকার অর্থে সে মুসলমান হয়, তবে প্রথমে হুকুম মোতাবেক আমল করা তার দরকার এবং পরে স্বীয় মনমস্তিষ্ককে আশ্বস্ত করার জন্য যুক্তিপ্রমাণ তালাশ করতে পারে। কিন্তু সে যদি বলে, আমাকে আগে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করো, অন্যথায় আমি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুম মানবো না, তা হলে আমি তাকে মুসলমান বলেও গণ্য করবো না। তাকে একটি ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান তৈরির অধিকারী হিসেবে গণ্য করা তো অনেক দূরের কথা। শরীয়তের হুকুম মতে আমল করার জন্য যে ব্যক্তি যুক্তি প্রমাণ তলব করে, তার স্থান ইসলামের গণ্ডিবহির্ভূত, অন্তর্ভুক্ত নয়।”

(সূত্রঃ মাওঃ মওদুদীর সাথে আমার সাহচর্যের ইতিবৃত্ত। লেখকঃ মনজুর নোমানী)
উল্লেখ্য মাওলানা মওদুদী এ প্রবন্ধে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত করেছে যে, ইসলাম এবং ইসলামী শরীয়তে কোন নারীর জন্য আইন-পরিষদের সদস্য হওয়ার অবকাশ নেই, আর এটা ইজতেহাদী (তথা অনুমানভিত্তিক) মাসয়ালাও নয়, বরং এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট বিধান ও নির্দেশাবলী রয়েছে এবং কোন মুসলমান (সত্যিকার) মুসলমান হওয়ার জন্য এটা শর্ত যে, এ হুকুমকে নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া। কিন্তু এর মাত্র কয়েক বছর পর মওদুদী এক চিঠিতে যা লিখে,
মওদুদীর পরবর্তী বক্তব্য (তথাকথিত ইসলামী দলের ভিত্তিতে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাবার লোভে নারী নেতৃত্ব সমর্থনের পক্ষে)

পত্র নং- ৮৯
শ্রদ্ধেয়,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার পত্র পেয়েছি। আমাদের মত যুলুম ও স্বৈরাচারী নীতির প্রচলন থাকা মস্তবড় গুনাহ। এর পরিবর্তনের জন্য একজন মহিলার নেতৃত্ব গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন উপায় যদি না থাকে তবে তা হবে একটি বড় বিপদকে দূর করার জন্য ছোট বিপদের সাহায্য গ্রহণ করা, যার অনুমোদন শরীয়াতে আছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

খাকসার আবুল আলা
প্রাপক, আব্দুল হাই সাহেব, সুলতানপুর, আজমগড়, ইন্ডিয়া।
মন্তব্য: এ চিঠিতে সে বলেছে যে স্বৈরাচার পরিবর্তনের জন্য একজন মহিলার নেতৃত্ব গ্রহন ছাড়া আর কোন উপায় যদি না থাকে তবে নারী নেতৃত্ব গ্রহণের অনুমোদন শরীয়তে আছে। অথচ ১৯৫২ সালের ‘মাসিক তরজুমানুল কোরআন’ ও ‘মাসিক আল ফুরকান’ পত্রিকায় সেই লিখেছে নারী নেতৃত্ব কোন ইজতিহাদী মাসয়ালা নয়। অর্থাৎ কোন মাওলানা, কোন শাইখুল হাদীছ, কোন খতীব, কোন মুফাস্সিরে কুরআন, কোন মুফতির কিয়াস, পর্যালোচনা মতামত বা অভিমত খাটানো এখানে চলবে না। বড় খারাপ মোকাবিলায় ছোট খারাপ গ্রহণ এ জাতীয় কথা এখানে বলা চলবে না।
মওদুদীর ভাষায়: “শরীয়তের হুকুম মতে আমল করার জন্য যে ব্যক্তি যুক্তি প্রমাণ তলব করে তার স্থান ইসলাম গণ্ডীবহির্ভূত; অন্তর্ভুক্ত নয়।” অর্থাৎ মাওঃ মওদুদীর ফতওয়া অনুযায়ীই সে ইসলামের গণ্ডীবহির্ভূত। অন্তর্ভুক্ত বা মুসলমান সে নয়। বরং হাদীছ শরীফ-এর বিচারে স্পষ্ট মুনাফিকই তাকে বলা যায়।
এখানে উল্লেখ্য, ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য মিত্রোথি আর্কাইভ’ নামক বইয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী ছিলেন সি.আই.এ’র এজেন্ট।
ফিরআউনের কাহিনীও মওদুদীর প্রতি প্রযোজ্য হয়। একবার মানুষের ছুরতে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এসে ফিরআউনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কোন মনিব যদি কোনো গোলামকে তার প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি দেয় পরবর্তিতে সে গোলাম যদি উক্ত মনিবের বিরোধিতা করে তাহলে তার কি শাস্তি হওয়া উচিত? জবাবে ফিরআউন তখন দ্বিধাহীন চিত্তে বলেছিল তাকে লোহিত সাগরের পানিতে চুবিয়ে মারা উচিত। আল্লাহ পাক আপন কুদরতে ফিরআউনের মুখেই তার শাস্তির কথা উল্লেখ করিয়েছিলেন। তদ্রুপ তথাকথিত ইসলামী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর হাক্বীকত কী তা কুদরতময় আল্লাহ পাক তার হাত দিয়েই লিখিয়েছেন। এর প্রমাণ স্বরূপ নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে মওদুদীর আরো চিঠির উল্লেখ করা যায়। যেমন মওদুদী বলে:
পত্র- ৮৭, ২১শে নভেম্বর, ‘৬৪
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার চিঠি পেয়েছি। আল্লার যমীনে আল্লার আইন প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের পথ থেকে বর্তমান একনায়কত্ব হটানো ছাড়া এ উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে না। এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোনা বাস্তব পন্থা নেই। এ সময়ে যদি তৃতীয় একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্টের জন্যে দাঁড় করানো হয় তবে এটা প্রকৃতপক্ষে আইয়ুব খানকে একনায়কত্বে প্রতিষ্ঠিত রাখারই প্রচেষ্টা হবে।
খাকসার আবুল আলা
প্রাপক কাযী নাসীর আহমদ সাহেব নারুওয়াল।
পত্র- ৮৮, ২১শে নভেম্বর- ‘৬৪
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার চিঠি পেয়েছি। আপনার পেশকৃত প্রস্তাব শরীয়াতের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। জাল ভোট গ্রহণ করা অথবা টাকা দিয়ে ভোট কেনা এ দেশের জন্যে এমন ধ্বংসাত্মক যেমন ক্ষতিকর একনায়কত্ব। এ পন্থায় যারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে তাদের দ্বারা কোনো সংস্কার ও কল্যাণধর্মী কাজ হতে পারে না।

খাকসার, আবুল আলা
প্রাপক, আবু নোমান, শিয়ালকোট।
(সূত্র: মওদুদীর পত্রাবলী: আধুনিক প্রকাশনী)
মন্তব্য: ৮৮ নং চিঠিতে মওদুদী মন্তব্য করেছে আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ৮৭ নং প্রশ্নে উল্লিখিত “এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোন বাস্তব পন্থা নেই।” এই বক্তব্যও পরাজয়েরই পথ।
কারণ মওদুদী নিজেই স্বীকার করেছে নারী নেতৃত্ব হারাম এটা কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা সরাসরি ছাবেত। এর মধ্যে মানুষের ইজতিহাদ করার কিছু নেই। এটা স্পষ্ট হারাম। যে হালাল বলবে সে মুসলমানই থাকবে না। তাহলে সে হারাম পথে যদি বিজয় আসেও সে হারাম পথে আইয়ুব খান তথা একনায়কতন্ত্রকে যদি ঠেকানো যেতো তাহলেও মওদুদীর ভাষ্যানুযায়ী তা হত পরাজয়। কারণ তা হারাম পথে তথা অবৈধ পন্থায়।
আর মওদুদী নিজেও স্বীকার করেছে আমরা অবৈধ পন্থায় জয়কে পরাজয় এবং বৈধ উপায়ের পরাজয়কে জয় মনে করে থাকি। কিন্তু কার্যত মওদুদী সেই হারাম পথেই গিয়েছে এবং তার কথিত পরাজয়ের পথেই তার কবর রচিত হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত জামাতে ইসলামী অদ্যাবধি সে পরাজয়ের পথে তথা হারাম পথেই রয়েছে। যা তাদের স্বীকারোক্তিতেও বিদ্যমান।
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এসোসিয়েশন অফ মাওলানা সাঈদী সাপোর্টাস- এর বিশেষ বুলেটিন ‘মূলধারার’ সাথে সাক্ষাৎকারে সাঈদী যা বলেছে,

প্রশ: আপনে সর্বদা নারী নেতৃত্ব বিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকেন? অথচ ৯১ এর নির্বাচনের পর নারী নেতৃত্বকে সমর্থন দিলেন কেন?

