Saturday, March 23, 2013

এক নজরে জামায়াতের ঘৃণ্য ইতিহাস (১৯৪১-২০১৬)

এক নজরে জামায়াতের ঘৃণ্য ইতিহাস (১৯৪১-২০১৩)

"ইসলাম" শব্দের প্রতি বাঙ্গালী মুসলমানদের অন্যরকম আবেগ জড়িত। আর সেই আবেগের ঘৃণ্য ব্যবহার শুরু হয় ১৯৪১ সাল থেকে। এ বছর 'জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ' নামক একটি ইসলাম বিদ্বেষী দলের জন্ম হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর (জন্ম ভারতের আওরঙ্গবাদে, বর্তমান হায়দারাবাদ, মহারাষ্ট্র) ব্যাক্তিগত দর্শনই এই দলটার রাজনৈতিক দর্শন। শুধু তাই নয়; জামাতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবু আলা মওদুদীর পুত্র সৈয়দ হায়দার ফারুক মওদুদী পাকিস্তানের রয়েল টেলিভিশনে গত ২৮ মে ২০১১ ইং এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জামায়াত ধর্মব্যবসায়ী এবং অত্যাচারী। (তার বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দেখুন ৪ পর্বে Click This Link https://www.youtube.com/watch?v=u3arxZObKDY  এখানে)।

সৈয়দ হায়দার ফারুক মওদুদী বলেছেন, আমার বাবা কখনও আমাদেরকে রাজনীতির সাথে জড়াতে দেননি। এছাড়া তিনি জামায়াত সম্পর্কে অনেক সত্য উন্মোচন করেছেন এখানে।


জামায়াতের এই প্রতিষ্ঠাতা ইসলাম সম্পর্কেও অনেক নেক্কার জনক কথা বলেছেন। কোরআনের অনেক অপব্যাখ্যা করেছেন যা সর্বজন স্বীকৃত। তার তিনটি নমুনা এখানে তুলে ধরেই আসল কথায় যাবো। তার এসব ধর্মবিকৃতি চেতনা দেখলেই বুঝতে পারবেন তারা আসলে ইসলামের নামে কি করছে।


০১. “গণতন্ত্র বিষাক্ত দুধের মাখনের মত” – মওদূদী, সিয়াসি কসমকস, তৃতীয় খন্ড, পৃঃ ১৭৭


০২. “গণতন্ত্রএর মাধ্যমে কোনো সংসদ নির্বাচনে পার্থী হওয়া ইসলাম অনুযায়ী হারাম” - রাসায়েল ও মাসায়েল । লেখক মওদূদী । প্রথম সংঙ্করণ, পৃষ্ঠা ৪৫০


০৩. “সময়ে সময়ে মিথ্যা বলা শুধু জায়েজই নয় বরং অবশ্য কর্তব্য” – আবুল আলা মওদূদী, তরজমানুল কোরআন, মে ১৯৫৮!


এক নজরে জামায়াতের ঘৃণ্য ইতিহাস (১৯৪১-২০১৩)

জামায়াতের জন্ম দেয়  আমেরিকা। মওলানা ফরিদউি্দিন মাসউদ বলেন , পাকিস্তান আমেরকিান দূতাবাসে তিনি অনেক গুলো ব ইদেখতে পান , যার সবই আবু লআ’লা মওদুদীর লেখা। তিনি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান মওদুদীর এতো বই কেন মার্কন দূতাবাস সংরক্ষণ করছে ? তারা জবাবে জানান, তাদের অর্থায়নেই মওদুদীর বই প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনা প্রমাণ করে জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠার নেপথে্য  সি আইয়ে র গভীর ষড়যন্ত্র ছিল ।

১৯৪১- এ বছরের ২৬ আগস্ট লাহোরে “জামায়াতে ইসলামী হিন্দ” নামে দলটা গঠিত হয় । ভারতবর্ষের কম্যুনিস্ট বিরোধী শক্তি হিসেবে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদীদের আশ্রয়ে এই দলটির জন্ম । এখনো ব্রিটিশদের সাথে দলটির সম্পর্ক গভীর । জন্মের সাথে সাথে এরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধীতা করতে থাকে । মওদূদী ফতোয়া দেন পাকিস্তান রাষ্ট প্রতিষ্ঠার দাবী করা সবাই, মুসলীম লীগ, জিন্নাহ এরা কেউই “খাটি মুসলিম” না । মাথায় রাখেন ৭১ সালেও গণ হত্যার সময় “খাটি মুসলিম” তত্ব ব্যাবহার করা হয়েছে ।


১৯৪২- লাহোর থেকে হেডকোয়ার্টার ভারতের পাঠানকোটে স্থানান্তর ।


১৯৪৩- মাসিক “তরজমানুল কোরআন” ম্যাগাজিনের মাধ্যমে নিজেদের মতবাদ প্রচার করতে থাকে। এই ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় মওদূদী পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে লিখেন, পাকিস্তান নামক কোনো রাষ্ট্রের জন্ম হলে সেটা “আহাম্মকের বেহেশত” এবং “মুসলমানদের কাফেরানা রাষ্ট্র” হবে। *পাকিস্তানের স্বাধীনতার সরাসরি বিরোধীতা করে  মওদুদী এবং তার দলটি।


১৯৪৪- দল দ্রুত সংঘঠিত হতে থাকে । দ্রুত বাড়তে থাকে সদস্য সংখ্যা ।


১৯৪৫- অবিভক্ত ভারতে সর্বপ্রথম কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় ।


১৯৪৬-  জামায়াতে ইসলামী কয়েকজন সদস্য সংগ্রহ করে।


১৯৪৭- দেশভাগের সাথে সাথে লাহোরে প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর । অথচ এর আগে পর্যন্ত পাকিস্তান রাষ্ট গঠনের চরম বিরোধীতা করে। পাকিস্তানে যাওয়ার পর পাকিস্তানের কাশ্মীরের জন্য আন্দোলন করাকে ‘হারাম’  ঘোষণা দেয়।



১৯৪৮- ইসলামী সংবিধান ও ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা শুরু করে। এর পর পাকিস্তান সরকার জননিরাপত্তা আইনে মওদূদীকে কারাবন্দী করে । *এ বছর পূর্বপাকিস্তানে জামাতের কার্যক্রম শুরু হয়।
জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবু আলা মওদুদী পাকিস্তান জন্মের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছিলেন। এই দন্ড মওকুফ হয়েছিলো মুলত যুক্তরাষ্ট্রের চাপে – তখনকার পাকিস্তানে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের ডি-ক্লাসিফাইড যোগাযোগ থেকে বিষয়টা সবাই জানেন। কারন তখন পাকিস্তানকে যুক্তিরাষ্ট্রের খুবই প্রয়োজন ছিলো কমিউনিজমের প্রসার বন্ধ করার জন্যে ধর্ম বিশেষ করে ইসলামকে ব্যবহার করার জন্যে সংগঠিত শক্তি দরকার ছিলো। কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং সরকারকে কিছু দাবী মানানোর জন্যে মুল আন্দোলন শুরু করেছিলো সদ্য গজিয়ে উঠা একটা অরাজনৈতিক সংগঠন (তাহরিক ই খতমে নবুয়ত) – যারা প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের একটা পরিকল্পনার অংশই ছিলো – সাথে ছিলো মুসলিমলিগের উগ্রপন্থীরা। (অনেকটা আজকের হেফাযতে ইসলামের মতোই যার পিছনে জামায়াতের পরিকল্পনা আর বিএনপির একটা অংশে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদ রয়েছে)।
তাদের দাবী ছিলো – তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ জাফরউল্লহ খান – যিনি কাদিয়ানী ছিলেন – তাকে অপসারন করা । তাদের দাবি ছিল সরকারী উচ্চপদ থেকে কাদিয়ানীদের অপসারন করা এবং কাদিয়ানীদের  ‘ অমুসলিম ’ ঘোষনা করা। এমন চরম অন্যায়  দাবী আদায়ের আন্দোলন শুরু হলে কাদিয়ানীদের উপর নেমে আসে নির্যাতন এবং ১৯৫৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারী একজন কাদিয়ানীর কবর দেওয়াকে কেন্দ্র করে দাংগা সূত্রপাত হয় এবং কাদিয়ানীদের হত্যা, তাদের বাড়ীঘরে আগুন জ্বালানো থেকে শুরু করে লুটপাটের মতো ভয়াবহ হামলা দাঙ্গার  রূপ নিলে ৪ মার্চ পাকিস্তানে প্রথম আঞ্চলিক মার্শাল  ‘ জারি হয়। মুলত এই দাঙ্গার কারনেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রথম পাকিস্তান শাসন করে। জেনারেল আযম খানের নেতৃত্বে সেই সামরিক শাসনের মেয়াদ ছিলো সেই বছরের ১৪ই মে পর্যন্ত এবং সেই সময় একটা সামরিক আদালত মওদুদী এবং আবুস সাত্তার নিয়াজীকে দাঙ্গা লাগানোর অভিযোগে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে।

 দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিক এবং সিভিল প্রশাসনের উপর সামরিক বাহিনীর  ভয়াবহ প্রাধান্য বিস্তার শুরু হয়  – তাদের মতে দূর্বল প্রশাসনিক পদক্ষেপই দাঙ্গার কারন। যার ফলে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় ব্যপক পরিবর্তন হয় – নুরুল আমিনকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হয় এবং সামরিক বাহিনীর পছন্দের লোক মোহাম্মদ আলিকে প্রেসিডেন্ট করে শুরু হয় রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ ।

 জন্মলগ্ন থেকেই দাঙ্গা ফ্যাসাদ আর বিপর্যয় তৈরী করে স দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ইতিহাস আছে- যারই ধারাবাহিতায় ১৯৭১ সালে এরা আলবদর রাজাকার গঠন করে গনহত্যায় যোগ দিয়েছে – এমনকি এখনও শিবির নামক একটা সন্ত্রাসী দল তৈরী করে এরা আজও মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরে ত্রাস সৃষ্টি মতো ঘৃন্য কাজ করছে – পুলিশের মাথা থেতলে দিয়ে রাষ্ট্রের আইনশৃংখলা রক্ষা ব্যবস্থাকে পংগু করে দিতে চাইছে – সম্পদ ধংস করার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে একটা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করছে – কারন তাদের একদল নেতা যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারাধীন তাদের রক্ষা করতে হবে।

সেই মানবতাবিরোধী সংগঠনকে যেমন আইনী পদ্ধতিতে নিষিদ্ধ করা জরুরী – তেমনি জরুরী সামাজিক ভাবে বর্জন করা। সেই বিবেচনায় আমার বিশ্বাস সদালাপের মতো একটা সুস্থ ওয়েবপোর্টালে জামাতের বা জামাতের প্রতিষ্ঠাতার প্রচারনা না করতে দেওয়াই উচিত।প্রকাশ্যে নড়চড়


১৯৪৯- পাকিস্তান সরকার আগে বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত জামাতের “ইসলামী সংবিধানের রূপরেখা” গ্রহণ করে । পরে পাকিস্তান জামাত প্রভাবিত সংবিধান প্রণয়ন করে ।


১৯৫০- পরের বছর পাঞ্জাবের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য ব্যাপক প্রচারণা । মওদূদী জেল থেকে মুক্তি পান ।


১৯৫১- পাঞ্জাবের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ভরাডুবি ।


১৯৫২- গোলাম আজম ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন । পরে ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের শুক্কুর শহরে এক সংবর্ধণা সভায় তিনি বলেন “উর্দূ পাক-ভারত উপমহাদেশের মানুষের সাধারণ ভাষা।১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়া তার মারাত্নক ভুল ছিলো। বাংলা ভাষা আন্দোলন মোটেও সঠিক কাজ হয়নি। তিনি এজন্য দুঃখিত” সূত্র : দৈনিক আজাদ ২০ জুন ১৯৭০/ সাপ্তাহিক গণশক্তি ২১ জুন ১৯৭০/ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস- ডঃ মোহাম্মদ হান্নান, পৃঃ ৩৯৯


১৯৫৪- গোলাম আজম জামাতে ইসলামীতে যোগ দেন । প্রথম দিকে পূর্বপাকিস্তানে জামতের অবস্থান মজবুত না থাকলেও, গোলাম আজম যোগ দেওয়ার সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানে দল চাঙ্গা হয়ে উঠে ।


১৯৫৫- ১৯৪৭ সালে গঠিত “জামায়াত ই তালেবর” নাম পরিবর্তন করে “ইসলামী ছাত্রসংঘ” নামে আত্নপ্রকাশ করে। মাওলানা আবদুর রহীম পূর্ব পাকিস্তানের আমির নির্বাচিত হন (পরে তিনি জামাতের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন)


১৯৫৬- পূর্ব পাকিস্তানে কার্যক্রম শুরু করে ইসলামী ছাত্রসংঘ।


১৯৫৭- সালে গোলাম আজমকে পূর্ব পাকিস্তান জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত করা হয় । আমির ছিলেন মাওলানা আবদুর রহিম ।


১৯৫৮- আইয়ুব খান জামায়াতে ইসলামী সহ সকল দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষনা করে । ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই ফরমান বলবৎ ছিল।


১৯৬২- মুসলিম পারিবার আইন বিরোধীতা কারেন। শিক্ষা আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।


১৯৬৩- মুসলিম পারিবারিক আইন নিয়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ।


১৯৬৪- ৪ জানুয়ারী জামাতের সকল কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় । *নিষিদ্ধ হয় জামায়াত । মওদুদী সহ ৬০ জন জামাত নেতাকে গ্রেফতার করা হয় । যার ভিতর গোলাম আজম একজন । অক্টোবরেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় ।


১৯৬৫- নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহর পরাজয় ঘটলে দল কোনঠাসা হয়ে পড়ে।


১৯৬৬- শেখ মুজিবের ৬ দফার বিরোধীতা করে জামাতে ইসলাম। এই দফাগুলোকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে অখ্যায়িত করে ।


১৯৬৭- শেখ মুজিবের ৬ দফার ভিত্তিতে যখন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবল গণআন্দোলন শুরু হয়, তখন জামাত ৫ দফা নামে আরেকটা আন্দোলন শুরু করে গণ আন্দোলন ব্যাহত করার চেষ্টা করে ।


১৯৬৮- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে উঠে । সারা পাকিস্তানে চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে। এর ভিররই জামাত আইয়ুব খানের আস্থা অর্জন করে নেয় ।


১৯৬৯- গণ অভ্যুথানের সময় রহস্যজনক রাজনৈতিক অবস্থান । গোলাম আজম পূর্ব পাকিস্তানের আমির হন ।


১৯৭০- পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫১ আসনে পার্থী দিয়ে ৪ টি আসন জিতে নেয় । সবচেয়ে বেশি আসনে পার্থী দেয় আওয়ামীলীগ এবং তারা সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভও করে । তৃতীয় সর্বোচ্চ আসনে (১২০) পার্থী দেয় ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি।


