Saturday, February 21, 2015

এই একুশে-সুমি খান

এই একুশে বোমা পেট্রোলে
বামে আর ডানে বিশ-
এই একুশে পিতৃপুরুষ
নিঃশ্বাসে ফিসফিস্!


এই একুশে দুই বাংলার
 মিথ্যা কাঁটাতার
এই একুশে পদ্মা  গঙ্গা
তিস্তা সমাচার!


এই একুশে নাইদেশলোক
ছিটমহলে জিৎ-
এই একুশে নষ্ট মানুষ
নিজের ফাঁদেই চিৎ!


এই একুশের দিনজুড়ে
শুধু নিকষ হাহাকার-
রক্তবীজের ঋণ শুধে দিতে
তুমি
আমি একাকার!


বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট,২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
ঢাকা

Friday, February 20, 2015

হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার


‘‘হরতাল’’ একটি গণতান্ত্রিক অধিকার, আমরা তার সাথে ১০০% একমত।... একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে ‘‘হরতাল’’ পালনের সুযোগ থাকবে এটাই গণতন্ত্র। কিন্তু ‘হরতাল’ এর নামে দুর্বৃত্তরা লিপ্ত হয় সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে এবং গাড়ি ভাংচুর করে, আগুন দিয়ে, মানুষকে হত্যা করে, বোমা ফাটিয়ে, ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলে, গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করে যে ভাবে ‘‘হরতাল’’ পালনে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করা হয়, সেটা গণতান্ত্রিক অধিকার হতে পারে না।

 ‘‘হরতাল’’ এর সঠিক প্রয়োগ এবং হরতালের কার্যকারিতার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্যে এবং হরতালের নামে সহিংসতার সুযোগ কমানোর জন্যে কিছু সুনির্দিষ্ট ‘নীতিমালা ও আইনি বিধান প্রণয়ন’ এর জন্যে সরকারের কাছে আবেদন ও দাবী জানাবার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।আমাদের মহান সংবিধান এবং মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই নিতিমালা ও আইনি বিধান প্রণিত হলে একদিকে যেমন ‘হরতাল’ আহ্বান করার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা পাবে তেমনি অন্যদিকে সাধারন মানুষের ‘হরতাল’ না করার গণতান্ত্রিক অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সাথে হরতালের নামে সহিংসতাও বন্ধ হবে এবং সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। 
 
 আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ৩ দিন ব্যপী, বিকেল ৩ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত, একুশে বইমেলার উত্তর প্রবেশপথে (টি এস সি এর পুর্ব দেয়াল) “হরতালের নীতিমালা ও আইনি বিধান প্রণয়ণ” শীর্ষক একটি প্রদর্শনী, জনমত জরিপ ও জনসংযোগ এর কর্মসুচির আয়োজন করা হয়েছে।
“হরতাল আমার গণতান্ত্রিক অধিকার, সহিংসতা চাই না। হরতাল নিষিদ্ধ না করেও সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব। কথা দিচ্ছি, দেশ সহিংসতা মুক্ত হবে”
কর্মসুচিতে থাকবে,
১) হরতাল সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সম্বলিত “তথ্য প্রদর্শনী”।
২) “হরতাল এর সহিংসতা বন্ধে নীতিমালা ও আইনি বিধান প্রণয়ন” বিষয়ক প্রস্তাবনা বিতরণ।
৩) “হরতাল এর সহিংসতা বন্ধে নীতিমালা ও আইনি বিধান” বিষয়ক জনমত জরিপ।

শুয়োরাধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ আইনজীবী জিওফ্রে রবার্টসন কিউসির ওহীবাণী


লন্ডন থেকে শুয়োরাধিকার রক্ষার জন্যে ওহীবাণী নাজিল করছেন ব্রিটিশ আইনজীবী জিওফ্রে রবার্টসন কিউসি। জোর গলায় দাবী করছেন, ৭১রে মুক্তিযোদ্ধারাই মূলত যুদ্ধাপরাধ করছে, ওদের বিচার না করে বৃদ্ধ ইসলামী নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানো মানবতার লঙ্ঘন। এই সার্টিফিকেট পায়া দেশের আপামর শুষিলসমাজের নেতায়া থাকা মানবতার দণ্ড দাঁড়ায়া গেছে, ম্যা ম্যা করে আকাশবাতাস মুখরিত করে তুলতেছে তারা, বিরোধীদলকে শেষ করে দিতেই এই প্রহসনের বিচার, ৪৪ বছর পর বানোয়াট অভিযোগ আনা হইছে এই বৃদ্ধ মানুষগুলার উপর, কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ নাই...

