Saturday, September 1, 2012

মাধ্যমিকের বই ছাপাতে ২১ কোটি ৭৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা কম খরচ





আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার খরচ ধরা হয়েছিলো ৯৩ কোটি ৯৭ লাখ সাড়ে ৬৬ হাজার টাকা। কিন্তু সরকার অনুমোদিত দরপত্র অনুযায়ী খরচ পড়বে ৭২ কোটি ২৪ লাখ সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা। প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২১ কোটি ৭৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা খরচ কম হচ্ছে। খরচ কমের শতকরা হার ২৩ দশমিক ১৩ ভাগ।
বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) এবং এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই কাগজসহ মূদ্রণ, বাধাঁই ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পরিবহনের দরপত্র অনুমোদন করেছে। প্রাক্কলিত দরের চেয়ে দরপত্রে অংশগ্রহনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্য হিসেবে চিহ্নিতদের উল্লেখিত দর কম হওয়ার কারন হিসেবে বলা হয়েছে, প্রতিবছর আলাদাভাবে কাগজ কেনা হয়। আর বাধাঁই মূদ্রন ও পরিবহনের কাজ আলাদাভাবে করা হয়। এবার এদুটি কাজ একত্রে করা হচ্ছে। আলাদাভাবে কাগজ না কেনার কারনে খরচ কমেছে।
জানা গেছে, এবছরের বাজেটে বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরনের জন্য ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মাধ্যমিকের তিন কোটি ২৯ লাখ১৯ হাজার ৯৮৩ কপি বই ছাপার জন্য মোট ৪৯ টি লটে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র জমা পড়ে ১৭০ টি। এরমধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে মাধ্যমিকের বইয়ের জন্য মোট ৭২ কোটি ২৪ লাখ সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত দরদাতাদের দর গড়ে ২৩.১৩% কম। লটপ্রতি সবচেয়ে বেশি দর কমেছে ২৭.১১%, আর সবচেয়ে কম কমেছে ১৬.৬১%।
দরদাতাদের মধ্যে একই প্রতিষ্ঠান একাধিক লটে নিম্ন দরদাতা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম প্রমা, প্রিয়াংকা, আনন্দ চারটি করে লটের নিম্ন দরদাতা। দরদাতাদের বৈধতার মেয়াদ থাকবে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত।

Thursday, August 30, 2012

যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রবাসী বাংলাদেশি মো. আলী ইমামকে কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি চিহ্নিত অপরাধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে


মনট্রিয়ল, ২৬ আগষ্ট- যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রবাসী এক বাংলাদেশিকে কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি (সিবিএসএ) তাদের চিহ্নিত অপরাধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ওই ব্যক্তির নাম মো. আলী ইমাম (৫৯)। কানাডায় বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে পাঁচজনকে গত বৃহস্পতিবার 'ওয়ান্টেড' তালিকাভুক্ত করে সংস্থাটি। বাকি চারজন জ্যামাইকা, ইকুয়েডর ও আজারবাইজানের নাগরিক। তাঁরাও বিভিন্ন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত।
দৈনিক ন্যাশনাল পোস্ট জানিয়েছে, অভিযুক্ত আলী ইমাম মন্ট্রিয়েল শহরে বসবাস করতেন। বর্ডার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি আত্মগোপন করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে কানাডা জুড়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবে তাঁর অপরাধের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ধরা পড়লে তাঁকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া অন্য শাস্তিও হতে পারে।
তালিকাভুক্ত অন্য চার অভিযুক্ত হচ্ছেন জ্যামাইকার নাগরিক ডারব্যান্ট ডেভ জ্যাক ও ডোনোভান সিনক্লেয়ার, ইকুয়েডরের মার্কোস ইয়ামিল ডি মোলিনা ও আজারবাইজানের ফরিদ ইউসুপোভ। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে দেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় এসে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন।
সিবিএসএ গত জুলাই মাসে তাদের ওয়েবসাইটে চিহ্নিত অপরাধীদের যে তালিকা প্রকাশ করে, তাতে মো. আলী ইমামসহ বেশ কিছু বিদেশির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এই তালিকা অনুসরণ করে কানাডার ফেডারেল ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি ২৭ জন বিদেশিকে চিহ্নিত করে। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনকে এরই মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আলী ইমামসহ অন্যদের ঘোষিত ঠিকানায় খুঁজে না পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার নতুন করে ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির ওয়েবসাইটে আলী ইমাম সম্পর্কে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে তাঁর নাম মো. আলী ইমাম। এ ছাড়া তিনি সে দেশে ইমাম এ হোসাইন, আলী মোহাম্মদ ইমাম, ইমাম আলী ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বসবাস করতেন মন্ট্রিয়েল শহরে। তাঁকে শনাক্ত করার বিশেষ কোনো চিহ্ন বা তথ্য কানাডা পুলিশের কাছে নেই। তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে, 'এই ব্যক্তিকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়ার জন্য দেশজুড়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো। এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধ অপরাধ অথবা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে মানবতা ও আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছেন। তাই তিনি কানাডায় আর গ্রহণীয় নন।'
তবে সমালোচকরা কানাডা সরকারের এই উদ্যোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অপরাধের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির লোক দেখানো কড়া পদক্ষেপ হিসেবে সমালোচনা করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এতে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কাউকে শনাক্ত করা হলে তাঁকে দেশে ফেরত না পাঠিয়ে কানাডাতেই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।

Friday, August 24, 2012

সাগর-রুনি হত্যায় একাধিক ব্যক্তি অংশ নেয়-রুনির টি-শার্টে ভিন্ন ডিএনএ শনাক্ত: র‌্যাব


ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তির অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে র‌্যাব। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও সংগ্রহ করা আলামত পরীক্ষা করে এমনটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

শুক্রবার বিকেলে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিষয়ক পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও মেহেরুন রুনির টি-শার্টের পরীক্ষার পর একাধিক ব্যক্তির ডিএনএ সনাক্ত হওয়ায় ওই হত্যাকাণ্ডে যে একাধিক ব্যক্তি জড়িত, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে রুনির টি-শার্ট থেকে একজনের ডিএনএ সনাক্ত হয়েছে। এছাড়া দু’টি ছুরির একটিতে চার জনের আঙ্গুলের ছাপ এবং অন্যটিতে একাধিক ব্যক্তির হাতের ছাপ পরীক্ষায় ধরা পড়েছে।

সোহায়েল জানান, এ পরীক্ষার প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। তিনি বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে আলামত পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে এলে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।

তিনি আরও জানান, পরীক্ষার জন্য গত মাসেও কিছু আলামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রুনির চুল, টিস্যু এবং সাগরের রক্তমাখা জামা রয়েছে। সাগর সরওয়ার ও ছেলে মেঘের ডিএনএ পরীক্ষাও চলছে যুক্তরাষ্ট্রের ফোকল্যান্ডের ফরেনসিক ও ডিএনএ ল্যাবে।

হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। এরপর গত ১২ জুন প্রথম দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, পরনের প্যান্ট, রুনির পরনের প্যান্ট।

গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডের সময় যে কাপড় দিয়ে সাগরের হাত ও পা বাঁধা হয়েছিল, সেই কাপড় এবং রুনির টি-শার্ট।

উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সময় তাদের শিশু সন্তান মেঘও বাসায় ছিল। ঘটনার পর সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তের ভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ছিল।

তিন মাসেও মামলার কোনো কিনারা করতে না পেরে ডিবি তদন্তে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯ মে র‌্যাব সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরপর গত ২৬ মে ভিসেরা আলামতের জন্য সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। তবে তাদের শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছে। তার গেঞ্জিতে (টি শার্ট) ভিন্ন ডিএনএ পাওয়া গেছে। খুন হওয়ার সময় মেহেরুন রুনির পরনে যে টি-শার্ট ছিল, তা থেকে সংগৃহীত উপাদান পরীক্ষা করে এক ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ-বৃত্তান্ত (প্রোফাইল) পাওয়া গেছে।

আর ওই ডিএনএ কোনো খুনীর হতে পারে বলে ধারণা করছে মামলার তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ র‌্যাব। এদিকে রুনির স্বামী সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও ছেলে মেঘের ডিএনএ পরীক্ষা চলছে বলে জানা গেছে।

গত সাড়ে ছয় মাসেও সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের কোন রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় এখন একমাত্র ভরসা করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোকল্যান্ডের ফরেনসিক ও ডিএনএ ল্যাবের পরীক্ষাকেই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক ও একটি ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসার পর র‌্যাব খুনিদের শনাক্ত করতে মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল। রোডম্যাপ অনুযায়ী সাগর রুনি হত্যা মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ নমুনাতেই একাধিক ব্যক্তির ছাপ রয়েছে। এর মধ্যে রুনির টি-শার্ট থেকে একজনের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের সময় যে ধস্তাধস্তি হয়েছে, তাতেই রুনির টি-শার্টে ওই ব্যক্তির চুল ও হাতের ছাপ লাগে। সাগরের হাত ও পা বাঁধার কাপড়ের নমুনা থেকেও অন্য কারও ডিএনএ শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসব নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এরপর গত ১২ জুন প্রথম দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্ট, রুনির পরনের প্যান্ট ও অন্য কাপড়ের নমুনা। গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডের সময় যে কাপড় দিয়ে সাগরের হাত ও পা বাঁধা হয়েছিল, সেই কাপড় এবং রুনির টি-শার্ট।

সূত্র জানায়, সাগর-রুনীর ডিএনএ পরীক্ষা রিপোর্টই এখন তদন্তের শেষ ভরসা। এ রিপোর্ট অনুযায়ী খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। যখন কোন খুনি শনাক্ত করা সম্ভব হয় না, তখন ক্রাইম সিনই একমাত্র বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সাগর রুনির ক্রাইম সিনকে সেভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি পুলিশ। সিআইডি ও ডিবি বিশেষজ্ঞ দলও ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্রাইম সিন রক্ষা করতে পারেনি।

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাসায় ছিল তাদের একমাত্র সন্তান মেঘ। প্রথমে সাগর রুনি হত্যা মামলা তদন্তের ভার ডিবির হাতে ছিল। তিন মাস ডিবি এ মামলায় তেমস কিছু করতে না পারায় হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯ মে র্যাব সাগর রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করে।

সাগর রুনির ক্রাইম সিন নষ্ট হওয়ায় র্যাবের পক্ষে খুনি শনাক্তকরণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। গত ২৬ এপ্রিল ভিসেরা আলামতের জন্য দুজনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। তদন্ত শুরুর পর এখনো এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করে।


Friday, August 17, 2012

ঈদের ঘরমুখো মানুষজনকে পরিবহনে সরকারি, নৌবাহিনীর জাহাজ, নানান জলযান, সেনাবাহিনীর গাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস-গাড়ি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে

অস্ট্রেলিয়ার চাকরিতে কোন উৎসব বোনাস নেই। চাকরিতে বছরে ছ’সপ্তাহের পেইড হলিডে আছে। অসুস্থতার ছুটি না নিলে বার্ষিক এই পেইড হলিডে সাত সপ্তাহে দাঁড়ায়! কাজ না করেই বেতন! আবার ছুটি না নিলে বছরের নির্দিষ্ট সময় পরে সংশ্লিষ্টরা এ টাকাটি নগদ তুলে নিতে পারেন। এটিকেই বোনাস মনে করেন এদেশের মানুষজন! খ্রীস্টান প্রধান এ দেশটির বেশিরভাগ মানুষ ক্রিসমাসের আগে ইংরেজি নববর্ষ মিলিয়ে এই হলিডে নিতে চান। কিন্তু এই হলিডে কাটাতে এদের তেমন কেউ গ্রামের বাড়িতে যান না। এরা ছোটেন দেশবিদেশের নানান টুরিস্ট জোন-স্পটে। এরজন্যে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিমানের টিকেটের দাম থাকে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড়-দু’গুণ বেশি। বছরের এই সময়টায় এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রায় দু’মাসের ছুটি থাকে। আমাদের দেশের মতো পরিবারগুলো বছরের এই সময়টাতেই দেশে বেড়াতে যেতে চান। কিন্তু বিমান টিকেটের উচ্চমূল্য মেটাতে সক্ষমরাই এটা পারেন! আবার দেশে যাওয়া মানে একটি পরিবারের দশ-পনের হাজার ডলারের ধাক্কা! এদেশের খুব কম মানুষের এত টাকা হাতে জমা থাকে। অনেক ক্রেডিটকার্ডের ওপর ভরসা করে চলে যান। পরে ক্রেডিট কার্ডের এসব বকেয়া আর সুদ সামাল দিতে গিয়ে এখানে ফেরার পর সংশ্লিষ্টদের দিন-রাত অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এসবই এসব দেশের বাস্তবতা। টাকা দেন, বোনাস দেন, বখশিস দেন, বাড়ি যামু’ বলে আন্দোলন-অবরোধ করার সুযোগই এখানে নেই। সেভাবে বিষয়টি এদেশে কেউ ভাবেনওনা!
ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ঢাকাকে প্রায় খালি করে আমাদের দেশের লোকজন গ্রামের বাড়ি যান। এ নিয়ে নানান দূর্ভোগের সচিত্র খবর ছাপা-প্রকাশ হয় দেশের মিডিয়ায়। দেশের পরিবহন ব্যবস্থাটি ভেতর থেকে এমনিতই নড়বড়ে। একসঙ্গে এত মানুষজনকে পরিবহনের মতো অবকাঠামোও দেশের নেই। এবার নানা টিভির রিপোর্ট দেখে দেখে মনে হলো এতগুলো টিভি চ্যানেলের প্রতিযোগিতামূলক রিপোর্টিং, এত ক্যামেরার কারনে অনেককিছুর জবাবদিহিও আগের চেয়ে বেড়েছে। দেশের ইতিহাসের ব্যতিক্রমী যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সক্রিয় সরেজমিন ছোটাছুটির কারনেও পরিস্থিতির তুলনামূলক উন্নতি ঘটেছে। আমার মনে হয়েছে পুরো বিষয়টি নিয়ে নতুন কিছু ভাবার আছে সরকারের। যেমন ঈদের ঘরমুখো মানুষজনকে পরিবহনে সরকারি সব ধরনের যানবাহন, নৌবাহিনীর জাহাজ সহ নানান জলযান, সেনাবাহিনীর গাড়িরবহর, বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস-গাড়িসমূহ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এসব পরিবহন ব্যবহারকারীরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করবেন। এতে চলতি ভোগান্তির কিছুটা হলেও লাঘব হবে। সরকারি দায়িত্বশীলরা কি বিষয়টি নিয়ে ভাববেন?