উত্তর: আমরা নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অতীতেও বক্তব্য রেখেছি। এখনো আমরা সে অবস্থান থেকে সরে যাইনি। জনগণকে সবসময়ই বুঝাচ্ছি ইসলামে নারী নেতৃত্ব স্বীকৃত নয়। নারী নেতৃত্বকে আমরা সমর্থন দেইনি।
কিন্তু পাঠক! ৯১-এ বি.এন.পির সাথে আঁতাত এবং বর্তমান জোট নেত্রীর সক্রিয় অনুসরণ-অনুকরণ তথা একাত্মতা দ্বারা সাঈদীর উপরোক্ত কথার সত্যতা কত চরম মিথ্যা তা উপলব্ধি করার ক্ষমতাও বোধ হয় সুস্থ মানুষের নেই। মূলত এহেন চশমখোর গোষ্ঠীর পক্ষেই সম্ভব ৭১-এর মত রাজাকারগিরি করা, নারী-ধর্ষণ হত্যা ও লুটতরাজের মহোৎসব করা। কারণ আসলে তো এরা ইসলাম করে না। করে ইসলামের লেবেল এঁটে স্বার্থের রাজনীতি। স্বার্থের জন্যই আজ নারী নেতৃত হারাম বলে কাল হালাল বলে।
আর এরূপ স্বার্থবাদী রাজনীতি করে বলেই দে. হো সাঈদী নিউইয়র্ক থেকে ‘৯০ সালে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক ঠিকানায়’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছে
প্রশ্ন: গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির পর আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে আপনি কি বলেন?
সাঈদী (মুচকি হেসে): রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু বা শেষ কথা বলে কিছু নেই। (অর্থাৎ ইসলামকে এরা রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করে ইসলাম হিসেবে মানে না এবং এরা অন্যান্য দুনিয়াবী রাজনীতিবিদদের মতই) বাস্তবেও তাই হয়েছে। বেশি ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ৯৯-এ বিএনপির সাথে আঁতাত করেছে। তাদের নিজামী বলেছে ইসলাম কায়েমের জন্য নয় বরং আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্য তারা নির্বাচন করেছে। অথচ এ নির্বাচনকে তারা আখ্যা দিয়েছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। এর জন্য মাল, অর্থ-সময় সব কিছু দেয়াকে তারা জিহাদ বলে উল্লেখ করেছে।
কাজেই ধর্মের নামে এভাবে ধোঁকা প্রতারণা, মুনাফিকী আর কত দিন। হাদীছ শরীফ-এ এদেরকে যমীনের নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। এদের কাছে না যেতে এবং কাছে আসতে না দিতে বলা হয়েছে। তাহলে তারা আমাদের গুমরাহ করতে পারবে না তাও বলা হয়েছে।
তাহলে মুসলিম পাঠকগন এখন কি বলবেন?
{মূল-আবদুস সবুর}
http://www.somewhereinblog.net/blog/shakeer/29677519

Sunday, April 7, 2013

গণমাধ্যমকর্মীদের উপর সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠীর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ





নাদিয়া শারমীনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারী সাংবাদিকদের উপর হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হামলার প্রতিবাদে রবিবার বিকেল ৪ টায় নগরীর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নারী সাংবাদিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের উদ্যোগে এ মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।কর্মসূচি থেকে বক্তারা ঢাকায় নারী সাংবাদিককে মারধর, হয়রানিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

চট্টগ্রামে হেফাজতের সমাবেশের সময় শুক্রবার মারধরের শিকার হন একাত্তর টিভির চার সাংবাদিক। ওইদিন হেফাজতকর্মীরা নাজেহাল করেন সাংবাদিক সুমি খানকেও।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজ যখন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়ে তোলার শপথে তরুণসমাজ সহ দেশপ্রেমিক আপামর জনতা রাজপথে পথে নেমেছে। ঠিক তখনই স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে  তালেবানি রাষ্ট্রে পরিনত করতে চাইছে।
বক্তারা আরো বলেন, নারী ছাড়া একটি দেশ সভ্য জাতিতে পরিনত হতে পারে না, নারীর অবদান ছাড়া কোন জাতি উন্নত হতে পারে না। নারীর অবদান অস্বীকার করে যারা, নারীকে অবদমিত করে রাখতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন দেশ গড়ে তুলতে হবে।
সাংবাদিক সুমি খান’র সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী নূরজাহান খান, মহিলা পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক লতিফা কবির, অধ্যাপক আলেক্স আলীম, সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, লতিফা রুনা, সাবেক ছাত্রনেতা মফিজুর রহমান, গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার, প্রীতম দাশ, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সহ সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ, ছাত্র ফ্রন্টের আল কাদেরি জয়, সুমন দত্ত, সাফকাত আনোয়ার, সুজন বর্মন প্রমূখ। সমাবেশে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী নারী বাদী ছড়া আবৃত্তি করেন অধ্যাপক আলেক্স আলীম ও কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার রাশেদ হাসান। সমাবেশ শেষে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠার হাতে নির্যাতিত ও হামলায় আহত সাংবাদিকদের তালিকা করে পরবর্তীদে কর্মসূচি ঘোষণা হবে বলে জানান হয়।
সমাবেশে বক্তরা আরো বলেন,  স্বাধীনতার বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশের সার্বভৌমত্ব, বাঙালির অস্তিত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক প্রগতিগামী বাংলাদেশ তথা মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

Thursday, April 4, 2013

২০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সংসদে বিএনপির দাবি ছিল-দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ধর্মের নামে বাণিজ্য করা দল জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে


জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে সেদিন বিএনপির সংসদ সদস্যরা যা বলেছিলেন-

সাড়ে ষোল বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন বিরোধী দলের মূলতবী প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বিএনপির সংসদ সদস্যরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন । মসজিদের ইমামতি নিয়ে তর্ক-বিতর্কের সামান্য ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতে শিবিরের তান্ডব ও নৃশংসভাবে ছাত্র হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে একই ভাষায় বক্তব্য দেন শাসক বিএপির সংসদ সদস্যরা। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সংসদে দাঁড়িয়ে তাদের দাবি ছিল-ধর্মের নামে বাণিজ্য করা দলটিকে আর বাড়তে দেয়া যায় না। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। দেশের সেনাবাহিনীতে যেন কোনভাবে এ দলের অনুসারী ঢুকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সুযোগ না পায় সেজন্য নাগরিক সনদের পাশাপাশি বিশেষ সনদ চালুরও দাবি জানান বিএনপির সংসদ সদস্যরা।
সেদিন এ ঘটনা নিয়ে বিরোধী দল ৩৩টি মূলতবী প্রস্তাবের নোটিশ দেয়। সংসদের ইতিহাসে এক ঘটনায় এত বেশি সংখ্যক মূলতবী নোটিশ দেয়ার ঘটনাও বিরল। মূলতবী প্রস্তাব হিসাবে বিরোধী দল প্রিভিলেজ চাইলেও সরকারী দল আলোচনায় অংশ নেয়ার দাবি জানালে আলোচনা শুরু হয় ৬২ ধারায়। সরকার ও বিরোধী দলের ক্রমাগত আক্রমনাত্বক বক্তব্যের এক পর্যায়ে জামায়াত নেতা মতিউর নিজামীসহ দলের অন্য সংসদ সদস্যরা সংসদের বৈঠক ত্যাগ করেন।
বিরোধী দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর নিশুতি রাতে জামাত-শিবিরের নারকীয় তান্ডবে নিহত জোবায়ের চৌধুরী রীমু হত্যাকান্ড এবং শতাধিক আহত ছাত্রদের আর্তনাদ বিষয়ক আলোচনা এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে আইনগত ব্যবস্থা অবলম্বনের স্বার্থে অবিলম্বে সংসদ মূলতবী করা হোক’।
প্রস্তাব অনুযায়ী রাত ৮ টা ৩ মিনিটে সংসদের বৈঠক মূলতবী হয়ে যায়। আলোচনা শুরু হয় ৮ টা ২০ মিনিটে।
আলোচনা শুরু করে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঘটনার বণর্না করে বলেন, গত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিমর্ম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। একাত্তরের মতো জামায়াত আজ দেশকে মেধাশুন্য করতে চায়।
বিএনপির আবদুল আলী মৃধা বলেন, আজকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত শিবির রাতের অন্ধকারে যে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে সমস্ত জাতি তার জন্য উদ্বিগ্ন। আজকে এই রগ কাটার দল, গলা কাটার দল পাশের গ্রামে অস্ত্রেও ট্রেনিং করে। আমাদের সন্তান যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে তাদের লেখাপড়া শিখতে দিতে চাইছে না। তারা একাত্তরে পাকবাহিনীকে সহায়তা করে যেভাবে দেশের মানুষকে হরণ করেছিল, তা আবার ঘটাতে চাইছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে যখন রাজনৈতিকভাবে উৎপাদন ও উন্নয়ন শুরু হয়েছে তখন বাংলাদেশকে একটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করতে উদ্যোগ নিয়েছে জামাত-শিবির চক্র।
তৎকালীন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, জামাত-শিবিরের রাজনীতি একটি প্রগতি বিরোধী রাজনীতি। এদেশে তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে আসছে। দিনের পর দিন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ছাত্রদের রগ কেটে অমানুষিক অত্যাচার করে হত্যা করছে। আজকে আমরা জানতে চাই, তাদের শক্তির উৎস কোথায়? দু’চারজন বাদে এ সংসদের প্রতিটি সদস্য, ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্যরাও এ হত্যাকান্ডের বিচার চায়।
সংসদের হুইপ আশরাফ হোসেন বিরোধী দলকে কটাক্ষ করে বলেন, একযোগে শান্তি প্রতিষ্টায় যে সহায়তা করার কথা ছিল তাদের তা ত্রাা করেননি। জামায়াতে ইসলামী তার ছাত্র সংগঠনের নামে যে নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে তা রোধে সহায়তা না করে অনেকে অবস্থাকে সংকটময় করার কাজে লিপ্ত ছিলেন।
তবে এর জবাবে পাল্টা আক্রমন করে জাতীয় পার্টির আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী বলেন, আজকে প্রশ্ন উঠছে সন্ত্রাস বন্ধের ব্যাপারে সরকারের কতটুকু আন্তরিকতা ছিল। আজকে তাদের নিজেদের ঘরে আগুন লেগেছে। জামাত-শিবিরের হাতে তাদের ঘরের ছেলেরা মার খাচ্ছে বলে তাদের মুখে জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে খই ফুটছে। যাদের সাহায্যে সরকার গঠন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আজ বাধ্য হয়ে কথা বলছেন।
বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান ওমর জামায়াতের প্রতি বিষোদগার করে বলেন, আজকে আশ্চর্যের সঙ্গে দেখলাম যে, এ প্রস্তাব আনার সঙ্গে সঙ্গে মাননীয় সদস্য নিজামী সাহেবও দাঁড়িয়েছেন। তার মানে তিনি নিশ্চয় স্বীকার করছেন না যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নারকীয় হত্যাকান্ড তাদের ছাত্র শিবির করেছে। এ অপকর্ম যদি শিবির না করে থাকে তাহলে তিনি যেন দাঁড়িয়ে বলেন যে ওরা ছাত্র শিবির নয়। তিনি বলুন যে, ওই ছাত্রদের ছাত্র শিবির হিসাবে গ্রহন করি না। তাঁর যদি সাহস থাকে, মনে বল থাকে, তিনি এই এখানে বলুন।
জাসদের সংসদ সদস্য পরে বিএনপিতে যোগদানকারী শাজাহান সিরাজ বলেন, আজ আমরা আর একটি মুর্হুতও দেশকে এভাবে চলতে দিতে পারি না। ছাত্রদলের নেতৃত্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্ররা আজ এক হয়েছে। জামাত-শিবির ছাড়া সমস্ত রাজনৈতিক দল এক হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য ফরিদা রহমান জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচী সর্ম্পূনভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, ২২ বছরের রীমুকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা জানতাম, মানুষ গরু ছাগল জবাই করে। এখন জামাত-শিবির নামক একটি দল মানুষ জবাই করতে শুরু করেছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব তিনি যেন ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে এ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাহলে আমরা খুশি হব, জনগণ খুশি হবে এবং দেশে একটি নিরাপত্তা আসবে।
বিএনপির আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, আজ এ সংসদে জামায়াতে ইসলামীর যেসব সংসদ সদস্য বন্ধুরা আছেন তাদের বিবেককে একটু জিজ্ঞাসা করতে চাই, ধরো, ধরো বিএনপি ধর, জবাই কর, এ সেøাগানটি ইসলামিক না অনৈসলামিক? মধ্যরাতে রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ের দুইশ কামরায় অগ্নি সংযোগ করল, লুটপাট করল এগুলো কি ইসলামিক না অনৈসলামিক? আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, ঘুমন্ত অবস্থায় নিরীহ ছাত্রদের এক এক করে রগ কেটে দেয়া কি ইসলামিক না অনৈসলামিক? আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করুন বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রেনিং দিয়ে, ক্যাডার তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছেড়ে দিয়েছেন এটা কি মানবতার বিরোধী না মানবতার পক্ষে? তিনি বলেন, শিবির বহু মায়ের কোল খালি করে দিয়েছে। এ হাউজে আজ যে ঐক্যমতের সৃষ্টি হয়েছে সেই ঐক্যমতের দিকে লক্ষ্য রেখে অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হোক।
বিএনপির সংসদ সদস্য আলমগীর কবির ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রয়োজনে এ মহান সংসদে বিল আনতে হবে। জামাত-শিবিরের নারকীয় হত্যাকান্ড শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র রাজশাহীর আকাশ-বাতাস মোথিত হয়ে উঠছে। আমি থুথু নিক্ষেপ করে জামায়াতের সমালোচনা করব না। আমি গণতন্ত্রের ভাষায় ঘৃনা প্রকাশ করব, নিন্দা জানাব এবং আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে জামায়াতকে নিন্দা জানাব।
বিএনপির মেজর (অব) আখতারুজ্জামান বলেন, আমি বিরোধী দলের বন্ধুদের বলব, স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী চক্রকে রাজনীতিসহ সব জায়গায় নিষিদ্ধ করে প্রস্তাব আনেন। আপনাদের ভোট দিতে হলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে হলেও আপনাদের ভোট দেব। আসুন আমরা আজ তাদের সঙ্গে আর এক কক্ষে না বসার অঙ্গীকার করি।
বিএনপির সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি আজকে প্রস্তাব করতে চাই সামরিক বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, এনএস, আইডিএফআই সহ সকল বাহিনীতে নাগরিক সনদের পাশাপাশি আরও একটি সনদ যোগ করতে হবে। জামাত-শিবিরের কোন সদস্য এ বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে না। তা না হলে বিশ বছর পর তারা এ বাহিনী দখল করে আবার এদেশের ক্ষমতা দখল করবে। একাত্তরে তারা যেভাবে এদেশের মানুষকে হত্যা করেছিল। সেই একই কায়দায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নেতাশুন্য করতে ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর আক্রমন করেছিল।
বিএনপির সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট খায়রুল এনাম জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, জামায়াতের উদ্দেশ্য কি? কি কারণে তারা নিরীহ সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ছাত্র সমাজের ওপর তান্ডব লীলা চালাচ্ছে?
বিরোধী দলের প্রতি আহবান জানিয়ে বিএনপির জিয়াউল হক বলেন, বিরোধী দলের বন্ধুদের বলতে চাই, আমাদেরকে জোর করে অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলাতে বলবেন না। স্বাধীনতার স্বার্থে রাজনৈতিক স্বার্থে আপনাদের সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করি। আমাদেরকে জোর করে জামায়াতের সঙ্গে ঠেলে দেবেন না।
হুইপ শাজাহান মিয়া বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত শিবির যে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে তা বণর্না করার ভাষা আমার জানা নেই। জামাত-শিবির সীমা লংঘন করছে। তারা একাত্তরের নারকীয় ঘটনা আবার ঘটাতে চায়। আজ কোন গোষ্ঠী বিশেষ নয় আমাদের সবাইকে রাজনৈতিকভাবে সামাজিকভাবে এ জামাত-শিবিরকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ার সুযোগ এসেছে।
সব শেষে রাত সোয়া ১২ টায় সংসদ উপনেতা ডাঃ বদরুদোজ্জা চৌধুরী বলেন,উভয় তরফের বক্তব্য খুব কাছাকাছি ছিল। আমি দুঃখিত যে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা এখানে নেই। তাদের এখানে থাকা উচিত ছিল এবং তাদের বক্তব্য কি ছিল সেটা জানতে পারলে আমাদের আরও সুবিধা হত। আমরা তাদের বক্তব্য খন্ডন করতে পারতাম। তিনি বলেন, ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর রাজনৈতি বিশ্বাসের অজুহাতে ধর্মকে বর্ম হিসাবে ব্যবহার করে যে বর্বর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে তা পৈশাচিক। এটা ইসলাম ধর্মের মূলনীতির বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় কথা বিবেক বিরোধী। এ হত্যাকান্ডে সমস্ত জাতি স্তম্ভিত। রগ কাটা, হাত কাটা, জবাই করা এটা কি ধরনের রাজনীতি? স্বাধীন দেশে এটা চলতে দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, জামাত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের প্রস্তাব সংবিধান দিয়ে ভাল করে পরীক্ষা করার অবকাশ আছে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিধ্বণি করে সংসদ এ ব্যাপারে দৃঢ় ঘোষণা দেবে এবং সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।

হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি! শূন্য ডাকঘর!

হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি! শূন্য ডাকঘর!

সাকা -মীরকাশেম পরিবারের বিপুল বিনিয়োগ: নেপথ্যে জামাত।। ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচিত


হেফাজতী ইসলামের লংমার্চঃ নেপথ্যের এক ভয়াবহ কাহিনী



ভূমিকাঃ  আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে কথিত আল্লামা শফি’র নেতৃত্বে একটি লং মার্চ ঢাকা অভিমুখে আসছে এই শনিবার ৬-ই এপ্রিল ২০১৩, প্রিয় পাঠকেরা আজকে আপনাদের বলব এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের কাহিনী। যা শিউরে উঠার মতো। অন্ধকারের এই শক্তির প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত করা হলো।


[অনৈতিক কাজের জন্য লন্ডন শাখার হেফাজতী ইসলামী সংগঠক হামিদী শাহবাগ থেকে গ্রেফতার]

আসলে হেফাজতী ইসলাম যে এই আন্দোলন করবে শুরুতে তার কথা ছিলো না । জামাতের ইমেজ সারা বাংলাদেশে খারাপ থাকায় জামাত হন্যে হয়ে একটা চ্যানেল খুজঁছিলো যাতে অন্য কোনোভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো যায় কিনা, দেশের পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে। এইসময় লন্ডন হেফাজতী নেতা হামিদীর গ্রেফতার ঘটনা যেন জামাতের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে।জামাতের ভাগ্য ভালোই বলতে হয়।
শাহবাগ আন্দোলনের সময় শাহবাগে ২২ শে ফেব্রুয়ারী শেখ নূরে আলম হামিদী নামক একজন বৃটিশ নাগরিক শাহবাগে এসেছিলেন তার হ্যান্ডি ক্যামেরা নিয়ে । সে সময় হামিদী সেখানকার তরুনদের সিগারেট খাওয়া, পথে বসে জাগ্রত নারীদের গান গাওয়া সহ বিশেষ উদ্দ্যেশ্যমূলক কিছু ভিডিও রেকর্ড করছিলেন। ঠিক সে সময় সেখানে অবস্থানরত তরুনদের সন্দেহ হয় এবং তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সে এখানে কি করছে তখন হামিদী ঠিক ঠাক কিছু বলতে পারেনি।
পরে তার সাথে থাকা ক্যামেরা, ভিডিও ডিভাইস ঘেঁটে দেখা যায় হামিদী সেখানে মেয়েদের শরীরের নানা স্থান দূর থেকে ভিডিও করেছেন এবং ক্যামেরাতেও নানান ছবি তুলেছেন। যেমন একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে একটি ছেলে সিগারেট খাচ্ছে, একটি মেয়ে স্লোগান দিতে গিয়ে তার ওড়না পড়ে গেছে কিংবা একটি মেয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তার বান্ধবীর কাঁধে। ঠিক সে সময়ে ক্লান্ত ঐ বোনের অসতর্ক মুহুর্তে তার শরীরের নানান স্থানের ছবি তুলে হামিদী এগুলো দিয়ে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালাতে চেয়েছিলো।


কে এই শেখ নূরে আলম হামিদীঃ

এই হামিদী একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯৯৮ সালের দিকে আওয়ামীলীগ আমলে এই হামিদীর নামে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে এলার্ট জারি হয় এবং পুলিশ হন্য হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। ১৯৯৯ সালে এই ব্যাক্তি পালিয়ে প্রথমে ভারত তারপর সেখান থেকে তার আরেক ভাইয়ের সাহায্যে যুক্তরাজ্যে যায়।
হামিদীর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। তার বাবা শেখ খলিলুর রহমান হামিদী বরুনার পীর। হামিদী বরুনা মাদ্রাসায় একসময় শিক্ষকতা করত। হামিদী লন্ডনে মূলত হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছিলো। তাদের এই মাদ্রাসা পূর্ব লন্ডনের প্লাস্টোতে অবস্থিত। এই হেফাজতী ইসলাম লন্ডনে তাদের নাম ধারন করে আঞ্জুমানে হেফাজতী ইসলাম। প্রতি বছর লন্ডনে পহেলা এপ্রিলের মেলাতে এই হেফাজতী ইস্লামের কর্মীরা লন্ডনের বিভিন্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে লিফ্লেট দিত যাতে মানুষ মেলায় না যায়। এটা নাকি ইসলাম বিরোধী কাজ। হেফাজতে ইসলামের অধীনে যত মাদ্রাসা আছে সেগুলোর জন্য এই হামিদী প্রতি বছর রমজানে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বা উৎসবের আগে টিভিতে, রেডিওতে এবং লন্ডনের বিভিন্ন সোর্স থেকে পাউন্ড সংগ্রহ করত।

