Wednesday, March 12, 2014

জঙ্গিরা মারে, রাষ্ট্রও মারে, কিন্তু বলা বারণ-শিলাদিত্য সেন


যে ভাবে স্বাধীন চোখে দেখা ও ক্যামেরায় তোলা এই দেশ ও দেশের মানুষ চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়, আমাদের বোধ-অনুভবে সঞ্চারিত হয়, তা মোটেও পছন্দ নয় আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বের।
১৩ মার্চ , ২০১৪, ০৪:০৫:০০
‘সেনগাদাল’ ছবির একটি দৃশ্য।
ট্রেনের টয়লেটে ঢুকে নিঃশব্দে কাঁদছিলেন লীনা মনিমেকলাই। ট্রেনটা তখন রামেশ্বরম-এর লম্বা রেল-সেতু পার হচ্ছে। একটু আগেই পুলিশ এসে তাঁকে ট্রেনে তুলে দিয়ে গেছে। রামনাথপুরমের পুলিশ চৌকি থেকে হুকুম হয়েছে: চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রামেশ্বরম ছেড়ে চলে যেতে হবে। অপরাধ? লীনা ওই অঞ্চলে তামিল জেলে আর উদ্বাস্তুদের নিয়ে ছবির শুটিং শুরু করেছিলেন। সে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ফিরে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকেই কাঁদছিলেন তিনি। পুলিশচৌকিতে কর্তব্যরত অফিসারকে প্রশ্ন করেছিলেন: এঁদের নিয়ে ছবি করাটা কি অপরাধ? উত্তর পেয়েছিলেন: তর্ক করলে জেলে ঢুকিয়ে দেব।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ছবি করছিলেন না লীনা। ছবি তুলতে গিয়েছিলেন সেই সব তামিল ধীবরকে নিয়ে, যাঁরা প্রায়ই নিখোঁজ হয়ে যান সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে, কিংবা ফিরে আসেন মৃত অবস্থায়। অঞ্চলটা রামেশ্বরম-এর ধনুষ্কোডি। এই ধনুষ্কোডি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল ষাটের দশকের এক দানবিক ধূলিঝড়ে। শুধু কিছু ধ্বংসস্তূপ আর বালিয়াড়ি নিয়ে আজ দাঁড়িয়ে আছে, তার সংলগ্ন সমুদ্র আদতে সীমান্ত-সমুদ্র ভারত ও শ্রীলঙ্কার। এখান থেকে প্রায়ই মাছমারা’র দল যায় সমুদ্রে, মাছ ধরতে, আর প্রায়ই আক্রান্ত হয় শ্রীলঙ্কার নৌসেনাদের হাতে। কেউ কেউ বেঁচে ফেরেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে, অনেকেই ফেরেন না, লাশ নিয়ে ভাসতে ভাসতে ফিরে আসে নৌকোগুলো। আর আসেন তামিল উদ্বাস্তুরা। শ্রীলঙ্কা থেকে উৎখাত হয়ে পুনর্বাসনের আশায় ঠাঁই গাড়েন ধনুষ্কোডিতে। সম্পন্ন যে-সব তামিল, তাঁরা কবেই, শ্রীলঙ্কায় তিন দশকের রক্তক্ষয় শুরু হওয়ার পরে পরেই চলে গিয়েছেন ইউরোপ বা কানাডায়। বাকি সব নিঃস্ব গৃহহীন, প্রায়ই চলে আসেন এখানে। এদের নিয়েই ছবি করছিলেন লীনা। বাদ সাধে আমাদের দেশের সরকার।
অনেকক্ষণ ধরে থানায় বসে ছবির ফুটেজ দেখিয়ে লীনা তামিল পুলিশ সুপারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি আক্রান্ত তামিলদের ছবি তুলতে এসেছেন। চশমা-চোখে হাসি-হাসি মুখে পুলিশের বড়কর্তাটি কিছুতেই লীনার কথা বিশ্বাস করতে চান না। লীনা মেয়ে বলেই বোধহয় আরও বেশি সন্দিগ্ধ হয়ে খোঁজ নেন, এলটিটিই ছবি বানাতে কতটা সাহায্য করছে লীনাকে, সন্দেহ প্রকাশ করেন, ওই নিখোঁজ নিহত জেলে বা উদ্বাস্তুদেরও নিশ্চয়ই সাহায্য করে এলটিটিই!
এ সমস্তই ধরা আছে লীনার ‘সেনগাদাল’ বা ‘দ্য ডেড সি’ ছবিতে। লীনা মুখ্যত তথ্যচিত্রকার, এটি তাঁর প্রথম ফিচার-ছবি। গোটাটাই ঘটে-যাওয়া বাস্তব, ডকুমেন্টেশনের ধাঁচে তুলে এনেছেন, দরকারে আর্কাইভ থেকে ফুটেজও ব্যবহার করেছেন। ফলে দর্শককে সহ্য করতেই হবে, কী ভাবে মধ্যরাতে ভারতীয় নৌসেনাদের একটি দল এসে ধনুষ্কোডির তটে ঘুমন্ত উদ্বাস্তুদের উপর অত্যাচার চালায়, চেষ্টা করে মেয়েদের ধর্ষণ করতে। শ্রীলঙ্কার উপকূল যেহেতু এ-সমুদ্র থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে, ভারতীয় কূলরক্ষীরা, গোয়েন্দা দফতরের কর্মীরা, পুলিশ প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ ছিন্নমূল মানুষগুলোর ওপর। অন্য দিকে মাঝসমুদ্রে জেলেদের নৌকোয় উঠে, তাঁদের উলঙ্গ করে, গোপনাঙ্গে বন্দুকের নল দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁদের রক্তাক্ত করে, বা চোখ বেঁধে গুলি চালিয়ে তাঁদের ‘খতম’ করে তবে স্বস্তি পায় শ্রীলঙ্কার নৌসেনারা। এই তামিলরা দুই রাষ্ট্রেরই চক্ষুশূল।