১৯৭১- একাত্তরের জামাত নিয়ে কয়েক লাইনে শেষ করা অসম্ভব । তারপও দুই এক লাইন লিখলাম । ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয় । কয়েকদিন আগে উদ্ধার হওয়া একটা নথিতে দেখা যায় এই কমিটির ১ নম্বর সদস্য হচ্ছেন গোলাম আজম । নথিটা দীর্ঘদিন যাবত পুরান ঢাকার এক ভদ্রলোক সংরক্ষন করেছিলেন । কিছুদিন আগে নথিটা তিনি আন্তর্জাতিক যুদ্ধপরাধ ট্রাইবুনালে জমা দেন । ৩০ জুন লাহোরে গোলাম আজম বলেন তার দল মুক্তিযোদ্ধাদের (দুস্কৃতকারীদের) দমন করার জন্য সর্বাত্নক চেষ্টা চালাচ্ছে । দলের নেতৃত্বে গঠন করা হয় আলবদর রাজাকার । সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আবদুল মালেকের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয় । জামাতের সাবেক আমীর আব্বাস আলী খান এই সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন । ১৯৭১ সালে সংঘঠিত ইতিহাসের বৃহত্তম গণহত্যার জন্য দলটা কোনো ক্ষমা চায়নি । বরং গোলাম আজম দম্ভের সাথে জানিয়ে দেন একাত্তরের জন্য তারা অনুতপ্ত নয় । বরং তারা যা করেছে ঠিক করেছে ।


১৯৭২- গোলাম আজমের উদ্যোগে পাকিস্তানে পালিত হয় “পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার সপ্তাহ” এরপর লন্ডন গিয়ে সেখানে “পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধার কমিটি ” নামে একটা কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি বাংলাদেশকে উদ্ধার করে আবার পূর্ব পাকিস্তান করার সর্বাত্নক চেষ্টা চালায়। ডিসেম্বরে সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে অংশ নিয়ে সকল মুসলিম রাষ্ট্রকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে, এবং যুদ্ধ বিদ্ধস্ত মানুষের সহায়তায় কোনো প্রকার আর্থিক সাহায্য না দিতে আহবান জানান।


১৯৭৩- সরকারী এক আদেশে ৩৮ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় । এর একজন গোলাম আজম । গোলাম আজম মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো সফর শুরু করেন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে এবং পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধারে সহায়তা চান। ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস ইসলামিক সোসাইটির সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধারের বিষয়ে বক্তৃতা দেন।


১৯৭৪- মাহমুদ আলী সহ কয়েকজন পাকিস্তানিকে নিয়ে লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধার কমিটির বৈঠক হয় । মক্কায় অনুষ্ঠিত রাবেতায়ে ইসলামীর সম্মেলনে বাংলাদেশ উদ্ধার নিয়ে বক্তৃতা দেন।


১৯৭৫- একাত্তর সালের পর আত্নগোপনে চলে যাওয়া জামাত নেতারা আস্তে আস্তে দেশে ফিরতে শুরু করে । কুখ্যাত যুদ্ধপরাধী শাহ আজিজুর রহমান দেশে ফিরেন । পরে তিনি বিএনপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।


১৯৭৬- সরকার এক প্রেসনোটে নাগরিক্ত্ব ফেরত পাওয়ার জন্য ইচ্ছুক ব্যাক্তিদের আবেদন জানাতে বলেন। গোলাম আজম সাথে সাথে আবেদন করেন এবং প্রত্যাখাত হয়।


১৯৭৭- গোলাম আজম নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং প্রত্যাখ্যাত হয় ।


১৯৭৮- গোলাম আজম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে কোনো ভিসা ছাড়াই ১১ জুলাই ঢাকা আসেন। মায়ের অসুস্থতার অজুহাতে তাকে  প্রথমে ৩ মাসের অনুমতি দেওয়া হয় । এরপর ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করেন ।


১৯৭৯- ঢাকায় একটা কনভেনশনের মাধ্যমে “জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ” গঠিত হয়। গোপনে গোলাম আজমকে আমীর করে যুদ্ধাপরাধী ঘাতক আব্বাস আলী খানকে ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।


১৯৮০- প্রথমবারের মত বায়তুল মোকারমের সামনে জামাতের সভা হয়। প্রকাশ্যে এটাই তাদের প্রথম সম্মেলন।


১৯৮১- জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমীর একাত্তরের ঘাতক  আব্বাস আলী খান এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন “একাত্তরে আমরা যা করেছি ঠিকই করেছি। একাত্তরে বাংলাদেশ কনসেপ্ট ঠিক ছিলোনা”


১৯৮২- রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশে  জামাত দ্রুত প্রবেশ করতে থাকে। কাদের মোল্লা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।


১৯৮৩- দলের রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে থাকে।সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় শিবিরের ক্যাডারেরা ।


১৯৮৪- জামাতের সাবেক আমির মাওলানা আবদুর রহিম জামাত ছেড়ে ইসলামী ঐক্য (জোট) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।


১৯৮৫- স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের সাথে জামাতের সখ্যতা গড়ে উঠে। কাদের মোল্লা ঢাকা মহানগর আমির নির্বাচিত হয়।


১৯৮৬- এরশাদ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহন করে  জাতীয় সংসদের ১০ টি  আসন পায় জামাত ।


১৯৮৭- সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়াতে বাড়তে থাকে নিরীহ ছাত্রদের হত্যা ।


১৯৮৮- অনেকদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর জামাতের ছাত্র সংগঠন শিবির নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে মরিয়া হয়ে উঠে। চট্টগ্রাম রাজশাহী সহ বিভিন্ন জেলায় রগ কাটার রাজনীতি শুরু করে।


১৯৮৯- হত্যাযজ্ঞ বাড়তে থাকে, উন্মত্ত  হয়ে উঠে জামাত।


১৯৯০- এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। টিভিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃরা বক্তৃতা বিবৃতি দেন । জামাতের নেতারাও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হিসেবে টিভিতে আসেন! সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।


১৯৯১- নির্বাচনে রেকর্ড ১৮ টি আসন পায়  কলুষিত হয় মহান জাতীয় সংসদ । বিএনপি সরকারের সাথে আপোষে এসব আসন পায়। নাগরিকত্বহীন গোলাম আজমকে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের আমির ঘোষনা করে।


১৯৯২- বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে ইস্যু করে মন্দির এবং সংখ্যালঘু এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলা করে আধিপত্য বিস্তার করে জামাত। বিজেপি বিরোধী আন্দোলন করে রাস্তায় নেমে আসে। সাধারণ মানুষের কাছে পৌচাতে চেষ্টা করে। একই বছর জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি গঠিত হয়। গোলাম আজমকে  প্রতীকি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়।


১৯৯৩- গণআদালতের কারনে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামাত। নিজামী কাদেরমোল্লা সাইদী কামরুজ্জামান আব্দুল আলীম সহ আট জনকে মৃত্যুদন্ডযোগ্য ঘোষনা করে।


১৯৯৪- উচ্চ আদালতের এক রায়ে গোলাম আজম জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ফিরে পায় ।


১৯৯৫- ঢিলেঢালা ভাবে পালিত হলেও এবছর জামাত প্রথমবারের মত একদিন হরতাল দেয়।


১৯৯৬-জামাত এবং আওয়ামীলীগ তত্ববধাক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। একসাথে আন্দোলন করেছে, তবে রাজনৈতিক জোট হিসেবে নয়। নির্বাচনে জামাত একাই লড়েছিল।


১৯৯৭- রাজনীতিতে জামাত শিকড় গেড়ে ফেলেছে।  ছাত্র শিবির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল, সাইদী ব্যাপক ভাবে ওয়াজ প্রচার করে।


১৯৯৮- বিএনপির সাথে মতৈক্যে আসে দলটি।


১৯৯৯- বিএনপির সাথে ৪ দলীয় জোট গঠন করে ।


২০০০- রাজনীতি থেকে অবসরে যায় গোলাম আজম। দলের নতুন আমীর হন মতিউর রহমান নিজামী।


২০০১- নির্বাচনে ১৮ টি আসন পায়।  জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে। দলের শীর্ষ দুই নেতা নিজামী এবং মুজাহীদ মন্ত্রিত্ব লাভ করে গাড়িতে উড়ায় জাতীয় পতাকা !!


২০০২-ক্ষমতার কেন্দ্র় থেকে জঙ্গিবাদ সংগঠিত করতে থাকে।



২০০৪-  সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা করে জেএমবি কে সংগঠিত করে।  জামাতের আমন্ত্রনে পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর শীর্যস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে আসেন। তারা শিবিরের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন। ২১শে আগষ্টে গ্রেনেড হামলা সহ একের পর এক বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের  নিরীহ মানুষদের।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাটে ভারতের বিছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার প্রধানের উপস্থিতিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র , গ্রেনেড এবং শক্তিশালী বিষ্ফোরক  ধরা পড়ে।  ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ এ মামলার রায়ের পরয্বেক্ষণে আদালত বলেন, প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে শক্তিশালী করতে ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বাংলাদেশের দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা এতে সহযোগিতা করেছিলেন।এর আগে ৩০ জানুয়ারি বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরচালান মামলায় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া অস্ত্র মামলায় এই ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।


২০০৫- নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকে। শুধুমাত্র ভারতীয় কোম্পানী বলে টাটার ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিজামী


২০০৬- জামাতের তান্ডবময় একটা বছর।


২০০৭- নতুন প্রজন্ম জমাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাতকে নির্বাচন করতে দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। ২৫ অক্টোবর মিডিয়ায় কাদের মোল্লা বলেন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে গিয়েছেন নারী এবং সম্পত্তির লোভে ! দেশ ক্ষোবে ফেটে পড়ে।


২০০৮- নির্বাচনে জামাতের লেজেগোবরে অবস্থা। শুধুমাত্র যুদ্ধপরাধীদের বিচার হবে এজন্য তরুন প্রজন্মের ভোটে আওয়ামীলীগের বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ।


২০০৯- মহান জাতীয় সংসদে একজন সংসদ সদস্য যুদ্ধপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব পেশ করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।


২০১০- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠিত হয়। গ্রেপ্তার হতে থাকে অভিযুক্ত ব্যাক্তিরা। জনগন আশাবাদী হয়।


২০১১- দেশ বিদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ  ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে। একই সাথে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে চলতে থাকে আন্তর্জাতিক লবিং।


২০১২- দেশপ্রেমকে পুঁজি করে সীমিত সামর্থ নিয়ে চলতে থাকে বিচার কার্যক্রম। চলতে থাকে দুই পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ।


২০১৩- যুদ্ধাপরাধীদের একেরপর এক ফাঁসির আদেশ দেওয়ার বছর। (মার্চ ২০১৩) তিনটি রায় হয়েছে। তার মধ্যে দুই জনের ফাঁসি এবং এক জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ চার নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এছাড়া জামায়াতের গুরু গোলাম আযাম সাজা ভোগের মধ্যেই মারা গেছেন। এর মধ্যে দিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অবসান ঘটলো।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া নেতারা হলেন- দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সর্বশেষ দলপ্রধান মতিউর রহমান নিজামী।

গোলাম আযম
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর ৯২ বছর বয়সে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জামায়াতে ইসলামের  আমীর একাত্তরের ঘাতককূল শিরোমণি গোলাম আযমের। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে ৯০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। মৃত্যুকালে তার আরও ৮৯ বছর কারাভোগ বাকি ছিল।

আব্দুল কাদের মোল্লা
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার সর্বপ্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর। ট্রাইব্যুনাল-২ এর রায় অনুসারে, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযোগ ছাড়া বাকি পাঁচটি অভিযোগে অপরাধ প্রমাণিত হয়।

কামারুজ্জামান
 ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একাত্তরে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে ১৪৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ
২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সেই সময়কার আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগও।

মতিউর রহমান নিজামী
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১০ মে ২০১৬ ) রাতে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেওয়ার  অভিযোগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করলে ৫ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ  তা খারিজ করে রায় বহাল রাখেন। ফলে সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

Friday, March 22, 2013

‘দেশকে যারা ভালোবাসে, আজকে তারা সমাবেশে’ মতিঝিলে আসছে দেশপ্রমিক ওলামা রা


মতিঝিল থেকে: যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরাসহ সাত দফা দাবিতে মতিঝিলে ওলামা-মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদের মহাসমাবেশ শুরু হবে শনিবার জোহরের নামাজের পর।

এ সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল আসছে মতিঝিলে। চলছে ইসলামী গান। দেওয়া হচ্ছে ‘দেশকে যারা ভালোবাসে, আজকে তারা সমাবেশে’ এর মতো আরো অনেক নিত্যনতুন শ্লোগান।

সমাবেশ নির্বিঘ্ন করতে নটরডেম কলেজ থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

এছাড়া এ সমাবেশকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। এতে লক্ষাধিক ওলামা-মাশায়েখ জমায়েত হবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন- কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ’র ইমাম ও বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।

সমাবেশকে ঘিরে ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের সাত দফা দাবিতে রয়েছে- আল্লাহ, নবী-রাসুল, ইসলাম ও সব ধর্মের সব মর্যাদা সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা, সাম্প্রদায়িক জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাজেয়াপ্ত, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, শিক্ষানীতি ও নারীনীতি কুরআন সুন্নাহের আলোকে সংশোধন, ইসলামী রাজনীতি বন্ধের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের শাস্তি।

মহাসমাবেশের আহবায়ক কমিটির সদস্য সদরুদ্দিন মাকনুন বাংলানিউজকে বলেন, “এ মহাসমাবেশে বানচাল করতে জামায়াত ও ইসলাম বিরোধী বেশ কিছু সংগঠন নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করেছে। এছাড়া খেলাফত আন্দোলনের সহযোগী সংগঠন যুব খেলাফতসহ বেশ কিছু সংগঠন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সমাবেশ বানচালের চেষ্টা করেছে।”

সাত দফা মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সদরুদ্দিন আরো জানান, প্রশাসনের পাশাপাশি পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সমাবেশ স্থলে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, “জামায়াত বা যে কোন ইসলাম বিরোধী দলের নাশকতা বিনষ্ট করতে আমরা প্রস্তুত আছি।”

খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, মৌলভীবাজার, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক ওলামা মাশায়েখের জমায়েত হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামান বাংলানিউজকে জানান, মহাসমাবেশের নিরাপত্তা দিতে শুক্রবার রাত থেকেই মতিঝিল ও এর আশপাশ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সতর্ক আছেন। সকাল ১০টা থেকে দৈনিক বাংলামোড়, আওলাদ হোসেন মার্কেট ও মধূমিতা হলের সামনে থেকে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Thursday, March 21, 2013

জামায়াতের দাবি করা 'নিহত' নবাব মিয়া ৩৫ দিন পর নিজ বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার







কক্সবাজারে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় জামায়াতের দাবি করা নিহত এক জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার ৩৫ দিন পর বুধবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে গুলিবিদ্ধ নবাব মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের তারাবনিয়ার ছড়া এলাকায় জামায়াত শিবির এর সাথে পুলিশের সংঘর্ষে জামায়াতের ৪জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করে আসছিল জাময়াত। ঐ দিনের ঘটনায় নিহত আরো ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হলে জামায়াতের পক্ষ থেকে বাকী ১ জনের লাশ পুলিশ গুম করেছে বলে অপপ্রচার চালায়। অবশেষে গুলিবিদ্ধ নবাব মিয়াকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এ নিয়ে ঐ ঘটনায় নিহত সংখ্যা দাড়ায় ৩ জনে।


.