শাহবাগের তরুনেরা হামিদীকে তার এইসব ঘৃণ্য কর্মকান্ড সহ হাতে নাতে ধরে গণপিটুনী দেবার চেষ্টা করলে সেখানকার কিছু তরুন তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে এবং হামিদীর কাছ থেকে উদ্ধার করে মহামূল্যবান কিছু ডকুমেন্টস। এইদিকে হামিদীও স্বীকার করে অনেক কিছু। আর এইসব কারনেই হেফাজতী ইসলাম নামে জঙ্গী দলটি ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে প্রতিশোধের নেশায়।



[উপরের ছবিতে জঙ্গী নূরে আলম হামিদীকে দেখা যাচ্ছে]

ডেটলাইন ২৮ শে ফেব্রুয়ারীঃ

সাঈদীর রায় শুনবার পর থেকেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার বার বার চেষ্টা চালাতে থাকে বি এন পি’র হাই কমান্ডের মাধ্যমে বড়ো কোন ঘটনা ঘটানোর। এম কে আনোয়ার, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে তারা। বি এন পি’র হাই কমান্ড অনেক আগে থেকেই সাকার উপর নাখোশ। এইদিকে সাদেক হোসেন খোকার একটা গ্রুপ সাকার ব্যাপার বি এন পি 'র হাই কমান্ডকে পুরোপুরি অফ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারেক রহমান সাফ জানিয়ে দিয়েছে সাকার ব্যাপারে কোনো কথা না বলতে। সব কিছু মিলিয়ে সাকার ছেলে ফাইয়াজ এবং হুম্মাম প্রাণপণে বি এন পি’র হাই কমান্ডে চেষ্টা করে যাচ্ছিলো খালেদা যাতে একটাবারের জন্য হলেও সাকা'র নাম উল্লেখ করে বিবৃতি দেন।
হুম্মাম শুধু তদবির করার জন্য এম কে আনোয়ারকে ৪৫ লাখ টাকা দেয়। তবে আলতাফ হোসেন এইজন্য কোনো টাকা নেন নি। এরা দুইজন মিলে যখন খালেদার সাথে দেখা করতে যান, তখন এই বিষয়ে খালেদা শুধু শুনে গিয়েছিলেন। দুই নেতা উঠে আসবার সময় খালেদা আলতাফের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, "সালাউদ্দিনকে একটু ঠাট কমাতে বলেন। এইভাবে বি এন পিতে তার জায়গা হবে না।" সাকার পরিবার এ খবর শুনে বুঝতে পারে বিপদের সময় বি এন পি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের দেখা করতে চাইলে হাসিনা সরাসরি বলে দেন, সাকার পরিবারের কেউ যেন তার আশে পাশে কোনোভাবেই না আসে ।




মার্চের প্রথম সপ্তাহঃ

এমন একটা অবস্থায় সাকার অত্যন্ত কাছের লোক মাওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী সাকার বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদেরের কাছে একটা প্রস্তাব আনে যে হেফাজতী ইসলামের এক নেতাকে সরকার আর শাহবাগের জনতারা খুব অপদস্থ করেছে, এখন সে জেলে। তার ব্যাপারে সাকা যদি হেল্প করতে পারে তাহলে তারা বসতে পারে। সেই সাথে আব্দুর রহমান আরো জানায় যে, হেফাজতী ইসলামী একটা বড়ো সড়ো আন্দোলনে যেতে চায়। এই পুরো আন্দোলোনের জন্য অনেক টাকার দরকার। সাকার ছেলে ফাইয়াজ আবদুর রহমান চৌধুরীকে সরাসরি কথা দেয় না। সে বলে তারা বাবার সাথে কথা বলে তাকে জানাবে।
হেফাজতী ইসলামের প্রধান আল্লামা শফি অনেক আগে থেকেই সাকার কৃপায় চট্রগ্রামে টিকে থাকা লোক। এখন সাকার বিপদে সাকাকে এমন প্রস্তাব করায় তেলে বেগুনে তেঁতে ওঠে সাকার স্ত্রী ফারহাত। তারপরও'' পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে নেই দেখে পিপড়াও লাথি দেয়'', এই বাস্তবতা বুঝে চুপ থাকেন তিনি। সাকাকে এই প্রস্তাব জানানো হলে সাকা তার ছোট ছেলে হুম্মামকে এই ব্যাপারে ইনভলভ্ড হতে বলে এবং জামায়াতে ইসলামীর একটা স্ট্রং লিঙ্ক এখানে কাজে লাগাতে বলে। কারাগারের ভেতরে বসে এই প্রস্তাব শুনে সাকার প্রথম কথা ছিলো “সোদানির পুতেরা তাইলে এখন প্রস্তাব নিয়া আসছে?”



ফাইয়াজ আর হুম্মাম জামাতের সেলিম, রফিকুল,শিবিরের নেতা দেলোয়ার, হেফাজতের মাওলানা রুহী, জুনায়েদ আল হাবিবি এবং আব্দুর রহমান চৌধুরীর সাথে একটা গোপন বৈঠকে বসে রাঙ্গুনিয়ার পেনিনসুলা হোটেলে। এই সময় হুম্মাম জামাত শিবিরের তিন নেতা এবং হেফাজতের মাওলানা রুহীকে ও জুনায়েদকে 'আই ফোন- ৫ ' গিফট করে। এই বৈঠকে আসার আগে ফাইয়াজ তারা চাচা গিয়াসুদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে শেখ হেলালের সাথে বৈঠক করে নেয়।


যদিও দীর্ঘদিনের ভ্রাতৃবিরোধের জেরে গিকার সাথে সাকার পরিবারের সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। তবু গিকা এই ব্যাপারে আগের তিক্ততার কথা ভুলে থাকে। কারণ ,গিকার নামেও এখন যুদ্ধাপরাধ মামলার তদন্ত চলছে। এইদিকে মীর কাশিমের ছেলে আরমানের সাথেও হুম্মামের একটা টেলিকনফারেন্স হয় এবং আরমান পুরো নিশ্চিত করে যে, সে সাকার পরিবারের যে কোনো সিদ্ধান্তের সাথে আছে। সাকার স্ত্রী যোগাযোগ করে তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে ।মহিউদ্দিন সরাসরি কিছু না বললেও তাদের পুরা পরিবারের সাথে আছে বলে জানায় এবং চিন্তা করতে মানা করে। সব কিছু নিশ্চিত করার পর হুম্মাম এবং ফাইয়াজের সাথে জামাত-শিবিরের ওই তিন নেতা, হেফাজত ইসলামীর মাওলানা রুহী এবং সাকার নিকটাত্নীয় মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরীর সাথে মিটিং হয়। মিটিং চলে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টার মতো এবং সেখানেই মূলত পরিকল্পনা করা হয় যে, এখন সামনে থেকে সবকিছু করবে হেফাজতী ইসলামী। পেছনে সাপোর্ট দিবে সাকা-গিকার পরিবার, মীর কাশিমের পরিবার এবং জামাত। বি এন পি’কে বোঝানোর দায়িত্ব থাকে আলতাফ হোসেন চৌধুরী আর মীর নাছিরের উপর। মজার ব্যাপার হলো, এই বৈঠকের শেষে মাওলানা রুহী আলাদা ভাবে হুম্মামের কাছে জরুরী ভিত্তিতে ৭ লাখ টাকা ধার চায়। হুম্মাম পরের দিন মাওলানা রুহীকে সাত লাখ টাকা দেয় এবং এই টাকা দিতে যায় নুরুল আমীন নামে হুম্মামের এক কাছের লোক।


কি করতে চায় সাকা এবং আল্লামা শফি?


এই লং মার্চের একটা বড় প্ল্যান ছিলো যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বি এন পি’র সাবেক সাংসদ আব্দুল আলীমকে হত্যা করা। এতে করে দেশে একটা ভয়াবহ বিশৃংখলা তৈরী হবে। নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানায় দুইজন কয়েদীকে খুন করে পাগলা ঘন্টি বাজানোর পরিকল্পনাও আছে।
এখানে পরিকল্পনা করা হয় কওমী মাদ্রাসার প্রায় ৫০ জনকে হত্যা করে ফেলে দেয়া হবে। দায়ী করা হবে আওয়ামীলীগ আর বাম দলকে। ঢাকাতে তারা অতর্কিতে হামলা করবে গণ জাগরণ মঞ্চে এবং সেইখানেও তারা হামলা করে কমপক্ষে ৫ জনকে হত্যা করবে। এই দায়িত্বটা নেয় শিবিরের দেলোয়ার। একই সাথে হিজবুত তাহরীর এর একটা বড় অংশকেও সাকার পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে তাদের কার্যক্রম চালাবার জন্য। এই টাকার লেনদেন হয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের এক বাড়িতে। হিজবুত তাহরীর প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আত্নঘাতী বোমা হামলায় খুন করবার জন্য এক পায়ে দাঁড়ানো। এই লং মার্চেও এরকম প্রস্তাব আসে। সাকার পরিবার এবং বি এন পি’র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক'এখনো সময় হয়নি' বলে এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। উলটা তারা ভয় পেয়েছে যে হিজবুত তাহরীর এই লং মার্চে বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে আর পুরো লং মার্চের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। হিজবুতীরা যাতে এই ধরনের সহিংস কিছু না করে এই জন্য দফায় দফায় বৈঠক হয় তাজমহল রোডের ওই বাড়িতে। এদের একটা বৈঠক হয় সাকার মেয়ে ফারজিনের গুলশানের ক্যাফে বিটার সুইটে।

সাকার মেয়ে ফারজিন তার গুলশানের ক্যাফে বিটার সুইটে




[মাওলানা রুহী]