Wednesday, August 15, 2012

মাদারীপুরে নবজাতকের হাত ভেঙে দিলেন নার্স!

মাদারীপুরে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের (মাতৃমঙ্গল) এক নার্স ছুড়ে ফেলে দিয়ে এক নবজাতকের হাত ভেঙে দিয়েছেন বলে পরিবার থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নবজাতক ১৩ দিন ধরে অসুস্থ হয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতাল, নবজাতকের মা রোজিনা বেগম ও নানী সুফিয়া বেগম বাংলানিউজকে জানান, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের সস্তাল গ্রামের কৃষক আমিন তালুকদারের স্ত্রী রোজিনা বেগমের ২ আগস্ট প্রসবব্যথা শুরু হলে মাদারীপুর সদরের মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।

সেখানে দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্স রোজিনাকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানোর কথা বলেন।

কিন্তু রোজিনা অপারেশন করবেন না বলে জানান। এতে নার্স ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে রুম থেকে বের করে দেন। কোনো উপায় না পেয়ে রোজিনা হাসপাতালের নিচে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন।

একপর্যায়ে নার্স বাধ্য হয়ে তাকে লেবার রুমে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তিনি অপারেশন ছাড়াই স্বাভাবিক নিয়মেই একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।

দায়িত্বরত নার্স প্রথমে সন্তানকে তার মায়ের পাশে দেন। পরে শিশুটিকে মৃত বলে পাশের একটি বেডে ছুড়ে ফেলে দেন।

এসময় নবজাতক নড়ে উঠলে তাকে ফের মায়ের কাছে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দ্রুত মা ও শিশু সুস্থ আছে বলে ৯শ টাকা বকশিস রেখে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

বাড়িতে যাওয়ার পর রোজিনা টের পান তার সন্তানের হাত ভাঙা। ২ দিন পর ওই শিশুকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এবিষয়ে রোজিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে জানান, এটাই তাদের প্রথম সন্তান। তার স্বামী মানুষের জমিতে কৃষি কাজ করেন। মাতৃমঙ্গলের নার্স তাকে অপারেশনের কথা বললে টাকার কথা চিন্তা করে তিনি রাজি হননি।

পরে অপারেশন ছাড়াই তিনি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। তাদের কথা মতো অপারেশন না করায়, নার্স ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলেকে মৃত বলে ছুড়ে ফেলে দেয়। এতে তার সন্তানের ডান হাত ভেঙে যায়। এসময় তারা এ ঘটনার জন্য তার কাছে ক্ষমাও চায়।

ডাক্তার ও নার্সের নাম জানতে চাইলে রোজিনা বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে তাদের নাম বলবো? মাত্র কয়েক ঘন্টা সেখানে ছিলাম।‘

রোজিনা অভিযোগ করে জানান, নার্সের জন্যই তার ছেলের হাত ভেঙে গেল। অথচ তারা ছেলেকে কোনো চিকিৎসা বা পরামর্শ না দিয়েই ৯শ টাকা বকশিস রেখে দ্রুত তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

তবে এ ব্যাপারে রোজিনার স্বামী দুই/একদিনের মধ্যে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করবে বলে জানান তিনি।
মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র সূত্রধরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। তাই, এই ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে নার্সরা ইচ্ছে করে এ ঘটনা ঘটাতে পারেননা। হয়ত ভুল করে এ ঘটনা ঘটতে পারে।‘

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ এখনও অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কবর প্রথম বাঁধাই করে অবিসংবাদিত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী



 সুমি খান: “ যে নেতার নির্দেশে এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো , তাকে সপরিবারে  নির্মম হত্যার পর তার অস্তিত্ব মুছে ফেলার চক্রান্ত করেছিলো খুনিরা। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মীর মতো আমিও গ্রেফতার হই, ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে আমাকে। কোন্ সালে সেটা মনে নেই, দেশে একটু মুক্ত চলাচলের  সুযোগ পেতেই বঙ্গবন্ধুর কবর জেয়ারত করতে ছুটে গিয়েছিলাম টুঙ্গিপাড়া । কবরের অবস্থা দেখে  মনে হলো  পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে এই কবর টি  সংরক্ষণ করা জরুরী।”
পনেরোই আগষ্ট সকালে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এ বি মহিউদ্দিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর সাথে জড়িয়ে তার স্মৃতি তুলে ধরলেন আমাদের সময়ের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ।  প্রথমেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কথাই মনে রাখতে পারছেন না বলে। পর মুহুর্তেই ধীরে ধীরে মনে করলেন সেই ঐতিহাসিক দিনটির অনেক কথা।
“ টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ অনেক দূরে। রাস্তা খুব খারাপ ছিল তখন, ইট, সিমেন্ট , রাজমিস্ত্রি- কিছুই তো নেই।  তবু মন মানলোনা। আমার   সাথে চট্টগ্রামের কাট্টলীর কয়েকজন নেতা কর্মী ছিল। তাদের সাথে নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে ইট আর সিমেন্ট আনলাম।  কোনভাবে ইট সিমেন্টের গাঁথুনি তুলে আমাদের প্রিয় নেতার  কবর বাঁধাই করে দিলাম  নিজেরাই। আমরা তো মিস্ত্রি নই, প্ল্যাষ্টার করতে পারলাম না।”  ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ঢাকায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার কথা ছিল তার ও । সকালে রেডিও খুলতেই মেজর ডালিমের বেতার ঘোষণার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। বললেন, যে নেতার নির্দেশে এ দেশের তরুণ সমাজ মোহমুগ্ধ হয়ে সাহস করে  মাঠে  নেমেছে, সেই নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যার ঘটনা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ করে দেয় সেদিনের তরুণ শ্রমিক নেতা এবং সংগঠক  মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। ১৬ আগষ্ট চট্টগ্রামে এসে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে লালখানবাজার যাওয়ার পথে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের  সদস্যেরা গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাকে। এর পর তাকে পাঠানো হলো রাজশাহী জেলে। প্রায় ৬ মাস পর জামিনে মুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম আসেন । সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলা চলে যান।সেখান থেকে কোলকাতা যান এবং জীবিকার প্রয়োজনে নানান কাজের সাথে  যুক্ত হন। এর কিছুদিন পর দেশে ফেরার সাথে সাথে  আবার শুরু হয় নির্যাতন। বললেন, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর খুনি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ছিলাম, তাদের মধ্যে সুলতানুল কবির, পুলিন দে, আব্দুল্লাহ আল হারুণ, ডা. আফসারুল আমিন, লোকমান সহ অনেক কে  ক্যান্টনমেন্টে  ধরে নিয়ে খুব নির্যাতন করা হতো। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং সেনাবাহিনীর পাকিস্তানঘেঁষা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে  বাংলাদেশ বিরোধী সাম্প্রদায়িক একটি দল গঠন করা হলো। আমাদের দলের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হলো।মুক্তিযুদ্ধেও পর সুবিধাভুক্ত গোষ্ঠিীর কারণে যারা অভিমান করে বা  কোন কারণে ভুল বুঝে দল থেকে দূরে সরে গেছে তাদের  কারো কারো সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে একটি  অতিবাম সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হলো। সদ্যস্বাধীন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত  বাংলাদেশ কে বঙ্গবন্ধু যেভাবে গড়ে তুলছিলেন,তা ধ্বংস করার জন্যে আন্তর্জাতিক চক্রান্তে অংশ নিলো সেই অতিবাম গোষ্ঠী। এগ্রেসিভ হয়ে একের পর এক বিভিন্ন নাশকতা মূলক কাজ করে সংকটে ফেলেছে বঙ্গবন্ধুকে।”
মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বারবার বঙ্গবন্ধু , তার কন্যা শেখ হাসিনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে । সবরকম দুর্নীতি এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি সোচ্চার।  তার মতে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশাল অপশক্তি ওঁৎ পেতে আছে। এই শক্তি প্রতিরোধ করতে হবে। দলের নেতা কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে তারা এমন কোন কাজ না করে, যা বর্তমান সরকারের জনকল্যাণ মুখী  ভূমিকাকে সংকটে ফেলতে পারে।
 চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অন্ত:র্কোন্দল মিটাতে সম্প্রতি নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিনের  বাসায় গেছেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ।বললেন, বড় দলে মত বিরোধ হয়, আবার মিটে যায়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তিনবার নির্বাচিত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী  পদ্মা সেতু  প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বের অনেক বড়ো শক্তির বিরোধিতার পরও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। প্রয়োজনে এক মুঠো ভাত কম খেয়ে হলেও আমরা ১৪ কোটি মানুষ নেত্রীর পদক্ষেপে একাত্ম।আমরা ভিক্ষুক হয়ে বাঁচতে রাজী না।জনগণের কথা ভেবে দেশের সন্তান হিসেবে ড. ইউনুস কে  পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মহিউদ্দিন চৌধুরী। সুমি খান ১৫/০৮/১২

Tuesday, August 14, 2012

আমাদের ছোট রাসেল সোনা -শেখ হাসিনা


রাসেল, রাসেল তুমি কোথায়?

রাসেলকে মা ডাকে, আসো,খাবে না, খেতে আসো। 
মা মা মা, তুমি কোথায় মা?
মা যে কোথায় গেল--মাকে ছাড়া রাসেল যে ঘুমাতে চায় না ঘুমের সময় মায়ের গলা ধরে ঘুমাতে হবে।
মাকে ও মা বলে যেমন ডাক দিত, আবার সময় সময় আব্বা বলেও ডাকত।

আব্বা ওর জন্মের পরপরই জেলে চলে গেলেন। ৬ দফা দেওয়ার কারণে আব্বাকে বন্দি করল পাকিস্তানি শাসকরা। রাসেলের বয়স তখন মাত্র দেড় বছরের কিছু বেশি। কাজেই তার তো সব কিছু ভালোভাবে চেনার বা জানারও সময় হয়নি। রাসেল আমাদের সবার বড় আদরের;  সবার ছোট বলে ওর আদরের কোনও সীমা নেই। ও যদি কখনও একটু ব্যথা পায় সে ব্যথা যেন আমাদের সবারই লাগে। আমরা সব ভাইবোন সব সময় চোখে চোখে রাখি, ওর গায়ে এতটুকু আঁচড়ও যেন না লাগে। কী সুন্দর তুলতুলে একটা শিশু। দেখলেই মনে হয় গালটা টিপে আদর করি।

১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাসেলের জন্ম হয় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় আমার শোয়ার ঘরে। দোতলা তখনও শেষ হয়নি। বলতে গেলে মা একখানা করে ঘর তৈরি করেছেন। একটু একটু করেই বাড়ির কাজ চলছে। নিচতলায় আমরা থাকি। উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরটা আমার ও কামালের। সেই ঘরেই রাসেল জন্ম নিল রাত দেড়টায়। আব্বা নির্বাচনী মিটিং করতে চট্টগ্রাম গেছেন। ফাতেমা জিন্নাহ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে একটা মোর্চা করে নির্বাচনে নেমেছে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরু্দ্ধে সব রাজনৈতিক দল। তখনকার দিনে মোবাইল ফোন ছিল না। ল্যান্ডফোনই ভরসা। রাতেই যাতে আব্বার কাছে খবর যায় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকাকাকা বাসায়। বড় ফুফু ও মেজ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার এবং নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আর জেগে ওঠে। আমরাও ঘুমে ঢুলঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমনবার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেজ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখব। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড়সড় হয়েছিল রাসেল। মাথার চুল একটু ভেজা মনে হলো। আমি আমার ওড়না দিয়েই মুছতে শুরু করলাম। তারপরই এক চিরুনি নিলাম মাথার চুল আচড়াতে। মেজ ফুফু নিষেধ করলেন, মাথার চামড়া খুব নরম তাই এখনই চিরুনি চালানো যাবে না। হাতের আঙ্গুল বুলিয়ে সিঁথি করে দিতে চেষ্টা করলাম।

আমাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল। অনেক বছর পর একটা ছোট বাচ্চা আমাদের ঘর আলো করে এসেছে, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আব্বা বার্ট্র্যান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে নিজের ছোট সন্তানের নাম রাসেল রাখলেন। ছোট্ট রাসেল আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। মা রাসেলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সংসারের কাজ করতেন, স্কুল বন্ধ থাকলে তার পাশে শুয়ে আমি বই পড়তাম। আমার চুলের বেণি ধরে খেলতে খুব পছন্দ করতো ও। আমার লম্বা চুলের বেণিটা ওর হাতে ধরিয়ে দিতাম। ও হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হাসতো। কারণ নাড়াচাড়ায় মুখে চুল লাগতো তাতে খুব মজা পেত।

জন্মের প্রথম দিন থেকেই ওর ছবি তুলতাম, ক্যামেরা আমাদের হাতে থাকতো। কত যে ছবি তুলেছি। ওর জন্য আলাদা একটা অ্যালবাম করেছিলাম যাতে ওর জন্মের দিন, প্রথম মাস, প্রতি তিন মাস, ছয় মাস অন্তর ছবি অ্যালবামে সাজানো হতো। দুঃখের বিষয় ওই ফটো অ্যালবামটা অন্যসব জিনিসপত্রের সঙ্গে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লুট করে নেয়। হারিয়ে যায় আমাদের অতি যত্নে তোলা আদরের ছোট্ট ভাইটির অনেক দুর্লভ ছবি।

বাসার সামনে ছোট্ট একটা লন। সবুজ ঘাসে ভরা। আমার মা খুবেই যত্ন নিতেন বাগানের। বিকেলে আমরা সবাই বাগানে বসতাম। সেখানে একটা পাটি পেতে ছোট্ট রাসেলকে খেলতে দেওয়া হতো। একপাশে একটা ছোট্ট বাঁশ বেঁধে দেওয়া ছিল, সেখানে রাসেল ধরে ধরে হাঁটতে চেষ্টা করতো। তখন কেবল হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছে। আমরা হাত ধরে হাঁটাতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু কিছুতেই হাঁটতে চাইতো না। ওর স্বাস্থ্য খুব ভালো ছিল। বেশ নাদুস-নুদুস একটা শিশু। আমরা ভাইবোন সব সময় ওকে হাত ধরে হাঁটাতাম। একদিন আমার হাত ধরে হাঁটছে। ওর যেন হাঁটার ইচ্ছা খুব বেড়ে গেছে। সারা বাড়ি হাত ধরে ধরে হাঁটছে। হাঁটাতে হাঁটতে পেছনের বারান্দা থেকে সামনের বারান্দা হয়ে বেশ কয়েকবার ঘুরলো। এই হাঁটার মধ্যে আমি মাঝে মাঝে চেষ্টা করছি আঙ্গুল ছেড়ে দিতে, যাতে নিজে হাঁটতে পারে। কিন্তু সে বিরক্ত হচ্ছে, আর বসে পড়ছে, হাঁটবে না আঙ্গুল ছাড়া। তার সাথে হাঁটতে হাঁটতে আমি বরাবরই চেষ্টা করছি যদি নিজে হাঁটে। হঠাৎ সামনের বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে আমার হাত ছেড়ে নিজে হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে চলছে। আমি পেছনে পেছনে যাচ্ছি। সেই প্রথম হাঁটা শুরু করল। আমি ভাবলাম কতটুকু হেঁটে আবার আমার হাত ধরবে। কিন্তু যতই হাঁটছি দেখি আমার হাত আর ধরে না, চলছে তো চলছেই, একেবারে মাঝের প্যাসেজ হয়ে পেছনের বারান্দায় চলে গেছে। আমি তো খুশিতে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করেছি যে, রাসেল সোনা হাঁটতে শিখে গেছে। একদিনে এভাবে কোনও বাচ্চাকে আমি হাঁটতে দেখিনি। অল্প অল্প করে হেঁটে হেঁটে তবেই বাচ্চারা শেখে। কিন্তু ওর সবকিছু যেন ছিল ব্যতিক্রম। ও যে খুবই মেধাবী তার প্রমাণ অনেকভাবে আমরা পেয়েছি। আমকে হাসুপা বলে ডাকত। কামাল ও জামালকে ভাই বলত আর রেহানাকে আপু। কামাল ও জামালের নাম কখনও বলতো না।আমরা অনেক চেষ্টা করতাম নাম শেখাতে, মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে বলতো ভাই। দিনের পর দিন আমরা যখন চেষ্টা করে যাচ্ছি- একদিন বলেই ফেলল ‘কামমাল’, ‘জামমাল’। তবে সব সময় ভাই বলেই ডাকত।

চলাফেরায় বেশ সাবধানি কিন্তু সাহসী ছিল, সহসা কোনও কিছুতে ভয় পেতো না। কালো কালো বড় পিপড়া দেখলে ধরতে যেত। একদিন একটা বড় ওলা (বড় কালো পিঁপড়া) ধরে ফেললো আর সাথে সাথে কামড় খেল। ছোট্ট আঙ্গুল কেটে রক্ত বের হলো। সাথে সাথে ওষুধ দেওয়া হলো। আঙ্গুলটা ফুলে গেছে। তারপর থেকে আর পিঁপড়া ধরতে যেত না। কিন্তু ওই পিঁপড়ার একটা নাম নিজেই দিয়ে দিল। কামড় খাওয়ার পর থেকেই কালো বড় পিপড়া দেখলেই বলতো ‘ভুট্টো’। নিজে থেকেই নামটা দিয়েছিল।

রাসেলের কথা ও কান্না টেপরেকর্ডারে টেপ করতাম। তখনকার দিনে বেশ বড় টেপরেকর্ডার ছিল। এর কান্না মাঝে মাঝে ওকেই শোনাতাম। সব থেকে মজা হতো ও যদি কোনও কারণে কান্নাকাটি করতো, আমরা টেপ ছেড়ে দিতাম, ও তখন চুপ হয়ে যেত। অবাক হতো মনে হয়। একদিন আমি রাসেলের কান্না টেপ করে বারবার বাজাচ্ছি, মা ছিলেন রান্নাঘরে। ওর কান্না শুনে মা ছুটে এসেছেন। ভেবেছিলেন ও বোধহয় একা, কিন্তু এসে দেখেন আমি টেপ বাজাচ্ছি আর ওকে নিয়ে খেলছি। মার আর কী বলবেন। প্রথমে বকা দিলেন, কারণ মা খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন ও একা আছে মনে করে। তারপর হেসে ফেললেন ওর টেপ করা কান্না শুনে। আমি ওকে দিয়ে কথা বলিযে টেপ করতে চেষ্টা করছিলাম।

আব্বা যখন ৬-দফা দিলেন তারপরই তিনি গ্রেফতার হয়ে গেলেন। রাসেলের মুখে হাসিও মুছে গেল। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে রাসেল আব্বাকে খুঁজত। রাসেল যখন কেবল হাঁটতে শিখেছে, আধো আধো কথা বলতে শিখেছে, আব্বা তখনই বন্দি হযে গেলেন। মা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আব্বার মামলা-মকদ্দমা সামলাতে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। সংগঠনকে সক্রিয় রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম চালাতেও সময় দিতে হতো। আমি কলেজে পড়ি, সাথে সাথে রাজনীতিতে সক্রিয় হযে কাজ শুরু করি। কামাল স্কুল শেষ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়। সেও রাজনীতিতে যোগ দেয়। জামাল ও রেহেনা স্কুলে যায়। আব্বা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই রাসেলের খাওয়া-দাওয়া একরকম বন্ধ হয়ে যায়। কিছু খেতে চাইতো না। ওকে মাঝে মাঝ ছোট ফুফুর বাসায় নিয়ে যেতাম। সেখানে গেলে আমার ছোট ফুফার সাথে বসে কিছু খেতে দিতেন। ছোট ফুফা ডিম পোচের সাথে চিনি দিয়ে রাসেলকে খেতে দিতেন। ঢেঁড়স ভাজির সাথেও চিনি দিয়ে রুটি খেতেন, রাসেলকেও খাওয়াতেন। আমাদের বাসায় আম্বিয়ার মা নামে এক বুয়া ছিল, খুব আদর করতো রাসেলকে। কোলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে খাবার খাওয়াতো।

আমাদের বাসায় কবুতরের ঘর ছিল। বেশ উঁচু করে ঘর করা হয়েছিল। অনেক কবুতর থাকতো সেখানে। মা খুব ভোরে উঠতেন, রাসেলকে কোলে নিয়ে নিচে যেতেন এবং নিজের হাতে কবুতরদের খাবার দিতেন। রাসেল যখন হাঁটতে শেখে তখন নিজেই কবুতরের পেছনে ছুটত, নিজে হাতে করে তাদের খাবার দিত। আমাদের গ্রামের বড়িতেও কবুতর ছিল। কবুতরের মাংস সবাই খেত। বিশেষ করে বর্ষকালে যখন অধিকাংশ জমি পানির নিচে থাকতো তখন তরকারি ও মাছের বেশ অভাব দেখা দিত। তখন প্রায়ই কবুতর খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। সকালের নাস্তার জন্য পরোটা ও কবুতরের মাংস ভুনা সবার প্রিয় ছিল। তাছাড়া কারও অসুখ হলে কবুতরের মাংসের ঝোল খাওয়ানো হতো। ছোট ছোট বাচ্ছাদের কবুতরের স্যুপ করে খাওয়ালে রক্ত বেশি হবে, তাই বাচ্চাদের নিয়মিত কবুতরের স্যুপ খাওয়াতো। রাসেলকে কবুতর দিলে কোনও দিন খেত না। এত ছোট বাচ্চা কিভাবে যে টের পেত কে জানে। ওকে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছি। ওর মুখের কাছে নিলেও খেত না। মুখ ফিরিয়ে নিত। শত চেষ্টা করলেও কোনোদিন কেউ ওকে কবুতরের মাংস খাওয়াতে পারে নি।

আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসলকে নিয়ে গেলে আর আসতে চাইতো না। খুবই কান্নাকাটি করতো। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে আব্বার বাসা জেলখান আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা  বাসায় ফেরত যাবো। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফেরত আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতো এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকতো।

১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি আব্বাকে আগরতলা মামলায় আসামি করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে বন্দি করে রাখে। ছয় মাস আব্বার সঙ্গে দেখা হয়নি। আমরা জানতেও পারিনি আব্বা কেমন আছেন, কোথায় আছেন। রাসেলের শরীর খারাপ হয়ে যায়। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আরও জেদ করতে শুরু করে। ছোট্ট বাচ্চা মনের কষ্টের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারে না, আবার সহ্যও করতে পারে না। কী যে কষ্ট ওর বুকের ভেতরে তা আমরা বুঝতে পারতাম।

কলেজ শেষ করে ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। মা আব্বার মামলা ও পার্টি নিয়ে ব্যস্ত। প্রায়ই বাসার বাইরে যেতে হয়। মামলার সময় কোর্টে যান। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন জেরদার করার জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ১৯৬৮ সালে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন নিয়ে সবাই ব্যস্ত। আন্দোলন সংগ্রাম তখন জোরদার হয়েছে। রাসলকে সময় দিতে পারি না বেশি। আম্বিয়ার মা সব সময় দেখে রাখতো। এমনি খাবার খেতে চাইত না কিন্তু রান্নাঘরে যখন সবাই খেত তখন সবার সঙ্গে বসতো। পাশের ঘরে বসে লাল ফুল আঁকা থালায় করে পিঁড়ি পেতে বসে কাজের লোকদের সঙ্গে ভাত খেতে পছন্দ করতো।

আমাদের একটা পোষা কুকুর ছিল; ওর নাম টিম। সবার সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব ছিল। ছোট্ট রাসেলও টমিকে নিয়ে খেলতো। একদিন খেলতে খেলতে হঠাৎ টমি ঘেউ ঘেউ করে ডেকে ওঠে, রাসেল ভয় পেয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে রেহানার কাছে এসে বলে, টমি বকা দিচ্ছে। তার কথা শুনে আমরা তো হেসেই মরি। টমি আবার কিভাবে বকা দিল। কিন্তু রাসেলকে দেখে মনে হলো বিষয়টা নিয়ে সে বেশ বেশ গম্ভীর। টমি তাকে বকা দিয়েছে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, কারণ টমিকে সে খুব ভালোবাসতো। হাতে করে খাবার দিত। নিজের পছন্দমতো খাবারগুলো টমিকে ভাগ দেবেই, কাজেই সেই টমি বকা দিলে দুঃখ তো পাবেই।