কিছু দিন আগে মাসখানেকের ব্যবধানে বার দু’য়েক কলকাতা ঘুরে গেলেন লীনা, সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট আর সল্টলেকে এক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটি দেখানোর সূত্রে। বছর দু’য়েক ধরে দেশে-বিদেশে নানা ফেস্টিভ্যালে ছবিটি দেখিয়ে চলেছেন, সম্মানও জুটছে সে সুবাদে। কিন্তু এই তামিল পরিচালকের সঙ্গে কথায়-কথায় জানা গেল, সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিতে নারাজ ছিল, কারণ ভারত ও শ্রীলঙ্কা দু’দেশের সরকারেরই নাকি অবমাননা হয়েছে এ-ছবিতে। অহিংস নিরস্ত্র অসহায় এই তামিলদের কাছে সেনাবাহিনী বা জঙ্গি দুইয়েরই হিংসাত্মক আক্রমণ যে সমান, তা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে ওঠা যায়নি। ফলে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় লীনাকে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ছাড়পত্র মেলে শেষ পর্যন্ত। হয়তো উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষার খাতিরেই। হয়তো উদারতার একটা গর্ব আছে বলেই। কিন্তু এই কাহিনি বলে দেয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধ-স্বরকে রাষ্ট্র মন থেকে মানতে পারে না।
লীনার এই অভিজ্ঞতার আয়নায় বলিউডকে নতুন করে চিনে নেওয়া যায়। ব্যক্তির বিরুদ্ধ-স্বরকে নগণ্য করে দেওয়ার জন্যে রাষ্ট্রের পক্ষে ক্রমপ্রসারিত ভূমিকা নিচ্ছে বলিউড। বলিউড তো ইন্ডাস্ট্রি, তার সঙ্গে সরকারের ব্যবসায়িক বিরোধ থাকলেও সরকার যে সামাজিক আদলে রাষ্ট্রকে সাজিয়ে নিতে চায়, তার বিরোধিতায় সাধারণত যায় না বলিউড। বরং চালু সামাজিক কাঠামোর অনুগত দর্শকরুচি তৈরি করে দিতে পারলেই বলিউডের ‘বাজার’ বজায় থাকে। ব্যক্তির স্বতন্ত্র স্বর নয়, সমষ্টির ক্ষমতাকেন্দ্রিকতাতেই তার বিশ্বাস। সিনেমার ভিতর দিয়ে রাষ্ট্রের আধিপত্যকামী আদর্শ বিস্তারে সদারত বলিউড এখন নানা ‘সামাজিক’ বিষয় তুলে আনছে তার ছবিতে।
গত অগস্টে, স্বাধীনতার মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ম্যাড্রাস কাফে’র কথা এক বার মনে করুন। শ্রীলঙ্কায় তামিলদের পীড়ন-নিধন বা তাদের গৃহহীনতার সমস্যা এ-ছবির ভিত্তিভূমি, অথচ সারা ছবি জুড়ে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর কার্যকলাপ, সেই ‘র’-এর তুখড় প্রতিনিধি জন আব্রাহাম তাঁর অতুলনীয় দক্ষতা সত্ত্বেও জঙ্গি ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে, আর সে-ব্যর্থতায় কেঁদে কেঁদে তাঁর চোখের জল শুকোয় না। জন এ-ছবির মূল অভিনেতা নন, প্রযোজকও, বলেছেন: ‘এ-ছবি প্রতিটি ভারতীয়ের দেখা উচিত শুধু এটা জানা বা বোঝার জন্যে যে ওই ঘটনা কী ভাবে ভারতের রাজনৈতিক চালচিত্র বদলে দিয়েছিল।’ শ্রীলঙ্কার ছিন্নমূল উদ্বাস্তু দরিদ্র তামিলদের অবলম্বন করে আসলে এ-ছবি ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষার প্রচার চালায়, জাতীয়তাবাদের জিগির-তোলা এক সমষ্টিবোধকে জনপ্রিয় করে তোলে।
ব্যক্তির স্বর যে বলিউড-শাসিত ভারতীয় সিনেমায় ক্রমশই কোণঠাসা, তার হাতে-নগদ হালফিল উদাহরণ অজিতা সুচিত্রা ভীরা-র ‘ব্যালাড অব রুস্তম’।
 রুস্তম প্রত্যন্ত মফস্সলের ছোট্ট সরকারি অফিসের সাধারণ কর্মী। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি অফিসার থেকে রক্ষণশীল উচ্চবর্গের লোকজন নিয়েই তার দিনযাপন; তবু উন্নয়নের বাইরে পড়ে-থাকা সেই অঞ্চলের নির্জন নিসর্গ, মানুষজনের মুখ আস্তে আস্তে তার স্বপ্ন বা কল্পনার নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। এক ব্যক্তিমানুষের বেঁচে থাকার রাজনৈতিক ভাষ্য যেন এ-ছবি।
অজিতা তেলুগু, হায়দরাবাদের মেয়ে। ছবি নিয়ে কলকাতায় সিনে সেন্ট্রালের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এসেছিলেন গত নভেম্বরে। লীনার মতো তিনি মূলত তথ্যচিত্রকার, এটিই তাঁর প্রথম ফিচার-ছবি। ইতিমধ্যেই ছবিটি দেখানো ও সম্মানিত হয়েছে নানা চলচ্চিত্র উৎসবে, এ-দেশ ও দেশের বাইরে, ঠাঁই পেয়েছিল অস্কার-এর প্রতিযোগিতাতেও। মুম্বইবাসী অজিতা সযত্নে বলিউড এড়িয়ে চলেন, নিজের গায়ে ‘উওম্যান ডিরেকটর’ লেবেল আঁটতে নারাজ, কথোপকথনে জানালেন, ‘হ্যাঁ, সামাজিক পরিচয়ে আমি এক জন (মেয়ে), কিন্তু সেটা আমার প্রাথমিক পরিচয় নয়। আমি এক জন ব্যক্তি, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড়।’
কিন্তু চলচ্চিত্রোৎসব বাদ দিলে লীনা বা অজিতার ছবি কতটুকুই-বা সাধারণ্যে প্রদর্শিত হওয়ার সুযোগ পায়? তেমন কোনও ‘স্পেস’ তো রাখেনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কারণটা শুধুই ব্যবসায়িক কিংবা আর্থনীতিক, না কি রাষ্ট্রীয় শাসন বজায় রাখার কোনও প্রচ্ছন্ন কৌশল? লীনা বা অজিতার মতো পরিচালকের স্বাধীন চোখে দেখা ও ক্যামেরায় তোলা এই দেশ ও দেশের মানুষ যে ভাবে চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়, যে ভাবে আমাদের বোধ-অনুভবে সঞ্চারিত হয়, তা মোটেও পছন্দ নয় আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বের। শাসক কিংবা বিরোধী যে পক্ষেই থাকুন-না-কেন তাঁরা, শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রভুত্বেরই প্রতিনিধি তাঁরা। নিয়মমাফিক সংসদীয় নির্বাচনের পরেও বোধহয় তার কোনও ব্যত্যয় ঘটবে না।