আমার দেশ কার্যালয়ে বৈঠকঃ

[হেফাজতীদের সাথে মাহমুদূর রহমান]
দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে সব সময় পুলিশের নজরদারী থাকলেও সেখানে গোপনে একটি বৈঠক হয় গত ১১ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায়। এই বৈঠকই মূলত হেফাজতের অন্যতম নীতি নির্ধারক বৈঠক। এই বৈঠকে ফরহাদ মজাহার, শওকত মাহমুদ, শিবিরের দেলোয়ার, সাকার ছেলে হুম্মাম, মাওলানা রুহী,আল্লামা সুলতান যওক নদভী,ইনামুল হক কাসেমী, মুফতহি ইজাহারিল হকের ছেলে মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী ( মার্কিন দূতাবাস উড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্রের দায়ে গ্রেফতার এবং জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত), মীর কাশেমের ছেলে আরমান এবং আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় অনেক কিছু। এখানে টাকা পয়সা থেকে শুরু করে কিভাবে লং মার্চ হবে, কিভাবে নৈরাজ্য চালানো হবে সব ধরনের সিদ্ধান্ত হয়। মীর কাশেম, জামাত এবং সাকার পরিবার মিলে মোট ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার একটা খসড়া বাজেট ব্যবস্থা করবে বলে বলা হয় । টাকাটা মাহমুদুর রহমানের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউট করা হবে বলে ঘোষনা দিলে বৈঠকে মাওলানা রুহী এবং হারুন ইজহার বলে এই টাকা সরাসরি যারা যারা আন্দোলন করবে সেইসব দলের নেতাদের আলাদা আলাদা দিতে হবে। মাওলানা রুহী হেফাজতী ইসলামের জন্য একাই ৪৫ কোটি টাকা দাবী করে বসে। এই সময় শওকত মাহমুদ মাওলানা রুহীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে মাওলানা রুহীও পালটা পালটি তর্ক করতে থাকে। এক সময় শওকত মাহমুদ ওই মিটিং ছেড়ে সব হুজুরদের চলে যেতে বললে একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন ফরহাদ মজাহার, আল্লামা নদভী এবং হুম্মাম মিলে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন। মাহমুদুর রহমান এ সময় চুপচাপ ছিলেন। মাহমুদুর রহমান মাওলানা রুহীকে বলেন." আমরা দুইবার আপনাদের বিজ্ঞাপন প্রথম পাতায় দিয়েছি সম্পূর্ন ফ্রি, প্রতিদিন আপনাদের খবর ছাপাচ্ছি প্রথম পেইজে এইটা ভুলে যাবেন না। " মিটিং শেষ হয় ওইদিন রাত ২ টায়। পরে চাইনিজ খাবার আনা হয় রেস্টুরেন্ট থেকে। হুম্মাম এবং আরমান না খেয়ে চলে যান তাড়া আছে বলে।

১৫ ই মার্চঃ

সাকার পরিবার থেকে একটা সিদ্ধান্ত হয় যে, যারা যারা আন্দোলন করবে তাদেরকে আলাদা ভাবে দল ভিত্তিক টাকা দেয়া হবে। কারন মাহমুদুর রহমানের অফিসে মিটিং থেকেই তারা বুঝতে পেরেছে যে এই হুজুরেরা টাকা না দিলে নড়বে না। এর মধ্যে মাওলানা রুহী ধারের কথা বলে ৭ লাখ টাকাও নিয়েছে হুম্মামের কাছ থেকে। এই একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মীর কাশেমের পক্ষ থেকেও। এইসময় মীর নাছিরের ছেলে মীর হেলাল বার বার বলে 'আমার দেশ' এর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে যাতে কিছু করা না হয়। এই নতুন ঝামেলা নিয়ে আবারো সাকার মেয়ে ফারজিনের ক্যাফেতে বৈঠক হয় হুম্মাম, আরমান, মীর হেলাল এবং হেলালের সাথে আসা এক বন্ধু লিটনের। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মাহমুদুর রহমানকে ৩ কোটি, দারুল মা'আরিফ চট্রগ্রামের মহাপরিচালক মাওলানা নদভীকে ২ কোটি, কওমী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে ১ কোটি, পটিয়া মাদ্রাসার মহা পরিচালক আব্দুল হালিম বোখারীকে ৫০ লক্ষ এবং হেফাজতী ইসলামকে দেয়া হবে ৪৫ কোটি টাকা এবং জামাত নিজে খরচ করবে বাকী টাকার অংশ তাদের নিজেদের ফান্ড থেকে। সিদ্ধান্ত হয় যে এই পুরা লং মার্চের সব দায় দায়িত্ব থাকবে হেফাজতী ইসলামের কাছে এবং চট্টগ্রাম থেকে পুরো ব্যাক আপ দেবে জামাত-শিবির আর বি এন পি’র সাকা গ্রুপ।

টাকা নিয়ে গ্যাঞ্জাম এবং আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোঃ


কওমী শিক্ষা বোর্ডের মুফতি কাশেমী এই অর্থ নিতে রাজী হয়। কিন্তু বেঁকে বসেন বর্ষীয়ান মুফতি আব্দুর রহমান। তিনি বুঝতে পারেন এখানে হেফাজতীদের অনেক টাকা দেয়া হচ্ছে সেই তুলনায় তাদেরকে অনেকটা ভিক্ষার মত স্বল্প টাকা দেয়া হচ্ছে। একই ব্যাপার বাকীদের সাথেও হয় এবং এদের সবার সাথে একটা বৈঠক হয় মার্চের ২০ তারিখে সাকার ধানমন্ডির বাসায়। এখানে কোনোভাবেই এদের কাউকে বুঝানো যায় না। পরে বৈঠক শেষ হলে হুম্মাম, ফাইয়াজ, মীর হেলাল বুঝতে পারে যে এই হুজুরেরা টাকার কাঙ্গাল এবং এত টাকা যারা জীবনে চোখেও দেখে নাই তারা সরকারী ভয়েই সরে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই পুরো অংশটাই এই লং মার্চ থেকে সরে দাঁড়াবার অবস্থা হলে জামাত এই পুরো সিন্ডিকেট কে প্রায় ২৫ কোটি টাকায় রাজি করায়। মাহমুদুর রহমানের সাথে শেষ পর্যন্ত ৪ কোটি টাকায় রফা হয় পুরো ব্যাপারটাতেই,আর হেফাজতীদের মোট দেয়া হয় ৪৫ কোটি টাকা।



নিজেদের ভেতর অন্তর্দন্দ্ব ও চরম অবিশ্বাস-কলহঃ

এই পুরো ব্যাপারটা যেহেতু কোনো আদর্শিক আন্দোলন নয় এবং এর সাথে সম্পূর্ণ ভাবেই টাকা পয়সা আর নিজের লাভ জনিত কারন জড়িত। সেহেতু খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই পুরো গোষ্ঠীর বিভিন্ন মতাদর্শের দলের ভেতর শুরু হয় কোন্দল। সেটাও টাকা নিয়ে। হেফাজতী ইসলাম একসাথে এত টাকা পাবে এইটা কোনোভাবে মানতে পারছে না অন্যান্য দলে গুলো। এবং সে কারনেই কয়েকটা দল আস্তে আস্তে বিভক্ত হয়ে পড়লো। হেফাজতের কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিসহ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি তুলে শেষ মুহূর্তে লংমার্চ থেকে দূরে সরে গেছেন বলে খবর আসে বিভিন্ন স্থান থেকে। পরে জামাতী ইসলামের মধ্যস্থতায় সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান আলেম ফকিহুল মিল্লাত আল্লামা মুফতি আবদুর রহমান, ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী, দারুল মা'আরিফ চট্টগ্রামের মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী মোট ২৫ কোটি টাকায় একটা রফা করে। যার মধ্যে ১০ কোটি টাকাই পাচ্ছে মুফতি আব্দুর রহমান।



এই ঘটনাতে মুফতী কাশেমী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। কারন এই ডিল করার সময় তাকে জানানো হয় নাই এবং টাকার ব্যাপারেও তাকে কিছু বলা হয়নি। সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কেন্দ্রীয় নেতা ও মুফতি আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠভাজন মুফতি ইনামুল হক কাসেমী এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আলাদা দল নিয়ে লং মার্চের ঘোষনা দিলে হুম্মাম এবং জামাতের রফিকের মাধ্যমে আবার একটা সুরাহা হয়। কাশেমীকে দেয়া হয় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কাশেমি প্রথমে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসায় কঠোর নির্দেশ জারি করেছিলো কেউ যাতে লং মার্চে না যায়, কোনো ছাত্র-শিক্ষক হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। এমনকি বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কেউ যাতে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের বাইরে বেরোতে না পারেন। পরে কাশেমী ও আব্দুর রহমানের ভেতর একটা রফা হয় যে,তারা এক সাথে মিলে মিশে কাজ করবে।

এদিকে গত ২৯ মার্চ শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় মহাসমাবেশে চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচিতে সমর্থন ঘোষণা করলেও তাতে তাঁর দল ও মুরিদরা অংশ নেবেন না বলে জানা গেছে। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক বারিধারা মাদানিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করে। বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কাসেমী সাহেবের সাক্ষাৎ-রহস্য এবং বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হেফাজতের নেপথ্যে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব ও ষড়যন্ত্র বিষয়ে হিসাব-নিকাশ শেষে চরমোনাইয়ের পীরের অনুসারীরা শেষ পর্যন্ত লংমার্চে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তারা এই লংমার্চে দেওয়া সমর্থন বহাল রাখলেও লংমার্চ কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও তার সিদ্ধান্তের কথা জানান যে তারা আর এই আন্দোলনে নেই।