১৯৬৯ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি প্রায় তিন বছর পর আব্বা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যখন মুক্তি পান তখন রাসেলের বয়স চার বছর পার হয়েছে। কিন্তু ভীষণ রোগা হয়ে গিয়েছিল বলে আরও ছোট্ট দেখাতো।

ওর মধ্যে আর একটি জিনিস আমরা লক্ষ্য করলাম। খেলার ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ পরপরই আব্বাকে দেখে আসত। আব্বা নিচে অফিস করতেন। আমরা তখন দোতলায় উঠে গেছি। ও সারাদিন নিচে খেলা করত। আর কিছুক্ষণ পরপর আব্বাকে দেখতে যেত। মনে মনে বোধহয় ভয় পেত যে আব্বাকে বুঝি আবার হারায়।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে যখন অসহযোগ আন্দোলন চলছে, তখন বাসার সামনে দিয়ে মিছিল যেত আর মাঝে মধ্যে পুলিশের গাড়ি চলাচল করত। দোতলায় বারান্দায় রাসেল খেলা করত, যখনই দেখত পুলিশের গাড়ি যাচ্ছে তখনই চিৎকার করে বলত, ‘ও পুলিশ কাল হরতাল’। যদিও ওই ছোট্ট মানুষের কণ্ঠস্বর পুলিশের কানে পৌঁছত না কিন্তু রাসেল হরতালের কথা বলবেই। বারন্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ‘হরতাল হরতাল’ বলে চিৎকার করত। স্লোগান দিন ‘জয় বাংলা’। আমরা বাসায় সবাই আন্দোলনের ব্যাপারে আলোচনা করতাম, ও সব শুনত এবং নিজেই আবার তা বলত।

১৯৭১ সালের পঁচিশ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালালে আব্বা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ছাব্বিশ মার্চ প্রথম প্রহরের পরপরই আব্বাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরদিন আবার আমাদের বাসা আক্রমণ করে। রাসেলকে নিয়ে মা ও জামাল পাশের বাসায় আশ্রয় নেন। কামাল আমাদের বাসার পেছনে জাপানি কনস্যুলেটের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। কামাল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চলে যায়। আমার মা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হন। আমাদের ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর সড়কে (পুরাতন) একটা একতলা বাসায় বন্দি করে রাখে।

ছোট্ট রাসেলও বন্দি জীবনযাপন করতে শুরু করে। ঠিকমতো খাবার-দাবার নেই। কোনো খেলনা নেই, বইপত্র নেই, কী কষ্টের দিন যে ওর জন্য শুরু হলো। বন্দিখানায় থাকতে আব্বার কোনও খবরই আমরা জানি না। কোথায় আছেন কেমন আছেন কিছুই জানি না। প্রথম দিনে রাসেল আব্বার জন্য খুব কান্নাকাটি করত। তার ওপর আদরের কামাল ভাইকে পাচ্ছে না, সেটাও ওর জন্য কষ্টকর। মনের কষ্ট কীভাবে চেপে রাখবে আর কীভাবেই বা ব্যক্ত করকে। চোখের কোণে সব সময় পানি। যদি জিজ্ঞাসা করতাম, ‘কি হয়েছে রাসেল?’ বলত ‘চোখে ময়লা’।

ওই ছোট্ট বয়সে সে চেষ্টা করত মনের কষ্ট লুকাতে। মাঝে মধ্যে রমার কাছে বলত। রমা ছোট থেকেই আমাদের বাসায় থাকতো, ওর সাথে খেলতো। পারিবারিকভাবে ওদের বংশ পরম্পরায় আমাদের বাড়িতে বিভিন্ন কাজ করত। ওকে মাঝে মধ্যে দুঃখের কথা বলত। ওর চোখে পানি দেখলে যদি জিজ্ঞেস করতাম, বলত চোখে কী হয়েছে। অবাক লাগত এটুকু একটা শিশু কীভাবে নিজের কষ্ট লুকাতে শিখল। আমরা বন্দিখানায় সব সময় দুঃশ্চিন্তায় থাকতাম, কারণ পাকবাহিনী মাঝে মধ্যেই ঘরে এসে সার্চ করত। আমাদের নানা কথা বলত। জামালকে বলত, তোমাকে ধরে নিয়ে শিক্ষা দেব। রেহানাকে নিয়েও খুব চিন্তা করতো। জয় এরই মধ্যে জন্ম নেয়। জয় হওয়ার পর রাসেল যেন একটু আনন্দ পায়। সারাক্ষণ জয়ের কাছে থাকত। ওর খোঁজ নিতো।

যখন ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধ শুরু হয় তখন তার জয়কে নিয়েই চিন্তা। এর কারণ হলো, আমাদের বাসার ছাদে বাংকার করে মেশিনগান বসানো ছিল, দিন-রাতই গেলাগুলি করত। প্রচণ্ড আওয়াজ হতো। জয়কে বিছানায় শোয়াতে কষ্ট হতো। এটুকু ছোট্ট বাচ্চা মাত্র চার মাস বয়স, মেশিগানের গুলিতে কেঁপে কেঁপে উঠত।

এরপর শুরু হল এয়ার রেইড। আক্রমণের সময় সাইরেন বাজত। রাসেল এ ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিল। যখনই সাইরেন বাজত বা আকাশে মেঘের মতো আওয়াজ হত, রাসেল তুলা নিয়ে এসে জয়ের কানে গুঁজে দিত। সব সময় পকেটে তুলা রাখত।

সে সময় খাবারের কষ্টও ছিল, ওর পছন্দের কোনো খাবার দেওয়া সম্ভব হতো না। দিনের পর দিন বন্দি থাকা, কোনো খেলার সাথি নেই। পছন্দমতো খাবার পাচ্ছে না, একটা ছোট বাচ্চার জন্য কত কষ্ট নিয়ে দিনের পর দিন কাটাতে হয়েছে তা কল্পনাও করা যায় না।

রাসেল অত্যন্ত মেধাবী ছিল। পাকসেনারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র পরিস্কার করত। ও জানালায় দাঁড়িয়ে সব দেখত। অনেক অস্ত্রের নামও শিখেছিল। যখন এয়ার রেইড হতো তখন পাকসেনারা বাংকারে ঢুকে যেত আর আমরা তখন বারান্দায় বের হওয়ার সুযোগ পেতাম। আকাশে যুদ্ধবিমানের ‘ডগ ফাইট’ দেখারও সুযোগ হয়েছিল। প্লেন দেখা গেলেই রাসেল খুশি হয়ে হাতে তালি দিত।

ষোল ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সারেন্ডার হয়, পাকিস্তান যুদ্ধে হেরে যায়, বাংলাদেশ মুক্ত হয়। আমরা সেদিন মুক্তি পাইনি। আমরা মুক্তি পাই ১৭ ডিসেম্বর সকালে। যে মুহূর্তে আমরা মুক্ত হলাম এবং বাসার সৈনিকদের ভারতীয় মিত্রবাহিনী বন্দি করল, তারপর থেকে আমাদের বাসায় দলে দলে মানুষ আসতে শুরু করল। এর মধ্যে রাসেল মাথায় একটা হেলমেট পরে নিল, সাথে টিটোও একটা পরল। দুইজন হেলমেট পরে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শুরু করল। আমরা তখন একদিকে মুক্তির আনন্দে উদ্বেলিত আবার আব্বা, কামাল, জামালসহ অগণিত মানুষের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কে বেঁচে আছে কে নেই কিছুই তো জানি না। এক অনিশ্চয়তার ভার বুকে নিয়ে বিজয়ের উল্লাস করছি। চোখে পানি, মুখে হাসি--এই ক্ষণগুলো ছিল অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে, কখও হাসছি কখনও কান্নাকাটি করছি। আমাদের কাঁদতে দেখলেই রাসেল মন খারাপ করত। ওর ছোট্ট বুকের ব্যথা আমরা কতটুকু অনুভব করতে পারি? এর মধ্যে কামাল ও জামাল রণাঙ্গন থেকে ফিরে এসেছে। রাসেলের আনন্দ ভাইদের পেয়ে, কিন্তু তখন তার দু’চোখ ব্যথায় ভরা, মুখফুটে বেশি কথা বলত না। কিন্তু ওই দুটো চোখ যে সব সময় আব্বাকে খঁজে বেড়াচ্ছে তা আমি অনুভব করতে পারতাম।

আমরা যে বাসায় ছিলাম তার সামনে বাড়িভাড়া নেওয়া হলো। কারণ এত মানুষ আসছে যে বসারও জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে আমাদের ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাসা লুটপাট করে বাথরুম, দরজা-জানলা সব ভেঙে রেখে গেছে পাকসেনারা। মেরামত না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি আব্বা ফিরে এলেন বন্দিখানা থেকে মুক্তি পেয়ে। আমার দাদা রাসেলকে নিয়ে এয়ারপোর্ট গেলেন আব্বাকে আনতে। লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল সেদিন, আব্বা প্রথম গেলেন তার প্রিয় মানুষের কাছে। তারপর এলেন বাড়িতে। আমরা সামনের বড় বাড়িটায় উঠলাম। ছোট যে বাসাটায় বন্দি ছিলাম সে বাসাটা দেশ-বিদেশ থেকে সব সময় সাংবাদিক ফটোগ্রাফার আসত আর ছবি নিত। মাত্র দুটো কামরা ছিল। আব্বার থাকার মতো জায়গা ছিল না এবং কোনও ফার্নিচারও ছিল না। যা হোক, সব কিছু তড়িঘড়ি করে জোগাড় করা হলো।

রাসেলের সব থেকে আনন্দের দিন এলো যেদিন আব্বা ফিরে এলেন। এক মুহূর্তে যেন আব্বাকে কাছছাড়া করতে চাইত না। সব সময় আব্বার পাশে পাশে ঘুরে বেড়াত। ওর জন্য ইতোমধ্যে অনেক খেলনাও আনা হয়েছে। ছোট সাইকেলও এসেছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরপরই ও আব্বার কাছে চলে যেত।

ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা ৩২ নম্বর সড়কে আমাদের বাসায় ফিরে এলাম। বাসাটা মেরামত করা হয়েছে। রাসেলের মুখে হাসি, সরা দিন খেলা নিয়ে ব্যস্ত। এর মাঝে গণভবনও মেরামত করা হয়েছে। পুরনো গণভন বর্তমানে সুগন্ধাকে প্রধানমন্ত্রীর কর্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এবার গণভবন ও তার পাশেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করা হলো। গণভবন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসস্থান আর এর পাশেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, ভেতর থেকে রাস্তা ছিল, হেঁটেই কার্যালয়ে যাওয়া যেত।

আব্বা প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন, দুপুরে গণভবনে বিশ্রাম নিতেন, এখানেই খাবার খেতেন। বিকেলে হাঁটতেন আর এখানেই অফিস করতেন।

রাসেল প্রতিদিন বিকেলে গণভবনে আসত। তার সাইকেলটাও সাথে আসত। রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল। কিন্তু মাছ ধরে আবার ছেড়ে দিতো। মাছ ধরবে আর ছাড়বে এটাই তার খেলা ছিল। একবার আমরা সবাই মিলে নাটোরে উত্তরা গণভবনে যাই। সেখানেও সারা দিন মাছ ধরতেই ব্যস্ত থাকতো।

রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি হয়। তবে স্কুলে যেতে মাঝে মধ্যেই আপত্তি জানাত। তখন আমরা ছোটবেলা থেকে যে শিক্ষকের কাছে পড়েছি তার কাছে পড়বে না। তখন ও স্কুলে ভর্তি হয় নি এটা স্বাধীনতার আগের ঘটনা, তার পছন্দ ছিল ওমর আলীকে। বগুড়ায় বাড়ি। দি পিপল পত্রিকার অ্যাডে কণ্ঠ দিয়েছিল, টেলিভিশনে ইংরেজি খবর পড়ত। মাঝে মধ্যে আমাদের বাসায় আসত, তখন রাসেলের জন্য অনেক ‘কমিক’ বই নিয়ে আসত এবং রাসেলকে পড়ে শোনাত। যা হোক স্বাধীনতার পরে একজন ভদ্র মহিলাকে রাসেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। রাসেলকে পড়ানো খুব সহজ কথা ছিল না। শিক্ষককে তার কথাই শুনতে হতো। প্রতিদিন শিক্ষয়িত্রীকে দুটো করে মিষ্টি খেতে হবে। আর এ মিষ্টি না খেলে সে পড়বে না। কাজেই শিক্ষিকাকে খেতেই হতো। তা ছাড়া সব সময় তার লক্ষ্য থাকত শিক্ষিকার যেন কোনও অসুবধা না হয়। মানুষকে আপ্যায়ন করতে খুই পছন্দ করত।

টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাড়িতে গেলে তার খেলাধুলার অনেক সাথি ছিল। গ্রামের ছোট ছোট অনেক বাচ্চাদের জড়ো করত। তাদের জন্য ডামি বন্দুক বানিয়ে দিয়েছিল। সেই বন্দুক বানিয়ে দিয়েছিল। সেই বন্দুক হাতে তাদের প্যারেড করাত। প্রত্যেকের জন্য খাবার কিনে দিত। রাসেলের খুদে বাহিনীর জন্য জামা-কাপড় ঢাকা থেকেই কিনে দিতে হতো। মা কাপড়-চোপড় কিনে চুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যেতেন। রাসেল সেই কাপড় তার খুদে বাহিনীকে দিত। সব সময় মা কাপড়-চোপড় কিনে আলমারিতে রেখে দিতেন। নাসের কাকা রাসেলকে এক টাকা নোটের বাণ্ডিল দিতেন। খুদে বাহিনীকে বিস্কুট লজেন্স কিনে খেতে টাকা দিত। প্যারেড শেষ হলেও তাদের হাতে টাকা দিত। এই খুদে বাহিনীকে নিয়ে বাড়ির উঠোনেই খেলা করতো। রাসলেকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করতো, বড় হয়ে তুমি কি হবে? তাহলে বলতো, আমি আর্মি অফিসার হব।

ওর খুব ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। মুক্তিযুদ্ধের চলাকালীন থেকেই ওর ওই ইচ্ছা। কামাল ও জামাল মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর সব গল্প বলার জন্য আবদার করতো। খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতো।

রাসেল আব্বাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতো। আব্বাকে মোটেই ছাড়তে চাইতো না। যেখানে যেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব আব্বা সেখানে তাকে নিয়ে যেতেন। মা ওর জন্য প্রিন্স স্যুট বানিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ আব্বা প্রিন্স স্যুট যেদিন পরতেন রাসেলও পরতো। কাপড়-চোপড়ের ব্যাপারে ছোটবেলা থেকেই তার নিজের পছন্দ ছিল। তবে একবার একটা পছন্দ হলে তা আর ছাড়তে চাইতো না। ওর নিজের আলাদা একটা ব্যক্তিত্ব ছিল। নিজের পছন্দের ওপর খুব বিশ্বাস ছিল। খুব স্বাধীন মত নিয়ে চলতে চাইতো। ছোট মানুষটার চরিত্রের দৃঢ়তা দেখে অবাক হতে হতো। বড় হয়ে সে যে বিশেষ কেউ একটা হবে তাতে কোনও সন্দেহ ছিল না।

জাপান থেকে আব্বার রাষ্ট্রীয় সফরের দাওয়াত আসে। জাপানিরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়। শরণার্থীদের সাহায্য করে জাপানের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা দেয় আমাদের দেশের শিশুদের জন্য।

সেই জাপান যখন আমন্ত্রণ জানায় তখন গোটা পরিবারকেই আমন্ত্রণ দেয় বিশেষভাবে রাসেলের কথা উল্লেখ করে। রাসেল ও রেহানা আব্বার সাথে জাপান যায়। রাসেলের জন্য বিশেষ কর্মসূচিও রাখে জাপান সরকার। খুব আনন্দ করেছিল রাসেল সেই সফরে। তবে মাকে ছেড়ে কোথাও ওর থাকতে কষ্ট হয়। সারাদিন খুব ব্যস্ত থাকতো কিন্তু রাতে আব্বার কাছেই ঘুমাতো। আর তখন মাকে মনে পড়ত। মার কথা মনে পড়লেই মন খারাপ করতো। আব্বার সঙ্গে দেশেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতো। আব্বা নেভির কর্মসূচিতে যান। সমুদ্রে জাহাজ কমিশন করতে গেলে সেখানে রাসেলকে সাথে নিয়ে যান। খুব আনন্দ করেছিল ছোট্ট রাসেল।

রাসেলের একবার খুব বড় অ্যাকসিডেন্ট হলো। সে দিনটার কথা এখনও মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। রাসেলের একটা ছোট মপেট মোটরসাইকেল ছিল আর একটা সাইকেলও ছিল। বাসায় কখনও রাস্তায় সাইকেল নিয়ে চলে যেত। পাশের বাড়ির ছেলেরা ওর সঙ্গে সাইকেল চালাতো। আদিল ও ইমরান দুই ভাই এবং রাসেল একসঙ্গে খেলা করতো। একদিন মপেট চালানোর সময় রাসেল পড়ে যায় আর ওর পা আটকে যায় সাইকেলের পাইপে। বেশ কষ্ট করে পা বের করে। আমি বাসার উপর তলায় জয় ও পুতুলকে নিয়ে ঘরে। হঠাৎ রাসেলের কান্নার আওয়াজ পাই। ছুটে উত্তর-পশ্চিমের খোলা বারান্দায় চলে আসি, চিৎকার করে সবাইকে ডাকি। এর মধ্যে দেখি কে যেন ওকে কোলে নিয়ে আসছে। পায়ের অনেকখানি জায়গা পুড়ে গেছে। বেশ গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হযেছে। ডাক্তার এসে ওষুধ দিল। অনেকদিন পর্যন্ত পায়ের ঘা নিয়ে কষ্ট পেয়েছিল। এর মধ্যে আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাশিয়া যান চিকিৎসা করাতে।

সেখানে রাসেলের পায়ে চিকিৎসা হয়। কিন্তু সারতে অনেক সময় নেয়। আমাদের সবার আদরের ছোট ভাইটি। ওর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। খুবই সাবধানী ছিল। আর এখন এতো কষ্ট পাচ্ছে।

১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে কামাল ও জামালের বিয়ে হয়। হলুদ ও বিয়ের অনুষ্ঠানে আমরা অনেক মজা করি। বাইরে চাকচিক্য বেশি ছিল না কিন্তু ভেতরে আমরা আত্মীয়-স্বজন মিলে অনেক আনন্দ করি। বিশেষ করে হলুদের দিন সবাই খুব রং খেলে। রাসেল ওর সমবয়সীদের সাথে রং খেলে। বিয়ের সময় দুই ভাইয়ের পাশে পাশেই থাকে। দুই ভাইয়ের বিয়ে কাছাকাছি সময়ই হয়। কামালের ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই, আর জামালের ১৭ জুলাই বিয়ে হয়। রাসেল সব সময় ভাবিদের পাশে ঘুর ঘুর করতো, আর কী লাগবে খুব খেয়াল রাখতো।

৩০ জুলাই আমি জার্মানিতে স্বামীর কর্মস্থলে যাই। রাসেলের খুব মন খারাপ ছিল। কারণ সে জয়ের সাথে এক সঙ্গে খেলতো। সব থেকে মজা করতো যখন রাসেল জয়ের কাছ থেকে কোনও খেলনা নিতে চাইতো তখন জয়কে চকলেট দিত। আর চকলেট পেয়ে জয় হাতের খেলনা দিয়ে দিত, বিশেষ করে গাড়ি। রাসেল গাড়ি নিয়ে খেলতো, জয়ের যেই চকলেট শেষ হয়ে যেত তখন বলত চকলেট শেষ, গাড়ি ফেরত দাও। তখন আবার রাসেল বলতো চকলেট ফেরত দাও, গাড়ি ফেরত দেব। এই নিয়ে মাঝে মধ্যে দু`জনের মধ্যে ঝগড়া লেগে যেত, কান্নাকাটি শুরু হতো। মা সবসময় আবার জয়ের পক্ষ নিতেন।

রাসেল খুব মজা পেত। পুতুলের খেলার জন্য একটা ছোট্ট খেলনা পুতুল ও প্রাম ছিল, ওই প্রাম থেকে খেলার পুতুল সরিয়ে পুতুলকে বসিয়ে ঠেলে নিয়ে বেড়াত। পুতুল এত ছোট ছিল যে, খেলার প্রামে ভালোই বসে থাকতো। রাসেল খুব মজা করে জয়-পুতুলকে নিয়ে খেলত। আমি জার্মানি যাওয়ার সময় রেহানাকে আমার সাথে নিয়ে যাই। রাসেলকে সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওর জন্ডিস হয়, শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। সে কারণে মা ওকে আর আমাদের সাথে যেতে দেননি। রাসেলেকে সেদিন আমাদের সাথে নিয়ে যেতে পারতাম তা হলে ওকে আর হারাতে হতো না।

১৯৭৫ সালের পনের আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল ছোট্ট রাসেলকে। মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচা সবার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার শেষে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল রাসেলকে। ওই ছোট্ট বুকটা কি তখন ব্যথায় কষ্টে বেদনায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। যাদের সান্নিধ্যে স্নেহ-আদরে হেসে খেলে বড় হয়েছে তাদের নিথর দেহগুলো পড়ে থাকতে দেখে ওর মনের কী অবস্থা হয়েছিল- কী কষ্টই না ও পেয়েছিল- কেন কেন কেন আমার রাসেলকে এত কষ্ট দিয়ে কেড়ে নিল? আমি কি কোনোদিন এই `কেন`র উত্তর পাব

