Wednesday, March 20, 2013

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আর নেই




বুধবার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে জিল্লুর রহমানের। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন।

দায়িত্ব নেয়ার তিন বছরের মাথায় জীবনাবসান ঘটল দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের।

অসুস্থ জিল্লুর রহমানকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন স্পিকার আবদুল হামিদ।

গত ১০ মার্চ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেয়া হয় জিল্লুর রহমানকে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে তার আগের দিনই ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

জিল্লুর রহমান ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব পালনের মধ্যে অসুস্থতার জন্য কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। গত ডিসেম্বর মাসেও যুক্তরাজ্যে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়।

জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জন্ম গ্রহণ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় এই নেতা '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেও যোগ দেন।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার স্ত্রী, মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভী রহমানকে হারান। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তারের সময় শেখ হাসিনা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব জিল্লুর রহমানকে দেন।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনসহ '৭৩, '৮৬, '৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর-ভৈরব আসন থেকে জিল্লুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Tuesday, March 19, 2013

‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা দিন: খালেদাকে ইনু



মঙ্গলবার পিআইডির সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। আমরা তো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। তাহলে ক্ষমতায় গিয়ে তিনি কাদের বিচার করবেন?” “প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা কি খালেদা জিয়ার কাছে আছে? আপনি কি জানেন না, জামায়াতে ইসলামের এই লোকগুলো একাত্তরে ঘোষণা দিয়ে, বিবৃতি দিয়ে, টিক্কা খান-ইয়াহিয়া খানের পাশে ছবি তুলে যুদ্ধাপরাধকে সমর্থন করেছিল,” প্রশ্ন করেন ইনু।

তিনি বলেন, “জামায়াতের এই নেতারা বাংলার সাত কোটি মানুষকে কাফের বলেছিল। মা-বোনদের ইজ্জত হরণে পাকিস্তানি সেনবাহিনী যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনকে ফতোয়া দিয়ে তারা জায়েজ করেছিল।

ক্ষমতায় গেলে ‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার যে কথা খালেদা জিয়া বলেছেন- তা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।

এ সময় খালেদার কথিত সেই ‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীদের তালিকাও প্রকাশের আহ্বান জানান মন্ত্রী।


এই বেলুন উড়ছে শহীদদের উদ্দেশে চিঠি নিয়ে। শাহবাগ আন্দোলনের ষষ্ঠদশ দিন বুধবার এই কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা।
খালেদা জিয়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে ‘নষ্টদের’ মঞ্চ অ্যাখ্যা দিয়ে সেখান থেকে ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার যে অভিযোগ করেছেন সে বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন।
তিনি জানতে চান, “ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগ যারা ব্যবহার করেন তারা কি নাস্তিক? তারা কি নষ্ট?”

“আপনার কাছ থেকে আমরা সত্য ভাষণ চাই। আপনি নাস্তিকদের তালিকা প্রকাশ করুন। সরকার কিভাবে নাস্তিক তা বলুন। নইলে আর নাস্তিক নাস্তিক বলবেন না,” বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে বলেন জাসদ সভাপতি ইনু।

সব ধরনের ‘অপপ্রচার, গুজব ও তথ্য সন্ত্রাস’ বন্ধের জন্য বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ইতিহাস বিকৃত করা খালেদা জিয়ার একটি হবি (শখ)।
উনি ইতিহাসে বিশ্বাস করেন না। জামায়াত-বিএনপি মিথ্যাচারকে স্বতন্ত্র শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।”

মন্ত্রীর ভাষায়, খালেদা জিয়া ও জামায়াত যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে যে অবস্থান নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার ও গুজব ছড়াচ্ছে, একাত্তরে পাকিস্তানীরাও একইভাবে মিথ্যাচার ও গুজবের আশ্রয় নিয়েছিল। বিএনপির ভিতরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতায় বিশ্বাসী নেতাকর্মীরা আছেন- এমন মন্তব্য করে ইনু বলেন, “তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।… আমি আশা করব, আপনারা সক্রিয় হবেন এবং আপনাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই মিথ্যাচার থেকে বিরত করে যুদ্ধপরাধীদের পক্ষ থেকে সরে আসার চেষ্টা চালাবেন।”

আর তাতে ব্যর্থ হলে জনগণের পক্ষ নিয়ে খালেদা জিয়াকে ত্যাগ করে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে তাকে বিরত থাকার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’ বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মন্ত্রী জানান, নবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তিকারীদের সনাক্ত করতে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনতে ইতোমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শিগগিরই যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরকারের কার্ক্রমকে ‘নাস্তিক্যবাদের’ সঙ্গে তুলনা করে খালেদা জিয়া ‘ধর্মবিরোধী কাজ’ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
যুদ্ধাপরাধের বিচার, বিচার প্রক্রিয়া ও আদালতের স্বচ্ছতা নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ এবং ধর্ম, গণজাগরণ মঞ্চ, পুলিশের কার্যক্রম, ইতিহাস, নির্বাচন, সংসদে বসা, সংসদ বর্জন ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত মিথ্যাচার করছে বলেও অভিযোগ করেন ইনু।

এছাড়া ভিটামিন ক্যাপসুল খেয়ে শিশুমৃত্যু ও চাঁদে সাঈদীকে দেখা যাওয়ার ‘গুজব ছড়িয়ে’ বিএনপি-জামায়াত ‘তথ্য সন্ত্রাস’ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এসব ‘মিথ্যাচার ও গুজবের’ বিভিন্ন দিক নিয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাত পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী।

জামায়াত নিষিদ্ধ করা ও অপপ্রচারকারী গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন আইন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ইনু বলেন, “আমরা নাজুক পরিস্থিতিতে দেশবাসীর কাছে বিরোধীদলের অগণতান্ত্রিক আচরণ তুলে ধরেছি।”অন্যদের মধ্যে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।


Monday, March 18, 2013

সাকার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি মামলা: আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ



গাজীপুর: মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও কারাগারে আটক সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলাটির তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক আহসান হাবিব এ নির্দেশ দেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১২টায় বাদীর জবানবন্দি শুনে আদালত পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। গাজীপুরের কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম সংশ্লিষ্ট আদালতের বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে এ আদেশের তথ্য নিশ্চিত করেন।

সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলাটি দায়ের করা হয় সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায়। মামলায় কাশিমপুর কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত হাজতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বর্তমান সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে তার সেবায় নিয়োজিত এক কারাবন্দি তরুণের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত ওই তরুণকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ভিকটিমের পিতা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় জেল থেকে মুক্ত করার প্রলোভন দিয়ে ওই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত মূখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক আহসান হাবিবের আদালতে ওই মামলা দায়ের করেন ঘটনার শিকার তরুণের পিতা আঃ সালাম। বাদীর পিতার নাম হামিদ মিয়া। বাড়ি শেরপুর জেলার সদর উপজেলার হাতিআলগা রসুলপুর গ্রামে।

ফৌজদারি দণ্ডবিধি আইনের ৩৭৭/৩২৩/৫০৬(২) ধারায় দায়েকৃত মামলাটির বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত আদেশের অপেক্ষায় রেখে দেন। মামলার স্বাক্ষী বাদী, তার ছেলে ঘটনার শিকার তরুণ ও কাশিমপুর কারাগার-১ এর জেল সুপার জামিল আহমেদ চৌধুরী।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ‘‘বাদীর ছেলে শেরপুর থানার একটি মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এ বন্দি ছিলেন। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী একই কারাগারে ২৩ অক্টোবর ২০১২ সাল থেকে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে রয়েছেন। ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ ভিকটিমকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সেবক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। আসামির সেবক হওয়ার সুবাদে ভিকিটম নিয়মিত আসামির কক্ষে যাতায়াত করতেন।

‘‘আসামি ভিকটিমের কাছে থেকে মিথ্যা মামলায় সাজা হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে জেল থেকে মুক্ত করার আশ্বাস দেন। ভিকটিম জেলমুক্তির আশায় আসামির সেবা যত্নে বেশি করে মনোনিবেশ করেন। গত ২০ নভেম্বর ২০১২ রাত ৯টার সময় ভিকটিম আসামির কক্ষে সেবাযত্ন করাকালে আসামি ভিকটিমকে তার শরীর ম্যাসেজ করে দিতে বলেন। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে ও জেলমুক্ত হওয়ার আশায় আসামির শরীর টিপে দিতে থাকলে এক পর্যায়ে যৌন নিপীড়ন করেন।’’

‘‘এতে ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে আসামি ভয়-ভীতি দেখিয়ে ওই সংবাদ কাউকে জানালে খুন করা হবে বলে হুমকি দেন। ভিকটিম আসামির ভয়ে ও দ্রুত জেলমুক্তির আশায় ঘটনাটি কাউকে জানাননি।’’ মামলায় বলা হয়, ‘‘২০ নভেম্বর ২০১২ থেকে ৫ জানুয়ারি ২০১৩ রাত ১১টা পর্যন্ত ওই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।’’

‘‘এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ বাদী তার ছেলের সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গেলে ভিকটিম তার বাবাকে ঘটনা খুলে বলেন। বাদীর পরামর্শে ভিকটিম ১৩ ফেব্রুয়ারি কারা মহাপরিদর্শককে লিখিত ভাবে ঘটনা জানালেও কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর ভিকটিমের পিতা গাজীপুর সদরের জয়দেবপুর থানায় একটি এজাহার দেন। কিন্তু পুলিশ এজাহার গ্রহণ করেনি।’’এ অবস্থায় সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় বাদী গাজীপুর আদালতে হাজির হয়ে মামলা দায়ের করেন।মামলার এজাহারে ভিকটিমের পায়ুপথ ও মুখ ব্যবহার করে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গাজীপুর বারের সাবেক সভাপতি ও গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ ওয়াজ উদ্দিন মিয়া।বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Sunday, March 17, 2013

একজন জামাল নজরুল ইসলাম এবং মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ: ড. অভিজিৎ রায়


অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের নাম আমি শুনি ২০০৫ সালে, আমার ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটি লেখার সময়। বইটির পঞ্চম অধ্যায়টির ওপর কাজ করছিলাম। অধ্যায়টির শিরোনাম ছিল ‘রহস্যময় জড় পদার্থ, অদৃশ্য শক্তি এবং মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ’। মহাবিশ্বের অন্তিম ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাজকর্মগুলো পড়ার সময়ই আমার নজরে আসে, বাংলাদেশের একজন পদার্থবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম এর উপর উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, এবং তার একটি চমৎকার বই আছে ইংরেজিতে – ‘The Ultimate Fate of the Universe’। বইটি উনি লিখেছিলেন ১৯৮৩ সালে। বেরিয়েছিল বিখ্যাত কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে। বইটির পেপারব্যাক বেরোয় ২০০৯ সালে। আমার কাছে অবশ্য বইটির ১৯৮৩ সালের হার্ডকভারের কপিটিই ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বইটি হারিয়ে যায় যখন আমি সিঙ্গাপুর থেকে আমেরিকায় পাকাপাকিভাবে চলে আসার পাঁয়তারা করছিলাম। আমার জীবনের এই ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক বইই আমি হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু এই বইটির জন্য যে দুঃখ আমার পুঞ্জিভূত হয়েছিল, তা আজও আমার যায়নি।

দুঃখ পাবার যৌক্তিক কারণ তো আছে। আমি ভাবতাম মহাবিশ্বের কপালে ঠিক কি আছে এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা আর ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং, ফাইনম্যান, অ্যালেন গুথ, মাইকেল টার্নার, লরেন্স ক্রাউসের মতো দুনিয়া কাঁপানো বিজ্ঞানীরাই। কিন্তু জামাল নজরুল ইসলামের মতো বিজ্ঞানীরাও যে এ নিয়ে কাজ করেছেন, এবং কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসের মতো প্রকাশনা থেকে বই বের করছেন, সেটা জানা সে সময় শুধু আমাকে আনন্দ দেয়নি, রীতিমত অবাক করে দিয়েছিল। আরো অবাক হলাম যখন জানলাম বইটি নাকি ফরাসি, ইতালীয়, জার্মান, পর্তুগিজ, সার্ব, ক্রোয়েটসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আমার অবাক হবার পাল্লা বাড়তেই থাকল যখন জানলাম, এই নিভৃতচারী বিজ্ঞানীর কেবল একটি নয় বেশ কয়েকটি ভালো ভালো বই বাজারে আছে। ‘রোটেটিং ফিল্ডস ইন রিলেটিভিটি’, ‘ইনট্রোডাকশন টু ম্যাথেমেটিক্যাল কসমোলজি’, এবং ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’ নামের কঠিন কঠিন সব বই। বইগুলো আমেরিকার বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়। বাংলাতেও উনার একটা বই আছে ‘কৃষ্ণবিবর’ নামে। বাংলা একাডেমী থেকে একসময় প্রকাশিত হয়েছিল।

আমি ততদিনে উনার কাজকর্ম সম্বন্ধে জানতে শুরু করেছি। জানলাম, উনি লন্ডনস্থ কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়-এর অ্যাপ্লায়েড ম্যাথেমেটিক্স অ্যান্ড থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছিলেন ১৯৬৪ সালে। সাধারণত একাডেমিক লাইনে থাকলে পিএচডি করাই যথেষ্ট, এর বেশি কিছু করার দরকার পড়ে না। পড়ে না যদি না তিনি জামাল নজরুল ইসলামের মতো কেউ না হন। ১৯৮২ সালে অর্জন করেন ডিএসসি বা ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি, যেই ডিগ্রি সারা পৃথিবীতেই খুব কমসংখ্যক বিজ্ঞানী অর্জন করতে পেরেছেন। অবশ্য কৃতবিদ্য এই অধ্যাপকের একাডেমিক অঙ্গনে সাফল্যের ব্যাপারটা ধরা পরেছিল অনেক আগেই। মর্নিং শোজ দ্য ডে। সেই যে, ১৯৫৭ সালে কলকাতা থেকে অনার্স শেষ করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে গণিতশাস্ত্রে ট্রাইপস করতে গিয়েছিলেন। তিন বছরের কোর্স, উনি সেটা দুই বছরেই উনি শেষ করে ফেলেন। ভারতের বিখ্যাত জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী জয়ন্ত নারলিকার, যার নাম ফ্রেডরিক হয়েলের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘হয়েল-নারলিকার তত্ত্ব’-এর কারণে, তিনি সেখানে নজরুল ইসলামের সহপাঠী ছিলেন। পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে তার বন্ধু তালিকায় যুক্ত হয়েছিলেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ব্রায়ান জোসেফসন, স্টিফেন হকিং, আব্দুস সালাম এবং রিচার্ড ফাইনমেন এর মতো বিজ্ঞানীরা। ফাইনমেন তাকে তার নিজের বাড়িতে দাওয়াত করেও খাইয়েছিলেন, বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে উপহার দিয়েছিলেন একটা মেক্সিকান নকশিকাঁথাও।