কিভাবে অর্থ দেয়া হলোঃ

এখানে উল্লেখ্য যে মোট ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার একটা মোটামুটি খসড়া বাজেট করা হয়েছিলো শুরুতেই। এত টাকার বাজেটের মধ্যে যে টাকা জামাত নিজে খরচ করবে তার পরিমান প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। জামাত অবশ্য তাদের এই টাকা শুধু নিজেদের দলের জন্য নয় বরং মুফতি আব্দুর রহমান, কাশেমী এদের খাতে ব্যয় করবে বলে ঠিক হয়। এর মধ্যে ৪৫ কোটি পাচ্ছে হেফাজতী ইসলামী এবং ৪ কোটি পাচ্ছে মাহমুদুর রহমান। বাকী বাজেটের মধ্যে মধ্যে ১০ কোটি পায় মুফতি আব্দুর রহমান, ১ কোটি ৭০ পায় মুফতী কাশেমী, কিছু টাকা টাকা হুম্মাম ডিস্ট্রিবিউট করে বাবু নগর, হাটজাহাজারি সহ আরো কিছু মাদ্রাসায় ও এতিম খানায় এবং সেখানে কওমী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের নিষেধ মেনেও যাতে তারা লং মার্চে শরিক হয় এই চেষ্টা চলতে থাকে। মজার ব্যাপার হলো মহাপরিচালক আব্দুর রহমানের অগোচরে আরো কিছু টাকা দেয়া হয় ইনামুল হক কাশেমিকে তাদের দফার বাইরে । যাতে করে সে গহিরা, হাটহাজারি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান সহ অনান্য এলাকায় মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে শনিবার ব্যাপক নৈরাজ্য করতে পারে । এই টাকার পরিমান নিয়ে দুই রকমের বক্তব্য পাওয়া গেছে। একটা সূত্র থেকে বলছে ৮০ লক্ষ, আরেকটা সূত্র থেকে বলছে ১ কোটি। এই টাকা দেয়া হয় বাবুল চৌধুরী নামে এক ব্যাক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটের পাশের এক রেস্তোরায়।

হেফাজতী ইসলাম সহ সকল শরীকরা কিভাবে লং মার্চ নিয়ে এগোবে:



এইখানে লং মার্চের দুইটা প্ল্যান আছে। প্ল্যান ১ আর ২।
এই দুইটা প্ল্যান পুরো সাজিয়েছে জামাত নেতা রফিক ও সেলিম। ষড়যন্ত্রকারীরা জানে যে সরকার এই মার্চে বাধা দিতে পারে বলে শুরু থেকেই তারা চেয়েছে তাদের নেতা মূল ব্যক্তি আল্লামা শফিকে তারা ঢাকায় নিয়ে আসবে এবং এখানে একটা জমায়েত তারা বৃহস্পতিবার [মার্চ-৪] থেকেই করবে। যদি কোন কারনে আল্লামা শফিকে চট্রগ্রাম থেকে না আসতে দেয় তাহলে তারা ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে সেন্ট্রাল ঢাকার একটা অংশে তান্ডব চালাবে।
পরিকল্পনা মতে, জামাতের লোকেরাই জামাতের কিছু তরুন নেতাদের খুন করবে, কিছু মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দেবে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আবদুল আলীম কে হিট করবার জন্য তারা এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে স্নাইপার এনেছে। এই ঘটনাটা ঘটিয়ে দিতে পারলেই জামাত দেখাতে পারবে যে এই ট্রাইবুনালে আটক যারা তারা নিরাপদ নয় এবং এই বিচারপ্রক্রিয়া প্রহসন। চট্রগ্রামে প্রাথমিক ভাবে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে আব্দুর রহমান চৌধুরী এবং এম এ হাসেম খান। এরা দুইজনই সাকার অত্যন্ত কাছের লোক এবং পুরা ব্যাপারটা এরা শুরু থেকেই তদারকি করছে নিভৃতে। হেফাজতী ইসলাম সহ সব দল বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৫৬ টি টিম বানিয়েছে। এরা বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানা থেকে লং মার্চের সাথে যোগ দেবে। মূলত এই দলটি ঢাকাতে ঢোকার সাথে সাথেই এদের মধ্যে ১৫ টি ইউনিট শুরু করবে তান্ডব। খুলনাতে একটা গ্রুপ নাস্তিক সেজে কোরান শরীফ পুড়িয়ে দিবে এবং এই ঘটনার জের ধরে হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুর হবে। এসবের জের ধরে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে একদল হানা দিয়ে পুরো কারাগারে পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে দিবে। একাত্তর টিভি, প্রথম আলো কার্যালয় সহ অন্যান্য ভবনে এদের একটা ইউনিট আক্রমন করার পরিকল্পনা ও করা হয়।

মূলত কি উদ্দেশ্যে এই লং মার্চ?

প্রাথমিক ভাবে নূরে আলম হামিদীর অনৈতিক কার্যকলাপের জের ধরে যদিও হেফাজতী ইসলাম এই ব্যাপারটিকে তাদের উপর আক্রমণ হিসেবে নিয়েছে মনে হচ্ছে, পরবর্তীতে এই তথাকথিত ইসলামী দলটি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করে।জামাত ও সাকার পরিবার পুরো ব্যাপারটিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার কৌশল হিসেবেই শুধুমাত্র বিপুল অংকের টাকার জোরে সব কিছু কিনে নেয়। অতি সংক্ষেপে এই আন্দোলনকে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার আন্দোলনই বলা যেতে পারে, অন্য কিছু নয়।

কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হলো সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দীকে



টানা তিন দিন অচেতন থাকার পর জ্ঞান ফিরলে বিবিসি বাংলার ষ্ট্রিংগার এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী তাকে হত্যা প্রচেষ্টার বর্ণনা দিলেন।

গত রোববার গভীর রাতে নগরীতে কালের কণ্ঠের ব্যুরো কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বিবিসি বাংলা সার্ভিসের এই স্ট্রিংগারকে।


তারপর থেকে নগরীর সোনাডাঙ্গার গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিবীড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন গৌরাঙ্গ নন্দী। কে বা কারা তার উপর হামলা চালালো, কীভাবে তিনি জ্ঞান হারালেন তা নিয়ে পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও পুলিশ ছিল অন্ধকারে। বুধবার রাতে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর হাসপাতালেই সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দেন গৌরাঙ্গ।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, কয়রা উপজেলার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সের দুই ব্যক্তি রোববার রাত ৯টার দিকে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে আসে। এ সময় কার্যালয়ে আর কেউ না থাকায় কক্ষের দরজা বন্ধ করে আলাপ শুরু হয়।
তারা কয়রার চিংড়ি ঘের, সম্প্রতি কয়রার আমাদিতে হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর হামলা-নির্যাতন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

হঠাৎ করেই ওই দুই ব্যক্তি গৌরাঙ্গকে জাপটে ধরেন। তিনি তা প্রতিহতের চেষ্টা চালান। কিন্তু তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি মেঝেতে পড়ে যান।

গৌরাঙ্গ আরো বলেন, “তখন ওই দুই ব্যক্তি আমার মুখে কয়েকটি সাদা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিয়ে পানি দিয়ে গিলতে বাধ্য করে। তারপর তোয়ালে দিয়ে মুখ বেধে দেয়, যাতে চিৎকার করতে না পারি। পরে তারা ব্লেড দিয়ে দুই হাতের কব্জিতে পোঁচ দিয়ে রগ কাটার চেষ্টা করে।”

এরপর আর কিছুই মনে নেই সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দীর। তিনি জানান, এটি ছিল একটি ‘পরিকল্পিত হত্যা প্রচেষ্টা’।
তবে কারা এর পেছনে রয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি।

গৌরাঙ্গ নন্দীর সহকর্মী কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিবেদক কৌশিক দে জানান, ওই রাতে পরিবারের সদস্যরা অনেকক্ষণ পর্যন্ত গৌরাঙ্গ নন্দীর মোবাইল ফোনে ও কার্যালয়ের টেলিফোনে কল করেও সাড়া পাননি। পরে তারা বিষয়টি তাকে জানান।তখন কয়েকজন সাংবাদিক ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যুরো কার্যালয়ে গিয়ে তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে গৌরাঙ্গকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানান কৌশিক।

গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বঙ্গকমল বসু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই টেবলেট এর প্রভাবে অজ্ঞান হয়ে যান গৌরাঙ্গ নন্দী। তিন দিন চিকিৎসার পর পুরোপুরি তার জ্ঞান ফিরেছে। তবে তাকে উদ্ধারে দেরি হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকম

একাত্তরে ‘আল্লামা শফী ছিলেন মুজাহিদ বাহিনীতে’ ,এখন পাকিস্তানের দোসরদের রক্ষার ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন :সম্মিলিত ইসলামী জোট



“হেফাজতের নেতা আহমদ শফী একাত্তরে পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি সেনা আর রাজাকারদের সব কাজে সহযোগিতা করেন।”
হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী প্রসঙ্গে এ দাবি করলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চবিরোধী হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীকে ‘রক্ষার’ অভিযোগ আসার পর একাত্তরে সংগঠনটির আমিরের ভূমিকা তুলে আনলেন সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “একাত্তরে যখন পাকিস্তানি সেনা আর তাদের দোসররা এ দেশে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালিয়েছিল, তখন হেফাজতের নেতারা কোথায় ছিলেন?

আহমদ শফী এখন পাকিস্তানের দোসরদের রক্ষার ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন বলেও দাবি করেন জিয়াউল। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের ‘নাস্তিক’ অাখ্যায়িত করে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে সম্প্রতি সোচ্চার হয় হেফাজতে ইসলাম। গণজাগরণ মঞ্চের চট্টগ্রামে সমাবেশেও বাধা দেয় তারা।

চট্টগ্রামে হেফাজতের সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেয়া হয়। সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি বলেন, “জামায়াত নেতা গোলাম আযম, নিজামী, সাঈদী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান এবং বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরী ও আব্দুল আলিম গংরা মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল।

“ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা যে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠরাই মুসলমান ছিল।”একাত্তরের ওই গণহত্যাকারীরা বাঙালি জাতির ও ইসলামের 'চিরদুশমন' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পবিত্র কুরআনে গণহত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের নামায-রোজা যেভাবে ফরজ করে দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই দলমত নির্বিশেষে সকল যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদের বিচার করাও পবিত্র কুরআনের বিধান অনুযায়ী আমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।”

‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করায় সরকারকে সাধুবাদ জানালেও যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিভিন্নভাবে ধর্মীয় উস্কানি ছড়াচ্ছে তাদের ‍বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সম্মিলিত ইসলামী জোটের নেতা।

তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবিরের ব্লগ ও ব্লগাররা এখনো বহাল তবিয়তে আছে, যদিও এরাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে অন্যের নামে ভুয়া একাউন্ট খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

“পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফের অপব্যবহার করে সাঈদীর মুক্তির ভুয়া মানববন্ধনের ছবি কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেও কাবা শরীফের অবমাননার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি।”