Wednesday, March 20, 2013

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর জিল্লুর রহমানই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ছিলেন পুরোদস্তুর রাজনীতিক



চার দশকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি পদে ১৫ ব্যক্তিকে পেয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর জিল্লুর রহমানই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ছিলেন পুরোদস্তুর রাজনীতিক।


দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়া জিল্লুর রহমানের রাজনীতিতে পদার্পণ স্কুলজীবনে।

তারপর দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন তিনি। সেই পদে থেকেই বুধবার মারা গেলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য জিল্লুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাকতেন চাচা, আওয়ামী লীগে তার অবস্থান ছিল অভিভাবকের মতোই।

শুধু আওয়ামী লীগই নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে অভিভাবক মানতে কারোই আপত্তি ছিল না। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে তার ডাকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাড়া দেয়া তার নজিরই মেলে ধরে।
শোকবার্তায় তাই বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, “জিল্লুর রহমান ছিলেন, মিতবাক, ভদ্র, নম্র একজন ভালো মানুষ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে তিনি কখনো আক্রমণাত্মক ও অশালীন মন্তব্য করতেন না।”

দলীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের নজিরও ছিলেন জিল্লুর রহমান। নিজের দুঃসময় উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি।

আর তাই স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, দুই দশক পর সেই একই ব্যক্তির ওপর নির্ভরতা খুঁজে নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে যান জিল্লুর রহমানকেই।

মৃত্যুতে শোকবাণীতেও শেখ হাসিনা সেই অবদান স্মরণ করে বলেন, “এক-এগারোর চরম দুঃসময়ে জিল্লুর রহমান দলের হাল ধরেছিলেন, তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ আমাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে এনেছিল।”

জিল্লুর রহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর সব সময় ওই আসন থেকে নির্বাচন করে আসছিলেন তিনি।

ভৈরব থেকে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জিল্লুর রহমান। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ওই আসনে এখন প্রতিনিধিত্ব করছেন ছেলে নাজমুল হাসান।

ছাত্রজীবনেই জিল্লুর রহমান রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৫৪ সালে আইন পেশায় যোগ দেয়ার প্রস্ততি নেন আইনজীবী মেহের আলী মিঞার ছেলে জিল্লুর রহমান।

তবে আইনজীবী হওয়ার চেয়ে তার ঝোঁক বেশি ছিল রাজনীতিতে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৬ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন।

ষাটের দশকে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও রাজপথই ছিল তার ঠিকানা।

তবে ২০০৭ সালের শেখ হাসিনাকে কারামুক্ত করতে মুজিব কোট কিংবা পাঞ্জাবির বদলে গাউন পরে সংসদ ভবনের বিশেষ আদালতে দেখা গিয়েছিল তাকে।
১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়তা ১৯৭০ সালে তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এনে দেয়।

এরপর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জিল্লুর রহমানও তাতে যোগ দেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনা এবং জয় বাংলা পত্রিকার প্রকাশনায় যুক্ত ছিলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে অনেক নেতাকে ছাপিয়ে জিল্লুর রহমানই হন দলের সাধারণ সম্পাদক।

এরপর বিভিন্ন দায়িত্বের পর ১৯৯২ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। দুই দফা এই দায়িত্ব পালনের পর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন অনেক দিন।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে তার মন্ত্রিসভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি, ছিলেন সংসদ উপনেতাও।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে নবম জাতীয় সংসদেও সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জিল্লুর রহমান। তিনি রাষ্ট্রপতি হলে ওই পদে আসেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

আপাদমস্তক রাজনীতিক জিল্লুর রহমানের বিয়েতেও রাজনীতি ছিল বিষয়। অভিজাত পরিবারের সন্তান আইভী রহমানের সঙ্গে দল করার সূত্রে পরিচয়, এরপর পরিণয়। তবে তাদের দুজনকে এক করতে দুই পরিবারকে রাজি করাতে উদ্যোগ নিতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে।

সক্রিয় রাজনীতিক আইভী রহমান ছিলেন নিজের পরিচয়েই পরিচিত। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশের নারী আন্দোলনের নেত্রীও ছিলেন তিনি।

২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আইভী, রেখে যান স্বামী জিল্লুর, ছেলে নাজমুল হাসান এবং দুই মেয়ে তানিয়া বখত ও তনিমা বখতকে।
স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙে পড়েন জিল্লুর, তবে রাজনীতিতে সক্রিয়তা নষ্ট হয়নি তার।

বরং ২০০৬ এর শেষ দিকে রাজনৈতিক সঙ্কট এবং জরুরি অবস্থার সময় প্রবীণ অনেক রাজনীতিকের অবস্থান বদলে গেলেও দল ও নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা এতুটুকুও কমেনি জিল্লুর রহমানের।

এরপর ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলে টানাপোড়েনের মধ্যে আওয়ামী লীগের অভিভাবকত্ব নিতে হয় অশীতিপর এই নেতাকে।

আর সেই ঝড় তিনি ঠিকভাবেই সামাল দিতে পেরেছিলেন বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তাই শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ইতিহাসে জিল্লুর রহমান অবিনশ্বর হয়ে থাকবেন।”

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আর নেই




বুধবার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে জিল্লুর রহমানের। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন।

দায়িত্ব নেয়ার তিন বছরের মাথায় জীবনাবসান ঘটল দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের।

অসুস্থ জিল্লুর রহমানকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন স্পিকার আবদুল হামিদ।

গত ১০ মার্চ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেয়া হয় জিল্লুর রহমানকে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে তার আগের দিনই ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

জিল্লুর রহমান ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব পালনের মধ্যে অসুস্থতার জন্য কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। গত ডিসেম্বর মাসেও যুক্তরাজ্যে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়।

জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জন্ম গ্রহণ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় এই নেতা '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেও যোগ দেন।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার স্ত্রী, মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভী রহমানকে হারান। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তারের সময় শেখ হাসিনা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব জিল্লুর রহমানকে দেন।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনসহ '৭৩, '৮৬, '৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর-ভৈরব আসন থেকে জিল্লুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Tuesday, March 19, 2013

‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা দিন: খালেদাকে ইনু



মঙ্গলবার পিআইডির সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। আমরা তো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। তাহলে ক্ষমতায় গিয়ে তিনি কাদের বিচার করবেন?” “প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা কি খালেদা জিয়ার কাছে আছে? আপনি কি জানেন না, জামায়াতে ইসলামের এই লোকগুলো একাত্তরে ঘোষণা দিয়ে, বিবৃতি দিয়ে, টিক্কা খান-ইয়াহিয়া খানের পাশে ছবি তুলে যুদ্ধাপরাধকে সমর্থন করেছিল,” প্রশ্ন করেন ইনু।

তিনি বলেন, “জামায়াতের এই নেতারা বাংলার সাত কোটি মানুষকে কাফের বলেছিল। মা-বোনদের ইজ্জত হরণে পাকিস্তানি সেনবাহিনী যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনকে ফতোয়া দিয়ে তারা জায়েজ করেছিল।

ক্ষমতায় গেলে ‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার যে কথা খালেদা জিয়া বলেছেন- তা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।

এ সময় খালেদার কথিত সেই ‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীদের তালিকাও প্রকাশের আহ্বান জানান মন্ত্রী।


এই বেলুন উড়ছে শহীদদের উদ্দেশে চিঠি নিয়ে। শাহবাগ আন্দোলনের ষষ্ঠদশ দিন বুধবার এই কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা।
খালেদা জিয়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে ‘নষ্টদের’ মঞ্চ অ্যাখ্যা দিয়ে সেখান থেকে ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার যে অভিযোগ করেছেন সে বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন।
তিনি জানতে চান, “ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগ যারা ব্যবহার করেন তারা কি নাস্তিক? তারা কি নষ্ট?”

“আপনার কাছ থেকে আমরা সত্য ভাষণ চাই। আপনি নাস্তিকদের তালিকা প্রকাশ করুন। সরকার কিভাবে নাস্তিক তা বলুন। নইলে আর নাস্তিক নাস্তিক বলবেন না,” বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে বলেন জাসদ সভাপতি ইনু।

সব ধরনের ‘অপপ্রচার, গুজব ও তথ্য সন্ত্রাস’ বন্ধের জন্য বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ইতিহাস বিকৃত করা খালেদা জিয়ার একটি হবি (শখ)।
উনি ইতিহাসে বিশ্বাস করেন না। জামায়াত-বিএনপি মিথ্যাচারকে স্বতন্ত্র শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।”

মন্ত্রীর ভাষায়, খালেদা জিয়া ও জামায়াত যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে যে অবস্থান নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার ও গুজব ছড়াচ্ছে, একাত্তরে পাকিস্তানীরাও একইভাবে মিথ্যাচার ও গুজবের আশ্রয় নিয়েছিল। বিএনপির ভিতরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতায় বিশ্বাসী নেতাকর্মীরা আছেন- এমন মন্তব্য করে ইনু বলেন, “তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।… আমি আশা করব, আপনারা সক্রিয় হবেন এবং আপনাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই মিথ্যাচার থেকে বিরত করে যুদ্ধপরাধীদের পক্ষ থেকে সরে আসার চেষ্টা চালাবেন।”

আর তাতে ব্যর্থ হলে জনগণের পক্ষ নিয়ে খালেদা জিয়াকে ত্যাগ করে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে তাকে বিরত থাকার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’ বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মন্ত্রী জানান, নবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তিকারীদের সনাক্ত করতে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনতে ইতোমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শিগগিরই যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরকারের কার্ক্রমকে ‘নাস্তিক্যবাদের’ সঙ্গে তুলনা করে খালেদা জিয়া ‘ধর্মবিরোধী কাজ’ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
যুদ্ধাপরাধের বিচার, বিচার প্রক্রিয়া ও আদালতের স্বচ্ছতা নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ এবং ধর্ম, গণজাগরণ মঞ্চ, পুলিশের কার্যক্রম, ইতিহাস, নির্বাচন, সংসদে বসা, সংসদ বর্জন ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত মিথ্যাচার করছে বলেও অভিযোগ করেন ইনু।

এছাড়া ভিটামিন ক্যাপসুল খেয়ে শিশুমৃত্যু ও চাঁদে সাঈদীকে দেখা যাওয়ার ‘গুজব ছড়িয়ে’ বিএনপি-জামায়াত ‘তথ্য সন্ত্রাস’ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এসব ‘মিথ্যাচার ও গুজবের’ বিভিন্ন দিক নিয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাত পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী।

জামায়াত নিষিদ্ধ করা ও অপপ্রচারকারী গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন আইন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ইনু বলেন, “আমরা নাজুক পরিস্থিতিতে দেশবাসীর কাছে বিরোধীদলের অগণতান্ত্রিক আচরণ তুলে ধরেছি।”অন্যদের মধ্যে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।


Monday, March 18, 2013

সাকার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি মামলা: আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ



গাজীপুর: মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও কারাগারে আটক সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলাটির তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক আহসান হাবিব এ নির্দেশ দেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১২টায় বাদীর জবানবন্দি শুনে আদালত পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। গাজীপুরের কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম সংশ্লিষ্ট আদালতের বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে এ আদেশের তথ্য নিশ্চিত করেন।

সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলাটি দায়ের করা হয় সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায়। মামলায় কাশিমপুর কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত হাজতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বর্তমান সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে তার সেবায় নিয়োজিত এক কারাবন্দি তরুণের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত ওই তরুণকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ভিকটিমের পিতা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় জেল থেকে মুক্ত করার প্রলোভন দিয়ে ওই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত মূখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক আহসান হাবিবের আদালতে ওই মামলা দায়ের করেন ঘটনার শিকার তরুণের পিতা আঃ সালাম। বাদীর পিতার নাম হামিদ মিয়া। বাড়ি শেরপুর জেলার সদর উপজেলার হাতিআলগা রসুলপুর গ্রামে।

ফৌজদারি দণ্ডবিধি আইনের ৩৭৭/৩২৩/৫০৬(২) ধারায় দায়েকৃত মামলাটির বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত আদেশের অপেক্ষায় রেখে দেন। মামলার স্বাক্ষী বাদী, তার ছেলে ঘটনার শিকার তরুণ ও কাশিমপুর কারাগার-১ এর জেল সুপার জামিল আহমেদ চৌধুরী।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ‘‘বাদীর ছেলে শেরপুর থানার একটি মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এ বন্দি ছিলেন। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী একই কারাগারে ২৩ অক্টোবর ২০১২ সাল থেকে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে রয়েছেন। ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ ভিকটিমকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সেবক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। আসামির সেবক হওয়ার সুবাদে ভিকিটম নিয়মিত আসামির কক্ষে যাতায়াত করতেন।

‘‘আসামি ভিকটিমের কাছে থেকে মিথ্যা মামলায় সাজা হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে জেল থেকে মুক্ত করার আশ্বাস দেন। ভিকটিম জেলমুক্তির আশায় আসামির সেবা যত্নে বেশি করে মনোনিবেশ করেন। গত ২০ নভেম্বর ২০১২ রাত ৯টার সময় ভিকটিম আসামির কক্ষে সেবাযত্ন করাকালে আসামি ভিকটিমকে তার শরীর ম্যাসেজ করে দিতে বলেন। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে ও জেলমুক্ত হওয়ার আশায় আসামির শরীর টিপে দিতে থাকলে এক পর্যায়ে যৌন নিপীড়ন করেন।’’

‘‘এতে ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে আসামি ভয়-ভীতি দেখিয়ে ওই সংবাদ কাউকে জানালে খুন করা হবে বলে হুমকি দেন। ভিকটিম আসামির ভয়ে ও দ্রুত জেলমুক্তির আশায় ঘটনাটি কাউকে জানাননি।’’ মামলায় বলা হয়, ‘‘২০ নভেম্বর ২০১২ থেকে ৫ জানুয়ারি ২০১৩ রাত ১১টা পর্যন্ত ওই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।’’