অবশ্য কার সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল আর না ছিল সেটা তাকে পরিচিত করেছে ভাবলে ভুল হবে। তিনি পরিচিত ছিলেন নিজের যোগ্যতাবলেই। পিএইচডি শেষ করে তিনি দুবছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড-এ কাজ করেন। মাঝে কাজ করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্বখ্যাত ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবেও। ১৯৭৮ সালে লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে রিডার পদে উন্নীত হন।

সেভাবেই থাকতে পারতেন। কিন্তু তা না করে ১৯৮৪ সালে তিনি একটা বড় সিদ্ধান্ত নিলেন। জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলোর একটি। বিলেত-আমেরিকার লক্ষ টাকা বেতনের লোভনীয় চাকরি, গবেষণার অফুরন্ত সুযোগ, আর নিশ্চিত নিপাট জীবন সব ছেড়ে ছুড়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিধ্যালয়ে তিন হাজার টাকার প্রফেসর পদে এসে যোগ দিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে এমনকি এই তিনহাজার টাকা দিতেও গড়িমসি করেছিল। তারা বেতন সাব্যস্ত করেছিল আটশ টাকা। কিন্তু তারপরেও পাশ্চাত্য চাকচিক্য আর ডলার-পাউন্ডের সব মোহ হেলায় সরিয়ে দিয়ে অধ্যাপক নজরুল বিলেতের বাড়ি ঘর জায়গা জমি বেচে চলে আসলেন বাংলাদেশে। দেশটাকে বড়ই ভালোবাসতেন তিনি। তিনি নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকার চিন্তা আমার কখনোই ছিল না। দেশে ফিরে আসার চিন্তাটা প্রথম থেকেই আমার মধ্যে ছিল, এটার ভিন্নতা ঘটেনি কখনোই। আরেকটা দিক হলো, বিদেশে আপনি যতই ভালো থাকুন না কেন, নিজের দেশে নিজের মানুষের মধ্যে আপনার যে গ্রহণযোগ্যতা এবং অবস্থান সেটা বিদেশে কখনোই সম্ভব না।” তার দেশপ্রেমের নিদর্শন ১৯৭১ সালেও তিনি দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন নিরস্ত্র জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, নির্বিচারে হত্যা খুন ধর্ষণে মত্ত হয়েছিল, তখন পাক-বাহিনীর এই আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিও লিখেছিলেন।

দেশে ফিরে বিজ্ঞানের উন্নয়নের জন্য অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে। শুধু বিজ্ঞানেই তাঁর অবদান ছিল না, তিনি কাজ করেছেন দারিদ্র দূরীকরণে, শিল্প ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি মনে করতেন, আমাদের দেশটা যেহেতু কৃষিনির্ভর, তাই আমাদের শিল্পনীতি হওয়া চাই ‘কৃষিভিত্তিক, শ্রমঘন, কুটিরশিল্প-প্রধান’ এবং ‘প্রধানত দেশজ কাঁচামাল-নির্ভর’।
তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ-এর ক্ষতিকারক প্রেসক্রিপশন বাদ দিয়ে নিজেদের প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটা সুষ্ঠু শিল্পনীতির প্রতি সবসময় গুরুত্ব দিতেন। পাশ্চাত্য সাহায্যের ব্যাপারে তার একটি বিখ্যাত উক্তি আছে –“তোমরা শুধু আমাদের পথ থেকে সরে দাঁড়াও, আমাদের ভালোমন্দ আমাদেরকেই ভাবতে দাও। আমি মনে করি, এটাই সর্বপ্রথম প্রয়োজনীয়।”

যারা অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের কাজ এবং চিন্তাভাবনা আরো বিস্তৃতভাবে জানতে চান তারা আলম খোরশেদ ও এহসানুল কবিরের নেওয়া বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম-এর সাক্ষাৎকারটি গুগলে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন।

আইনস্টাইন যেমন বেহালা বাজাতেন, সত্যেন বোস যেমন এস্রাজ, ঠিক তেমনি জামাল নজরুল ইসলাম পছন্দ করতেন পিয়ানো বাজানো (এ ব্যাপারটা আমি হাল্কাভাবে শুনেছিলাম, তবে বিস্তৃতভাবে জানলাম তার ছাত্র প্রিয়ম মজুমদারের একটি ফেসবুক নোট থেকে)।
তিনি ছিলেন গজল এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের বড় ভক্ত, পিয়ানোতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর তুলতে তিনি পছন্দ করতেন। বাড়িতে বন্ধুর ছোট মেয়েটিকে প্রতি শুক্রবার ‘গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ’ পিয়ানোতে বাজিয়ে শোনাতেন।

আর ভালোবাসতেন স্ত্রী সুরাইয়া ইসলামকে! তার স্ত্রীও ছিলেন ডক্টরেট। একটা কনফারেন্সে তাদের দেখা, প্রেম এবং পরিণয়। শোনা যায়, ৫৩ বছরের দাম্পত্য জীবনে জামাল নজরুল তাঁর স্ত্রীকে ছাড়া কোথাও যেতেন না। কোনো অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে চলার সময় সবসময় স্ত্রীর হাত ধরে রাখতেন।

অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ১৬ মার্চ। এই নিভৃতচারী কর্মমুখর ক্ষণজন্মা বিজ্ঞানীর প্রতি রইলো সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ড. অভিজিৎ রায়: আমেরিকা প্রবাসী গবেষক, ব্লগার এবং মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ‘ভালবাসা কারে কয়’ (শুদ্ধস্বর, ২০১২) সহ সাতটি আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন ভিত্তিক বইয়ের লেখক।বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Saturday, March 16, 2013

বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলাম আর নেই


চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভৌতবিজ্ঞানী ও প্রফেসর ইমিরেটাস ড. জামাল নজরুল ইসলাম আর নেই। বিশ্ববরেণ্য এ শিক্ষাবিদ চট্টগ্রামের বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনের সামনের সারির সংগঠক ছিলেন।শুক্রবার রাত ১২টায় চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিজ্ঞানী জামাল নজরুল শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।



ওই হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. নূরুল হক বলেন, ‘জামাল নজরুল ইসলাম স্যারকে গত বুধবার থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। গত রাত ১২টার দিকে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর রাত আড়াইটার দিকে তার স্বজনেরা মরদেহ নগরীর সার্সন রোডে স্যারের বাসায় নিয়ে যান।’
১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ড. জামাল নজরুল ইসলাম ঝিনাইদহ সদরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তখন এই শহরের মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জজের সমতুল্য) ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১ বছর তখনই তার বাবা কলকাতায় বদলি হন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমিরেটাস ছিলেন। বিশিষ্ট এ বিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান করেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।
চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন,‘স্যার অসুস্থ শরীর নিয়ে গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।’
ড. জামাল নজরুল গণিত এবং পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। বেশকিছু গাণিতিক সূত্র এবং জটিল গাণিতিক তত্ত্বের সহজ পন্থার উদ্ভাবক জামাল নজরুল মহাকাশের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন। তার লেখা বেশকিছু বই অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ড. জামাল নজরুল ইসলাম একাধারে বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ। তিনি মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত।
ড. জামাল নজরুল প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলনের পাশাপাশি পরিবেশসহ বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। বিজ্ঞানী ড.জামাল নজরুল ইসলামের মরদেহ শনিবার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।
মৃত্যুকালে জামাল নজরুল ইসলাম স্ত্রী ও দু’মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর বড় মেয়ে সাদাফ পেশাগত জীবনে মাইক্রো বায়োলজিস্ট ও ঢাকায় কর্মরত এবং ছোট মেয়ে নার্গিস সাইকোলজিস্ট ও লন্ডনে কর্মরত। বর্তমানে সবাই চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।
তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর খবর শুনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা তার বাসায় ছুটে গেছেন।
শিক্ষাজীবন
জামাল নজরুল প্রথমে ভর্তি হন কলকাতার মডেল স্কুলে। এই স্কুল থেকে পরবর্তীতে শিশু বিদ্যাপীঠে। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যাপীঠেই পড়াশোনা করেন তিনি। কলকাতায় মডেল স্কুলের পর চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাকে ‘ডাবল প্রমোশন’ দিয়ে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।
চট্টগ্রামের বিখ্যাত এ বিদ্যালয়ে তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। মূলত এখানে পড়ার সময়ই গণিতের প্রতি তার অন্যরকম ভালবাসার সৃষ্টি হয়। নবম শ্রেণীতে উঠার পর পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।
সেখানে গিয়ে ভর্তি হন লরেন্স কলেজে। এই কলেজ থেকেই তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ ও হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পাশ করেন। সে সময় সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ‘ও লেভেল’ এবং হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ‘এ লেভেল’ বোঝাতো।
উল্লেখ্য হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজে তিনি একাই গণিত পড়েছিলেন। এটা বেশ উচ্চ পর্যায়ের গণিত হওয়ায় সবাই নিতে চাইতো না। এ সময়ই গণিতের প্রতি ‍তাঁর ঝোঁক ও ভালবাসা তৈরি হয়।
লরেন্স কলেজের পাঠ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেণ্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে যান এবং সেখান থেকে বিএসসি অনার্স করেন।
বিএসসি শেষে ১৯৫৭ সালে জামাল নজরুল ইসলাম কেমব্রিজে পড়তে যান। কেমব্রিজের প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে আবারও স্নাতক ডিগ্রি (১৯৫৯) অর্জন করেন। তারপর সেখান থেকেই মাস্টার্স (১৯৬০) ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসসিডি (ডক্টর অফ সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
ড. জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডে ডক্টরাল-উত্তর ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপক জামাল নজরুল কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি-তে (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি) কাজ করেন ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
১৯৭১ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভিজিটিং সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের প্রভাষক ছিলেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ, কার্ডিফ (বর্তমানে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়) এর সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলে ফেলো ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে রিডার পদে উন্নীত হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজে ১৯৬৮, ১৯৭৩ ও ১৯৮৪ সালে ভিজিটিং সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ সালে ড. জামাল নজরুল বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
রচনাবলী
অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম তার গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে একাধিক বই লেখেন। এসব বই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়।
তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স১৯৮৩ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর তা বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় অনুদিত হয়।
এছাড়া তার রোটেটিং ফিল্ড্‌স ইন জেনারেল রিলেটিভিটি গ্রন্থটি ১৯৮৫ সালে কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত হয়। একই প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ। যা পরে স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত হয়।
তার অন্যান্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি (১৯৯২), বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত কৃষ্ণ বিবর এবং রাহাত-সিরাজ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ, শিল্প সাহিত্য ও সমাজ ।
এছাড়া ডব্লিউ বি বনোর সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪)।
পুরস্কার
বিশিষ্ট এ বিজ্ঞানী একুশে পদকসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত হন। ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন আজীবন সম্মাননা পদক লাভ করেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ১৯৮৫ সালে তাকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। ১৯৯৪ সালে তিনি ন্যাশনাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি মেডেল পান। ১৯৯৮ সালে ইতালির আবদুস সালাম সেণ্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমী অফ সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাঁকে মেডাল লেকচার পদক দেয়া হয়।

Friday, March 15, 2013

আপনি কাপুরুষ বিধায় ত্বকীকে হত্যা করেছেন,যদি বীরপুরুষ হয়ে থাকেন আমাকে হত্যা করুন:শামীম ওসমানকে মেয়র ডা.আইভী


নারায়ণগঞ্জ: মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে দায়ী করেছেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।


ত্বকী হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে পাঁচ দিনের টানা কর্মসূচির শেষদিন শুক্রবার বিকেলে শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে আয়োজিত গণজমায়েতে তারা এ অভিযোগ করেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।

তারা বলেছেন, “শামীম ওসমান নিজেকে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন ত্বকীকে হত্যা করে। প্রশাসন যদি এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুনিদের বের করতে না পারে তাহলে শামীম ওসমানকে বর্জন করা হবে।”

শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, “আপনি কাপুরুষ বিধায় ত্বকীকে হত্যা করেছেন। আপনি যদি বীরপুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে হত্যা করুন। যদি খুনিদের ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনাদের সঙ্গে রাজনীতি করবো, নইলে আপনাকে বর্জন করা হবে।”

এর আগে আইভী যখন বক্তব্য শুরু করেন তখন স্লোগান ওঠে, “গডফাদারের আস্তানা, নারায়ণগঞ্জে রাখবো না।”

আইভী শহীদ মিনারে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষকে দেখে বলেন, “নারায়ণগঞ্জের মানুষ আজ প্রতিহত করার প্রত্যয়ে মাঠে নেমেছেন। আজ সময় এসেছে প্রতিরোধ, প্রতিবাদ ও প্রতিশোধ নেওয়ার। এই শহরে অনেক সিরিজ হত্যা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে স্তব্ধ করে দিতে অনেক খুন হয়েছে। কিন্তু আর মেনে নেওয়া যায় না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন মুক্তি চায়।”

৩০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জবাসী অত্যাচার সহ্য করে আসছে উল্লেখ করে আইভী বলেন, “আমরা আর শিকলে বন্দি থাকতে চাই না। আমরা ত্বকীর মৃত্যুর পর এ অবস্থার মুক্তি চাই। আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়তে চাই।”

২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আইভীর কাছে পরাজিত হন সাবেক এমপি শামীম ওসমান। এ ঘটনাকে উল্লেখ করে আইভী বলেন, “আমি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার কারণে আমি অপরাধী হতে পারি। ওই নির্বাচনে মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে কোন রক্তচক্ষুকে ভয় পায়নি। কিন্তু ত্বকীর মতো একজন মেধাবীকে হত্যা করে আপনি কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন। আপনাকে আমি নির্বাচনের পর আপনার সহায়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি তা না করে উল্টো হত্যার রাজনীতি শুরু করেছেন। আপনারা আওয়ামী লীগের নামের উপর ভর করে জুজুর ভয় দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জে ছড়ি ঘোরানোর ফায়দা লুটছেন। দলের দুঃসময়ে আপনারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে চাঁদাবাজীর টাকায় স্বর্গরাজ্যে বসবাস করেন আর আওয়ামী লীগের নিবেদিত নেতাকর্মীরা ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট করে।”

আইভী তার বক্তব্যে শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “আপনি রফিউর রাব্বির মাত্র দশ গজ দূরে ট্রাকের উপর থেকে বক্তব্য দিয়েছেন ত্বকীকে আপনি খুন করেননি। আপনি জানেন ত্বকীকে কে খুন করেছে। আপনার অনেক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। কিন্তু আমাদের তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। আমাদের যোগাযোগ সাধারণ জনগণের সঙ্গে।”

আইভী বলেন, “আপনি বলছেন, আপনি ত্বকীকে খুন করেননি। আপনাকে তো কেউ বলেনি আপনি ত্বকীকে হত্যা করেছেন। আপনি নিজেকে বিশেষ মহল ভাবছেন কেন? আর আপনি যদি জেনে থাকেন কে ত্বকীকে হত্যা করেছে তাহলে তাকে ধরে এনে জনতার সামনে হাজির করুন। সেই খুনি যদি আমি হই বা আমার ভাই হয় বা আমার দলের কোন কর্মী হয় তাহলে তাকেও হাজির করুন। নইলে আমরা আপনাকে বর্জন করবো। আর যদি খুনিদের ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনাদের সঙ্গে রাজনীতি করবো।”