Monday, March 10, 2014

গণমাধ্যমের ব্যর্থতা এবং উচ্চ আদালতের প্রতি ঔদ্ধত্য- সুমি খান

দৈনিক প্রথম আলো এবং  মিজানুর রহমান খান 'আদালত বিচারব্যবস্থা' নিয়ে মিথ্যাচারপূর্ণ অপব্যাখ্যা পূর্ণ লেখা নিয়মিত লিখেন। একটি ধরা খেলো ! আদালতের বিচারে অপসাংবাদিকতা -তার বিরোধিতা করতে গিয়ে সাংবাদিক সংগঠন এবং সম্পাদকেরা  পুরো কমিউনিটিকে যুক্ত করছেন কেন? চরম দুর্নীতিগ্রস্থ অসাংবাদিক  সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পক্ষে  ১৫  সম্পাদক জোট বেধেছিলেন।এখন আবার তারা জোট বেধেছেন আদালতের বিরুদ্ধে। প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়টির বাস্তব ভিত্তি কতো টা আছে? সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতার মানদন্ড কী?  সাংবাদিকতা পেশা নয়-বাণিজ্য -এটাই প্রমাণ করছেন তো বারবার??

রোকন উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের সম্পর্কে আদালতে যে  বক্তব্য দিয়েছেন সেটি আদালতেই চ্যালেঞ্জ করা হলো না কেন?  রোকনউদ্দিন মাহমুদের অভিযোগ কি  অনেক ক্ষেত্রে সত্য নয়? মাননীয়  সম্পাদকগন, সাংবাদিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে বা আলাদাভাবে আদালতের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন না কেন? ব্যারিষ্টার রোকন যখন তার বক্তব্য দেন তখনতো মিজানুর রহমানের  আইনজীবীও সেখানে ছিলেন, তিনি কি কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন ?? না করলে কেন করেননি?

 আমরা সাধারণ সংবাদকর্মীরা এর চরম বিরোধিতা করি! কিন্তু আমরা বিচ্ছিন্ন - তাই সংঘবদ্ধ অপশক্তি অনেক শক্তিশালী! এরা  অনৈতিক উপায়ে সারা বিশ্বের কাছে এবং সাধারণ পাঠকদের কাছে বেআইনি ভাবে রাষ্ট্র কে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করেন-তবু তথ্য মন্ত্রনালয় এবং সংশ্লিষ্ট দের কাছে ডরম সম্মানিত। আর অন্যায়ের বিরোধিতা কারীরা বরাবর ই সবখানে অবহেলিত! এ কারণেই আমাদের গণমাধ্যম কখনো জনকল্যাণকর বা পেশাদারীত্ব প্রতিষ্ঠায় বারবার ব্যর্থ এবং উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।

এভাবে মতিউর রহমান- মিজানুর রহমান সহ চরম মিথ্যাচারের বেসাতি যারা করে এমন  অপসাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র অথবা সমাজ কখনো দায়িত্ব নিয়ে কঠোর হয় না। কারণ এরাই সমাজের নিয়ন্ত্রক!!
তবু আমরা মুষ্টিমেয় যারা দেশের প্রশ্নে মানবতার প্রশ্নে নীতির প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে আছি- যতোই নিঃসঙ্গ একাকী হোক্ না কেন -এ লড়াই আমাদের চলবে!  অন্যায় আর অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে  আমরা জোর প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো।  বরাবরের মতোই আদালতের প্রতি আমরা পূর্ণ আস্থা রাখতে চাই! সত্যের জয় হোক্!

নারী দিবসে দিই নারী-পুরুষের সমতার ডাক - সুমি খান

Robi

8 March 2014 18:30:00 PM Saturday BdST
0
 

নারী দিবসে দিই নারী-পুরুষের সমতার ডাক

সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ফন্টের আকারDecrease fontEnlarge font
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। 'ইনস্পায়ারিং চেঞ্জ' বা 'পরিবর্তনকে উত্সাহিত করো’ -এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হবে দিবসটি। বাংলাদেশ সরকার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে 'অগ্রযাত্রার মূল কথা নারী-পুরুষের সমতা'। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে 'রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, নারীর সমতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করি' প্রতিপাদ্য করে দিবসটি পালন করছে। সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতি এবং ধর্মকে আলাদা করতেই হবে।সমাজপ্রগতির সংগ্রামে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এর সফলতা সম্ভব নয়। 
আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চের ৮ তারিখে পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী নারীরা সমাজ প্রগতির ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল এবং  প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন।এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াকু এবং রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস। সমাজপ্রগতির এই ইতিহাস অনেকের জানা। তবু এ সমাজের নীতিনির্ধারক এবং মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বশীলেরা অনেকে এ বিষয়গুলো ইচ্ছে করেই যেন ভুলে থাকেন। তাই মগজে শান দিয়ে  মরচে সরানো এবং চিরপ্রণম্য ক্লারা জেটকিন ও তার সতীর্থ সহযোদ্ধাদের প্রতি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর  মানসে ইতিহাসের দ্বারস্থ হলাম।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের নারী সংগঠন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের  পক্ষে আয়োজিত নারী সমাবেশে  জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির  অন্যতম স্থপতি সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে ক্লারা  জেটকিন নারীর শ্রমঅধিকারের আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চকে মানবসমাজের বিজয়ের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্যে প্রতি বছর ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।  সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সমানাধিকার দিবস হিসেবে ৮ মার্চ দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগলো। বাংলাদেশেও  স্বাধীনতার লাভের আগেই  ১৯৭১  সাল থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। 
আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান,বেলারুশ,বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ,  ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান,  লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া,মন্টিনেগ্রো, রাশিয়া,তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,  উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান,  ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়াতে। এছাড়া, চীন,মেসিদোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরা সরকারী ছুটির দিন ভোগ করেন। 

দৈনিক শ্রমঘণ্টা ১২ থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করার অপরাধে  ১৮৫৭ সালে  নিউইয়র্কে কতো নারী আটক হন, তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে কারাগারে ও নির্যাতিত হন অনেক নারী শ্রমিক। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় 'নারী শ্রমিক ইউনিয়ন'। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় হলো দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। 

এরও বহু আগে ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে ৬০ বছর আগের পটভূমির বিজয় অর্জিত হয়। তবে যে দাবিতে এই আন্দোলন সমতাভিত্তিক  এবং বৈষম্যহীন কাজের পরিবেশ এখনো আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। তাই সেই আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে এখনো।

 সমাজ প্রগতির সংগ্রামে  ৮ মার্চ রক্তাক্ত ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল দিন। এমন দিনে মুক্তির মন্দির সোপানতলে যারা প্রাণ দিয়েছে, তাদের স্মরণ করা আমাদের প্রতিটি নারী-পুরুষের ই দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। 

