Friday, August 17, 2012

ঈদের ঘরমুখো মানুষজনকে পরিবহনে সরকারি, নৌবাহিনীর জাহাজ, নানান জলযান, সেনাবাহিনীর গাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস-গাড়ি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে

অস্ট্রেলিয়ার চাকরিতে কোন উৎসব বোনাস নেই। চাকরিতে বছরে ছ’সপ্তাহের পেইড হলিডে আছে। অসুস্থতার ছুটি না নিলে বার্ষিক এই পেইড হলিডে সাত সপ্তাহে দাঁড়ায়! কাজ না করেই বেতন! আবার ছুটি না নিলে বছরের নির্দিষ্ট সময় পরে সংশ্লিষ্টরা এ টাকাটি নগদ তুলে নিতে পারেন। এটিকেই বোনাস মনে করেন এদেশের মানুষজন! খ্রীস্টান প্রধান এ দেশটির বেশিরভাগ মানুষ ক্রিসমাসের আগে ইংরেজি নববর্ষ মিলিয়ে এই হলিডে নিতে চান। কিন্তু এই হলিডে কাটাতে এদের তেমন কেউ গ্রামের বাড়িতে যান না। এরা ছোটেন দেশবিদেশের নানান টুরিস্ট জোন-স্পটে। এরজন্যে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিমানের টিকেটের দাম থাকে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড়-দু’গুণ বেশি। বছরের এই সময়টায় এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রায় দু’মাসের ছুটি থাকে। আমাদের দেশের মতো পরিবারগুলো বছরের এই সময়টাতেই দেশে বেড়াতে যেতে চান। কিন্তু বিমান টিকেটের উচ্চমূল্য মেটাতে সক্ষমরাই এটা পারেন! আবার দেশে যাওয়া মানে একটি পরিবারের দশ-পনের হাজার ডলারের ধাক্কা! এদেশের খুব কম মানুষের এত টাকা হাতে জমা থাকে। অনেক ক্রেডিটকার্ডের ওপর ভরসা করে চলে যান। পরে ক্রেডিট কার্ডের এসব বকেয়া আর সুদ সামাল দিতে গিয়ে এখানে ফেরার পর সংশ্লিষ্টদের দিন-রাত অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এসবই এসব দেশের বাস্তবতা। টাকা দেন, বোনাস দেন, বখশিস দেন, বাড়ি যামু’ বলে আন্দোলন-অবরোধ করার সুযোগই এখানে নেই। সেভাবে বিষয়টি এদেশে কেউ ভাবেনওনা!
ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ঢাকাকে প্রায় খালি করে আমাদের দেশের লোকজন গ্রামের বাড়ি যান। এ নিয়ে নানান দূর্ভোগের সচিত্র খবর ছাপা-প্রকাশ হয় দেশের মিডিয়ায়। দেশের পরিবহন ব্যবস্থাটি ভেতর থেকে এমনিতই নড়বড়ে। একসঙ্গে এত মানুষজনকে পরিবহনের মতো অবকাঠামোও দেশের নেই। এবার নানা টিভির রিপোর্ট দেখে দেখে মনে হলো এতগুলো টিভি চ্যানেলের প্রতিযোগিতামূলক রিপোর্টিং, এত ক্যামেরার কারনে অনেককিছুর জবাবদিহিও আগের চেয়ে বেড়েছে। দেশের ইতিহাসের ব্যতিক্রমী যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সক্রিয় সরেজমিন ছোটাছুটির কারনেও পরিস্থিতির তুলনামূলক উন্নতি ঘটেছে। আমার মনে হয়েছে পুরো বিষয়টি নিয়ে নতুন কিছু ভাবার আছে সরকারের। যেমন ঈদের ঘরমুখো মানুষজনকে পরিবহনে সরকারি সব ধরনের যানবাহন, নৌবাহিনীর জাহাজ সহ নানান জলযান, সেনাবাহিনীর গাড়িরবহর, বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস-গাড়িসমূহ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এসব পরিবহন ব্যবহারকারীরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করবেন। এতে চলতি ভোগান্তির কিছুটা হলেও লাঘব হবে। সরকারি দায়িত্বশীলরা কি বিষয়টি নিয়ে ভাববেন?

No comments:

Post a Comment