Monday, March 11, 2013

আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা মোবারকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন:জামিন বাতিল করে জেলে পাঠালো ট্রাইব্যুনাল



ঢাকা : ৭১এ মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ ৫ ধরনের অভিযোগে হাজী মোবারকের জামিন বাতিল করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযুক্ত মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করার পরে এই আদেশ দেন।তবে তার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মোবারক হোসেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের রুকন ছিলেন। আখাউড়া থানার নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে পরবর্তীত আওয়ামী লীগ যোগ দেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে (চার্জ) অভিযোগ গঠন করার জন্য দিন ধার্য করে দিয়েছেন আদালত।
প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান বলেন আজ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে এই আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে বলে আদালত জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছে প্রসিকিউশন ,
১১ মার্চ পর্যন্ত তার জামিনের মেয়াদ ছিল আজ তার বিরুদ্ধে জামিন বাতিল করেন আদালত। আজ শুনানিতে তার আইনজীবী জামিন মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে তা খারিজ করেন আদালত। ট্রাইব্যুনালে মোবারকের পক্ষে শুনানী করেন অ্যাডভোকেট মহিবুর রহমান ও বিরোধীতা করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।
২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত হত্যা,গণহত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের অভিযোগে ৩৩ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।
মোবারকের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন গ্রামবাসী আব্দুল খালেকের লাশ পাশ্ববর্তী খাল থেকে উদ্ধার করে। আরজিতে উল্লেখ করা হয়, যারা ডেকে নেয় তাদের মধ্যে আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মোবারক এবং জমশেদ মিয়া ছিল।নিহত আব্দুল খালেকের কন্যা খোদেজা বেগম ২০০৯ সালের ৩ মে ব্রাক্ষণবাড়িয়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মোবারক হোসেন ১৩ মে ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের আগাম জামিন নেন।পরে ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায় এবং মামলার নথিপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়।
পরে গত ৬ জুন আসামিপক্ষের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে আপিল মোকাদ্দমা দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল এ মামলার নথিপত্র তলব করে। পরে তদন্তে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসে।
তার বিষয়ে ৬ মাস ৭দিন তদন্ত শেষে মোট ৪ ভলিয়মে ২৯৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থা জানায় মোবারকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোবারকের বিরুদ্ধে ২০১২সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত করেন কর্মকর্তা শ্যামল চৌধুরী। তদন্তকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোবারকের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ ৫ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে।তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের মধ্যে আখাউড়া থানাধীন টানমান্দাইল ও জাঙ্গাইল গ্রামে ৩৩ জনকে গণহত্যা, আনন্দময়ী কালীবাড়ী রাজাকার ক্যাম্পে আশু রঞ্জন দেবকে নির্যাতন, ছাতিয়ানা গ্রামের শহীদ আব্দুল খালেককে হত্যা, শ্যামপুর গ্রামের ২জনকে অপহরণ করে ১জনকে হত্যা এবং খরমপুর গ্রামের ১ জনকে আটক রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
তদন্তকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৩ জনকে গণহত্যা, ২ জনকে হত্যা, ২ জনকে অপহরণসহ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এসব অভিযোগ ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত হয়েছে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়।
১৯৭১ সালের একটি হত্যা মামলায় আটক ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোবারক হোসেনের জামিন আবেদনের শুনানি হয় গত ১১ জুলাই। ওইদিন আসামীপক্ষ ও প্রসিকিউশন বিষয়টির ওপর শুনানি শেষে ১৬ জুলাই তাকে জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর কয়েক দফা তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

No comments:

Post a Comment