যারা ৮ মার্চ কে  নারীকে ‘সুবিধা দেয়ার জন্যে’  বা ‘নারীকে করুণা’ করে ‘বিশেষ কোন দিবস'’ পালন করা হচ্ছে মনে করেন- এখনই তাদের ভুল ভাঙ্গা প্রয়োজন। সে নারী বা পুরুষ যেই হোন-তাদের বিনীত অনুরোধ করি, নারীদিবসের ইতিহাস পড়ুন। অনুধাবন করুন বাস্তব ইতিহাস। যে রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারী দিবস প্রবর্তন, তার প্রতি  অশ্রদ্ধা পুষে রেখে নারীর প্রতি কোনো বিরূপ চিন্তা সমাজের জন্যে ক্ষতিকর। 

এ কথা গুলোর অবতারণা করছি যৌক্তিক কারণে। নারী  দিবস নিয়ে  সাক্ষাৎকার এবং আলোচনায়  অনেকেই এই দিবস পালনের চরম বিরোধিতা করেন বিভিন্ন সময়ে। এমন কি দেশের সাংবাদিকতায় সুপ্রতিষ্ঠিত অনেক নারীও বলেন, নারীদের জন্যে তারা আলাদা কোন দিবস চান না। এই নারীদের প্রতি বলতে হয় প্রথমতঃ অনেক নারীর  প্রতি নিপীড়ন , রক্তপাত,  তাদের ক্লান্তিহীন  শ্রম,মেধা আর রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনের ফসল  সফল নারীদের আজকের এই রমরমা অবস্থা!

‘শুধু নারীর জন্য কোনো একটি দিন’ (?) পালন করে পুরুষের অধিকার খর্ব  (?) করা হচ্ছে মনে করলে ইতিহাস বিকৃতি হবে। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের জাতিসংঘের স্বীকৃতি পর্যন্ত যাদের আত্মদানের ফসল এই মহান নারী দিবস- এই রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের প্রতি বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা বা অজ্ঞতা প্রায় দু’শো বছর আগের এই দিনে  অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে প্রাণ দিতে প্রস্তুত  অকুতোভয় বীর নারী এবং যোদ্ধাদের মহান আত্মদানের প্রতি চরম অবমাননা করা হবে !! 

সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে এই দিনে  চেনা অচেনা প্রতিটি নারীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পুরুষেরা।  নারীরা সরকারী ছুটি উপভোগ করে প্রিয়জন এবং সন্তানদের সময় দেন। বিজয়ের আনন্দে নারী –পুরুষ একসাথে উদ্ভাসিত হন। আমাদের সমাজে তার কোনো ছায়া নেই। বর্তমান বাম নেতা-কর্মীদেরও সেই চিন্তা চেতনায় উদ্ভাসিত হতে দেখি না। এ-এক ক্রান্তিকাল যাচ্ছে আমাদের। ইতিহাসের দিকে পিঠ ফিরে থাকা প্রজন্ম যেন কোনো এক কালো দিনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে; দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আলোর নিশানা।

সবচেয়ে কষ্ট হয় যখন দেখি  কোনো দল বা মতের বিরোধিতা করতে গিয়ে ফেসবুকে চরম অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা হয় নারীদের। মতের বিরোধিতা থাকতে পারে, পথ ভিন্ন হতে পারে , তাই বলে কোনো নারীর প্রতি অশালীন বা বিরূপ মন্তব্য করা যে কারোর চরম মানসিক বিকারের পরিচয়-- এই সাধারণ সত্যটা এ সমাজে প্রতিষ্ঠা হতে আর কতো সময় লাগবে?

বর্তমান সরকার নারীর জাগরণে এবং উন্নয়নে অনেক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।  তবে অনেক পিছিয়ে থাকা মানসিকতা থেকে নিজেদের বের করে আনতে গোড়া থেকে  কাজ করতে হবে। 

 নারীর বিজয় মানবতার বিজয়। এই ইতিহাসের সঠিক প্রচার এবং প্রকাশ  নারীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রতিষ্ঠায় জরুরি। রাজধানী  থেকে প্রত্যন্ত জনপদ পর্যন্ত  পথে প্রান্তরে   নারী জাগরণের এবং সমাজ প্রগতির প্রতিটি ইতিহাস পর্যালোচনা এবং প্রচার একটু একটু করে বদলে দেবে নারীর প্রতি সমাজের রক্ষণশীলতাকে।

 পরিশেষে উদাত্ত আহ্বান জানাই , নারী দিবস নিয়ে যারা এখনো ভুল ধারণা পোষণ করে আছেন –তারা অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করুন শ্রমজীবী নারীদের আত্মদানের এই দিনটিকে। আপনার পাশের নারীটি আপনার বন্ধু , সহযোদ্ধা । আপনার সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং সম্মান  তার প্রাপ্য; করুণা বা অশ্রদ্ধা নয়।  তবেই নারী তার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং অনুপ্রেরণা নিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেবে।তেমনি নারীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রেরণা আর শক্তিতে পুরুষ এগিয়ে নেবে সমাজকে। আলোকের ঝর্নাধারায় ধুয়ে যাক্ যতো কলুষ, যতো ফাঁকি, যতো  গ্লানি !

 নারী-পুরুষ একসাথে  অনন্ত গৌরবে এগিয়ে যাক্ সমাজপ্রগতির পথে!  নারী দিবস ২০১৪ সফল হোক্!!  Sumikhan29bdj@gmail.com
৮ মার্চ ২০১৪

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
0
 
Bookmark and Share
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F/273184-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95.html#sthash.f1Hu1fLz.dpuf

Sunday, March 9, 2014

খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন রঙ্গ-ড. জিনিয়া জাহিদ,


কনট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ফন্টের আকারDecrease fontEnlarge font
বেশ কয়েক বছর ধরেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের নামে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে যাচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন না। কোনো প্রশ্ন করলেই তিনি বলেন, "সব প্রশ্নের জবাবইতো এই বক্তব্যে এসে গেছে। আবার কি।"

এ যেন আইএলটিএস পরীক্ষার দুর্বোধ্য কোনো রিডিং প্যারাগ্রাফ থেকে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেয়া।
 
কোনো সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে অম্লান বদনে তিনি বলে যান, "আরেক দিন, আজ নয়।"
 
এরপরও যদি নাছোরবান্দা ত্যাদড় কেউ কোনো প্রশ্ন করেই যান, তিনি মৃদু হেসে বলেন, "কিছু শুনতে পারছি না।"

জাতির সামনে যদি তিনি বক্তব্যই দেবেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তরই দেবেন না, তবে তাকে সংবাদ সম্মেলন নাম দেয়ার হেতু কি? 
 
