Wednesday, August 15, 2012

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কবর প্রথম বাঁধাই করে অবিসংবাদিত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী



 সুমি খান: “ যে নেতার নির্দেশে এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো , তাকে সপরিবারে  নির্মম হত্যার পর তার অস্তিত্ব মুছে ফেলার চক্রান্ত করেছিলো খুনিরা। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মীর মতো আমিও গ্রেফতার হই, ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে আমাকে। কোন্ সালে সেটা মনে নেই, দেশে একটু মুক্ত চলাচলের  সুযোগ পেতেই বঙ্গবন্ধুর কবর জেয়ারত করতে ছুটে গিয়েছিলাম টুঙ্গিপাড়া । কবরের অবস্থা দেখে  মনে হলো  পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে এই কবর টি  সংরক্ষণ করা জরুরী।”
পনেরোই আগষ্ট সকালে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এ বি মহিউদ্দিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর সাথে জড়িয়ে তার স্মৃতি তুলে ধরলেন আমাদের সময়ের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ।  প্রথমেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কথাই মনে রাখতে পারছেন না বলে। পর মুহুর্তেই ধীরে ধীরে মনে করলেন সেই ঐতিহাসিক দিনটির অনেক কথা।
“ টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ অনেক দূরে। রাস্তা খুব খারাপ ছিল তখন, ইট, সিমেন্ট , রাজমিস্ত্রি- কিছুই তো নেই।  তবু মন মানলোনা। আমার   সাথে চট্টগ্রামের কাট্টলীর কয়েকজন নেতা কর্মী ছিল। তাদের সাথে নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে ইট আর সিমেন্ট আনলাম।  কোনভাবে ইট সিমেন্টের গাঁথুনি তুলে আমাদের প্রিয় নেতার  কবর বাঁধাই করে দিলাম  নিজেরাই। আমরা তো মিস্ত্রি নই, প্ল্যাষ্টার করতে পারলাম না।”  ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ঢাকায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার কথা ছিল তার ও । সকালে রেডিও খুলতেই মেজর ডালিমের বেতার ঘোষণার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। বললেন, যে নেতার নির্দেশে এ দেশের তরুণ সমাজ মোহমুগ্ধ হয়ে সাহস করে  মাঠে  নেমেছে, সেই নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যার ঘটনা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ করে দেয় সেদিনের তরুণ শ্রমিক নেতা এবং সংগঠক  মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। ১৬ আগষ্ট চট্টগ্রামে এসে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে লালখানবাজার যাওয়ার পথে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের  সদস্যেরা গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাকে। এর পর তাকে পাঠানো হলো রাজশাহী জেলে। প্রায় ৬ মাস পর জামিনে মুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম আসেন । সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলা চলে যান।সেখান থেকে কোলকাতা যান এবং জীবিকার প্রয়োজনে নানান কাজের সাথে  যুক্ত হন। এর কিছুদিন পর দেশে ফেরার সাথে সাথে  আবার শুরু হয় নির্যাতন। বললেন, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর খুনি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ছিলাম, তাদের মধ্যে সুলতানুল কবির, পুলিন দে, আব্দুল্লাহ আল হারুণ, ডা. আফসারুল আমিন, লোকমান সহ অনেক কে  ক্যান্টনমেন্টে  ধরে নিয়ে খুব নির্যাতন করা হতো। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং সেনাবাহিনীর পাকিস্তানঘেঁষা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে  বাংলাদেশ বিরোধী সাম্প্রদায়িক একটি দল গঠন করা হলো। আমাদের দলের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হলো।মুক্তিযুদ্ধেও পর সুবিধাভুক্ত গোষ্ঠিীর কারণে যারা অভিমান করে বা  কোন কারণে ভুল বুঝে দল থেকে দূরে সরে গেছে তাদের  কারো কারো সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে একটি  অতিবাম সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হলো। সদ্যস্বাধীন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত  বাংলাদেশ কে বঙ্গবন্ধু যেভাবে গড়ে তুলছিলেন,তা ধ্বংস করার জন্যে আন্তর্জাতিক চক্রান্তে অংশ নিলো সেই অতিবাম গোষ্ঠী। এগ্রেসিভ হয়ে একের পর এক বিভিন্ন নাশকতা মূলক কাজ করে সংকটে ফেলেছে বঙ্গবন্ধুকে।”
মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বারবার বঙ্গবন্ধু , তার কন্যা শেখ হাসিনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে । সবরকম দুর্নীতি এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি সোচ্চার।  তার মতে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশাল অপশক্তি ওঁৎ পেতে আছে। এই শক্তি প্রতিরোধ করতে হবে। দলের নেতা কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে তারা এমন কোন কাজ না করে, যা বর্তমান সরকারের জনকল্যাণ মুখী  ভূমিকাকে সংকটে ফেলতে পারে।
 চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অন্ত:র্কোন্দল মিটাতে সম্প্রতি নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিনের  বাসায় গেছেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ।বললেন, বড় দলে মত বিরোধ হয়, আবার মিটে যায়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তিনবার নির্বাচিত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী  পদ্মা সেতু  প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বের অনেক বড়ো শক্তির বিরোধিতার পরও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। প্রয়োজনে এক মুঠো ভাত কম খেয়ে হলেও আমরা ১৪ কোটি মানুষ নেত্রীর পদক্ষেপে একাত্ম।আমরা ভিক্ষুক হয়ে বাঁচতে রাজী না।জনগণের কথা ভেবে দেশের সন্তান হিসেবে ড. ইউনুস কে  পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মহিউদ্দিন চৌধুরী। সুমি খান ১৫/০৮/১২

No comments:

Post a Comment