‘‘এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ বাদী তার ছেলের সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গেলে ভিকটিম তার বাবাকে ঘটনা খুলে বলেন। বাদীর পরামর্শে ভিকটিম ১৩ ফেব্রুয়ারি কারা মহাপরিদর্শককে লিখিত ভাবে ঘটনা জানালেও কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর ভিকটিমের পিতা গাজীপুর সদরের জয়দেবপুর থানায় একটি এজাহার দেন। কিন্তু পুলিশ এজাহার গ্রহণ করেনি।’’এ অবস্থায় সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় বাদী গাজীপুর আদালতে হাজির হয়ে মামলা দায়ের করেন।মামলার এজাহারে ভিকটিমের পায়ুপথ ও মুখ ব্যবহার করে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গাজীপুর বারের সাবেক সভাপতি ও গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ ওয়াজ উদ্দিন মিয়া।বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Sunday, March 17, 2013

একজন জামাল নজরুল ইসলাম এবং মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ: ড. অভিজিৎ রায়


অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের নাম আমি শুনি ২০০৫ সালে, আমার ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটি লেখার সময়। বইটির পঞ্চম অধ্যায়টির ওপর কাজ করছিলাম। অধ্যায়টির শিরোনাম ছিল ‘রহস্যময় জড় পদার্থ, অদৃশ্য শক্তি এবং মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ’। মহাবিশ্বের অন্তিম ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাজকর্মগুলো পড়ার সময়ই আমার নজরে আসে, বাংলাদেশের একজন পদার্থবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম এর উপর উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, এবং তার একটি চমৎকার বই আছে ইংরেজিতে – ‘The Ultimate Fate of the Universe’। বইটি উনি লিখেছিলেন ১৯৮৩ সালে। বেরিয়েছিল বিখ্যাত কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে। বইটির পেপারব্যাক বেরোয় ২০০৯ সালে। আমার কাছে অবশ্য বইটির ১৯৮৩ সালের হার্ডকভারের কপিটিই ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বইটি হারিয়ে যায় যখন আমি সিঙ্গাপুর থেকে আমেরিকায় পাকাপাকিভাবে চলে আসার পাঁয়তারা করছিলাম। আমার জীবনের এই ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক বইই আমি হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু এই বইটির জন্য যে দুঃখ আমার পুঞ্জিভূত হয়েছিল, তা আজও আমার যায়নি।

দুঃখ পাবার যৌক্তিক কারণ তো আছে। আমি ভাবতাম মহাবিশ্বের কপালে ঠিক কি আছে এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা আর ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং, ফাইনম্যান, অ্যালেন গুথ, মাইকেল টার্নার, লরেন্স ক্রাউসের মতো দুনিয়া কাঁপানো বিজ্ঞানীরাই। কিন্তু জামাল নজরুল ইসলামের মতো বিজ্ঞানীরাও যে এ নিয়ে কাজ করেছেন, এবং কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসের মতো প্রকাশনা থেকে বই বের করছেন, সেটা জানা সে সময় শুধু আমাকে আনন্দ দেয়নি, রীতিমত অবাক করে দিয়েছিল। আরো অবাক হলাম যখন জানলাম বইটি নাকি ফরাসি, ইতালীয়, জার্মান, পর্তুগিজ, সার্ব, ক্রোয়েটসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আমার অবাক হবার পাল্লা বাড়তেই থাকল যখন জানলাম, এই নিভৃতচারী বিজ্ঞানীর কেবল একটি নয় বেশ কয়েকটি ভালো ভালো বই বাজারে আছে। ‘রোটেটিং ফিল্ডস ইন রিলেটিভিটি’, ‘ইনট্রোডাকশন টু ম্যাথেমেটিক্যাল কসমোলজি’, এবং ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’ নামের কঠিন কঠিন সব বই। বইগুলো আমেরিকার বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়। বাংলাতেও উনার একটা বই আছে ‘কৃষ্ণবিবর’ নামে। বাংলা একাডেমী থেকে একসময় প্রকাশিত হয়েছিল।

আমি ততদিনে উনার কাজকর্ম সম্বন্ধে জানতে শুরু করেছি। জানলাম, উনি লন্ডনস্থ কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়-এর অ্যাপ্লায়েড ম্যাথেমেটিক্স অ্যান্ড থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছিলেন ১৯৬৪ সালে। সাধারণত একাডেমিক লাইনে থাকলে পিএচডি করাই যথেষ্ট, এর বেশি কিছু করার দরকার পড়ে না। পড়ে না যদি না তিনি জামাল নজরুল ইসলামের মতো কেউ না হন। ১৯৮২ সালে অর্জন করেন ডিএসসি বা ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি, যেই ডিগ্রি সারা পৃথিবীতেই খুব কমসংখ্যক বিজ্ঞানী অর্জন করতে পেরেছেন। অবশ্য কৃতবিদ্য এই অধ্যাপকের একাডেমিক অঙ্গনে সাফল্যের ব্যাপারটা ধরা পরেছিল অনেক আগেই। মর্নিং শোজ দ্য ডে। সেই যে, ১৯৫৭ সালে কলকাতা থেকে অনার্স শেষ করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে গণিতশাস্ত্রে ট্রাইপস করতে গিয়েছিলেন। তিন বছরের কোর্স, উনি সেটা দুই বছরেই উনি শেষ করে ফেলেন। ভারতের বিখ্যাত জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী জয়ন্ত নারলিকার, যার নাম ফ্রেডরিক হয়েলের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘হয়েল-নারলিকার তত্ত্ব’-এর কারণে, তিনি সেখানে নজরুল ইসলামের সহপাঠী ছিলেন। পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে তার বন্ধু তালিকায় যুক্ত হয়েছিলেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ব্রায়ান জোসেফসন, স্টিফেন হকিং, আব্দুস সালাম এবং রিচার্ড ফাইনমেন এর মতো বিজ্ঞানীরা। ফাইনমেন তাকে তার নিজের বাড়িতে দাওয়াত করেও খাইয়েছিলেন, বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে উপহার দিয়েছিলেন একটা মেক্সিকান নকশিকাঁথাও।

অবশ্য কার সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল আর না ছিল সেটা তাকে পরিচিত করেছে ভাবলে ভুল হবে। তিনি পরিচিত ছিলেন নিজের যোগ্যতাবলেই। পিএইচডি শেষ করে তিনি দুবছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড-এ কাজ করেন। মাঝে কাজ করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্বখ্যাত ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবেও। ১৯৭৮ সালে লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে রিডার পদে উন্নীত হন।

সেভাবেই থাকতে পারতেন। কিন্তু তা না করে ১৯৮৪ সালে তিনি একটা বড় সিদ্ধান্ত নিলেন। জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলোর একটি। বিলেত-আমেরিকার লক্ষ টাকা বেতনের লোভনীয় চাকরি, গবেষণার অফুরন্ত সুযোগ, আর নিশ্চিত নিপাট জীবন সব ছেড়ে ছুড়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিধ্যালয়ে তিন হাজার টাকার প্রফেসর পদে এসে যোগ দিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে এমনকি এই তিনহাজার টাকা দিতেও গড়িমসি করেছিল। তারা বেতন সাব্যস্ত করেছিল আটশ টাকা। কিন্তু তারপরেও পাশ্চাত্য চাকচিক্য আর ডলার-পাউন্ডের সব মোহ হেলায় সরিয়ে দিয়ে অধ্যাপক নজরুল বিলেতের বাড়ি ঘর জায়গা জমি বেচে চলে আসলেন বাংলাদেশে। দেশটাকে বড়ই ভালোবাসতেন তিনি। তিনি নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকার চিন্তা আমার কখনোই ছিল না। দেশে ফিরে আসার চিন্তাটা প্রথম থেকেই আমার মধ্যে ছিল, এটার ভিন্নতা ঘটেনি কখনোই। আরেকটা দিক হলো, বিদেশে আপনি যতই ভালো থাকুন না কেন, নিজের দেশে নিজের মানুষের মধ্যে আপনার যে গ্রহণযোগ্যতা এবং অবস্থান সেটা বিদেশে কখনোই সম্ভব না।” তার দেশপ্রেমের নিদর্শন ১৯৭১ সালেও তিনি দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন নিরস্ত্র জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, নির্বিচারে হত্যা খুন ধর্ষণে মত্ত হয়েছিল, তখন পাক-বাহিনীর এই আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিও লিখেছিলেন।

দেশে ফিরে বিজ্ঞানের উন্নয়নের জন্য অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে। শুধু বিজ্ঞানেই তাঁর অবদান ছিল না, তিনি কাজ করেছেন দারিদ্র দূরীকরণে, শিল্প ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি মনে করতেন, আমাদের দেশটা যেহেতু কৃষিনির্ভর, তাই আমাদের শিল্পনীতি হওয়া চাই ‘কৃষিভিত্তিক, শ্রমঘন, কুটিরশিল্প-প্রধান’ এবং ‘প্রধানত দেশজ কাঁচামাল-নির্ভর’।
তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ-এর ক্ষতিকারক প্রেসক্রিপশন বাদ দিয়ে নিজেদের প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটা সুষ্ঠু শিল্পনীতির প্রতি সবসময় গুরুত্ব দিতেন। পাশ্চাত্য সাহায্যের ব্যাপারে তার একটি বিখ্যাত উক্তি আছে –“তোমরা শুধু আমাদের পথ থেকে সরে দাঁড়াও, আমাদের ভালোমন্দ আমাদেরকেই ভাবতে দাও। আমি মনে করি, এটাই সর্বপ্রথম প্রয়োজনীয়।”

যারা অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের কাজ এবং চিন্তাভাবনা আরো বিস্তৃতভাবে জানতে চান তারা আলম খোরশেদ ও এহসানুল কবিরের নেওয়া বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম-এর সাক্ষাৎকারটি গুগলে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন।

আইনস্টাইন যেমন বেহালা বাজাতেন, সত্যেন বোস যেমন এস্রাজ, ঠিক তেমনি জামাল নজরুল ইসলাম পছন্দ করতেন পিয়ানো বাজানো (এ ব্যাপারটা আমি হাল্কাভাবে শুনেছিলাম, তবে বিস্তৃতভাবে জানলাম তার ছাত্র প্রিয়ম মজুমদারের একটি ফেসবুক নোট থেকে)।
তিনি ছিলেন গজল এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের বড় ভক্ত, পিয়ানোতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর তুলতে তিনি পছন্দ করতেন। বাড়িতে বন্ধুর ছোট মেয়েটিকে প্রতি শুক্রবার ‘গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ’ পিয়ানোতে বাজিয়ে শোনাতেন।

আর ভালোবাসতেন স্ত্রী সুরাইয়া ইসলামকে! তার স্ত্রীও ছিলেন ডক্টরেট। একটা কনফারেন্সে তাদের দেখা, প্রেম এবং পরিণয়। শোনা যায়, ৫৩ বছরের দাম্পত্য জীবনে জামাল নজরুল তাঁর স্ত্রীকে ছাড়া কোথাও যেতেন না। কোনো অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে চলার সময় সবসময় স্ত্রীর হাত ধরে রাখতেন।

অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ১৬ মার্চ। এই নিভৃতচারী কর্মমুখর ক্ষণজন্মা বিজ্ঞানীর প্রতি রইলো সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ড. অভিজিৎ রায়: আমেরিকা প্রবাসী গবেষক, ব্লগার এবং মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ‘ভালবাসা কারে কয়’ (শুদ্ধস্বর, ২০১২) সহ সাতটি আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন ভিত্তিক বইয়ের লেখক।বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Saturday, March 16, 2013

বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলাম আর নেই


চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভৌতবিজ্ঞানী ও প্রফেসর ইমিরেটাস ড. জামাল নজরুল ইসলাম আর নেই। বিশ্ববরেণ্য এ শিক্ষাবিদ চট্টগ্রামের বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনের সামনের সারির সংগঠক ছিলেন।শুক্রবার রাত ১২টায় চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিজ্ঞানী জামাল নজরুল শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।



ওই হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. নূরুল হক বলেন, ‘জামাল নজরুল ইসলাম স্যারকে গত বুধবার থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। গত রাত ১২টার দিকে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর রাত আড়াইটার দিকে তার স্বজনেরা মরদেহ নগরীর সার্সন রোডে স্যারের বাসায় নিয়ে যান।’
১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ড. জামাল নজরুল ইসলাম ঝিনাইদহ সদরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তখন এই শহরের মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জজের সমতুল্য) ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১ বছর তখনই তার বাবা কলকাতায় বদলি হন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমিরেটাস ছিলেন। বিশিষ্ট এ বিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান করেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।
চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন,‘স্যার অসুস্থ শরীর নিয়ে গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।’
ড. জামাল নজরুল গণিত এবং পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। বেশকিছু গাণিতিক সূত্র এবং জটিল গাণিতিক তত্ত্বের সহজ পন্থার উদ্ভাবক জামাল নজরুল মহাকাশের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন। তার লেখা বেশকিছু বই অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ড. জামাল নজরুল ইসলাম একাধারে বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ। তিনি মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত।
ড. জামাল নজরুল প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলনের পাশাপাশি পরিবেশসহ বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। বিজ্ঞানী ড.জামাল নজরুল ইসলামের মরদেহ শনিবার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।
মৃত্যুকালে জামাল নজরুল ইসলাম স্ত্রী ও দু’মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর বড় মেয়ে সাদাফ পেশাগত জীবনে মাইক্রো বায়োলজিস্ট ও ঢাকায় কর্মরত এবং ছোট মেয়ে নার্গিস সাইকোলজিস্ট ও লন্ডনে কর্মরত। বর্তমানে সবাই চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।
তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর খবর শুনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা তার বাসায় ছুটে গেছেন।
শিক্ষাজীবন
জামাল নজরুল প্রথমে ভর্তি হন কলকাতার মডেল স্কুলে। এই স্কুল থেকে পরবর্তীতে শিশু বিদ্যাপীঠে। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যাপীঠেই পড়াশোনা করেন তিনি। কলকাতায় মডেল স্কুলের পর চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাকে ‘ডাবল প্রমোশন’ দিয়ে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।
চট্টগ্রামের বিখ্যাত এ বিদ্যালয়ে তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। মূলত এখানে পড়ার সময়ই গণিতের প্রতি তার অন্যরকম ভালবাসার সৃষ্টি হয়। নবম শ্রেণীতে উঠার পর পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।
সেখানে গিয়ে ভর্তি হন লরেন্স কলেজে। এই কলেজ থেকেই তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ ও হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পাশ করেন। সে সময় সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ‘ও লেভেল’ এবং হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ‘এ লেভেল’ বোঝাতো।
উল্লেখ্য হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজে তিনি একাই গণিত পড়েছিলেন। এটা বেশ উচ্চ পর্যায়ের গণিত হওয়ায় সবাই নিতে চাইতো না। এ সময়ই গণিতের প্রতি ‍তাঁর ঝোঁক ও ভালবাসা তৈরি হয়।
লরেন্স কলেজের পাঠ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেণ্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে যান এবং সেখান থেকে বিএসসি অনার্স করেন।
বিএসসি শেষে ১৯৫৭ সালে জামাল নজরুল ইসলাম কেমব্রিজে পড়তে যান। কেমব্রিজের প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে আবারও স্নাতক ডিগ্রি (১৯৫৯) অর্জন করেন। তারপর সেখান থেকেই মাস্টার্স (১৯৬০) ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসসিডি (ডক্টর অফ সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
ড. জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডে ডক্টরাল-উত্তর ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপক জামাল নজরুল কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি-তে (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি) কাজ করেন ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
১৯৭১ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভিজিটিং সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের প্রভাষক ছিলেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ, কার্ডিফ (বর্তমানে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়) এর সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলে ফেলো ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে রিডার পদে উন্নীত হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজে ১৯৬৮, ১৯৭৩ ও ১৯৮৪ সালে ভিজিটিং সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ সালে ড. জামাল নজরুল বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
রচনাবলী
অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম তার গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে একাধিক বই লেখেন। এসব বই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়।
তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স১৯৮৩ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর তা বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় অনুদিত হয়।
এছাড়া তার রোটেটিং ফিল্ড্‌স ইন জেনারেল রিলেটিভিটি গ্রন্থটি ১৯৮৫ সালে কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত হয়। একই প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ। যা পরে স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত হয়।
তার অন্যান্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি (১৯৯২), বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত কৃষ্ণ বিবর এবং রাহাত-সিরাজ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ, শিল্প সাহিত্য ও সমাজ ।
এছাড়া ডব্লিউ বি বনোর সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪)।
পুরস্কার
বিশিষ্ট এ বিজ্ঞানী একুশে পদকসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত হন। ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন আজীবন সম্মাননা পদক লাভ করেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ১৯৮৫ সালে তাকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। ১৯৯৪ সালে তিনি ন্যাশনাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি মেডেল পান। ১৯৯৮ সালে ইতালির আবদুস সালাম সেণ্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমী অফ সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাঁকে মেডাল লেকচার পদক দেয়া হয়।