পাঁচ তারা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন না ডেকে তিনি তো যেকোনো টিভি চ্যানেলের সাথে যোগাযোগ করে ক্যামেরার সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করলেই পারেন। খামাখা সাংবাদিকদের তাহলে আর বসে থেকে সময় নষ্ট করতে হয় না। 
 
সম্ভবত ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে কোনো এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের হাতেগোনা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ আট বছরে বলতে গেলে কোনো সংবাদ সম্মেলনেই কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। 

এত এত মাইক্রোফোন সামনে নিয়ে, সামনে বসা সাংবাদিকদের যেন সাক্ষী রেখে তিনি তার লিখিত বক্তব্য দিয়ে যান।

সেই বক্তব্য দেবার আগেও তিনি ভালো করে একবার পড়েও দেখেন না। উপদেষ্টাকূল যা লিখে দেন, সেটাই তিনি কোনো রকম যাচাই না করেই হোঁচট খেতে খেতে পড়ে যান। জাতীর উদ্দেশ্যে দেয়া তার বক্তব্যগুলোতে তাই থাকে অসত্য তথ্যের সমাহার। 

এই তো সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনটিতে তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যা, গুমের সব ভুয়া তথ্যে ভরপুর একটি বক্তব্য উপস্থাপন করলেন।

তার বক্তব্য ভুল তথ্যে ভরা তা ইতোমধ্যে ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এমন তথ্য বিভ্রাট জাতির  সামনে এভাবে ঘটা করে পরিবেশন করার হেতু কি?

যদিও তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালবাসেন না, তবুও অনেক চাপাচাপির পর দু-চারটা প্রশ্নের উত্তর কখনো সখনো দেন। এর আগে নির্বাচন পরবর্তী একটি সংবাদ সম্মেলনের নামে বক্তব্য পরিবেশন অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকদের বাংলাদেশ নিয়ে অহেতুক মাথা ঘামানো নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, "আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। চাইনা অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করুক।"
 
অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর যুক্তরাজ্য, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশ্ব মাতবরের প্রতিনিধি ড্যান মজিনাসহ সব রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা ঝাঁকে ঝাঁকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করছেন। 
 
কবিতার ভাষায় বলতে হয়, কি কথা তাহাদের সাথে?
 
কি কথা তারা বলছেন, বিস্তারিত না জানলেও অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না যে, নির্বাচন নিয়েই কিছু শলা পরামর্শ হয় তো চলছে। 
 
প্রশ্ন হলো যেখানে খালেদা জিয়া নিজেই জাতির সামনে স্পষ্ট কণ্ঠে বলছেন, তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ বা নাক গলানো মোটেই সমর্থন করেন না, সেখানে কি কথা ড্যান মজিনার সাথে?
 
ড্যান মজিনারা কি পারবেন খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসাতে? কেন শুধু শুধু ঘরের ব্যাপার পরকে এনে সালিশ মানা? দেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে সুবিধাবাজ ও মতলববাজ মিস্টার মজিনা আর এইসব বিদেশি কূটনীতিকদের এত দৌড়াদৌড়ি ও ছুটাছুটিরই বা অর্থ কি? এত কিসের আগ্রহ? 

এইসব কূটনীতিকরা বা কেন খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে আমাদের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চাইছেন?
 
বিএনপিকে কিভাবে নতুন করে রাজনৈতিকাঙ্গণে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবেন, সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিএনপি নেবে। তবে আমাদের প্রত্যশা হলো, জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যগুলো হোক সঠিক ও গঠনমূলক। সংবাদ সম্মেলনের নামে মিথ্যের বেসাতি কোনভাবেই কাম্য নয়। 

জনগণের সামনে দায়সারা ভাবে কোনো কিছু বলে দিয়েই যে পার পাওয়া যাবে না, এই সত্য খালেদা জিয়া যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন তা তার দলের ও দেশের জন্য তত দ্রুতই মঙ্গলজনক হবে।
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AE%E0%A6%A4/273278-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%A8-%E0%A6%B0%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97.html#sthash.UvW2KaG5.dpuf

