Wednesday, February 4, 2015

কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের সমাধি রোমের খ্রীষ্টান গোরস্থানে ১৮ বছর-সুমি খান

‘কাশবনের কন্যা’ খ্যাত কথা সাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম আজ যেন বিস্মৃত এক নাম। ঊনিশ'শ পঞ্চাশ ও ষাট দশকের অন্যতম শক্তিশালী এই ঔপন্যাসিক অনাদরে, অবহেলায় শায়িত আছেন সুদূর ইতালির খৃষ্টান গোরস্থানে। কোন বাঙ্গালী তাঁর খোঁজ রাখার প্রয়োজনও মনে করে না। এমনই দুর্ভাগা জাতি আমরা, কেউ কখনো দায়িত্ব নিয়ে তাঁর স্মরণ সভা অথবা তাঁর স্মৃতির প্রতি দায়িত্ব পালন করি না।

বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের মৃত্যুর ১৮ বছর পর ও তাঁর সমাধি রোমের খৃষ্টান কবরস্থান থেকে মুসলিম কবরস্থানে স্থানাস্তরিত করার উদ্যোগ নেয়নি কেউ । ১৯৯৭ সালের ১০ই জানুয়ারী ইতালীর রাজধানী রোমে এক নির্জন এপার্টমেন্টে জীবনাবসান ঘটে প্রচন্ড অভিমানী এই মেধাবী বাঙ্গালীর।সত্তরের দশকে শামসুদ্দীন আবুল কালাম কর্মরত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)-এর রোম সদর দফতরে এবং ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসে। ইতালীয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল তাঁর দৃপ্ত পদচারণা।একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইতালী থেকেই ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ।
জানা যায়, শামসুদ্দীন আবুল কালাম তাঁর নির্জন এ্যাপার্টমেন্টে মারা যাওয়ার বেশ অনেকক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল বহুতল ভবনের বাইরে থেকে জানালা ভেঙ্গে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
 ১৯৫৯ সাল থেকে ইতালীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন তিনি । দেশটির ‘প্রথম বাংলাদেশী’ শামসুদ্দীন আবুল কালামের মরদেহ উদ্ধারের পর কোন দলিল বা অফিসিয়াল কাগজপত্রে তাঁর কোন ধর্মীয় পরিচয় না থাকায় এবং তাঁর কোন পরিচিত স্বজনের সন্ধান না পেয়ে মূলত ‘বেওয়ারিশ’ লাশ হিসেবে  পুলিশ তাঁকে রোমের এক প্রান্তে ‘প্রিমাপর্তা’ এরিয়ার খ্রীস্টান কবরস্থানে সমাহিত করে। পাশে মুসলিম কবরস্থান থাকলেও ‘রক্ত-সম্পর্কীয়’ স্বজনদের উদ্যোগ বা  অনুমতির অভাবে এই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকের সমাধি আজো স্থানান্তর করা হয়নি । শামসুদ্দীন আবুল কালামের প্রতি যেন চরম দায়িত্বহীন রোমের বাংলাদেশ কমিউনিটি। এ প্রসঙ্গে শ. ম তিমির তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশভিত্তিক নোংরা রাজনীতি এবং ভিলেজ পলিটিক্স চর্চার ‘ক্যামব্রিজ-অক্সফোর্ড’ খ্যাত এখানকার কমিউনিটি আজ অবধি ন্যূনতম সম্মান দেখায়নি ‘প্রিমাপর্তা’ সমাধিক্ষেত্রে শুয়ে থাকা বাংলার এই সোনার সন্তানের প্রতি।
শামসুদ্দীন আবুল কালামের জন্ম ১৯২৬ সালে বাংলাদেশের বরিশালে। ।১৯৫৯ থেকে ১৯৯৭ সুদীর্ঘ ৩৮ বছর ইতালীতে প্রবাস জীবনের শেষ দিনগুলোতে  তাঁকে প্রচন্ড নিঃসঙ্গতা গ্রাস করলেও দেশটির সাহিত্য সংস্কৃতি এবং কর্মক্ষেত্রে ছিল তাঁর সফল পদচারণা।

ইতালীতে আসার আগেই পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হয় শামসুদ্দীন আবুল কালামের বেশ ক’টি বিখ্যাত উপন্যাস। বিখ্যাত এই কথাসাহিত্যিকের  সাড়াজাগানো উপন্যাস ‘কাশবনের কন্যা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে। পরবর্তীতে পাঠকের চাহিদা মেটাতে তিনি  আরো কিছু উপন্যাস লিখেন। এর মধ্যে রয়েছে দুই মহল (১৯৫৫), কাঞ্চনমালা (১৯৫৬), জীবন কান্ড (১৯৫৬), জাইজঙ্গল (১৯৭৮), মনের মতো স্থান (১৯৮৫), সমুদ্রবাসর (১৯৮৬), যার সাথে যার (১৯৮৬), নবান্ন (১৯৮৭) ও কাঞ্চনগ্রাম (১৯৮৭)। ভাষা আন্দোলনের বছর ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয় শামসুদ্দীন আবুল কালামের গল্প সংগ্রহ ‘অনেক দিনের আশা’।পরের বছর ‘ঢেউ’ ও ‘পথ জানা নেই’। দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫) এবং সাহের বানু (১৯৫৭) এই বাঙ্গালী গুণীজনের অমর সৃষ্টি। ১৯৫৯ সালে ইতালী পাড়ি জমাবার আগে সংসার জীবনে সুখী হতে পারেননি শামসুদ্দীন আবুল কালাম। কন্যা ক্যামেলিয়ার জন্মের পর স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়।এর পর তাঁর সাবেক স্ত্রীকে বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মোস্তফা। ক্যামেলিয়া পরবর্তীতে মোস্তফার পরিচয়েই বড়ো হন।

 ১৯৫৯ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন তিনি ইতালিতে। দেশটির ‘প্রথম বাংলাদেশী’ কথা সাহিত্যিক ও উপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের জন্ম ১৯২৬ সালে বাংলাদেশের বরিশালে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইতালি থেকেই ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন বাংলা দেশের অভ্যুদয়ে। সত্তরের দশকে শামসুদ্দীন আবুল কালাম কর্মরত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) রোমের সদর দফতরে এবং ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসে। ইতালিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও ছিল তাঁর পদচারণা। ইতালিতে আসার আগেই পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হয় শামসুদ্দীন আবুল কালামের বেশ ক’টি বিখ্যাত উপন্যাস। 


সাত ও আটের  দশকে ইতালিতে খুব স্বল্পসংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস ছিল । ন'য়ের দশকে দেশটিতে বাংলাদেশীদের আগমন দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও স্বদেশীদের সঙ্গে খুব একটা মেশা হয়ে ওঠেনি শামসুদ্দীন আবুল কালামের । বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরির সূত্রে আরেক প্রবীণ বাংলাদেশী লুৎফর রহমান যিনি এখনও জীবিত আছেন, মূলত তাঁর সঙ্গেই কদাচিৎ দেখা-সাক্ষাত হতো শামসুদ্দীন আবুল কালামের।

অভিমানী এই কথাসাহিত্যিক জীবনের শেষ দিনগুলোতে এতটাই জীবনবিমুখ হয়ে উঠেছিলেন যে, ব্যাংকে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও বাজার করতেন না এবং অনেকটা না খেয়েই ধীরে ধীরে ধাবিত হন নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে।

No comments:

Post a Comment