Thursday, August 9, 2012

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রকৃত নায়ক: মাহমুদুল বাসার




১৫ আগষ্ট, জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে, সপরিজনে হত্যা করা হয়। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের অন্যতম একটি ১৫ আগষ্টের হত্যাকান্ড। বাংলাদেশের একদল বিভ্রান্ত সেনাসদস্য এই হত্যা সংঘটিত করেছে। এরা ছিলো ক্রীড়নক। দেশি-বিদেশি শক্তিশালী ষড়যন্তকারী একটি চক্র এই হত্যার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে নিজ হাতে হত্যা করেছিল মোহাম্মাদী বেগ, তার অর্থ এই নয়, মোহাম্মাদী বেগই সিরাজ হত্যার আসল ব্যাক্তি। ঠিক তেমনি ডালিম, ফারুক, রশীদ, মেজর নূর বঙ্গবন্ধু হত্যা-নাটকের মূল চরিত্র নয়।
সিরাজ হত্যার মূল পরিকল্পক ছিলো ব্রিটিশ বেনিয়া শক্তির প্রতিনিধি লর্ড ক্লাইভ। বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল পরিকল্পক ছিলো মর্কিন প্রতিনিধি তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. কিসিঞ্জার এবং তার দোসর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো।
এরা দুজনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ১৯৭১ সালে পরাজিত হয়েছিলেন। খুব অপমানিত হয়েছিলেন এরা। একটা শানিত অপমানিত বোধ থেকে কিসিঞ্জার ও ভূট্টো বঙ্গবন্ধু হত্যার নীলনক্শা প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধুকে বাঁকা নজরে দেখতেন খন্দকার মোস্তাক এবং জিয়াউর রহমান। এর প্রমাণ ইতিহাসে আছে। দুজনই ছিলেন ক্ষমতা লিপসু, উচ্চাভিলাষী এবং ঘড়যন্ত্রকারী, এর প্রমাণও ইতিহাসে আছে।
মোস্তাক চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হতে তারপর মুজিব নগর সরকারের প্রদানমন্ত্রী হতে। পারেননি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুর ঘাট বেতারে নিজেকে অস্থায়ী সরকারের প্রধান বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তুমুল প্রতিবাদের মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর পর কলকাতা যেয়ে তিনি ড. আনিসুজ্জামানের কাছে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আশ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। ড. আনিসুজ্জামানের “আমার একাত্তর” বইতে তা লেখা আছে। ১৯৭১ সালে খন্দকার মোস্তাক পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার যে চক্রন্ত করেছিলেন, এর সঙ্গে জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিলেন। 
মোস্তাক এবং জিয়া দু’জনই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন। একজন রাজনৈতিক অঙ্গনে বসে, অন্যজন সেনাবাহিনীর পরিমন্ডলে বসে। যতদিন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন, ততদিন দ’জনই বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি থেকে নিখুঁত অভিনয় করেছেন। যাতে আঘাতটা ভেতর থেকে করতে পারেন।
ড. ওয়াজেদের বই পড়ে জানা যায় যে, মোস্তাকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রবল তর্ক হয়েছে বাব্দশাল গঠন নিয়ে। তারপরও মোস্তাক তাজউদ্দিন, জেনারেল ওসমানী, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের মত মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেননি। জিয়া বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী তার “ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা” বইতে জানিয়েছেন যে, তিনি যখন প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার ডিক্টেশন নিতে যেতেন ৩২ নাম্বার ধানমন্ডিতে, তখন প্রায়ই দেখা হোত জিয়ার সঙ্গে, তিনিও নিয়মিত বঙ্গবন্ধু ভবনে যেতেন। বঙ্গবন্ধুর সামনে জিয়াউর রহমান নতজানু হয়ে বঙ্গবন্ধুকে তোষামোদ করে কথা বলতেন। খামাখা অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলতেন, “আগে আমার বুকেগুলি লাগবে, তারপর বঙ্গবন্ধুর বুকে লাগবে”। (অধ্যাপক আবু সাইয়িদÑ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডঃ ফ্যাক্টস্ এ্যান্ড ডকুমেন্টস্)।
১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর খুনীরা জিয়ার সঙ্গে গোপনে দেখা করেন। তারা জিয়ার কাছে বঙ্গবন্ধু সরকার উৎখাতের প্রস্তাব করেন। জিয়া বলেন, “আমি এ সবে থাকতে পারি না, তোমরা জুনিয়ররা এ সব করলে করতে পারো”। অর্থাৎ তোমরা এগিয়ে যাও; আমি আছি পেছনে।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষক, দার্শনিক ও অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান (শফিক রহমানের পিতা) একটি বই লিখেছেন, নাম “শতব্দীর স্মৃতি”। সেখানে স্মৃতিচারণায় সাইদুর রহমান বলেছেন যে, ১৯৭৪ সালে তার ভায়রার বাসায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার দেখা হয়। জিয়া তার কাছে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাংঘাতিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও বিেেষাদগার করেন।
অথচ প্রজাতন্ত্রের সেবক হয়ে জাতির পিতার বিরুদ্ধে এবং সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে এমন ক্রদ্ধতা প্রকাশ করতে পারেন না। জিয়ার সৎ সাহস থাকলে তিনি চাকুরি থেকে পদত্যাগ  করে রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারতেন।
জিয়ার কুটিল চেহারা চেনার জন্য নিরন্তর গবেষণা করা উচিত। আমার বন্ধু সাংবাদিক স্বদেশ রায় একবার বলেছিলেন যে, তিনি “মেজর জেনারেল গনতন্ত্র” নাম দিয়ে জিয়াউর রহমানের ওপর বই লিখবেন। লিখেছেন কিনা জানিনা।
আপাতত মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম প্রণীত “লক্ষ প্রানের বিনিময়ে”, সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তের “ইতিহাসের ছায়াচছন্ন প্রহর ও বঙ্গবন্ধু” বই দুটো পড়লে জিয়ার আসল স্বরূপ চেনা যাবে। ইতিহাসের তিনি একজন খল নায়ক। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের উস্কানী দিয়েছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর সেনা অভ্যন্তরে ফারুক ও রশীদদের ডিফেন্স দিয়েছিলেন। তখন সেনা বাহিনীর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার মত নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া গড়ে ওঠার বিপক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। এ ছাড়া জিয়া সেনাবাহিনীতে বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে লবিং করে ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ডের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিলেন।
জিয়া ও মোস্তাক দুজনই মতলববাজ ও সম্প্রোদায়িক। একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তারা বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিতে পারেননি। তাই দেখা গেলো, জিয়া ১৫ আগষ্ট সকালে নির্বিকার ভাবে, উৎফুল্ল মনে সেভ করতে বসেছেন। খবর এলো রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বললেন, ‘সো হোয়াটা।’ ঐদিন তিনি সেনা ছাউনিতে গিয়ে খুনী ফারুককে বললেন, ঋধৎঁয়ব পড়সব ঃড় সব ধহফ শরংং সব, ুড়ঁ যধাব ফড়হব ধ মৎবধঃ লড়ন, (বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডঃ ফ্যাক্টস্ এ্যান্ড ডকুমেন্টস্)।
জিয়া ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে যে ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন তার পুরস্কার দিতে বঙ্গবন্ধু কর্পণ্য করেন নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন না। তাই তাকে সেনাবাহিনীর প্রধান না বানিয়ে জেনারেল শফিউল্লাহকে বানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু জিয়াকে তেম আমল দিতেন না। একবার বলেছিলেন “আমাদের জিয়া বড় মুক্তিযোদ্ধা, কেবল আমার বিরুদ্ধে একটু আধটু ষড়যন্ত্র করে।” অর্থাৎ জিয়ার চোখের ভাষা বঙ্গবন্ধু বুঝতেন, তাই গুরুত্ব দিতেন না। এই ক্ষোভ জিয়ার মনে সাপের বিষের মত কাজ করেছিলো।
বঙ্গবন্ধু গবেষক, লন্ডন প্রবাসী লেখক আব্দুল মতিন “বিজয় দিবসের পর ও বঙ্গবন্ধ”ু বইতে দেখিয়েছেন, কেনো জেনারেল ওসমানী জিয়াকে গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের হস্তক্ষেপে তার মীমাংসা হয়। আব্দুল মতিন আরো জানিয়েছেন যে, জিয়া ভারতের কয়েকটি শরনার্থী শিবিরে ভারত সরকার এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিয়েছেন।
ধূর্ত, চতুর, উচ্চাভিলাষী জিয়া জেনারেল শফিউল্লাহ্র দৌর্বল্যেরও সুযোগ নেন।  ’৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে তিনি হযরত মাবিয়া ও স¤্রাট আওরঙ্গ জেবের মত দক্ষতার সঙ্গে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কাজে লাগান। কিছুদিন আগে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদড় ড. মুনতাসীর মামুন একটি কলামে বলেছেন, দেশে এখন ৫০% পাকিস্তান সমর্থিত লোকজন আছে। 
এই কৃতিত্ব জিয়াউর রহমানের। পাকিস্তান সমর্থিত লোকজন, আমেলা-আর্মি ও এলিটদের নিয়ে তিনি দল গঠন করেছেন। তিনি যেভাবে ১৯৭১ সালের ম্যান্ডেট পরিবর্তন করেছেন তা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করে সম্ভব ছিলো না। তার রাজত্বে ফারুক রশীদরা “ফ্রিডুম পার্টি” নাম দিয়ে দলগঠন করে “কুড়াল” মার্কা নিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে রাজনীতি করেছে। এই আস্কারা জিয়াউর রহমান দিয়েছেন। এখনো তার স্ত্রী এবং তার দল যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করে যাচ্ছেন। 
অনেকে বলেন, দুই নেত্রীর সমঝোতার দরকার। বেগম জিয়া যদি ১৫ আগষ্টের মত জাতীয় শোক দিবসে কাল্পনিক জন্মদিন পালন করেন তাহলে সমঝোতা হবে কেমন করে? এই আদর্শিক সংঘাত সহজে মিটবে বলে মনে হয় না।
১৯৭৮ সালে এক কলামে আব্দুল গফ্ফার চৌধুরী বলেছিলেন, “জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধু হত্যার পালের গোদা।”
গবেষকদের উচিত শুধু চোখের পানি না ফেলে এই পথে আরো গবেষণা করা।

মাহমুদুল বাসার প্রবোন্ধিক
গবেষক।


Tuesday, July 31, 2012

মালয়েশিয়ার অর্থায়নে পদ্মাসেতু:অক্টোবরে প্রকল্প উদ্বোধন



আগস্টে চূড়ান্ত প্রস্তাব, সেপ্টেম্বরে চুক্তি সই 

ঢাকা: মালয়েশিয়ার অর্থায়নে পদ্মাসেতু প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এ বছরের অক্টোবরে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগ দিতে ঢাকা আসবেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি মোহাম্মদ নাজিব আবদুল রাজাক।
পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন নিয়ে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ বা পিপিপি’র অধীনে পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তি স্বাক্ষরের পথে এখন দুই দেশ। 

 সেপ্টেম্বরে দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে। পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করতে আগামী ৪ আগস্ট ঢাকায় আসছে মালয়েশিয়ার একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
আগামী ৪ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে প্রতিনিধি দলটি পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার সম্ভাব্য অর্থায়নের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করবে। ওই প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেবেন মালয়েশিয়ার ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত দাতুক সেরি এস সামি ভেলু।প্রতিনিধি দলটি পদ্মা সেতুর প্রকল্পস্থলও পরিদর্শন করবে ।

পদ্মাসেতু প্রকল্পের বিভিন্ন কারিগরি ও আর্থিক বিষয়েও মালয়েশিয়া  নিজেদের পর্যালোচনা সম্পন্ন করে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পে অংশগ্রহণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল প্রাথমিক প্রস্তুতি মালয়েশিয়া সম্পন্ন করেছে বলেও উল্লেখ করেছে সূত্রটি। মালয়েশিয় প্রতিনিধি দলের এবারের ঢাকা সফরেই বিষয়টি একটি চূড়ান্ত রূপ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত মাস কয়েক আগে মালয়েশিয় বিশেষ দূত দাতুক সেরি এস সামি ভেলু’র নেতৃত্বে  অপর একটি প্রতিনিধি দল সেতু সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকা সফর করে।এবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিধি দলটি প্রকল্পের সার্বিক দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।

পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন ও অংশগ্রহণের ব্যাপারে মালয়েশিয়া আগে থেকেই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছে। ঢাকার সবুজ সংকেত পেলে এ সফরেই পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বিষয়ে প্রস্তাবের একটি চূড়ান্ত খসড়া তুলে ধরা হবে । তবে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় গত কয়েকদিন ধরে পদ্মাসেতু নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে পরস্পর বিপরীতমুখী তথ্য উপস্থাপিত হওয়ায় মালয়েশিয় পক্ষ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে বলে সূত্র জানায়। 
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ধরণের বিশাল নির্মাণযজ্ঞের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে কোনো একটি মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাবে। তবে  কোন প্রতিষ্ঠানকে মালয়েশিয় সরকার কাজটি দিতে যাচ্ছে তা জানা যায়নি। এর আগে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয় প্রধানমন্ত্রী দাতু সেরি নাজিব আবদুল রাজাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এসময় মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।
 নির্মাণ প্রকল্প সংক্রান্ত মালয়েশীয় প্রস্তাব এর আগে দুই দফা সংশোধন করা হয়েছে। তবে চূড়ান্তভাবে সংশোধিত প্রস্তাবে উভয় পক্ষেরই সমান লাভবান হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। 
 প্রকল্পের সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় গত ২০১০ এ প্রাক্কলিত ২৯০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে বর্তমানে ৩৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার সম্ভাব্য অবমুল্যায়ন এবং নির্মাণ সামগ্রীর সম্ভাব্য মূল্যবৃদ্ধি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। 

Friday, July 27, 2012

রেমিটেন্স পাঠানো ১৮ প্রবাসীকে সিআইপি সম্মাননা দেয়া হচ্ছে

সরকার প্রবাসীদের সিআইপি (অনাবাসী) সম্মাননা দিতে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রথম বারের মতো সরকারের এ উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে প্রবাসী মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে ১৮ প্রবাসীর নাম নির্বাচন করেছে। শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে।
প্রবাসী মন্ত্রণালয় দুটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৮ জনকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করে। ক্যাটাগরি দুটি হলো- বাংলাদেশি পণ্য আমদানি ও বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ ক্যাটাগরি। প্রথমটি হলো বিদেশে অবস্থান করে দেশের পণ্য নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে যারা দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। আর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ ক্যাটাগরি হলো- বিদেশে কাজে অবস্থান করছেন এবং দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। প্রথমবারের মতো সরকার প্রথম ক্যাটাগরির জন্য নির্ধারণ করেছে ১৩ জন এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী ক্যাটাগরিতে নির্ধারণ করেছে ৫ জন।
প্রবাসী ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা পণ্য আমদানি ক্যাটাগরিতে ১৩ জন হলো- বেলায়েত হোসেন, তিনি অবস্থান করছেন সৌদি আরবে; আরব আমিরাতে অবস্থানকারী নুরুল আলম ও মুহাম্মদ আলী; অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত সিনথিয়া রহমান, ইটালিতে কর্মরত জাহাঙ্গীর মো. হোসেন, ইমরান ফরাজী ও মো. ইদ্রিশ আলী; রাশিয়াতে কর্মরত মো. মাহবুবুল আলম; যুক্তরাজ্যে কর্মরত ড. এমজি মৌলা মিয়া ও মোহাম্মদ আ. রহিম; সৌদি আরবে কর্মরত মো. লিয়াকত আলী ও কাজী নুরুল আলম এবং কুয়েতে কমরর্ত প্রবাসী মো. আবদুল্লাহ।
বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী ক্যাটাগরিতে- ওমানে কর্মরত মো. শাহজাহান মিয়া ও মেহেরুন্নেশা আক্তার; আরব আমিরাতে কর্মরত রেজাউল আজিম ও এএইচএম তাজুল এবং রাশিয়াতে কর্মরত মনোয়ারা হোসেন।
মোট ১৮ প্রবাসীর মধ্যে ৩ জন হলেন মহিলা। ১৫ জন পুরুষ। দেশের উন্নয়নে অন্যান্য সব পেশার মতো বিদেশে গমনেও নারীরা পিছিয়ে নেই। দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। তারই স্মারক হিসেবে ৩ মহিলাকে নির্বাচন করা হয়েছে।
এসব প্রবাসীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে দেশে বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ও দেশের উন্নয়নে অবদানের দিক বিবেচনা করে। এসব রেমিটেন্স বিভিন্ন সময় দেশে পাঠানোর ফলে সরাসরি বা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যা দেশের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচনের পর এখন নানা দিক পর্যালোচনা চলছে। অন্য কোন ইস্যু না থাকলে এসব ব্যক্তিদেরই চূড়ান্ত করা হবে। এবং রাষ্ট্রীয় সিআইপি (আনাবাসী) সম্মাননা দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কৃষির পরই দেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখছেন বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা। এসব প্রবাসীর বাংলাদেশের পতাকা খচিত একটি পাসপোর্ট ছাড়া কিছুই দেয়া হয় না। অথচ দেশে প্রতি বছর এ বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠাচ্ছে। এসব টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারা ইতিবাচক রাখতে সমর্থ হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসে ১১ হাজার ৬৫০ মিলিয়ন। এ পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮৪৭ মিলিয়ন। যা দেশের অর্থনীতির বর্তমান প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
সরকার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়। অদক্ষ জনশক্তি পাঠানোর পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর পকিল্পনা গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে প্রক্রিয়াও শুরু করে। প্রবাসীদের টাকা বৈধ চ্যানেলে আনার জন্য সরকার বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো টাকা যাতে কোনভাবে নষ্ট না হয় সেজন্য সতর্কতামূলক উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, যারা ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে যায়। পরিবার-পরিজন ছাড়া হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দেশে টাকা পাঠায়, তারা দেশের সত্যিকারের বীর। তাদের সম্মান দেখানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
প্রবাসীদের এ সম্মাননার মধ্য দিয়ে প্রবাসীরা সম্মানিত বোধ করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা বৈধপথে টাকা পাঠাতে অনুপ্রাণিত হবে বলে তারা মনে করেন 

