Tuesday, March 19, 2013

‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা দিন: খালেদাকে ইনু



মঙ্গলবার পিআইডির সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। আমরা তো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। তাহলে ক্ষমতায় গিয়ে তিনি কাদের বিচার করবেন?” “প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা কি খালেদা জিয়ার কাছে আছে? আপনি কি জানেন না, জামায়াতে ইসলামের এই লোকগুলো একাত্তরে ঘোষণা দিয়ে, বিবৃতি দিয়ে, টিক্কা খান-ইয়াহিয়া খানের পাশে ছবি তুলে যুদ্ধাপরাধকে সমর্থন করেছিল,” প্রশ্ন করেন ইনু।

তিনি বলেন, “জামায়াতের এই নেতারা বাংলার সাত কোটি মানুষকে কাফের বলেছিল। মা-বোনদের ইজ্জত হরণে পাকিস্তানি সেনবাহিনী যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনকে ফতোয়া দিয়ে তারা জায়েজ করেছিল।

ক্ষমতায় গেলে ‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার যে কথা খালেদা জিয়া বলেছেন- তা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।

এ সময় খালেদার কথিত সেই ‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীদের তালিকাও প্রকাশের আহ্বান জানান মন্ত্রী।


এই বেলুন উড়ছে শহীদদের উদ্দেশে চিঠি নিয়ে। শাহবাগ আন্দোলনের ষষ্ঠদশ দিন বুধবার এই কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা।
খালেদা জিয়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে ‘নষ্টদের’ মঞ্চ অ্যাখ্যা দিয়ে সেখান থেকে ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার যে অভিযোগ করেছেন সে বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন।
তিনি জানতে চান, “ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগ যারা ব্যবহার করেন তারা কি নাস্তিক? তারা কি নষ্ট?”

“আপনার কাছ থেকে আমরা সত্য ভাষণ চাই। আপনি নাস্তিকদের তালিকা প্রকাশ করুন। সরকার কিভাবে নাস্তিক তা বলুন। নইলে আর নাস্তিক নাস্তিক বলবেন না,” বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে বলেন জাসদ সভাপতি ইনু।

সব ধরনের ‘অপপ্রচার, গুজব ও তথ্য সন্ত্রাস’ বন্ধের জন্য বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ইতিহাস বিকৃত করা খালেদা জিয়ার একটি হবি (শখ)।
উনি ইতিহাসে বিশ্বাস করেন না। জামায়াত-বিএনপি মিথ্যাচারকে স্বতন্ত্র শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।”

মন্ত্রীর ভাষায়, খালেদা জিয়া ও জামায়াত যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে যে অবস্থান নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার ও গুজব ছড়াচ্ছে, একাত্তরে পাকিস্তানীরাও একইভাবে মিথ্যাচার ও গুজবের আশ্রয় নিয়েছিল। বিএনপির ভিতরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতায় বিশ্বাসী নেতাকর্মীরা আছেন- এমন মন্তব্য করে ইনু বলেন, “তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।… আমি আশা করব, আপনারা সক্রিয় হবেন এবং আপনাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই মিথ্যাচার থেকে বিরত করে যুদ্ধপরাধীদের পক্ষ থেকে সরে আসার চেষ্টা চালাবেন।”

আর তাতে ব্যর্থ হলে জনগণের পক্ষ নিয়ে খালেদা জিয়াকে ত্যাগ করে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে তাকে বিরত থাকার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’ বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মন্ত্রী জানান, নবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তিকারীদের সনাক্ত করতে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনতে ইতোমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শিগগিরই যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরকারের কার্ক্রমকে ‘নাস্তিক্যবাদের’ সঙ্গে তুলনা করে খালেদা জিয়া ‘ধর্মবিরোধী কাজ’ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
যুদ্ধাপরাধের বিচার, বিচার প্রক্রিয়া ও আদালতের স্বচ্ছতা নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ এবং ধর্ম, গণজাগরণ মঞ্চ, পুলিশের কার্যক্রম, ইতিহাস, নির্বাচন, সংসদে বসা, সংসদ বর্জন ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত মিথ্যাচার করছে বলেও অভিযোগ করেন ইনু।

এছাড়া ভিটামিন ক্যাপসুল খেয়ে শিশুমৃত্যু ও চাঁদে সাঈদীকে দেখা যাওয়ার ‘গুজব ছড়িয়ে’ বিএনপি-জামায়াত ‘তথ্য সন্ত্রাস’ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এসব ‘মিথ্যাচার ও গুজবের’ বিভিন্ন দিক নিয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাত পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী।

জামায়াত নিষিদ্ধ করা ও অপপ্রচারকারী গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন আইন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ইনু বলেন, “আমরা নাজুক পরিস্থিতিতে দেশবাসীর কাছে বিরোধীদলের অগণতান্ত্রিক আচরণ তুলে ধরেছি।”অন্যদের মধ্যে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।


No comments:

Post a Comment