Saturday, March 8, 2014

নারীমুক্তি ও আমাদের বাস্তবতা - নূরজাহান খান


রবিবার, ৯ মার্চ ২০১৪, ২৫ ফাল্গুন ১৪২০
নারীমুক্তি ও আমাদের বাস্তবতা
নূরজাহান খান
‘নারী ছাড়া কোন গণআন্দোলন হতে পারে না।’ মহান বিপ্লবী ক্লারা জেৎকিনের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেছিলেন মহামতি লেনিন। পিছিয়ে থাকা নারীদের এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি বলেছিলেন, নারীদের বোঝাতে হবে সন্তানধারণ ও সন্তানকে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা এবং জীবনচর্চায় তাদের পুরুষের সমকক্ষ হতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪-এর থিম করা হয়েছে পরিবর্তনের অনুপ্রেরণাকে। আমরা নারীর প্রতি দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে আসছি ১৯৭০ সাল থেকে। গত চার দশকে এর সফলতা অনেক। তবে ব্যর্থতাও কম নয়। সেই ব্যর্থতা কাটাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরী। আমার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় বর্তমান সমাজবাস্তবতার কিছু সফলতা-ব্যর্থতার চিত্র এ লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
রাজপথ থেকে প্রশাসন সর্বত্র নারীর দৃপ্ত পদচারণা। নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই এদেশে প্রকৃত মানবমুক্তি আসবে। আমরা বলি, পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হতে হবে। নারীর শিক্ষার মান বেড়েছে। নারীর সমতা বিধান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার নারীবান্ধব
পরিবেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। নারীর নৈতিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা নারীমুক্তির অগ্রযাত্রার সহায়ক বলে মনে করছে বর্তমান সরকার। এ কাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। ১৯৭৬-৮৫ সালে জাতিসংঘের ঘোষণা ছিল নারীর সমতা, উন্নয়ন ও শান্তি। জাতিসংঘ নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য ঘোষণা দেয় কাজ, শিক্ষা, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে। কোন কোন দেশের সংবিধানে আছে নারীরা গৃহকাজের বাইরে অন্য কাজে যেতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যে এখনও ভোটাধিকারের দাবিতে লড়াই করতে হচ্ছে নারীকে। আমাদের খালাম্মা বেগম সুফিয়া কামাল বলতেন, মঞ্চে কিছু মানুষ নির্ধারিত বক্তব্য বলে যায়, ‘দর্শকরা শুনে যান। এর খুব একটা প্রভাব সমাজে পড়ে না। নারীর প্রতি আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দায়িত্বশীলতার কথা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বলতে হবে। সমাজ পরিবর্তনের মাঠে নামতে হবে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষকে। এর কোন বিকল্প নেই। এ আমাদের নিজেদেরই কাজ।’
সচেতনতার অভাবে ফতোয়া, পর্দা, হিজাব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সমাজ গবেষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্বাভাবিকভাবেই এর বিরুদ্ধে তার হতাশা এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যে কোন সচেতন ব্যক্তিমাত্রই এতে শঙ্কিত হবেন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীকে আবার পর্দার ভেতরে বন্দী করার সংঘবদ্ধ যে অপচেষ্টা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান আমাদের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের।
মুক্ত হাওয়ায় নারীর নিঃশ্বাস নিতেও বাধা? হিজাব তারই প্রকাশ। তবে সমাজের উচ্চশ্রেণীর কিছু নারী স্বেচ্ছায় এ শৃঙ্খলে বন্দী হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার হিজাবে ফ্যাশনের বেশ বাহার দেখান।
তাদের প্রতি আমার আবেদন, নজরুলের সেই জনপ্রিয় আহ্বান ভুলে যাবেন না, ‘মাথার ঘোমটা খুলে ফেলো নারী, ছিঁড়ে ফেলো ও শিকল- যে ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ।’ সৃষ্টিশীল মনকে শৃঙ্খলিত করার মতো স্বেচ্ছাচারিতার কোন অধিকার নিজেরও নেই। এ সমাজে জন্ম, শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রতিটি মানুষের অবদান আছে। সেই মানুষগুলোর প্রতি, এ সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
পর্দাপ্রথা প্রত্যাখ্যান সমাজ সচেতনতার প্রকাশ। এর সঙ্গে ধর্মের কোন দ্বন্দ্ব নেই। আধুনিককালে ধর্মের এমন অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে আবার অবরোধবাসিনী করার হীন প্রচেষ্টা করা হচ্ছে; যা ঠেকানো জরুরী বলে আমার মনে হয়। নারীকে কূপম-ূকতার দিকে ঠেলে দেয়ার এ হীন প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করে এগিয়ে নিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। সব সঙ্কীর্ণতার উর্ধে উঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, মানবিক মন নিয়ে গড়ে তুলতে হবে এ সমাজ।
স্বাবলম্বী হবার প্রয়াসে অথবা সংসারে সচ্ছলতা আনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে যে নারীরা তাদের কথা এবার বলতে হয়। ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে পা দিয়েছে গ্রামাঞ্চলের নারীরা। ঋণের ভার বইতে না পেরে আত্মহত্যা করার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। তবু প্রত্যন্ত জনপদে ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের হার কম নয়। পোশাক কারখানায় কর্মজীবী মেয়েরা শহরে ছোট রুম ভাড়া করে কষ্ট করে থাকে। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোম্পানি নিজেদের পরিবহন ব্যবস্থায় গ্রাম থেকেও কর্মীদের নিয়ে আসছে। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ব্যস্ততা। স্বামী সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা করে নিজের খাবার সঙ্গে নিয়ে কর্মক্ষেত্রে রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে উদ্যমী নারী। এমনও দেখা যায়, বিয়ের ১৮-১৯ বছর পরও স্বামীর একার রোজগারে সংসার চলে না। ৩৭-৩৮ বছরের নারীও গার্মেন্টসে চাকরি নিচ্ছে। তবে ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়, যখন দেখতে পাই দুর্জনেরা কিছু গার্মেন্টস কর্মীর ফাঁদে ফেলে পঙ্কিলতার অন্ধকাওে ডুবিয়ে দিচ্ছে তাদের জীবন। গ্রামের কর্মজীবী নারীর পরিবার এবং সন্তানের নিরাপত্তায় মায়ের অবর্তমানে প্রতিবেশীরা যেন সহনশীলতার সঙ্গে সহযোগিতা করে।
সুখের ব্যাপার, কোন কোন গার্মেন্টসে ডে-কেয়ার সেন্টার আছে, যেখানে গার্মেন্টসকর্মীরা তাদের শিশু-সন্তানকে রেখে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারে। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন আজ সত্য। লেডি কেরানি থেকে বিচারপতি সব পদে নারী দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে। বিচারিক কাজে নারীর সিদ্ধান্ত খুব কমই ভুল হয়। ব্যতিক্রম থাকতে পারে, তবে তা খুবই নগণ্য। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বার বার উঠে এসেছে বাস্তবে নারী তার কর্মক্ষেত্রে তুলনামূলক বিচারে পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি সৎ এবং পরিশ্রমী।
কন্যা শিশুর বিপন্নতা সমাজের আরেক ভয়াবহ বাস্তবতা। পরিণত বয়স্ক পুরুষ দ্বারাও অনেক সময়ে নির্যাতিত হয়ে তার জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়। বিকৃত রুচির মানুষগুলো আইনের কঠোর সাজার তোয়াক্কা কেন করেন না- সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারেন অপরাধবিশেষজ্ঞ বা সমাজ গবেষকরা। তবে নিরীহ শিশু বা তরুণীদের জিম্মি করে পর্ণোগ্রাফি তৈরি এবং প্রচারের মতো জঘন্য অপরাধ কন্যা শিশুদের নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। এ এক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছি আমরা।
আশার কথা, তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধীদের শাস্তির বিধান জারি করে আইন পাস হয়েছে সংসদে। অপরাধীদের অন্তত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া জরুরী, যার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে একটি কিশোরী বা তরুণীর ছবির সঙ্গে অন্য কোন ছবি জুড়ে অশ্লীল, অশালীন বক্তব্যদানকারী ধরা পড়ার পর তাদের বাঁচানোর জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমাজের প্রভাবশালীরা তৎপর হন।
রেলস্টেশন বা বাজারে পথশিশুরা পলিথিন মুখে দিয়ে মাদকে বুঁদ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে- তাদের বাঁচানোর উদ্যোগ না নিলে অন্ধকারের গহ্বরে তারা তলিয়ে যাবে।
যারা সমাজকে মাদকের অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে দিতে চায়, সেসব গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। একই ভাবে বলতে হয়, মানবপাচার এখন সারা বিশ্বের বড় সমস্যা। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অনেক সংগঠন এ নিয়ে কাজ করছে। অথচ মূল পাচারকারী শাস্তির বাইরেই থেকে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে কারো সদিচ্ছা আছে বলে মনে হয় না।
দু’বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে এ্যাসিড পান করে। এক বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুর কাছে হার মানে সেই তরুণী। মামলার আসামি ইভ টিজার তরুণের আইনজীবীর আর্জি মতো ছাত্রটির শিক্ষাজীবন বাঁচাতে মহামান্য আদালত তার জামিন দেয়।
এখানে পেশাগত দায়িত্ব প্রধান, মানবতাবোধ বিন্দুমাত্রও তাড়িত করেনি আসামিপক্ষের আইনজীবীকে। পরিতাপের বিষয়, এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, সারাদেশে মানববন্ধন, আন্দোলন, সভা সমিতি হয়। তাও একসময়ে গতানুগতিক নিয়মে ভাটা পড়ে।
সেই নিরীহ শিশু, কিশোরী-তরুণীর পাশে কেউ থাকে না। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুস সাত্তার ২০০৪ সালে চার বছরের একটি কন্যা শিশুকে (বালকরাও মাদ্রাসা শিক্ষকদের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়) নির্যাতন করার পর তার পক্ষে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। আদালতে বললেন, মামলার অভিযোগে উল্লেখিত ঘটনার সময়ে সাত্তার (ধর্ষক) নাকি সাতকানিয়া সমাজসেবা অফিসে ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তৎকালীন মন্ত্রী, এমপিও এ ধর্ষকের চরিত্র ‘ফুলের মতো পবিত্র’ এমন সনদপত্র দেন। অনেক আইনজীবী আদালতে দাঁড়ান ধর্ষণকারী সাত্তারের পক্ষে, আর নির্যাতিত শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে আমি দেখলাম কেউ নেই। আরও অনেক মামলার মতো এ মামলাটি নিয়েও ৪টি বছর লড়াই করলাম। পাশে পেয়েছিলাম প্রথিতযশা আইনজীবী এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তকে (বর্তমানে
মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর)।
২০১০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের তৎকালীন পিপি আখতার হোসেনের নেতৃত্বে মামলা পরিচালনাকালে আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলো। ৭ বছরের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হলো ধর্ষক আবদুস সাত্তার।
তবে খ্যাতনামা এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিজের ব্যবসা, চাকরির সফলতার জন্য নিজের স্ত্রী বা কন্যাকে ক্ষমতাবান কোন পুরুষের হাতে সমর্পণ করেন এমন অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগের বিপরীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোন বক্তব্য থাকে না। তাদের কোন অপরাধবোধও থাকে না। যা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর!
সমাজপতিদের কাছে নারী-পুরুষের শারীরিক কাঠামোগত বৈষম্যই গুরুত্বপূর্ণ। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজপতিদের চরম অনিচ্ছা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। নারী-পুরুষের সমানাধিকার, নারীর স্বনির্ভরতা, শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। জাতিসংঘ নারীর বৈষম্য দূর করার যে প্রস্তাব রেখেছে, নিজেদেও স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে। এতে পরিবার এবং সমাজ লাভবান হবে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার দূরদৃষ্টি নিয়ে বেগম রোকেয়া ‘সুলতানার স্বপ্ন’ দেখিয়েছেন। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার উত্তরসূরি বেগম সুফিয়া কামাল আমাদের হাত ধরে রাজপথে নামিয়েছেন। আজ সর্বক্ষেত্রে নারীর সদর্প পদচারণা, সমাজে নারীর যে অগ্রগতি তা তারই সুফল। আর বিভেদ নয়, অসাম্য নয়। নারী-পুরুষ পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। একসঙ্গে এগিয়ে যাব আমরা। বর্তমানে সরকার নারীমুক্তির যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসতে হবে সমাজকেই।
সমাজের সকল অন্ধকার দূর করে একদিন আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে নারী। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নারীকে কূপম-ূকতার দিকে ঠেলে দেয়ার সব রকমের হীন প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করতে হবে। এগিয়ে নিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। সব সঙ্কীর্ণতার উর্ধে উঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, মানবিক মন নিয়ে গড়ে তুলতে হবে এ সমাজ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪ সফল হোক।

লেখক : মানবাধিকার সংগঠক ও
প্রধান নির্বাহী, লিরো

কারা হোতা?

কারা হোতা?
গলদ কোথা?
হতভাগা!
ছিলি কোথা?
সাথে কারা ?
হতচ্ছারা!

৩০০ কোটি টাকার কর ফাঁকিঃ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনের ঊর্ধ্বে?

ড. ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে ?

Fri, March 7, 2014, 9:04 pm BDT
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের প্রথম নোবেলজয়ী ব্যক্তির নাম। নোবেলের পাশাপাশি পেয়েছেন দেশি বিদেশি হাজারো পুরস্কার ও সম্মাননা। বিশ্বের নামি দামি অনেক লোকের সাথে তার উঠাবসা। দেশ-বিদেশ ঘুরে ঘুরে তিনি নানা সভা সেমিনারে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দেন। তার নোবেল পদক বা অন্যান্য কর্মকাণ্ড দেশের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনছে?

যে ইউনূস সাহেব প্রায়ই দেশের বিভিন্ন ব্যাপারে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেন সেই ইউনূস সাহেব নিজে দেশের আইনের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল সেই ব্যাপারেই আজ একটু আলোকপাত করতে চাই।

একজন ব্যক্তি যত বিখ্যাতই হন না কেন, তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একটি দেশের নাগরিক। সেই দেশের আইন কানুন আর দশজন সাধারণ নাগরিকের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তার বেলাতেও ঠিক একই রকমভাবেই প্রযোজ্য। রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তাদের বরং আরও বেশি সজাগ হওয়া উচিৎ। কেননা তাদের দেখেই অন্যরা উৎসাহিত হবে। কিন্তু বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালনে গাফিলতি করে বা এড়িয়ে যায় তারচেয়ে লজ্জাজনক আর কিছুই হতে পারে না। আমাদের ইউনূস সাহেব ঠিক এই কাজটিই করেছেন।

একটু পেছনে ফিরে যাই। সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৭৬ সালে ড. ইউনূস চট্টগ্রামের জোবেরা গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই তখন এই কাজের মূল পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণই ছিল এই প্রকল্পের দৃশ্যমান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য কতটা পূরণ হয়েছে বা দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প কতটা ভূমিকা পালন করতে পেরেছে তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু এই প্রকল্প ইউনূস সাহেবকে ঠিকই লাভবান করতে পেরেছে। তাকে বিশ্ববিখ্যাত করেছে, এমনকি নোবেল পদক পর্যন্ত এনে দিয়েছে।

১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পই ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক এ রুপান্তরিত হয়। মানুষের কল্যাণই যদি মূল উদ্দেশ্য হত তাহলে এই ব্যাংকের মাধ্যমেই তা করা যেত। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হত না।  ইউনূস সাহেব কিন্তু এই পথে হাটেননি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গড়ে তুলেছেন আরও প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রতিষ্ঠান যার প্রতিটিই লাভজনক। তারমানে যে সামাজিক আন্দোলন বা মানুষের কল্যাণের বাতাবরণে উনি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প শুরু করেছিলেন তা হয়ে উঠল একটি বেনিয়া ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। ব্যাপারটা অনৈতিক হলেও আইনসিদ্ধ।