মোয়াজ্জেম হোসেন খান ছিলেন পাকশী রেলওয়ে কন্ট্রোলার। কিন্তু সবাই তারে জয় বাঙলার লোক হিসেবেই চিনতো। যুদ্ধের শুরুতেই বড় ছেলে তহুরুল আইসা বলল, আব্বা, যুদ্ধে গেলাম, ফিরুম কিনা জানি না, তবে ফিরলে দেশটারে স্বাধীন কইরাই ফিরুম। মোয়াজ্জেম বাঁধা দিতে যায়া ত্থাইমা গেলে, বুকে পাথর বাঁধলেন, ছেলে গেল মুক্তিযুদ্ধে। ১২ই এপ্রিল শান্তিকমিটির সহসভাপতি আবদুস সুবহান পাকিস্তানী মিলিটারিরে শেরশাহ রোডে আইনা বলল, ইয়ে হ্যায় গাদ্দার কা ঘর, সালে জয় বাঙলা কা আদমি হ্যায়। প্রান বাঁচাইতে মোয়াজ্জেম,স্কুল শিক্ষক মোতালেব, নাজমুলসহ প্রায় ২০-২৫ জন আশ্রয় নিলেন ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। আল্লাহর ঘর মসজিদে নিশ্চয়ই তাদের মারবে না ওরা, শত হইলেও মুসলমান তো। মাওলানা আবদুস সুবহান রাজাকারগুলারে নিয়া টাইনা বাইর করল মানুষগুলারে মসজিদ থেইকা, টানতে টানতে নিয়া গেল পাশের রেলওয়ে ডিপোতে। তারপর ইসলাম কায়েমের নামে আল্লাহু আকবর বইলা জবাই করল নিরস্ত্রমানুষগুলারে, তারা নাকি ইসলামের শত্রু। রক্ষা পাইল না পাবনার সুজানগরের ৪০০ মানুষ, আল্লাহর নামে ইসলাম কায়েমের কথা বইলা তাদের গুলি কইরা, জবাই কইরা বেয়নেট দিয়া খোঁচাইতে খোঁচাইতে মেরে ফেলা হইল সুবহানের নির্দেশে। আজকে ৪৪ বছর পর অবশ্য শুষিলসমাজের কাছে এইগুলা প্রোপ্যাগান্ডা মাত্র...
আমার নানা মোহাম্মদ আলী প্রামানিক ছিল জয় বাঙলার লোক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি মানুষটারে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সবাই ভালবাসতো। ২রা মে যখন সুবহান পাকি মিলিটারি নিয়া সাহাপুর গ্রামে হামলা চালাইল, তখন নানা বাড়ি ছিল না। ১৬টা ফ্যামিলির বিশাল যৌথ পরিবার ছিল নানাদের, সবাইরে এক লাইনে দাড় করানো হইল। তারপর মেয়েগুলারে আলাদা করে সবার সামনেই ঝাপায়া পড়ল শুয়োরগুলা, ছিঁড়ে-খুবলে খাইতে লাগলো। নানার ছোট্ট একটা বোন ছিল, পেট থেকে যোনি পর্যন্ত বেয়নেট দিয়ে এক টানে ছিঁড়ে ফেলা হইল।বাকিদের গুলি করে বাড়িতে আগুন ধরায়া দেওয়া হইল। গ্রামের বেশিরভাগ ছিল হিন্দু পরিবার, প্রথমে রাজাকাররা গনিমতের মাল হিসেবে প্রত্যেকটা বাড়ি লুট করল, তারপর ব্রাশফায়ার কইরা মারলো সবাইরে, শেষে বাড়িতে আগুন ধরায়া দিল। নানা এসে দেখে, সব পুড়ে ছাই। সহ্য করতে পারে নাই, একটা দা হাতে ঝাপায়া পড়ছিল পাকি শুয়োরগুলার উপর। ব্রাশফায়ার কইরা মারার পর সুবহান তার শরীর থেকে চামড়া ছিলে গাছে টাঙ্গায়া রাখছিল, সবাইরে দেখায়া বলছিল, এইটা হইল গাদ্দারের শাস্তি, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে এই পরিনতি হবে...
আমার নানু তখন ঝোপের আড়ালে লুকায়ে, সব দেখেও কিচ্ছু করতে পারল না। আম্মু তখন পেটে, নয়টা মাস... কি কষ্ট, কি যন্ত্রণা... আমার মা কোনোদিন তার বাবাকে দেখে নাই, আব্বু বলে কারোর কোলে ঝাপায়া পড়ার সুযোগ পায় নাই কোনোদিন, ভাইয়ের সংসারে মানুষ হইছে, বাবার আদরটুকু পাওয়ার সৌভাগ্য হয় নাই, নীরবে কেঁদে গেছে শুধু...
তাই আজকে যখন শুষিলসমাজ পাকিস্তানী শুয়োরের মতো ঘোঁত ঘোঁত করে বৃদ্ধ মানুষদের ফাঁসিতে ঝোলানোর নিন্দা জানায়, মাথার রক্ত চড়ে যায়। মসজিদের মধ্যে ঢুকেও বাঁচতে পারে নাই মোয়াজ্জেমরা, ইসলামের নামে তাদের জবাই করছিল সুবহান, চামড়া ছিলে গাছে ঝুলায়া রাখছিল মোহাম্মদ আলীর, আজকে যখন সেই সুবহানরে ইসলামের সেবক বানায়া ইসলাম ধ্বংসের প্রতিবাদ জানায় কিছু শুয়োরের বাচ্চা, মাথার ভিতরে হঠাৎ আগুন ধইরা যায়। আলাদা করে ফেলতে ইচ্ছা করে এই জারজ শুয়োরগুলার প্রতিটা কোষ... খুনি হইতে ইচ্ছা করে খুব... খুনি হইতে ইচ্ছা করে...
- Rahman Raad

ধ্রুব সত্য হয়ে এসো - সুমি খান



জন্ম-মৃত্যুর মতো ধ্রুব সত্য হয়ে এসো
হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ছুঁয়ে জাগালে ঘুমন্ত হৃদপিন্ড
বুকের ভেতর নামালে সুখের ঝর্ণাধারা-
আঁজলা ভ'রে ভালোবাসা নিলে
ধ্রুবজ্যোতি আমার
দ্বিধার দ্বৈরথেই তোমায় গ্রহণ করলাম-


তোমার অখণ্ড আকাশ
 আর অনন্ত নীলিমা দিলে -
হাতে এনে দিলে দূরের কপোতাক্ষ
সবুজ অসীমের চর্যাপদ !

আদিম শিকড় উপড়ে ফেলে
বৃক্ষের মতো
জন্ম-মৃত্যুর মতো
ধ্রুব সত্য হয়ে এসো-
অতিক্রান্ত অতীতের সব স্মৃতি সব ছায়া নিশ্চিহ্ন করে
শুদ্ধতার অগ্নিস্নান শেষে
এসো
ভালোবাসার অভিষেকে।


বসন্তের নির্জন দুপুরের বৃষ্টিধারা-
গোধূলির মায়াবি আলোয়
 তোমার নীরব চোখের চাওয়া
ধ্রুপদ স্বপ্নের মায়াবিনী আলোয় ভেসে যায়

 নিবিড় অপলকে
অপরূপ বিকেলের কাছে
দিনশেষে করতলে গুঁজে দিলে
জ্বলজ্বলে শুকতারা !!