ধর্ম রক্ষার নামে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচি ইসলাম ও কোরআনের বিরোধী বলে মন্তব্য করেন এই মাওলানা।

তিনি বলেন, “তারা মাওসেতুংয়ের মতাদর্শের লংমার্চের ধারক ও বাহক। পবিত্র কোরআন ও ইসলামকে আল্লাহ নিজেই হেফাযত করার ঘোষণা দিয়ে ১৫ নং সূরা হিজরের ৯নং আয়াতে চিরস্থায়ীভাবে ‍বিধান দিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ইন্না নাহনু নাযযালনাজ যিকরা ওয়া ইন্না লাহু লা-হা-ফিজুন, অর্থাৎ ‘আমিই কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি এবং অবশ্য আমিই উহার সংরক্ষক’।”

সেখানে আল্লাহর দায়িত্ব পালনের কথা শয়তান ছাড়া কেউ বলতে পারে না, মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সহসভাপতি মুফতি জোবায়েদ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এ টি এম বাহাউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা হাফেজ মাওলানা নুরুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Wednesday, April 3, 2013

জামাত শিবির বনাম মুক্তচিন্তা একটি ক্ষুদ্র বিশ্লেষন: বনলতা সেন


প্রজন্ম ব্লগ, রাজনীতি, সাম্প্রতিক ;ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০১৩

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার অনিবার্য ফল হচ্ছে জামাতে শিবিরের উথ্থান। ১৯৭৬ সালে তাদের ধর্মভিত্তক রাজনীতি নিষিদ্ধের অধ্যাদেশ বাতিলে পর যে জামাত তাদের একাত্তর পুর্ববর্তী রাজনীতে ফিরে যায়(বিশেষ অধ্যাদেশ ০৪ মে ১৯৭৬ এবং বাংলাদেশ সংবিধান, ৫ম সংশোধনী, ২২ এপ্রিল ১৯৭৭)।
এ লক্ষ্যে জামাত এবং ইসলামী ছাত্র সংঘের কতিপয় নেতা ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে ঢাকায় সমবেত হয়ে পরিবর্তিত নাম ‘ইসলামী ছাত্র শিবির’ ধারণ করে নতুনভাবে কর্মকাণ্ড শুরু করে।
তাদের কর্মকান্ড হয়তো নতুন করে শুরু করেছিল কিন্তু কৌশল ছিল একই। একাত্তরে বুদ্ধিজীবি হত্যায় পাকিস্তানের জেনারেল রাও ফরমান আলী, হামিদ গুল(পরবর্তীতে আইএসআই প্রধান) জামাতের নিজামী, মুজাহিদ, পাক বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার কাশেম এবং ক্যাপ্টেন কাইয়ুম ছিল প্রধান। নভেম্বর মাসের কোন এক সময় তারা মওলানা আব্দুল মান্নানের বাসায় বৈঠক করে। এই আলোচনাতেই বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল নকশা প্রণয়ন করা হয় বলে ধারণা করা হয়। তারা ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবি হত্যার মিশন সম্পন্ন করে। কিন্তু পচাত্তর পরবর্তীতে রাজনীতিতে পুর্ণবাসিত হয়ে তারা যে আর কোন “হিট লিস্ট” করেনি সেটা কি ভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি?
জামাত বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি ছিল সবসময়েই এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভুমিকা নিয়েও নতুন করে বলার কিছু নেই। পচাত্তর পরবর্তীতে তারা সংগঠিত হতে বেশী সময় নেয় নি যেহেতু তাদের পিছনে ছিল তাদের একাত্তরের দেশী বিদেশী পালনকর্তারা।
সংগঠিত হওয়ার পরে জামাতে অনেক গভীর এবং সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা করে। শিবিরের মাধ্যমে তারা ছাত্র ও যুব সমাজে প্রবেশ করে। আশির দশকে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধে আফগানিস্তানের পক্ষে শিবিরের সদস্যসহ অনেক বাংলাদেশী অংশগ্রহণ করে। এরা কিন্তু আইএসআই এবং আফগান তালেবানদের অধীনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়। এরা প্রায় সবাই পরে বাংলাদেশে ফিরে আসে। এই যুদ্ধফেররা পরে বাংলাদেশে আইএসআই এর এজেন্টহিসেবে যে কাজ করেনি সেটা কিভাবে নিশ্চিত হবো? শুধু আইএসআই? লস্কর-ই-তৈয়বার এজেন্ট হিসেবেও কাজ শুরু করে। আর এভাবেই আশির দশকের পর জামাত সহ মৌলবাদী সংগঠন এবং তালেবানপন্থীরা সংগঠিত হয়ে এদেশে ধর্মীয় রাজনীতির আড়ালে জঙ্গি সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে। এদের টার্গেট ছিল বাংলাদেশকে মৌলবাদী এবং তালেবান রাস্ট্রে পরিনত করা। সব রসুনের গোড়া এক আর সব মৌলবাদী আর তালবান পন্থী সংগঠনের গোড়াও জামায়াত এটাতে কোন ভুল নেই।
তাদের বিপক্ষে যারাই কথা বলতে গিয়েছে তাদেরই তারা লক্ষ্য বানিয়েছে। হয়তো আগের বৈরী সরকার এবং মিডিয়ার কারণে তা আমাদের সম্মুখে আসে নাই। কিন্তু মিডিয়া অবাধ হবার পরে আমরা দেখেছি কিভাবে তাদের বিপক্ষে যারাই আওয়াজ তুলেছে তাদের কিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, সাংবাদিক মানিক সাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা জিহাদ সহ আরো অনেক সাংবাদিক, ছাত্রসেতা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি হত্যা করা হয়েছে। তাদেরকে মুরতাদ ঘোষনা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগষ্ট ছিল তাদের মরণ কামড়। সর্বশেষ ব্লগার রাজীব হত্যার সকল সন্দেহের তীর জামাতের দিকেই। এবং ১৭ জন ব্লগারের হিট লিস্ট সেই আলামতই বহন করে। তাদের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদী কণ্ঠ তুলেছে তাদের হিট লিস্ট করে হত্যা সেই একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরের অসমাপ্ত কাজেরই ধারাবাহিক বর্হিপ্রকাশ।
আর বিভিন্ন সময় মুক্তমনা বুদ্ধিজীবিদের উপর তো হামলা হয়েছেই সাথে করা হয়েছে বিভিন্ন অপপ্রচার। অধ্যাপক জাফর ইকবাল, আহমেদ শরীফ সহ অনেক প্রাজ্ঞজনকে মুরতাদ ঘোষনা করা হয়েছে।
হুমায়ুন আজাদের “নারী” বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। “পাকসার জমিন সাদ বাদ” লিখার পরেই একুশের মাসে তার উপর হামলা করা হয়েছিল।
এছাড়া ২০০০ সালে চট্টগ্রামের এইট মার্ডার, অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী সহ আরো অনেকেই তাদের হামলার শিকার হয়েছেন। একাত্তরে তাদের টার্গেট যেমন ছিল মুক্তমনা এবং বুদ্ধিজীবিরা তেমন আজকেও সেটা অপরিবর্তনীয় রয়েছে। একাত্তরে তাদের কাছে সকল দেশবাসী ছিল হিন্দু। এই মুহুর্তে তাদের সকল ক্ষোভ ব্লগারদের উপর। ব্লগারদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তারা তাদের পুরোনো মিশন শুরু করেছে।
এই নাস্তিক আর মুরতাদ আখ্যা দিয়ে হত্যাকান্ড ধারাবাহিকতা হয়তো বাংলাদেশে থাকতে না কিন্তু এটা থেকেছে বিভিন্ন কারণে। এবং জামাত তাদের অপরাজনীতি চালিযে গেছে।
বাংলাদেশে একসময় এমন অবস্থাও ছিল যখন তাদের নাম পর্যন্ত কেউ উচ্চারন করতে ভয় পেত। কিন্তু সময় সবসময় এক রকম থাকে না। এই মুহুর্তে জামাত নিষিদ্ধের জোরালো দাবীতে ফুসে উঠেছে পুরো দেশ। আর জামাত আবির্ভূত হয়েছে তাদর আসল রুপে। পতাকা পুড়ানো থেকে শুরু করে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ। তারে পেছনে এই মুহুর্তে তাদের পরীক্ষিত বন্ধুরা রয়েছে। যারা তাদর সকল কর্মকান্ডে নৈতিক সমর্থন দেয়া থেকে শুরু করে সকল প্রকার সহায়তা জারি রেখেছে। বহুদিন পর দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই রকম পরীক্ষা এর আগে শুধু একাত্তরেই দিয়েছে।
তাই এই মুহুর্তে জামাত শিবিরের রাজনীতি এবং সকল প্রকার কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করতেই হবে।

Saturday, March 30, 2013

জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি


জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।



শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তিন সংগঠনের নেতারা বলেন, জামায়াত-শিবিরকে আইন করে নিষিদ্ধ করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

নিষিদ্ধ করার আগে জামায়াতের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র কার্যকর হবে বলেও অভিমত তাদের।

বিকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনগুলোর নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য আমরা সব সময়ই মাঠে ছিলাম, থাকবো। কিন্তু আইন করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো সশস্ত্র প্রতিরোধে গেলে তা গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করতে পারে, যার ঘোষণা আগেই জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে।”

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামী নামের সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামীরই আরেকটি সংগঠন। তারা আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে তার জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে।

“সরকার যদি এ ধরনের কর্মসূচিতে অনুমতি দেয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য এর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছু হতে পারে না।”
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তরুণ প্রজন্মের সব কর্মসূচি অহিংস ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব অহিংস কর্মসূচির বিরুদ্ধে তারা ইতোমধ্যেই সহিংস প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি একে খন্দকার বলেন, জামায়াত আজকে যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা তাদের এ ধরনের প্রথম কাজ নয়।

“মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এ দলটির রাজনীতি করার অধিকার শুধু নয়, এ দেশে তাদের থাকারও অধিকার নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ছয়টি দাবি জানানো হয়।

তাদের প্রধান দাবি হলো- জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জঙ্গি ও সহিংস আগ্রাসন চালানোর অপরাধে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা।