Friday, March 15, 2013

আপনি কাপুরুষ বিধায় ত্বকীকে হত্যা করেছেন,যদি বীরপুরুষ হয়ে থাকেন আমাকে হত্যা করুন:শামীম ওসমানকে মেয়র ডা.আইভী


নারায়ণগঞ্জ: মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে দায়ী করেছেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।


ত্বকী হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে পাঁচ দিনের টানা কর্মসূচির শেষদিন শুক্রবার বিকেলে শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে আয়োজিত গণজমায়েতে তারা এ অভিযোগ করেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।

তারা বলেছেন, “শামীম ওসমান নিজেকে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন ত্বকীকে হত্যা করে। প্রশাসন যদি এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুনিদের বের করতে না পারে তাহলে শামীম ওসমানকে বর্জন করা হবে।”

শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, “আপনি কাপুরুষ বিধায় ত্বকীকে হত্যা করেছেন। আপনি যদি বীরপুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে হত্যা করুন। যদি খুনিদের ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনাদের সঙ্গে রাজনীতি করবো, নইলে আপনাকে বর্জন করা হবে।”

এর আগে আইভী যখন বক্তব্য শুরু করেন তখন স্লোগান ওঠে, “গডফাদারের আস্তানা, নারায়ণগঞ্জে রাখবো না।”

আইভী শহীদ মিনারে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষকে দেখে বলেন, “নারায়ণগঞ্জের মানুষ আজ প্রতিহত করার প্রত্যয়ে মাঠে নেমেছেন। আজ সময় এসেছে প্রতিরোধ, প্রতিবাদ ও প্রতিশোধ নেওয়ার। এই শহরে অনেক সিরিজ হত্যা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে স্তব্ধ করে দিতে অনেক খুন হয়েছে। কিন্তু আর মেনে নেওয়া যায় না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন মুক্তি চায়।”

৩০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জবাসী অত্যাচার সহ্য করে আসছে উল্লেখ করে আইভী বলেন, “আমরা আর শিকলে বন্দি থাকতে চাই না। আমরা ত্বকীর মৃত্যুর পর এ অবস্থার মুক্তি চাই। আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়তে চাই।”

২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আইভীর কাছে পরাজিত হন সাবেক এমপি শামীম ওসমান। এ ঘটনাকে উল্লেখ করে আইভী বলেন, “আমি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার কারণে আমি অপরাধী হতে পারি। ওই নির্বাচনে মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে কোন রক্তচক্ষুকে ভয় পায়নি। কিন্তু ত্বকীর মতো একজন মেধাবীকে হত্যা করে আপনি কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন। আপনাকে আমি নির্বাচনের পর আপনার সহায়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি তা না করে উল্টো হত্যার রাজনীতি শুরু করেছেন। আপনারা আওয়ামী লীগের নামের উপর ভর করে জুজুর ভয় দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জে ছড়ি ঘোরানোর ফায়দা লুটছেন। দলের দুঃসময়ে আপনারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে চাঁদাবাজীর টাকায় স্বর্গরাজ্যে বসবাস করেন আর আওয়ামী লীগের নিবেদিত নেতাকর্মীরা ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট করে।”

আইভী তার বক্তব্যে শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “আপনি রফিউর রাব্বির মাত্র দশ গজ দূরে ট্রাকের উপর থেকে বক্তব্য দিয়েছেন ত্বকীকে আপনি খুন করেননি। আপনি জানেন ত্বকীকে কে খুন করেছে। আপনার অনেক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। কিন্তু আমাদের তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। আমাদের যোগাযোগ সাধারণ জনগণের সঙ্গে।”

আইভী বলেন, “আপনি বলছেন, আপনি ত্বকীকে খুন করেননি। আপনাকে তো কেউ বলেনি আপনি ত্বকীকে হত্যা করেছেন। আপনি নিজেকে বিশেষ মহল ভাবছেন কেন? আর আপনি যদি জেনে থাকেন কে ত্বকীকে হত্যা করেছে তাহলে তাকে ধরে এনে জনতার সামনে হাজির করুন। সেই খুনি যদি আমি হই বা আমার ভাই হয় বা আমার দলের কোন কর্মী হয় তাহলে তাকেও হাজির করুন। নইলে আমরা আপনাকে বর্জন করবো। আর যদি খুনিদের ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনাদের সঙ্গে রাজনীতি করবো।”


তিনি বলেন, “শামীম ওসমানের বাবা সামসুজ্জোহার সঙ্গে আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ থাকলেও তারা সন্ত্রাস করেনি। কিন্তু এখন আমরা সত্য কথা বলতে গেলে জামায়াত-শিবিরের তকমা লাগানো হচ্ছে।”

আইভী বলেন, “আপনারা নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে ভদ্র শিক্ষিতদের হাতে কলমের বদলে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন আপনাদের ৩ ভাইকে রক্ষা করতে। আপনাদের কারণে মেধাবী ছাত্র গোলাম সারোয়ার এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। মাকসুদকে আপনারাই হত্যা করেছেন। নিয়াজুল এখন চেষ্টা করছে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে।”

রাব্বি আগে থেকেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রাব্বি বাস ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ, রেলওয়ের স্থাপনা উচ্ছেদ, তেল-গ্যাস নিয়ে আন্দোলন করার কারণেই অনেকেই তার উপর ক্ষুব্ধ।”

আইভী আরও বলেন, “২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে যখন আমি দেশে ফিরে আসি, তখন অনেক বাঘ-সিংহ দেশে ছিল না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যখন বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের কারণে আওয়ামী লীগের করুণ দশা ছিল, তখন এক সময়ে নারায়ণগঞ্জে রাজত্বকারী কেউ ছিল না।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আইভী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ যখন আপনাকে গণরায় দিয়েছিল, তখন দেশে কোনো গডফাদার ছিল না। আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, বিচার কাজ শেষ হলে দেশবাসী আপনার পক্ষে আবারও গণরায় দেবে। নারায়ণগঞ্জকে কোনো জল্লাদের হাতে তুলে দেবেন না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ মুক্তভাবে নিশ্বাঃস নিতে চায়। আর যদি নারায়ণগঞ্জকে কোনো জল্লাদের হাতে তুলে দিতে হয়, তবে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মেরে ফেলুন।”

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “আপনার প্রশাসনকে নির্দেশ দেন ত্বকী হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেন কোনো জজমিয়া নাটক না হয়। আমরা কোনো জজমিয়া নাটক দেখতে চাই না। নয়তো যেদিন সাধারণ মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামবে তখন নারায়ণগঞ্জে কোনো জল্লাদ, কোনো গডফাদার রক্ষা পাবে না। কোনো টর্চার সেল নারায়ণগঞ্জে থাকবে না।”

এক ভাইয়ের প্রশ্রয়ে ত্বকীকে হত্যা: রাব্বি



ছেলে হত্যাকাণ্ডের পর আটদিন পর শুক্রবার প্রকাশ্যে সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ত্বকীর বাবা নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি রফিউর রাব্বি।

তিনি বলেন, “ত্বকী আমার ছেলে, মরে গেছে। নারায়ণগঞ্জে ত্বকীর বয়সের যতো তরুণ রয়েছে তারা সবাই আমার সন্তান। তাদের জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ত্বকী আমাকে দিয়ে গেছে। সারাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করছে। আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, ঠিক সেই সময় ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। তিন ভাইয়ের এক ভাইয়ের প্রশ্রয়ে ও একটি সংস্থার সহায়তায় খুনিদের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই এক ভাইকে ডেকে নিয়ে বলেছেন নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যা নিয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয়। সেই ভাই বলেছেন, দুই-চারদিন হৈ চৈ হবে তারপর বন্ধ হয়ে যাবে।”

রাব্বি বলেন, “আমরা কোনোভাবেই মনে করি না ত্বকীকে জামায়াত-শিবির হত্যা করেছে। তাকে আমাদের সেই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হত্যা করেছে, যাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। বাস ভাড়া বাড়ার ব্যাপারে যখন আমি আন্দোলন করি, তখন বাস মালিকরা র‌্যাবের কাছে একটি তালিকা দিয়েছিল তারা মাসে কতো টাকা নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে চাঁদা দেয়। আমি সেই তালিকা দেখিয়ে ডিসি অফিসে বলেছিলাম, এই চাঁদা যদি বন্ধ করা হয় তাহলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাস ভাড়া ২২ টাকারও কম হবে।”

রাব্বি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জে একটি টর্চার সেল আছে। সেই টর্চার সেলের আশে পাশে যারা থাকে তারা রাতে চিৎকারে শব্দ শুনতে পায়, গুলির শব্দ পায়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে পুলিশ গোয়েন্দা জানে না সেই টর্চার সেলের কথা, শোনে না গুলি আর চিৎকারের শব্দ।”

শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে রাব্বি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের জামায়াতের দোসর বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের দোসর কে, তা নারায়ণগঞ্জবাসীকে জানাতে হবে। এই পর্যন্ত জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আপনি কয়জন জামায়াত-শিবিরকে মেরেছেন তা নারায়ণগঞ্জের মানুষকে বলেন। আপনার শ্বশুর জামায়াতের সংগঠন সোসাইটির সভাপতি, যে মুজাহিদের সাথে কাজ করে। আমরা অসাম্প্রদায়িতার কথা বলি আপনি সাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন। সিটি নির্বাচনের সময় আপনি হিন্দু মন্দিরে হামলা করে সংখ্যালঘুদের বুঝাতে চেয়েছেন শামীম ওসমানকে ভোট না দিলে নারায়ণগঞ্জে হিন্দুরা থাকতে পারবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আপনারা আপনাদের আধিপত্য বজায় রাখতে সন্ত্রাসী চাদাঁবাজি করিয়ে থাকেন। খুন করিয়ে থাকেন। আপনাদের তৈরি টর্চার সেলে আমাদের সন্তানদের টর্চার করে থাকেন। এসব আর হতে দেওয়া হবে না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ টর্চার সেলে হামলা চালিয়ে একটি ইঁট পর্যন্ত খুলে নিয়ে আসবে।”

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে গণজমায়েত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণঞ্জ প্রেসকাবের সভাপতি কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ খেলাঘরের সভাপতি রথিন চক্রবর্তী, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক সভাপতি ভবানি শংকর রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি রোকনউদ্দিন আহম্মেদ, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, জেলা সিপিবি সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ, মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, কাউন্সিলর অসিত বরুন বিশ্বাস, মনিরুজ্জামান, সাগর, সাবেক কমিশনার দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, রফিউর রাব্বির ছোট ভাই ওয়াহিদ রেজা।

এখানে উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ থেকে নিখোঁজ থাকে ত্বকী। এরপর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ৯ মার্চ এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালিত হয়।

৫ দিনব্যাপি কর্মসূচির প্রথম দিন সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালায় ঘেরাও ও স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় শহীদ মিনারে নাগরিক শোকসভা, ১৩ মার্চ বুধবার দিনব্যাপি এলাকায় এলাকায় গণসংযোগ, ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম


Tuesday, March 12, 2013

টার্গেটেড কিলিং জামায়াতের একাত্তরের চরিত্র ফিরিয়ে এনেছে :আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী



আবার একটি নৃশংস ও নির্মম হত্যাকাণ্ড। এবারও নিরীহ ও নির্দোষ মানুষের প্রাণ গেল জামায়াতি খুনিদের হাতে। তাঁর নাম মিরাজ আহমেদ। পঞ্চাশের মতো বয়স। কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর পরিচয় তিনি সুরকার ও গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের সর্দার গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, তার একজন সাক্ষী। এই সাক্ষীকে হত্যা করা যায়নি। তাই আক্রোশ মেটানো হলো তাঁর ছোট ভাইকে হত্যা করে।

দুই দিন আগে নারায়ণগঞ্জেও তাই করা হয়েছে। প্রজন্ম চত্বরের এক ব্লগারের কিশোরপুত্র ত্বকীকে হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সভ্যজগতে এ ধরনের পাশবিক খুনখারাবির তুলনা খুঁজে পাওয়া সহজে যাবে না। প্রথমে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে চাপাতি ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, তারপর আরেক ব্লগার প্রতিভাবান তরুণ ইঞ্জিনিয়ার রাজীবকে একই পদ্ধতিতে হত্যা। তৃতীয় দফায় আরেক সংগঠকের অসাধারণ মেধাবী ছেলে কিশোর ত্বকীকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া। তারপর দেশের খ্যাতিমান সুরকার বুলবুলের ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা একটি কথাই স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, জামায়াতিরা (এবার সঙ্গে হিযবুত তাহ্‌রীরসহ তাদের সহযোগী দলগুলো) তাদের একাত্তরের ঘাতক চরিত্রে ফিরে গেছে।