বিকেল ৩টা ২২ মিনিট,২১শে ফেব্রুয়ারী ,২০১৫
ঢাকা

Thursday, February 19, 2015

১৯৮২ সালে কাদের সিদ্দিকীকে লেখা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক চিঠি

 
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চিঠিটি কাদের সিদ্দিকীকে লিখেছিলেন ১৯৮২ সালের ১৫ অক্টোবর।এতদিন পর কাদের সিদ্দিকী ঐ চিঠিটি প্রকাশের উদ্দেশ্য কী ,তা জানা না থাকলেও চিঠিটি পড়লে আমরা অজানা এক শেখ হাসিনাকে জানা যায়-
ঐতিহাসিক এই চিঠিটিতে অসাধারন শব্দচয়ন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের প্রত্যয়, '৭১ এর ঘাতকদের প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যার ঘৃণা আর  ক্ষোভ , স্বাধীনতাবিরোধীদের সমূলে ধ্বংস সহ  আগামীর  বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাই প্রকাশ পেয়েছে-

 
 ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন।  এরপর তিনি ভারতের শিমলায় যান পুত্র সজীব
ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কে দেখতে। তারা সেখানে স্কুলে পড়তেন।
সে সময়  কাদের সিদ্দিকী ভারতের কলকাতায় নির্বাসিত ছিলেন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলে কাদের সিদ্দিকী সশস্ত্র
বিদ্রোহ করে ভারতে নির্বাসনে যান। 

কাদের সিদ্দিকীকে লেখা  শেখ হাসিনার চিঠি ..................
 
‘জানি খুব রেগে আছ। মনে হয় দূর থেকেও তোমার রাগ দেখতে পাই। আমার
সঙ্গে তো শুধু রাগ অভিমানই করলে আবার
এও জানি যত রাগই কর না কেন আপার সামনে এলে সব রাগ পানি হয়ে যেতে বাধ্য।
চিঠি দেই না দেখে এটা ভেব না যে, মনে করি না।
সব সময় মনে করি। খবরও যে পাই না তা নয়, খবরও পাই।’
‘তাছাড়া ঢাকায় অনেক ভিড়ের মাঝে আমি ভীষণ একা।
প্রায়ই পরশ-তাপসদের (মনি ভাইয়ের বাচ্চারা) কাছে যাই একটু সান্ত্বনা পাই।
কি যন্ত্রণা নিয়ে যে আমি সেখানে থাকি কাউকে বলতে পারব
না।
যখনই অপারগ হই দম বন্ধ হয়ে আসে। এখানে চলে আসি। তাছাড়া অনেক আশা নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম।’
‘আজ দেশ বিরাট সঙ্কটের মুখে—স্বাধীনতা বিরোধী চক্র কিভাবে শক্তি সঞ্চয় করেছে …যেখানে সমগ্র দেশ, সমগ্র বিশ্বজাতি জাতির পিতা বলে মানে সেখানে কয়েকটা ক্ষমতা দখলকারীরাই মানতে রাজি নয়…’ ‘যে লক্ষ্য সামনে রেখে স্বাধীনতা চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সে স্বাধীনতা লক্ষ্য থেকে আজ অনেক দূরে দেশ চলে গেছে।
১৫ই আগস্টের যে ষড়যন্ত্র দেশ ও জাতিকে নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্র। আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার হারিয়েছি, সেই অধিকার আজও আদায় করতে পারলাম না।
যখন দেশ ও জাতি এই সঙ্কটের সম্মুখীন তখন একটি দল—সব থেকে একটি সংগঠিত দল—জাতির পিতার হাতে গড়া স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক
দলের কি ভূমিকা হওয়া উচিৎ? এখানে আমার দায়িত্ব বড়? না দেশ ও জাতির স্বার্থ বড়? একটি দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে কত ‘আমি’কে বিসর্জন দিতে হয় তবেই
না লক্ষে পৌঁছানো যায়। কিন্তু আমাদের দলের কি ভূমিকা কি চেহারা আমি পেয়েছি?’
‘কারো বাড়া ভাতে ছাই ঢালতে আমি যাই নাই।  আমি ‘জাতির পিতার’ মেয়ে—সেই হিসাবে শুধু সেই হিসাবেই যে ভালবাসা যে সম্মান আমি এই বয়সে পেয়েছি।সারাজীবন আমার বাবা সাধনা করেছেন, ত্যাগ করেছেন তারই দানে আমি সমগ্র জাতির ভালবাসা,
সম্মান পেয়েছি—আমার আর পাবার কি আছে? আমি এখন দিতে চাই।’
 