এই গোষ্ঠীর আর্থিক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে সেজন্য এদের ব্যাপারে পরিপূর্ণ সতকর্তা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ অবলম্বন করা ।

এছাড়া সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূক শাস্তির দাবি জানানো হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষী ও তাদের পরিবারের পূর্ণ নিরাপত্তার দেয়াসহ অন্যান্য কাজে ট্রাইব্যুনালের জনবল ও রসদের ঘাটতি পূরণের দাবি তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আগ্রাসন ও নির্বিচার সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা এবং গণজাগরণ মঞ্চসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক সব সংগঠনকে দেশের সর্বত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালনের অনুমতি এবং সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার দাবি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গণআদালতের বিচারক আবু ওসমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

Monday, March 25, 2013

বাংলাদেশ শুধুই আমার বাবার কবরস্থান: প্রবীর সিকদার

http://uttaradhikar71news.com » খবর

আজ ২৬ মার্চ- হাজার বছরের ইতিহাসের রক্ত আখরে লেখা অনন্য এক গৌরবোজ্জ্বল দিন


আজ ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের রক্ত আখরে লেখা অনন্য এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনার দিন। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক দুঃশাসন আর শোষণ-বঞ্চনার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার দিন। আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার ডাক এসেছিল। শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। রুশ-ভারত মিত্রশক্তির কাছে নয় মাসের মধ্যে পরাজিত হয় পাকিস্তান -মার্কিন শক্তি। এই দিনে কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধী, কমরেড জ্যোতি বসু, প্রণব মুখার্জী , পন্ডিত রবিশংকর , তার বন্ধু জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতকে- ভারতের প্রতিটি বন্ধুকে।

পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে সেদিন থেকেই রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার দামাল ছেলেরা। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ মাস বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশজুড়ে উদ্্যাপিত হবে মহান স্বাধীনতা দিবস।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পরই মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়।

বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপস নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।'

পরদিন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান (পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পাঠ করেন।

পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল আগেই। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশনামূলক উদাত্ত আহ্বানে বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও শুরু করে। আর ২৬ মার্চ থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, সেনা ছাউনিগুলোতেও। ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মুজিবনগরে আম্রকাননে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ। জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির প্রতি। শ্রদ্ধা জানাবে শহীদ জাতীয় নেতাদের, আত্মত্যাগকারী বাংলার অকুতোভয় বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের। আর বিশ্বজুড়ে যে বন্ধুরা অকৃত্রিম সহযোগিতা করেছে প্রাণের ভয়-ঝুঁকি তুচ্ছ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ সরকার সম্মাননা জানাচ্ছে মিত্র বন্ধুদের। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।


ইবনে সিনার পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা:২৫% কমিশন দিয়ে চিকিৎসাসেবার নামে বেশি অর্থ আদায়



ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে নালিশি মামলা করা হয়েছে।
রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা আকিল উজ্জামান খান বাদী হয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এ আবেদন করেন।
আরজিতে বলা হয়, বিবাদী প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সব ডাক্তারি পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে তা থেকে ২৫% কমিশন দিয়ে থাকেন। আরও বলা হয়, জেলা সরকারি হাসপাতালে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা খরচ ৩০ টাকা। বিভাগীয় শহরে তা ৫০ টাকা। ফার্মগেটের গ্রিনল্যান্ড অ্যান্ড প্যাথলজিতে একই পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা। তাই ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে ২৫% কমিশন দিয়ে চিকিৎসাসেবার নামে বেশি অর্থ আদায় করা প্রতারণাযোগ্য অপরাধ। এ কারণে ন্যায়বিচার চেয়ে এ মামলা করা হয়েছে।
আজ সোমবার মহানগর হাকিম তানভীর আহমেদ ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।
মামলায় ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক (প্রশাসন), ইবনে সিনা ট্রাস্টের সচিব, প্রধান হিসাবরক্ষক এবং বিজ্ঞাপন ও বিপণন বিভাগের প্রধানকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ১৬ মার্চ বাদী টেলিভিশনসহ অন্যান্য প্রচারমাধ্যমে দেখেন যে, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে ২৫% কম খরচে চিকিৎসা করা হয়। পরদিন বাদী ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করতে যান। এ জন্য তাঁকে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ফির ২৫% কমিশন দিয়ে ১৪০ টাকা জমা দিতে বলা হয়। ওই পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ফি ১৮৬ টাকা। এ সময় বাদী জানতে চান, সরকার নির্ধারিত ফির সঙ্গে পরীক্ষার মূল্যমান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গড় মানদণ্ড বজায় রেখে এ কমিশন রাখা হয়েছে কি না। বিবাদী প্রতিষ্ঠান তা জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।

Sunday, March 24, 2013

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ১১ পাকিস্তানি মৈত্রী সম্মাননা পেলেন



ঢাকা: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যখন এ দেশে গণহত্যাসহ মানবতার বিরুদ্ধে যতো অপরাধ করেছে, সেই সময়ে পাকিস্তানেও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ সরকার এবার সেই সব বন্ধুদের সম্মাননা জানিয়েছে।
মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত সেইসব বন্ধুরা হলেন-পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ নাসিম আখতার, অ্যাডভোকেট জাফর মালিক, দার্শনিক প্রয়াত একবাল আহমেদ (মরণোত্তর), মানবাধিকার কর্মী বেগম তাহিরা মাজহার আলী(মরণোত্তর), রাজনীতিবিদ মীর গাউস বকশ, কবি ও সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, কবি হাবিব জালিব, রাজনীতিবিদ মালিক গোলাম জিলানি, রাজনীতিবিদ ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আশরাফ মালিক, অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীর, রাজনীতিবিদ কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ, কবি ও সাংবাদিক আনোয়ার পীরজাদো এবং কবি ও মানবাধিকার কর্মী আহাম্মদ সালিম।
যে অবদানের এ সম্মাননা:

• পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ বেগম নাসিম আখতার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির(ন্যাপ)কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্তৃক অপারেশন সার্চ লাইট’র একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তার কাছে গণহত্যার বিবরণ শুনে কবি আহমদ সালিম কবিতা রচনা করে কারাবরণ করেন। তিনি গণহত্যার প্রতিবাদ করেন, বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর লাহোর কারাগারে বন্দি ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে গিযে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিষ্টি বিতরণও করেন এ নেত্রী।
• অ্যাডভোকেট জাফর মালিক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধর মুক্তির জন্য সোচ্চার ছিলেন।
• প্রয়াত ইকবাল আহমেদ ছিলেন একজন দার্শনিক।তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে নানামুখী প্রয়াস গ্রহণ করেন।
• বেগম তাহিরা মজুমদার আলী একজন মানবাধিকার কমী। ১৯৭১ সালে তার নেতৃত্বে লাহোরের মল রোডে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি গ্রেফতার হন।
• প্রয়াত মীর গাউস বকশ বিজেঞ্জো বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ট সুহ্রদ ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার পার্টি বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তানের জনগণকে অবহিত করেন।
• প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার প্রতিবাদ করে কবিতা নিবন্ধ প্রকাশসহ বিবৃতি প্রদান করেন।
• প্রয়াত হাবিব জালিব ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আওয়ামী পার্টির নেতা হিসাবে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং কবিতা প্রকাশ করেন।
• প্রয়াত মালিক গোলাম জিলানি পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে তিনি একটি খোলা চিঠি লিখে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি করেন। এ জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়।
• প্রয়াত শামীম আশরাফ মালিক ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ গ্রেফতার হওয়া বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দেন।
• প্রয়াত ওয়ারিস মীর একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক হিসাবে দৈনিক জং পত্রিকায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
• প্রয়াত কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন নির্ভরযোগ্য সহযোগী। তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সিনিযর সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি আত্মগোপনে থেকে গণহত্যার প্রতিবাদ ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রচেষ্টা চালান।
• প্রয়াত আনোয়ার পীরজাদা ছিলেন একজন পাইলট। তিনি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের খাটি নেতা হিসাবে বর্ণনা করেন। সামরিক সরকার তাকে চাকরিচ্যুত সাতবছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলার জন্য।
• আহমদ সালিম তার কবিতার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে বহু কবিতা রচনা করে প্রতিবাদ জানান। এজন্য তাকে জরিমানা ও কারাবরণ করতে হয়।



একাত্তরে বাঙালির পাশে দাঁড়ানো ৬৯ বিদেশি বন্ধুকে রোববার সম্মাননা জানায় বাংলাদেশ। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই ষষ্ঠ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রথমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বিদেশি বন্ধুদের পরিচিতি ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
রীতি অনুযায়ী বিদেশি বন্ধুদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তার মৃত্যুতে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মাননা তুলে দেন।
এ পর্বের সম্মাননার ২০৩ জন বিদেশি বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ৬৯ জন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা তাদের প্রতিনিধি এবার সম্মাননা নিতে ঢাকায় এসেছেন।
এবার ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ পেয়েছেন কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো ও যুক্তরজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যারল্ড উইলসন (মরণোত্তর)।
তাদের পক্ষে কিউবার রাষ্ট্রদূত ও হ্যারল্ড উইলসনের ছেলে অধ্যাপক রবিন উইলসন সম্মাননা গ্রহণ করেন।
আর ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়া হয় ৬৭ বিদেশি বন্ধুকে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটির পশ্চিমবঙ্গ শাখাকেও মৈত্রী সম্মাননা দেওয়া হয় ।

Saturday, March 23, 2013

জামায়াতের ওয়েবসাইটে মিথ্যা প্রচারণা। আসুন দেবব্রত রায় নামের শিক্ষক আছেন কিনা তার খোঁজ নিই এবং তাকে রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করি।

দেবব্রত রায় নামক জনৈক হিন্দু শিক্ষক "আল্লাহ ও নামাজ" সম্পর্কে যে অশ্লীল ও কটুক্তিপূর্ণ মন্ত্মব্য করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ


জামায়াতের ওয়েবসাইটে  ২২ মার্চ এর মিথ্যা প্রচারণা। আসুন দেবব্রত রায় নামের শিক্ষক আছেন কিনা তার খোঁজ নিই এবং তাকে রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করি।  আশা করি আমাকে সহায়তা করবেন গোপালগঞ্জের বন্ধুরা এবং সারা দেশের শুভ শক্তি।