তিনি বলেন, “শামীম ওসমানের বাবা সামসুজ্জোহার সঙ্গে আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ থাকলেও তারা সন্ত্রাস করেনি। কিন্তু এখন আমরা সত্য কথা বলতে গেলে জামায়াত-শিবিরের তকমা লাগানো হচ্ছে।”

আইভী বলেন, “আপনারা নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে ভদ্র শিক্ষিতদের হাতে কলমের বদলে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন আপনাদের ৩ ভাইকে রক্ষা করতে। আপনাদের কারণে মেধাবী ছাত্র গোলাম সারোয়ার এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। মাকসুদকে আপনারাই হত্যা করেছেন। নিয়াজুল এখন চেষ্টা করছে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে।”

রাব্বি আগে থেকেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রাব্বি বাস ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ, রেলওয়ের স্থাপনা উচ্ছেদ, তেল-গ্যাস নিয়ে আন্দোলন করার কারণেই অনেকেই তার উপর ক্ষুব্ধ।”

আইভী আরও বলেন, “২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে যখন আমি দেশে ফিরে আসি, তখন অনেক বাঘ-সিংহ দেশে ছিল না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যখন বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের কারণে আওয়ামী লীগের করুণ দশা ছিল, তখন এক সময়ে নারায়ণগঞ্জে রাজত্বকারী কেউ ছিল না।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আইভী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ যখন আপনাকে গণরায় দিয়েছিল, তখন দেশে কোনো গডফাদার ছিল না। আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, বিচার কাজ শেষ হলে দেশবাসী আপনার পক্ষে আবারও গণরায় দেবে। নারায়ণগঞ্জকে কোনো জল্লাদের হাতে তুলে দেবেন না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ মুক্তভাবে নিশ্বাঃস নিতে চায়। আর যদি নারায়ণগঞ্জকে কোনো জল্লাদের হাতে তুলে দিতে হয়, তবে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মেরে ফেলুন।”

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “আপনার প্রশাসনকে নির্দেশ দেন ত্বকী হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেন কোনো জজমিয়া নাটক না হয়। আমরা কোনো জজমিয়া নাটক দেখতে চাই না। নয়তো যেদিন সাধারণ মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামবে তখন নারায়ণগঞ্জে কোনো জল্লাদ, কোনো গডফাদার রক্ষা পাবে না। কোনো টর্চার সেল নারায়ণগঞ্জে থাকবে না।”

এক ভাইয়ের প্রশ্রয়ে ত্বকীকে হত্যা: রাব্বি



ছেলে হত্যাকাণ্ডের পর আটদিন পর শুক্রবার প্রকাশ্যে সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ত্বকীর বাবা নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি রফিউর রাব্বি।

তিনি বলেন, “ত্বকী আমার ছেলে, মরে গেছে। নারায়ণগঞ্জে ত্বকীর বয়সের যতো তরুণ রয়েছে তারা সবাই আমার সন্তান। তাদের জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ত্বকী আমাকে দিয়ে গেছে। সারাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করছে। আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, ঠিক সেই সময় ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। তিন ভাইয়ের এক ভাইয়ের প্রশ্রয়ে ও একটি সংস্থার সহায়তায় খুনিদের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই এক ভাইকে ডেকে নিয়ে বলেছেন নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যা নিয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয়। সেই ভাই বলেছেন, দুই-চারদিন হৈ চৈ হবে তারপর বন্ধ হয়ে যাবে।”

রাব্বি বলেন, “আমরা কোনোভাবেই মনে করি না ত্বকীকে জামায়াত-শিবির হত্যা করেছে। তাকে আমাদের সেই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হত্যা করেছে, যাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। বাস ভাড়া বাড়ার ব্যাপারে যখন আমি আন্দোলন করি, তখন বাস মালিকরা র‌্যাবের কাছে একটি তালিকা দিয়েছিল তারা মাসে কতো টাকা নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে চাঁদা দেয়। আমি সেই তালিকা দেখিয়ে ডিসি অফিসে বলেছিলাম, এই চাঁদা যদি বন্ধ করা হয় তাহলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাস ভাড়া ২২ টাকারও কম হবে।”

রাব্বি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জে একটি টর্চার সেল আছে। সেই টর্চার সেলের আশে পাশে যারা থাকে তারা রাতে চিৎকারে শব্দ শুনতে পায়, গুলির শব্দ পায়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে পুলিশ গোয়েন্দা জানে না সেই টর্চার সেলের কথা, শোনে না গুলি আর চিৎকারের শব্দ।”

শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে রাব্বি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের জামায়াতের দোসর বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের দোসর কে, তা নারায়ণগঞ্জবাসীকে জানাতে হবে। এই পর্যন্ত জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আপনি কয়জন জামায়াত-শিবিরকে মেরেছেন তা নারায়ণগঞ্জের মানুষকে বলেন। আপনার শ্বশুর জামায়াতের সংগঠন সোসাইটির সভাপতি, যে মুজাহিদের সাথে কাজ করে। আমরা অসাম্প্রদায়িতার কথা বলি আপনি সাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন। সিটি নির্বাচনের সময় আপনি হিন্দু মন্দিরে হামলা করে সংখ্যালঘুদের বুঝাতে চেয়েছেন শামীম ওসমানকে ভোট না দিলে নারায়ণগঞ্জে হিন্দুরা থাকতে পারবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আপনারা আপনাদের আধিপত্য বজায় রাখতে সন্ত্রাসী চাদাঁবাজি করিয়ে থাকেন। খুন করিয়ে থাকেন। আপনাদের তৈরি টর্চার সেলে আমাদের সন্তানদের টর্চার করে থাকেন। এসব আর হতে দেওয়া হবে না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ টর্চার সেলে হামলা চালিয়ে একটি ইঁট পর্যন্ত খুলে নিয়ে আসবে।”

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে গণজমায়েত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণঞ্জ প্রেসকাবের সভাপতি কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ খেলাঘরের সভাপতি রথিন চক্রবর্তী, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক সভাপতি ভবানি শংকর রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি রোকনউদ্দিন আহম্মেদ, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, জেলা সিপিবি সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ, মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, কাউন্সিলর অসিত বরুন বিশ্বাস, মনিরুজ্জামান, সাগর, সাবেক কমিশনার দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, রফিউর রাব্বির ছোট ভাই ওয়াহিদ রেজা।

এখানে উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ থেকে নিখোঁজ থাকে ত্বকী। এরপর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ৯ মার্চ এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালিত হয়।

৫ দিনব্যাপি কর্মসূচির প্রথম দিন সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালায় ঘেরাও ও স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় শহীদ মিনারে নাগরিক শোকসভা, ১৩ মার্চ বুধবার দিনব্যাপি এলাকায় এলাকায় গণসংযোগ, ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম


Tuesday, March 12, 2013

টার্গেটেড কিলিং জামায়াতের একাত্তরের চরিত্র ফিরিয়ে এনেছে :আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী



আবার একটি নৃশংস ও নির্মম হত্যাকাণ্ড। এবারও নিরীহ ও নির্দোষ মানুষের প্রাণ গেল জামায়াতি খুনিদের হাতে। তাঁর নাম মিরাজ আহমেদ। পঞ্চাশের মতো বয়স। কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর পরিচয় তিনি সুরকার ও গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের সর্দার গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, তার একজন সাক্ষী। এই সাক্ষীকে হত্যা করা যায়নি। তাই আক্রোশ মেটানো হলো তাঁর ছোট ভাইকে হত্যা করে।

দুই দিন আগে নারায়ণগঞ্জেও তাই করা হয়েছে। প্রজন্ম চত্বরের এক ব্লগারের কিশোরপুত্র ত্বকীকে হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সভ্যজগতে এ ধরনের পাশবিক খুনখারাবির তুলনা খুঁজে পাওয়া সহজে যাবে না। প্রথমে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে চাপাতি ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, তারপর আরেক ব্লগার প্রতিভাবান তরুণ ইঞ্জিনিয়ার রাজীবকে একই পদ্ধতিতে হত্যা। তৃতীয় দফায় আরেক সংগঠকের অসাধারণ মেধাবী ছেলে কিশোর ত্বকীকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া। তারপর দেশের খ্যাতিমান সুরকার বুলবুলের ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা একটি কথাই স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, জামায়াতিরা (এবার সঙ্গে হিযবুত তাহ্‌রীরসহ তাদের সহযোগী দলগুলো) তাদের একাত্তরের ঘাতক চরিত্রে ফিরে গেছে।

একাত্তরে জামায়াতিরা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যায় সহযোগী হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজিত করা অসম্ভব জেনে দেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে হত্যা করে। এবারও তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিদানের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ প্রজন্ম চত্বরের বিশাল যুব-জনতার মোকাবিলা করতে না পেরে একদিকে শহরে-বন্দরে পকেট-সন্ত্রাস সৃষ্টি এবং অন্যদিকে দেশের তরুণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা শুরু করেছে। কারণ এই তরুণ বুদ্ধিজীবীরাই প্রজন্ম চত্বরের প্রেরণা ও প্রাণ। জামায়াতিদের ধারণা, এই তরুণ ব্লগার তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা গেলে প্রজন্ম চত্বর ভীতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের সমাবেশ ভেঙে যাবে।

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষিত হওয়ার পর পালের গোঁদা গোলাম আযমও যাতে একই দণ্ডাদেশ না পায় সে জন্য জামায়াতিরা পাগল হয়ে উঠেছে। এই মামলার সাক্ষীকে মেরে অথবা তাঁকে না পেলে তাঁর ভাই বা সন্তানকে হত্যা করে জামায়াতিরা যুদ্ধাপরাধ মামলার সব সাক্ষীর মনে ভয় ঢুকাতে চায়। যাতে তাঁরা ট্রাইব্যুনালে এই ঘাতক ও দালালদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেন অথবা সাক্ষ্য দিলেও তা প্রত্যাহার করেন। সন্দেহ নেই, দেশের প্রখ্যাত সুরকার ও গোলাম আযমের মামলায় তার বিরুদ্ধ-সাক্ষী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা করা জামায়াতের পৈশাচিক হত্যার রাজনীতির আরেকটি প্রমাণ। সম্ভবত সুরকার বুলবুলকেও তারা হত্যার চেষ্টা করবে। গোলাম আযমের অপরাধের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ তারা মুছে ফেলতে চায়।

সরকারের তাই উচিত, অবিলম্বে তাঁর এবং অন্য সব সাক্ষীকে কঠোর নিরাপত্তাদানের ব্যবস্থা করা।
গোলাম আযমের মামলায় যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, রায়ের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনের ওপর যেভাবে হুমকি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তেমনি হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় তাঁর বিরুদ্ধের সাক্ষীদের ওপরও। সাঈদীর মামলায় বহু সাক্ষীকে একদিকে প্রলোভন দেখানো, অন্যদিকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। প্রচুর অর্থ ও অন্যান্য প্রলোভনে বশীভূত হয়ে কোনো কোনো সাক্ষী নাকি তাঁদের দেওয়া সাক্ষ্য পরে প্রত্যাহার করেছেন এবং জীবননাশের হুমকির মুখে কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার কোনো কোনো সাক্ষীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ জানতে পেরেছি।

১৯৭১ সালে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় শরিক হতে জামায়াত সাহস পেয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে। কিন্তু ২০১৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট যখন ক্ষমতায়, তখন জামায়াত সারা দেশে পকেট-সন্ত্রাস ও টার্গেটেড কিলিং চালানোর সাহস পায় কোথা থেকে? জবাবটি সবারই জানা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রথমে অপ্রকাশ্যে এবং এখন প্রকাশ্যে জামায়াতের সব ধরনের নাশকতামূলক কাজে সমর্থন ও সহায়তা দেওয়ায় তারা এখন শেষ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমি জামায়াতের এই হিংস্র জঙ্গিপনার নাম দিয়েছি, Jaamat's last ditch battle (জামায়াতের শেষ পরিখাযুদ্ধ)।

এই যুদ্ধের জন্য জামায়াত বহু দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিশাল গণম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর ধরেই নিয়েছিল ১৯৭১ সালের নরপশু যুদ্ধাপরাধীদের তারা বিচার ও দণ্ড থেকে বাঁচাতে পারবে না। এই বিচার ভণ্ডুল করার জন্য বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াত সৌদি অর্থ ও পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সহায়তায় নিজস্ব সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে মার্কিন হামলার মুখে পলাতক কিছু সংখ্যক তালেবানপন্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদের দিয়ে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা থেকে (বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকেও) ক্যাডার রিক্রুট দ্বারা হিযবুত তাহ্‌রীর, জয়শ-ই মোহাম্মদী ইত্যাদি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে। যেমন তারা করেছিল ১৯৭১ সালে আলবদর, আলশামস, রাজাকার ইত্যাদি নামে বিভিন্ন ঘাতক বাহিনী। বাংলাভাইয়ের মতো কিছু ঘাতক সন্ত্রাসীও তারা পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি করেছিল।

বাংলাদেশে সাবেক বিএনপি সরকারের অভিভাবকত্বে পাকিস্তান থেকে পলাতক জঙ্গি দিয়ে বাংলাদেশেও তালেবান সৃষ্টি এবং তাদের অভ্যুত্থান ঘটানোর যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি প্রভাবশালী কাগজ, যেমন 'ফার ইস্টার্ন ইকনোমিক রিভিউ,' 'ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল', 'লা মান্তে' ইত্যাদিতে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এই তালেবানি অভ্যুত্থানের বিপদাশঙ্কা সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
এই সতর্কবাণীতে কান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন অনুভব করেননি তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদীরা আছে, এ কথা বলায় শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন বলে অভিযোগ করেন এবং তাঁর সঙ্গে তখন কণ্ঠ মেলায় দুটি জাতীয় দৈনিকও। রবীন্দ্রনাথের 'ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের দুই লাইনের একটি কবিতা হলো : 'যতোক্ষণ দূরে থাকি বিদ্যুতের আলো বলে মোর নাম রটে,/মাথায় পড়িলে তবে বলে বজ বটে।'

বাংলাদেশেও প্রবলভাবে তালেবানি উপদ্রব দেখা না দেওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বিএনপি (সঙ্গে সাঙ্গাত জামায়াতিরা) এবং তাদের সমর্থক মিডিয়া বাংলাদেশে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব নেই বলে বগল বাজিয়েছে। এর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌলবাদী সন্ত্রাস, শেখ হাসিনার সভায় বোমা পুঁতে রাখার ব্যাপারে হিযবুত তাহ্‌রীরের সংশ্লিষ্টতা, সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনারের ওপর বোমা হামলা, বাংলাভাই ও তার আরেক সন্ত্রাসী সহযোগীর ফাঁসি ইত্যাদির পর অস্বীকার করা গেল না বাংলাদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদীদের শক্তিশালী ঘাঁটি আছে এবং তারা বিএনপির কাঁধে চড়ে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য অপেক্ষারত।