একাত্তরে জামায়াতিরা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যায় সহযোগী হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজিত করা অসম্ভব জেনে দেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে হত্যা করে। এবারও তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিদানের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ প্রজন্ম চত্বরের বিশাল যুব-জনতার মোকাবিলা করতে না পেরে একদিকে শহরে-বন্দরে পকেট-সন্ত্রাস সৃষ্টি এবং অন্যদিকে দেশের তরুণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা শুরু করেছে। কারণ এই তরুণ বুদ্ধিজীবীরাই প্রজন্ম চত্বরের প্রেরণা ও প্রাণ। জামায়াতিদের ধারণা, এই তরুণ ব্লগার তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা গেলে প্রজন্ম চত্বর ভীতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের সমাবেশ ভেঙে যাবে।

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষিত হওয়ার পর পালের গোঁদা গোলাম আযমও যাতে একই দণ্ডাদেশ না পায় সে জন্য জামায়াতিরা পাগল হয়ে উঠেছে। এই মামলার সাক্ষীকে মেরে অথবা তাঁকে না পেলে তাঁর ভাই বা সন্তানকে হত্যা করে জামায়াতিরা যুদ্ধাপরাধ মামলার সব সাক্ষীর মনে ভয় ঢুকাতে চায়। যাতে তাঁরা ট্রাইব্যুনালে এই ঘাতক ও দালালদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেন অথবা সাক্ষ্য দিলেও তা প্রত্যাহার করেন। সন্দেহ নেই, দেশের প্রখ্যাত সুরকার ও গোলাম আযমের মামলায় তার বিরুদ্ধ-সাক্ষী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা করা জামায়াতের পৈশাচিক হত্যার রাজনীতির আরেকটি প্রমাণ। সম্ভবত সুরকার বুলবুলকেও তারা হত্যার চেষ্টা করবে। গোলাম আযমের অপরাধের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ তারা মুছে ফেলতে চায়।

সরকারের তাই উচিত, অবিলম্বে তাঁর এবং অন্য সব সাক্ষীকে কঠোর নিরাপত্তাদানের ব্যবস্থা করা।
গোলাম আযমের মামলায় যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, রায়ের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনের ওপর যেভাবে হুমকি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তেমনি হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় তাঁর বিরুদ্ধের সাক্ষীদের ওপরও। সাঈদীর মামলায় বহু সাক্ষীকে একদিকে প্রলোভন দেখানো, অন্যদিকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। প্রচুর অর্থ ও অন্যান্য প্রলোভনে বশীভূত হয়ে কোনো কোনো সাক্ষী নাকি তাঁদের দেওয়া সাক্ষ্য পরে প্রত্যাহার করেছেন এবং জীবননাশের হুমকির মুখে কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার কোনো কোনো সাক্ষীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ জানতে পেরেছি।

১৯৭১ সালে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় শরিক হতে জামায়াত সাহস পেয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে। কিন্তু ২০১৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট যখন ক্ষমতায়, তখন জামায়াত সারা দেশে পকেট-সন্ত্রাস ও টার্গেটেড কিলিং চালানোর সাহস পায় কোথা থেকে? জবাবটি সবারই জানা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রথমে অপ্রকাশ্যে এবং এখন প্রকাশ্যে জামায়াতের সব ধরনের নাশকতামূলক কাজে সমর্থন ও সহায়তা দেওয়ায় তারা এখন শেষ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমি জামায়াতের এই হিংস্র জঙ্গিপনার নাম দিয়েছি, Jaamat's last ditch battle (জামায়াতের শেষ পরিখাযুদ্ধ)।

এই যুদ্ধের জন্য জামায়াত বহু দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিশাল গণম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর ধরেই নিয়েছিল ১৯৭১ সালের নরপশু যুদ্ধাপরাধীদের তারা বিচার ও দণ্ড থেকে বাঁচাতে পারবে না। এই বিচার ভণ্ডুল করার জন্য বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াত সৌদি অর্থ ও পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সহায়তায় নিজস্ব সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে মার্কিন হামলার মুখে পলাতক কিছু সংখ্যক তালেবানপন্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদের দিয়ে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা থেকে (বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকেও) ক্যাডার রিক্রুট দ্বারা হিযবুত তাহ্‌রীর, জয়শ-ই মোহাম্মদী ইত্যাদি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে। যেমন তারা করেছিল ১৯৭১ সালে আলবদর, আলশামস, রাজাকার ইত্যাদি নামে বিভিন্ন ঘাতক বাহিনী। বাংলাভাইয়ের মতো কিছু ঘাতক সন্ত্রাসীও তারা পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি করেছিল।

বাংলাদেশে সাবেক বিএনপি সরকারের অভিভাবকত্বে পাকিস্তান থেকে পলাতক জঙ্গি দিয়ে বাংলাদেশেও তালেবান সৃষ্টি এবং তাদের অভ্যুত্থান ঘটানোর যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি প্রভাবশালী কাগজ, যেমন 'ফার ইস্টার্ন ইকনোমিক রিভিউ,' 'ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল', 'লা মান্তে' ইত্যাদিতে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এই তালেবানি অভ্যুত্থানের বিপদাশঙ্কা সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
এই সতর্কবাণীতে কান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন অনুভব করেননি তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদীরা আছে, এ কথা বলায় শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন বলে অভিযোগ করেন এবং তাঁর সঙ্গে তখন কণ্ঠ মেলায় দুটি জাতীয় দৈনিকও। রবীন্দ্রনাথের 'ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের দুই লাইনের একটি কবিতা হলো : 'যতোক্ষণ দূরে থাকি বিদ্যুতের আলো বলে মোর নাম রটে,/মাথায় পড়িলে তবে বলে বজ বটে।'

বাংলাদেশেও প্রবলভাবে তালেবানি উপদ্রব দেখা না দেওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বিএনপি (সঙ্গে সাঙ্গাত জামায়াতিরা) এবং তাদের সমর্থক মিডিয়া বাংলাদেশে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব নেই বলে বগল বাজিয়েছে। এর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌলবাদী সন্ত্রাস, শেখ হাসিনার সভায় বোমা পুঁতে রাখার ব্যাপারে হিযবুত তাহ্‌রীরের সংশ্লিষ্টতা, সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনারের ওপর বোমা হামলা, বাংলাভাই ও তার আরেক সন্ত্রাসী সহযোগীর ফাঁসি ইত্যাদির পর অস্বীকার করা গেল না বাংলাদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদীদের শক্তিশালী ঘাঁটি আছে এবং তারা বিএনপির কাঁধে চড়ে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য অপেক্ষারত।

২০০৭ সালে যদি এক-এগারোর আবির্ভাব না হতো, বেগম খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে বসে ১৯৯৬ সালের মতো আরেকটি জালিয়াতি নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জামায়াতিদের নিয়ে আবার ক্ষমতায় বসতে পারতেন।

তাহলে এবার প্রকৃত ক্ষমতা আর বিএনপির হাতে থাকত না, চলে যেত জামায়াতি পার্টনারদের হাতে। আমেরিকায় ভয়াবহ ড্রোন হামলার মুখে পলাতক পাকিস্তানি টেরোরিস্টরা বাংলাদেশে ঢুকে তাদের দ্বিতীয় শক্তিশালী ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করত এ দেশটিতে। তাদের পশ্চাৎধাবন করে মার্কিন ড্রোন হামলা বাংলাদেশে এসেও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করলে বিস্ময়ের কিছু ছিল না। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের বিশাল জয়লাভ এই সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে।
ব্রিটেনের টোরি ও লেবার পার্টির মধ্যে এবং আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও গুরুতর রাজনৈতিক মতভেদ আছে। কিন্তু বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য তারা আপৎকালীন সময়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও তার গণতান্ত্রিক অস্তিত্বের জন্য জামায়াত বহিঃশত্রুর চেয়েও ভয়ানক এক শত্রু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সত্যটা তর্কাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

অন্তত এই একটা ইস্যুতে, অর্থাৎ বাংলাদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদ ও স্বাধীনতার শত্রুদের উল্লাস ঠেকানো এবং তাদের ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও শাস্তিদানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত এবং তাদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সীমাবদ্ধ থাকত নিজ নিজ রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে, তা হলে দেশে আজ এই ভয়ংকর অবস্থার উদ্ভব হতে পারত না। জামায়াতের পেছনে জনসমর্থন না থাকা এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার চলা সত্ত্বেও তারা দেশের নির্বাচিত সরকার, সংসদ, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন- সব কিছুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গৃহযুদ্ধের প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে মাঠে নামার এবং দেশময় সন্ত্রাস সৃষ্টি ও টার্গেটেড কিলিং শুরু করতে সাহসী হয়েছে। বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এ সাহস তারা দেখাতে পারত না; আর আকস্মিকভাবে দেখালেও এত দিনে পেছনে হটতে বাধ্য হতো।

বিএনপির নেতা-নেত্রীদের জানা উচিত, তাঁরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকারের বিরোধিতা করা হবে তাঁদের রাজনৈতিক ভূমিকা। বর্তমানে তাঁরা যা করছেন, তা সেই ভূমিকা নয়। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতার নামে তাঁরা যা করছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহী ও স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শত্রুতায় নামার ভূমিকা। তাঁদের এটা ভুল অথবা অপরাধ যাই হোক, এর মাশুল একদিন কড়ায়-গণ্ডায় দিতে হবে।

পবিত্র কোরআনে আছে, মক্কা শহর যখন প্রবল পরাক্রান্ত বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল এবং মক্কাবাসী শহরটি রক্ষার কোনো উপায়ই দেখছিল না, তখন আল্লাহর নির্দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবাবিল পাখি হাজারে হাজারে তীক্ষ্ন ও ধারালো পাথরকণা ঠোঁটে নিয়ে মক্কার আকাশে জড়ো হয়েছিল। তাদের নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে আহত ও ভীত শত্রুরা পলায়ন করে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। আমি বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালে জামায়াতিদের এই পূর্বপরিকল্পিত ও দীর্ঘ প্রস্তুতির হামলার সময় শাহবাগে আকস্মিকভাবে গড়ে ওঠা যুব-জনতার বিশাল সমাবেশের প্রত্যেক নরনারী, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে বাংলাদেশ রক্ষার জন্য এই আবাবিল পাখি মনে করি। সরকার কঠোর ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকলে এই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশের প্রতিরোধেই জামায়াত ও স্বাধীনতার শত্রুদের অ্যাক্সিস তাদের সন্ত্রাস ও নৃশংস হত্যা-অভিযান ব্যর্থ হবে, যেমন তারা হয়েছে ১৯৭১ সালে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ডদান বন্ধ করার জন্য জামায়াত প্রচণ্ড পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিকল্পনা মতো বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদী বি্লৎসক্রিগ (ঝটিকা আক্রমণ) শুরু করেছে, তা বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে অথবা ব্যর্থ হতে যে চলেছে, তা এখন সম্পূর্ণ স্পষ্ট। জনসমর্থনের বদলে তারা এখন পাচ্ছে জনঘৃণা।
আন্দোলনের নামে দেশময় অরাজকতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েই জামায়াত চূড়ান্ত পরাজয়ের মুখে গুপ্তহত্যা ও তরুণ বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করেছে। যেমন তারা করেছিল ১৯৭১ সালে পরাজিত হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের (১৬ ডিসেম্বর) দুই দিন আগে, ১৪ ডিসেম্বর তারিখ বুদ্ধিজীবী হত্যা দ্বারা। জামায়াত তার ১৯৭১ সালের ঘাতক চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে ফিরে গেছে। হাসিনা সরকারকে এখানেই দারুণভাবে কঠোর হতে হবে। জামায়াতের কিলিং স্কোয়াডের প্রত্যেকটি নরপশুকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া এবং শাহবাগের তরুণ বুদ্ধিজীবী ব্লগার ও যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় করণীয়। রাজীব, ত্বকী, মিরাজের আত্মদান অবশ্যই বিফলে যাবে না। উৎসঃ কালের কন্ঠ

টার্গেটেড কিলিং জামায়াতের একাত্তরের চরিত্র ফিরিয়ে এনেছে :আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী



আবার একটি নৃশংস ও নির্মম হত্যাকাণ্ড। এবারও নিরীহ ও নির্দোষ মানুষের প্রাণ গেল জামায়াতি খুনিদের হাতে। তাঁর নাম মিরাজ আহমেদ। পঞ্চাশের মতো বয়স। কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর পরিচয় তিনি সুরকার ও গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের সর্দার গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, তার একজন সাক্ষী। এই সাক্ষীকে হত্যা করা যায়নি। তাই আক্রোশ মেটানো হলো তাঁর ছোট ভাইকে হত্যা করে।

দুই দিন আগে নারায়ণগঞ্জেও তাই করা হয়েছে। প্রজন্ম চত্বরের এক ব্লগারের কিশোরপুত্র ত্বকীকে হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সভ্যজগতে এ ধরনের পাশবিক খুনখারাবির তুলনা খুঁজে পাওয়া সহজে যাবে না। প্রথমে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে চাপাতি ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, তারপর আরেক ব্লগার প্রতিভাবান তরুণ ইঞ্জিনিয়ার রাজীবকে একই পদ্ধতিতে হত্যা। তৃতীয় দফায় আরেক সংগঠকের অসাধারণ মেধাবী ছেলে কিশোর ত্বকীকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া। তারপর দেশের খ্যাতিমান সুরকার বুলবুলের ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা একটি কথাই স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, জামায়াতিরা (এবার সঙ্গে হিযবুত তাহ্‌রীরসহ তাদের সহযোগী দলগুলো) তাদের একাত্তরের ঘাতক চরিত্রে ফিরে গেছে।

একাত্তরে জামায়াতিরা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যায় সহযোগী হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজিত করা অসম্ভব জেনে দেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে হত্যা করে। এবারও তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিদানের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ প্রজন্ম চত্বরের বিশাল যুব-জনতার মোকাবিলা করতে না পেরে একদিকে শহরে-বন্দরে পকেট-সন্ত্রাস সৃষ্টি এবং অন্যদিকে দেশের তরুণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা শুরু করেছে। কারণ এই তরুণ বুদ্ধিজীবীরাই প্রজন্ম চত্বরের প্রেরণা ও প্রাণ। জামায়াতিদের ধারণা, এই তরুণ ব্লগার তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা গেলে প্রজন্ম চত্বর ভীতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের সমাবেশ ভেঙে যাবে।