 ‘আমি সবই হারিয়েছি, চরম মূল্য দিয়েছি। আমার আর হারাবার কিছু নাই। চরম ত্যাগের মনোভাব নিয়েই যে দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছিল, তা পালন করতে গিয়েছিলাম (স্বপ্নেও কখনও ভাবি নাই যে এত বড় গুরুদায়িত্ব আমার উপর পড়বে) কিন্তু সেখানে গিয়ে কি পেয়েছি—সব থেকে বেশী সাহায্য সহযোগিতা যাদের কাছ থেকে পাব
আশা করেছিলাম সেখানে বড় ফাঁক। 
এই এক বছরের ঘটনা কিছু বিশ্লেষণ করলেই দেখবে, বুঝবে। যার যা যোগ্যতা কর্মদক্ষতা তার মধ্য দিয়েই উঠবে কিন্তু একজনকে ছোট করে খাটো করে আর একজন উঠবে সেটা তো হয় না।’  ‘আর এখানে তো আমরা দিতে এসেছি। কিন্তু সে মনোভাব কোথায়? অনেক খোঁজ-খবর পেয়েছি—দলের ভিতরেও এজেন্ট আছে স্বাধীনতা বিরোধীচক্রেরই এজেন্ট তারাই দলের ইমেজ নষ্ট করবার জন্য— যাতে এগোতে না পারে সে জন্য, মূল
লক্ষে যাতে পৌঁছাতে না পারে তারই জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ সচেতনভাবে কেউ অবচেতনায় সাহায্য করছে। বুঝতেও পারছে না—আত্মচিন্তায় এতটুকু চেতনাও হচ্ছে না যে কি সর্বনাশ দেশ ও জাতির জন্য করে যাচ্ছে।’ ‘আজকের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে সকলকে এক থাকতে হবে, বৃহৎ স্বার্থে কাজ করতে হবে—আজকে সে সময়
নয় যে, ব্যারোমিটার দিয়ে কে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কতটুকু বিশ্বাসী তা মাপার সময় এখন নয়। সেটা বোঝা যাবে ভবিষ্যতে কাজের মধ্যে দিয়ে কিন্তু কিছু কার্যকলাপ এভাবেই চলছে। তাতে গোটা দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। একটা স্থবিরতা এসে যাচ্ছে সে চেতনা কারো নেই। তার উপর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, যারা এই ধরনের কথা তুলে দলকে এগোতে দিচ্ছে না তারা কি সত্যিই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী না কি জীবনেও যাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়িত হতে না পারে সেই প্রচেষ্টায় নিমগ্ন, সেই প্রশ্নই আজ মনে আসে।  
 'গতবারই একটা কথা বলেছিলাম, ভীষণ একা আমি। শাঁখের করাতের ভিতর দিয়ে চলছি। তবে নিরাশ নই যা ঘটছে আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন সফলকাম হবই।
হত্যার প্রতিশোধ নেবই। ২/৪টা খুনী মারলেই হবে না।  মূল থেকে উপড়াতে হবে সেটা মনে রেখো '। ‘যারা বঙ্গবন্ধুর গায়ে হাত দিতে সাহস করে তাদের দুর্বল ভাবলে চলবে না।  মাটির অনেক গভীরে তাদের শিকড় গাড়া সেটা মনে রাখতে হবে। যাক্, অনেক বকবক করলাম। মনের কথা আমি খুব কমই বলি। স্মৃতি রোমন্থনই বেশী করি, আজ অনেক কথা লিখলাম…’
ইতি : আপা
১৫/১০/৮২

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পুরষ্কার:১২ জন স্বঘোষিত খুনীকে কূটনৈতিক পদ দেন জিয়া

 ১৯৭৬ সালের ৮ই জুন বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী ১২ জন স্বঘোষিত খুনীকে কূটনৈতিক
পদে নিয়োগ দেন
জিয়া।
 
সেই খুনীরা হলোঃ

 ১)লেঃ কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, প্রথম সচিব,চীন।
২)লেঃ কর্নেল আজিজ পাশা, প্রথম সচিব,আর্জেন্টিনা।
৩)মেজর মহিউদ্দীন, দ্বিতীয় সচিব, আলজেরিয়া।...

৪)মেজর শাহরিয়ার, দ্বিতীয় সচিব,ইন্দোনেশিয়া।
৫) মেজর বজলুল হুদা, দ্বিতীয় সচিব, পাকিস্তান।
৬)মেজর রশীদ চৌধুরী, দ্বিতীয় সচিব,সৌদি আরব।
৭) মেজর নূর, দ্বিতীয় সচিব, ইরান।
৮)মেজর শরিফুল হোসেন, দ্বিতীয় সচিব, কুয়েত।
৯)ক্যাপ্টেন কিসমত হোসেন, তৃতীয় সচিব,আবুধাবি।
১০) লেঃ খায়রুজ্জামান, তৃতীয় সচিব, মিসর।
১১) লেঃ নজমুল হোসেন, তৃতীয় সচিব, ক্যানাডা।
১২) লেঃ আবদুল মজিদ, তৃতীয়. সচিব, সেনেগাল।

--- অনেকেই বলে শুনি যে ( আমি মুজিব আর জিয়া দুজনকেই সম্মান করি ) , তাদের
কাছে জানতে চাই তোমরা কি উপরের এগুলো জেনে বলো, নাকি না জেনে ?
না জেনে বললে জানার অনুরোধ রইলো!

দ্বিধান্বিত সময়-মম

তোমার বক্ষযুগল উম্মুক্ত করার সময়
বক্ষবন্ধনী উপরে উঠাবে, না নীচে নামাবে,
তা নিয়ে কাটে তোমার দ্বিধান্বিত সময়!
হাল্কা কপট রাগ দেখিয়ে তুমি সীমিত করতে চাও সময়
কিন্তু চক্ষু যুগল বুঁজে আসে তোমার সুখের আবেশে
অপেক্ষায় থাকো আমার -

কখন সিক্ত হবে আমার ঠোঁটের পরশে
তুমি হাল্কা কেঁপে ঊঠো
তোমার গহীনে জোয়ার ভাঁটার টান শুরু হয়
তুমি ক্ষনে ভাঙ্গো- আবার পরক্ষনেই গড়ো
আমার দন্তমুলের কারুকাজ যখন রাঙ্গায়
তোমার হৃদপিন্ডের উপরিভাগের মাংস পিন্ডকে
তুমি তখন হারিয়ে যাও স্বপ্নীল আবেশে
তোমার কানগুলি কাঁপা কাঁপা আহবান জানায়
তোমার বুকের অমৃত সুধা মুখে নিয়ে

মরতে চায় এ যুগের কোন্ পাগল প্রেমিক
তার জানা নাই এসপারা গাস, কেভিয়ার
বা গন্ধম ফল ও এর চাইতে সুস্বাদু ছিল কিনা
তুমি যদি সেখানে লাগাও হেমলক বা সায়নাইড এর নির্জাস-
তাতেও পরোয়া নাই আমার
কারন আমার পরম চাওয়াই যে ওইভাবে তোমার সুধা পানরত মৃত্যু
কিন্তু আজরাঈল এর কি সাধ্য আছে জান নেবার??

Monday, February 16, 2015

আকাশ ভেঙ্গে সৃষ্টিছাড়া বৃষ্টি- সুমি খান

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি -
আমি ভিজতে ভিজতে ফুটপাত -
তারপর গাড়ির দরোজা খুলে সিটে বসতে বসতে
মুছে নেই এলোমেলো বৃষ্টিভেজা চুল
আমার আজন্ম সাধ -
স্টিয়ারিংয়ে তোমার হাতে হাত রেখে বৃষ্টি দেখবো-
প্রিয় বন্ধু আমার!
শাহবাগ পেরিয়ে ছবির হাট-
একটু থামো -
তোমার হাত ধরে মোল্লার মেঠো পথে হেঁটে চলা-
ছায়াবৃক্ষে আড়াল হলো বৃষ্টির তেরছা জল গুলো-
যেমন সৃষ্টিছাড়া বৃষ্টি !
তুমি ও তেমনি সৃষ্টিছাড়া-
আমার হাত ধরে টেনে নিলে তোমার ড্রাইভিং সিটের পাশে-
হাওয়ায় হাওয়ায় লাগে টান-
সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলি-
তোমার মাতাল ঘ্রান
আমি উন্মাতাল!!
খেয়াল ই করিনি কখন -
গাজীপুর ন্যাশনাল পার্কে ছুটে গেলো তোমার গাড়ি-
শুধু বৃষ্টি-
 শুধু মেঘলা আকাশ-
আর কামিনী -জুঁই -বকুলের গন্ধে বিভোর আমি
 বৃষ্টি ভেজা ছাদ দেখে
 ফিরে যাই অতীত বন্দনায়-
কারণ,
 তুমি চাও আমি শুধু স্বপ্নে থাকি-
আর চাও ইস্কাটনে বৃষ্টি!!


বেলা ১২টা ১০ মি.১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ মঙ্গলবার

 

প্রাণ ভরে ভালবাসা নিও-সুমি খান

প্রাণ ভরে ভালবাসা নিও-সুমি খান
খুব ভোরে পূবের আকাশটা
লাল আভায় ভরে দিলো প্রাণ মন -
ভালবাসা নিও।
জন্মের শুভক্ষণে ...

বিছানার এক কোণে পড়ে থাকা তোমার আধো ঘুমন্ত দেহটা
পরম আদরে, আমার উষ্ণ বুকে টেনে নিলাম -
সবটুকু ভালোবাসা শুধু তোমার জন্যে !

যখন কোন এক গনগন জন্ডিসের মতন হলুদে দুপুরে
চোখের দৃষ্টি যখন প্রখর রোদের প্রতিরোধে
বাধ্য মেয়ের মতন উপন্যাসের বইয়ে মুখ গুঁজবে
পিছন থেকে খুব ছোঁয়ায় চোখ দুটি ধরবো আড়াল করে
পাগল করা ভালবাসা নিও। 


 আর কিছু না শুধু একটু ভালবাসা নিও।

যখন কোন ক্লান্ত দুপুর গড়িয়ে বিকাল হবে -
 আনমনা এ উদাসী মন
দুষ্টু মেঘেদের সাথে ছোঁয়াছুয়ি খেলায় ব্যস্ত থাকবে-
গরম ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে ভুলে চুমক দিয়ে
হঠাৎ সংবিত ফিরে পাওয়া ঠোঁটে তখন
ভালবাসা নিও।
দগ্ধ পোড়া লালচে যাতনায়
একটু নয়- ঠিক যতোটা চাও-
প্রাণ ভরে ভালবাসা নিও।
কোন এক মন খারাপের দিনে!!
যদি পারো ছুঁয়ে থেকো এ ভালোবাসা -
অসীমের পানে চলে যাওয়া অবধি-
নিরবধি!
বেলা ১১টা ৪৭ মি.
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫, মঙ্গলবার
এই পাহাড়ি ঢাল  , সিঁড়ি, পর্তুগীজ নিদর্শনের লাইব্রেরি ভবন (অন্যদিন সেই নিদর্শনের ছবি বন্ধুদের জন্যে দেবো)....সব ছুঁয়ে আছে আমার অষ্টাদশীর ছোঁয়া...এইচ এস সি ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টে চট্টগ্রাম কলেজে ওয়েটিং লিষ্টে নাম ছিল।তার  অপেক্ষা না করে এই পাহাড়ি ঢালের আকর্ষণ আর আমার ভাইয়া এ কলেজ থেকেই এইচএসসি পাশ করেছে -সেই ইমোশান থেকে মহসিন কলেজেই ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানেই আমাদের স্কুলের বন্ধু সানজু, টকি, খায়রুন (জিরাফ) কে পেলাম। পেলাম নতুন বন্ধু সিমাকে। আমরা সাত বান্ধবী তখন পুরো পাহাড়ি এলাকা জুড়ে কলেজ ক্যাম্পাসের এ প্রান্ত ওপ্রান্ত দাপিয়ে বেড়াতাম। ধরাকে যেন সরাজ্ঞান করছিলাম। তবে রাজাকার বাহিনী শিবির অধ্যূষিত চট্টগ্রাম কলেজ এবং মহসিন কলেজের ক্যাম্পাসে আমি  ছুটে বেড়াতাম রাজাকার নির্মূলের শপথে। সাতজনের মধ্যে একমাত্র  আমি স্বৈরাচারী এরশাদ পতনের আন্দোলনে চট্টগ্রাম শহরের  প্রতিটি স্কুল কলেজের কন্যাদের রাজপথে নামাতে ব্যস্ত। সেনাশাসনের কামান গোলা তুচ্ছ করে মৃত্যু কে পায়ের ভৃত্যে পরিণত করে পায়ে হেঁটে ছুটে বেড়াতাম শহরের এ প্রান্ত থেকে  ওপ্রান্ত।আমার ছয় বান্ধবী আমাকে ক্লাসে কম পেতো; তবু তাদের  অসীম ভালোবাসায় তাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলাম আমি। ভাবতে হাসি পায়, ক্লাসরুম অনেক মেধাবী ছাত্র থাকলেও  আমরা সেভেন স্টার কোন ছেলের সাথেই কথা বলতাম না! সানজুর মতো রূপবতী বান্ধবী থাকাতেই বোধহয় ক্লাসের ছেলে বন্ধুদের এতো তুচ্ছ করে ভাবতাম অষ্টাদশীতেই! সানজু,  কী বলিস্??

শুধু একটু ভালবাসা দিও -মম


কোন এক খুব ভোরে
পূবের আকাশটা যখন হবে কালচে সাদা
একটু ভালবাসা দিও।

পরম আদরে, তোমার উষ্ণ বুকে টেনে নিও
বিছানার এক কোনে পড়ে থাকা
আমার আধো ঘুমন্ত দেহটাকে।
খুব বেশি না ...শুধু একটু ভালবাসা দিও।

যখন কোন এক গনগন জন্ডিসের মতন হলুদে দুপুরে
চোখের দৃষ্টি যখন প্রখর রোদের প্রতিরোধে
বাধ্য মেয়ের মতন উপন্যাসের বইয়ে মুখ গুঁজবে
পিছন থেকে খুব ছোঁয়ায় চোখ দুটি ধরবে আড়াল করে
তোমার অদ্ভুত মায়াবী গন্ধে
পাগল করা ভালবাসা দিও।
আর কিছু না-
 শুধু একটু ভালবাসা দিও।

যখন কোন ক্লান্ত দুপুর গড়িয়ে বিকাল হবে
আমার এই আনমনা উদাসী মন থাকবে
দুষ্ট মেঘেদের সাথে ছোঁয়াছুয়ি খেলায় ব্যস্ত

গরম ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে ভুলে চুমক দিয়ে
হঠাৎ সংবিত ফিরে পাওয়া ঠোঁটে তখন ভালবাসা দিও।
দগ্ধ পোড়া লালচে যাতনায় খুব বেশি না একটু, -
জাষ্ট একটু ভালবাসা দিও।

কোন এক মন খারাপের দিনে

ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়
বেদনার রাত্রি সঙ্গী হয়ে
করে আলিঙ্গন।
ভালোবাসা সুদূর দিপালিকা
ভালোবাসা কখনও
জানালায় আসা
এক ফালি চাঁদ।
ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়
বিরহে পুড়ে দেহ হয় অঙ্গার।
ভালোবাসা সীমাহীন আকাঙ্ৰা

Thursday, February 5, 2015

জেনে নিক্ তৃষাতুর ঘাতক-সুমি খান

বাতাসে লাশের গন্ধ-
২৫ মার্চ ১৯৭১-
ইয়াহিয়ার দাবি ছিল অতি 'সামান্য'
বাংলাদেশের মাটি-
সে মাটি লুটে নিতে
 লুটেছে তোমার আমার সব-
লুটেছে রবীন্দ্র -নজরুল-জীবনানন্দ-সুকান্ত
 কেড়েছে তিরিশ লাখ প্রাণ
 লুটেছে তিন লাখ নারীর সম্ভ্রম-
বাড়ি-ঘর
 মন্দির-মসজিদ-গীর্জা-প্যাগোডা
 আজো সেই প্রেতাত্মার রক্তবীজ
 রক্তপিপাসু লালায়িত -
চলছে রক্তের হোলিখেলা-
তুমি আমি নির্বাক-
প্রশ্নের ঝোড়ো হাওয়া লুটে নেয় রক্তপ্রাণ
 প্রশ্নচিহ্ন আছে বটে-
তবে সেটা
 শুধু শ্লীল অশ্লীলতার কি?
বিষয়টা ভাবনার
 গভীর থেকে গভীরতর-
যেন গভীরখাদ..
উবু হয়ে দেখতে হবে।
 পেছনে প্রস্তুত ঘাতকের সারি!
যাদের দায়িত্ব সামান্যই-
তুমি উবু হতেই
 খুব হাল্কা হাতে
 তোমার মাথার ঠিক পেছনটায়
 একটা চাটি-
তলিয়ে যাবে তুমি-
খাদের একেবারে তলানিতে!!
তবু জেগে আছি আমি তুমি
 পিতৃপুরুষের ঋণে
 তিরিশ লাখ প্রাণের প্রতিশোধের দাবি নিয়ে-
জেনে যাক্ ঘাতকের দল-
যতোই বড়ো হোক্ ঘাতকের সারি-
আমাদের মিছিলের সারি আজ তার চেয়ে অনেক বড়ো-
জেগে আছি আমি তুমি
 লাশ কাটা ঘর নয়
 লাল সবুজের সবীজ মাতৃভূমির বুকে-
ধানসিঁড়িটির তীরে-
শঙ্খচিল শালিকের ভিড়ে-
কর্ণফুলীর তীরে
 মাস্টার'দা প্রীতিলতার রক্তবীজ বেয়ে-
ঘাতকের শান দেয়া ছুরির মুখে
 আমি আছি
 আছো তুমি বন্ধু চিরঞ্জীব!

(সুকান্ত রক্ষিতের পোস্টে " যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি শ্লীল না অশ্লীল?"- এ প্রশ্নের জবাব লিখতে গিয়ে বিকেল ৫টা, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৫)

Wednesday, February 4, 2015

কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের সমাধি রোমের খ্রীষ্টান গোরস্থানে ১৮ বছর-সুমি খান

‘কাশবনের কন্যা’ খ্যাত কথা সাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম আজ যেন বিস্মৃত এক নাম। ঊনিশ'শ পঞ্চাশ ও ষাট দশকের অন্যতম শক্তিশালী এই ঔপন্যাসিক অনাদরে, অবহেলায় শায়িত আছেন সুদূর ইতালির খৃষ্টান গোরস্থানে। কোন বাঙ্গালী তাঁর খোঁজ রাখার প্রয়োজনও মনে করে না। এমনই দুর্ভাগা জাতি আমরা, কেউ কখনো দায়িত্ব নিয়ে তাঁর স্মরণ সভা অথবা তাঁর স্মৃতির প্রতি দায়িত্ব পালন করি না।

বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের মৃত্যুর ১৮ বছর পর ও তাঁর সমাধি রোমের খৃষ্টান কবরস্থান থেকে মুসলিম কবরস্থানে স্থানাস্তরিত করার উদ্যোগ নেয়নি কেউ । ১৯৯৭ সালের ১০ই জানুয়ারী ইতালীর রাজধানী রোমে এক নির্জন এপার্টমেন্টে জীবনাবসান ঘটে প্রচন্ড অভিমানী এই মেধাবী বাঙ্গালীর।সত্তরের দশকে শামসুদ্দীন আবুল কালাম কর্মরত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)-এর রোম সদর দফতরে এবং ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসে। ইতালীয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল তাঁর দৃপ্ত পদচারণা।একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইতালী থেকেই ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ।
জানা যায়, শামসুদ্দীন আবুল কালাম তাঁর নির্জন এ্যাপার্টমেন্টে মারা যাওয়ার বেশ অনেকক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল বহুতল ভবনের বাইরে থেকে জানালা ভেঙ্গে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
 ১৯৫৯ সাল থেকে ইতালীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন তিনি । দেশটির ‘প্রথম বাংলাদেশী’ শামসুদ্দীন আবুল কালামের মরদেহ উদ্ধারের পর কোন দলিল বা অফিসিয়াল কাগজপত্রে তাঁর কোন ধর্মীয় পরিচয় না থাকায় এবং তাঁর কোন পরিচিত স্বজনের সন্ধান না পেয়ে মূলত ‘বেওয়ারিশ’ লাশ হিসেবে  পুলিশ তাঁকে রোমের এক প্রান্তে ‘প্রিমাপর্তা’ এরিয়ার খ্রীস্টান কবরস্থানে সমাহিত করে। পাশে মুসলিম কবরস্থান থাকলেও ‘রক্ত-সম্পর্কীয়’ স্বজনদের উদ্যোগ বা  অনুমতির অভাবে এই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকের সমাধি আজো স্থানান্তর করা হয়নি । শামসুদ্দীন আবুল কালামের প্রতি যেন চরম দায়িত্বহীন রোমের বাংলাদেশ কমিউনিটি। এ প্রসঙ্গে শ. ম তিমির তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশভিত্তিক নোংরা রাজনীতি এবং ভিলেজ পলিটিক্স চর্চার ‘ক্যামব্রিজ-অক্সফোর্ড’ খ্যাত এখানকার কমিউনিটি আজ অবধি ন্যূনতম সম্মান দেখায়নি ‘প্রিমাপর্তা’ সমাধিক্ষেত্রে শুয়ে থাকা বাংলার এই সোনার সন্তানের প্রতি।
শামসুদ্দীন আবুল কালামের জন্ম ১৯২৬ সালে বাংলাদেশের বরিশালে। ।১৯৫৯ থেকে ১৯৯৭ সুদীর্ঘ ৩৮ বছর ইতালীতে প্রবাস জীবনের শেষ দিনগুলোতে  তাঁকে প্রচন্ড নিঃসঙ্গতা গ্রাস করলেও দেশটির সাহিত্য সংস্কৃতি এবং কর্মক্ষেত্রে ছিল তাঁর সফল পদচারণা।

ইতালীতে আসার আগেই পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হয় শামসুদ্দীন আবুল কালামের বেশ ক’টি বিখ্যাত উপন্যাস। বিখ্যাত এই কথাসাহিত্যিকের  সাড়াজাগানো উপন্যাস ‘কাশবনের কন্যা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে। পরবর্তীতে পাঠকের চাহিদা মেটাতে তিনি  আরো কিছু উপন্যাস লিখেন। এর মধ্যে রয়েছে দুই মহল (১৯৫৫), কাঞ্চনমালা (১৯৫৬), জীবন কান্ড (১৯৫৬), জাইজঙ্গল (১৯৭৮), মনের মতো স্থান (১৯৮৫), সমুদ্রবাসর (১৯৮৬), যার সাথে যার (১৯৮৬), নবান্ন (১৯৮৭) ও কাঞ্চনগ্রাম (১৯৮৭)। ভাষা আন্দোলনের বছর ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয় শামসুদ্দীন আবুল কালামের গল্প সংগ্রহ ‘অনেক দিনের আশা’।পরের বছর ‘ঢেউ’ ও ‘পথ জানা নেই’। দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫) এবং সাহের বানু (১৯৫৭) এই বাঙ্গালী গুণীজনের অমর সৃষ্টি। ১৯৫৯ সালে ইতালী পাড়ি জমাবার আগে সংসার জীবনে সুখী হতে পারেননি শামসুদ্দীন আবুল কালাম। কন্যা ক্যামেলিয়ার জন্মের পর স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়।এর পর তাঁর সাবেক স্ত্রীকে বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মোস্তফা। ক্যামেলিয়া পরবর্তীতে মোস্তফার পরিচয়েই বড়ো হন।

 ১৯৫৯ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন তিনি ইতালিতে। দেশটির ‘প্রথম বাংলাদেশী’ কথা সাহিত্যিক ও উপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের জন্ম ১৯২৬ সালে বাংলাদেশের বরিশালে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইতালি থেকেই ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন বাংলা দেশের অভ্যুদয়ে। সত্তরের দশকে শামসুদ্দীন আবুল কালাম কর্মরত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) রোমের সদর দফতরে এবং ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসে। ইতালিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও ছিল তাঁর পদচারণা। ইতালিতে আসার আগেই পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হয় শামসুদ্দীন আবুল কালামের বেশ ক’টি বিখ্যাত উপন্যাস। 


সাত ও আটের  দশকে ইতালিতে খুব স্বল্পসংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস ছিল । ন'য়ের দশকে দেশটিতে বাংলাদেশীদের আগমন দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও স্বদেশীদের সঙ্গে খুব একটা মেশা হয়ে ওঠেনি শামসুদ্দীন আবুল কালামের । বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরির সূত্রে আরেক প্রবীণ বাংলাদেশী লুৎফর রহমান যিনি এখনও জীবিত আছেন, মূলত তাঁর সঙ্গেই কদাচিৎ দেখা-সাক্ষাত হতো শামসুদ্দীন আবুল কালামের।

অভিমানী এই কথাসাহিত্যিক জীবনের শেষ দিনগুলোতে এতটাই জীবনবিমুখ হয়ে উঠেছিলেন যে, ব্যাংকে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও বাজার করতেন না এবং অনেকটা না খেয়েই ধীরে ধীরে ধাবিত হন নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে।

Tuesday, February 3, 2015

জামায়াত সহ অন্যদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমন্বয় ও অর্থায়ন করার অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার পাকি কূটনীতিক