২০০৭ সালে যদি এক-এগারোর আবির্ভাব না হতো, বেগম খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে বসে ১৯৯৬ সালের মতো আরেকটি জালিয়াতি নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জামায়াতিদের নিয়ে আবার ক্ষমতায় বসতে পারতেন।

তাহলে এবার প্রকৃত ক্ষমতা আর বিএনপির হাতে থাকত না, চলে যেত জামায়াতি পার্টনারদের হাতে। আমেরিকায় ভয়াবহ ড্রোন হামলার মুখে পলাতক পাকিস্তানি টেরোরিস্টরা বাংলাদেশে ঢুকে তাদের দ্বিতীয় শক্তিশালী ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করত এ দেশটিতে। তাদের পশ্চাৎধাবন করে মার্কিন ড্রোন হামলা বাংলাদেশে এসেও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করলে বিস্ময়ের কিছু ছিল না। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের বিশাল জয়লাভ এই সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে।
ব্রিটেনের টোরি ও লেবার পার্টির মধ্যে এবং আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও গুরুতর রাজনৈতিক মতভেদ আছে। কিন্তু বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য তারা আপৎকালীন সময়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও তার গণতান্ত্রিক অস্তিত্বের জন্য জামায়াত বহিঃশত্রুর চেয়েও ভয়ানক এক শত্রু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সত্যটা তর্কাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

অন্তত এই একটা ইস্যুতে, অর্থাৎ বাংলাদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদ ও স্বাধীনতার শত্রুদের উল্লাস ঠেকানো এবং তাদের ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও শাস্তিদানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত এবং তাদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সীমাবদ্ধ থাকত নিজ নিজ রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে, তা হলে দেশে আজ এই ভয়ংকর অবস্থার উদ্ভব হতে পারত না। জামায়াতের পেছনে জনসমর্থন না থাকা এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার চলা সত্ত্বেও তারা দেশের নির্বাচিত সরকার, সংসদ, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন- সব কিছুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গৃহযুদ্ধের প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে মাঠে নামার এবং দেশময় সন্ত্রাস সৃষ্টি ও টার্গেটেড কিলিং শুরু করতে সাহসী হয়েছে। বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এ সাহস তারা দেখাতে পারত না; আর আকস্মিকভাবে দেখালেও এত দিনে পেছনে হটতে বাধ্য হতো।

বিএনপির নেতা-নেত্রীদের জানা উচিত, তাঁরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকারের বিরোধিতা করা হবে তাঁদের রাজনৈতিক ভূমিকা। বর্তমানে তাঁরা যা করছেন, তা সেই ভূমিকা নয়। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতার নামে তাঁরা যা করছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহী ও স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শত্রুতায় নামার ভূমিকা। তাঁদের এটা ভুল অথবা অপরাধ যাই হোক, এর মাশুল একদিন কড়ায়-গণ্ডায় দিতে হবে।

পবিত্র কোরআনে আছে, মক্কা শহর যখন প্রবল পরাক্রান্ত বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল এবং মক্কাবাসী শহরটি রক্ষার কোনো উপায়ই দেখছিল না, তখন আল্লাহর নির্দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবাবিল পাখি হাজারে হাজারে তীক্ষ্ন ও ধারালো পাথরকণা ঠোঁটে নিয়ে মক্কার আকাশে জড়ো হয়েছিল। তাদের নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে আহত ও ভীত শত্রুরা পলায়ন করে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। আমি বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালে জামায়াতিদের এই পূর্বপরিকল্পিত ও দীর্ঘ প্রস্তুতির হামলার সময় শাহবাগে আকস্মিকভাবে গড়ে ওঠা যুব-জনতার বিশাল সমাবেশের প্রত্যেক নরনারী, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে বাংলাদেশ রক্ষার জন্য এই আবাবিল পাখি মনে করি। সরকার কঠোর ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকলে এই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশের প্রতিরোধেই জামায়াত ও স্বাধীনতার শত্রুদের অ্যাক্সিস তাদের সন্ত্রাস ও নৃশংস হত্যা-অভিযান ব্যর্থ হবে, যেমন তারা হয়েছে ১৯৭১ সালে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ডদান বন্ধ করার জন্য জামায়াত প্রচণ্ড পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিকল্পনা মতো বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদী বি্লৎসক্রিগ (ঝটিকা আক্রমণ) শুরু করেছে, তা বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে অথবা ব্যর্থ হতে যে চলেছে, তা এখন সম্পূর্ণ স্পষ্ট। জনসমর্থনের বদলে তারা এখন পাচ্ছে জনঘৃণা।
আন্দোলনের নামে দেশময় অরাজকতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েই জামায়াত চূড়ান্ত পরাজয়ের মুখে গুপ্তহত্যা ও তরুণ বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করেছে। যেমন তারা করেছিল ১৯৭১ সালে পরাজিত হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের (১৬ ডিসেম্বর) দুই দিন আগে, ১৪ ডিসেম্বর তারিখ বুদ্ধিজীবী হত্যা দ্বারা। জামায়াত তার ১৯৭১ সালের ঘাতক চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে ফিরে গেছে। হাসিনা সরকারকে এখানেই দারুণভাবে কঠোর হতে হবে। জামায়াতের কিলিং স্কোয়াডের প্রত্যেকটি নরপশুকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া এবং শাহবাগের তরুণ বুদ্ধিজীবী ব্লগার ও যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় করণীয়। রাজীব, ত্বকী, মিরাজের আত্মদান অবশ্যই বিফলে যাবে না। উৎসঃ কালের কন্ঠ

টার্গেটেড কিলিং জামায়াতের একাত্তরের চরিত্র ফিরিয়ে এনেছে :আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী



আবার একটি নৃশংস ও নির্মম হত্যাকাণ্ড। এবারও নিরীহ ও নির্দোষ মানুষের প্রাণ গেল জামায়াতি খুনিদের হাতে। তাঁর নাম মিরাজ আহমেদ। পঞ্চাশের মতো বয়স। কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর পরিচয় তিনি সুরকার ও গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের সর্দার গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, তার একজন সাক্ষী। এই সাক্ষীকে হত্যা করা যায়নি। তাই আক্রোশ মেটানো হলো তাঁর ছোট ভাইকে হত্যা করে।

দুই দিন আগে নারায়ণগঞ্জেও তাই করা হয়েছে। প্রজন্ম চত্বরের এক ব্লগারের কিশোরপুত্র ত্বকীকে হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সভ্যজগতে এ ধরনের পাশবিক খুনখারাবির তুলনা খুঁজে পাওয়া সহজে যাবে না। প্রথমে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে চাপাতি ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, তারপর আরেক ব্লগার প্রতিভাবান তরুণ ইঞ্জিনিয়ার রাজীবকে একই পদ্ধতিতে হত্যা। তৃতীয় দফায় আরেক সংগঠকের অসাধারণ মেধাবী ছেলে কিশোর ত্বকীকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া। তারপর দেশের খ্যাতিমান সুরকার বুলবুলের ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা একটি কথাই স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, জামায়াতিরা (এবার সঙ্গে হিযবুত তাহ্‌রীরসহ তাদের সহযোগী দলগুলো) তাদের একাত্তরের ঘাতক চরিত্রে ফিরে গেছে।

একাত্তরে জামায়াতিরা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যায় সহযোগী হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজিত করা অসম্ভব জেনে দেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে হত্যা করে। এবারও তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিদানের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ প্রজন্ম চত্বরের বিশাল যুব-জনতার মোকাবিলা করতে না পেরে একদিকে শহরে-বন্দরে পকেট-সন্ত্রাস সৃষ্টি এবং অন্যদিকে দেশের তরুণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা শুরু করেছে। কারণ এই তরুণ বুদ্ধিজীবীরাই প্রজন্ম চত্বরের প্রেরণা ও প্রাণ। জামায়াতিদের ধারণা, এই তরুণ ব্লগার তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা গেলে প্রজন্ম চত্বর ভীতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের সমাবেশ ভেঙে যাবে।

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষিত হওয়ার পর পালের গোঁদা গোলাম আযমও যাতে একই দণ্ডাদেশ না পায় সে জন্য জামায়াতিরা পাগল হয়ে উঠেছে। এই মামলার সাক্ষীকে মেরে অথবা তাঁকে না পেলে তাঁর ভাই বা সন্তানকে হত্যা করে জামায়াতিরা যুদ্ধাপরাধ মামলার সব সাক্ষীর মনে ভয় ঢুকাতে চায়। যাতে তাঁরা ট্রাইব্যুনালে এই ঘাতক ও দালালদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেন অথবা সাক্ষ্য দিলেও তা প্রত্যাহার করেন। সন্দেহ নেই, দেশের প্রখ্যাত সুরকার ও গোলাম আযমের মামলায় তার বিরুদ্ধ-সাক্ষী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা করা জামায়াতের পৈশাচিক হত্যার রাজনীতির আরেকটি প্রমাণ। সম্ভবত সুরকার বুলবুলকেও তারা হত্যার চেষ্টা করবে। গোলাম আযমের অপরাধের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ তারা মুছে ফেলতে চায়।

সরকারের তাই উচিত, অবিলম্বে তাঁর এবং অন্য সব সাক্ষীকে কঠোর নিরাপত্তাদানের ব্যবস্থা করা।
গোলাম আযমের মামলায় যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, রায়ের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনের ওপর যেভাবে হুমকি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তেমনি হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় তাঁর বিরুদ্ধের সাক্ষীদের ওপরও। সাঈদীর মামলায় বহু সাক্ষীকে একদিকে প্রলোভন দেখানো, অন্যদিকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। প্রচুর অর্থ ও অন্যান্য প্রলোভনে বশীভূত হয়ে কোনো কোনো সাক্ষী নাকি তাঁদের দেওয়া সাক্ষ্য পরে প্রত্যাহার করেছেন এবং জীবননাশের হুমকির মুখে কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার কোনো কোনো সাক্ষীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ জানতে পেরেছি।

১৯৭১ সালে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় শরিক হতে জামায়াত সাহস পেয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে। কিন্তু ২০১৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট যখন ক্ষমতায়, তখন জামায়াত সারা দেশে পকেট-সন্ত্রাস ও টার্গেটেড কিলিং চালানোর সাহস পায় কোথা থেকে? জবাবটি সবারই জানা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রথমে অপ্রকাশ্যে এবং এখন প্রকাশ্যে জামায়াতের সব ধরনের নাশকতামূলক কাজে সমর্থন ও সহায়তা দেওয়ায় তারা এখন শেষ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমি জামায়াতের এই হিংস্র জঙ্গিপনার নাম দিয়েছি, Jaamat's last ditch battle (জামায়াতের শেষ পরিখাযুদ্ধ)।

এই যুদ্ধের জন্য জামায়াত বহু দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিশাল গণম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর ধরেই নিয়েছিল ১৯৭১ সালের নরপশু যুদ্ধাপরাধীদের তারা বিচার ও দণ্ড থেকে বাঁচাতে পারবে না। এই বিচার ভণ্ডুল করার জন্য বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াত সৌদি অর্থ ও পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সহায়তায় নিজস্ব সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে মার্কিন হামলার মুখে পলাতক কিছু সংখ্যক তালেবানপন্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদের দিয়ে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা থেকে (বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকেও) ক্যাডার রিক্রুট দ্বারা হিযবুত তাহ্‌রীর, জয়শ-ই মোহাম্মদী ইত্যাদি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে। যেমন তারা করেছিল ১৯৭১ সালে আলবদর, আলশামস, রাজাকার ইত্যাদি নামে বিভিন্ন ঘাতক বাহিনী। বাংলাভাইয়ের মতো কিছু ঘাতক সন্ত্রাসীও তারা পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি করেছিল।

বাংলাদেশে সাবেক বিএনপি সরকারের অভিভাবকত্বে পাকিস্তান থেকে পলাতক জঙ্গি দিয়ে বাংলাদেশেও তালেবান সৃষ্টি এবং তাদের অভ্যুত্থান ঘটানোর যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি প্রভাবশালী কাগজ, যেমন 'ফার ইস্টার্ন ইকনোমিক রিভিউ,' 'ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল', 'লা মান্তে' ইত্যাদিতে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এই তালেবানি অভ্যুত্থানের বিপদাশঙ্কা সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
এই সতর্কবাণীতে কান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন অনুভব করেননি তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদীরা আছে, এ কথা বলায় শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন বলে অভিযোগ করেন এবং তাঁর সঙ্গে তখন কণ্ঠ মেলায় দুটি জাতীয় দৈনিকও। রবীন্দ্রনাথের 'ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের দুই লাইনের একটি কবিতা হলো : 'যতোক্ষণ দূরে থাকি বিদ্যুতের আলো বলে মোর নাম রটে,/মাথায় পড়িলে তবে বলে বজ বটে।'

বাংলাদেশেও প্রবলভাবে তালেবানি উপদ্রব দেখা না দেওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বিএনপি (সঙ্গে সাঙ্গাত জামায়াতিরা) এবং তাদের সমর্থক মিডিয়া বাংলাদেশে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব নেই বলে বগল বাজিয়েছে। এর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌলবাদী সন্ত্রাস, শেখ হাসিনার সভায় বোমা পুঁতে রাখার ব্যাপারে হিযবুত তাহ্‌রীরের সংশ্লিষ্টতা, সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনারের ওপর বোমা হামলা, বাংলাভাই ও তার আরেক সন্ত্রাসী সহযোগীর ফাঁসি ইত্যাদির পর অস্বীকার করা গেল না বাংলাদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদীদের শক্তিশালী ঘাঁটি আছে এবং তারা বিএনপির কাঁধে চড়ে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য অপেক্ষারত।

২০০৭ সালে যদি এক-এগারোর আবির্ভাব না হতো, বেগম খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে বসে ১৯৯৬ সালের মতো আরেকটি জালিয়াতি নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জামায়াতিদের নিয়ে আবার ক্ষমতায় বসতে পারতেন।

তাহলে এবার প্রকৃত ক্ষমতা আর বিএনপির হাতে থাকত না, চলে যেত জামায়াতি পার্টনারদের হাতে। আমেরিকায় ভয়াবহ ড্রোন হামলার মুখে পলাতক পাকিস্তানি টেরোরিস্টরা বাংলাদেশে ঢুকে তাদের দ্বিতীয় শক্তিশালী ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করত এ দেশটিতে। তাদের পশ্চাৎধাবন করে মার্কিন ড্রোন হামলা বাংলাদেশে এসেও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করলে বিস্ময়ের কিছু ছিল না। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের বিশাল জয়লাভ এই সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে।
ব্রিটেনের টোরি ও লেবার পার্টির মধ্যে এবং আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও গুরুতর রাজনৈতিক মতভেদ আছে। কিন্তু বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য তারা আপৎকালীন সময়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও তার গণতান্ত্রিক অস্তিত্বের জন্য জামায়াত বহিঃশত্রুর চেয়েও ভয়ানক এক শত্রু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সত্যটা তর্কাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