আমার বাবার একটি জিপ গাড়ি ও একটি ধান ভাঙার মেশিন ছিল:পরাগ ধর

'৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষী পরাগ ধরের (৪৮) জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনালে সাকা বলেন, আমি আমার বাবার প্রতিনিধিত্ব করছি। গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনালের এক কথা প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আপনি যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন দেখেনতো তিনি ডকে আছেন কিনা_ সাক্ষীকে উদ্দেশ করে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন প্রশ্ন করলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাক্ষী তো তার জবানবন্দিতে একবারও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম বলেননি, বলেছেন তো ফজলুল কাদের চৌধুরীর কথা, তাহলে তো তাকে এখন কবর থেকে তুলে এনে হাজির করে জিজ্ঞাসা করা দরকার। ট্রাইব্যুনালের এ কথার উত্তরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হাসতে হাসতে বলেন, আমি তো আমার বাবারই প্রতিনিধিত্ব করছি।
এরপর ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটরকে বসতে বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীকে জেরা করতে বলেন। ৯ম সাক্ষীর জেরা শেষে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ৫ আগস্ট দিন ধার্য করে দেন।

এর আগে সাক্ষী পরাগধর তার জবানবন্দিতে বলেন, আমার নাম পরাগ ধর (৪৮)। আমার পিতার নাম মানিক ধর। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল সাত বছর। আমি বিএ পাস করেছি। বর্তমানে একটি ব্যবসা করি। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সাপ্তাহে যুদ্ধ চলাকালে মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। শুনেছি তখন লুটতরাজ হতো। রাজাকাররা বিভিন্ন ঝামেলা করত। জগৎমল্ল পাড়া, মধ্য গহিরা, সুলতানপুরে ও কুন্ডেশ্বরী এলাকায় আল বদররা গণহত্যা শুরু করেছিল বলে আমি শুনেছি। সাক্ষী পরাগ বলেন, ওই খবর পাওয়ার পরে আমার মা-বাবা ও ভাইসহ আগরতলা হয়ে কলকাতা চলে যাই। ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেশে ফিরে আসি। সাক্ষী বলেন, আমার বাবার একটি জিপ গাড়ি ও একটি ধান ভাঙার মেশিন ছিল। তা রাজাকার, আল বদর বাহিনীরা লুট করে নিয়ে গেছে। আমাদের আসবাব, দরজা কিছুই ছিল না। আমি শুনেছি ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটেছিল।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দি পেশ করেছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ও দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এম সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালি, গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ, প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (৬২) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. সালেহ উদ্দিন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়।
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৭ মে ১০৫ পৃষ্ঠার ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন শেষ করেছে প্রসিকিউশন। গত ৪ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি ঘটনায় ৭২টি অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর অপর একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গত বছরের ৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত রিপোর্টে ৫৫ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্রসহ ১৮টি সিডি উপস্থাপন করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়। ১৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল

দোষারোপ নয়, দুর্নীতিকে 'না' বলতে হবে :বিভুরঞ্জন সরকার


 মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে কোনো কোনো মহল থেকে সমালোচনা করা হলেও আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি, সংবাদপত্রগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় মূলত মালিক-সম্পাদকের দ্বারাই। কে, কি লিখবেন সেটাও অনেক সময় পত্রিকা কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করে দেন, সরকার নয়। সব কাগজে, সব লেখক খোলামনে সব কিছু লিখতে পারেন না। এটা যে সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। মিডিয়া জগতে এখন যে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে, এটা অনেক পাঠকেরই জানা নেই। তাদের পক্ষে সেটা জানা-বোঝার কথাও নয়। আমি খুশি এ কারণে যে, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক আমাকে অন্তত লেখার বিষয় নিয়ে ডিকটেট করেননি। গত ২৩ জুন এবং ৭ জুলাই আমার দুটি লেখা বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে। লেখা দুটি ছাপা হওয়ার পর পাঠকদের কাছ থেকে যে বিপুল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, তাতে আমি অভিভূত। আমরা যারা সংবাদপত্রে কলাম লিখি তাদের লেখা পাঠকদের ভালো লাগলে সেটাই আমাদের বড় পুরস্কার।

'যদি নূ্যনতম লজ্জা থাকত' শিরোনামে ৭ জুলাই প্রকাশিত আমার লেখাটিতে একটি তথ্যগত ভুল থাকায় বেশ কজন পাঠক তা ধরিয়ে দিয়েছেন এবং এ ধরনের অসত্য তথ্য উল্লেখ করে পাঠকদের বিভ্রান্ত না করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমি লিখেছিলাম, 'বেগম জিয়া বলেছেন, পদ্মা সেতু ইস্যুতে মহাজোট সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল তার প্রথম শাসন আমলেই।' এ তথ্যটি সঠিক নয়। আমার স্মৃতি আমার সঙ্গে প্রতারণা করায় এ বিভ্রান্তিটি ঘটেছে। আসলে শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের শেষ বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান পেয়েছিল, যা পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট আমলেও অব্যাহত ছিল। এ ত্রুটি অনিচ্ছাকৃত, এ জন্য আমি লজ্জিত এবং পাঠকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার প্রায় ৪২ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে এ ধরনের ভ্রান্তি আগে ঘটেছে বলে মনে হয় না। ভবিষ্যতে তথ্য উল্লেখের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকার বিষয়টি আমার সবসময় মনে থাকবে। যেসব পাঠক বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

ক. মাননীয় সম্পাদকের কাছ থেকে সবিনয় অনুমতি নিয়ে এখানে নিজের ঢোল নিজেই একটু পেটাতে চাই। আশা করি, পাঠক এতে বিরক্তবোধ করবেন না। আমি মনে করি, এটার প্রয়োজন আছে এ জন্য যে, পাঠক কার লেখা পড়ছেন, তার এটা লেখার যোগ্যতা আছে কিনা, সেটা জানা থাকলে লেখাটি সম্পর্কে মতামত গঠনে সহায়ক হয়। লেখক-পাঠকদের যোগসূত্র বা যোগাযোগ একটি বড় ব্যাপার।

লেখার জগতে আমি কোনোভাবেই নবাগত নই। ১৯৭০ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক 'আজাদ'-এর মফস্বল সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করে পরবর্তী সময়ে একাধিক দৈনিক-সাপ্তাহিক কাগজে কাজ করেছি। ১৯৮৪ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন প্রকাশিত হলে ওই কাগজে তারিক ইব্রাহিম ছদ্মনামে রাজনৈতিক প্রতিবেদন লিখেছি, কাগজটি স্বৈরাচারী এরশাদ নিষিদ্ধ ঘোষণার আগ পর্যন্ত। তখন সেসব রাজনৈতিক প্রতিবেদন অত্যন্ত পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। সে সময় সংবাদপত্রে রাজনৈতিক বিষয়ে খুব বেশি কেউ লেখালেখি করতেন না। তারপর ১৯৯২ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন নতুন পর্যায়ে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ১৯৯৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ওই কাগজের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক 'একতা' (তখন এই সাপ্তাহিকটি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল এবং এর সম্পাদক ছিলেন আজকের 'প্রথম আলো' সম্পাদক মতিউর রহমান) পত্রিকায় কাজ করেছি টানা প্রায় ১০ বছর। নিজের সম্পাদনায় বের করেছি সাপ্তাহিক 'চলতিপত্র'। দৈনিক 'মাতৃভূমি' সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছি দুই বছরের কিছু বেশি সময়। সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ-এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম প্রায় পাঁচ বছর। এ ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ে অসংখ্য কলাম লিখেছি এবং লিখছি দৈনিক সংবাদ, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, যুগান্তর, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, সমকাল, চট্টগ্রামের সুপ্রভাত বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক দেশবন্ধু। এ সময় ঢাকাসহ আরও অনেক পত্রপত্রিকায়। প্রথম আলোতেও দু-চারটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে আমার অবস্থান একেবারে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো মোটেও নয়।

খ. ৭ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত আমার লেখার ভুল তথ্যটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে একজন সম্মানিত পাঠক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, 'মিথ্যা তথ্য দিয়ে জ্ঞানপাপী আওয়ামী দালাল বুদ্ধিজীবীর মতো জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন।' বেগম জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করায় একজন লিখেছেন, 'তাদের দুর্নীতির কথা সবাই জানেন।... এখনো প্রমাণ করতে পারেনি।' একজন লিখেছেন, 'আমরা এখন খালেদার দুর্নীতির কথা শুনতে চাই না, কারণ তিনি ক্ষমতায় নেই।' আরেকজন লিখেছেন, 'একজনের দোষ ধরবেন, আরেকজনের কথা কিছু বলবেন না, তা কি হয়।' এ রকম আরও কিছু মন্তব্য ই-মেইলে পেয়েছি। যারা লেখাটির প্রশংসা করেছেন তাদের বক্তব্যগুলো স্বাভাবিক কারণেই উল্লেখ করলাম না। সব পাঠক আমার লেখা পড়ে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন, সেটা হতে পারে না। সবাই আমার মতকেই সমর্থন করবেন, সেটাও প্রত্যাশিত নয়। যারা মতামত জানিয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আত্দপক্ষ সমর্থন করে দু-একটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি, এতে ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হবে বিবেচনা করে। প্রথমত, স্পষ্ট করে আমি এটা বলতে চাই যে, কাউকে বিভ্রান্ত করার মানসিকতা থেকে আমি কখনোই কিছু লিখি না। আমার বিবেচনায় যেটা সঠিক মনে করি_ তা কার পক্ষে বা বিপক্ষে যায়_ সেটা একেবারেই মনে না রেখে তাই পাঠকদের সামনে তুলে ধরি। কেউ যদি বলেন দালালি করি, তবে সেটা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, বিবেকের। ৭ জুলাইয়ের লেখায় তথ্যগত একটি ভুল ছিল, কিন্তু তাতে আমার মূল বক্তব্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হয় না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে আসেনি বলেই বেগম জিয়ার প্রথম শাসনামলে দেশে দুর্নীতি হয়নি, তখন তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি, তা কিন্তু নয়। সে সময় সংবাদপত্রে বিএনপি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে অসংখ্য রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। কিন্তু সরকার সেগুলো কানে নেয়নি এবং পদত্যাগ করার গরজবোধ করেনি। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তখন দেশে আন্দোলন গড়ে উঠলে বেগম জিয়া বলেছিলেন, 'শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ হয় না।' বেগম জিয়া বর্তমানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলছেন এবং বর্তমান সরকারকে কথায় কথায় পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছেন বলেই আমি বেগম জিয়ার শাসনামলের কথা যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছি। আমি কোথাও বলিনি যে, বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি হচ্ছে না, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি, সে কথাও আমি বলিনি। একটি সরকার পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়, এ সময়কালে সরকারকে গদিচ্যুত করার অপরাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। মেয়াদকালে সরকার যদি জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, ঘুষ-দুর্নীতি দূর না করে তার বিস্তার ঘটায়, সুশাসনের বদলে দেশবাসীকে দুঃশাসন উপহার দেয়, তাহলে পরের নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমেই তাদের বিচার করবে। সরকারবিরোধিতার নাম করে বিদ্বেষ প্রচার করা হলে রাজনীতিতে অযথা উত্তেজনা ছড়ানো ছাড়া তাতে অন্য কোনো লাভ হয় না। বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা অবশ্যই করবে, ঘুষ-দুর্নীতির কথা অবশ্যই তথ্যপ্রমাণসহ তুলে ধরবে। কিন্তু ঢালাও অভিযোগ উত্থাপন করা কি যুক্তিযুক্ত? বিএনপির আমলের কিংবা বেগম জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির প্রমাণ হয়নি_ এটা যদি সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে কি প্রশ্ন ওঠে না, বর্তমান সরকারের দুর্নীতির কি প্রমাণ হয়েছে? কেউ হয়তো বলবেন, কেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করার ঘটনাই তো বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বড় প্রমাণ। বিষয়টি কি সত্যি তাই? বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পদত্যাগ দাবি অবশ্যই যৌক্তিক হতো, যদি অতীতে এ ধরনের নজির থাকত। বেগম জিয়ার শাসনামলে সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করেছিল বলে কি বেগম জিয়া পদত্যাগ করেছিলেন? বলা হতে পারে, তখন যে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল এবং অর্থায়ন বন্ধ রেখেছিল, এটা তো তখন এবারের মতো এত জানাজানি হয়নি। হ্যাঁ, বিষয়টি তখন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। সেটা কি খুব ভালো কাজ হয়েছিল?

গ. খালেদা জিয়ার আমলে দুর্নীতি হয়েছে বলেই শেখ হাসিনার আমলেও দুর্নীতি হবে_ এটা অবশ্যই কোনো যুক্তি হতে পারে না। বর্তমানের অন্যায়কে জায়েজ করার জন্য অতীতের অন্যায়ের তুলনা করা অবশ্যই উচিত নয়। অতীত দুর্নীতি বর্তমান দুর্নীতির পক্ষের যুক্তি হতে পারে না_ এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বেগম জিয়ার শাসনামলের দুর্নীতির সমালোচনা করে বা বড় করে দেখে শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতির বিষয়টিকে ছোট করা বা আড়াল করার যে কোনো চেষ্টা-অপচেষ্টাকেই আমি ঘৃণা করি। তবে আমার কথা হলো, আমাদের রাজনীতিবিদদের 'ডবল স্ট্যান্ডার্ড' বন্ধ হওয়া উচিত। ক্ষমতায় গিয়ে এক ধরনের আচরণ, আবার বিরোধী দলে থাকলে আরেক_ এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে আমরা জাতি হিসেবে খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারব না। বেগম জিয়া বিরোধী দলে থাকতে শেখ হাসিনার সরকারকে চোর বলবেন, আবার শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থেকে বেগম জিয়ার সরকারকে চোর বলবেন_ এ ধারা আর কতদিন চলবে? এ বৃত্তবন্দী রাজনীতি আমাদের আর কতদিন দেখতে হবে? রাজনীতির এই যে বিষাক্ত বৃত্ত সেটা ভাঙা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আর সে জন্যই কেবল সরকারের সমালোচনা নয়, বিরোধী দলেরও সমালোচনা করাটা আমি প্রয়োজন মনে করি। সরকারকে সঠিক পথে আনতে হবে আর বিরোধী দলকে সঠিক পথে আনার দরকার নেই বলে যারা মনে করেন, তাদের সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে।

ঘ. আমি মুক্ত মনে বাহ্বা দিতাম, যদি বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেগম জিয়া তার সরকারের সময়কার দুর্নীতি-অনিয়মের কথা স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতেন, অতীতে আমাদের সময় দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে কিন্তু ভবিষ্যতে আমরা ক্ষমতায় গেলে আর তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। যারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার আমল থেকে শেখ হাসিনার সময়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির কারণে যদি পরবর্তী নির্বাচনে ভরাডুবি হয় এবং বেগম জিয়া তথা ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে, তাহলে কি দেশে দুর্নীতি কমবে? বেগম জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তার সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-বাড়াবাড়ির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল, তা কি অস্বীকার করা যাবে? যাদের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হয়েছিল? বেগম জিয়া কি এখন দেশের মানুষকে এই নিশ্চয়তা দেবেন যে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, যাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক আছে, পরবর্তী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে না? বেগম জিয়া ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে একটি সৎ সরকার গঠন করে দেশকে সুশাসন উপহার দেবেন_ এটা বিশ্বাস করা হবে কিসের ভিত্তিতে? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলও সরকারের অংশ। বেগম জিয়া তার সৎ সহকর্মীদের নিয়ে একটি ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন করে দেখান না কেন কারা তার দুর্নীতিবিরোধী সরকারে নেতৃত্ব দেবেন? ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি করবেন না, এ প্রতিশ্রুতি দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করে দুর্নীতিবাজদের আশপাশ থেকে সরিয়ে দিয়ে বেগম জিয়া যদি বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে দেশের মানুষ বেশি উৎসাহবোধ করবে। কথায় আছে, 'আপনি আচরি ধর্ম, অপরে শেখাও।'

ঙ. পাঠকদের প্রতি আমার সবিনয় অনুরোধ, 'জ্ঞানপাপী আওয়ামী দালাল বুদ্ধিজীবীরা' যাতে আপনাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। একই সঙ্গে চোখ-কান খোলা রাখবেন 'জ্ঞানপাপী বিএনপি দালাল বুদ্ধিজীবীদের' ব্যাপারেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় তারেক রহমানকে 'বিনয়ী, সদাচারী, নির্লোভ ও মিতব্যয়ী' বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। একে তারেক রহমানের যথার্থ মূল্যায়ন বলে দেশের শতকরা কতভাগ মানুষ মনে করে?

শেষ করব, '১৬ কোটি জনগণের একজন' হিসেবে উল্লেখ করে যে পাঠক বন্ধু দীর্ঘ ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছেন, তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে। তিনি লিখেছেন, '১৬ কোটি জনগণের মধ্যে ১৫.৫ কোটি জনগণ বিশ্বাস করে বর্তমান সরকারের কিছু কিছু প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও আমলার বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে জনকল্যাণকর প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেছে।' সবই ঠিক আছে, তবে ১৫.৫ কোটি মানুষ এটা মনে করে_ এ পরিসংখ্যানটি পাঠক কোথায় পেলেন? এমন মনের মাধুরী মিশিয়ে কল্পনা করলেই কি অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে? পাঠক অবশ্য যথার্থই বলেছেন, 'আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির এই করুণ দশার জন্য ভণ্ড, অযোগ্য রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের পাশাপাশি কুমতলবধারী সাংবাদিক তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও কম দায়ী নন।' পাঠকের এ বক্তব্যের সঙ্গে শতভাগ একমত পোষণ করে আমি বলতে চাই : আসুন আমরা রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা না করে অর্থাৎ দলীয় আনুগত্য পরিহার করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখি এবং সবাই মিলে সোচ্চার কণ্ঠে দুর্নীতিকে 'না' বলি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

জনপ্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টিতে লিপ্ত বিএনপি ও জামায়াতপন্থি সাবেক আমলারা

রাকিব উদ্দিন
জনপ্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি কতিপয় সাবেক আমলা। অস্থিরতা সৃষ্টিতে তারা মহাজোট সরকারের সুবিধাবঞ্চিত আমলাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে পদোন্নতি বঞ্চিত ও বর্তমানে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থাকা আমলাদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে নানাভাবে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন তারা। এ ধরনের অপকর্মে ইন্ধন জোগাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী কিছু বুদ্ধিজীবী।
তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি সম্পর্কে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। ইতোমধ্যে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণও শুরু হয়েছে। সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত পদোন্নতি বঞ্চিত এবং ওএসডি কর্মকর্তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দু'টি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘি্নত ও জনপ্রশাসনে নাশকতা সৃষ্টি করতে পারেন এমন অভিযোগে গত ১৯ জুলাই চারদলীয় জোট সরকারের এক মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৩৭ জন সাবেক অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিবের সচিবালয়ে প্রবেশের আজীবন নিরাপত্তা পাস বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই আরও কিছু সাবেক আমলার সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই তাদের তালিকা যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
এর আগে গত ১৪ জুলাই সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে রাজধানীতে প্রকাশ্যে সেমিনারের আয়োজন করেন 'রিটায়ার্ড সিভিল অফিসার্স ফাউন্ডেশন' নামে বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী সাবেক আমলারা। ওই সভায় বর্তমানে ওএসডি ও এবার পদোন্নতি বঞ্চিত কিছু আমলাও উপস্থিত ছিলেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এখন ওই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা গতকাল 'সংবাদ'কে বলেছেন, 'কর্মহীন থাকার ফলেই কিছু কর্মকর্তা নানা ফাঁদে পড়ছেন। তাই ওএসডি কর্মকর্তাদের পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে পদোন্নতি বঞ্চিতদের জন্য আপাতত কোন সুখবর নেই'।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের সুবিধাভোগী আমলারা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ব্যবহারের অজুহাতে নিয়মিত সচিবালয়ে ঢুকেন। তারা সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হলরুমে বসে সুবিধাবঞ্চিত ও ওএসডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেন এবং সরকারবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত হন। তাই এখন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হলরুমে নিয়মিত কারা আসেন, এসে কী করেন তার তীক্ষ্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে সংশ্লিষ্টরা।
সচিবালয়ে প্রবেশে সাবেক যেসব আমলার নিরাপত্তা পাস বাতিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসএম আবদুল হালিম, সাবেক সচিব এনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক যোগাযোগ সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব এসএম জহুরুল ইসলাম, সাবেক তথ্য সচিব ব্যারিস্টার মুহাম্মদ হায়দার আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক স্বাস্থ্য সচিব খন্দকার ফজলুর রহমান, আবু মো. মনিরুজ্জামান খান, সাবেক শ্রম সচিব আবদুল মতিন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন আহমেদ, এম মতিউর রহমান, সাবেক যুব সচিব ক্যাপ্টেন (অব.) সুজা উদ্দিন আহমেদ, শেখ এনায়েত উল্লাহ খান, এম ইব্রাহিম হোসেন, সাবেক আইন সচিব আলাউদ্দিন সর্দার, এটিএম আতাউর রহমান, কাজী আবুল কাসেম, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব আবদুর রশিদ সরকার, সাবেক তথ্য সচিব জাফর আহমেদ চৌধুরী, ইলিয়াস আহমেদ, সাবেক তথ্য সচিব আতম ফজলুল করিম অন্যতম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ৬০০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ওএসডি আছেন। তাদের মধ্যে দুজন সচিব, ৩৩ অতিরিক্ত সচিব, ১৪৪ যুগ্ম সচিব আছেন। প্রসঙ্গত, বর্তমানে সচিবালয়সহ জনপ্রশাসনে চার হাজার ৬৪৮ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন

Wednesday, July 25, 2012

রিজওয়ানা হাসান ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন




ঢাকা, জুলাই ২৫  - এশিয়ার নোবেল হিসেবে পরিচিত ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

বুধবার র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ট্রাস্টি ২০১২ সালে পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে পরিবেশ-সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালানোর স্বীকৃতি হিসেবে রিজওয়ানাকে মনোনীত করা হয়েছে বলে র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।  রিজওয়ানা হাসান ছাড়াও এ বছর কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও তাইওয়ানের ছয়জন র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পাচ্ছেন। আগামী ৩১ অগাস্ট ফিলিপাইন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। তারা সবাই একটি সনদ, একটি পদক ও নগদ অর্থ পাবেন ।  

 একাদশ বাংলাদেশি রিজওয়ানা , যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পাচ্ছেন। এর আগে বাংলাদেশ থেকে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ (১৯৮০), গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস (১৯৮৪), তহরুন্নেসা আবদুল্লাহ (১৯৭৮), রিচার্ড উইলিয়াম টিম (১৯৮৭), মোহাম্মদ ইয়াসিন (১৯৮৮) অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ (২০০৪), প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান (২০০৫), এঞ্জেলা গোমেজ (১৯৯৯), ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (১৯৮৫) ও সিডিডির এর নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান (১৯৮৮) ম্যাগসেসে পুরস্কার পান । 

ম্যাগসেসে পুরস্কার জয়ের ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিজওয়ানা বলেন, “এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন, এই স্বীকৃতি তাদের সবার।” আনন্দিত রিজওয়ানা বলেন, যে কাজ তিনি করে যাচ্ছেন, এই স্বীকৃতি তার দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিল। 

রিজওয়ানা গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশে পরিবেশ-সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালে তিনি পরিবেশের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘গোল্ডম্যান পুরস্কার’ পান। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘টাইম’ ‘এনভায়রনমেন্টাল হিরো’র তালিকায় তাকেও রাখে। 

পেশায় আইনজীবী রিজওয়ানার জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও হলিক্রস কলেজের পড়াশুনা শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। পাস করার পর তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিতে (বেলা) যোগ দেন।