 
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর অন্যতম সংগঠকের দায়িত্ব পালন করছিলেন ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খান ।দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমন্বয় ও অর্থায়ন করেন তিনি। গোয়েন্দা তথ্যে প্রকাশ, মাযহার খান পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং জামায়াত-শিবিরকে। একই সাথে বাংলাদেশের মুদ্রাবাজার ধ্বংস করার লক্ষ্যে ভারতীয় জাল রুপির বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন পাকি কর্মকর্তা মাযহার খান।এই পাকি কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সম্পৃক্ততার সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা। গোপন বৈঠক করাকালীন মাযহার ধরা পড়েন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। কিন্তু কূটনৈতিক আইনের সুবিধা নিয়ে তাকে  পুলিশের থেকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় জড়িত এই কর্মকর্তাকে গোপনে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয় ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস।

গোয়েন্দা সূত্র মতে মাযহার খান পাকিস্তান দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দেন। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করা হয়। মূলত বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যা এখনো ধারাবাহিকভাবে চলছে।  
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের মন্তব্য অংশে বলা হয়েছে, পাকিস্তান হাইকমিশনে ২ বছর দায়িত্ব পালনের বাইরে মোহাম্মদ মাযহার খান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ড, পৃষ্টপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।  

 পাকি কূটনীতিক মাযহার খানের বাংলাদেশবিরোধী ভয়ঙ্কর এসব গোপন তৎপরতার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন  দেশের গোয়েন্দারা। এসব তথ্য প্রকাশিত হবার পর সরকারের বিভিন্ন মহলে তোলপাড় চলছে। জঙ্গি তৎপরতাই শুধু নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাবাজার ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন তিনি।এ জন্যে পরিচালনা করেন ভারতীয় জাল রুপির এক বিশাল নেটওয়ার্ক।

দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি দূতাবাস কর্মকর্তার সহযোগী মজিবুর রহমান নামে বাংলাদেশি একজন নাগরিক গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ধারাবাহিক তদন্তের সূত্র ধরেই বেরিয়ে এসেছে জঙ্গি তৎপরতা ও জাল রুপি নেটওয়ার্কে থাকা ব্যক্তিদের কার্যক্রমের ক্রমধারা ও রূপরেখা। পাওয়া গেছে তাদের তালিকা ও কথোপকথনের সারাংশ। ওই প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে কড়া ভাষায় পাকিস্তান হাইকমিশনের শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যক্রমের নিন্দা জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খানকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার ও পাকিস্তান হতে বাংলাদেশের আসা ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজরদারির সুপারিশ করা হয়েছে।  
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, নাশকতার সঙ্গে পাকিস্তান দূতাবাসের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দীর্ঘ অনুসন্ধান পরিচালনা করে বাংলাদেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তে জানা যায়, মাযহার খান জাল নোট (রুপি) তৈরি ও সংগ্রহ করে কতিপয় বাংলাদেশী নাগরিকের মাধ্যমে ভারতে পাচার করেন। এতে তিনি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গোয়েন্দারা অনুসন্ধানে আরও নিশ্চিত হন যে, মাযহার খানের সঙ্গে জলিল   আখতার ও মো. মজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত বিশেষ করে লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, যশোর, বেনাপোল এলাকার বাংলাদেশি নাগরিকরা রয়েছেন।

‌এ সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত হবার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে নজরদারীতে রাখেন। সেই ধারাবাহিকতায়  গত ১২ জানুয়ারি সোমবার রাতে রাজধানীর বনানীর মৈত্রী মার্কেট এলাকায় মজিবুর রহমান ও পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানকে গোপন বৈঠকের সময় আটক করে। সে সময়ে পাকি কূটনীতিক মাযহার তার সঙ্গে থাকা বেশ কিছু কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। ছিঁড়ে ফেলা কাগজ সংগ্রহ করে গোয়েন্দারা কিছু বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর পান। ওই পাসপোর্টের সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে, পাসপোর্টধারীদের এমন তিন ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের নাম বিভিন্ন সময়ে প্রস্তুত করা হিযবুত তাহরীরের তালিকায় আছে। এরপরই গোয়েন্দারা মজিবুর ও মাযহারকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বনানী থানায় নিয়ে যান।

মাযহারের গ্রেফতারের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে সেদিন রাত ১০টার দিকে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রথম সচিব সামিনা মাহতাব বনানী থানায় উপস্থিত হয়ে মাযহার খানকে নিজের হেফাজতে নিয়ে যান। বাংলাদেশী নাগরিক মজিবুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

 প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মজিবুর রহমানের সঙ্গে মাযহার খানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মাযহার খানের পূর্বসূরি সহকারী ভিসা কর্মকর্তা। গত ১০ বছরে  পাকিস্তানে ২২ বার,  ভারতে ১১ বার ও  থাইল্যান্ডে ২২ বার ভ্রমন করেছেন মজিবুর রহমান। পরবর্তীতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবিন্দতে মজিবুর জানান, মাযহার খান এক লাখ ৮০ হাজার ভারতীয় জাল রুপি বাজারে ছাড়তে দেন তাকে। একইভাবে মাযহার  জাহিদ, ইমরান ও আরও কয়েকজনকে দিয়ে বড়ো অংকের ভারতীয় জাল রুপি বাংলাদেশের বাজারে ছাড়িয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রের তথ্যমতে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ জানুয়ারি পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ ইমরানকে আশি লাখ জাল রুপিসহ আটক করা হয় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। ইমরানের পাসপোর্টের ভিসাও ছিল জাল। আগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে ইমরানের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই'র পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মুদ্রাবাজার ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিশাল জাল রুপির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন মাযহার । এই নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য মুজিবুর রহমান জঙ্গিসংগঠনগুলোর জন্য অর্থ পাচার কাজে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। এ জন্যই তিনি ঘন ঘন ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে আসা-যাওয়া করেছেন। পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভিসা প্রদান না করায় জাল ভিসার সংখ্যা বাড়ছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পাসপোর্ট অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অতি জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয় বলে জানা গেছে।