অন্তত এই একটা ইস্যুতে, অর্থাৎ বাংলাদেশে সন্ত্রাসী মৌলবাদ ও স্বাধীনতার শত্রুদের উল্লাস ঠেকানো এবং তাদের ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও শাস্তিদানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত এবং তাদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সীমাবদ্ধ থাকত নিজ নিজ রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে, তা হলে দেশে আজ এই ভয়ংকর অবস্থার উদ্ভব হতে পারত না। জামায়াতের পেছনে জনসমর্থন না থাকা এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার চলা সত্ত্বেও তারা দেশের নির্বাচিত সরকার, সংসদ, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন- সব কিছুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গৃহযুদ্ধের প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে মাঠে নামার এবং দেশময় সন্ত্রাস সৃষ্টি ও টার্গেটেড কিলিং শুরু করতে সাহসী হয়েছে। বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এ সাহস তারা দেখাতে পারত না; আর আকস্মিকভাবে দেখালেও এত দিনে পেছনে হটতে বাধ্য হতো।

বিএনপির নেতা-নেত্রীদের জানা উচিত, তাঁরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকারের বিরোধিতা করা হবে তাঁদের রাজনৈতিক ভূমিকা। বর্তমানে তাঁরা যা করছেন, তা সেই ভূমিকা নয়। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতার নামে তাঁরা যা করছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহী ও স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শত্রুতায় নামার ভূমিকা। তাঁদের এটা ভুল অথবা অপরাধ যাই হোক, এর মাশুল একদিন কড়ায়-গণ্ডায় দিতে হবে।

পবিত্র কোরআনে আছে, মক্কা শহর যখন প্রবল পরাক্রান্ত বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল এবং মক্কাবাসী শহরটি রক্ষার কোনো উপায়ই দেখছিল না, তখন আল্লাহর নির্দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবাবিল পাখি হাজারে হাজারে তীক্ষ্ন ও ধারালো পাথরকণা ঠোঁটে নিয়ে মক্কার আকাশে জড়ো হয়েছিল। তাদের নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে আহত ও ভীত শত্রুরা পলায়ন করে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। আমি বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালে জামায়াতিদের এই পূর্বপরিকল্পিত ও দীর্ঘ প্রস্তুতির হামলার সময় শাহবাগে আকস্মিকভাবে গড়ে ওঠা যুব-জনতার বিশাল সমাবেশের প্রত্যেক নরনারী, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে বাংলাদেশ রক্ষার জন্য এই আবাবিল পাখি মনে করি। সরকার কঠোর ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকলে এই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশের প্রতিরোধেই জামায়াত ও স্বাধীনতার শত্রুদের অ্যাক্সিস তাদের সন্ত্রাস ও নৃশংস হত্যা-অভিযান ব্যর্থ হবে, যেমন তারা হয়েছে ১৯৭১ সালে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ডদান বন্ধ করার জন্য জামায়াত প্রচণ্ড পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিকল্পনা মতো বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদী বি্লৎসক্রিগ (ঝটিকা আক্রমণ) শুরু করেছে, তা বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে অথবা ব্যর্থ হতে যে চলেছে, তা এখন সম্পূর্ণ স্পষ্ট। জনসমর্থনের বদলে তারা এখন পাচ্ছে জনঘৃণা।
আন্দোলনের নামে দেশময় অরাজকতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েই জামায়াত চূড়ান্ত পরাজয়ের মুখে গুপ্তহত্যা ও তরুণ বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করেছে। যেমন তারা করেছিল ১৯৭১ সালে পরাজিত হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের (১৬ ডিসেম্বর) দুই দিন আগে, ১৪ ডিসেম্বর তারিখ বুদ্ধিজীবী হত্যা দ্বারা। জামায়াত তার ১৯৭১ সালের ঘাতক চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে ফিরে গেছে। হাসিনা সরকারকে এখানেই দারুণভাবে কঠোর হতে হবে। জামায়াতের কিলিং স্কোয়াডের প্রত্যেকটি নরপশুকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া এবং শাহবাগের তরুণ বুদ্ধিজীবী ব্লগার ও যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় করণীয়। রাজীব, ত্বকী, মিরাজের আত্মদান অবশ্যই বিফলে যাবে না। উৎসঃ কালের কন্ঠ

Monday, March 11, 2013

আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা মোবারকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন:জামিন বাতিল করে জেলে পাঠালো ট্রাইব্যুনাল



ঢাকা : ৭১এ মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ ৫ ধরনের অভিযোগে হাজী মোবারকের জামিন বাতিল করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযুক্ত মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করার পরে এই আদেশ দেন।তবে তার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মোবারক হোসেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের রুকন ছিলেন। আখাউড়া থানার নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে পরবর্তীত আওয়ামী লীগ যোগ দেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে (চার্জ) অভিযোগ গঠন করার জন্য দিন ধার্য করে দিয়েছেন আদালত।
প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান বলেন আজ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে এই আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে বলে আদালত জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছে প্রসিকিউশন ,
১১ মার্চ পর্যন্ত তার জামিনের মেয়াদ ছিল আজ তার বিরুদ্ধে জামিন বাতিল করেন আদালত। আজ শুনানিতে তার আইনজীবী জামিন মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে তা খারিজ করেন আদালত। ট্রাইব্যুনালে মোবারকের পক্ষে শুনানী করেন অ্যাডভোকেট মহিবুর রহমান ও বিরোধীতা করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।
২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত হত্যা,গণহত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের অভিযোগে ৩৩ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।
মোবারকের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন গ্রামবাসী আব্দুল খালেকের লাশ পাশ্ববর্তী খাল থেকে উদ্ধার করে। আরজিতে উল্লেখ করা হয়, যারা ডেকে নেয় তাদের মধ্যে আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মোবারক এবং জমশেদ মিয়া ছিল।নিহত আব্দুল খালেকের কন্যা খোদেজা বেগম ২০০৯ সালের ৩ মে ব্রাক্ষণবাড়িয়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মোবারক হোসেন ১৩ মে ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের আগাম জামিন নেন।পরে ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায় এবং মামলার নথিপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়।
পরে গত ৬ জুন আসামিপক্ষের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে আপিল মোকাদ্দমা দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল এ মামলার নথিপত্র তলব করে। পরে তদন্তে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসে।
তার বিষয়ে ৬ মাস ৭দিন তদন্ত শেষে মোট ৪ ভলিয়মে ২৯৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থা জানায় মোবারকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোবারকের বিরুদ্ধে ২০১২সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত করেন কর্মকর্তা শ্যামল চৌধুরী। তদন্তকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোবারকের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ ৫ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে।তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের মধ্যে আখাউড়া থানাধীন টানমান্দাইল ও জাঙ্গাইল গ্রামে ৩৩ জনকে গণহত্যা, আনন্দময়ী কালীবাড়ী রাজাকার ক্যাম্পে আশু রঞ্জন দেবকে নির্যাতন, ছাতিয়ানা গ্রামের শহীদ আব্দুল খালেককে হত্যা, শ্যামপুর গ্রামের ২জনকে অপহরণ করে ১জনকে হত্যা এবং খরমপুর গ্রামের ১ জনকে আটক রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
তদন্তকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৩ জনকে গণহত্যা, ২ জনকে হত্যা, ২ জনকে অপহরণসহ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এসব অভিযোগ ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত হয়েছে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়।
১৯৭১ সালের একটি হত্যা মামলায় আটক ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোবারক হোসেনের জামিন আবেদনের শুনানি হয় গত ১১ জুলাই। ওইদিন আসামীপক্ষ ও প্রসিকিউশন বিষয়টির ওপর শুনানি শেষে ১৬ জুলাই তাকে জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর কয়েক দফা তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

Saturday, March 9, 2013

আমরা সশস্ত্র হবো অজস্র মৃত্যুতে... . সুমি খান






মন খুব ই বিক্ষিপ্ত। এভাবে আমাদের মেধাবী সন্তানদের হারাতে হবে কেন?আর কতো কাল?
ত্বকি..... এই জিনিয়াস ছেলেটা কে মায়ের কোল থেকে বাবার বুক থেকে ছিনিয়ে নিলো যারা- তারা কি জানে তারা এ দেশের কতো বড়ো সর্বনাশ করেছে?
নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রিপোর্টিং করতে নারায়ন গঞ্জে ছিলাম দু’দিন। সেমময় রাব্বি ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। সন্ত্রাসের জনপদ নারায়নগঞ্জকে শান্তির জনপদে পরিণত করার জন্যে ডা.সেলিনা হায়াত আইভি কে নাগরিক সমাজের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করার জন্যে মূল সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন রাফিউর রাব্বি ভাই। এতো ত্যাগী, মেধাবী এবং সুসংগঠক দেশে খুব কমই আছে। জামাত শিবির সহ সব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অথচ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সংগঠিত করা সম্ভব- তার অনন্য দৃষ্টান্ত রাব্বি ভাই। সেদিন থেকে মিতভাষী এই মানুষ টা কে মনে মনে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছি। যে কোন জায়গায় এ্যাসাইনমেন্ট শেষ হয়ে গেলে ও যোগাযোগ থেকে যায় আমার সাথে। একই ভাবে নারায়নগঞ্জের মানুষগুলোর সাথে ও যোগাযোগ ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল বদলানোর পর নারায়নগঞ্জের প্রিয় মানুষদের মোবাইল নাম্বার গুলো নেই। নারায়নগঞ্জে হত্যাকান্ড ঘটেছে শোনার পর উদ্বিগ্ন হয়েছি, আমাদের আপন কারো কিছু হয়েছে বুঝতে পেরেছি। জানতে পারলাম রাব্বি ভাইয়ের মেধাবী কিশোর সন্তান কে হত্যা করা হয়েছে। ..... স্তব্ধ, নির্বাক আমি...... চোখের কোল বেয়ে জলের ধারা। কাইকে বুঝাতে পারবো না বুকের ভেতর সে কী প্রচন্ড ঝড় বয়ে চলেছে। প্রতিবাদের ক্ষোভের আগুন বুকে জ্বালা ধরিয়ে দিলো।
তখন আমি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পাশে। ৪.৪৮ মিনিটে পরপর বিকট শব্দে ককটেল বিষ্ফোরণ। ছুটোছুটি, হুড়োহুড়ি...আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নারী বিষয়ক সম্পাদক আইরিন নিয়াজি মান্না সহ কয়েকজনের অনেকেই নেই। সাংবাদিক শাহিন ছিলেন। অচেনা সাধারণ নারীরা ছিলেন । গগন বিদারী শ্লোগান দিলাম জয়.... বাংলা... !! জামাত শিবির রাজাকার-এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়‍!!এতোটুকু ভয় লাগেনি মনের কোণায়।
মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দেশের শীর্ষ নারী নেত্রীদের...!


চোখ বারবার জলে ভিজে গেলো।হায় দুর্ভাগা দেশ আমাদের। কেন আমাদের সন্তানহারা হতে হলো??এই ফুটফুটে নিষ্পাপ কিশোরের বাবা- মা স্বজনেরাই শুধু নয়; বন্ধু, শিক্ষক সবাইকে শূণ্য করে দেয়া হলো। সারা দেশে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলো ত্বকী!
আজ সকালেই যেতে চেয়েছিলাম নারায়নগঞ্জ, হরতালের কারণে পারলাম না। জানিনা কখন যেতে পারবো। প্রাণপণে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে....
এতোটা শূণ্যতা ... এতোটা বেদনা ...... মনকে শুধু বলি- আমরা সশস্ত্র হবো অজস্র মৃত্যুতে...
.

Tuesday, March 5, 2013

Venezuela announces death of president Hugo Chavez

Venezuela announces death of president Hugo Chavez

আজ আমাদের জন্য দারুণ এক বেদনার দিন :বিদায় হুগো শ্যাভেজ


প্রায় দুই বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ।



ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো মঙ্গলবার রাতে এই লাতিন নেতার মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যমকে জানান।

৫৮ বছর বয়সী শ্যাভেজ ১৪ বছর ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব দেন। এই সাম্যবাদী নেতা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নীতির একজন কড়া সমালোচক।

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে মাদুরো বলেন, “আজ আমাদের জন্য দারুণ এক বেদনার দিন।”

দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারাও এ সময় তার পাশে ছিলেন।

গত মাসে কিউবা থেকে ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি শ্যাভেজকে।

মাদুরো এর আগে জানিয়েছিলেন, শ্যাভেজের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। ভেনিজুয়েলান নেতা ‘কঠিনতম প্রহর’ পার করছেন।
প্রেসিডেন্টের মৃত্যুসংবাদ ঘোষণার পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীতে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণাও দেন তিনি।

জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি- জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞের ৩ লক্ষ্য


যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা এবং দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর দাবির কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আর এজন্য নিজেদের জানা একমাত্র কৌশলটিই তারা ব্যবহার করছে- চালাচ্ছে সহিংসতা, আরো সহিংসতা।

গত কয়েক দিনের এই সহিংসতাকে সামাজিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বা স্বতঃস্ফূর্ত কিছু বলা যাবে না। বরং এর পেছনে দেখা গেছে সতর্ক পরিকল্পনার ছাপ। হামলার লক্ষ্যবস্তুও বাছাই করা হয়েছে খুবই পরিকল্পিতভাবে।

গত বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর যে সহিংসতা শুরু করেছে- তাতে তাদের তিনটি লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট। জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিই তাদের উদ্দেশ্য।

এর প্রথমটিতে সারা দেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে বিপর্যস্ত করে জেলাগুলোর ওপর ঢাকার নিয়ন্ত্রণ ও চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করে জামায়াত। হরতালে রেল যোগাযোগ তেমন একটা ব্যাহত হয় না বলে রেলপথকে বেছে নেয়া হয় হামলার অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে। পাশাপাশি সড়কপথেও চলে নাশকতা। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা; যোগাযোগ কাঠামো ভেঙে দিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলা।

পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার হাতিয়ার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর ওপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালায় জামায়াত। পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে, সদস্যদের হত্যা করে তাদের মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা চলে। এসব ঘটনা যে অনেক সময় প্রাণঘাতী প্রতিরোধের সম্ভাবনাকে উস্কে দেয়, সে বিষয়টিকেও আমলে নেয়নি জামায়াত।

১৯৭০-৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গে নকশালরা রাজপথে হামলার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল পুলিশকে। আর তার সমাপ্তি ঘটেছিল পুলিশের পক্ষ থেকে আরো সহিংস জবাবের মধ্য দিয়ে। এখানে একটি বিষয় হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়, তখন রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশ তারা আর মানে না। তখন তারা প্রতিশোধ চায়। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে জামায়াত-শিবিরের বহু কর্মী নিহতের ঘটনার একটি ব্যাখ্যা হয়তো এর মধ্যে দিয়ে পাওয়া যায়।

তৃতীয়ত, হিন্দু গ্রাম ও মন্দিরে হামলা চালিয়ে জামায়াত আবারো ধর্মীয় উন্মাদনা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। শাহবাগের আন্দোলনকর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর তাকে 'মুরতাদ' ও 'নাস্তিক' আখ্যা দিয়ে সেই ‘একই কার্ড’ খেললেও ব্যর্থ হয় জামায়াত। এ ধরনের হামলা যদি প্রতিরোধ করা না যায়, তাহলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। হিন্দুরা দেশত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। জামায়াত আশা করেছিল, এভাবে হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়ে সবার নজর ঘুরিয়ে দিয়ে তারা হয়তো তাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে উত্তাপ এড়াতে পারবে। আর এভাবে জাতীয় পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল তারা।

জনজীবন ব্যাহত করা, মনোবল ভেঙে দেয়া এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি- এই তিন লক্ষ্য পূরণের মধ্য দিয়ে আরেকটি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ থেকে সারা দেশে তারুণ্যের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কক্ষচ্যুত করাই ছিল সেই লক্ষ্য। ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা চালিয়ে জামায়াত শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের স্মৃতিই ফিরিয়ে আনেনি, সরকারকেও চাপে ফেলতে চেয়েছে।

হিসাব কষে জামায়াত হয়তো আশা করেছে, জনজীবনে বিপর্যয় ঘটিয়ে বেসামরিক প্রশাসনকে টলিয়ে দিতে পারলে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণের পথ তৈরি হবে। কিন্তু এতে উল্টো ফলও আসতে পারে, যা হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী।

Sunday, March 3, 2013

রাজীব হত্যাকারী পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে:সাত দিনের রিমান্ডে


ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এই দলের আরও দুজনকে পুলিশ খুঁজছে।নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বেলাল আহমেদের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার পাঁচ ছাত্রের ছাত্রত্ব ও পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে।

সাত দিনের রিমান্ডে গ্রেপ্তার ছাত্ররা
ডিবির উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আজ শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ডিবি কার্যালয়ে শনিবার এ ব্যাপারে সংবাদ ব্রিফিং করা হয়। সেখানে জানানো হয়, ডিবি পুলিশ মো. ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ (২২), মো. মাকসুদুল হাসান অনিক (২৩), মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), মো. নাঈম সিকদার ইরাদ (১৯) ও নাফিস ইমতিয়াজকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা সবাই বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্ররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজকক্ষে নামাজ পড়তে গিয়ে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হন। সেই সূত্রে তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতেন।
ডিবির দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্ররা জানিয়েছেন, তাঁদের দলের এক বন্ধু একসময় বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁদের কিছু ব্লগের ঠিকানা দেন। সেখান থেকেই তাঁরা ‘থাবা বাবা’সহ কয়েকজন ব্লগারের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন এবং ‘থাবা বাবা’ নামধারী ব্লগারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের পলাশনগর এলাকার নিজ বাসার সামনের রাস্তায় রাজীবকে খুন করেন তাঁরা।

রাজীবকে হত্যার জন্য দুটি দল গঠন?

ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্ররা পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাটি সম্পর্কে তাদের জানিয়েছে। সে ভাষ্য অনুযায়ী, রাজীবকে হত্যার পরিকল্পনার পর তাঁরা ‘ইনটেল গ্রুপ’ গঠন করেন। এই দলের কাজ ছিল ব্লগ ও ফেসবুক থেকে তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা ও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। আর রাজীবকে হত্যার জন্য তাঁরা ‘এক্সিকিউশন গ্রুপ’ গঠন করেন। প্রায় এক মাস তাঁরা রাজীবকে অনুসরণ করেছেন।

যেভাবে তাঁরা রাজীবকে খুন করেন

ডিবি পুলিশের কাছে দেওয়া ওই ছাত্রদের ভাষ্যমতে, ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে যান এবং ব্লগার রাজীবকে খোঁজা শুরু করেন। এর এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রাজীবের বন্ধুদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে তাঁরা রাজীবকে চিনতে পারেন। এরপর এই দলের সদস্য মো. এহসান রেজা রুম্মন শাহবাগ থেকে সাইকেলে করে বাসে ওঠা রাজীবকে অনুসরণ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যান। তিনি প্রথম দিন রাজীবের বাসা চিহ্নিত করতে পারেননি। পরে আবার তাঁকে অনুসরণ করে পলাশনগরের বাসাটি চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
এরপর কয়েক দিন ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা পলাশনগর এলাকায় রেকি করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা রাজীব কখন বাসায় আসেন, কখন বের হন, কার সঙ্গে ঘোরাফেরা করেন এবং কী ধরনের কাজ করেন—সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।
এই দলের সদস্য মো. মাকসুদুল হাসান অনিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র কেনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি নিজেই বাড্ডা নতুন বাজারের একটি দোকান থেকে চাপাতি ও ছোরা কেনেন। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে ১৫ ফেব্রুয়ারি দলের সদস্যরা সাইকেল ও বাসে চড়ে বিকেল চারটার দিকে পলাশনগরে রাজীবদের বাসার গলিতে অবস্থান নেন স্কুলব্যাগ, ক্রিকেটের ব্যাট ও বল নিয়ে। তাঁরা গলিতে ক্রিকেট খেলতে থাকেন এবং রাজীবের বাসায় ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
সন্ধ্যার দিকে রাজীব বাসার গেটের কাছাকাছি পৌঁছার পর এক্সিকিউশন গ্রুপের সদস্য মো. ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, মো. মাকসুদুল হাসান অনিক চাপাতি ও ছোরা দিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তাঁরা দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান এবং একটি চাপাতি রাস্তার মোড়ের পানের দোকানের সামনে ফেলে যান। এলোপাতাড়ি কোপ মো. মাকসুদুল হাসান অনিকের পায়ের জুতায় লেগে পায়ের বুড়ো আঙুলের কিছু অংশ কেটে যায় এবং তিনি কাকরাইলে গিয়ে জুতা জোড়া জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড়ে ফেলে যান। এ ছাড়া তাঁরা একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের নালায় ফেলে যান।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত সরঞ্জাম উদ্ধার

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত দুটি চাপাতি, চারটি ছোরা, একটি বাইসাইকেল, এক জোড়া কেডস, সাতটি বিভিন্ন মডেলের মুঠোফোন ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইলে জাতীয় চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড় থেকে জুতা জোড়া উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া একটি চাপাতি ও চারটি ছোরা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের নালা থেকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের বিস্তারিত তথ্য

ফয়সালের বাড়ি ঢাকার মাতুয়াইলে। তিনি কোডা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাকসুদুলের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। তিনি ম্যাপললিফ থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁরা দুজনই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। এহসানের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় ও নাঈমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁরা উভয়েই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। নাফিসের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তিনি সানশাইন গ্রামার স্কুল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএতে ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বিভিন্ন এলাকায় অভিযান

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য পশ্চিম বিভাগের ডিসি মোল্লা নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এডিসি মশিউর রহমান, এডিসি মানস কুমার পোদ্দার ও জ্যেষ্ঠ এসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির একাধিক দল ঢাকার কাকরাইল, বারিধারা, বসুন্ধরা, পান্থপথ ও খিলগাঁও এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজীব হত্যায় জড়িত সন্দেহে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন রাজীব

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের পলাশনগরে নিজ বাড়ির সামনে খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এ ব্যাপারে পল্লবী থানায় মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে।
প্রাথমিক তদন্তে হত্যার সঙ্গে সাতজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় ডিবি পুলিশ। পলাতক অন্য দুজনকে ধরতে পুলিশ তত্পরতা - See more at: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-02/news/333300#sthash.ER0PlaLV.dpuf

কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ , সন্তান মোর মা’র:সুমি খান

সম্মানিত বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার প্রকৃত রূপ সচেকন মানুষের কাছে উন্মোচিত। সমর্থকদের কাছে তিনি আপোষহীন নেত্রী। ‌এই ‘ ‌দেশনেত্রী’ যদি একবার অন্তত দেশপ্রেম, মানবিকতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেন এদেশের নিরীহ মানুষ গুলোর প্রাণ বেঁচে যেতো। এভাবে বৌদ্ধমন্দির এবং হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর হামলা হচ্ছে সারাদেশে , আপনি কি থামাবেন এদের প্লীজ?
এই প্রজন্মের অসীম সাহসী তরুণ ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে শাহবাগে দেশপ্রেমিক তরুণেরা প্রায় একমাস বিনিদ্র আন্দোলন করে যাচ্ছে , এই আন্দোলন অহিংস । সহিংস আন্দোলনে অভ্যস্ত রাজনীতি কি আর অহিংস আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারে? না, পারে না। জামাত বিএনপির কার্যক্রমে জনগণ তাই দেখলো । নিরীহ জনগণ কে তাই প্রাণ দিয়ে বুঝতে হচ্ছে এদেশের রাজনীতি এখনো জনমুখী হয় নি।
একতরফা পুলিশ হত্যা , সংখ্যালঘু নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি দেখে ও খুনিদের পক্ষে সাফাই গাইছেন, তাদের মদত দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। ফেসবুকে অনেকের কমেন্ট , “আপনি একাত্তরে গণহত্যা দেখেন নি , তাই গণহত্যার কোন সংজ্ঞা আপনার জানা নেই। এ কারণেই আপনি জামাত শিবির চক্রের নির্বিচার হত্যাকে সমর্থন দিয়ে উল্টো অভিযোগ করছেন, সরকার গণহত্যা করছে। একাত্তরে আপনি পাকিস্তানি জেনারেল জাংজুয়া কে কাছে থেকে দেখেছেন । তার প্রতি আন্তরিকতা আর শ্রদ্ধা থেকে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৭ সালে তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে পাকিস্তান ছুটে গিয়েছিলেন।” তিনি এই দেশ এবং এদেশের মানুষকে কখনো ভালো বেসেছেন কিনা, মানবতার প্রতি তার ন্যুনতম শ্রদ্ধা আছে কিনা- মানুষের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
দৈনিক আমার দেশ এর মাধ্যমে এর সম্পাদক চরম দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি মাহমুদুর রহমান যেভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়াচ্ছেন এর বিরুদ্ধে সরকার এবং দেশের সকল শান্তিপ্রিয় মানুষকে একসাথে সোচ্চার হয়ে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে অতীতের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে হচ্ছে।
স্বৈরাচারী এরশাদ তার পতনের অন্তিম মুহুর্তে্, ১৯৯০ সালের অক্টোবরে, মওলানা মান্নানের মালিকানাধীন এবং সম্পাদিত পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবকে ব্যবহার করে স্বৈরচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন নসাৎ করার চেষ্টা করেছিল। মাদ্রাসা শিক্ষক দের টাকা ছিনতাই করে নাকি ইনকিলাব পত্রিকার মালিক হয়েছিলেন মওলানা মান্নান।
যাই হোক্, ১৯৯০ এ অক্টোবরের ৩১ তারিখের দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত বাবরি মসজিদ ধ্বংস-সংক্রান্ত মিথ্যা সংবাদের ওপর ভিত্তি করে মৌলবাদীরা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থানগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সারাদেশের হিন্দু উপাসনালয়গুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সেসময়ে আমার নিজের চোখে দেখা চট্টগ্রাম শহর এবং প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় প্রতিটি হিন্দু জনপদ, মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। কী বিপন্ন সময় কাটিয়েছে নিরীহ মানুষ গুলো।

এসব ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলায় মদতদানকারী দৈনিক ইনকিলাব ও তার অবৈধ মালিক একাত্তরে ডা. আলীম চৌধুরীর হত্যায় সহায়তাকারী মওলানা মান্নানকে কখনও এজন্য জবাবদিহি করতে অথবা শাস্তি পেতে হয়নি। শুধুমাত্র ১৭ দিনের জন্য ইনকিলাবের নিবন্ধন সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছিলো।

ইনকিলাব কে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উস্কানি দেবার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না হবার কারণেই নব্বই য়ের পর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়ে যায়।
মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষের উপর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও প্রগতিশীল জনগণের ওপর একের পর এক আঘাত আসতে থাকে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের বাবরি মসজিদ ভাঙার পর, দেশব্যাপী হিন্দু সমাজের ওপর যে বর্বর ও ভয়াবহ নির্যাতন নেমে আসে- তা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি মিলিটারি ও তাদের দোসরদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের বিভীষিকার কথা বার বার মনে করিয়ে দেয়।একই ধারাবাহিকতা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে কেন ঘটে চলবে? কেন নিরীহ মানুষগুলোকে বারবার সম্ভ্রম, বাড়িঘর, মহামূল্যবান প্রাণ নিয়ে প্রতিমুহূর্তে শংকার মধ্যে দিন কাটাতে হবে?

বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে, ২০০১ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু পরিবার এবং মন্দিরে নির্বিচার হামলা,হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিলো তা সভ্যসমাজ বা গণতান্ত্রিক সমাজে নজিরবিহীন।
২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর হামলার পর বহু হিন্দু পরিবারকে প্রাণের মায়া নিয়ে বসতভিটা ছেড়ে, দেশান্তরী হতে হয়েছিল। জামায়াত-বিএনপির ক্যাডারদের হাতে সম্ভ্রমহানি হওয়া অনেক কে পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল কিশোরী পূর্ণিমার প্রতি ভয়াবহ নির্যাতন। বাঁশখালীর জলদিতে দিনমজুর আরতি বালার তিন প্রজন্মকে একসাথে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা এবং একই উপজেলার শীলপাড়ায় এগারোজনকে গানপাউডার ছড়িয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার সরেজমিন রিপোর্ট করতে গিয়ে সেই বীভৎসতা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। এখনো আমার হৃদয় রক্তাক্ত হয় সেসব বর্বরতার চিত্র মনে করে।
যা বলছিলাম, এসব বর্বরতার মূল পরিকল্পনাকারী বাঁশখালীর সাংসদ বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ক্ষমতায় বলীয়ান তার চাচাতো ভাই কালিপুর ইউনিয়নেরআমিন চেয়ারম্যান উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে গায়ে হাওয়া দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এই ক’দিন আবার তার নেতৃত্বে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে বাঁশখালীতে। যার কলমের নির্দেশে এই খুনি বর্বর আমিন জামিন পেয়েছে, তিনি কি হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবারের উপর আমিনের এই বর্বরতার দায় এড়াতে পারেন? আর যাদের ব্যর্থতার কারণে জাফরুল ইসলাম ২০০৭ সালে আবারও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রামের প্রগতিশীল রাজনীতিকেরা কি এর দায় এড়াতে পারবেন?

সে সময়ে আমি সাপ্তাহিক ২০০০ এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। আমি দেখেছি চট্টগ্রাম শহর এবং প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় প্রতিটি হিন্দু জনপদ, মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। সংখ্যালঘু এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষের জন্যে ২০০১ থেকে ২০০৫ জামাত বিএনপি জোটের পুরো শাসনামল ছিল বিভীষিকাময় ।

পিটিয়ে হত্যা করার সময় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে চারজন পুলিশ সদস্য নিরস্ত্র ছিলেন। মাদ্রাসার কয়েক শ কিশোরকে সামনে রেখে পেছন থেকে হামলার নেতৃত্ব দেয় জামায়াত-শিবির।

বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবু হানিফ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেলস্টেশনে হামলার পর তিন-চার হাজার লোক তদন্ত কেন্দ্রে হামলা শুরু করলে আমরা তাদের থামতে বলি। তারা পাথর ছুড়ে মারতে থাকে। আমরা বলি, সামনে এগুলো আমরা গুলি করব। এ সময় তারা উল্টো গুলি ছোড়ে। পরিস্থিতি দেখে আমরা শটগান ও রিভলবারের ৩২টি ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে নিরাপদে সরে যাই। তখন তারা নিরস্ত্র পুলিশ সদস্যদের পেটাতে শুরু করে। যে চারজন পুলিশ মারা গেছেন, তাঁরা সবাই নিরস্ত্র ছিলেন।’

পুলিশ জানায়, বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলার পর সেদিন সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ থানায় হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে তিনজন নিহত হয়। তবে তাদের পরিচয় গতকালও মেলেনি। চার পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বামনডাঙ্গা শহীদ মিনারে শোকসভা হয়েছে। সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপ-কমান্ডার এম এ আউয়াল। সভার আগে এলাকাবাসী একটি শোক মিছিল করে। তারা পুলিশ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
পরদিন শুক্রবার সকালে জামায়াত-শিবির শান্তিরামে পিটিয়ে মারে যুবলীগের নেতা নূরন্নবীকে। গতকালও ওই বাড়িতে ছিল শোকের ছায়া। নূরন্নবীর বাবা মালে উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলেকে কী কারণে মারল? আমি এর বিচার চাই।’
এ ছাড়া গত দুই দিনে জামায়াত-শিবির হামলা করেছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এখনো ১৪৪ ধারা জারি আছে। সুন্দরগঞ্জে হামলার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা পুলিশও পৃথকভাবে ঘটনার তদন্ত করছে। গতকাল শনিবার শেষ বিকেলে বামনডাঙ্গার মানুষ যখন বৃহস্পতিবারের তাণ্ডবের কথা বলছিলেন, তখনো তাঁদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা ওই তাণ্ডব চলে। রেলস্টেশন মাস্টারের কার্যালয় ও আশপাশের দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ফেরার পথে বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জামায়াত-শিবির মাদ্রাসাছাত্রদের নিয়ে এই নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। ৫৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী রনজু মিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এ কোন দেশ? ২২ বছর ধরে শাড়িকাপড় আর মনোহর সামগ্রীর ব্যবসা করছি। কোনো দিন এমন ভয়াবহতা দেখেননি। প্রকাশ্য দিবালোকে কয়েক শ লোক এসে আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। চলে লুট। ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে যেসব মালামাল কিনেছি, সব শেষ। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন চরম দুশ্চিন্তায় আছি।’ বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশেই চা-বিস্কুটের দোকান চালাতেন ৪৪ বছরের মোহামঞ্চদ আলিম। ১৪ বছর ধরে তিনি এখানে দোকান করছিলেন। পুুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর দোকানও। স্টেশনের পাশেই পানের দোকান দিয়ে জীবন-জীবিকা চালাতেন বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। আহাজারি করে জানালেন, তাঁর একমাত্র সম্বল দোকানটিও ভাঙচুর করা হয়েছে। এই বাজারের হরেন, আয়নাল, শামীম, আলমগীর, গনি—সবাই একই আতংকে আছেন। বৃহস্পতিবারে সবার দোকান পুড়িয়ে দিয়েছ সন্ত্রাসীরা। স্টেশনের আশপাশে থাকা ৩০-৩৫টি দোকানের সবাই কম-বেশি হামলার শিকার হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের টিকিটঘর। স্টেশনমাস্টার আতাউর রহমান জানালেন, নগদ দেড় লাখ টাকাসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের বামনডাঙ্গা উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। প্রকৌশলী অফিসের চৌকিদার সাইফুল ইসলাম জানালেন, অফিসের সবকিছুই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, ‘রেলস্টেশনে পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা সামনে রেখেছিল বিভিন্ন মাদ্রাসার কয়েক শ’ কিশোরকে।
রেলস্টেশনে হামলার পর আসরের আজানের সময় জামাত শিবিরের জঙ্গী সন্ত্রাসীরা “নারায়ে তাকবির” বলে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা চালায়। পুলিশ ফাঁকা গুলি চালালেও উত্তেজিত শিবির ক্যাডার দের ঠেকানো যায় নি। পুলিশের অস্ত্রের গুলি শেষ হয়ে গেলে পুলিশ পিছু হটে। এ সময়ে হামলাকারীরা চারজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করে। বাবলু ও নাজিম নামে দুই পুলিশের লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় তদন্ত কেন্দ্রের পেছনে পড়ে ছিল। অন্য দুই কনষ্টেবল হযরত এবং তোজাম্মেল আহত হন,পরে তাঁরাও মারা যান।’

হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমি ১২ বছরের কিশোর ছিলাম। স্বাধীনতার সময়ও এমন তাণ্ডব দেখিনি।’ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘জাতি জামায়াত-শিবিরের এই তাণ্ডব দেখে স্তম্ভিত।’ সাংবাদিকেরা এসব হামলার বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ইউনুস আলীর বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ইউনুস আলীর সবগুলো ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। জেলা জামায়াতের আমির আবদুর রহিম কারাগারে। সেক্রেটারি আবদুল করিমের মুঠোফোনও বন্ধ।

বামনডাঙ্গা ও সুন্দরগঞ্জে সুনির্দিষ্ট করে সংখ্যালঘুর বাড়ি ও দোকানে হামলা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রণজিৎ বকসি বলেন, বেলকা ইউনিয়নে দুটি এবং শান্তিরামে তিনটি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক সংখ্যালঘুর বাড়ি ও দোকানে হামলা হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জের শান্তিরাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরজিত কুমার বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শান্তিরাম মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়। এরপর আমার বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। স্বাধীনতার এত বছর পরও যদি এভাবে আমাদের বাঁচতে হয়, সেই কষ্ট আমরা কোথায় রাখবো?” দেশের প্রতিটি শান্তিপ্রিয় নাগরিক একই বেদনায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। একই আতংকে সন্ত্রস্ত। মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে এর দায় নিতেই হবে। তার বক্তব্য এই সাম্প্রদায়িক হামলার উস্কানি দিয়েছে। এই বিপন্ন পরিস্থিতিতে সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে আসন্ন বিপর্যয় ঠেকাতে।
এ প্রসঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ এবং সভ্যতা ধ্বংসে মুসলিম ব্রাদারহুড এর অনুসারীদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা এবং তা দমনের ইতিহাস উল্লেখ করতে হয়।
কোন ধর্মীয় পবিত্র স্থানকে “ক্রিমিন্যাল”দের অপরাধীদের আশ্রয়, অপকর্ম অপতৎপরতার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হতে দেয়া হয় না কোন দেশেই।
একমাত্র ব্যতিক্রম, বোধহয় বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের লাল মসজিদের কথা। ১৯৬৫ সালে নির্মিত এই মসজিদটির এক ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন জেনারেল জিয়াউল হকের। আমাদের সকলকে, এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, এই জিয়াউল হকই পাকিস্তান নামের এই দেশটিকে কট্টর মৌলবাদী একটি রাষ্ট্র বানিয়ে ছাড়েন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদার বাহিনীকে তাড়াতে তখন আমেরিকা এবং সৌদি আরবের সরাসরি সাহায্য নিয়ে তালেবান, আলকায়েদা এবং ওসামা বিন লাদেনদের মতো দানবদের সৃষ্টি করেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক। লাল মসজিদের এই ইমাম মোহাম্মদ আবদুল্লাহও জেনারেল জিয়াউল হককে প্রবলভাবেই সমর্থন দিয়ে যান। আমাদের দেশেও আবদুল মান্নান মালানা প্রবল সমর্থন দিয়ে গেছেন দুই সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল এরশাদকে।
কিন্তু একটি ফতোয়া দেয়ার কারণে ইমামের পদ থেকে অপসারিত হলেন মাওলানা আবদুল্লাহ। তিনি এই মর্মে এক ফতোয়া দিলেন যে, তালেবানরা আফগানিস্তানে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, জেহাদ করছে, সুতরাং এই তালেবান-জেহাদীদের হত্যায় কোন পাকিস্তানী সৈন্য জড়িত থাকলে তার জানাজা পড়া ‘জায়েজ’ হবে না। সারা দুনিয়ার তাবৎ লোকজন জানে পাকিস্তানের আইএসআই,Ñ ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স, দেশটি চালায় তাদের কাছে তাই এই ফতোয়াÑ দারুণ এক হুমকি হয়ে দাঁড়াল। তালেবানদের সাথে যুদ্ধে মারা গেলে কোথায় তাদের শহীদ হওয়ার কথা, তা না হয়ে জানাজাই পাওয়া যাবে না মৃত্যুর পর; তাহলে পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধে, জেহাদে যাবে কেন? বাবা-মা’রাই বা কেন তাদের সন্তানদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে, জেহাদে পাঠাতে চাইবেন?
ইমাম আবদুল্লাহকে অপসারণ করা হলো ঠিকই, কিন্তু তার দুই ছেলে মাওলানা গাজী আবদুল আজিজ এবং মাওলানা গাজী আবদুর রশীদদের নিয়ন্ত্রণে থাকল এই লাল মসজিদ। ২০০৭ সালের ৩ জুলাই, এই লাল মসজিদসংলগ্ন মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা কোন রকমের উস্কানি ছাড়াই পাশের এক সিকিউরিটি পোস্টের পুলিশকে আক্রমণ করে বসল, কিছু অস্ত্রশস্ত্রও লুট করল, আর কয়েকজন সরকারী কর্মচারীকে জিম্মিও করে ফেলল। তারা দাবি তুলল, মহিলাদের লেখাপড়া বন্ধ করতে হবে, টেলিভিশন বন্ধ করতে হবে, ভিডিও দোকান বন্ধ করতে হবে এবং পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, লেখাপড়া কিছুই থাকতে পারবে না। তাদের আরও একটি দাবি, পাকিস্তানে কোন সংখ্যালঘু, ‘মাইনোরিটি থাকতে পারবে না; সকল বিদেশী এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পাকিস্তান থেকে তাড়িয়ে বহিষ্কার করে দেশটিকে ‘পবিত্র ভূমি’ বানাতে হবে।
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা দেনদরবার চলতে থাকে ৩ জুলাই থেকে। কিন্তু লাল মসজিদের এই সন্ত্রাসীরা ৬ জুলাইতে হত্যা করে ১৮ জন পুলিশ সদস্য এবং একজন বেসামরিক নাগরিককে। তারপরও আলোচনা চলতে থাকে। কিন্তু এই ধর্মান্ধ মোল্লারা “সুইসাইড স্কোয়াডের হুমকি দিতে থাকল। লাঠি হাতে কালো বোরকায় চুল থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা মহিলাদেরও তখন লাল মসজিদে দেখা যায়। ন্যূনতম মানবিক বিবেচনা বর্জিত এই সন্ত্রাসীরা শিশুদেরও বর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে থাকল।
সুতরাং যা প্রত্যাশিত তাই হলো! কোন দেশের কোন সরকারই এমন অরাজকতা, নৈরাজ্য মেনে নিতে পারে না; ধর্মের নামে, ধর্মের এমন অপব্যবহার সহ্য করতে পারে না, যদি সেই দেশটি সোমালিয়ার মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র না হয়।
পাকিস্তানের আইএসআই খুব বেশি তৎপর ছিল জেনারেল জিয়াউল হকের জামানায়। তখন ‘ইসলামাইজেশন অব পাকিস্তান’, ‘মিলিটারাইজেশন অব পাকিস্তান’ এবং ‘ইসলামাইজেশন অব আর্মি’ চরমে পৌঁছে। কিন্তু মৌলবাদী এবং ধর্মান্ধদের এত বড় পৃষ্ঠপোষক আইএসআইও মেনে নিতে পারল না লাল মসজিদের এই দখল। সরকারী নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আবার দখলে নিল এই মসজিদটি। কিন্তু এতে ১৭৩ জন মানুষ মারা পড়ল, আর আহত হলো আরও এক হাজার।
ইসলামধর্ম রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সৃষ্ট পাকিস্তানে ইসলাম ধর্মের নামে ব্যবসা করতে দেননি পাকিস্তানের এক জেনারেল, প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ।



১৪০০ হিজরী সালের প্রথম দিন, ১৯৭৯ সালের ২০ নবেম্বর, ভোর ৫টার দিকে যখন মুসল্লিরা ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন জুহায়মান আল ওতাইবি নামের এক পথভ্রষ্ট ধর্মভ্রষ্টের নেতৃত্বে হামলা হয় পবিত্র কাবা শরীফে। তার সাথে চার পাঁচ শ’ উগ্র ধর্মান্ধ ছিল বলে জানা যায়। কাবা শরীফে ঢুকেই তারা কাবা শরীফের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়। মিনারের বিভিন্ন জায়গায় উঠে অবস্থান নেয় এবং গোলাগুলো চালাতে থাকে। তখন হজের সীজনও চলছিল। তাই অনেক মুসল্লি আটকা পড়েন পবিত্র ক্বাবা শরীফে।

জুহায়মান আল-ওতাইবি তখন ঘোষণা দেয়, নতুন হিজরী শতাব্দীর পবিত্র দিনে ইমাম মেহেদীর আগমন ঘটেছে।তার দাবিমতে, এই ইমাম মেহেদীর নাম আবদুল্লাহ আল কাহতানী, ওতাইবিরই এক আত্মীয়।
তারা তখন সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে অনেক উদ্ভট অভিযোগও আনে, তারা সৌদি রাজপরিবারের উৎখাতও দাবি করে।
তখন সৌদি কিং ছিলেন বাদশাহ খালেদ।
তাঁর বড় ভাই বাদশাহ ফয়সল এক আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে যিনি বাদশাহ হয়েছিলেন। বাদশাহ খালেদের পর যুবরাজ ছিলেন প্রিন্স ফাহাদ এবং তারপর প্রিন্স আবদুল্লাহ।
প্রিন্স খালেদ ১৯৮৩তে মারা যাওয়ার পর বাদশাহ হলেন যুবরাজ ফাহাদ। বাদশাহ ফাহাদ মারা যাওয়ার পর বাদশাহ হলেন যুবরাজ আবদুল্লাহ।এখনো ক্ষমতায় আছেন তিনি।

১৯৭৯ সালের নবেম্বরে কাবা শরীফে যখন হামলা হয়, তখন যুবরাজ ফাহাদ এবং প্রিন্স আবদুল্লাহ ভিন্ন ভিন্ন সফরে উত্তর আফ্রিকায় ছিলেন।
বাদশাহ খালেদ সেই সংকটজনক পরিস্থিতিতে পবিত্র হারেম শরীফ থেকে সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ উৎখাত করার দায়িত্ব দিলেন ডিফেন্স মিনিস্টার প্রিন্স সুলতান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স নায়েফকে। সৌদি রাজপরিবারের এই দুই সদস্য ওতাইবি এবং তার দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর আগে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ বিন বাজের সাথে আলোচনা করলেন। গ্র্যান্ড মুফতি শেখ বিন বাজ এই অভিযান অনুমোদন করতে সম্মতি দিলেন।
সাথে সাথে শুরু হয় জুহায়মান আল ওতাইবিদের উচ্ছেদ অভিযান।
সৌদি সরকারের অনুরোধে পাকিস্তানও তখন একটি কমান্ডো দল পাঠায় কাবা শরীফ উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করতে। এই অভিযানে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য সামন্তকে নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের নবেম্বরে এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৭ জন নিহত হয়, আহত হয় প্রায় সাড়ে চারশ’। ওতাইবির পক্ষে নিহত হয় ১১৭ জন। পরে শরীয়া আইন অনুসারে বিচারে ওতাইবিসহ ৬৮ জনের মুন্ডু কেটে নেয়া হয়।

লাল মসজিদ এবং পবিত্র কাবা শরীফ দখলে নিয়ে কেমন অপকর্ম করেছিল দখলদাররা এবং এই দুটি পবিত্র স্থান পরে কেমন করে উদ্ধার করা হয়েছিল, তা জানতে হলে আগ্রহী ব্যক্তি ইন্টারনেটে এই দুটো পবিত্র স্থানের নাম লেখে ‘গুগলএ’ ক্লিক করলে আরও অনেক বিস্তারিত তথ্য পাবেন। এই ঘটনা দুটোর ওপর অনেক বইপত্রও লেখা হয়েছে। তার তালিকাও ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে।

ধর্মের নামে এই সন্ত্রাসী দখলদারদের আক্রমনাত্মক ভূমিকার কলংকজনক ইতিহাস বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বারবার জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত। জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে লিপিবদ্ধ থাকা উচিত এই ইতিহাস। এই ধর্মব্যবসায়ীদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ, কাঁটাবন মসজিদ এবং আমাদের অনেক মসজিদ মাদ্রাসাকে জামায়াত-শিবির এবং তাদের সমমনা দলগুলোর লোকজন ইসলাম ধর্মের নামে কেমন কলুষিত করে চলেছে, তা অব্যাহত থাকতে দেয়া যায় না। যেমন হতে দেয়া হয়নি পবিত্র কা’বা শরীফ এবং পাকিস্তানের লাল মসজিদে।


জানা যায়, পুলিশ হত্যা, থানা ও ফাঁড়ি ভাঙচুর, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা মামলায় শুক্রবার রাতে আনোয়ারুল ইসলাম, আবদুর রউফ, লেবু মণ্ডল নামে তিনজনকে এবং শনিবার জিয়াউর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকালও সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। মোতায়েন হয়েছে বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, সুন্দরগঞ্জ থানায় দুটি মামলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে ২০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেছেন, হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। আমার মনে হয়, হামলাকারীদের তালিকা প্রণয়ন অনেক জরুরী। একথা সত্যি, যে, বাস্তব ক্ষেত্র আমাদের প্রশাসনে জনবল এবং দক্ষতা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে।
এখানে মসজিদে আশ্রয় নিয়ে মসজিদ থেকে হামলা চালায় জামায়াত-শিবির । এই দেশে একটি পত্রিকা অফিসে আশ্রয় নিয়ে পুলিশ এবং নিরীহ মানুষজনকে টার্গেট করে ভারপ্রাপ্ত ‘বাইচান্স’ এডিটর জেহাদী মাহমুদুর রহমান ধর্মান্ধ মোল্লাদের উস্কায়, হুঙ্কার হুমকি দেয়, গর্জনও করে। দেশের গ্যাসসম্পদ বিক্রি করে নাইকো থেকে কোটি টাকার গাড়ি নেয়া সহ আনলিমিটেড দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এবং প্রমাণিত ব্যক্তি মাহমুদুর রহমান, যিনি উচ্চ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত একটি ব্যক্তি- কী করে তিনি পত্রিকার সম্পাদক হতে পারেন? রাজীবের হত্যাকারী ৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। তারা স্বীকারোক্তি ও দিয়েছে। এবার শহীদ রাজীবের চরিত্র হনন কারী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং এই মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিবেদনের প্রতিবেদক মাহমুদা ডলির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবার সময় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সংবাদপত্র কে ব্যবহার করে এ ধরণের মিথ্যা এবং উস্কানিমূলক প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। পত্রিকায় বিবৃতিদানকারী ২১ বিশিষ্ট নাগরিকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমার আবেদন,শুধু বিবৃতি আর কলামে সীমাবদ্ধ নয় আমাদের কাজ। বাস্তবে কাজ করতে হবে। বিচ্ছিন্নতা নয় আর, প্রজন্ম চত্বরের উদ্যোক্তা এই প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ডা. ইমরান এইচ সরকার এর বিরল এবং সাহসী নেতৃত্ব দেশের কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে। এই সাহসী সময়কে ধরে রাখতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে অনেক দূর। নজরুলের ভাষায় বলি, হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কান্ডারী বলো ,ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র।”
আমার ভাই , আমার বোন , আমার মা বিপন্ন । ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে এই সহিংসতা ঠেকাতে। প্রথাগত পুঁথিগত এবং নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে এসে কাজ করতে হবে রাজনীতিবিদদের। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে সকলকে। এর মাধ্যমেই এই উপমহাদেশে ও মুসলিম ব্রাদারহুড বা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কবর রচিত হবে।
Sumikhan29bdj@gmail.com

Saturday, March 2, 2013

১৯ পুলিশকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা:চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় জামায়াতের বর্বরতা


গুলি ছুড়তে ছুড়তে উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে না গেলে ১৯ পুলিশ সদস্য পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে এই দলেরই এক কনস্টেবলকে কুপিয়ে হত্যা করে জামায়াত-শিবির। হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে লোহাগাড়ার আমিরাবাদের তিনতলা ভবনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে পুলিশের বাকি ১৯ জন আশ্রয় নেন। কমিউনিটি সেন্টারের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির। ভবনে অবরুদ্ধ ১৯ পুলিশ সদস্যকে পুড়িয়ে মারতে এই আগুন দেওয়া হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই স্থানীয় জামায়াত-শিবির বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ওই দিন বেলা তিনটা থেকে শত শত নেতা-কর্মী লোহাগাড়া সদরে জড়ো হয়ে রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জামায়াত-শিবিরের একটি জঙ্গি মিছিল লোহাগাড়া সদরের আমিরাবাদের ‘জমির কমপ্লেক্স’ নামের তিনতলার একটি কমিউনিটি সেন্টার অতিক্রম করছিল। এ সময় চারজন পুলিশের উপপরিদর্শকসহ (এসআই) ২০ পুলিশ সদস্য জমির কমপ্লেক্সের দিকে ঢুকে যান। বিক্ষোভকারীরা কমিউনিটি সেন্টারের লোহার কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। এর আগ মুহূর্তে টানাহেঁচড়া করে তারেকুল ইসলাম নামের এক কনস্টেবলকে নিয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। বাকি ১৯ পুলিশ সদস্য দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মো. ইলতুৎ মিশ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা বিকেল পাঁচটার দিকে জমির কমপ্লেক্সের ফটকে তালা ঝুলিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে অবরুদ্ধ ১৯ পুলিশ সদস্য বেতার বার্তার মাধ্যমে আমাদের সাহায্য চান। আমি আরও ১৮ পুলিশ নিয়ে চায়নিজ রাইফেলের গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঘটনাস্থলে যাই। বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে অবরুদ্ধ ১৯ পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই।’
ইলতুৎ মিশ আরও বলেন, ‘হামলাকারীরা জমির কমপ্লেক্স থেকে আমাদের কনস্টেবল তারেকুল ইসলামকে ধরে নিয়ে কোপাতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর মাথায় লোহার খন্তা ঢুকিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. হাফিজ আক্তার বলেন, ‘হামলাকারীরা আমাদের ১৯ পুলিশ সদস্যকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। পুলিশের আরেকটি দল গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে না গেলে তাদের বাঁচানো সম্ভব ছিল না। এই দলের আমাদের আরেক কনস্টেবলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী, যাঁদের অনেককে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি।’
- See more at: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-02/news/333291#sthash.a3YDQ6ZG.dpuf

Friday, March 1, 2013

রাজীব হত্যার মূল পরিকল্পনায় শিবিরের ‘বড় ভাই’: 'রাজীব হত্যা ঈমানের অঙ্গ'


ঢাকা: ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা‍কাণ্ডের মূল পরিকল্পনা করেন ছাত্র শিবিরের এক বড় ভাই।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচ ছাত্র জানান, তারা রাজীবকে ফেসবুকের মাধ্যমে চিহ্নিত করেন। পরে তারা শাহবাগে তাকে খুঁজে বের করে এবং হরতালের মধ্যে রাজীবের বাড়িতে গিয়ে ক্রিকেট খেলার সময় দেখে আসেন।

অনিক, ফয়সাল বিন নাঈম ধারালো ছুরি দিয়ে রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করে। বাকিরা এলাকাটি চারদিক দিয়ে ঘেরাও করে রাখে।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিবি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। গত শুক্রবার রাতে রাজীব হত্যাকাণ্ডে জড়িত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাঁচ ছাত্রকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন ফয়সাল বিন নাইম (২২), মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬), এহসানুর রেজা রোমান (২৩), নাঈম সিকদার (১৯) ও নাফিস ইমতিয়াজ (২২)।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সবাই রাজীব হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, “আটক ছাত্ররা জানিয়েছেন রাজীবকে হত্যা করা তাদের ইমানের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”

মূল পরিকল্পনাকারী শিবিরের সেই বড় ভাইকে গ্রেফতার করা হয়নি জানিয়ে মনিরুল ইসলাম জানান, তাকে গ্রেফতারে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনিও নর্থ সাউথের ছাত্র।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের ‍উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম (পশ্চিম), ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান, এডিসি মশিউর রহমান, অতিরিক্ত উপকমিশনার মানস কুমার পোদ্দার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম।

বিএনপির হরতাল অনাকাঙ্খিত ও অপ্রত্যাশিত: গণজাগরণ মঞ্চ



গণজাগরণ চত্বর থেকে: জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর সহিংসতায় বিএনপির ডাকা হরতালের তীব্র হতাশা প্রকাশ করে একে অনাকাঙ্খিত ও অপ্রত্যাশিত বলে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জানানো হয়েছে।শুক্রবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে গণজাগরণ চত্বরের সমাবেশে এক বিশেষ বিবৃতিতে এ হতাশা প্রকাশ করা হয়।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বিবৃতিতে বলেন, “আমরা জানি বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। তার দল বিএনপি দাবি করে তাদের দলে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। তাই বিএনপির প্রতি আমাদের আহ্বান, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্র শিবিরকে বর্জন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখবেন।”

ডা. ইমরান আরও বলেন, “সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধীদলীয় প্রধান হচ্ছেন জাতির অন্যতম আশ্রয়ের জায়গা। জাতি প্রত্যাশা করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার মধ্য দিয়ে প্রিয় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় অগ্রসর হবে। বিরোধী দলীয় নেত্রীর সক্রিয় ইতিবাচক ভূমিকার মাধ্যমে এ অগ্রযাত্রা আরও গতিশীল হবে বলে মনে করে গণজাগরণ মঞ্চ।”

একাত্তরে মানবতাবোরোধী অপরাধে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়ার পর থেকে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের উদ্যোগে শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের ২৫তম দিন বিকেলে এক সমাবেশে ছাত্রনেতারা তাদের বক্তব্যে জামায়াত ও বিএনপির হরতাল প্রতিহতের আহ্বান জানান।

এর আগে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে, যাতে রাষ্ট্রপক্ষের আপলি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আন্দোলন ২৪তম দিনে জামায়াতের আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সাঈদীর রায়ের দিন জামায়াতের হরতালে দেশব্যাপী পুলিশ ও নারীসহ অর্ধশত মানুষ খুন হয়। এদিকে রোববার ও সেমাবার হরতাল দিয়েছে দলটি।এদিকে সরাসরি রায় নিয়ে কোনো কথা না বললেও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার হরতালের ডাক দিয়েছে।

জাময়াত ও বিএনপির হরতাল প্রতিহত করতে সবাইকে মাঠে নামার আহ্বান জানান গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা।

আমরা সবাই বাঙালি এটাই আমাদের পরিচয়: ডা. ইমরান এইচ সরকার



গণজাগরণ চত্বর থেকে: “আমরা সবাই বাঙালি এটাই আমাদের পরিচয়। আমাদের পূর্ব পুরুষরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছে। আমরা তাদের দোসরদের পরাজিত করে ঘরে ফিরবো।”
শুক্রবার গণজাগরণ চত্বরের সমাবেশে এ কথা বলেছেন গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার।
তিনি বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ অহিংস আন্দোলন করছে। কোনো নৈরাজ্য সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেবে না গণজাগরণ মঞ্চ। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করবে বলে আশা করি।”
তিনি বলেন, “আমাদের রক্তে লালন রবীন্দ্রনাথের মানবতাবোধ যেমন মিশে আছে, তেমনি আছে সুকান্ত নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা। বাংলার মানুষ মাথা নত করতে শেখেনি। যারা যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন তাদের হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, ভয় দিয়ে লাভ নেই। আমরা আন্দোলন শেষ না করে ঘরে ফিরছি না।”
ইমরান বলেন, “জামায়াত শিবিরের হায়েনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ১৬ কোটি দেশপ্রেমিক জনতা জাগ্রত রয়েছে। পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। এখনও সময় আছে ভালো পথে আসার।”
তিনি বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দিয়ে আসছিল। আমরা বার বার আহ্বান করেছিলাম তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য। তারা আমাদের কথা শোনেনি। তারা মঙ্গলবার হরতাল দিয়েছে।”

ইমরান বলেন, “আমরা ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের আর কোনো আঁচড় ফেলতে দেবোনা বাংলার মটিতে। সে কারণে তাদের হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আগামীতে হরতাল প্রতিহতের জন্য প্রস্তুতি নিন।”

তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবির একটি পতাকা ছিঁড়েছে। শনিবার পতাকা ওড়ানো কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তাদের বুঝিয়ে দিতে চাই, এখনও ১৬ কোটি পতাকা রয়েছে।”
ডা. ইমরান বলেন, “দেল্যা রাজাকারের রায়ে ১৬ কোটি মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটেছে। গণজাগরণ মঞ্চ কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের যেতে হবে অনেক দূর।”
তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব নজিরবিহীন। তারা পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মানুষ প্রতিরোধ শুরু করেছে। আপনারা সবাই এতে সামিল হন।”
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার স্পষ্ট হয়েছে হায়েনাদের চেহারা। তারা ২০টির বেশি স্থানে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে। আপনারা হিন্দু ভাইয়ের পাশে দাঁড়ান। যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে।“
তিনি বলেন, “বিভ্রান্ত করে কিছু তরুণদের রাজপথে নামানো হয়েছে। আমরা ধিক্কার জানাই। আর সেইসব তরুণদের বলতে চাই, আপনারা ভুল পথে আছেন। সঠিক পথে আসুন। এই রাজাকাররা আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না।"