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষিত হওয়ার পর পালের গোঁদা গোলাম আযমও যাতে একই দণ্ডাদেশ না পায় সে জন্য জামায়াতিরা পাগল হয়ে উঠেছে। এই মামলার সাক্ষীকে মেরে অথবা তাঁকে না পেলে তাঁর ভাই বা সন্তানকে হত্যা করে জামায়াতিরা যুদ্ধাপরাধ মামলার সব সাক্ষীর মনে ভয় ঢুকাতে চায়। যাতে তাঁরা ট্রাইব্যুনালে এই ঘাতক ও দালালদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেন অথবা সাক্ষ্য দিলেও তা প্রত্যাহার করেন। সন্দেহ নেই, দেশের প্রখ্যাত সুরকার ও গোলাম আযমের মামলায় তার বিরুদ্ধ-সাক্ষী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা করা জামায়াতের পৈশাচিক হত্যার রাজনীতির আরেকটি প্রমাণ। সম্ভবত সুরকার বুলবুলকেও তারা হত্যার চেষ্টা করবে। গোলাম আযমের অপরাধের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ তারা মুছে ফেলতে চায়।

সরকারের তাই উচিত, অবিলম্বে তাঁর এবং অন্য সব সাক্ষীকে কঠোর নিরাপত্তাদানের ব্যবস্থা করা।
গোলাম আযমের মামলায় যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, রায়ের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনের ওপর যেভাবে হুমকি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তেমনি হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় তাঁর বিরুদ্ধের সাক্ষীদের ওপরও। সাঈদীর মামলায় বহু সাক্ষীকে একদিকে প্রলোভন দেখানো, অন্যদিকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। প্রচুর অর্থ ও অন্যান্য প্রলোভনে বশীভূত হয়ে কোনো কোনো সাক্ষী নাকি তাঁদের দেওয়া সাক্ষ্য পরে প্রত্যাহার করেছেন এবং জীবননাশের হুমকির মুখে কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার কোনো কোনো সাক্ষীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ জানতে পেরেছি।

১৯৭১ সালে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় শরিক হতে জামায়াত সাহস পেয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে। কিন্তু ২০১৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট যখন ক্ষমতায়, তখন জামায়াত সারা দেশে পকেট-সন্ত্রাস ও টার্গেটেড কিলিং চালানোর সাহস পায় কোথা থেকে? জবাবটি সবারই জানা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রথমে অপ্রকাশ্যে এবং এখন প্রকাশ্যে জামায়াতের সব ধরনের নাশকতামূলক কাজে সমর্থন ও সহায়তা দেওয়ায় তারা এখন শেষ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমি জামায়াতের এই হিংস্র জঙ্গিপনার নাম দিয়েছি, Jaamat's last ditch battle (জামায়াতের শেষ পরিখাযুদ্ধ)।

এই যুদ্ধের জন্য জামায়াত বহু দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিশাল গণম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর ধরেই নিয়েছিল ১৯৭১ সালের নরপশু যুদ্ধাপরাধীদের তারা বিচার ও দণ্ড থেকে বাঁচাতে পারবে না। এই বিচার ভণ্ডুল করার জন্য বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াত সৌদি অর্থ ও পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সহায়তায় নিজস্ব সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে মার্কিন হামলার মুখে পলাতক কিছু সংখ্যক তালেবানপন্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদের দিয়ে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা থেকে (বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকেও) ক্যাডার রিক্রুট দ্বারা হিযবুত তাহ্‌রীর, জয়শ-ই মোহাম্মদী ইত্যাদি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে। যেমন তারা করেছিল ১৯৭১ সালে আলবদর, আলশামস, রাজাকার ইত্যাদি নামে বিভিন্ন ঘাতক বাহিনী। বাংলাভাইয়ের মতো কিছু ঘাতক সন্ত্রাসীও তারা পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি করেছিল।

বাংলাদেশে সাবেক বিএনপি সরকারের অভিভাবকত্বে পাকিস্তান থেকে পলাতক জঙ্গি দিয়ে বাংলাদেশেও তালেবান সৃষ্টি এবং তাদের অভ্যুত্থান ঘটানোর যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি প্রভাবশালী কাগজ, যেমন 'ফার ইস্টার্ন ইকনোমিক রিভিউ,' 'ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল', 'লা মান্তে' ইত্যাদিতে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এই তালেবানি অভ্যুত্থানের বিপদাশঙ্কা সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
এই সতর্কবাণীতে কান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন অনুভব করেননি তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদীরা আছে, এ কথা বলায় শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন বলে অভিযোগ করেন এবং তাঁর সঙ্গে তখন কণ্ঠ মেলায় দুটি জাতীয় দৈনিকও। রবীন্দ্রনাথের 'ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের দুই লাইনের একটি কবিতা হলো : 'যতোক্ষণ দূরে থাকি বিদ্যুতের আলো বলে মোর নাম রটে,/মাথায় পড়িলে তবে বলে বজ বটে।'

বাংলাদেশেও প্রবলভাবে তালেবানি উপদ্রব দেখা না দেওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বিএনপি (সঙ্গে সাঙ্গাত জামায়াতিরা) এবং তাদের সমর্থক মিডিয়া বাংলাদেশে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব নেই বলে বগল বাজিয়েছে। এর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌলবাদী সন্ত্রাস, শেখ হাসিনার সভায় বোমা পুঁতে রাখার ব্যাপারে হিযবুত তাহ্‌রীরের সংশ্লিষ্টতা, সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনারের ওপর বোমা হামলা, বাংলাভাই ও তার আরেক সন্ত্রাসী সহযোগীর ফাঁসি ইত্যাদির পর অস্বীকার করা গেল না বাংলাদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদীদের শক্তিশালী ঘাঁটি আছে এবং তারা বিএনপির কাঁধে চড়ে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য অপেক্ষারত।

২০০৭ সালে যদি এক-এগারোর আবির্ভাব না হতো, বেগম খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে বসে ১৯৯৬ সালের মতো আরেকটি জালিয়াতি নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জামায়াতিদের নিয়ে আবার ক্ষমতায় বসতে পারতেন।

তাহলে এবার প্রকৃত ক্ষমতা আর বিএনপির হাতে থাকত না, চলে যেত জামায়াতি পার্টনারদের হাতে। আমেরিকায় ভয়াবহ ড্রোন হামলার মুখে পলাতক পাকিস্তানি টেরোরিস্টরা বাংলাদেশে ঢুকে তাদের দ্বিতীয় শক্তিশালী ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করত এ দেশটিতে। তাদের পশ্চাৎধাবন করে মার্কিন ড্রোন হামলা বাংলাদেশে এসেও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করলে বিস্ময়ের কিছু ছিল না। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের বিশাল জয়লাভ এই সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে।
ব্রিটেনের টোরি ও লেবার পার্টির মধ্যে এবং আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও গুরুতর রাজনৈতিক মতভেদ আছে। কিন্তু বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য তারা আপৎকালীন সময়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও তার গণতান্ত্রিক অস্তিত্বের জন্য জামায়াত বহিঃশত্রুর চেয়েও ভয়ানক এক শত্রু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সত্যটা তর্কাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

অন্তত এই একটা ইস্যুতে, অর্থাৎ বাংলাদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদ ও স্বাধীনতার শত্রুদের উল্লাস ঠেকানো এবং তাদের ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও শাস্তিদানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত এবং তাদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সীমাবদ্ধ থাকত নিজ নিজ রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে, তা হলে দেশে আজ এই ভয়ংকর অবস্থার উদ্ভব হতে পারত না। জামায়াতের পেছনে জনসমর্থন না থাকা এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার চলা সত্ত্বেও তারা দেশের নির্বাচিত সরকার, সংসদ, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন- সব কিছুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গৃহযুদ্ধের প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে মাঠে নামার এবং দেশময় সন্ত্রাস সৃষ্টি ও টার্গেটেড কিলিং শুরু করতে সাহসী হয়েছে। বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এ সাহস তারা দেখাতে পারত না; আর আকস্মিকভাবে দেখালেও এত দিনে পেছনে হটতে বাধ্য হতো।

বিএনপির নেতা-নেত্রীদের জানা উচিত, তাঁরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকারের বিরোধিতা করা হবে তাঁদের রাজনৈতিক ভূমিকা। বর্তমানে তাঁরা যা করছেন, তা সেই ভূমিকা নয়। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতার নামে তাঁরা যা করছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহী ও স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শত্রুতায় নামার ভূমিকা। তাঁদের এটা ভুল অথবা অপরাধ যাই হোক, এর মাশুল একদিন কড়ায়-গণ্ডায় দিতে হবে।

পবিত্র কোরআনে আছে, মক্কা শহর যখন প্রবল পরাক্রান্ত বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল এবং মক্কাবাসী শহরটি রক্ষার কোনো উপায়ই দেখছিল না, তখন আল্লাহর নির্দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবাবিল পাখি হাজারে হাজারে তীক্ষ্ন ও ধারালো পাথরকণা ঠোঁটে নিয়ে মক্কার আকাশে জড়ো হয়েছিল। তাদের নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে আহত ও ভীত শত্রুরা পলায়ন করে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। আমি বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালে জামায়াতিদের এই পূর্বপরিকল্পিত ও দীর্ঘ প্রস্তুতির হামলার সময় শাহবাগে আকস্মিকভাবে গড়ে ওঠা যুব-জনতার বিশাল সমাবেশের প্রত্যেক নরনারী, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে বাংলাদেশ রক্ষার জন্য এই আবাবিল পাখি মনে করি। সরকার কঠোর ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকলে এই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশের প্রতিরোধেই জামায়াত ও স্বাধীনতার শত্রুদের অ্যাক্সিস তাদের সন্ত্রাস ও নৃশংস হত্যা-অভিযান ব্যর্থ হবে, যেমন তারা হয়েছে ১৯৭১ সালে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ডদান বন্ধ করার জন্য জামায়াত প্রচণ্ড পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিকল্পনা মতো বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদী বি্লৎসক্রিগ (ঝটিকা আক্রমণ) শুরু করেছে, তা বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে অথবা ব্যর্থ হতে যে চলেছে, তা এখন সম্পূর্ণ স্পষ্ট। জনসমর্থনের বদলে তারা এখন পাচ্ছে জনঘৃণা।
আন্দোলনের নামে দেশময় অরাজকতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েই জামায়াত চূড়ান্ত পরাজয়ের মুখে গুপ্তহত্যা ও তরুণ বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করেছে। যেমন তারা করেছিল ১৯৭১ সালে পরাজিত হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের (১৬ ডিসেম্বর) দুই দিন আগে, ১৪ ডিসেম্বর তারিখ বুদ্ধিজীবী হত্যা দ্বারা। জামায়াত তার ১৯৭১ সালের ঘাতক চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে ফিরে গেছে। হাসিনা সরকারকে এখানেই দারুণভাবে কঠোর হতে হবে। জামায়াতের কিলিং স্কোয়াডের প্রত্যেকটি নরপশুকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া এবং শাহবাগের তরুণ বুদ্ধিজীবী ব্লগার ও যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় করণীয়। রাজীব, ত্বকী, মিরাজের আত্মদান অবশ্যই বিফলে যাবে না। উৎসঃ কালের কন্ঠ

Monday, March 11, 2013

আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা মোবারকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন:জামিন বাতিল করে জেলে পাঠালো ট্রাইব্যুনাল



ঢাকা : ৭১এ মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ ৫ ধরনের অভিযোগে হাজী মোবারকের জামিন বাতিল করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযুক্ত মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করার পরে এই আদেশ দেন।তবে তার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মোবারক হোসেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের রুকন ছিলেন। আখাউড়া থানার নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে পরবর্তীত আওয়ামী লীগ যোগ দেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে (চার্জ) অভিযোগ গঠন করার জন্য দিন ধার্য করে দিয়েছেন আদালত।
প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান বলেন আজ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে এই আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে বলে আদালত জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছে প্রসিকিউশন ,
১১ মার্চ পর্যন্ত তার জামিনের মেয়াদ ছিল আজ তার বিরুদ্ধে জামিন বাতিল করেন আদালত। আজ শুনানিতে তার আইনজীবী জামিন মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে তা খারিজ করেন আদালত। ট্রাইব্যুনালে মোবারকের পক্ষে শুনানী করেন অ্যাডভোকেট মহিবুর রহমান ও বিরোধীতা করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।
২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত হত্যা,গণহত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের অভিযোগে ৩৩ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।
মোবারকের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন গ্রামবাসী আব্দুল খালেকের লাশ পাশ্ববর্তী খাল থেকে উদ্ধার করে। আরজিতে উল্লেখ করা হয়, যারা ডেকে নেয় তাদের মধ্যে আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মোবারক এবং জমশেদ মিয়া ছিল।নিহত আব্দুল খালেকের কন্যা খোদেজা বেগম ২০০৯ সালের ৩ মে ব্রাক্ষণবাড়িয়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মোবারক হোসেন ১৩ মে ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের আগাম জামিন নেন।পরে ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায় এবং মামলার নথিপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়।
পরে গত ৬ জুন আসামিপক্ষের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে আপিল মোকাদ্দমা দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল এ মামলার নথিপত্র তলব করে। পরে তদন্তে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসে।
তার বিষয়ে ৬ মাস ৭দিন তদন্ত শেষে মোট ৪ ভলিয়মে ২৯৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থা জানায় মোবারকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোবারকের বিরুদ্ধে ২০১২সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত করেন কর্মকর্তা শ্যামল চৌধুরী। তদন্তকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোবারকের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ ৫ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে।তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের মধ্যে আখাউড়া থানাধীন টানমান্দাইল ও জাঙ্গাইল গ্রামে ৩৩ জনকে গণহত্যা, আনন্দময়ী কালীবাড়ী রাজাকার ক্যাম্পে আশু রঞ্জন দেবকে নির্যাতন, ছাতিয়ানা গ্রামের শহীদ আব্দুল খালেককে হত্যা, শ্যামপুর গ্রামের ২জনকে অপহরণ করে ১জনকে হত্যা এবং খরমপুর গ্রামের ১ জনকে আটক রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
তদন্তকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৩ জনকে গণহত্যা, ২ জনকে হত্যা, ২ জনকে অপহরণসহ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এসব অভিযোগ ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত হয়েছে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়।
১৯৭১ সালের একটি হত্যা মামলায় আটক ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোবারক হোসেনের জামিন আবেদনের শুনানি হয় গত ১১ জুলাই। ওইদিন আসামীপক্ষ ও প্রসিকিউশন বিষয়টির ওপর শুনানি শেষে ১৬ জুলাই তাকে জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর কয়েক দফা তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

Saturday, March 9, 2013

আমরা সশস্ত্র হবো অজস্র মৃত্যুতে... . সুমি খান






মন খুব ই বিক্ষিপ্ত। এভাবে আমাদের মেধাবী সন্তানদের হারাতে হবে কেন?আর কতো কাল?
ত্বকি..... এই জিনিয়াস ছেলেটা কে মায়ের কোল থেকে বাবার বুক থেকে ছিনিয়ে নিলো যারা- তারা কি জানে তারা এ দেশের কতো বড়ো সর্বনাশ করেছে?
নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রিপোর্টিং করতে নারায়ন গঞ্জে ছিলাম দু’দিন। সেমময় রাব্বি ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। সন্ত্রাসের জনপদ নারায়নগঞ্জকে শান্তির জনপদে পরিণত করার জন্যে ডা.সেলিনা হায়াত আইভি কে নাগরিক সমাজের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করার জন্যে মূল সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন রাফিউর রাব্বি ভাই। এতো ত্যাগী, মেধাবী এবং সুসংগঠক দেশে খুব কমই আছে। জামাত শিবির সহ সব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অথচ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সংগঠিত করা সম্ভব- তার অনন্য দৃষ্টান্ত রাব্বি ভাই। সেদিন থেকে মিতভাষী এই মানুষ টা কে মনে মনে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছি। যে কোন জায়গায় এ্যাসাইনমেন্ট শেষ হয়ে গেলে ও যোগাযোগ থেকে যায় আমার সাথে। একই ভাবে নারায়নগঞ্জের মানুষগুলোর সাথে ও যোগাযোগ ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল বদলানোর পর নারায়নগঞ্জের প্রিয় মানুষদের মোবাইল নাম্বার গুলো নেই। নারায়নগঞ্জে হত্যাকান্ড ঘটেছে শোনার পর উদ্বিগ্ন হয়েছি, আমাদের আপন কারো কিছু হয়েছে বুঝতে পেরেছি। জানতে পারলাম রাব্বি ভাইয়ের মেধাবী কিশোর সন্তান কে হত্যা করা হয়েছে। ..... স্তব্ধ, নির্বাক আমি...... চোখের কোল বেয়ে জলের ধারা। কাইকে বুঝাতে পারবো না বুকের ভেতর সে কী প্রচন্ড ঝড় বয়ে চলেছে। প্রতিবাদের ক্ষোভের আগুন বুকে জ্বালা ধরিয়ে দিলো।
তখন আমি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পাশে। ৪.৪৮ মিনিটে পরপর বিকট শব্দে ককটেল বিষ্ফোরণ। ছুটোছুটি, হুড়োহুড়ি...আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নারী বিষয়ক সম্পাদক আইরিন নিয়াজি মান্না সহ কয়েকজনের অনেকেই নেই। সাংবাদিক শাহিন ছিলেন। অচেনা সাধারণ নারীরা ছিলেন । গগন বিদারী শ্লোগান দিলাম জয়.... বাংলা... !! জামাত শিবির রাজাকার-এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়‍!!এতোটুকু ভয় লাগেনি মনের কোণায়।
মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দেশের শীর্ষ নারী নেত্রীদের...!


চোখ বারবার জলে ভিজে গেলো।হায় দুর্ভাগা দেশ আমাদের। কেন আমাদের সন্তানহারা হতে হলো??এই ফুটফুটে নিষ্পাপ কিশোরের বাবা- মা স্বজনেরাই শুধু নয়; বন্ধু, শিক্ষক সবাইকে শূণ্য করে দেয়া হলো। সারা দেশে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলো ত্বকী!
আজ সকালেই যেতে চেয়েছিলাম নারায়নগঞ্জ, হরতালের কারণে পারলাম না। জানিনা কখন যেতে পারবো। প্রাণপণে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে....
এতোটা শূণ্যতা ... এতোটা বেদনা ...... মনকে শুধু বলি- আমরা সশস্ত্র হবো অজস্র মৃত্যুতে...
.

Tuesday, March 5, 2013

Venezuela announces death of president Hugo Chavez

Venezuela announces death of president Hugo Chavez

আজ আমাদের জন্য দারুণ এক বেদনার দিন :বিদায় হুগো শ্যাভেজ


প্রায় দুই বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ।



ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো মঙ্গলবার রাতে এই লাতিন নেতার মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যমকে জানান।

৫৮ বছর বয়সী শ্যাভেজ ১৪ বছর ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব দেন। এই সাম্যবাদী নেতা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নীতির একজন কড়া সমালোচক।

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে মাদুরো বলেন, “আজ আমাদের জন্য দারুণ এক বেদনার দিন।”

দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারাও এ সময় তার পাশে ছিলেন।

গত মাসে কিউবা থেকে ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি শ্যাভেজকে।

মাদুরো এর আগে জানিয়েছিলেন, শ্যাভেজের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। ভেনিজুয়েলান নেতা ‘কঠিনতম প্রহর’ পার করছেন।
প্রেসিডেন্টের মৃত্যুসংবাদ ঘোষণার পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীতে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণাও দেন তিনি।

জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি- জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞের ৩ লক্ষ্য


যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা এবং দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর দাবির কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আর এজন্য নিজেদের জানা একমাত্র কৌশলটিই তারা ব্যবহার করছে- চালাচ্ছে সহিংসতা, আরো সহিংসতা।

গত কয়েক দিনের এই সহিংসতাকে সামাজিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বা স্বতঃস্ফূর্ত কিছু বলা যাবে না। বরং এর পেছনে দেখা গেছে সতর্ক পরিকল্পনার ছাপ। হামলার লক্ষ্যবস্তুও বাছাই করা হয়েছে খুবই পরিকল্পিতভাবে।

গত বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর যে সহিংসতা শুরু করেছে- তাতে তাদের তিনটি লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট। জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিই তাদের উদ্দেশ্য।

এর প্রথমটিতে সারা দেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে বিপর্যস্ত করে জেলাগুলোর ওপর ঢাকার নিয়ন্ত্রণ ও চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করে জামায়াত। হরতালে রেল যোগাযোগ তেমন একটা ব্যাহত হয় না বলে রেলপথকে বেছে নেয়া হয় হামলার অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে। পাশাপাশি সড়কপথেও চলে নাশকতা। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা; যোগাযোগ কাঠামো ভেঙে দিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলা।

পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার হাতিয়ার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর ওপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালায় জামায়াত। পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে, সদস্যদের হত্যা করে তাদের মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা চলে। এসব ঘটনা যে অনেক সময় প্রাণঘাতী প্রতিরোধের সম্ভাবনাকে উস্কে দেয়, সে বিষয়টিকেও আমলে নেয়নি জামায়াত।

১৯৭০-৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গে নকশালরা রাজপথে হামলার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল পুলিশকে। আর তার সমাপ্তি ঘটেছিল পুলিশের পক্ষ থেকে আরো সহিংস জবাবের মধ্য দিয়ে। এখানে একটি বিষয় হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়, তখন রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশ তারা আর মানে না। তখন তারা প্রতিশোধ চায়। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে জামায়াত-শিবিরের বহু কর্মী নিহতের ঘটনার একটি ব্যাখ্যা হয়তো এর মধ্যে দিয়ে পাওয়া যায়।

তৃতীয়ত, হিন্দু গ্রাম ও মন্দিরে হামলা চালিয়ে জামায়াত আবারো ধর্মীয় উন্মাদনা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। শাহবাগের আন্দোলনকর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর তাকে 'মুরতাদ' ও 'নাস্তিক' আখ্যা দিয়ে সেই ‘একই কার্ড’ খেললেও ব্যর্থ হয় জামায়াত। এ ধরনের হামলা যদি প্রতিরোধ করা না যায়, তাহলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। হিন্দুরা দেশত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। জামায়াত আশা করেছিল, এভাবে হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়ে সবার নজর ঘুরিয়ে দিয়ে তারা হয়তো তাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে উত্তাপ এড়াতে পারবে। আর এভাবে জাতীয় পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল তারা।

জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি- এই তিন লক্ষ্য পূরণের মধ্য দিয়ে আরেকটি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ থেকে সারা দেশে তারুণ্যের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কক্ষচ্যুত করাই ছিল সেই লক্ষ্য। ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা চালিয়ে জামায়াত শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের স্মৃতিই ফিরিয়ে আনেনি, সরকারকেও চাপে ফেলতে চেয়েছে।

হিসাব কষে জামায়াত হয়তো আশা করেছে, জনজীবনে বিপর্যয় ঘটিয়ে বেসামরিক প্রশাসনকে টলিয়ে দিতে পারলে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণের পথ তৈরি হবে। কিন্তু এতে উল্টো ফলও আসতে পারে, যা হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী।

Sunday, March 3, 2013

রাজীব হত্যাকারী পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে:সাত দিনের রিমান্ডে


ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এই দলের আরও দুজনকে পুলিশ খুঁজছে।নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বেলাল আহমেদের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে।

সাত দিনের রিমান্ডে গ্রেপ্তার ছাত্ররা
ডিবির উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আজ শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ডিবি কার্যালয়ে শনিবার এ ব্যাপারে সংবাদ ব্রিফিং করা হয়। সেখানে জানানো হয়, ডিবি পুলিশ মো. ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ (২২), মো. মাকসুদুল হাসান অনিক (২৩), মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), মো. নাঈম সিকদার ইরাদ (১৯) ও নাফিস ইমতিয়াজকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা সবাই বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্ররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজকক্ষে নামাজ পড়তে গিয়ে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হন। সেই সূত্রে তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতেন।
ডিবির দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্ররা জানিয়েছেন, তাঁদের দলের এক বন্ধু একসময় বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁদের কিছু ব্লগের ঠিকানা দেন। সেখান থেকেই তাঁরা ‘থাবা বাবা’সহ কয়েকজন ব্লগারের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন এবং ‘থাবা বাবা’ নামধারী ব্লগারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের পলাশনগর এলাকার নিজ বাসার সামনের রাস্তায় রাজীবকে খুন করেন তাঁরা।

রাজীবকে হত্যার জন্য দুটি দল গঠন?

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্ররা পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাটি সম্পর্কে তাদের জানিয়েছে। সে ভাষ্য অনুযায়ী, রাজীবকে হত্যার পরিকল্পনার পর তাঁরা ‘ইনটেল গ্রুপ’ গঠন করেন। এই দলের কাজ ছিল ব্লগ ও ফেসবুক থেকে তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা ও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। আর রাজীবকে হত্যার জন্য তাঁরা ‘এক্সিকিউশন গ্রুপ’ গঠন করেন। প্রায় এক মাস তাঁরা রাজীবকে অনুসরণ করেছেন।

যেভাবে তাঁরা রাজীবকে খুন করেন

ডিবি পুলিশের কাছে দেওয়া ওই ছাত্রদের ভাষ্যমতে, ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে যান এবং ব্লগার রাজীবকে খোঁজা শুরু করেন। এর এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রাজীবের বন্ধুদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে তাঁরা রাজীবকে চিনতে পারেন। এরপর এই দলের সদস্য মো. এহসান রেজা রুম্মন শাহবাগ থেকে সাইকেলে করে বাসে ওঠা রাজীবকে অনুসরণ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যান। তিনি প্রথম দিন রাজীবের বাসা চিহ্নিত করতে পারেননি। পরে আবার তাঁকে অনুসরণ করে পলাশনগরের বাসাটি চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
এরপর কয়েক দিন ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা পলাশনগর এলাকায় রেকি করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা রাজীব কখন বাসায় আসেন, কখন বের হন, কার সঙ্গে ঘোরাফেরা করেন এবং কী ধরনের কাজ করেন—সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।
এই দলের সদস্য মো. মাকসুদুল হাসান অনিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র কেনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি নিজেই বাড্ডা নতুন বাজারের একটি দোকান থেকে চাপাতি ও ছোরা কেনেন। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে ১৫ ফেব্রুয়ারি দলের সদস্যরা সাইকেল ও বাসে চড়ে বিকেল চারটার দিকে পলাশনগরে রাজীবদের বাসার গলিতে অবস্থান নেন স্কুলব্যাগ, ক্রিকেটের ব্যাট ও বল নিয়ে। তাঁরা গলিতে ক্রিকেট খেলতে থাকেন এবং রাজীবের বাসায় ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
সন্ধ্যার দিকে রাজীব বাসার গেটের কাছাকাছি পৌঁছার পর এক্সিকিউশন গ্রুপের সদস্য মো. ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, মো. মাকসুদুল হাসান অনিক চাপাতি ও ছোরা দিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তাঁরা দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান এবং একটি চাপাতি রাস্তার মোড়ের পানের দোকানের সামনে ফেলে যান। এলোপাতাড়ি কোপ মো. মাকসুদুল হাসান অনিকের পায়ের জুতায় লেগে পায়ের বুড়ো আঙুলের কিছু অংশ কেটে যায় এবং তিনি কাকরাইলে গিয়ে জুতা জোড়া জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড়ে ফেলে যান। এ ছাড়া তাঁরা একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের নালায় ফেলে যান।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত সরঞ্জাম উদ্ধার

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত দুটি চাপাতি, চারটি ছোরা, একটি বাইসাইকেল, এক জোড়া কেডস, সাতটি বিভিন্ন মডেলের মুঠোফোন ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইলে জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড় থেকে জুতা জোড়া উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের নালা থেকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের বিস্তারিত তথ্য

ফয়সালের বাড়ি ঢাকার মাতুয়াইলে। তিনি কোডা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাকসুদুলের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। তিনি ম্যাপললিফ থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁরা দুজনই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। এহসানের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় ও নাঈমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁরা উভয়েই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। নাফিসের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তিনি সানশাইন গ্রামার স্কুল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএতে ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বিভিন্ন এলাকায় অভিযান

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য পশ্চিম বিভাগের ডিসি মোল্লা নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এডিসি মশিউর রহমান, এডিসি মানস কুমার পোদ্দার ও জ্যেষ্ঠ এসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির একাধিক দল ঢাকার কাকরাইল, বারিধারা, বসুন্ধরা, পান্থপথ ও খিলগাঁও এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজীব হত্যায় জড়িত সন্দেহে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন রাজীব

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের পলাশনগরে নিজ বাড়ির সামনে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এ ব্যাপারে পল্লবী থানায় মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে।
প্রাথমিক তদন্তে হত্যার সঙ্গে সাতজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় ডিবি পুলিশ। পলাতক অন্য দুজনকে ধরতে পুলিশ তত্পরতা - See more at: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-02/news/333300#sthash.ER0PlaLV.dpuf