Friday, February 20, 2015

শুয়োরাধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ আইনজীবী জিওফ্রে রবার্টসন কিউসির ওহীবাণী


লন্ডন থেকে শুয়োরাধিকার রক্ষার জন্যে ওহীবাণী নাজিল করছেন ব্রিটিশ আইনজীবী জিওফ্রে রবার্টসন কিউসি। জোর গলায় দাবী করছেন, ৭১রে মুক্তিযোদ্ধারাই মূলত যুদ্ধাপরাধ করছে, ওদের বিচার না করে বৃদ্ধ ইসলামী নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানো মানবতার লঙ্ঘন। এই সার্টিফিকেট পায়া দেশের আপামর শুষিলসমাজের নেতায়া থাকা মানবতার দণ্ড দাঁড়ায়া গেছে, ম্যা ম্যা করে আকাশবাতাস মুখরিত করে তুলতেছে তারা, বিরোধীদলকে শেষ করে দিতেই এই প্রহসনের বিচার, ৪৪ বছর পর বানোয়াট অভিযোগ আনা হইছে এই বৃদ্ধ মানুষগুলার উপর, কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ নাই...

মোয়াজ্জেম হোসেন খান ছিলেন পাকশী রেলওয়ে কন্ট্রোলার। কিন্তু সবাই তারে জয় বাঙলার লোক হিসেবেই চিনতো। যুদ্ধের শুরুতেই বড় ছেলে তহুরুল আইসা বলল, আব্বা, যুদ্ধে গেলাম, ফিরুম কিনা জানি না, তবে ফিরলে দেশটারে স্বাধীন কইরাই ফিরুম। মোয়াজ্জেম বাঁধা দিতে যায়া ত্থাইমা গেলে, বুকে পাথর বাঁধলেন, ছেলে গেল মুক্তিযুদ্ধে। ১২ই এপ্রিল শান্তিকমিটির সহসভাপতি আবদুস সুবহান পাকিস্তানী মিলিটারিরে শেরশাহ রোডে আইনা বলল, ইয়ে হ্যায় গাদ্দার কা ঘর, সালে জয় বাঙলা কা আদমি হ্যায়। প্রান বাঁচাইতে মোয়াজ্জেম,স্কুল শিক্ষক মোতালেব, নাজমুলসহ প্রায় ২০-২৫ জন আশ্রয় নিলেন ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। আল্লাহর ঘর মসজিদে নিশ্চয়ই তাদের মারবে না ওরা, শত হইলেও মুসলমান তো। মাওলানা আবদুস সুবহান রাজাকারগুলারে নিয়া টাইনা বাইর করল মানুষগুলারে মসজিদ থেইকা, টানতে টানতে নিয়া গেল পাশের রেলওয়ে ডিপোতে। তারপর ইসলাম কায়েমের নামে আল্লাহু আকবর বইলা জবাই করল নিরস্ত্রমানুষগুলারে, তারা নাকি ইসলামের শত্রু। রক্ষা পাইল না পাবনার সুজানগরের ৪০০ মানুষ, আল্লাহর নামে ইসলাম কায়েমের কথা বইলা তাদের গুলি কইরা, জবাই কইরা বেয়নেট দিয়া খোঁচাইতে খোঁচাইতে মেরে ফেলা হইল সুবহানের নির্দেশে। আজকে ৪৪ বছর পর অবশ্য শুষিলসমাজের কাছে এইগুলা প্রোপ্যাগান্ডা মাত্র...
আমার নানা মোহাম্মদ আলী প্রামানিক ছিল জয় বাঙলার লোক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি মানুষটারে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সবাই ভালবাসতো। ২রা মে যখন সুবহান পাকি মিলিটারি নিয়া সাহাপুর গ্রামে হামলা চালাইল, তখন নানা বাড়ি ছিল না। ১৬টা ফ্যামিলির বিশাল যৌথ পরিবার ছিল নানাদের, সবাইরে এক লাইনে দাড় করানো হইল। তারপর মেয়েগুলারে আলাদা করে সবার সামনেই ঝাপায়া পড়ল শুয়োরগুলা, ছিঁড়ে-খুবলে খাইতে লাগলো। নানার ছোট্ট একটা বোন ছিল, পেট থেকে যোনি পর্যন্ত বেয়নেট দিয়ে এক টানে ছিঁড়ে ফেলা হইল।বাকিদের গুলি করে বাড়িতে আগুন ধরায়া দেওয়া হইল। গ্রামের বেশিরভাগ ছিল হিন্দু পরিবার, প্রথমে রাজাকাররা গনিমতের মাল হিসেবে প্রত্যেকটা বাড়ি লুট করল, তারপর ব্রাশফায়ার কইরা মারলো সবাইরে, শেষে বাড়িতে আগুন ধরায়া দিল। নানা এসে দেখে, সব পুড়ে ছাই। সহ্য করতে পারে নাই, একটা দা হাতে ঝাপায়া পড়ছিল পাকি শুয়োরগুলার উপর। ব্রাশফায়ার কইরা মারার পর সুবহান তার শরীর থেকে চামড়া ছিলে গাছে টাঙ্গায়া রাখছিল, সবাইরে দেখায়া বলছিল, এইটা হইল গাদ্দারের শাস্তি, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে এই পরিনতি হবে...
আমার নানু তখন ঝোপের আড়ালে লুকায়ে, সব দেখেও কিচ্ছু করতে পারল না। আম্মু তখন পেটে, নয়টা মাস... কি কষ্ট, কি যন্ত্রণা... আমার মা কোনোদিন তার বাবাকে দেখে নাই, আব্বু বলে কারোর কোলে ঝাপায়া পড়ার সুযোগ পায় নাই কোনোদিন, ভাইয়ের সংসারে মানুষ হইছে, বাবার আদরটুকু পাওয়ার সৌভাগ্য হয় নাই, নীরবে কেঁদে গেছে শুধু...
তাই আজকে যখন শুষিলসমাজ পাকিস্তানী শুয়োরের মতো ঘোঁত ঘোঁত করে বৃদ্ধ মানুষদের ফাঁসিতে ঝোলানোর নিন্দা জানায়, মাথার রক্ত চড়ে যায়। মসজিদের মধ্যে ঢুকেও বাঁচতে পারে নাই মোয়াজ্জেমরা, ইসলামের নামে তাদের জবাই করছিল সুবহান, চামড়া ছিলে গাছে ঝুলায়া রাখছিল মোহাম্মদ আলীর, আজকে যখন সেই সুবহানরে ইসলামের সেবক বানায়া ইসলাম ধ্বংসের প্রতিবাদ জানায় কিছু শুয়োরের বাচ্চা, মাথার ভিতরে হঠাৎ আগুন ধইরা যায়। আলাদা করে ফেলতে ইচ্ছা করে এই জারজ শুয়োরগুলার প্রতিটা কোষ... খুনি হইতে ইচ্ছা করে খুব... খুনি হইতে ইচ্ছা করে...
- Rahman Raad

No comments:

Post a Comment