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের অধিকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ড. ইউনূস সাহেব কিন্তু এসব কিছুর ধার ধারেন নি। তা তিনি করবেনই বা কেন? তিনি বিখ্যাত মানুষ। তাই তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়কর দেয়ার ব্যাপারে সব সময়ই উদাসীন। কিভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়া যায় বা এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘসূত্রিতার জালে জড়ানো যায় তার সবকিছুই করেছেন উনি। এই ব্যাপারে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া যেতে পারে।

ড. ইউনূসের মালিকানাধীন বেশ কিছু লাভজনক প্রতিষ্ঠানের নাম নিচে দেয়া হল-
১) গ্রামীণ ট্রাস্ট
২) গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট
৩) গ্রামীণ ব্যাংক বারোয়ার্স ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট লিমিটেড
৪) গ্রামীণ ব্যাংক
৫) গ্রামীণ কল্যাণ
৬) গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশ
৭) গ্রামীণ মৎস্য ও পশু সম্পদ ফাউন্ডেশন
৮) গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
৯) গ্রামীণ কম্যুনিকেশন্স
১০) গ্রামীণ শক্তি
১১) গ্রামীণ সামগ্রী
১২) গ্রামীণ হেলথ কেয়ার 
১৩) প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট 
১৪) ইউনূস সেন্টার 
১৫) ইউনূস ক্যালোডোনিয়া কলেজ অব নার্সিং


ইউনূসের মালিকানাধীন উপরোক্ত প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতেই কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মোট হিসেবে যা প্রায় সোয়া তিনশ কোটি টাকারও উপরে। এর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের (টিআইএন নম্বরঃ ০৮৭-৩০০-২৮১৪) কাছেই আয়কর বিভাগের পাওনা রয়েছে প্রায় দুইশ কোটি টাকা। এই অর্থ আদায়ের জন্য আয়কর বিভাগের দায়েরকৃত মামলাটিও বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে ছয়মাসের স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত আছে। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের (টিআইএন নম্বরঃ ০৭০-২০০-১৮৮৪) কাছে আয়কর বিভাগের পাওনা আছে প্রায় সত্তর কোটি টাকা, গ্রামীণ ব্যাংক বারোয়ার্স ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট লিমিটেডের (টিআইএন নম্বরঃ ০৮১-৩০০-২১৮৫) কাছে প্রায় বিশ কোটি টাকা গ্রামীণ ট্রাস্ট (টিআইএন নম্বরঃ ১৪২-২০০-৪৯০৩) ও গ্রামীণ কল্যাণ (টিআইএন নম্বরঃ ০৭০-২০০-৯৬৫০) প্রতিটির কাছে আয়কর বিভাগের পাওয়া আছে প্রায় দশ কোটি টাকা।


অত্যন্ত ধূর্ত ইউনূস সাহেব আয়কর বিভাগের প্রতিটি দাবির বিপরীতেই মামলা করে রেখেছেন এবং মামলাগুলোকে দীর্ঘসূত্রিতার জালে জড়ানোর সম্ভাব্য সব ব্যবস্থাই করেছেন। বেশিরভাগ মামলাই এখন আপিলাধীন বা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত অবস্থায় আছে।

আয়কর বিভাগের প্রতিটি দাবিই যে যৌক্তিক তার বড় প্রমাণ হচ্ছে আইনী লড়াই শেষে ইউনূস সাহেবের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার মত আদায়ও করা হয়েছে। এখানে একটি মজার ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। শুধুমাত্র যেসব প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে ‘ইউনূস’ যুক্ত আছে শুধুমাত্র সেইসব প্রতিষ্ঠানের আয়করই আদায় করা গিয়েছে। ‘গ্রামীণ’ যুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত দাবিকৃত কোনো আয়কর আদায় হয়নি। অতএব এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ নিয়ে নানা ছলাকলা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের প্রতি তার কর্তব্য পালন থেকে বিরত থাকছেন এবং দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে আয়কর এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।মূলত রাষ্ট্রের অর্থায়নের অন্যতম মূল ভিত্তিই হল এই আয়কর। এ কারণে নিয়মিত আয়কর দাতাদের যেমন পুরস্কৃত করা হয় ঠিক তেমনি কর খেলাপির জন্য প্রতিটি দেশেই রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। শুধু আইনী শাস্তিই নয়,করখেলাপীদের সব দেশের মানুষই ঘৃণার চোখে দেখে। কারণ করখেলাপিরা কর না দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্বের বরখেলাপ করেন।

বাংলাদেশেও করখেলাপীদের জন্য রয়েছে যথাযথ শাস্তির বিধান।করখেলাপী ব্যক্তিরা এদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষিত হন।করখেলাপি হওয়ার কারণে আমরা অনেক রাজনীতিবিদকে দুদকে তলব করতে শুনি, অনেক সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে দেখি। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ আমরা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সরকার কেন এই ব্যাপারে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না?   ইউনুস স্যার কে গাটাতে গেলেই বুঝি অনেক জটিলতা!

তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার। মুখে দারিদ্র দূরীকরণ বা মানুষের কল্যাণের কথা বললেও গ্রামীণ ব্যাংক প্রজেক্ট ছিল ড. ইউনূসের জন্য একটা লাভজনক ব্যবসার সূচনা। এর থেকেই তিনি আরও অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। মানুষের উপকার করতে  চাইলে এতো প্রতিষ্ঠানের দরকার হয় না। 


বিল গেটস তার একমাত্র ‘মেলিন্ডা ও গেটস ফাউন্ডেশন’ এর মাধ্যমেই পৃথিবীর নানা দেশে দারিদ্রতা দূরীকরণে কাজ করছেন। সেখানে ইউনূস সাহেব পঞ্চাশের বেশি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন শুধুমাত্র নিজের ব্যবসায়িক সুবিধা লাভের হীন উদ্দেশ্য নিয়ে।

অনেকে বলেন ইউনূস সাহেব বিখ্যাত মানুষ, নোবেলজয়ী। তার ব্যাপারে এসব অভিযোগ আনা ঠিক না। আরে ভাই, নোবেল প্রাইজ দিয়ে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের পেটে ভাত যাবে না। কিন্তু ড. ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি দেয়া প্রায় তিনশ কোটি টাকা আদায় করা যাবে কি কখনো? এই কর পরিশোধ তার নৈতিক দায়িত্ব।  তা দিয়ে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো।

আমরা হলমার্ক, ডেসটিনিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপ লক্ষ্য করেছি। আশা করব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ব্যাপারেও সরকার সমান তৎপরতায় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যদি তা না করে তাহলে বুঝব ড. মুহাম্মদ ইউনূস হয়তো আসলেই আইনের ঊর্ধ্বে। এদেশের সাধারণ নাগরিকদের কাছে  ব্যাপারটি লজ্জার নয় কি? 

সূত্র:বিবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম